এই প্রবন্ধটির ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে জাদু বা ম্যাজিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যান এখানে – জাদু (Magic)
Table of Contents
সাদা জাদু (White magic)
সাদা জাদু বা শ্বেত জাদু (White magic) বলতে বোঝায় সেইসব অতিপ্রাকৃত শক্তি বা জাদুকর্ম, যা ভালো বা নিঃস্বার্থ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় (Miller, 2010)। ঐতিহাসিকভাবে, যারা এই বিদ্যার চর্চা করতেন, তাদের বিভিন্ন নামে ডাকা হতো—যেমন জ্ঞানী পুরুষ বা নারী (wise men or women), আরোগ্যকারী (healers), শ্বেত ডাইনি (white witches) অথবা সাদা জাদুকর (wizards)। এদের অনেকেই মনে করতেন, এই বিশেষ ক্ষমতা তারা হয় বংশপরম্পরায় পেয়েছেন, নয়তো জীবনের কোনো অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে অর্জন করেছেন। সাদা জাদুর চর্চা হতো মূলত আরোগ্য (healing), আশীর্বাদ (blessing), কবচ বা তাবিজ (charms), মন্ত্রপাঠ (incantations), প্রার্থনা (prayers) এবং গান (songs) ইত্যাদির মাধ্যমে (Temple, 2011)। সোজা কথায়, সাদা জাদু হলো ক্ষতিকর কালো জাদুর (black magic) ঠিক উল্টো— এক মঙ্গলময় শক্তি।
ইতিহাসের গভীরে
প্রাচীন উৎস
অকাল্ট বা গুপ্তবিদ্যা (occult) বিষয়ে সুপরিচিত লেখক গ্যারেথ নাইট (Gareth Knight) তার ১৯৭৮ সালের বই ‘A History of White Magic’-এ সাদা জাদুর শিকড় খুঁজেছেন সুদূর অতীতে। তিনি এর উৎস নির্দেশ করেছেন প্রাচীন প্রস্তর যুগের ধর্ম (Paleolithic religion) এবং মানব ইতিহাসের আদি ধর্মীয় ধারণাগুলোর মধ্যে। এর মধ্যে যেমন আছে প্রাচীন মিশরের (Ancient Egypt) বহুদেবতাবাদী বিশ্বাস, তেমনি আছে পরবর্তীকালের ইহুদিধর্ম (Judaism) ও আদি খ্রিস্টধর্মের (early Christianity) একেশ্বরবাদী চিন্তাধারা (Knight, 2011)।
নাইট বিশেষভাবে দেখিয়েছেন, সাদা জাদুর অনেক ঐতিহ্যই এসেছে স্থানীয় “উর্বরতা ও প্রকৃতির দেব-দেবী” (gods and goddesses of fertility and vegetation)-দের প্রাচীন উপাসনা থেকে। এইসব দেবদেবীর উপাসনা সাধারণত হতো “পাহাড়ের চূড়ার উপাসনালয়ে” (hill-top shrines)। কৃষিজীবী হিসেবে স্থায়ী হতে চাওয়া যাযাবর মানুষদের কাছে এই দেবদেবী ছিলেন খুবই আকর্ষণীয় (Knight, 2011)। নাইট যাযাবর হিব্রুভাষী গোষ্ঠীগুলোর দিকে বিশেষভাবে আলোকপাত করে বলেন, আদি ইহুদিরা এইসব দেবদেবীর পূজাকে ঠিক শয়তানি বা অশুভ শক্তি হিসেবে দেখত না, বরং পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া এক পুরোনো রীতি (atavism) বলেই মনে করত। কিন্তু যখন বহুত্ববাদী ও পৌত্তলিক (pagan) রোমান সাম্রাজ্যের (Roman Empire) বিস্তার ঘটতে লাগল, তখন ইহুদি নেতারা ধীরে ধীরে এই ধারণাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে শুরু করেন (Knight, 2011)।
সাদা জাদুর আদি উৎসের সন্ধান স্থানীয় লোকজ জ্ঞানী বা “চতুর লোক” (cunning folk)-দের কাজের মধ্যেও পাওয়া যায়।
রেনেসাঁস পর্ব
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে, প্রাকৃতিক জাদু (natural magic) ইউরোপের “উচ্চ সাংস্কৃতিক মহলে আলোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়” (“had become much discussed in high-cultural circles”) হয়ে ওঠে (Zambelli, 2007)। মারসিলিও ফিচিনো (Marsilio Ficino) এবং তার অনুসারীরা নানা ধরনের আধ্যাত্মিক সত্তা (spiritual beings) ও আত্মার (spirits) অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন ও এর পক্ষে কথা বলতেন। অবশ্য তাদের অনেক তত্ত্বই পরবর্তী জ্ঞানদীপ্তি যুগের (Age of Enlightenment) যুক্তিবাদী চিন্তার সঙ্গে খাপ খেত না। যদিও ফিচিনো ও তার সমর্থকেরা রোমান ক্যাথলিক চার্চের (Roman Catholic Church) রোষানলে পড়েছিলেন, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, চার্চ নিজেও এইসব সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করত। এই স্বীকারোক্তিই আবার ডাইনিবিদ্যা (witchcraft) বা ডাকিনীবিদ্যার বিরুদ্ধে চার্চের অভিযানের অন্যতম ভিত্তি ছিল (Zambelli, 2007)।
ফিচিনো এক ধরনের “বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক” (“purely natural”) জাদুর তত্ত্ব দিয়েছিলেন, যেখানে কোনো অশুভ বা ক্ষতিকর আত্মার আবাহনের প্রয়োজন হতো না। এই তত্ত্ব নিয়ে তার বিরোধ বাধে জোহানেস ট্রিথেমিয়াস (Johannes Trithemius)-এর সঙ্গে। ট্রিথেমিয়াস ফিচিনোর তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন না, বরং তিনি নিজেই আত্মার সঙ্গে মঙ্গলজনক যোগাযোগের (beneficial communication with spirits) জন্য নানা মন্ত্র (spells and incantations) তৈরি করেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ স্টেগানোগ্রাফিয়া (Steganographia)-সহ অন্যান্য লেখা সপ্তদশ শতাব্দীর আগে প্রকাশিত হয়নি। আর প্রকাশের পরপরই সেগুলো চার্চের নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা ইনডেক্স লিব্রোরাম প্রহিবিটোরিয়াম (Index Librorum Prohibitorum)-এ অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সেখানেই থেকে যায়। ট্রিথেমিয়াসের ভাবশিষ্য হেনরিখ কর্নেলিয়াস অ্যাগ্রিপ্পা (Heinrich Cornelius Agrippa) তার কিছু লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন এবং নিজেও জাদুকর্ম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন (Zambelli, 2007)। অ্যাগ্রিপ্পার বিখ্যাত কাজ ডি অকল্টা ফিলোসোফিয়া লিব্রি ট্রেস (De occulta philosophia libri tres)-এ তিনি ধ্রুপদী মৌলিক উপাদান (classical elements), সংখ্যাতত্ত্ব (numerology), জ্যোতিষশাস্ত্র (astrology), এবং কাব্বালাহ (kabbalah)-র মতো বিষয়গুলোর রূপরেখা দেন। সেইসঙ্গে চিকিৎসা, স্ফটিকদর্শন (scrying), আলকেমি (alchemy) এবং বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে (rituals and ceremonies) এইসব জ্ঞান কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তার বিস্তারিত আলোচনা করেন। পরবর্তীকালে জিয়ামবাতিস্তা দেল্লা পোর্তা (Giambattista della Porta) তার ম্যাজিয়া ন্যাচারালিস (Magia Naturalis) বইতে এই ধারণাগুলোকে আরও বিস্তৃত করেন (Shumaker, 1972)।
নাইটের মতে, এইসব ধারণা—অর্থাৎ আদি প্রাকৃতিক ধর্ম ও পরবর্তীকালের দার্শনিক চিন্তা—এসবের সম্মিলনেই “পশ্চিমা সাদা জাদুর ঐতিহ্যের ভিত্তি” (“at the root of the Western tradition of white magic”) তৈরি হয়েছে (Knight, 2011)। সাদা জাদুর মূলে প্রতীক (symbols) এবং বিশেষ করে ধর্মীয় প্রতীকবাদেরও (religious symbolism) বিরাট ভূমিকা রয়েছে। নাইট উদাহরণ হিসেবে তারকাচিহ্নের কথা বলেন, যা ইহুদি ঐতিহ্যে (যেমন ডেভিডের তারকা বা Star of David), পরে আদি খ্রিস্টানদের কাছে, এবং আরও পরে ম্যাসনীয় ঐতিহ্য (Masonic tradition) ও নব্য-পৌত্তলিকতাবাদে (Neo-paganism) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে (Knight, 2011)। আজও পঞ্চকোণ তারকা বা পেন্টাগ্রাম (pentagram) এবং বিভিন্ন রাত্রিকালীন আচার (night-time ritual) সাদা জাদু চর্চাকারীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
পাওলা জাম্বেল্লি (Paola Zambelli) আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, সাদা জাদু হয়তো তখন কালো জাদু থেকে পুরোপুরি আলাদা হিসেবে পরিচিত ছিল না, কিন্তু ইনকুইজিশন (Inquisition) এবং ডাইনিবিদ্যা-বিরোধী কঠোর আবহের (anti-witchcraft sentiment) যুগে এটি গুপ্তবিদ্যা (occult) ও পৌত্তলিক (pagan) জ্ঞানচর্চার একটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বা “গ্রহণযোগ্য” পথ হিসেবে বিকশিত হয়েছিল (Zambelli, 2007)। যদি কালো জাদু বলতে ট্রিথেমিয়াসের মতো ডেমন বা অশুভ সত্তার আবাহনকে বোঝানো হয়, তবে ফিচিনোর “বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক” সাদা জাদুকে ব্যাখ্যা করা যায় কেবলই প্রাকৃতিক ঘটনাবলির অধ্যয়ন হিসেবে—যেখানে কোনো অশুভ বা অধার্মিক অভিপ্রায় নেই। জাম্বেল্লি মনে করেন, জিওর্দানো ব্রুনো (Giordano Bruno)-র মতো ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বরা আসলে ছিলেন জাদুর গোপন চর্চাকারী (clandestine practitioners of magic) (Zambelli, 2007)।
আধুনিক সময়ের ব্যাখ্যা
রবার্ট এম. প্লেস (Robert M. Place) তার ২০০৯ সালের বই ‘Magic and Alchemy’-তে কালো ও সাদা জাদুর একটি আধুনিক ও বিস্তৃত সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি অবশ্য এই দুটিকে যথাক্রমে “উচ্চ জাদু” (high magic) (সাদা) এবং “নিম্ন জাদু” (low magic) (কালো) নামে অভিহিত করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তার মতে, এই বিভাজনটি মূলত নির্ভর করে জাদুকর্ম সম্পাদনকারীর অভিপ্রায়ের ওপর (Place, 2009)। প্লেসের আধুনিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, সাদা জাদুর উদ্দেশ্য হলো হয় “মঙ্গল সাধন করা” (“do good”), নয়তো “অনুশীলনকারীকে জ্ঞানার্জন বা চেতনার উচ্চতর আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত করা” (“bring the practitioner to a higher spiritual state of enlightenment or consciousness”) (Place, 2009)। তবে তিনি এও স্বীকার করেন যে, “উচ্চ” এবং “নিম্ন” এই বিভাজনটি কিছুটা হলেও সংস্কারদুষ্ট। কারণ, অনেক সময় ভালো উদ্দেশ্যে করা সাধারণ লোকজ জাদুও (folk magic) “নিম্ন” বলে বিবেচিত হতে পারে, আবার ব্যয়বহুল ও অভিজাত উপাদাননির্ভর আনুষ্ঠানিক বা রীতিबद्ध জাদু (ceremonial magic), তার উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, কারো কারো চোখে “উচ্চ জাদু” হিসেবে গণ্য হতে পারে (Place, 2009)।
প্লেসের মতে, প্রাগৈতিহাসিক শামানিক জাদু (shamanistic magic) মূলত ছিল পরোপকারী বা “সাহায্যকারী” (“helping”) সাদা জাদু। তাই সেই আদি জাদুর মূল নির্যাসই আধুনিক সাদা জাদুর কাঠামো তৈরি করেছে। এর মধ্যে পড়ে: অসুস্থতা বা আঘাত সারিয়ে তোলা (curing illness or injury), ভবিষ্যৎ বলা বা স্বপ্নের মানে বোঝা (divining the future or interpreting dreams), হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়া (finding lost items), আত্মাদের শান্ত রাখা (appeasing spirits), আবহাওয়া বা ফসলের ওপর প্রভাব ফেলা (controlling weather or harvest), এবং সৌভাগ্য বা কল্যাণ বয়ে আনা (generating good luck or well-being) (Place, 2009)।
দেবী উপাসনা (Goddess worship)
যদিও সাদা জাদু কেবল নারীদের বিষয় নয়, তবুও আধুনিক সময়ে একে প্রায়শই কিছু নারীসুলভ ধারণার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেমন—মাতৃ দেবী (Mother goddess), পরী বা প্রকৃতির আত্মা (fae, nature spirits), প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মবোধ (oneness with nature) এবং দেবীর উপাসনা (goddess worship) (Green, 2004)। আধুনিক গল্প বা রূপকথায় “সাদা ডাইনিবিদ্যা” (white witchcraft)-র ধারণাটি প্রায়শই একজন দয়ালু ঠাকুরমা বা স্নেহময়ী মাতৃমূর্তির (kindly grandmother or caring motherly spirit) সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। সাদা জাদু এবং মাতৃ ধরিত্রী (Mother Earth)-র মধ্যেকার এই গভীর সংযোগ জাদুকর ও লেখিকা মারিয়ান গ্রীন (Marian Green)-এর লেখার একটি পরিচিত থিম (Green, 2004)।
কালো জাদু (Black magic)
কালো জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক (মধ্যযুগীয় ইংরেজি: nigromancy, ডার্ক ম্যাজিক নামেও পরিচিত) হলো সেইসব জাদুবিদ্যা (magic) বা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার (supernatural powers) চর্চা, যা মূলত অশুভ (evil) ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার (selfish purposes) লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয় (Melton, 2001)। জাদুবিদ্যার এই রহস্যময় এবং অন্ধকার দিকটি যুগ যুগ ধরে মানুষের কল্পনাকে আলোড়িত করেছে, জন্ম দিয়েছে নানা কিংবদন্তি আর বিতর্কের।
কালো জাদু আর প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ জটিল ও বহুমাত্রিক। একদিকে যেমন খ্রিস্টধর্ম ঐতিহাসিকভাবে কালো জাদুকে দমন করেছে, ইনকুইজিশনের (inquisitions) মাধ্যমে চালিয়েছে নিপীড়ন; অন্যদিকে, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান (religious rituals) আর কালো জাদুর চর্চার মধ্যে এক গভীর যোগসূত্রও লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, সপ্তদশ শতকের ফরাসি যাজক এটিয়েন গিবোর্গ (Étienne Guibourg)-এর কথা বলা যায়। কথিত আছে, তিনি মাদাম দ্য মঁতেস্পার (Madame de Montespan)-এর জন্য অভিযুক্ত ডাইনি ক্যাথরিন মঁভোয়াজাঁ (Catherine Monvoisin)-এর সঙ্গে মিলে বেশ কয়েকটি কুখ্যাত ব্ল্যাক মাস (Black Mass) বা কালো উপাসনার আয়োজন করেছিলেন (Summers, 2013)। আবার, প্রখ্যাত গবেষক এ. ই. ওয়েট (A. E. Waite) তার বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য বুক অফ সেরেমোনিয়াল ম্যাজিক (The Book of Ceremonial Magic) (১৯১১)-এ কালো জাদুর বিভিন্ন চর্চা, রীতি ও ঐতিহ্যের এক বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছেন (Waite, 2011)।
জনপ্রিয় সংস্কৃতির (popular culture) হাত ধরে শয়তানবাদের (Satanism) মতো নানা ধারণা ও চর্চাও আজ কালো জাদুর বিশাল পরিধির মধ্যে চলে এসেছে। যদিও দানব (demons) বা প্রেতাত্মা (spirits)-কে আহ্বান (invocation) করা কালো জাদুর একটি স্বীকৃত অংশ, কিন্তু এই চর্চা আর ওইসব সত্তার উপাসনা (worship) বা তাদের দেবতাজ্ঞানে পূজা (deification) করা এক জিনিস নয় (Lewis, 1996)। তবে মধ্যযুগে ডাইনিবিদ্যা (witchcraft) সংক্রান্ত যে লোকবিশ্বাস প্রচলিত ছিল, তাতে এই দুটো বিষয়কে প্রায়শই একাকার করে দেখা হতো।
শব্দের উৎস (Etymology)
ইংরেজি ভাষায় “ব্ল্যাক ম্যাজিক” (black magic) শব্দটির প্রথম নথিভুক্ত ব্যবহার পাওয়া যায় কবি এডমান্ড স্পেন্সার (Edmund Spenser)-এর মহাকাব্য দ্য ফেয়ারি কুইন (The Faerie Queene)-এ। তিনি তৎকালীন প্রচলিত “নিগ্রোম্যান্সি” (nigromancy) শব্দটিকে ইংরেজি রূপ দিয়েছিলেন। এই নিগ্রোম্যান্সি শব্দটি এসেছে ল্যাটিন নিগ্রোম্যান্টিয়া (nigromantia) থেকে, যা আবার মৃতদের আত্মা নিয়ে কারবার করা বিদ্যা নেক্রোম্যান্টিয়া (necromantia) বা নেক্রোম্যান্সির একটি মধ্যযুগীয় রূপভেদ। ল্যাটিন শব্দ নাইজার (niger) অর্থাৎ “কালো”র প্রভাবে এটি নাইগ্রোম্যান্টিয়া রূপ লাভ করে (Oxford English Dictionary Online)।
For he the tyraunt, which her hath in ward
By strong enchauntments and blacke Magicke leare
Hath in a dungeon deepe her close embard,
And many dreadfull feends hath pointed to her gard.—দ্য ফেয়ারি কুইন, বুক ৩, ক্যান্টো ১১ (Book III, Canto XI)
ইতিহাসের পাতা থেকে (History)
রবার্ট এম. প্লেস (Robert M. Place) তার ২০০৯ সালের বই ম্যাজিক অ্যান্ড অ্যালকেমি (Magic and Alchemy)-তে দেখিয়েছেন, কালো জাদুর উৎসও এর প্রতিরূপ সাদা জাদুর (white magic) মতোই; এর শেকড় প্রোথিত আত্মাদের (spirits) উদ্দেশ্যে পরিচালিত আদিম, আনুষ্ঠানিক উপাসনার (ritualistic worship) গভীরে (Place, 2009)। প্লেসের মতে, সাদা জাদু যেমন আধ্যাত্মিক সত্তার নৈকট্য লাভের আদিম শামানীয় (shamanistic) চেষ্টার প্রতিচ্ছবি, তেমনি আধুনিক কালো জাদুতে রূপান্তরিত আচারগুলোর উদ্দেশ্য ছিল ওই একই আত্মাদের আহ্বান (evoke) করে অনুশীলনকারীর জন্য কাঙ্ক্ষিত ফল আদায় করা। প্লেস কালো ও সাদা—উভয় প্রকার জাদুর একটি