জুনো হচ্ছে আমাদের সৌরমণ্ডলের পঞ্চম গ্রহ বৃহস্পতিকে অধ্যয়ন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ অনুসন্ধান পরিষদ নাসা দ্বারা পৃথিবী থেকে ৫ অগাস্ট ২০১১ সালে প্রেরিত একটি মহাকাশযান। এই অভিযানটি যখন শুরু হয় তখন বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন যে এটি পৃথিবী থেকে বৃহস্পতিতে পৌঁছতে ৫ বছর সময় নেবে এবং ২০১৬ সালে অভিযানটি সম্পন্ন হবে। আর অবিশ্বাস্যভাবে অভিযানটি শেষ হয়েছে এই বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। গতকাল রাত ১১.৫৩ টায় (ইডিটি সময়) নাসার জুনো মহাকাশযান সফলভাবে বৃহস্পতির গ্যাসীয় কক্ষপথে পৌঁছতে পেরেছে (এই গ্রহ পাথর বা অন্যান্য কঠিন পদার্থ নয়, বরং কোনো না কোনো গ্যাসীয় উপাদান দ্বারা নির্মিত)। প্রায় ২০.৮ বিলিয়ন কিলোমিটার (১.৭ বিলিয়ন মাইল) অতিক্রম করে জুনো সফল হয়েছে সৌরমন্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতিতে পৌঁছতে।
এটি প্রথমবারের মতো নির্মিত এমন একটি মহাকাশযান, যেটি পৃথিবী থেকে বৃহস্পতিগ্রহের উদ্দ্যেশে যাত্রা করেছে কেবল সৌর শক্তির উপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হল, ৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করে। আর এই ৪ জুলাই জুনোর মিশন সফল হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের খাতায় যুক্ত হল আরেকটি সফলতার অধ্যায়! এই সফল অভিযান কিন্তু নিমেষেই বিফল হতে পারত। যখন মহাকাশযান জুনো বৃহস্পতির একটি অঞ্চল দিয়ে যাচ্ছিল তখন এটি তেজস্ক্রিয় পর্দাথ দ্বারা কিছুটা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। রাত ১১.১৮ মিনিটে (ইডিটি সময়), জুনো ৩৫ মিনিটের মত আগুন দ্বারা জ্বলে উঠেছিল এবং একারণে এটি কক্ষপথে প্রবেশ করার সময় কিছুটা ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। শেষ অবধি এই মহাকাশ অভিযানটি আর কোনো বিঘ্ন ছাড়াই সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছতে পেরেছে।
স্কট বল্টন একটি সংবাদ সম্মেলনে উচ্চস্বরে বলেছেন যে, “নাসা আবার সফলতা অর্জন করেছে”। এই প্রথমবার কোনো মহাকাশযান বৃহস্পতির কক্ষপথের এত নিকট থেকে সে গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করবে। মেঘের উপরে প্রায় ৩ মিলিয়ন কিলোমিটার (২ মিলিয়ন মাইল) উপরে এই মহাকাশযান ভেসে বেড়াবে। জুনোর জন্য প্রাথমিক কক্ষপথ বা অরবিটটি হবে ৫৩ দিনের। কিন্তু ১৯ অক্টোবরে এটি এরচেয়েও ছোট অর্থাৎ ১৪ দিনের অরবিটে স্থানান্তরিত হবে। জুনো বৃহস্পতি গ্রহকে ৩৭ বার পরিক্রমণ করবে এবং এই পরিক্রমা শেষ হবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
জুনোকে যে কারণে সেই গ্রহে প্রেরণ করা হয়েছে তা অনুসন্ধানের জন্যে এটি বৈজ্ঞনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু করবে। বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করতে চাচ্ছেন যে, বৃহস্পতির পৃষ্ঠ শিলাময় কিনা। তারা আরও জানতে চান যে এই গ্রহে পানি আছে কিনা এবং বর্তমানে এই গ্রহ এই অবস্থায় কিভাবে করে আসল। হয়তো এই অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা সৌর জগতের সৃষ্টি এবং এর প্রসারণ সম্পর্কে জানতে পারব। একই সাথে আমরা জানতে পারব আমাদের গ্রহ পৃথিবী সম্পর্কেও! সকল অনুসন্ধানের ফলাফল হয়ত এক সূতায় বাঁধা! তাছাড়া প্রতিনিয়ত খবর পাওয়ার জন্যে জুনোর সঙ্গে বৈজ্ঞনিক যন্ত্রপাতির সাথে একটি ক্যামেরাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা কিনা সে গ্রহের মিশন সম্পর্কে আমাদের জানান দেবে ও ছবি প্রেরণের মাধ্যমে জুনো থেকে আমরা বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দেবে। এটি বৃহস্পতি গ্রহে প্রতি ঘন্টায় ৬১৮ কিলোমিটার বেগে বয়ে চলা বাতাস সম্পর্কেও অনুসন্ধান করবে।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply