ফিমেল ইজাক্যুলেশন কী, কেন এবং এর সামাজিক অবস্থান

পৃথিবীতে দুধরণের লোক আছে: একটি ধরণের মধ্যে তারা পড়েন যারা ফিমেল ইজাকুলেশন আসলে কি জিনিস সেটা ভেবে অবাক হন, আরেকটি ধরণ হল মিথ্যাবাদীরা। এই প্রশ্নটি আসলে একটি বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন, সুতরাং ভেবে অবাক হবার কিছু নেই যে অনেক বিজ্ঞানীরাই তাদের কেরিয়ারের একটি বড় অংশ কেবল এটার পেছনেই ব্যয় করবেন। সুতরাং তারা এই বিষয়ে কী বলেন?

 

কোভার্ট অপারেশনস

প্রথমত, পূর্ববর্তী অর্গাজম ছাড়া ইজাক্যুলেশন ঘটে না। অর্গাজমে পৌঁছে নারী এবং পুরুষ উভয়েই ইজাক্যুলেট করতে পারেন। কিন্তু এই ইজাক্যুলেশন এর মেল ভারশনটি ফিমেল ভারশনের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। এই ইজাক্যুলেশনের জন্য পুরুষের প্রয়োজনীয় উপকরণ খুবই সরল। কেবল কয়েক মিনিট ধরে “ভিগোরাস” স্টিমুলেশনই যথেষ্ট। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে অর্গাজম প্রাপ্ত করতে অনেকগুলো উপায় আছে। আর এগুলোর ফলে যে ফ্লুইড বেজড ফলাফল পাওয়া যায় সেগুলোও বিভিন্ন মাত্রার হয়।

ইজাক্যুলেশন হবার জন্য কারও কারও ক্ষেত্রে খুব কম সময়েই হয়ে যায়, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় লাগে। সাইকোলজি, মুড এবং আবেগজনিত অবস্থা মত ফ্যাক্টরগুলো অনেক ক্ষেত্রেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীদের কয়ধরণের অর্গাজম হতে পারে সেটা নিয়ে প্রায়ই একটি বিতর্কের কথা শোনা যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে দুই ধরণের অর্গাজমের কথাই বলে থাকেন।   একটি হল পেনিট্রেশনের দ্বারা অর্গাজম যেটায় সম্পূর্ণ ক্লিটোরাল এবং ভাজাইনাল কমপ্লেক্সে স্টিমুলেট করা হয়। আরেকটি হয় এক্সটারনাল ক্লিটোরাল স্টিমুলেশনের ফলে।

এটা একটি জটিল বিষয়। কিন্তু যখন একজন নারী অর্গাজম অর্জন করে ফেলেন, ফ্লুইড কখনও কখনও বের হয়। কিন্তু এটা অত্যুত্তেজিত পুরুষদের ইজাক্যুলেশনের থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। অর্গাজমের ক্ষেত্রে পুরুষরা সবসময়ই স্পার্মাটোজোয়া এবং এনজাইমের বন্যা বইয়ে দেয়। কিন্তু নারীদের মধ্যে কেবল ১০ থেকে ৪০ শতাংশের বেলাতেই এরকম ফ্লুইডের ইনভলান্টারি এমিশন বা অনৈচ্ছিক নির্গমন ঘটে। আর এই নির্গমনের পরিমাণও কম বেশি অনেক মাত্রারই হতে পারে। কিন্তু প্রতি অর্গাজমে এর পরিমাণ ৩০ থেকে ১৫০ মিলিলিটারের মধ্যে থাকে।

প্রচলিত ইংরেজিতে একে “স্কোয়ের্টিং” বলা হয় এবং হাজার হাজার বছর ধরে দার্শনিক, চিন্তাবিদ এবং সকল নারীই ভেবে আসছেন আসলে এটা কী হতে পারে? অবশ্যই এতে স্পার্ম বা শুক্রাণু থাকে না। তাহলে এটা কি দিয়ে তৈরি এবং কেনই বা এটা তৈরি হয়?

