যদিও অর্গাজম এর ব্যাপারটা সবসময় ঘটে, সব জায়গায় ঘটে, তবুও বিজ্ঞানীরা ফিমেল অর্গাজম বা নারীদের অর্গাজম সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানেন না। যদিও ফিমেল ইজাক্যুলেশন এর কেমিস্ট্রি সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান ঘটেছে (এই আর্টিকেলটি পড়ুন)। কিন্তু ফিমেল অর্গাজম কত ধরণের হতে পারে এটা এখনও পরিষ্কার নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হল ফিমেল অর্গাজমের বিবর্তনগত কারণটি কী? জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল জ্যুলজি পার্ট বি: মলিক্যুলার এন্ড ডেভেলপমেন্টাল এভোল্যুশন জার্নালে ইয়েল ইউনিভার্সিটির একটি দল একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন যে তারা এই প্রশ্নের একটি উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। পূর্বে অনেক বিজ্ঞানী মনে করতেন ফিমেল অর্গাজমের বিবর্তনগত কারণ হচ্ছে পার্টনারদের মাঝে পেয়ার-বন্ডিংকে উৎসাহিত করা এবং এভাবে মেল অর্গাজমকে সহায়তা করা। কিন্তু এই গবেষকগণ সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এটা একসময় অভিউলেশন বা ডিম্বপতনের জন্য প্রধান বায়োলজিকাল ট্রিগার ছিল।
যখন নারীদের অর্গাজম হয়, তখন দুটি হরমোন নিঃসৃত হয়। একটি হল অক্সিটোসিন এবং আরেকটি হল প্রোল্যাক্টিন। প্লাসেন্টাল ম্যামাল বা প্লাসেন্টা যুক্ত স্তন্যপায়ী বন্য প্রাণীদের স্ত্রী সদস্যদের ক্ষেত্রে এই ধরণের হরমোনানের নিঃসরণের ফলেই অভিউলেশন শুরু হয় যেটা ছাড়া প্রেগনেন্সি বা গর্ভধারণ সম্ভব নয়। সুতরাং এসব প্রাণীর ক্ষেত্রে অভিউলেশন শুরু করার জন্য মেল এবং ফিমেল অর্গাজম একই সাথে কাজ করে। আর এটাই সবচেয়ে বেশি সাম্ভাব্য যে, এই একই কারণে এই মেকানিজমটি প্রথমদিকে মানুষের নারী সদস্যদের ক্ষেত্রেও বিবর্তিত হয়। এরপর সময়ের সাথে সাথে নারীদের দেহে এই অভিউলেশন প্রক্রিয়াটি মেল সেক্সুয়ালিটির উপর নির্ভরশীলতা ছেড়ে একটি চক্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। এভাবেই বিবর্তন ঘটে নারীদেহে মাসিকচক্রের এবং অভিউলেশন প্রক্রিয়ার। কিন্তু এর ফলে অর্গাজমের ফলে হওয়া এই হরমোনাল ফাংশন অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরও এটা নারীদেহে প্লেজারেবল বন্ডিং মেকানিজম হিসেবে একটি সেকেন্ডারি ভূমিকা পালন করছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোলজি এবং ইভোল্যুশনারি বায়োলজির প্রফেসর এবং গবেষণাটির কো-অথর গান্টার ওয়াগনার বলেছেন, “অর্গাজমের উপর পূর্বের গবেষণাগুলোতে হিউম্যান বায়োলজি এবং শরীরের বৈশিষ্ট্যগুলোর উপরে ফোকাস করা হয়েছে। কিন্তু এর বিবর্তনগত উৎস্যের উপর কখনও ফোকাস করা হয় নি”।
যাই হোক, পূর্বের গবেষণাগুলো ইঙ্গিত করেছিল যে, নারীদেহের ফারটাইলিটি বা উর্বরত তার সেক্সুয়ালিটি বা যৌনতার উপর নির্ভর করে না। এই যুক্তিতে বলা যায় যে ফিমেল অর্গাজম “কখনই” প্রজননগত সাফল্যে কোন ধরণের ভূমিকা পালন করেনি। কিন্তু বর্তমানে বিবর্তনের উপর ফোকাস করে করা গবেষণাটি বলছে ফিমেল অর্গাজমও মেল অর্গাজমের মতই প্রজননকে সহায়তা দান করতেই বিবর্তিত হয়েছিল।
নেচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বচন এর দৃষ্টিতে দেখলে মেল অর্গাজমের একটি পরিষ্কার উদ্দেশ্য ধরা পড়ে। মেল অর্গাজম নামের এই ফ্লুইড ভিত্তিক যৌন উন্মত্ততা বিবর্তিত হয়েছে যাতে পুরুষ প্রাণীরা (মানুষ সহ) যত বেশি সংখ্যক নারী সদস্যদের মধ্যে তাদের জেনেটিক্স ছড়িয়ে দিতে উৎসাহিত হতে পারে। সকল আকার আকৃতির প্রাণীর জিন মেকানিক্সেরই অন্তর্নিহিত ফাংশন হল যৌনতা এবং সন্তান উৎপাদন।
কিন্তু ফিমেল অর্গাজমের বিবর্তনের ড্রাইভিং ফোর্স বা চালিকাশক্তি কি ছিল সেটা অনেকটাই অপরিষ্কার। অনেকেই ভাবেন যে এটা মেল অর্গাজম এর একটি বাই প্রোডাক্ট হিসেবে বিবর্তিত হয়েছে, আবার অন্যেরা ভাবেন যে এটা পুরুষদেরকে নারীর সাথে বন্ধনে আবদ্ধ হতে উৎসাহিত করে এবং পরবর্তী প্রজন্মে যাতে জিন ছড়িয়ে পড়তে পারে তা নিশ্চিন্ত করে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ফিমেল অর্গাজমের সময়ে হওয়া রিদমিক পালসেশন ইউটেরাসে স্পার্মশূন্য করতেও সাহায্য করে।
গবেষণার দ্বারা উঠে এসেছে যে, ফিমেল অর্গাজমের গোপন উৎস্যটি এটার হরমোনাল ডিসচার্জ দ্বারাই প্রতারিত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের টিকে থাকার জন্য সেই প্রয়োজনীয় হরমোনাল ডিসচার্জটি প্রজননের জন্যই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু তারপরও ফিমেল অর্গাজম এখনও হচ্ছে।
যাই হোক, ফিমেল অর্গাজমের এখন আর কোন প্রজননগত ভূমিকা নেই, তার মানে এই নয় যে এটা অপ্রয়োজনীয়। অন্য সময়ের জন্য না হলেও অন্তত এই একবিংশ শতকে যৌনতার প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য উপভোগ করা। আর এক্ষেত্রে ফিমেল অর্গাজম অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply