বিষ্ময়ে ভরা জ্যোতিবিদ্যার জগতে প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে নানা ঘটনা। হ্যালির ধূমকেতু হচ্ছে সেই সমস্ত মহাকাশের বিষ্ময়গুলোর মধ্যে একটি। আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হল হ্যালির ধূমকেতু যার দেখা পাওয়া যায় প্রতি ৭৫ বছর পর পর। কিন্তু সমস্যা হল, এর কক্ষপথটি মহাকাশের অন্যান্য উপাদান দ্বারা এমনভাবে আবৃত থাকে যে, তার শেষ প্রান্ত কখনই জ্যোতিবিজ্ঞানিদের দ্বারা স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি।
নেদারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের গবেষকদের একটি দলের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে যে, একটি ধূমকেতু ৩০০ বছর পর্যন্ত একই কক্ষপথে আবর্তন করে। এই আবিষ্কারটি গবেষকদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং তারা মনযোগ সহকারে ধূমকেতুর কি কি পরিবর্তন হল তা দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন।
লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জারদা বয়কল্ট বলেন, “আমরা হ্যালি এবং অন্যান্য গ্রহগুলোর সবচেয়ে নির্ভুল হিসাব করেছি যা আগে কখনও করা হয় নি। আশ্চর্যের খবর এই যে, হ্যালি বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে শুক্র গ্রহের দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়, যেখানে পূর্বে বৃহস্পতিকেই হ্যালির কক্ষপথের প্রধান প্রভাবক বলে মনে করা হত।”
গবেষণাটি অনুসারে, এখন শুক্র গ্রহ হ্যালির কক্ষপথ নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেললেও শুক্রের এই কর্তৃত্বটি চিরকালের জন্য থাকছে না। প্রায় ৩০০০ বছর পরে হ্যালির ধূমকেতু বৃহস্পতির খুব কাছাকাছি চলে আসবে, এরপর এটা একটা ধাক্কা খাবে আর এর মাধ্যমে বৃহস্পতি শুক্রের কাছ থেকে হ্যালির ধূমকেতুর কক্ষপথ নির্ধারণের কর্তৃত্ব নিয়ে নেবে। অর্থাৎ তিন হাজার বছর পর হ্যালির কক্ষপথ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করবে বৃহস্পতি।
গবেষক ইন্তি পেলুপেসি জানান, “তবে বৃহস্পতি হ্যালির কক্ষপথকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করলে সেই কক্ষপথটি কিরকম হবে তার ভবিষ্যদ্বাণী বা প্রেডিকশনটি কম সঠিক। কারণ এক্ষেত্রে বৃহস্পতির গ্র্যাভিটির একটা বড় প্রভাব থেকে যায় যেটা আমাদের ক্যালকুলেশনে একটি বড় এরর যুক্ত করছে।”
বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমান্ড হ্যালির নামানুসারে এই ধূমকেতুর নামকরণ করা হয়েছে। কারণ তিনি প্রথম এই ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেন এবং ভবিষ্যৎবাণী করেন যে, হ্যালির ধূমকেতু ৭৫ বছর পর পর দেখা যাবে। এই ধূমকেতুটিকে দেখবার প্রাচীনতম রেকর্ডটি পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৪ অব্দের একটি ব্যাবিলোনিয়ান ট্যাবলেটে থেকে।
১৯৮৬ সালে শেষবার ধূমকেতুটিকে দেখা যায় যখন এটি ইএসএ স্পেসক্রাফট গিওত্তো এর গতিপথে আসে। সে সময় খুব কাছ থেকে ছবি তোলা হয় (হ্যালির ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস থেকে ৫৯৬ কিলোমিটার দূর থেকে)। যাই হোক, হ্যালির কক্ষপথটি যতই অনিশ্চিত হোক না কেন, আমরা হ্যালির ধূমকেতুকে নিয়ম অনুসারে আবার ২০৬১ সালেই দেখতে পাব।
তথ্যসূত্র:
Leave a Reply