 

আল্ট্রাসনিক ডিটেকশন

ফিমেল ইজাক্যুলেশন প্রজননকার্যে সহায়তা করে, এই কথাটি অর্থবহ। ফিমেল ইজাক্যুলেট ভাজাইনা বা যোনিতে মেল ইজাক্যুলেটকে সাহায্য করে। যদি স্পার্ম সঠিক তাপমাত্রা, ভিস্কোসিটি এবং পিএইচ এর কোন অতিরিক্ত ফ্লুইডের মধ্য দিয়ে সাঁতরে যেতে পারে তাহলে এটা সহজেই আনফার্টিলাইজড বা অনিষিক্ত ডিম্বাণুতে পৌঁছে তাদের জৈববিজ্ঞানিক পথের সমাপ্তি টানতে পারবে।

ফিমেল ইজাক্যুলেশন আসলে “হাইপার লুব্রিকেশন” এর কাজ কিনা সেটা বের করার জন্য সম্প্রতি একটি গবেষণা করা হয়। আর তাই তারা প্রতি অর্গাজমে যথেষ্ট পরিমাণে ইজাকুলেশন প্রস্তুত করতে পারেন এমন সাত জন নারীর সাহায্য গ্রহণ করেন। তারা গবেষকদেরকে তাদের ইউরিন স্যাম্পল প্রদান করেন এবং তাদের ব্লাডার বা মুত্রথলি মুত্রশূন্য করেন। এরপর তাদেরকে একটি আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনে যেতে বলা হয় এবং সেখানে অর্গাজমের আগ পর্যন্ত স্টিমুলেট করতে বলা হয় (তাদের পার্টনারের সাহায্য নিয়ে অথবা সাহায্য ছাড়া)।

অতঃপর তাদের প্রত্যেকের ইজাক্যুলেশনের স্যাম্পল গ্রহণ করা হয় এবং আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজের দ্বারা স্টিমুলেশনের সময় ব্লাডারের অবস্থা দেখা হয়। দেখা গেল যে, যদিও অর্গাজমের পূর্বে স্বেচ্ছাসেবীদের মুত্রথলি মুত্রশূন্য ছিল, তারপরেও অর্গাজমের ঠিক পূর্বে ব্লাডার ফ্লুইডে পূর্ণ হয়ে যায়। এটা সাজেস্ট করছে যে, এই মহিলাদের জন্য স্কোয়ের্টিং বা ইজাক্যুলেশন হল প্রচুর পরিমাণে মুত্রের নিঃসরণ।

এরপর এই ফ্লুইড স্যাম্পলের কেমিকেল এনালাইসিস করা হয়। এতে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে এই মহিলাদের দুজনের ক্ষেত্রে ইজাক্যুলেট ফ্লুইডের প্রায় সবটুকুই মুত্র ছিল। অন্য ৫ জনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তাদের নিঃসৃত ফ্লুইডের বেশিরভাগই মুত্র হলেও সেখানে সামান্য পরিমাণে প্রোস্টেট স্পেসিফিক এন্টিজেন (পিএসএ) ছিল। পিএসএ হল একধরণের উপাদান যা স্পার্ম বা শুক্রাণূকে সাঁতরাতে সাহায্য করে। এটা মেল ইজাক্যুলেট বা বীর্যরসেও পাওয়া যায়। এটা পুরুষের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডে তৈরি হয়। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এটা তৈরি হয় তাদের স্কিনি গ্ল্যান্ডে (skene gland)। আর এটা দেখতে দুধের মত সাদা বর্ণের হয়।

সুতরাং এই গবেষণাটির দ্বারা গবেষকগণ এই উপসংহারে আসেন যে, দুধরণের ফিমেল ইজাক্যুলেশন আছে। এদের একটি হল ইউরিন ডোমিনেন্ট, আরেকটি হল পিএসএ ইনিফিউজড। এক্ষেত্রে পিএসএ ইনফিউজড ইজাক্যুলেশনকে সঠিক ইজাক্যুলেট বলা হচ্ছে কারণ এখানে এমন উপাদান থাকে যা প্রজননকার্যকে সহায়তা করতে পারে। দুধরণের ইজাক্যুলেশনই কর্তার কাছে যৌনতৃপ্তির প্রসঙ্গে আনন্দদায়ক এবং উপভোগ্য। সুতরাং অবশ্যই যৌনতৃপ্তির প্রশ্নে কর্তার কোন ধরণের ইজাক্যুলেশন হয়েছে সেটি নিয়ে চিন্তা করা অপ্রাসঙ্গিক।

অর্গাজমের সময় সকল নারী ইজাক্যুলেশন তৈরি করতে পারেন কিনা সেটি নিয়ে একটি বিতর্ক রয়েছে। কিছু গাইনেকোলজিস্ট বলেন যে সকলেই পারেন। বর্তমানে এই বিশেষ বিতর্কটি সমাধানের অনেক দূরে অবস্থান করছে। কিন্তু ইজাক্যুলেটের কেমিস্ট্রি দেখে মনে হচ্ছে যে এটা সকলের ক্ষেত্রেই হয়।

 