আধুনিক এবং বৃহত্তর সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি অনুশীলনকারীর উদ্দেশ্যের (intention) উপর ভিত্তি করে এদের যথাক্রমে “নিম্ন জাদু” (low magic) (কালো) এবং “উচ্চ জাদু” (high magic) (সাদা) হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। তবে তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, এই “উচ্চ” ও “নিম্ন” বিভাজন কিছুটা পক্ষপাতদুষ্ট (prejudiced)। কারণ, ভালো উদ্দেশ্যে করা সাধারণ লোকজাদুও (folk magic) এক্ষেত্রে ‘নিম্ন’ বলে বিবেচিত হতে পারে, আবার অন্যদিকে, দামি বা দুর্লভ উপকরণনির্ভর আনুষ্ঠানিক জাদু (ceremonial magic), তার উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, কারো কারো চোখে ‘উচ্চ জাদু’র তকমা পেতে পারে (Evans-Pritchard, 1931)।
কালো রহস্যবাদের অতল গভীরতা মাপা প্রায় ততটাই কঠিন, যতটা কঠিন পবিত্রতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করা। ডাইনি চক্রের (witch covens) গ্র্যান্ড মাস্টার বা প্রধানরা হলেন একেকজন প্রতিভাবান মানুষ – কিন্তু সে প্রতিভা কলুষিত, কদর্য, বিকৃত, উদ্ভ্রান্ত আর রোগগ্রস্ত।
—মন্টেগু সামার্স (Montague Summers)
উইচক্র্যাফট অ্যান্ড ব্ল্যাক ম্যাজিক (Witchcraft and Black Magic)
ইউরোপীয় রেনেসাঁর (Renaissance) সময়ে বহু জাদুকরী চর্চা ও আচার-অনুষ্ঠানকে অশুভ বা অধার্মিক বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং বৃহত্তর অর্থে সেগুলোকে কালো জাদু হিসেবেই গণ্য করা হতো। ডাইনিবিদ্যা এবং প্রচলিত ধারার বাইরের গূঢ়তত্ত্বের (esoteric) চর্চা ছিল নিষিদ্ধ, আর ইনকুইজিশনের (Inquisition) কোপানলে পড়েছিল এসবের অনুশীলনকারীরা (Zambelli, 2007)। এর ফলে, মারসিলিও ফিচিনো (Marsilio Ficino), অ্যাবট জোহানেস ট্রিথেমিয়াস (Johannes Trithemius) এবং হাইনরিখ কর্নেলিয়াস অ্যাগ্রিপ্পা (Heinrich Cornelius Agrippa)-র মতো চিন্তাবিদ ও পণ্ডিতেরা এক ভিন্ন পথ বেছে নেন। তারা প্রাকৃতিক জাদু (natural magic)-র মোড়কে তাদের গূঢ়তত্ত্ব ও আচারের অধ্যয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন, যাতে বড় ধরনের নিপীড়ন এড়ানো যায় (যদিও প্রায়শই তা করতে হতো অত্যন্ত গোপনে) (Zambelli, 2007)।
ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে যখন শিক্ষিত ও অভিজাত মহলে এই “প্রাকৃতিক জাদু” জনপ্রিয়তা লাভ করে, তখনও কিন্তু সাধারণ আনুষ্ঠানিক জাদু ও লোকজাদু নিস্তার পায়নি, বরং সেগুলো নিপীড়নের শিকার হতেই থাকে। বিংশ শতাব্দীর লেখক মন্টেগু সামার্স (Montague Summers) অবশ্য জাদুবিদ্যার এই “সাদা” ও “কালো” বিভাজনকে “পরস্পরবিরোধী” বলে মনে করতেন। তিনি দেখিয়েছেন, তৎকালীন সমাজে অভিপ্রায় যা-ই হোক না কেন, সাধারণভাবে জাদু মাত্রই কতটা “কালো” বা অশুভ হিসেবে বিবেচিত হতো। এ প্রসঙ্গে তিনি উইলিয়াম পারকিন্স (William Perkins)-এর ১৬০৮ সালের মরণোত্তর নির্দেশের কথা উল্লেখ করেন:
“ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত” সকল ডাইনিকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও ছাড় নেই। এই শাস্তির আওতায় পড়বে “সকল দৈবজ্ঞ (Diviners), মন্ত্রতন্ত্রকারী (Charmers), ভেল্কিবাজ (Jugglers), এবং সকল জাদুকর (Wizards), যাদেরকে সাধারণত জ্ঞানী পুরুষ বা জ্ঞানী নারী (wise men or wise women) বলা হয়”। এমনকি তথাকথিত “ভালো ডাইনিরাও (good Witches), যারা ক্ষতি করে না বরং উপকার করে, যারা ধ্বংস করে না বরং রক্ষা করে ও মুক্তি দেয়,” তারাও এই চরম দণ্ড থেকে রেহাই পাবে না (Summers, 2012)।
তবে, নির্দিষ্টভাবে বললে, “কালো জাদু” শব্দটি প্রায়শই তাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতো, যারা দানব (demons) ও অন্যান্য অশুভ আত্মাদের (evil spirits) আহ্বান করে বলে অভিযুক্ত হতো; যারা প্রতিবেশীদের উপর বদনজর (hexing) বা অভিশাপ (cursing) দিত; যারা জাদু দিয়ে ফসল নষ্ট করত; কিংবা যারা নিজেদের পার্থিব শরীর ছেড়ে আত্মিক রূপে দূর-দূরান্তে ঘুরে বেড়াতে পারত (এই বিষয়ের উপর ম্যালিয়াস ম্যালেফিকারাম (Malleus Maleficarum) বা ‘ডাইনিদের হাতুড়ি’ গ্রন্থে একটি দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রয়েছে)। সাধারণত মনে করা হতো, তারা এসব করত শয়তানের উপাসনায় (devil-worship) অংশ নেওয়ার জন্য। সামার্স আরও উল্লেখ করেছেন, ‘নিগ্রোম্যান্সার’ (nigromancer) শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত বিবর্তন, যা ১২০০ থেকে ১৫০০ সালের দিকে প্রচলিত ছিল (ল্যাটিন: niger, কালো; গ্রিক: μαντεία, ভবিষ্যদ্বাণী) এবং যার সাধারণ অর্থ ছিল “কালো বিদ্যায় পারদর্শী ব্যক্তি” (one skilled in the black arts) (Summers, 2012)।
আধুনিককালে সাদা ও কালো জাদুর বিভেদরেখা কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়েছে। বেশিরভাগ আধুনিক সংজ্ঞায় কোনটি কালো জাদু, তা নির্ধারণে চর্চার ধরনের চেয়ে অনুশীলনকারীর উদ্দেশ্যের (intent) উপরই বেশি জোর দেওয়া হয় (Place, 2009)। আজকের দিনে অনেক উইক্কা (Wicca) ও ডাইনিবিদ্যার অনুসারী নিজেদেরকে কালো জাদু চর্চাকারীদের থেকে সুস্পষ্টভাবে আলাদা রাখতে চান। যারা অন্যের ক্ষতি বা অশুভ সাধন করতে চায়, মূলধারার উইকান সার্কেল বা সংঘগুলিতে (covens) তাদের সহজে গ্রহণ করা হয় না। বিশেষত এই যুগে, যেখানে হিতকারী জাদু (benevolent magic) ক্রমশ নব্য-আধ্যাত্মিকতা (new-age beliefs), বিভিন্ন অনুশীলন এবং আত্ম-উন্নয়নমূলক আধ্যাত্মিকতার (self-help spiritualism) সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পড়ছে (Lewis, 1996)।
আর্টেস প্রোহিবিটে (Artes prohibitae) এবং আর্টেস ম্যাজিক্যা (artes magicae)
মধ্যযুগে ক্যানন আইন (canon law) অনুসারে সাত ধরনের কলা বা বিদ্যা নিষিদ্ধ ছিল, যেগুলোকে আর্টেস প্রোহিবিটে (নিষিদ্ধ কলা) বা আর্টেস ম্যাজিক্যা (জাদুকরী কলা) বলা হতো। ১৪৫৬ সালে জোহানেস হার্টলিব (Johannes Hartlieb) এই বিষয়টির ব্যাখ্যা দেন। এই সাতটি নিষিদ্ধ কলার বিভাজনটি তৎকালীন আর্টেস লিবারেলিস (উদার কলা) এবং আর্টেস মেকানিক্যা (কারিগরি কলা)-র সাত প্রকার বিভাজনেরই অনুরূপ ছিল (Heiduk, Herbers & Lehner, 2020)। যদিও নিগ্রোম্যান্সি (nigromancy) শব্দটি ব্যাপক অর্থে ছয়টি সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চর্চাকে অন্তর্ভুক্ত করে, তবে এটি বিশেষভাবে শেষ মধ্যযুগের দানবীয় জাদু (demonic magic)-কে বোঝায়। এই ধরনের জাদু সাধারণত একজন নেতার তত্ত্বাবধানে দলবদ্ধভাবে সম্পাদিত হতো, যার কাছে একটি বিশেষ জাদুর বই বা গ্রিমোয়ার (grimoire) থাকত। যেহেতু বেশিরভাগ গ্রিমোয়ার ল্যাটিন ভাষায় লেখা হতো, তাই এর অনুশীলনকারীরা সাধারণত সমাজের শিক্ষিত ও অভিজাত শ্রেণীর মানুষ হতেন। ১৪৪৪ সালের একটি ঘটনা এর উদাহরণ। ইনকুইজিটর গ্যাসপারে সিঘিচেল্লি (Gaspare Sighicelli) বোলোনিয়া (Bologna) শহরে সক্রিয় এমন একটি দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। গেসোর মার্কো মাত্তেই (Marco Mattei of Gesso) এবং ভিটেরবোর ফ্রায়ার জ্যাকোপো (friar Jacopo of Viterbo) এই ধরনের জাদুকরী অনুশীলনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছিলেন। মনে রাখা দরকার, নিগ্রোম্যান্সি আর নেক্রোম্যান্সি (“মৃত্যু জাদু” বা “death magic”) এক জিনিস নয়, যদিও নেক্রোম্যান্সি নিগ্রোম্যান্সির অন্তর্ভুক্ত হতে পারে (Herzig, 2011)।
ভুডু (Voodoo)
জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও কল্পকাহিনীতে ভুডুকে (Voodoo) প্রায়শই আধুনিক কালো জাদুর সমার্থক হিসেবে দেখানো হয়। যদিও বদনজর দেওয়া বা অভিশাপ দেওয়াকে কালো জাদুর অংশ হিসেবে ধরা যেতে পারে, কিন্তু ভুডুর রয়েছে নিজস্ব সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য (Long, 2002; Lewis, 1996)।
ভুডু ঐতিহ্যেও কালো ও সাদা জাদুর মধ্যে পার্থক্য করা হয়। যেমন, বোকোর (Bokor) নামে পরিচিত কিছু জাদুকর আছেন যারা উভয় প্রকার জাদুই ব্যবহার করেন বলে জানা যায়। কিন্তু অভিশাপ, বিষ প্রয়োগ, এমনকি জম্বি (zombies) তৈরির মতো চর্চার সঙ্গে কিছু অনুশীলনকারীর সংযোগ থাকায়, ভুডুকে প্রায়শই সামগ্রিকভাবে কালো জাদুর সঙ্গে এক কাতারে ফেলা হয় (Owusu, 2002)।
সাম্প্রতিক অভিযোগ (Modern accusations)
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের (2022 Russian invasion of Ukraine) সময়, রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এক অদ্ভুত অভিযোগ তোলে। তারা দাবি করে, ইউক্রেন নাকি রুশ সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করতে কালো জাদুর সাহায্য নিচ্ছে। বিশেষ করে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা ওলেক্সি আরেস্তোভিচ (Oleksiy Arestovych)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি নাকি ইউক্রেনীয় সৈন্যদের মধ্যে জাদুকর ও ডাইনিদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যারা “রক্ত জাদু (blood magick)” ব্যবহার করে অস্ত্রশস্ত্রকে অপার্থিব শক্তি জোগাচ্ছে (Gault, 2022; van Brugen, 2022)।
ধূসর জাদু (Gray magic)
ধূসর জাদু (Gray magic), যা অনেক সময় নিরপেক্ষ জাদু (neutral magic) নামেও পরিচিত, এমন এক ধরনের জাদুবিদ্যা যা কেবল মঙ্গল সাধনের জন্য করা হয় না, আবার পুরোপুরিভাবে ক্ষতি বা শত্রুতার উদ্দেশ্যেও ব্যবহৃত হয় না (Smoley & Kinney, 2006; Cicero & Cicero, 2003)। একে সাধারণত সাদা জাদু (white magic) অর্থাৎ মঙ্গলজনক জাদু এবং কালো জাদু (black magic) বা ক্ষতিকর জাদুর মাঝখানের একটি ক্ষেত্র বা পর্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
ডি. জে. কনওয়ে (D. J. Conway) ব্যাখ্যা করেছেন যে, শ্বেত জাদুর চর্চাকারীরা সাধারণত যেকোনো ধরনের ক্ষতি করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে চলেন, এমনকি ভালো কিছু অর্জনের জন্যও ক্ষতির পথে হাঁটেন না। কিন্তু ধূসর জাদু কিছুটা ভিন্ন। এটি সাদা জাদুর মতো ভালো উদ্দেশ্যগুলো তো রাখেই, পাশাপাশি পৃথিবী থেকে অশুভ শক্তি বা মন্দ বিষয় (evils) দূর করার জন্যও কাজ করে (Conway, 2001)। অন্যদিকে, অ্যান ফিনিন (Ann Finnin) দেখিয়েছেন, অনেক চর্চাকারী ‘ধূসর জাদু’ শব্দটি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন কারণ এটি কিছুটা অস্পষ্ট (vague)। এর ফলে নৈতিকতার মতো জটিল প্রশ্নগুলো (ethical questions) নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন হয় না বা তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া সহজ হয় (Finnin, 2008)।
তবে, এই শব্দটির সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অর্থ দিয়েছিলেন রয় বাওয়ার্স (Roy Bowers), যিনি ১৯৬০-এর দশকে ব্রিটেনের একজন নিওপ্যাগান বা নব্যপৌত্তলিকতাবাদী (Neopagan) ডাইনি (witch) ছিলেন। বাওয়ার্সের কাছে ধূসর জাদু ছিল এক বিশেষ কৌশল। এর মাধ্যমে তিনি যাদের সংস্পর্শে আসতেন, তাদের এমনভাবে হতবুদ্ধি (baffling), কিংকর্তব্যবিমূঢ় (bewildering) এবং রহস্যের ধোঁয়াশায় (mystifying) আচ্ছন্ন করে ফেলতেন যে, তাদের ওপর এক ধরনের ক্ষমতা তৈরি হতো। এর ফলে, বাওয়ার্স সবসময় অন্যদের সম্পর্কে যতটা জানতেন বা বুঝতেন, তারা তার সম্পর্কে ততটাই অন্ধকারে থাকতেন (Hutton, 1999)।
এই প্রবন্ধটির ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে জাদু বা ম্যাজিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যান এখানে – জাদু (Magic)
তথ্যসূত্র (References)
-
Cicero, C., & Cicero, S. T. (2003). The Essential Golden Dawn: An Introduction to High Magic. Llewellyn Books. p. 87. ISBN 978-0738703107.
-
Conway, D. J. (2001). Wicca: The Complete Craft. Clarkson Potter/Ten Speed. p. 43. ISBN 978-1580910927.
-
Evans-Pritchard, E. E. (January 1931). “Sorcery and Native Opinion”. Africa: Journal of the International African Institute. 4 (1): 22–55. doi:10.2307/1155736. JSTOR 1155736. S2CID 146139860.
-
Finnin, A. (2008). The Forge of Tubal Cain. Pendraig Publishing. p. 100. ISBN 978-0979616839.
-
Gault, Matthew (5 May 2022). “Russian State Media Claims to Discover Militarized Ukrainian Witches”. Vice. Retrieved 18 May 2022.
-
Green, M. (2004). White Magic. Southwater.
-
Heiduk, Matthias; Herbers, Klaus; Lehner, Hans-Christian, eds. (2020). Prognostication in the Medieval World: A Handbook. De Gruyter. ISBN 978-3110499773.
-
Herzig, Tamar (Winter 2011). “The Demons and the Friars: Illicit Magic and Mendicant Rivalry in Renaissance Bologna”. Renaissance Quarterly. 64 (4): 1025–1058. doi:10.1086/664084. S2CID 162081348.
-
Hutton, R. (1999). Triumph of the Moon. Oxford University Press. p. 315. ISBN 978-0198207443.
-
Knight, G. (2011). A History of White Magic. Skylight Press. (Original work published 1978)
-
Lewis, James R. (1996). Magical Religion and Modern Witchcraft. SUNY Press. ISBN 978-0791428894.
-
Long, Carolyn Morrow (October 2002). “Perceptions of New Orleans Voodoo: Sin, Fraud, Entertainment, and Religion”. Nova Religio: The Journal of Alternative and Emergent Religions. 6 (1): 86–101. doi:10.1525/nr.2002.6.1.86.
-
Melton, J. Gordon, ed. (2001). “Black Magic”. Encyclopedia of Occultism & Parapsychology. Vol. 1: A-L (5th ed.). Gale Research Inc. ISBN 0-8103-9488-X.
-
Miller, J. L. (2010). “Practice and perception of black magic among the Hittites”. Altorientalische Forschungen, 37(2). https://doi.org/10.1524/aofo.2010.0015
-
Owusu, Heike (2002). Voodoo Rituals: A User’s Guide. Sterling Publishing Company. ISBN 978-1402700354.
-
Place, R. M. (2009). Magic and Alchemy. Infobase Publishing. ISBN 978-0791093900.
-
Shumaker, W. (1972). The Occult Sciences in the Renaissance: A Study in Intellectual Patterns. University of California Press.
-
Smoley, R., & Kinney, J. (2006). Hidden Wisdom: A Guide to the Western Inner Traditions. Quest Books. p. 121. ISBN 978-0835608442.
-
Summers, Montague (2012) [1946]. Witchcraft and Black Magic. Courier Dover Publications. ISBN 978-0486411255.
-
Summers, Montague (2013) [1927]. The Geography of Witchcraft. Routledge. ISBN 978-0415847933.
-
Temple, I. (2011). Magic and the Common People of Early Modern Europe. Luther College University. Retrieved from https://www.luthercollege.edu/university/academics/impetus/spring-2011/magic-and-the-common-people-of-early-modern-europe/
-
van Brugen, Isabel (6 May 2022). “‘Witches and Sorcerers’: Russian Media Peddles Ukraine Black Magic Claims”. Newsweek. Retrieved 18 May 2022.
-
Waite, A. E. (2011) [1911]. The Book of Ceremonial Magic: Including the Rites and Mysteries of Goetic Theurgy, Sorcery, and Infernal Necromancy. Martino Fine Books. ISBN 978-1614271567.
-
Zambelli, P. (2007). White Magic, Black Magic in the European Renaissance. Brill Publishers. ISBN 978-9004160989.
Leave a Reply