লস্কর-ই-তৈয়্যেবা ও তাদের দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট

Table of Contents

ভূমিকা

লস্কর-ই-তৈয়্যেবা (LeT), যার নামের আক্ষরিক অর্থ ‘ভালোর সেনাবাহিনী’ বা ‘ধার্মিকদের সেনাবাহিনী’, পাকিস্তানের মাটি থেকে গজিয়ে ওঠা এক মুসলিম মৌলবাদী (fundamentalist) সংগঠন (Kozak, 2011; Cronin et al., 2004)। উর্দুতে এর নাম لشکر طیبہ। সংগঠনটির আরও কিছু পরিচিত বানান রয়েছে, যেমন লস্কর-ই-তাইয়্যিবা, লস্কর-ই-তোইবা ইত্যাদি (Jayshree Bajoria, 2010; National Counterterrorism Center, 2024)। প্রকাশ্যে তাদের মূল লক্ষ্য হিসেবে কাশ্মীর (Kashmir) এবং পাকিস্তানকে (Pakistan) এক ছাতার নিচে আনার কথা বলা হলেও (The evolution of Islamic Terrorism, 2017), এর কার্যক্রম ও উদ্দেশ্য নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক।

সংগঠনটির জন্ম আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের (Soviet Invasion of Afghanistan) উত্তাল সময়ে, ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন হাফিজ সাঈদ (Hafiz Saeed), জাফর ইকবাল শেহবাজ (Zafar Iqbal Shehbaz), আবদুল্লাহ আজ্জাম (Abdullah Azzam) সহ আরও কিছু ধর্মীয় প্রতিরোধ যোদ্ধা (resistance fighters) (Riedel, 2013; Atkins, 2004; Rabasa et al., 2009; Raman, 2001)।

লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও কিছু সংগঠনের নাম। যেমন, মিলি মুসলিম লীগ (Milli Muslim League) নামে একটি রাজনৈতিক দল এবং জামাত-উদ-দাওয়া (Jamat-ud-Dawa বা JuD)। জামাত-উদ-দাওয়া মূলত লস্করের দাতব্য শাখা হিসেবে পরিচিতি পেলেও পরে তা আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় (Ishfaq, 2019; Pakistan, n.d.)। পাকিস্তানের অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় লস্কর-ই-তৈয়্যেবা কিছুটা ভিন্ন পথে হাঁটে। তারা আহলে হাদিস (Ahl-i Hadith) মতাদর্শের অনুসারী, যা ওয়াহাবিবাদ (Wahhabism) বা সালাফিজম (Salafism) ঘরানার কাছাকাছি (Macander, 2021; Tankel, 2011)। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তারা সাধারণত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সরকার বা সাধারণ মুসলিম জনগণের উপর সরাসরি হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে (Tankel, 2011; Evan Williams, 2009)।

লক্ষ্য ও দর্শন: বিতর্ক ও জটিলতা

লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সামরিক তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীর উপত্যকা (Kashmir Valley) হলেও, তাদের আকাঙ্ক্ষা শুধু সেখানেই থেমে নেই। তারা কাশ্মীর সমস্যাকে দেখে এক বৃহত্তর বিশ্বযুদ্ধের (global struggle) অংশ হিসেবে (Rabasa et al., 2009)। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কাশ্মীরকে ‘মুক্ত’ করার পর তারা একে ব্যবহার করতে চায় “ভারত জয় এবং পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন কায়েমের ঘাঁটি” হিসেবে (Tankel, 2011)।

সংগঠনটির চালিকাশক্তি হলো পশ্চিমা দুনিয়ার প্রতি তীব্র বিরোধিতা। তারা মনে করে, ব্রিটিশ শাসনই (British Raj) ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের (Mughal Empire) পতনের মূল কারণ। তাই পাকিস্তানসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় যেকোনো পশ্চিমা প্রভাবের তারা ঘোর বিরোধী (Tankel, 2011)। তাদের বিভিন্ন প্রকাশনা ও বক্তৃতায় ভারত, হিন্দুধর্ম (Hinduism) এবং ইহুদিধর্মের (Judaism) বিলুপ্তির কথা বারবার উঠে এসেছে। তারা জিহাদকে (jihad) প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয় কর্তব্য মনে করে এবং একটি বিশ্বব্যাপী খিলাফত (caliphate) প্রতিষ্ঠাই তাদের চূড়ান্ত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক লক্ষ্য (Riedel, 2013; Goertz & Streitparth, 2019)।

গবেষক সি. ক্রিস্টিন ফেয়ার (C. Christine Fair), যিনি দীর্ঘদিন ধরে লস্করের প্রচারণার উপর নজর রেখেছেন, তিনি বলেন, সংগঠনটি নিয়মিতভাবে হিন্দু, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের একটি মিলিত “ব্রাহ্মণ্যবাদী-তালমুদিক-ক্রুসেডার” শক্তি হিসেবে তুলে ধরে, যারা মুসলিম উম্মাহকে (Ummah) ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত (Subrahmanian, 2013)।

লস্করের অনুসারীরা মূলত দক্ষিণ এশীয় আহলে হাদিস (Ahl-e-Hadith বা AeH) মতবাদে বিশ্বাসী, যা সালাফিজম (Salafism) ঘরানার অন্তর্ভুক্ত (Macander, 2021)। তারা বিশ্বজুড়ে সামরিক অভিযান এবং এমনকি সাধারণ নাগরিকদের উপর হামলার মতো চরমপন্থী নীতি গ্রহণ করেছে। এর সপক্ষে তারা পবিত্র কুরআনের (Quran) সূরা বাকারার ২১৬ নম্বর আয়াতটি উদ্ধৃত করে:

“তোমাদের উপর যুদ্ধের বিধান দেওয়া হয়েছে, যদিও তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা হয়তো এমন কিছু অপছন্দ করছো যা তোমাদের জন্য ভালো, আবার এমন কিছু পছন্দ করছো যা তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।” (Quran.com, n.d.)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তারা বলে, সামরিক জিহাদ সব মুসলমানের উপর ফরজ এবং নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে তা অবশ্যই পালন করতে হবে। তাদের “আমরা কেন জিহাদ করছি?” শিরোনামের প্রচারপত্রে দাবি করা হয়, ভারতসহ বহু দেশ একসময় মুসলমানদের অধীনে ছিল, তাই সেসব ‘মুসলিম ভূমি’ অমুসলিমদের কাছ থেকে ফিরিয়ে আনা তাদের পবিত্র দায়িত্ব। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইসরায়েলকে “ইসলামের অস্তিত্বের শত্রু” হিসেবে চিহ্নিত করেছে (Haqqani, 2005; Who are the Kashmir militants, 2005)। লস্কর-ই-তৈয়্যেবার মতে, আটটি লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে: বিশ্বজুড়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, অবিশ্বাসীদের থেকে জিজিয়া (jizya) আদায়, নিহত মুসলমানদের রক্তের বদলা, চুক্তিভঙ্গকারী শত্রুদের শাস্তি, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সুরক্ষা এবং দখল হয়ে যাওয়া মুসলিম এলাকা পুনরুদ্ধার। একদা মুসলিম শাসিত অঞ্চলগুলোকে তারা নিজেদের ভূমি মনে করে এবং তা পুনরুদ্ধারকে তাদের প্যান-ইসলামিস্ট (pan-Islamist) ভাবধারার অংশ হিসেবে দেখে (Tankel, 2011; Haqqani, 2005)।

