Table of Contents
ভূমিকা
গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে তিনি মেক্সিকো (Mexico), কানাডা (Canada) ও চীনের (China) ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক বা ট্যারিফ (tariff) আরোপ করবেন। যদিও পরিকল্পনামতো আজকের সকাল থেকে চীনের ওপর নতুন ট্যারিফ কার্যকর হয়েছে, মেক্সিকো ও কানাডার ক্ষেত্রে তা একমাসের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে—আলোচনার সুবিধার্থে। এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ তার প্রথম মেয়াদের চেয়ে আরো বেশি ট্যারিফ আরোপ ও ট্রেড ওয়ার (trade war) কেন্দ্রিক হবে।
নিম্নে আমরা বিস্তারিতভাবে দেখব, আসলে ট্রাম্প কী ধরনের ট্যারিফ আরোপ করেছেন, এসবের বাস্তব প্রভাব কী হতে পারে, এবং আসন্ন বাণিজ্যযুদ্ধে (trade war) কে জিততে পারে কিংবা হারতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষিত ট্যারিফ: সারসংক্ষেপ
ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে কানাডা থেকে আমদানি হওয়া তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে (oil and gas) বিশেষ ছাড় দিয়ে ১০% হারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করা হয়। এর বাইরে, চীনা পণ্যের ওপরও আগে থেকে বিদ্যমান শুল্কের পাশাপাশি আরও ১০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যের ওপর যে শুল্কগুলো (tariffs) আরোপ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে নতুন এই ১০% যুক্ত হয়ে চীনের পণ্যে গড়ে প্রায় ২০% শুল্ক দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও, ডি মিনিমিস (de minimis) নামে পরিচিত এক বিশেষ ছাড়—যার আওতায় ৮০০ ডলারের কম মূল্যের পণ্য শুল্কমুক্ত থাকত—সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শেইইন (Shein) এবং তেমু (Temu)-এর মতো সস্তা চীনা খুচরা বিক্রেতারা (retailers) এই সুবিধা নিয়ে প্রচুর পণ্য আমদানি করত। গত শুক্রবার ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেছিলেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) ওপরও শুল্ক “নিশ্চিতভাবেই আরোপ করা হবে,” যদিও ঠিক কীভাবে বা কবে থেকে তা শুরু হবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।
চীনের ওপর ট্যারিফ: সম্ভাব্য প্রভাব
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ব্যবস্থায় চীনের (China) ওপর চাপ বৃদ্ধির কথা শোনা গেলেও, বাস্তবে এটি চীনা অর্থনীতিতে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলেই অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। এর পেছনে কয়েকটি কারণ আছে:
- ইতোমধ্যেই কমে যাওয়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য (bilateral US–China trade): ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেশ কমে গিয়েছিল। তাই নতুন করে আরোপিত ১০% শুল্ক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে আগের চেয়ে বড় ধাক্কা দেবে না।
- চীনের রপ্তানিনির্ভরতা তুলনামূলক কমে যাওয়া: মেক্সিকো বা কানাডার তুলনায় চীন অনেক কম মাত্রায় মার্কিন বাজারের ওপর নির্ভরশীল। সর্বোপরি, চীনের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুযোগ থাকায় মার্কিন শুল্ক বাড়লেও চীনা অর্থনীতি এককভাবে বড় ধরনের চাপে পড়বে না।
- ফ্রন্ট লোডিং (front loading): ট্রাম্প নির্বাচনের প্রচারে বলেছিলেন, তিনি চীনের পণ্যে ৬০% পর্যন্ত সর্বজনীন শুল্ক আরোপ করতে পারেন। এ আশঙ্কায় বহু ব্যবসা আগেভাগেই প্রচুর চীনা পণ্য আমদানি করে মজুত করেছে, যাতে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে কম খরচে পণ্য সংগ্রহ করা যায়। ২০২৪ সালের শেষ দিকে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (trade surplus) ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার এটিও একটি কারণ।
- সম্ভাব্য জিডিপি (GDP) প্রভাব: অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা দ্য ইকোনমিস্ট (The Economist) অনুমান করছে যে এই নতুন শুল্ক চীনের জিডিপি হয়তো মাত্র ০.৩% হ্রাস করতে পারে। তা–ও আবার তাৎক্ষণিকভাবে নয়, বরং সময়ের সঙ্গে সামান্য প্রভাব ফেলবে।
এসব কারণে চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক স্বল্প ও মাঝারি মেয়াদে বিশাল কোনো অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে বলে আপাতত মনে হয় না।
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ট্যারিফ: তুলনামূলক গুরুতর প্রভাব
মেক্সিকো (Mexico) ও কানাডার (Canada) ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ২৫% শুল্ক (কানাডিয়ান তেল ও গ্যাসের বেলায় ১০%) এর প্রভাব অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি বা ইউএসএমসিএ (USMCA) (যা নাফটা-NAFTA-র স্থান নিয়েছে) অনুযায়ী, ১৯৯৪ সাল থেকে মূলত শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চলে আসছে। গত কয়েক দশকে তিন দেশের মধ্যে এমন একটি সরবরাহ শৃঙ্খল (supply chain) গড়ে উঠেছে, যেখানে একই পণ্য তৈরিতে বিভিন্ন উপাদান একাধিকবার সীমানা অতিক্রম করে।
১. সাপ্লাই চেইনের (supply chain) ধাক্কা: নতুন ট্যারিফ আরোপ হলে উৎপাদন শৃঙ্খলে বিশাল বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। বিশেষ করে গাড়ি নির্মাতা (carmakers) এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ-নির্মাতারা যদি প্রতিবার সীমানা পারাপারে নতুন শুল্ক দিতে বাধ্য হয়, তাহলে তাদের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে। ব্যবসাগুলো হয় এই বাড়তি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে, নয়তো পুরো উৎপাদন পদ্ধতিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। তবে উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে স্থানান্তরিত করা স্বল্প মেয়াদে সম্ভব নয়; এতে প্রচুর বিনিয়োগ ও সময়ের প্রয়োজন।
২. মুদ্রার ওপর প্রভাব: কানাডিয়ান ডলার ও মেক্সিকান পেসোর (Mexican peso) ওপর এই সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাজার সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করবে যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve) ডলারের মান আরও শক্তিশালী করতে সুদের হার বাড়াতে পারে (rate hikes)। এতে কানাডা ও মেক্সিকোর মুদ্রার দাম পড়ে যেতে পারে, অর্থাৎ এই দুই দেশের মুদ্রা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্স (Peterson Institute for International Economics)-এর গবেষণায় ধারণা করা হয়েছে, এ কারণে কানাডা ও মেক্সিকোর অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়তে পারে, যেখানে দুই দেশেরই জিডিপি (GDP) প্রায় ১.৫% কমে যাবে এবং মুদ্রাস্ফীতি (inflation) যথাক্রমে ১.৭ ও ২.৩ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের ওপর প্রভাব: যদিও যুক্তরাষ্ট্র অন্য দুই দেশের তুলনায় তুলনামূলক কম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল, তবু নতুন এসব শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে পুরোপুরি অক্ষত রাখবে না। বিশেষত খাদ্য (food), নির্মাণসামগ্রী (construction materials) এবং জ্বালানি তেল (energy) প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো ও কানাডার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সরাসরি ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ে প্রভাব ফেলবে। আর জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিই (energy costs) সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির (inflation) সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হতে পারে।
৪. মুদ্রাস্ফীতি ও ফেডের লক্ষ্য: ইয়েল’স বাজেট ল্যাব (Yale’s Budget Lab) গণনা করে দেখেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত ভোগব্যয়মূলক মুদ্রাস্ফীতি বা পিসিই (PCE) ইনফ্লেশন ইতিমধ্যেই ২% লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ০.৬ পয়েন্ট বেশি। নতুন করে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপিত হলে এই পিসিই ইনফ্লেশন অন্তত আরও ০.৫ পয়েন্ট বেড়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার আরও বাড়াতে উৎসাহিত করতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সঙ্কোচনমুখী প্রভাব ফেলবে।
এই ট্যারিফের পেছনে ট্রাম্পের যুক্তি কী?
ট্রাম্পের প্রধান বক্তব্য হলো—দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি (bilateral trade deficit) কমানোর মাধ্যমে অন্য দেশগুলোকে আমেরিকায় পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা। অর্থাৎ, আমদানি কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে উৎপাদন বাড়ানো তার অন্যতম ঘোষিত উদ্দেশ্য। তবে এবারের ঘোষণা দেওয়ার পর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)-এ পোস্ট করে মাদক পাচার (ফেন্টানিল- fentanyl) ও অবৈধ অভিবাসনের (illegal immigration) বিষয়টিও উল্লেখ করেন। যদিও শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সরাসরি মাদক বা অভিবাসন প্রবাহ কমানো যায় না, ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন যে মেক্সিকো ও চীনকে চাপের মুখে ফেললে তারা ফেন্টানিল চোরাচালান বন্ধে এবং মেক্সিকো অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
কিন্তু কানাডার ব্যাপারে এই যুক্তি মোটেও স্পষ্ট নয়। কানাডা মূলত ফেন্টানিল বা অবৈধ অভিবাসনের বড় কোনো উৎস নয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য ঘাটতি বা উদ্বৃত্তও (trade surplus) তেমন বড় নয়; যেটুকু আছে, তা মূলত জ্বালানি তেলের কারণে। কেউ কেউ মনে করেন এটি হতে পারে ট্রাম্পের বৃহত্তর রাজনৈতিক লক্ষ্যের অংশ—গ্রেটার আমেরিকা (Greater America) ধারণায় কানাডাকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা অথবা অন্য সব দেশকে আরো ভীত করে তোলা, যেন তারা ট্রাম্পের শর্ত মেনে চলে।
পরবর্তী কী হতে পারে?
১. আদালতের চ্যালেঞ্জ: নতুন ট্যারিফগুলো ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (International Emergency Economic Powers Act)-এর আওতায় আরোপিত হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রকৃত অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা (economic emergency) রয়েছে কি না, তা আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে আদালতে গেলে এগুলো বাতিল বা স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
২. চুক্তির সম্ভাবনা: যদি আদালতে এগুলো টিকে যায়, তাহলে তিন দেশকেই (যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কানাডা) নতুন কোনো সমঝোতায় আসতে হতে পারে। অন্যথায় একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ ও ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধ (trade war) অব্যাহত থাকবে। স্বল্পমেয়াদে এটি তিন দেশের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আসন্ন ট্রেড ওয়ারে বিজয়ী হবে কে?
প্রশ্ন হলো, এই শুল্ক যুদ্ধের ফলে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবেন কি না। মেক্সিকো, কানাডা ও চীন আদৌ কতটা সমঝোতায় আসবে? মার্কিন অর্থনীতি (U.S. economy) তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হলেও, দুটি কারণে ট্রাম্পের পক্ষে সবকিছু আদায় করা কঠিন হতে পারে:
১. রাজনৈতিক অসমতা (political asymmetry): কানাডা ও মেক্সিকোর নাগরিকদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হতে পারে যে “ট্রাম্পের চাপের কাছে” তাদের সরকার মাথা নত করবে না। অর্থাৎ, তারা ক্ষণিকের অর্থনৈতিক চাপ সয়েও নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বা মর্যাদা ধরে রাখতে চাইবে। অন্যদিকে, কিছু মার্কিন নাগরিক হয়তো ভাবতে পারে—“ট্রাম্প তো বলেছিলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাবেন, এখন কেন তিনি নতুন শুল্ক আরোপ করে বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছেন?” অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণভাবে ট্রাম্পের ওপর চাপ তৈরি হবে।
২. গেম থিওরি (game theory) ও দীর্ঘমেয়াদি হিসাব: ট্রাম্পের আলোচনার সাধারণ কৌশল হলো “টানা চাপ ধরে রাখা।” এক বা একাধিকবার এই কৌশল তার কাজে লেগেছে। কিন্তু এবার এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের খুব শুরুর দিক। মেক্সিকো ও কানাডা যদি এখনই সম্পূর্ণরূপে ট্রাম্পের কাছে মাথা নত করে, তবে সামনের চার বছর ধরে বারবার একই কৌশলে তাদের বাধ্য করার চেষ্টা চলবে—এমন আশঙ্কা থেকেই তারা শুরুতেই শক্ত অবস্থান নিতে পারে। গেম থিওরির ভাষায়, এটি “repeated game”-এর (পুনরাবৃত্তি হওয়া গেম) পরিস্থিতি। একবার ‘হেরে’ গেলে ভবিষ্যতে আরও বড় চাপ আসবে—এই আশঙ্কায় মেক্সিকো ও কানাডা এখনই কিছুটা ধাক্কা সহ্য করে হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইবে।
উপসংহার
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে এই বর্ধিত শুল্কের (tariff) ঘোষণা ও প্রাথমিক বাস্তবায়ন উত্তর আমেরিকার অর্থনীতি ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক অনেকাংশে ধারণা করা হয়েছিল; বিশেষ করে ২০২৪ সালে চীনের রপ্তানি উদ্বৃত্ত বেড়ে যাওয়ার পটভূমিতে বিষয়টি একটি প্রত্যাশিত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যায়। তবে কানাডা ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব তুলনামূলকভাবে তীব্র হতে পারে—বিশেষত খাদ্য, জ্বালানি ও নির্মাণসামগ্রী খাতে। এর ফলে তিন দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি (যেমন ইউএসএমসিএ) কার্যত এক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে বৃহত্তর এবং সম্ভবত স্বল্পমেয়াদে সহনশীল, তবুও উচ্চমূল্যের পণ্য আমদানি ও মুদ্রাস্ফীতি (inflation) বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, কানাডা ও মেক্সিকো উভয়েই রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির কারণে বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হবে, মুদ্রার মান কমতে পারে, মন্দা বা ইনফ্লেশনারি রিসেশন (inflationary recession) তৈরি হতে পারে। তবু গেম থিওরির (game theory) আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মেক্সিকো ও কানাডা যদি শুরুতেই পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করে, তাহলে সামনের চার বছরে আরও বড় রকমের চাপের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে তারা আপাতত আর্থিক ক্ষতি মেনে নিয়ে হলেও একটা কঠোর অবস্থান নিতে আগ্রহী হতে পারে।
ফলে, ট্রাম্প এই ট্যারিফ যুদ্ধের মাধ্যমে আংশিক সাফল্য পেতে পারেন, কিন্তু তিনি যেভাবে প্রত্যাশা করছেন—সবকিছুকে জোর করে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসা—তা হয়তো সহজ হবে না। মেক্সিকো, কানাডা ও চীন তিনটি দেশই ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা ও স্বার্থের অধিকারী। সামনের দিনগুলোতে, আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জ, নতুন আলোচনা কিংবা পাল্টা শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা—সবকিছুই উন্মুক্ত। সুতরাং এই বাণিজ্য যুদ্ধ (trade war) কোন দিকে মোড় নেবে, সেটা এখনই নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। তবে সামগ্রিক চিত্র বলছে, দীর্ঘমেয়াদে এই যুদ্ধ সবার জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে, আর ট্রাম্পের পরিকল্পিত সব লক্ষ্য পূরণ হওয়া অনিশ্চিত।
সব মিলিয়ে, “কেন ট্রাম্প তার ট্রেড ওয়ারস (trade wars) হারাবেন (সম্ভবত)”—এই শিরোনাম ভবিষ্যতে সত্য হতে পারে, কারণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নানা দিক থেকে ট্রাম্পের এই ট্যারিফ-কেন্দ্রিক কৌশল তাকে সংক্ষিপ্ত মেয়াদে কিছু সুবিধা দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে অন্য দেশগুলোর যৌথ প্রতিরোধ ও বিচারিক বাধায় তা বাধাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র
1 – https://www.eiu.com/n/the-impact-of-us-tariffs-on-china-three-scenarios/
2 – Bloomberg live on de minimis exemption https://www.bloomberg.com/news/live-blog/2025-02-01/trump-imposes-tariffs?srnd=homepage-asia
3 – https://www.piie.com/research/piie-charts/2025/trumps-threatened-tariffs-would-raise-prices-toys-electronics-footwear
4 – China exports by country https://wits.worldbank.org//CountryProfile/en/Country/CHN/Year/2022/TradeFlow/Export/Partner/ALL/Product/Total
5 – Canada exports by country https://wits.worldbank.org//CountryProfile/en/Country/CAN/Year/2022/TradeFlow/Export/Partner/ALL/Product/Total
6 – Mexico exports by country https://wits.worldbank.org/CountryProfile/en/Country/MEX/Year/LTST/TradeFlow/Export/Partner/by-country/Product/Total
7 – https://www.eiu.com/n/the-impact-of-us-tariffs-on-china-three-scenarios/
8 – https://paulkrugman.substack.com/p/how-to-damage-us-manufacturing
9 – PIIE comparing impact on US vs Canadian/Mexican economies https://www.piie.com/microsites/2025/future-usmca
10 – CFR article on impact of sanctions https://www.cfr.org/article/what-trumps-trade-war-would-mean-nine-charts
11 – https://x.com/ianbremmer/status/1885817174888988716/photo/1
12 – PCE inflation https://www.bea.gov/data/personal-consumption-expenditures-price-index
13 – https://x.com/ernietedeschi/status/1885502886903214196
14 – https://truthsocial.com/@realDonaldTrump/posts/113931044424714413
15 – https://paulkrugman.substack.com/p/why-has-trump-gone-soft-on-china
16 – https://www.ft.com/content/5a262286-e53b-44d7-a99f-5dd26c1fb1e3
Leave a Reply