Table of Contents
আজকের খবরে যা যা থাকছে
- দক্ষিণ আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের হুমকি
- মেক্সিকো ও কানাডার ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ ৩০ দিন পিছিয়ে দেওয়া
- ফ্রান্সে আরেকটি অনাস্থা ভোটের প্রস্তুতি
- যুক্তরাজ্যে অভিযুক্ত প্রাক্তন সৈনিকের সাজা
দক্ষিণ আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের হুমকি
দক্ষিণ আফ্রিকা সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) প্রশাসনের নতুন নীতির প্রভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। ট্রাম্পের সিনেট (Trump’s Senate) ঘোষণা করেছে যে, তারা ভবিষ্যতে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সব ধরনের মার্কিন অর্থায়ন (funding) বন্ধ করে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার সেখানে ভূমি অধিগ্রহণে (expropriation) অন্যায্যতা করছে এবং নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি “খারাপ আচরণ” করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ ধরণের বিবৃতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমি সংস্কার (land reform) নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভূমি সংস্কারের পটভূমি
দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যা আনুমানিক ৬০ মিলিয়ন-এর কিছু বেশি। বর্ণবৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা অ্যাপারথাইড (apartheid) প্রায় ৩০ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও এখনো জমির মালিকানার বণ্টনে বড় ধরনের বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দেশটির ব্যক্তিমালিকানাধীন চাষযোগ্য (private farmland) জমির প্রায় ৭২% এখনো শ্বেতাঙ্গ (white) বাণিজ্যিক কৃষকদের হাতে। একসময়ের সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসনের (white minority rule) উত্তরাধিকার হিসেবেই এই বৈষম্য থেকে গেছে বলে অনেকে মনে করেন।
এই প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসা (Cyril Ramaphosa) গত মাসে একটি নতুন আইন অনুমোদন করেছেন, যার আওতায় সরকার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনা ক্ষতিপূরণে (without compensation) জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে। আইনে বলা হয়েছে, “যদি জনস্বার্থে (public interest) এবং ন্যায়সংগত (just and equitable) প্রক্রিয়ায় এটি করা হয়,” তবে সরকার ক্ষতিপূরণ না দিয়েই জমি নিতে পারবে। পাশাপাশি, যেসব জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বা নিছক জল্পনা-কল্পনার (speculation) জন্য ধরে রাখা হয়েছে, সেগুলোও সরকার অধিগ্রহণের আওতায় আনতে পারবে বলে আইনটিতে উল্লেখ আছে।
বিতর্ক ও ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ
এই নতুন আইন দক্ষিণ আফ্রিকার জোট সরকারে (coalition government) মতবিরোধের সৃষ্টি করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার এই ভূমি নীতিকে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, এসব আইন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি ‘খারাপ আচরণ’ নির্দেশ করে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র এলন মাস্ক (Elon Musk) — যিনি নিজে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করেছেন — সরাসরি এটিকে “উন্মুক্ত বর্ণবৈষম্যমূলক (openly racist)” নীতি বলে অভিহিত করেন।
তবে প্রেসিডেন্ট রামাফোসা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “এক্সপ্রোপ্রিয়েশন অ্যাক্ট (Expropriation act) জোরপূর্বক জমি কেড়ে নেওয়ার কোনো মাধ্যম নয়, বরং সংবিধানসম্মত (constitutionally mandated) একটি আইনি প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে সবার কাছে সম্পদের সুযোগ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে, যেটি সাংবিধানিক ভিত্তিতেই পরিচালিত।”
তবু, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে সিগন্যাল দিয়েছে যে তারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে যে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছিল (২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৪৪০ মিলিয়ন ডলার), সেটি স্থগিত করবে। ট্রাম্প বলেছেন, এই প্রক্রিয়া চলবে যতক্ষণ না একটি তদন্ত সম্পন্ন হয়, যেখানে দৃষ্টি দেওয়া হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতি আদৌ বৈষম্যমূলক কি না।
ব্ল্যাক এমপাওয়ারমেন্ট (Black empowerment) বনাম স্টারলিংক (Starlink)
দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্ল্যাক এমপাওয়ারমেন্ট (Black empowerment) আইন বহাল রয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (foreign investors) কাছে একটি কঠোর শর্ত আরোপ করে: টেলিকম খাতে (telecom sector) যদি কেউ বিনিয়োগ করতে চায়, তবে প্রকল্পের ৩০% মালিকানা কৃষ্ণাঙ্গ (black) মালিকানাধীন ব্যবসা বা গোষ্ঠীর হাতে থাকতে হবে। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্টারলিংক (Starlink) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা দেশে চালু করতে গেলে এই শর্ত মানতে হবে। কিন্তু মাস্ক এই আইন পরিবর্তন বা শিথিলের আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারের অভ্যন্তরে কেউ কেউ মনে করেন, স্টারলিংকের মতো বৃহৎ ও অত্যাধুনিক সেবা এলে দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ উপকৃত হবে। ফলে আইন কিছুটা শিথিল করলে দোষের কিছু হবে না। অপরদিকে, আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC)-এর একাংশ এই ব্ল্যাক এমপাওয়ারমেন্ট আইন লঘু করা একদমই পছন্দ করছে না—বিশেষ করে মাস্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর তাদের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
সূত্র
- https://www.bbc.co.uk/news/articles/cn01z1yy0jno
- https://www.ft.com/content/473f99d2-7257-41c5-ba61-2b7065087f14
- https://www.theguardian.com/us-news/2025/feb/03/donald-trump-cutting-funding-south-africa-land-confiscations-cyril-ramaphosa
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ ৩০ দিন পিছিয়ে দেওয়া
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউম (Claudia Sheinbaum) এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau) যৌথভাবে জানিয়েছেন, তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৩০ দিনের জন্য শুল্ক (tariffs) আরোপ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তিনি মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে শুল্ক বসাবেন, ঠিক যেমনটি তিনি চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০% শুল্ক আরোপ করেছেন। সেই ঘোষণার পরই মেক্সিকো ও কানাডা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক বসাতে শুরু করেছিল।
মেক্সিকো ও কানাডার প্রতিশ্রুতি
- মেক্সিকো: সোমবার সকালে ট্রাম্প ফোনে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের সঙ্গে কথা বলেন। সেই আলোচনায় শেইনবাউম মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে (northern border) ১০,০০০ মেক্সিকান ন্যাশনাল গার্ড (National Guard) সদস্য মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দেন, যাতে অবৈধ অভিবাসন (illegal immigration) ও বিশেষ করে ফেন্টানিল (fentanyl) পাচার ঠেকানো যায়।
- কানাডা: সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্পের সঙ্গে ফোন কলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, কানাডা ইতোমধ্যে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের একটি সীমান্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, যার সূচনা গত ডিসেম্বরেই হয়েছিল। এতে ১০,০০০-এর কাছাকাছি ফ্রন্টলাইন কর্মী (frontline workers) যুক্ত আছেন এবং ফেন্টানিল প্রবাহ বন্ধে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্রুডো আরও জানান, কানাডা “ফেন্টানিল সিজার (fentanyl czar)” পদ তৈরি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ ‘স্ট্রাইক ফোর্স (joint strike force)’ গঠন করবে, যা অপরাধ, মাদক পাচার ও অর্থ পাচার মোকাবিলায় কাজ করবে।
এই প্রতিশ্রুতিগুলোর পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজি হয়েছেন যে, পরবর্তী ৩০ দিনের জন্য মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখা হবে। এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই দুই দেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে নিরাপত্তা (security) বিষয়ক সমন্বয় করবে।
অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া
শুল্ক আরোপ স্থগিতের খবর পেয়ে বৈশ্বিক মুদ্রা ও বন্ড বাজার (currency and bond markets) আংশিকভাবে স্বস্তি পেয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রাথমিক ‘ভাবাবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া’ (knee jerk reaction) প্রায়ই অতিরিক্ত হয়ে থাকে, এবং সবসময় সেটিকে ভবিষ্যতের স্থায়ী প্রবণতা বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। একই সঙ্গে এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক নীতি থেকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা সমঝোতা করা সম্ভব। হয়তো সব দেশ নয়, কিন্তু মেক্সিকো ও কানাডা অন্তত সাময়িকভাবে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সূত্র
- https://www.ft.com/content/628f137c-f950-4731-8764-ba1fed2e4a9e
- https://x.com/Claudiashein/status/1886434747238514776
ফ্রান্সে আরেকটি অনাস্থা ভোটের প্রস্তুতি
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়রু (Francois Beirut) ফ্রান্সের জাতীয় পরিষদে (national assembly) ২০২৫ সালের বাজেট (budget) পাস করাতে Article 49.3 নামের বিতর্কিত সাংবিধানিক ধারা ব্যবহার করেছেন। এই ধারা অনুযায়ী, সংসদে ভোট ছাড়াই সরকারের প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর করা যায়। তবে এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব (vote of no confidence) উত্থাপন করা সম্ভব হয়, যা সরকারকে বিপদে ফেলতে পারে।
অচলাবস্থা ও Article 49.3-এর প্রভাব
বেয়রু স্বীকার করেছেন যে, বাজেটটি “নিখুঁত নয়,” তবে এটি একটি “সমন্বয়ের ফল” এবং তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ফিফথ রিপাবলিকের (French Fifth Republic) ইতিহাসে ফেব্রুয়ারি মাসে “এভাবে বাজেট ছাড়া” থাকার ঘটনা এই প্রথম। বিরোধী দল এ সুযোগে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে। ফ্রান্স আনবাউড (France unbound) নামে পরিচিত বামপন্থী দলটি স্পষ্টভাবে বলেছে, তারা অনাস্থা এনে সরকারকে ফেলে দিতে চায়।
সোশ্যালিস্ট পার্টির (Socialist Party) ভূমিকা
সরকারের ভাগ্য এখন অনেকাংশে নির্ভর করছে সোশ্যালিস্ট পার্টির ওপর। এই পার্টি বরাবরই ফ্রান্স আনবাউডের অংশ হিসেবে বিরোধী জোটে রয়েছে। কিন্তু এবার তারা জানিয়েছে যে “দেশ ও জনগণের স্বার্থে দায়িত্ববান থেকে” তারা অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেবে না। অর্থাৎ, সোশ্যালিস্টদের সমর্থন না পেলে অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
বেয়রু বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সোশ্যালিস্টদের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করেছেন। বাজেট প্রস্তাবে তাই কয়েকটি বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হয়েছে, যেমন ২০২৩ সালের অজনপ্রিয় পেনশন সংস্কার (pension reform) নিয়ে নতুন করে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি, ৪,০০০ শিক্ষকের চাকরি কাটছাঁটের পরিকল্পনা বাদ দেওয়া, এবং রাষ্ট্র পরিচালিত চিকিৎসা খাতে (state medical reimbursements) বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।
যদি সোশ্যালিস্ট পার্টি তাদের অবস্থান ধরে রাখে, তবে প্রধানমন্ত্রী বেয়রু ও তার সংখ্যালঘু সরকার (minority government) টিকে যাবেন। এর মাধ্যমে তিনি তার স্বল্পমেয়াদী পূর্বসূরি মিশেল বার্নিয়ার (Michel Barnier) যেখানে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেখানে সফল হবেন। তবে এটি ফরাসি বামপন্থীদের মধ্যে ফাটল ধরারও ইঙ্গিত দিচ্ছে—বিশেষ করে সোশ্যালিস্টরা তাদের অবস্থান কিছুটা মাঝামাঝি পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে, ফ্রান্স আনবাউডের চেয়েও নমনীয় ভূমিকা নিচ্ছে।
সূত্র
https://www.france24.com/en/live-news/20250203-french-pm-set-to-force-budget-through-parliament
যুক্তরাজ্যে অভিযুক্ত প্রাক্তন সৈনিকের সাজা
এবার যুক্তরাজ্যের সংবাদের দিকে আসা যাক। ইরানের (Iran) হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি (spying) করার অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ সৈনিক ড্যানিয়েল খালিফা (Daniel Khalifa)-কে গতকাল তার বিচার শেষে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে তিনি হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েন এবং পরবর্তী বিচারপ্রক্রিয়া শেষে শাস্তি ঘোষিত হয়।
কী ঘটেছিল?
- প্রাথমিক অভিযোগ: জানুয়ারি ২০২৩-এ খালিফার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি একটি ভুয়া বিস্ফোরক ডিভাইস (false explosive device) নিজের ডেস্কে রেখে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। সেই অভিযোগ থেকে তিনি অব্যাহতি পেলেও, অবৈধভাবে ব্রিটিশ সৈন্যদের ব্যক্তিগত তথ্য (personal details) হস্তগত করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
- গুপ্তচরবৃত্তি সন্দেহ: প্রসিকিউশন দাবি করে, খালিফা ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন এবং তেহরানের (Tehran) কাছে স্পর্শকাতর তথ্য হস্তান্তর করেছেন। এ কারণে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট (Official Secrets act) লঙ্ঘনের অভিযোগেও তাকে অভিযুক্ত করা হয়।
- পলায়নপ্রচেষ্টা: সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডনের এইচএমপি ওয়ান্ডসওয়ার্থ (HMP Wandsworth) কারাগারে বন্দি অবস্থায় খালিফা একটি খাবার সরবরাহকারী ট্রাকের (food delivery truck) নিচে লুকিয়ে পালিয়ে যান। তাকে ধরতে সারা দেশে (nationwide) ৭৫ ঘণ্টা ধরে বড় ধরনের অভিযান চলে। শেষে প্লেইনক্লোথস (plainclothes) অর্থাৎ সিভিল পোশাকধারী গোয়েন্দারা একটি টো-পাথে (towpath) তাকে গ্রেপ্তার করেন।
রায় ও বিচারকের পর্যবেক্ষণ
চূড়ান্ত বিচারে আদালত খালিফাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন। রায়ে তাকে “বিপজ্জনক নির্বোধ (dangerous fool)” বলে অভিহিত করা হয়। আদালতে প্রমাণিত হয় যে, সেনসিটিভ তথ্যের বিনিময়ে খালিফা নগদ অর্থ পেয়েছিলেন। খালিফা অবশ্য দাবি করেন, তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাকে (British intelligence services) সাহায্য করার জন্য “ডবল এজেন্ট (double agent)” হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। এ বিষয়ে বিচারক বলেন, “এত বড় এবং অবাস্তব পরিকল্পনা শুরু করার নিজস্ব দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই (immaturity and lack of wisdom) প্রমাণ করে আপনি কতটা অর্বাচীন। আপনার মতো একজন ‘অননুমোদিত, অযোগ্য ও অপরিপক্ব’ জুনিয়র সৈনিক নিজে নিজেই শত্রু রাষ্ট্রের (enemy state) সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন—এতেই বোঝা যায় আপনি কতটা অদূরদর্শী ছিলেন এবং কত বড় ঝুঁকি তৈরি করেছেন।”
সূত্র
- https://www.theguardian.com/world/2025/feb/03/daniel-khalife-former-soldier-who-spied-for-iran-jailed
- https://www.bbc.co.uk/news/articles/cvgeke2r6zno
উপসংহার
উপরের প্রতিটি ঘটনাই ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পটভূমিকে স্পষ্ট করে তোলে:
- দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংকট: ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের হস্তক্ষেপ দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার প্রশ্নে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। ব্ল্যাক এমপাওয়ারমেন্ট আইন বনাম স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নিয়েও সরকারের অভ্যন্তরে মতভেদ দেখা দিয়েছে।
- মেক্সিকো ও কানাডায় সাময়িক স্বস্তি: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ঘোষণায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে মেক্সিকো ও কানাডা সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার ও ফেন্টানিল পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, যাতে সাময়িকভাবে ৩০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখা সম্ভব হয়েছে।
- ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা: প্রধানমন্ত্রী বেয়রুর Article 49.3 ব্যবহারে আবারও অনাস্থা ভোট আসছে। যদিও সোশ্যালিস্ট পার্টির সমর্থন না পেলে বিরোধীদের পক্ষে সরকার ফেলা কঠিন হবে। এর ফলে ফ্রান্সের রাজনৈতিক মানচিত্রে বামপন্থী জোটের মধ্যে বিভাজন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
- যুক্তরাজ্যে গুপ্তচরবৃত্তির শাস্তি: প্রাক্তন সৈনিক ড্যানিয়েল খালিফার ১৪ বছরের সাজা প্রমাণ করে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা লঙ্ঘন ও অবৈধ পদ্ধতিতে শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়। মামলাটি ব্রিটিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও সন্দেহ উভয়কেই একসঙ্গে উস্কে দিয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতির দিক থেকে এটি এক অস্থির সময়। ট্রাম্প প্রশাসন নতুন নতুন দেশ ও নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, যার পরিণতি কখনো অর্থনৈতিক শুল্কযুদ্ধে (trade war), কখনোবা আর্থিক সহায়তা বন্ধের (funding cuts) হুমকিতে গড়াচ্ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার লড়াই অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তা ও গুপ্তচরবৃত্তির বিষয়গুলোও শিরোনামে থাকছে। সামনের দিনগুলোতে আলোচনাগুলো আরও তীব্রতর হবে, এবং তার প্রতিফলন ঘটবে স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক সব পর্যায়ের রাজনীতিতে।
Leave a Reply