পাকিস্তানের অন্যান্য সালাফি (Salafi) জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর থেকে লস্কর-ই-তৈয়্যেবার একটি বড় পার্থক্য হলো, তারা প্রকাশ্যে নিজেদের মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে দূরে থাকার কথা বলে (Macander, 2021)। যদিও তারা পাকিস্তানের বাইরে সহিংস জিহাদে লিপ্ত, দেশের ভেতরে তারা ধর্মপ্রচার (preaching) এবং সমাজকল্যাণমূলক (social welfare) কাজে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করে (Tankel, 2011)। এই কৌশল এবং দেশের ভেতরে মুসলিমদের উপর হামলা না করার নীতি (যেখানে বহু মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মারা গেছে) তাদের পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা দিয়েছে। ধারণা করা হয়, এই জনসমর্থনই পাকিস্তান সরকারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও লস্করকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে (Tankel, 2011)।

যদিও তারা পাকিস্তানের শাসকদের ‘মুনাফিক’ (hypocrites) বা লোক দেখানো মুসলমান মনে করে, তবুও তারা দেশের অভ্যন্তরে বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জিহাদে বিশ্বাসী নয়। কারণ তাদের মতে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংঘাত “ইসলাম ও কুফরের লড়াই” নয়। তাদের প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, “যদি আমরা ঈমানদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি, তবে যারা ঈমান আনেনি তাদের বিরুদ্ধে লড়তে পারব না।” এর পরিবর্তে তারা দাওয়াত (dawa) বা ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে বিপথগামী মুসলমানদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে চায় এবং সমাজকে নিজেদের আহলে হাদিস ভাবধারায় পরিবর্তন করতে আগ্রহী (Tankel, 2011)।

লস্কর নেতারা বারবার বলেছেন, ভারতীয় কাশ্মীর হলো সবচেয়ে নিকটবর্তী ‘অধিকৃত মুসলিম ভূমি’ এবং সেখানে দখলদার সেনার সংখ্যা অনুপাতে জনসংখ্যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। তাই, তাদের কর্মীদের জন্য অন্যত্র জিহাদ করা ঐচ্ছিক হলেও, কাশ্মীরে যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক (Tankel, 2011)।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে লস্কর-ই-তৈয়্যেবা হঠাৎ ঘোষণা দেয় যে তারা কাশ্মীর সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় এবং তাদের কোনো বৈশ্বিক এজেন্ডা নেই। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, এটি ছিল লোক দেখানো কথা এবং দলটি পর্দার আড়ালে ভারত-বিরোধী তৎপরতা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে (Roul, 2009)। আবু জুন্দাল (Abu Jundal) নামে এক জঙ্গিকে সৌদি আরব থেকে ভারতে পাঠানোর পর তার স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, লস্কর জম্মু ও কাশ্মীরে পুনরায় জঙ্গিবাদ উস্কে দেওয়ার এবং ভারতে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে।

শীর্ষ নেতৃত্ব: পরিচিত মুখগুলো

  • হাফিজ মুহাম্মদ সাঈদ (Hafiz Muhammad Saeed): লস্কর-ই-তৈয়্যেবার প্রতিষ্ঠাতা এবং এর রাজনৈতিক শাখা জামাত-উদ-দাওয়ার (JuD) প্রধান বা আমির (aamir) (We didn’t attack Mumbai, says Lashkar chief, 2008)। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর তিনি দুটি সংগঠনের মধ্যে যোগসূত্র অস্বীকার করে বলেন, “লস্করের কেউ জামাত-উদ-দাওয়ায় নেই, আর আমি কখনোই লস্করের প্রধান ছিলাম না।” তবে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামাত-উদ-দাওয়াকে লস্করের একটি সহযোগী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে (US names jud as terror outfit, sanctions 2 let leaders, 2014)।

  • আব্দুল রেহমান মাক্কী (Abdul Rehman Makki): তিনি ছিলেন লস্করের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড এবং হাফিজ সাঈদের শ্যালক (Parashar, 2012)। তার মাথার দাম হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল (Hafiz Abdul Rahman Makki, 2012; Walsh, 2012)। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান (LeT Deputy Leader Makki dies in Pakistan, 2024)।

  • জাকিউর রেহমান লাখভি (Zakiur Rehman Lakhvi): লস্করের একজন শীর্ষ নেতা, যিনি পাকিস্তানি সেনার হেফাজত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন (Rondeaux, 2008)। তাকে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ধরা হয় (Lakhvi, Yusuf of LeT planned Mumbai attack, 2008; Buncombe, 2008)। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পেশোয়ারে স্কুল হামলার ঠিক পরেই এক পাকিস্তানি আদালত তাকে জামিন দেয় (ATC approves bail of Zakiur Rehman Lakhvi in Mumbai attacks case, 2014)।

  • ইউসুফ মুজাম্মিল (Yusuf Muzammil): লস্করের আরেকজন সিনিয়র সদস্য। মুম্বাই হামলায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র জঙ্গি আজমল কাসাবের (Ajmal Kasab) ভাষ্যমতে, মুজাম্মিলও ছিলেন হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী (Lakhvi, Yusuf of LeT planned Mumbai attack, 2008)।

  • জারার শাহ (Zarrar Shah): বর্তমানে পাকিস্তানি হেফাজতে আছেন। তিনি লস্করের সাথে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর (ISI) সংযোগ রক্ষাকারী প্রধান ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পরিকল্পনায় তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (Schmitt, 2008)। পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে তিনি হামলায় নিজের ভূমিকার কথা স্বীকারও করেছেন (Oppel, 2008)।

  • মুহাম্মদ আশরাফ (Muhammad Ashraf): লস্করের প্রধান অর্থ যোগানদাতা। মুম্বাই হামলার ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, হামলার পর জাতিসংঘ তাকে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নকারীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে (Worth, 2008)। তবে, পাকিস্তানি টিভি চ্যানেল জিও টিভি জানায়, আশরাফ এর অনেক আগেই, ২০০২ সালে, জেলে থাকা অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান (Worth, 2008)।

  • মাহমুদ মোহাম্মদ আহমেদ বাহাজিক (Mahmoud Mohamed Ahmed Bahaziq): সৌদি আরবে লস্কর-ই-তৈয়্যেবার প্রধান নেতা এবং অন্যতম অর্থদাতা। মুম্বাই হামলার সাথে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, হামলার পর জাতিসংঘ তাকেও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নকারীর তালিকায় যুক্ত করে (Worth, 2008; Four Pakistani militants added to UN terrorism sanctions list, 2008)।

  • নাসর জাভেদ (Nasr Javed): একজন কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত সিনিয়র অপারেটিভ। “সন্ত্রাসী সহিংসতাকে উস্কে দেওয়া বা মহিমান্বিত করার” অভিযোগে তাকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে (Home Office name hate promoters excluded from the UK, 2009)।

  • জাফর ইকবাল (Zafar Iqbal): লস্কর-ই-তৈয়্যেবার একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র নেতা (Zafar Iqbal, 2012)। তিনি হাফিজ সাঈদের সাথে মিলে ১৯৮০’র দশকে সংগঠনটি গড়ে তোলেন। তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজও করতেন। এমনকি তিনি প্রাক্তন আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চাইতে সৌদি আরবেও গিয়েছিলেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি লস্কর ও জামাত-উদ-দাওয়ার অর্থ বিভাগ এবং শিক্ষা কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন (Zafar Iqbal, 2012)।

সংগঠনের ইতিহাস ও বিস্তার

গঠন

১৯৮৫ সালে হাফিজ সাঈদ ও জাফর ইকবাল মিলে জামাত-উদ-দাওয়া (JuD) প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল আহলে হাদিস মতাদর্শ প্রচার করা (Zafar Iqbal, 2012)। পরের বছর, জাকি-উর রেহমান লাখভি তার সোভিয়েত-বিরোধী যোদ্ধাদের দল নিয়ে জামাত-উদ-দাওয়ার সাথে যোগ দেন এবং গড়ে তোলেন মারকাজ-উদ দাওয়া-ওয়াল-ইরশাদ (Markaz-ud Dawa-wal-Irshad বা MDI)। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আবদুল্লাহ আজ্জামও ছিলেন, যিনি ১৯৮৯ সালে এক গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন (ধারণা করা হয় আফগান গোয়েন্দা সংস্থা খাদ এর পেছনে ছিল)।

মূলত MDI-এর একটি সামরিক শাখা হিসেবে ১৯৯০ সালে আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে লস্কর-ই-তৈয়্যেবার জন্ম হয় (Lashkar-e-Toiba ‘Army of the Pure’, 2001; Kurth Cronin et al., 2004)। MDI ধর্ম প্রচারে (dawah) মনযোগী হলেও, লস্কর জোর দেয় জিহাদের উপর। তবে হাফিজ সাঈদের মতে, এই দুটি বিষয় অবিচ্ছেদ্য (Tankel, 2011)।

লস্করের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো শুরুতে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (NWFP) থাকলেও পরে অনেকগুলো পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে সরিয়ে নেওয়া হয়, মূলত ভারতে হামলা চালানোর জন্য যোদ্ধা তৈরির উদ্দেশ্যে। ১৯৯১ সালের পর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও আইএসআই-এর (ISI) সহযোগিতায় বহু লস্কর যোদ্ধা কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে (Ashley J. Tellis, 2010)। তবে লস্করের কার্যক্রমে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ঠিক কতটুকু, তা আজও স্পষ্ট নয়।

সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিতকরণ

বিশ্বজুড়ে লস্কর-ই-তৈয়্যেবাকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে দেখা হয়।

  • যুক্তরাজ্য: ২৮ মার্চ ২০০১ সালে এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে (Parliamentary Commissioner for Standards, 2002; Statutory Instrument 2001 No. 1261, 2001)।

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ৫ ডিসেম্বর ২০০১ সালে এটিকে ‘টেরোরিস্ট এক্সক্লুশন লিস্ট’-এ এবং ২৬ ডিসেম্বর ২০০১ সালে ‘বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে (Lashkar-e-Toiba ‘Army of the Pure’, 2001)।

  • পাকিস্তান: ১২ জানুয়ারি ২০০২ সালে লস্কর-ই-তৈয়্যেবাকে নিষিদ্ধ করে (Profile: Lashkar-e-Toiba, 2008)।

  • ভারত: এটিকে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

  • অস্ট্রেলিয়া: ১১ এপ্রিল ২০০৩ সালে এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার এই তালিকা নবায়ন করা হয় (Listed terrorist organizations, n.d.; Criminal Code Amendment Regulations 2007 (No. 12), 2007)।

  • জাতিসংঘ: ২ মে ২০০৮ সালে নিরাপত্তা পরিষদ রেজোলিউশন ১২৬৭ অনুযায়ী এটিকে আল-কায়েদার সহযোগী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর শাখা জামাত-উদ-দাওয়াকেও নিষিদ্ধ করা হয় (UN declares Jamaat-ud-Dawa a terrorist front group, 2008)। সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেলের মতে, লস্কর-ই-তৈয়্যেবা তার পাকিস্তানি পৃষ্ঠপোষকদের কারণে আল-কায়েদার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে (Lashkar-e-Taiba now more dangerous than al Qaeda: US expert, 2012)।

মুম্বাই হামলা ও তার প্রভাব

২০০৮ সালের ভয়াবহ মুম্বাই হামলার (Mumbai attacks) পর লস্কর-ই-তৈয়্যেবার নাম বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার জন্য লস্করকে এবং তাদের দাতব্য শাখা জামাত-উদ-দাওয়াকে (JuD) দায়ী করে (Hafiz Saeed rejects US terrorism accusations, 2012)। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, ৭ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লস্করের একটি ঘাঁটিতে অভিযান চালায় এবং হামলার মূল পরিকল্পনাকারী জাকি-উর-রেহমান লাখভিসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে (Subramanian, 2008)।

এরপর ভারত জাতিসংঘে জামাত-উদ-দাওয়াকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার আবেদন জানায় (Pakistan likely to ban Jamaat-ud-Dawa, 2008)। ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে জাতিসংঘ জামাত-উদ-দাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে পাকিস্তান সরকারও দেশে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এর সমস্ত অফিস বন্ধ করে দেয় (Pakistan bans Jamaat-ud-Dawa, shuts offices, 2008)। এর ফলে জামাত-উদ-দাওয়ার প্রকাশনাগুলোও (যেমন ‘গাজওয়াহ’, ‘মাজাল্লা তুদ দাওয়া’) বন্ধ হয়ে যায়।

আশ্চর্যজনকভাবে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার পর পাকিস্তানের কিছু হিন্দু সংখ্যালঘু গোষ্ঠী জামাত-উদ-দাওয়ার সমর্থনে রাস্তায় নামে। তাদের দাবি ছিল, জামাত-উদ-দাওয়া দাতব্য কাজে (যেমন কূপ খনন, খাদ্য বিতরণ) নিয়োজিত (Hamid Shaikh, 2008)। তবে বিবিসি রিপোর্ট করে যে, এই সমর্থনের পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে; অনেক প্রতিবাদকারী মূল্যবৃদ্ধির মিছিলে এসে নিজেদের অজান্তেই জামাত-উদ-দাওয়ার সমর্থনে ব্যানার ধরেছিল (Hindus rally for Muslim charity, 2008)। অন্যদিকে, জামাত-উদ-দাওয়ার নিষেধাজ্ঞা পাকিস্তানে সমালোচিতও হয়, কারণ সংগঠনটি বিভিন্ন দুর্যোগে (যেমন কাশ্মীর ভূমিকম্প) ত্রাণ কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল এবং বহু স্কুল ও হাসপাতাল পরিচালনা করত। অভিযোগ রয়েছে, জামাত-উদ-দাওয়া এই দাতব্য কাজের আড়ালেই তাদের সামরিক কার্যক্রম চালাত (Jamaat chief rejects Indian charges, 2010)।

নিষেধাজ্ঞার পর জামাত-উদ-দাওয়া ‘তেহরিক-ই-তাহাফুজ কিবলা আওয়াল’ (TTQA) নামে কাজ শুরু করে (Roul, 2009)। ২০১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামাত-উদ-দাওয়াসহ লস্করের আরও কয়েকটি সহযোগী সংগঠনকে (যেমন আল-আনফাল ট্রাস্ট) সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করে (US adds LeT’s parent Jama’at-ud-Dawa to list of Terror Organizations, 2014)।

বিশ্লেষক স্টিফেন ট্যাঙ্কেলের (Stephen Tankel) মতে, পাকিস্তান সহজে লস্করের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না। কারণ, লস্কর দেশের ভেতরে হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে এবং তাদের রয়েছে বিশাল প্রশিক্ষিত যোদ্ধা বাহিনী, যা পাকিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে। এছাড়া, আইএসআই (ISI) লস্করকে ভারতের বিরুদ্ধে একটি নির্ভরযোগ্য ‘প্রক্সি’ বা ছায়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে (Tankel, 2011)।

বিভিন্ন নামে কার্যক্রম ও ফ্রন্ট গ্রুপ

  • মিলি মুসলিম লীগ (Milli Muslim League): ২০১৭ সালে জামাত-উদ-দাওয়ার সদস্যরা এই নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করে, যদিও নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন দেয়নি (Shahzad, 2017; NA-120 by-polls: JUD fields candidate, 2017; Milli Muslim League registration rejected by ECP, 2017)। হাফিজ সাঈদ ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন (Hafiz Saeed-backed MML to contest polls, 2017)।