বিজ্ঞান এবং সমাজ

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে পর্নগ্রাফিতে ফিমেল ইজাক্যুলেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে মেল ইজাক্যুলেশন এর কাজটি নিষিদ্ধ নয়। এখনও এটা পুরোপুরি পরিষ্কার নয় যে কেন এটা আদৌ করা হল। কিন্তু পূর্বে পর্নোগ্রাফির এগ্রেসিভ হুইপিং (চাবকানো), ভায়োলেন্স এর সাথে সম্মপর্কিত কোন বস্তু দিয়ে পেনিট্রেট করা, স্ট্র্যাংগুলেশন  ইত্যাদিকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হত।

তাহলে কি পূর্বের ইতিহাস এটাই ইঙ্গিত করছে না যে মেল ইজাক্যুলেশনকে যেমনটা সাধারণভাবে দেখা হয় (যদিও একে খুব একটা নম্র বলে মনে হয় না), ফিমেল ইজাক্যুলেশনকে তেমনটা সাধারণভাবে দেখা হয় না, বরং একে অন্যান্য নিষিদ্ধ কার্যগুলোর মত “অতিরিক্ত গ্রাফিক” বা “পারভার্স সেক্সুয়ালিটি বা বিকৃত যৌনতা” হিসেবে দেখা হচ্ছে? এটা কি একারণে যে, ফিমেল অর্গাজম যেহেতু প্রায় সম্পূর্ণভাবে “মুত্রসর্বস্ব” তাই এটা পর্নগ্রাফির ওয়াটারস্পোর্টস, এসফিক্সিয়েশন এবং ইন্টানাল ভায়োলেন্স এর মত তুলনামূলকভাবে বেশি অশ্লীল? না কি একারণে যে মেল ইজাক্যুলেশনে মাইক্রোস্কোপিক প্রাণের অস্তিত্ব থাকে, কিন্তু ফিমেল ইজাক্যুলেশনে বেশিরভাগই নিছক মুত্র থাকে তাই ফিমেল ইজাক্যুলেশনই বেশি অশ্লীল এবং মেল ইজাক্যুলেশন অধিক শ্লীল?

পর্নোগ্রাফিতে ফিমেল ইজাক্যুলেশন নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেই বিতর্কটি সামনে চলে এসেছে। সাধারণ মানুষ বা সামাজিকভাবে ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখা হয় এই বিষয়ে কোন গবেষণা হয় নি, কিন্তু সরকারের এই মনোভাব যদি আসলেই সমাজ ও সাধারণ জনগণের চিন্তার প্রতিচ্ছবি হয় তাহলে বলতেই হয় যে সমাজ ভুল চিন্তা করছে। অনেক সমালোচক বলছেন, ফিমেল ইজাক্যুলেশনে বেশিরভাগই মুত্র থাকে কিন্তু এটা কোনভাবেই মেল ইজাক্যুলেশনকে ফিমেল ইজাক্যুলেশনের চেয়ে কম অশ্লিল বলে প্রতিপন্ন করে না। আপনি যদি ইউরিন বা মুত্রের সাথে মাইক্রোস্কোপিক ব্যাঙাচির মত দেখতে স্পার্মের মধ্যে একটি পার্থক্যসূচক রেখা কল্পনা করেন এবং মেল ইজাক্যুলেশনে প্রাণ থাকে বলে একে অধিক প্রায়োরিটি দিয়ে তাকে ফিমেল ইজাক্যুলেশনের চেয়ে অধিক শ্লীল বলে ভাবেন তাহলে খোলাখুলিভাবে বলতে হয় আপনি ভুল করছেন। যখন কর্তা নিজেরা বিষয়টি উপভোগ করছেন তখন কি এটা আদৌ ম্যাটার করে?

 

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.newscientist.com/article/dn26772-female-ejaculation-comes-in-two-forms-scientists-find#.VLzXAEesV8E
  2. http://www.independent.co.uk/life-style/health-and-families/features/the-science-behind-female-ejaculattion-9987298.html
  3. http://www.cancer.gov/types/prostate/psa-fact-sheet
  4. http://www.theguardian.com/commentisfree/2015/jan/17/the-question-isnt-if-female-ejaculation-is-real-its-why-you-dont-trust-women-to-tell-you
  5. http://www.independent.co.uk/news/uk/home-news/uk-porn-legislation-what-is-now-banned-under-new-government-laws-9898541.html
  6. http://www.vice.com/en_uk/read/joel-golby-ejaculation-police-squirting-vaginas-jizzing-cocks-808?utm_source=vicetwitteruk
  7. https://www.theguardian.com/science/brain-flapping/2014/dec/05/uk-pornography-law-scientific-perspective-children-safety

1 Trackback / Pingback

  1. ফিমেল অর্গাজম: একটি বিবর্তনগত ব্যাখ্যা – বিবর্তনপথ

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.