দিবাস্বপ্নদর্শি ও আরাম কেদারায় শুয়ে যারা অলস সময় কাটাতে ভালবাসেন তাদের জন্য এটা বেশ সুখবর বটে। এতদিন তাদের অকর্মা মনে করা হতো। কিন্তু এই অলসতার সাথে উচ্চ আইকিউ (IQ) এর সম্পর্ক আছে- এমনটাই দেখাচ্ছে একটা নতুন গবেষণায়। অর্থাৎ আপনি পরিশ্রম করছেন না তার মানে এই নয় যে আপনি অলস, আপনি আসলে আপনার ব্রেইনকে বেশী খাটাচ্ছেন ।
উক্ত এমন খবর কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে যারা অলস সময় কাটায় তারা বুদ্ধিমান হয় কারন তাদের ব্রেইন চিন্তা করে সময় কাটায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে দেখি উলটো যে কাজ করতে করতে চিন্তা করি এবং যদিও একটা কাজটা স্লো হয়, কারন চিন্তা করে সমাধান করা কাজগুলো করতে সময় লাগে। কিন্তু শারীরিক কাজ যে করা হয় না তা কিন্তু নয়।
অবশ্য আমরা যেহেতু বিজ্ঞানী বা ইনভেনশনার নই, তাই হয়তো সেভাবে অলস্য সময় চিন্তা করে কাটাতে পারি না।
কিন্তু এ সব গবেষণা গুলো সাধারণত সাধারণের জন্যই হওয়া উচিত তা না হলে ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হলে দেখা যাবে মানুষ আলসেমী করা শুরু করে দিয়েছে যে তারা আসলে বুঝাতে চায় তারা বেশী চিন্তা করে কাজের সমাধান করতেছে এবং বুদ্ধিমানের খেতাবটা কে না নিতে চায় বলুন।
বাসায় বা অফিসে পরে পরে শুয়ে বসে থাকলে আশা করি বাড়ি বা অফিসে বসেরা আদর করবে না গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে। বরং অফিসের বসেরা আপনাকে টার্মিনেট করার চিন্তা করবে আর বাসায় অবিভাবকেরা ঝাড়ু নিয়ে আদর করতে আসবে।
তবে যারা কাজ করে এবং সময় পেলে চুপচাপ শুইয়ে বসে থাকে তারা আসলেই চিন্তা করে অবশ্য যখন তারা শুইয়ে বসে চুপচাপ থাকে তখন তাদের মনে হয় তারা আসলেই অলস।
Journal of Health Psychology এর একটা গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে হাই আইকিউ সম্পন্ন ব্যক্তিরা সহজেই কোন কাজে অবসাদগ্রস্থ হয় এবং অনেক বেশী সময় তারা চিন্তা করে কাটায় যদিও তাদের দেখে মনে হয় তারা কিছুই করছেনা, কিন্তু বাস্তব হলো তারা চিন্তাজগতে নিমজ্জিত থাকে।
অপরপক্ষে বলা হচ্ছে যে যারা অবসাদ কাটানোর জন্য কায়িক শ্রমে লিপ্ত থাকে তারা কল্পনার জগতে প্রবেশ করা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
ফ্লোরিডা গালফ কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ তাদের স্টুডেন্টদের নিয়ে সাইক্লোজিক্যাল টেস্ট করার জন্য আইডেন্টিফাই করে তাদের যারা প্রচুর চিন্তা করার কথা বলেছে এবং যারা মানসিকচাপ আছে এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে। অবশ্য তারা সম্মত ও অসম্মত প্রকাশের মধ্যেই বিষয়টাকে সীমিত রেখেছে যেমন “ আমি আসলেই এমন কোন কাজ করতে উপভোগ করি কি না যেটার জন্য নতুনভাবে চিন্তা করে সমাধান দিতে হবে” এবং “আমি যতটা পারি চিন্তায় চিন্তা করি”। এভাবে তারা ৩০ জন থিংকার ও ৩০ জন নন-থিংকার নেন এবং ফিটন্যাস ট্রাকার সেট করে দেখেন তাদের শারীরিক সক্রিয়তা এক সপ্তাহ ধরে।
ফলাফল যে থিংকিং গ্রুপের স্টুডেন্টরা নন-থিংকিং গ্রুপের তুলনায় সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত কম একটিভ ছিল যারা বলেছিল হাই লেভেল থিংকিং দরকার নেই অনেক শারীরিক পরিশ্রমের জন্য। তথাপি তাদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায়নি (দুই গ্রুপের মধ্যে) সপ্তাহশেষে। তবে কিছুক্ষেত্রে গবেষকেরা ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হননি, যেহেতু এটা ছিল ছোট আকারে এবং গবেষণটা ছিল খুবই অল্প সময়ের তাই এই দুয়ের মধ্যে আন্ত-সম্পর্ক টানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন।
তদুপরি, আপনি যদি গর্ব অনুভব করেন যে আপনার অলসতা আপনার বুদ্ধিমত্তা বা ইন্টেলিজেন্স এর প্রতীক যা আপনাকে এত ব্যস্ত রাখে গভীর চিন্তা আপনাকে কায়িক শ্রমে অংশগ্রহণ করতে দেয় না বা পারেননা, তবে আপনি অগ্রগামী লেখক Todd McElroy দৃষ্টিভঙ্গি একটু জেনে নিতে পারেন।
ম্যাকএলরয় বলেন, “আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা ব্যক্তির চিন্তাশক্তির দ্বন্দ্বে নিম্ন গড় কার্যকলাপের মাত্রা সচেতনার ক্ষেত্রে সামান্য হেল্প করতে পারে। তাদের প্রবণতা সচেতনতার ক্ষেতে কম সক্রিয়, এই সচেতনা আবার কাজ না করার ক্ষতির চিন্তার সাথেও যুক্ত। অধিক চিন্তাশীল ব্যক্তিরা দিনভর অধিক সক্রিয় থাকতে পছন্দ করতে পারে।”
আমাদের মতো সাধারণদের ক্ষেত্রে অলসতার সাথে বুদ্ধিমত্তার চর্চার সম্পর্ক কতটুকু তা আমরা বাস্তবে আমাদের দিকে তাকালেই হবে এবং ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ প্রবাদটার সাথে অবশ্যই পরিশ্রম শারীরিক ও চিন্তাশক্তি এই দুই দিক থেকেই প্রয়োজন । তা না হলে গাধার মতো পরিশ্রম করা হবে কিন্তু উন্নতি করা সম্ভব হবে না।
তথ্যসূত্র:
http://www.iflscience.com/health-and-medicine/youre-not-lazy-you-have-a-high-iq-study-suggests/
Leave a Reply