  • নাম বদল: ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তান সরকার জামাত-উদ-দাওয়া ও এর দাতব্য শাখা ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশন (FIF)-কে আবার নিষিদ্ধ করলে, তারা নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে ‘আল মাদিনা’ ও ‘আইসার ফাউন্ডেশন’ নামে কার্যক্রম অব্যাহত রাখে (Jamat-ud-Dawa, its charity arm Falah-e-Insaniat Foundation change name, bypass ban, 2019; Ban not fully enforced, 2019)।

  • দ্য রেসিস্টেন্স ফ্রন্ট (TRF): ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে (Gupta, S., May 8 2020)। লস্করের নেতারাই এর মূল চালিকাশক্তি (Gupta, S., May 8 2020; ‘Pakistan trying to securalise Kashmir militancy’, 2020)। ২০২০ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের উপর হামলাসহ বেশ কিছু ঘটনার দায় স্বীকার করে TRF (Gupta, S., May 8 2020; Pubby & Chaudhury, 2020)। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী একে একটি ‘সোশ্যাল মিডিয়া সত্তা’ বলে অভিহিত করেছে (Security Forces Have Eliminated Over 100 Militants…, 2020)। ভারত সরকার TRF-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে (Lavania, n.d.)।

  • পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট (PAFF): এটিকে শুরুতে লস্করের শাখা ভাবা হলেও (People’s Anti-Fascist Front (PAFF) – Jammu & Kashmir, n.d.), ভারতীয় পুলিশ একে জইশ-ই-মুহাম্মদের (JeM) অংশ বলে দাবি করে (Kashmir police arrest suspect…, 2022)। ২০১৯ সালের কাশ্মীর অস্থিরতার পর এর জন্ম হয় এবং সংগঠনটি কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর উপর হামলার দায় স্বীকার করেছে (Prison chief killed in India-occupied Kashmir…, 2022; Jammu and Kashmir police deny any terror link…, 2022; J&K’s new terror outfit ‘People’s Anti-Fascist Front’…, 2020)।

কাশ্মীরে লস্করের প্রভাব

আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের পরাজয়ের পর, পাকিস্তান রাষ্ট্রের সহযোগিতায় লস্কর-ই-তৈয়্যেবা ও অন্যান্য মুজাহিদীন যোদ্ধারা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উগ্র ইসলামপন্থী মতাদর্শ ছড়ানো এবং জিহাদের মাধ্যমে ভারতীয় শাসনের অবসান ঘটানো (Who is Lashkar-e-Tayiba, 2008)।

কার্যকলাপ: সামরিক ও মানবিক

প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ শিবির

লস্কর-ই-তৈয়্যেবা একদিকে যেমন সামরিক প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করে, তেমনি অন্যদিকে মানবিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। পাকিস্তানজুড়ে তাদের রয়েছে বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা, ক্লিনিক ও মাদ্রাসা (Lashkar-e-Toiba ‘Army of the Pure’, 2001)। তারা কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর উপর আত্মঘাতী (martyrdom) হামলা চালিয়েছে। আবার, লস্কর থেকে বেরিয়ে যাওয়া কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে, বিশেষ করে করাচিতে, হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে, যা মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফের নীতির বিরোধিতা হিসেবে দেখা হয় (Profile: Lashkar-e-Toiba, 2008; Indians in Pak ready to work for LeT: Headley, 2011; Some Karachi-based Indians willing to work with LeT: Headley, 2011)।

  • প্রকাশনা: লস্কর-ই-তৈয়্যেবা পাকিস্তানে জিহাদি সাহিত্যের অন্যতম বড় প্রকাশক। তাদের সম্পাদনা সংস্থা ‘দার আল আন্দালুস’ (Dar al Andalus) থেকে বহু প্রকাশনা বের হয়। ৯০-এর দশকে তাদের উর্দু মাসিক ‘মুজাল্লাহ আল-দাওয়াহ’র প্রচার সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। এছাড়া ‘গাজওয়া’ নামে আরেকটি মাসিক এবং ছাত্র, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা প্রকাশনাও ছিল। তারা ইংরেজি ও আরবি ভাষাতেও পত্রিকা প্রকাশ করত এবং প্রতি বছর বিভিন্ন ভাষায় প্রায় ১০০টি পুস্তিকা বের করত (Fair, 2018)। এটিকে একটি লাভজনক মাধ্যম হিসেবেও দেখা হতো (Rana & Mir, 2004)।

  • প্রশিক্ষণ শিবির: পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে লস্করের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। লাহোরের কাছে মুরিদকেতে (Muridke) অবস্থিত ‘মারকাজ-ই-তৈয়্যেবা’ (Markaz-e-Taiba) তাদের প্রধান ঘাঁটি। এছাড়া মানশেরা (Manshera) সহ অন্যান্য স্থানেও তাদের শিবির রয়েছে। এসব শিবিরে সাধারণত তিন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়:

    • ২১ দিনের ধর্মীয় কোর্স (দাউরা-ই-সুফা – Daura-e-Sufa) (Dholabhai, 2006)

    • ২১ দিনের মৌলিক যুদ্ধ প্রশিক্ষণ (দাউরা-ই-আম – Daura-e-Aam) (Swami, 2008)

    • তিন মাসের উচ্চতর যুদ্ধ প্রশিক্ষণ (দাউরা-ই-খাস – Daura-e-Khaas) (Swami, 2008; Raman, 2001)
      মুম্বাই হামলার এক ষড়যন্ত্রকারী জাবিউদ্দিন আনসারির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তাদের প্রশিক্ষণে প্যারাগ্লাইডিংও অন্তর্ভুক্ত ছিল (Paragliding part of LeT training camp: Jundal, 2012)।
      এই প্রশিক্ষণ শিবিরগুলো পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI)-এর জ্ঞাতসারেই পরিচালিত হতো, কারণ ভারত ও আফগানিস্তানে এদের ব্যবহারের সুযোগ ছিল। যদিও ২০০৬ সালের পর তাদের সরাসরি অভিযান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় (The trouble with Pakistan by Economist, 2006)। ফরাসি সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ জ্যঁ-লুই ব্রুগুইয়ের (Jean-Louis Bruguière) দাবি করেছেন, পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারাও এই শিবিরগুলোতে প্রশিক্ষণ দিত (Pakistani Army ran Muslim extremist training camps: Anti-terrorist expert, 2009; Bremner, 2009)।

    • মারকাজ-ই-তৈয়্যেবা (Markaz-e-Taiba): মুরিদকের কাছে অবস্থিত এই বিশাল ঘাঁটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই কমপ্লেক্সে মাদ্রাসা, হাসপাতাল, বাজার, আবাসিক এলাকা, মাছের খামার ও কৃষিজমি রয়েছে। এখানেই জঙ্গিদের প্রাথমিক ধর্মীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় (Dholabhai, 2006)।

    • অন্যান্য প্রশিক্ষণ শিবির: ১৯৮৭ সালে লস্কর আফগানিস্তানে দুটি শিবির স্থাপন করে (Rao et al., 2008)। এছাড়াও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে তাদের একাধিক শিবির ছিল, যার মধ্যে মুজাফফরাবাদের ‘উম্ম-আল-কুরা’ (Umm-al-Qura) প্রধান। রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব শিবিরে প্রতি মাসে শত শত জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং ২০০৪ সাল নাগাদ প্রায় দশ হাজার জঙ্গি প্রশিক্ষণ লাভ করেছিল (Abou Zahab & Roy, 2004; Rana, 2004)।

অর্থের উৎস: দান ও বিতর্ক

পাকিস্তান সরকার ১৯৯০-এর দশকে লস্কর-ই-তৈয়্যেবাকে অর্থায়ন শুরু করে, যা পরে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে আইএসআই (ISI) ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য লস্করের সামরিক কাঠামো তৈরিতে সাহায্য করে। সংগঠনটি তাদের নিজস্ব অর্থ বিভাগের (MDI’s Department of Finance) মাধ্যমেও তহবিল সংগ্রহ করত (Tankel, 2011)।

২০০২ সাল পর্যন্ত তারা প্রকাশ্যে দাতব্য বাক্স ব্যবহার করে, এমডিআই অফিসে অনুদান গ্রহণ করে এবং কর্মীদের শাহাদাত (martyrdom) উদযাপন অনুষ্ঠানে চাঁদা তুলে অর্থ সংগ্রহ করত (Tankel, 2011)। এছাড়া পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পাকিস্তানি প্রবাসী, বিভিন্ন এনজিও (NGO) এবং পাকিস্তানি ও কাশ্মীরি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তারা অর্থ পেত (Lashkar-e-Toiba ‘Army of the Pure’, 2001; Tankel, 2011; Lashkar-e-Taiba, n.d.)। ভারতেও তাদের অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পাওয়া গেছে (Meet the Lashkar-e-Tayiba’s fundraiser, 2006)।

সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ বৈধ ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হলেও, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ সামরিক কার্যকলাপে ব্যয় হতো। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মধ্যে লস্করের বার্ষিক সামরিক বাজেট ছিল ৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি (Tankel, 2011)।

  • ত্রাণ তহবিলের অপব্যবহার: ২০০৫ সালের কাশ্মীর ভূমিকম্পের (Kashmir earthquake) পর লস্কর ত্রাণ কাজে অংশ নেয় এবং অনেক জায়গায় সরকারি সংস্থার আগেই পৌঁছে যায় (Kate Clark, 2006; McGirk, 2005)। তবে অভিযোগ ওঠে, ব্রিটেনে ভূমিকম্প দুর্গতদের জন্য সংগৃহীত বিপুল অর্থ (প্রায় ৫ মিলিয়ন পাউন্ড) দাতাদের অজান্তেই লস্করের তহবিলে চলে যায়। এই অর্থের একটি অংশ ট্রান্সআটলান্টিক বিমানে বোমা হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হয়েছিল বলেও গোয়েন্দারা জানান (Partlow & Kamran Khan, 2006)। ত্রাণ সহায়তাকে যোদ্ধা নিয়োগের কাজে লাগানোর অভিযোগও রয়েছে (Quake came as a boon for Lashkar leadership, 2005)।

আলোচিত হামলা ও ঘটনা

লস্কর-ই-তৈয়্যেবার নাম জড়িয়ে আছে বেশ কিছু রক্তক্ষয়ী হামলা ও ঘটনার সাথে:

  • ১৯৯৮, ওয়ান্ধামা হত্যাকাণ্ড: ২৫ জানুয়ারি ২৩ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা (Violent ‘army of the pure’, 2001)।

  • ২০০০, চিত্তিসিংহপুরা হত্যাকাণ্ড: কাশ্মীরে ৩৫ জন শিখ নাগরিককে হত্যা। গ্রেপ্তার হওয়া এক জঙ্গি এর দায় স্বীকার করলেও হাফিজ সাঈদ তা অস্বীকার করেন (Lashkar militant admits killing Sikhs…, 2000; Bearak, 2000)। ডেভিড হেডলি পরে নিশ্চিত করেন যে লস্করই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল (Lashkar behind Sikh massacre…, 2010; Chittisinghpura Massacre: Obama’s proposed visit…, 2010)।

  • ২০০০, লাল কেল্লা হামলা: দিল্লির ঐতিহাসিক লাল কেল্লায় হামলা, যাতে লস্কর জড়িত ছিল বলে ভারত সরকার দাবি করে এবং লস্করও পরে তা স্বীকার করে (Red Fort attackers’ accomplice shot, 2000; Q+A – Who is Pakistan’s Hafiz Mohammad Saeed?, 2009)।

  • শ্রীনগর বিমানবন্দর হামলা: এই হামলায় ৫ ভারতীয় ও ৬ জঙ্গি নিহত হয়, যার দায় লস্কর স্বীকার করে (Q+A – Who is Pakistan’s Hafiz Mohammad Saeed?, 2009)।

  • সীমান্তে হামলা: ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার দায় স্বীকার (Q+A – Who is Pakistan’s Hafiz Mohammad Saeed?, 2009)।

  • ২০০১, সংসদ হামলা: দিল্লির ভারতীয় সংসদে হামলা। ভারত সরকার এর জন্য লস্কর ও জইশ-ই-মোহাম্মদকে দায়ী করে (Prashant, 2001)।

  • ২০০২, কালুচক হত্যাকাণ্ড: ৩১ জন নিহত। অস্ট্রেলিয়া এই হামলার জন্য লস্করকে দায়ী করে।

  • ২০০৩, নাদিমার্গ হত্যাকাণ্ড: ২৪ জন কাশ্মীরি হিন্দুকে গুলি করে হত্যা।

  • ২০০৫, দিল্লি বোমা হামলা: দিওয়ালির সময় দিল্লির বাজারে সিরিজ বোমা হামলায় ৬০ জন নিহত ও ৫২৭ জন আহত। ‘ইসলামী ইনকিলাবী মাহাজ’ নামে লস্কর এর দায় স্বীকার করে (Majumder, 2005; Group Says It Staged Indian Blasts, 2005; Delhi Metro was in LeT’s cross-hairs, 2005)।

  • ২০০৬, বারাণসী বোমা হামলা: উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে সিরিজ বোমা হামলায় ৩৭ জন নিহত (Lashkar behind blasts: UP official, 2006)।

  • ২০০৬, ডোডা হত্যাকাণ্ড: কাশ্মীরে ৩৪ জন হিন্দুকে হত্যা।

  • ২০০৬, মুম্বাই ট্রেন বোমা হামলা: সিরিজ বোমা হামলায় ২১১ জন নিহত ও বহু আহত। তদন্তে লস্করের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে (350 rounded up in Maharashtra, 2006)।

  • ২০০৬, পোপের বিরুদ্ধে ফতোয়া: মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে পোপ বেনেডিক্ট ষোড়শকে হত্যার ফতোয়া জারি (Raman, 2006)।

  • ২০০৬, শীর্ষ জঙ্গির মৃত্যু: লস্করের শীর্ষ কমান্ডার আবু সাদ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত (Top Lashkar-e-Taiba militant killed, 2007)।

  • ২০০৮, মুম্বাই হামলা: ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর মুম্বাই জুড়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা (জিম্মি, বোমা, গুলিবর্ষণ)। লস্কর দায় অস্বীকার করলেও, ধৃত জঙ্গি আজমল কাসাব এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো লস্কর ও আইএসআই-এর জড়িত থাকার প্রমাণ দেয় (Chaos reigns throughout Bombay, 2008; Three Pakistani militants held in Mumbai, 2008; Lashkar-e-Taiba responsible for Mumbai terroristic act, 2008; Mark Mazzetti, 2008; Hussain, 2009)। এই ঘটনার পর পাকিস্তান চাপের মুখে লস্করের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় (Pakistan raids camp over Mumbai attacks, 2008)।

  • ২০০৯, পোশাক বিধি: কাশ্মীরের কলেজগুলোতে ইসলামিক পোশাক বিধি চাপানোর আল্টিমেটাম জারি (Impose Islamic dress code in colleges: LeT, 2009)।

  • ২০০৯, ইহুদি স্থাপনায় হামলার ছক: ভারত ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা পুনে সহ বিভিন্ন স্থানে ইহুদিদের উপর লস্করের হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে সতর্ক করে (Anti-Defamation League, 2009)।

  • ২০০৯, ঢাকা দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা: মুম্বাই হামলার বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় মার্কিন ও ভারতীয় দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা ফাঁস হয় এবং লস্করের সদস্যসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয় (Anti-Defamation League, 2009)।

দি রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (The Resistance Front)

দি রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (The Resistance Front, সংক্ষেপে TRF) একটি সশস্ত্র সংগঠন, যাদের সম্পর্কে অভিযোগ আছে যে, তারা মূলত লস্কর-ই-তৈয়বার (Lashkar-e-Taiba) একটি ছায়া সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। ২০১৯ সালে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই ভারত সরকার TRF-কে অভিযুক্ত করে আসছে যে, তারা জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে— নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা, নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য অস্ত্র পরিবহনে সমন্বয় সাধন, নতুন জঙ্গি সদস্য নিয়োগ, সীমান্ত পার হয়ে অনুপ্রবেশ এবং অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান (Lavania, 2023)।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারত সরকার TRF-কে আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট (Unlawful Activities Prevention Act, UAPA)-এর অধীনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একইসাথে সংগঠনটির কমান্ডার শেখ সাজ্জাদ গুলকে (Sheikh Sajjad Gul) সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে আসে ২০১৮ সালের জুনে কাশ্মীরি সাংবাদিক সুজাত বুখারির (Shujaat Bukhari) হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে TRF-এর সম্পৃক্ততার সন্দেহ (Lavania, 2023)।

সম্প্রতি, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে (Pahalgam) সংঘটিত ভয়াবহ হামলার দায়িত্ব গ্রহণ করে TRF, যেখানে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। তবে সংগঠনটি কিছুদিন পরেই এক বিবৃতিতে এই হামলার দায়িত্ব অস্বীকার করে এবং দাবি করে যে, এটি তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত একটি অপপ্রচারের অংশ (Al Jazeera, 2025; Mogul et al., 2025; Sharma, 2025; The Economic Times, 2025)। পরে তাদের নিয়ে বিস্তারিত লিখছি।

নেতৃত্বের পতন ও গ্রেপ্তার

বিভিন্ন সময়ে লস্কর-ই-তৈয়্যেবার বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সদস্য নিহত বা গ্রেপ্তার হয়েছেন:

  1. ডেভিড হেডলি: মুম্বাই হামলার রেকি এবং ডেনমার্কে হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন (Sweeney, 2013; UNITED STATES DISTRICT COURT…, 2009)।

  2. তাহাউর হুসেন রানা: হেডলিকে সহায়তার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রে কারাদণ্ড ভোগ করার পর ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে (Johnston & Schmitt, 2009; Businessman Tahawwur Rana gets 14 years…, 2013; Tahawwur Rana: US court approves extradition…, 2023; Singh, 2025)।

  3. আবরার: আফগানিস্তানে লস্করের গোয়েন্দা প্রধান, আফগান বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন (Afghan Special Forces Arrest Key Member…, 2019; Says, 2019)।

  4. আবু দুজানা: কাশ্মীরে লস্করের প্রধান, ২০১৭ সালে ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত (Abu Dujana, Ruthless Terrorist…, 2017)।

  5. আবু কাসিম: অপারেশন কমান্ডার, ২০১৫ সালে যৌথ অভিযানে নিহত (Lashkar-e-Taiba leader Abu Qasim killed…, 2015)।

  6. জুনায়েদ মাট্টু: কুলগামের কমান্ডার, সংঘর্ষে নিহত (Top Lashkar Terrorist Junaid Mattoo Killed…, 2018)।

  7. ওয়াসিম শাহ: নিয়োগকারী ও হামলাকারী, ২০১৭ সালে নিহত (LeT Commander Waseem Shah…, 2017)।

  8. শীর্ষ কমান্ডারদের মৃত্যু: ২০১৭ সালে লাখভির ভাগ্নেসহ ৬ জন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হন (Zaki-ur-Rehman Lakhvi’s nephew…, 2017)।

  9. আব্দুল রেহমান মাক্কী: সেকেন্ড-ইন-কমান্ড, ২০২৪ সালে হৃদরোগে মারা যান (LeT Deputy Leader Makki dies in Pakistan, 2024)।

  10. আবু কাতাল: সিনিয়র অপারেশন কমান্ডার, ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর হাতে নিহত (Who was Abu Qatal?…, 2025)।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিতর্ক

  • সৌদি সংযোগ: উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব লস্কর সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অর্থের অন্যতম প্রধান উৎস (US embassy cables: Hillary Clinton…, 2010; Walsh, 2010)। লস্কর একটি সৌদি ভিত্তিক ফ্রন্ট কোম্পানি ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করত বলেও জানা যায় (Walsh, 2010; US embassy cables: Lashkar-e-Taiba terrorists…, 2010)।

  • ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: লস্করের হামলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার ভঙ্গুর সম্পর্কে বারবার উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ধারণা করা হয়, লস্করের একটি কৌশল হলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মনোযোগ পশ্চিম সীমান্ত থেকে সরিয়ে ভারতের দিকে নিবদ্ধ রাখা। এছাড়া ভারতে হামলা চালিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ উস্কে দেওয়াও তাদের অন্যতম লক্ষ্য (Rabasa et al., 2009)।

  • আইএসআই (ISI) সম্পৃক্ততা: পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর বিরুদ্ধে লস্করকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের (Atkins, 2004)। ২০১০ সালে মুম্বাই হামলার ঘটনায় ইন্টারপোল দুজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করেছিল (Nelson, 2010)। আইএসআই লস্করকে জম্মু অঞ্চলে নেটওয়ার্ক বিস্তারে সহায়তা করেছে বলেও মনে করা হয় (Lashkar-e-Taiba, 2012)। যদিও পাকিস্তান সরকার বরাবরই লস্করকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে, ভারতসহ অনেকেই আইএসআই-এর ভূমিকার দিকে আঙুল তোলে (Lashkar-e-Toiba ‘Army of the Pure’, 2001)।

  • আফগানিস্তানে ভূমিকা: লস্কর আফগানিস্তানে সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে তালেবান ও আল-কায়েদার সাথেও তাদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। যদিও দেওবন্দী গোষ্ঠীগুলোর সাথে তাদের আদর্শিক বিরোধ রয়েছে, আইএসআই-এর সাথে ঘনিষ্ঠতার কারণে আফগান মাটিতে তাদের কিছুটা বিচরণ ছিল (Stephen, 2010; Taliban’s Kashmir policy…, 2022)। মুরিদকেতে তাদের ঘাঁটি আফগানিস্তানে যোদ্ধা পাঠানোর ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গুয়ানতানামোর কিছু বন্দীর লস্করের শিবিরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে (Khalid Bin Abdullah Mishal Thamer Al Hameydani’s Combatant Status Review Tribunal, n.d.)। লস্কর আফগানিস্তানে ভারতীয় স্থাপনা ও কর্মীদের উপরও হামলা চালিয়েছে (Rubin, 2010)।

অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক

লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সাথে বিশ্বের অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোরও যোগাযোগ রয়েছে:

  • আল-কায়েদা: লস্কর আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়েদাকে সহায়তা করেছে (Martin, 2011)। আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আবু জুবায়দাহ লস্করের এক সেফহাউস থেকে গ্রেপ্তার হন (Jayshree Bajoria, 2010; Schmidt & Gorman, 2008)। ডেভিড হিকস, রিচার্ড রিডের মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গিরাও লস্করের শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয় (Schmidt & Gorman, 2008)।

  • জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM): ২০০১ সালের ভারতীয় সংসদ হামলায় লস্কর ও জইশ একসাথে কাজ করেছিল বলে সন্দেহ করা হয়।

  • হিজব-উল-মুজাহিদীন: কাশ্মীরে লস্কর ও হিজবুল অনেক অপারেশন একযোগে চালিয়েছে এবং তাদের মধ্যে এখনও সহযোগিতা বিদ্যমান বলে মনে করা হয়।

  • অন্যান্য: ফিলিপাইন, বসনিয়া, চেচনিয়াতেও লস্কর সদস্যদের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে (Lashkar-e-Tayyiba (LT), 2002)। এমনকি শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগার (LTTE)-দের সাথেও তাদের অস্ত্র লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে (Sri Lankan report links LTTE with LeT, 2009)।

  • পশ্চিমা দেশে তৎপরতা: লস্করের ঘাঁটি ১৯৯৩ সালের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলার আসামী রামজি ইউসেফ এবং সিআইএ অফিসার হত্যাকারী মীর আইমাল কানসির আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল (Statement by CIA and FBI on Arrest of Mir Aimal Kansi, 1997)। যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভার্জিনিয়া জিহাদ নেটওয়ার্ক’ নামে পরিচিত একটি দল লস্করের শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয় এবং পরে দোষী সাব্যস্ত হয় (Markon, 2006; Anti-Defamation League, 2009)। আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক লস্করের সাথে যুক্ত থাকার বা যোগ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন (Anti-Defamation League, 2009; FBI – Help Us Catch a Terrorist, 2012; FBI offering $50G reward…, 2012)।

দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (The Resistance Front): কাশ্মীরের আলো-আঁধারির নতুন চরিত্র

জম্মু ও কাশ্মীরের সংঘাতপূর্ণ উপত্যকায় সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত একটি নাম হলো ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (The Resistance Front – TRF)। এটি একটি ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী (Islamist group), যা ভারত সরকারের মতে পাকিস্তান-সমর্থিত ইসলামপন্থী বিদ্রোহের (Pakistan-sponsored Islamist insurgency) অংশ হিসেবে সক্রিয়। ভারত এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন (terrorist organisation) হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে (Joy, 2023)।

গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা বেশ দীর্ঘ। বেসামরিক নাগরিক (civilians), বিশেষ করে কাশ্মীরি হিন্দুসহ (Kashmiri Hindus) অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের (religious minority communities) মানুষের উপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে (Observer Research Foundation, 2021; Basak, 2021; Shukla, 2020; Firstpost, 2024)। এছাড়াও সরকারি কর্মচারী (government employees) (Majid, 2024), সাধারণ শ্রমিক (labourers) ও ব্যবসায়ী (business owners), স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী (local politicians) (Shukla, 2020), এমনকি পর্যটকদেরও (tourists) লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তারা (Gupta, 2024)। এর পাশাপাশি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী (armed forces) ও পুলিশ বাহিনীর (police forces) উপর একাধিক হামলার দায়ও স্বীকার করেছে বা তাদের উপর চাপানো হয়েছে (Masood, 2020; India TV News, 2021; Firstpost, 2024)।

কারা এই TRF? কোথা থেকে তাদের উত্থান?

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, TRF আসলে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বারই (Lashkar-e-Taiba) একটি শাখা সংগঠন (offshoot), যা ভারত কর্তৃক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত (Stanford University, 2016)। তাদের মতে, লস্কর-ই-তৈয়বা এই নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করেছে (Raseed, 2020; Masood, 2020)। জানা যায়, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং হিজবুল মুজাহিদিন (Hizbul Mujahideen)-এর মতো পুরনো জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের (cadres) নিয়েই মূলত TRF গঠিত হয়েছে (Observer Research Foundation, 2021; Firstpost, 2024; Mir, 2021)।

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে যখন ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (special status) সম্বলিত ৩৭০ ধারা বাতিল করে, ঠিক তার কয়েক মাস পর, অক্টোবর ২০১৯-এ TRF-এর উত্থান ঘটে (Lavania, 2023; Times Now, 2023)। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, TRF নিজেদের একটি ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠী হিসেবে পরিচয় না দিয়ে, বরং কাশ্মীরের ‘স্বদেশী প্রতিরোধ আন্দোলন’ (indigenous Kashmiri resistance movement) হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। তাদের লোগো, বিবৃতি এবং হামলার কারণ দেখানোর ধরণে পুরনো ইসলামপন্থী কাশ্মীরি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর (যেমন হিজবুল মুজাহিদিন) চেয়ে ভিন্নতা দেখা যায়; তারা অ-ধর্মীয় পরিভাষা (non-religious nomenclature) ও প্রতীক (symbolism) ব্যবহার করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ (secular) ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করে (idsa.in, 2024; Raseed, 2020)। কিন্তু এই চেষ্টার সাথেই এক অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা যায় যখন তারা ধারাবাহিকভাবে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায় (Shukla, 2020; Observer Research Foundation, 2021; Basak, 2021)।

TRF সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (social media) বেশ সক্রিয়। ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশের দাবি, তাদের এই অনলাইন প্রচারণার অনেক কলকাঠি নাড়া হয় পাকিস্তান থেকে (Gupta, 2020)।

২০২০ সালের এপ্রিলে কুপওয়ারা জেলার কেরান সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখার (Line of Control – LoC) কাছে ভারতীয় প্যারা কমান্ডোদের (paracommandos) সাথে চার দিনের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পাঁচজন কমান্ডো ও পাঁচজন TRF জঙ্গি (militants) নিহত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে (Ashiq, 2021)।

কার্যকলাপ ও লক্ষ্যবস্তু

TRF-এর কার্যকলাপের মধ্যে রয়েছে কাশ্মীরি পণ্ডিত (Kashmiri Pandits) ও হিন্দুদের বেছে বেছে আক্রমণ করা (idsa.in, 2024)। цікаво (tsikavo – interesting/noteworthy), এই ধরনের বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের পর পুরনো জঙ্গি সংগঠনগুলো (লস্কর বা হিজবুল) দায় স্বীকার না করলেও, TRF প্রায়শই দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে (idsa.in, 2024)।

ভারত সরকারের অভিযোগ অনুযায়ী, TRF নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের উপর হামলার পরিকল্পনা, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর জন্য অস্ত্র সরবরাহ ও পরিবহন সমন্বয় করা, নতুন সদস্য নিয়োগ (recruitment), সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশ (infiltration) করানো এবং অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের (smuggling) মতো নানা বেআইনি কাজে লিপ্ত (Lavania, 2023)।

২০২২ সালে এই অঞ্চলে ঘটা হত্যাকাণ্ডের একটি বড় অংশের জন্য TRF-কে দায়ী করা হয়। নতুন সদস্য টানার ক্ষেত্রেও তারা বেশ সক্রিয়, যা তাদের জম্মু ও কাশ্মীরের অন্যতম প্রধান জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে (Firstpost, 2023; Lavania, 2023)। গোষ্ঠীটি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও ও পোস্টার ব্যবহার করে তাদের মতাদর্শ প্রচার (propaganda) করে থাকে (Firstpost, 2023; Lavania, 2023)।

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, অনন্তনাগ জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপর গেরিলা কৌশলে (guerilla warfare strategy) চালানো এক হামলার দায় স্বীকার করে TRF। তারা এটিকে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে তাদের কমান্ডার রিয়াজ আহমেদের হত্যার প্রতিশোধ (act of revenge) হিসেবে বর্ণনা করে (Firstpost, 2023; Lavania, 2023)।

কিছু উল্লেখযোগ্য হামলা ও ঘটনা

TRF কর্তৃক সংঘটিত বা তাদের উপর আরোপিত কিছু ঘটনা নিচে দেওয়া হলো:

  • ৫ এপ্রিল ২০২০: কেরানে দুই TRF জঙ্গি আত্মঘাতী হওয়ার আগে পাঁচজন ভারতীয় প্যারা স্পেশাল ফোর্সেস (PARA SF) সদস্যকে হত্যা করে (India Today, 2020)।

  • ১৮ এপ্রিল ২০২০: সোপোরে অতর্কিত হামলায় (ambush) তিনজন সিআরপিএফ (CRPF) জওয়ান নিহত ও দুজন আহত হন (India Today, 2020)।

  • ৩ মে ২০২০: এক সংঘর্ষে পাঁচজন ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মী (একজন কর্নেল, একজন মেজর ও একজন এসওজি ইন্সপেক্টর সহ) এবং দুজন TRF জঙ্গি নিহত হন (Al Jazeera, 2020)।

  • ৫ মে ২০২০: হামলায় চারজন সিআরপিএফ সদস্য ও একজন স্থানীয় প্রতিবন্ধী বেসামরিক নাগরিক নিহত, পাঁচজন সিআরপিএফ সদস্য আহত হন। নিহতদের অস্ত্রও ছিনিয়ে নেওয়া হয় (The Real Kashmir News, 2020)।

  • ২১ মে ২০২০: পুলওয়ামায় সিআরপিএফ/জেকেপি (CRPF/JKP) দলের উপর হামলায় দুজন সদস্য নিহত ও একজন আহত হন (India Today, 2020)।

  • ৮ জুন ২০২০: একজন কাশ্মীরি পণ্ডিত গ্রাম প্রধানকে (সরপঞ্চ – sarpanch) গুলি করে হত্যা করা হয় (HuffPost, 2020)।

  • ১ জুলাই ২০২০: সোপোরে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলায় দুজন সদস্য ও একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, তিনজন সদস্য আহত হন। গুলি বিনিময়ের মাঝে পড়ে নিহত ৬৪ বছর বয়সী বেসামরিক নাগরিকের রক্তাক্ত দেহের উপর বসে থাকা তার নাতির ছবি কাশ্মীর জুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয় (Al Jazeera, 2020)।

  • ৮ জুলাই ২০২০: বান্দিপোরায় এক বিজেপি নেতা, তার বাবা ও ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয় (Mushtaq, 2020)।

  • ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০: শ্রীনগরে বিশিষ্ট আইনজীবী বাবর কাদরীকে তার বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয় (Al Jazeera, 2020)।

  • ৬ অক্টোবর ২০২০: গান্দারবালে এক বিজেপি নেতার বাসভবনে হামলায় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী (PSO) নিহত হন, একজন জঙ্গিও মারা যায় (Greater Kashmir, 2020)।

  • ৩০ অক্টোবর ২০২০: কুলগামে তিনজন বিজেপি কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। TRF এর দায় স্বীকার করে (The Economic Times, 2020)।

  • ৮ নভেম্বর ২০২০: কুপওয়ারার মাচিল সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা বানচাল করার সময় সংঘর্ষে তিনজন সেনা, একজন বিএসএফ (BSF) জওয়ান এবং তিনজন জঙ্গি নিহত হন (India Today, 2020)।

  • ২৩ ডিসেম্বর ২০২০: গান্দারবালে সিআরপিএফ দলের উপর গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণে দুজন সদস্য আহত হন (India Today, 2020)। (পূর্বের তথ্যে ২ জন নিহত বলা হয়েছিল, কিন্তু এই সূত্র অনুযায়ী আহত)

  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২০: শ্রীনগরে সীতপাল নিশ্চল নামক এক জুয়েলারকে হত্যা করা হয় (Crisis Group, 2022)।

  • ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১: শ্রীনগরের বাঘাট এলাকায় ব্যস্ত বাজারে দুজন পুলিশকর্মীকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয় (ThePrint, 2021)।

  • ২৯ মার্চ ২০২১: সোপোরে পৌর কাউন্সিলরদের বৈঠকের উপর হামলায় একজন পুলিশকর্মী ও দুজন বিজেপি কাউন্সিলর নিহত হন (The Wire, n.d.)।

  • ১ এপ্রিল ২০২১: শ্রীনগরে এক বিজেপি নেতার বাড়ির নিরাপত্তা পোস্টে হামলায় একজন পুলিশকর্মী নিহত হন (ThePrint, 2021)।

  • ২২ জুন ২০২১: শ্রীনগরের নওগামে সিআইডি (CID) ইন্সপেক্টর পারভেজ আহমদ দারকে গুলি করে হত্যা করা হয় (Kashmir Observer, 2021)।

  • ২৭ জুন ২০২১: পুলওয়ামায় একজন স্পেশাল পুলিশ অফিসার (SPO), তার স্ত্রী ও কন্যাকে তাদের বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করা হয় (Majid, n.d.)।

  • ৭ আগস্ট ২০২১: কুলগামে পুলিশ দলের উপর হামলায় একজন পুলিশকর্মী নিহত ও অন্য দুজন আহত হন (Greater Kashmir, 2021)।

  • ৫ অক্টোবর ২০২১: শ্রীনগরে বিখ্যাত কাশ্মীরি পণ্ডিত ব্যবসায়ী মাখন লাল বিন্দ্রুকে তার ওষুধের দোকানে ঢুকে হত্যা করা হয় (India Today, 2021)।

  • ৭ অক্টোবর ২০২১: শ্রীনগরের একটি স্কুলে ঢুকে দুজন শিক্ষক – একজন হিন্দু ও একজন শিখকে গুলি করে হত্যা করা হয় (Al Jazeera, n.d.)।

  • ৯ অক্টোবর ২০২১: কুলগামে হামলায় দুজন পুলিশকর্মী আহত হন (Greater Kashmir, 2021)। (পূর্বের তথ্যে ২ জন নিহত বলা হয়েছিল, কিন্তু এই সূত্র অনুযায়ী আহত)

  • ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩: অনন্তনাগে এক দীর্ঘ এনকাউন্টারে (Anantnag encounter) নিরাপত্তা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ কয়েকজন নিহত হন, যা TRF-এর শক্তিমত্তার জানান দেয়।

  • ৯ জুন ২০২৪: জম্মুর রিয়াসি জেলায় তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাসে হামলা চালানো হয়, যাতে ৯ জন নিহত হন (2024 Reasi attack)। এর পিছনেও TRF-এর হাত রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়।

  • ২২ এপ্রিল ২০২৫: পেহেলগামে পর্যটকদের উপর হামলার (2025 Pahalgam attack) দায় প্রথমে TRF স্বীকার করলেও, পরে সাইবার হ্যাকিংয়ের (cyber intrusion) শিকার হওয়ার কারণ দেখিয়ে সেই দাবি প্রত্যাহার করে নেয় (Maktoob Media, 2025)।

আইনি পদক্ষেপ ও পরিণতি

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, ভারত সরকার বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (Unlawful Activities (Prevention) Act – UAPA)-এর অধীনে TRF-কে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন (banned organisation) হিসেবে ঘোষণা করে। একইসাথে এর অন্যতম নেতা শেখ সাজ্জাদ গুলকে সন্ত্রাসী (terrorist) হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় (Singh, 2023)। ২০১৮ সালের জুন মাসে কাশ্মীরি সাংবাদিক সুজাত বুখারিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে (conspiracy) TRF জড়িত ছিল, এমন সন্দেহের ভিত্তিতেই মূলত এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় বলে জানানো হয়েছে (Lavania, 2023)।

তথ্যসূত্র (References)

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.