ব্ল্যাকহোলের এস্কেপ ভেলোসিটি বা মুক্তিবেগ আলোর বেগের চাইতেও বেশি থাকে। যেহেতু কোন কিছুই আলোর চেয়ে অধিক দ্রুতবেগে গমন করতে পারে না, তাই কোন কিছুই ব্ল্যাকহোল থেকে পালাতে পারে না। এটাই ব্ল্যাকহোলের সরলতম মেকানিকাল এক্সপ্লানেশন বা ব্যাখ্যা। কিন্তু যখন এই ব্যাখ্যার মাঝে থার্মোডাইনামিক্স ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স যুক্ত করা হল তখন বিষয়টা আরও জটিল হয়ে গেল।
এই সব কিছু মাথায় রেখে ১৯৭৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একটি হাইপোথিসিজ দাঁড় করান। এই হাইপোথিসিজ অনুসারে, ব্ল্যাকহোল আসলে ব্ল্যাক নয়, বরং এটা রেডিয়েশন বা বিকীরণ ত্যাগ করে। তারা তাদের শক্তি হারায় এবং সময়ের সাথে সাথে সংকুচিত হয়। যাই হোক, এই রেডিয়েশন এর পরিমাণ এতই কম যে, এটা এস্ট্রোফিজিকাল ব্ল্যাকহোলে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। তাহলে স্টিফেন হকিং এর এই ধারণাটি ঠিক না ভুল তা পরীক্ষা করার উপায় কী?
ইজরাইল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রফেসর জেফ স্টাইনহাওয়ার শুধুমাত্র এটা পরীক্ষা করার উপায়ই খুঁজে বের করেন নি, তিনি তার নেচার ফিজিক্স জার্নালে প্রকাশিত হওয়া নতুন পেপারে ব্ল্যাকহোল এমিশন (যা বর্তমানে হকিং রেডিয়েশন নামে পরিচিত) এর সবচেয়ে শক্তিশালী এভিডেন্সটি প্রকাশও করেছেন।
স্টাইনহাওয়ার একটি একাউস্টিক ব্ল্যাকহোল তৈরি করেন। এটা একটি ট্র্যাপ যা যার “সাউন্ড পার্টিকেল” (ফোনোন) এর শক্তির চেয়েও অনেক বেশি মানের একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি আছে। ফোনন সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নেয়া দরকার। ফোনন হল ভাইব্রেশনাল মেকানিকাল এনার্জির ক্ষুদ্রতম নির্দিষ্ট ইউনিট বা কোয়ান্টাম (কোয়ান্টাম মেকানিকাল কোয়ান্টাইজেশন) টিক যেমনটা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বা লাইট এনার্জির বেলায় কোয়ান্টাম বা নির্দিষ্ট ক্ষুদ্রতম একক হল ফোটন। কোন কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে দুটো প্রধান এলিমেন্টারি পার্টিকেল বা এক্সাইটেশন হল ইলেক্ট্রন এবং ফোনন। ফোনন কেবল শব্দের বেগেই গমন করতে পারে।
স্টাইনহাওয়ার বলেন, “এই ব্ল্যাকহোলের ভেতরে যদি একটি ফোনন থেকে থাকে, তাহলে এটা এর ফ্লো এর বিরুদ্ধে যেতে পারবে না কারণ এই ফ্লো শব্দের বেগের চাইতেও বেশি। এটা একজন ব্যক্তির স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটার মত ব্যাপার। স্রোতের বেগ যদি তার সাঁতারের বেগের চাইতে বেশি হয় তবে তিনি সামনের দিকে না এগিয়ে বরং পিছনের দিকে যাবেন”।
এই মডেলটিকে সরল বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই আসল ব্ল্যাকহোলের একটি যথেষ্ট নিখুঁত মডেল। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল, এই একাউস্টিক ব্ল্যাকহোল থেকে হকিং রেডিয়েশনকে নিঃসৃত হতে দেখা গেছে।
হকিং এর ধারণাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও রিলেটিভিটি একসাথে ভাল কাজ করে না। ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রে এই দুটো থিওরিরই প্রয়োজন হয়। আর তাই এই থিওরিদুটোর প্রোপার্টিগুলোর ইকুয়েশনগুলোর এপ্রোক্সিমেটিং করার মাধ্যমে এগুলো নিয়ে অবিরাম এবং ব্যাপক আকারে গবেষণা চলছে।
স্টাইনহাওয়ার বলেন, “ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণা করার অর্থ কেবল ব্ল্যাকহোল নয় বরং পদার্থবিজ্ঞানের নতুন নিয়মগুলোকে শেখা”।
হকিং রেডিয়েশনের ধারণা পাওয়া গেছে এই রিলেটিভিটি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ইকুয়েশনগুলোর এপ্রক্সিমেশনের একটি আইডিয়া থেকেই। স্পেসটাইমের প্রতিটি বিটেই শক্তি থাকে এবং কখনও কখনও এই শক্তি থেকে হঠাৎ করে পার্টিকেল-এন্টিপার্টিকেল পেয়ার তৈরি হতে পারে (এই শক্তির দ্বারা শূন্য থেকে একটি পার্টিকেল ও আরেকটি এন্টিপার্টিকেল প্রস্তুত হওয়া) এবং তারা নিজেদের মধ্যে ইন্টারেক্ট করে আবার শক্তিতে পরিণত হতে পারে। যদি এই পার্টিকেল প্রোডাকশন ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজনে ঘটে, তাহলে এদের একটি পার্টিকেল ব্ল্যাকহোলের গ্র্যাভিটি দ্বারা ব্ল্যাকহোলে চলে যাবে আর একটি পার্টিকেল পালিয়ে আসবে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর একটি প্রোপার্টির কারনে এই পালিয়ে আসা পার্টিকেলটি ব্ল্যাকহোলের ভেতরে হারিয়ে যাওয়া সঙ্গী পার্টিকেলের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে থাকে। এই প্রোপার্টির নাম হল এন্ট্যঙলমেন্ট। স্টাইনহাওয়ারের ব্ল্যাকহোলে ঘটা হকিং রেডিয়েশনে এই এন্ট্যাঙ্গলমেন্টকে পর্যবেক্ষণ করা গেছে। আর এভাবেই পাওয়া গেল হকিং রেডিয়েশনের সবচাইতে শক্তিশালী এভিডেন্সটিকে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply