নিউরোলোজি অফ এজিং জার্নালের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, মধ্যবয়স্ক অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক তাদের সমবয়সী পাতলা শরীরের ব্যক্তিদের তুলনায় ১০ বছরের বেশি বলে মনে হয়। গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, ৫০বছর বয়সী মোটা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের সাথে যুক্ত হোয়াইট ম্যাটার নামক পদার্থ হারানোর প্রবণতা ৬০ বছর বয়সী রোগা ব্যক্তিদের সমান হয়ে থাকে।
এটা অনেক আগে থেকেই জানা যে, মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের হোয়াইট ম্যাটার সংকুচিত হয়ে যায়। যেহেতু হোয়াইট ম্যাটার নিউরনের অ্যাক্সন নামক অংশের শাখাকে প্রশাখা গুলোকে কানেক্ট করে তাই এটিকে এক প্রকার সেরেব্রাল সুপারহাইওয়ে বলে মনে করা হয় যার মাধ্যমে ইলেকট্রিক্যাল ইম্পালস প্রবাহিত হয়ে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশগুলো সংযুক্ত থাকে।
গবেষকেরা ২০ থেকে ৮৭ বয়সী ৫২৭ জন ভলেন্টিয়ার থেকে তাদের দেহের ভরের তুলনায় “রোগা” এবং “ওভারওয়েট” এই দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছিলেন এবং তাদের মস্তিষ্কের স্ক্যান করে গবেষকেরা পেয়েছেন যে, মধ্যবয়স্কের অতিরিক্ত ওজনের মানুষদের মস্তিষ্কের হোয়াইট ম্যাটার সংকুচিত হবার প্রবণতা রোগা ব্যক্তিদের গ্রুপের তুলনায় অনেক বেশি। গড়ে দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের সংকোচন তাদের থেকে ১০ বছরের সিনিয়র রোগা ব্যক্তিদের সমান। গবেষণার একজন সহ-গবেষক লিসা রোনানের বক্তব্য অনুযায়ী, “অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তিদের হোয়াইট ম্যাটার সংকোচনের প্রবণতা এত বেশি কেন এই বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। আমরা শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ করছি যে, অতিরিক্ত মুটিয়ে গেলে কিছু পরিবর্তন ঘটে যা আমাদের মস্তিষ্কের পরিবর্তন ঘটাতে সহায়তা করে”।
যদিও গবেষকেরা এর ফলে কি হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন, তারা ধারণা করছেন এর ফলে ব্যাথা হতে পারে। বয়স হয়ে গেলে আমাদের অক্সিডাটিভ স্ট্রেসের লেভেল বেড়ে যায়। এটা এমন একটি পদার্থ যা দেহের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন অণু উৎপন্ন করে। পূর্ববর্তী গবেষণা হতে দেখা যায় যে, হোয়াইট ম্যাটার সংকুচিত হয়ে যাওয়ার ফলে দেহে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। সাইটোকিনেস নামক ফ্যাটি টিস্যু এই প্রদাহ থেকে মুক্তি দিতে পারে, যেমনটি লেপ্টিনের মত ইনফ্যামেন্টারি টিস্যু। গবেষকেরা আশা করছেন এগুলো থেকে হয়তো অন্তত ব্যাখ্যা করা যাবে মুটিয়ে যাওয়ার ফলে কেন নিউরনের এমন মারাত্মক রকমের হ্রাস ঘটে।
সৌভাগ্যক্রমে, হোয়াইট ম্যাটার হারানোর ফলে কোন মোটা ব্যক্তিকে কোন প্রয়োজনীয় বিষয়ে সক্ষমতা হারাতে দেখা যায়নি এমনকি আইকিউ টেস্টে তারা তাদের সমবয়সী রোগা ব্যক্তিদের মতই ভালো পারফর্ম করছেন।
গবেষকেরা আরো হতবুদ্ধি হয়েছেন এটা দেখে যে, এই রকম প্রভাব শুধুমাত্র মধ্যবয়সীদের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয় এবং তারা মনে করছেন যে, এই পর্যায়ে গিয়ে মারাত্মক কোন বায়োলজিক্যাল পরিবর্তন হয়। এই গবেষণায় আরো উল্লেখ করা হয় যে, এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply