একটি প্রশ্ন যা অনেক দিন থেকে অনেককেই অনেক ভাবিয়ে আসছে। প্রশ্নটি হল, যদি মহাবিশ্বে এত বিশাল পরিমাণে গ্রহ থেকেই থাকে তাহলে এখনও পর্যন্ত আমরা কেন মহাবিশ্বের আর কোথাও কোন প্রাণের অস্তিত্ব পেলাম না? এই প্রশ্নটিকে ফার্মি প্যারাডক্স হিসেবেও অনেকে জানে। বিজ্ঞানীদেরকে প্রতিনিয়তই এই প্যারাডক্সটি ভাবিয়ে চলেছে। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল মনে করছে যে তাদের কাছে এই প্রশ্নটির একটি উত্তর আছে।
হার্ভার্ড ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্ট্রোনোমারদের একটি দল এই বিষয়ে জার্নাল অব কসমোলজি এন্ড এস্ট্রোপারটিকেল ফিজিক্স জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আমাদের মহাবিশ্বে প্রাণের সঞ্চার পৃথিবীতে হয়তো তুলনামূলকভাবে আগে আগেই হয়ে গেছে। তারা বলছেন, এটাই ব্যাখ্যা করে যে আমরা কেন এই মুহূর্তে পৃথিবীতে একা।
গবেষণাটির কো-অথর রাফায়েল বাতিস্তা বলেন, “যদি আমরা যদি অনেক তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে চলে আসি, যদি কসমিক টাইমে প্রিম্যাচিওর হই, তাহলে এটাই ব্যাখ্যা করে যে আমরা কেন পৃথিবীর বাইরে আর কোন সিভিলাইজেশন কেন দেখতে পাই না। আমরা হয়তো প্রথম বা প্রথমদের মধ্যে একটি”।
তারা দেখান যে কেন বিগব্যাং এর পরের ১০ মিলিয়ন বছরের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হতে পারেনি যদিও ততক্ষনে নক্ষত্ররা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন এবং অক্সিজেন তৈরি করে ফেলেছিল। প্রাণের অস্তিত্বের জন্য আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরের প্রয়োজন হয়। এদের একটি হল নক্ষত্রের ভর যা নির্ণয় করে কতক্ষণ পর্যন্ত এটা টিকে থাকতে পারবে। নক্ষত্রের ভর যত বেশি হবে এর জীবনকালও তত ছোট হবে।
যেসকল নক্ষত্রের ভর আমাদের সূর্যের চেয়ে তিনগুণ বেশি হয় তারা প্রাণের বিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টির পূর্বেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু যদি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের দশ ভাগের এক ভাগ হয় তাহলে এদেরকে রেড ডোয়ার্ফ বা লোহিত বামন বলে। এরা দশ ট্রিলিয়ন বছর ধরে টিকে থাকতে পারে। গ্রহে জীবনের সঞ্চারের জন্য এদের হাতে যথেষ্ট সময় থাকে। এর অর্থ হল আপনি যত বেশি ভবিষ্যতের দিকে যাবেন প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে।
বারিস্তা যোগ করেন, অন্য কোথাও সরল প্রাণ তৈরি হবার সম্ভাবনা তাও যা বেশি। কিন্তু আমাদের মত জটিল জীবনের বিবর্তনের জন্য আরও অনেক বেশি সময় দরকার। আর এটার জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশও দরকার। ভেবে দেখুন, ৪.৫ বিলিয়ন বছরের এই পৃথিবীতে ৩ বিলিয়ন বছর পূর্বের সময়ের আগে কোন জটিল জীবের বিবর্তন ঘটে নি। আর ২ লক্ষ বছর পূর্বের সময়ের আগে আধুনিক মানুষের বিবর্তন ঘটে নি।
যদি কম ভরের নক্ষত্র বা লো মাস স্টারের আশেপাশে জীবনের অস্তিত্ব থাকে তাহলে তা আমাদেরকে মহাবিশ্বের হ্যাবিটেবল পিরিয়ড বা বসবাসযোগ্য সময়ের প্রথম ০.১৪ শতাংশের মধ্যে ফেলে দেয়। পৃথিবীর বাইরে অনেক বসবাসযোগ্য গ্রহ থাকতে পারে। কিন্তু সম্ভবত পৃথবীই সেই স্থিতিশীল বসবাসযোগ্য গ্রহগুলোর মধ্যে একটি যেখানে জটিল এবং বুদ্ধিমান প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে।
তবুও আশা হারায় নি। কেবল আমাদের গ্যালাক্সিতেই ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে যাদের মধ্যে অনেকগুলোই বসবাসযোগ্য। তাই আজকেও যে কেউ আশা করতে পারেন যে, পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহতেও আমাদের মত প্রাণী রয়েছে। এক্ষেত্রে বারিস্তা বলেন, “It’s not all doom and gloom.”
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply