Table of Contents
ভূমিকা
ইউরোপের ন্যাটো (NATO) সদস্য রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে প্রতিরক্ষা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবছরের গ্রীষ্মে তারা ন্যাটোর বাকী অংশের সঙ্গে মিলে একটি নতুন ব্যয় লক্ষ্য (New Spending Target) স্থির করবে। তবে গত সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বললেন তিনি ন্যাটো সদস্যদের কাছে জিডিপির ৫% প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি জানাচ্ছেন, তখন অনেকেই বেশ অবাক হয়েছেন। কারণ এই হার বর্তমানে নির্ধারিত ২% টার্গেটের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের ব্যয়ের (যা প্রায় ৩% এর সামান্য বেশি) চেয়েও বেশ অনেকটাই বেশি।
এই প্রতিবেদনে আমরা দেখবো, ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা এখন আসলে কতখানি প্রতিরক্ষা ব্যয় করছে, ট্রাম্পের ৫% লক্ষ্যমাত্রার পক্ষে বা বিপক্ষে কারা আছে, এবং ইউরোপীয় দেশগুলো বাস্তবে এইমাত্রা পর্যন্ত ব্যয় বাড়াতে সক্ষম কি না।
পটভূমি: ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় কেন কম ছিল?
ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ে জার্মানি, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস-সহ বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশই প্রতিরক্ষায় জিডিপির ৩ থেকে ৪% পর্যন্ত ব্যয় করত। তবে শীতল যুদ্ধের অবসানের পর, যখন তাৎক্ষণিক কোনো সামরিক হুমকি ছিল না, তখন এই দেশগুলো সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ সরিয়ে নেয় সামাজিক কল্যাণে (Social Welfare)। সেই সময়ে (১৯৯১ থেকে শুরু করে) ইউরোপ জুড়ে এভাবে সামরিক খাতে ব্যয় কমিয়ে আনায় প্রায় ১.৮ ট্রিলিয়ন ইউরো সাশ্রয় হয়েছে, যাকে অনেকেই “পিস ডিভিডেন্ড” (Peace Dividend) বলে থাকেন।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের (Financial Crisis) পর ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই প্রতিরক্ষা ব্যয় আরও কমিয়ে দেয়। অপরদিকে, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ (War on Terror) ও আফগানিস্তান (Afghanistan) ও ইরাক (Iraq) আক্রমণের কারণে সামরিক ব্যয় অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে।
পরিস্থিতি পাল্টায় ২০১৪ সালে, যখন রাশিয়া ক্রিমিয়া (Crimea) দখল করে। তখন ন্যাটো সদস্যরা অনানুষ্ঠানিকভাবে জিডিপির ২% প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য নেয়। বিশেষ করে রাশিয়ার প্রতিবেশী পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো (যেমন এস্তোনিয়া (Estonia), লাটভিয়া (Latvia), পোল্যান্ড (Poland) ও লিথুয়ানিয়া (Lithuania)) সামরিক ব্যয় বাড়াতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। তবে তখনও গোটা জোটে হাতে গোনা তিনটি দেশ মাত্র ২% লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছিল।
এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করলে (Russia’s Full Scale Invasion of Ukraine) প্রতিরক্ষা ব্যয় বেড়ে যায় অভূতপূর্ব হারে—এক বছরেই গোটা জোটে প্রতিরক্ষা খাতে ১৮% বৃদ্ধি ঘটে। ফলে ২০২৪ সাল নাগাদ (চলতি সময়ের পর্যালোচনায়) দেখা যায়, ন্যাটোর ৩২টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২৩টি দেশ (যা পুরো জোটের দুই-তৃতীয়াংশ) ২% ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। অথচ এর আগের বছরে (২০২৩ সালে) মাত্র ১০টি দেশ ২% মানদণ্ড অতিক্রম করেছিল। এবছর (২০২৫ সালে) যৌথভাবে জোটটি প্রতিরক্ষায় ১.৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
তবু এখনো এক-তৃতীয়াংশ সদস্য ২% লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। স্পেন (Spain), ইতালি (Italy) ও বেলজিয়াম (Belgium)-এর মতো বড় অর্থনীতির দেশগুলো ১.৫%-এরও কম ব্যয় করছে।
ট্রাম্পের চোখ রাঙানি: জিডিপির ৫% টার্গেট
ট্রাম্প আগে থেকেই ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে আসছেন। তার মতে, ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ‘নির্ভর’ (Freeloading) করে আছে। নিছক সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে, ডলারের অঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র এখনো ন্যাটোর সর্বোচ্চ ব্যয়কারী; ন্যাটোর বাৎসরিক সম্মিলিত সামরিক ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রের।
২০১৮ সালের এক শীর্ষ সম্মেলনে (Summit) ট্রাম্প এমনও বলেছিলেন যে, যদি ইউরোপের সেই সদস্যরা ২% লক্ষ্য পূরণ করতে না পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র জোট ছেড়েও যেতে পারে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় গুঞ্জন ওঠে, ট্রাম্প কোনো এক ইউরোপীয় নেতাকে বলেছিলেন যে, তারা যদি বিলম্বিত বা কম ব্যয় করে থাকে), তবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষার প্রশ্নে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন না।
এখন ট্রাম্প আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, তিনি চাইছেন ন্যাটো সদস্যরা প্রতিরক্ষায় জিডিপির ৫% ব্যয় করুক—যা বর্তমানের ২% লক্ষ্যের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
অনেক দেশের পক্ষেই ২% লক্ষ্যেই পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে, সেখানে ৫% তো আরো বড় চ্যালেঞ্জ। উদাহরণ হিসেবে, জার্মানি (Germany) গত বছর প্রথমবারের মতো ঠাণ্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ২% লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে। দেশের বিরোধী দলের (ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট) নেতা ফ্রিডরিশ মের্ত্জ (Friedrich Merz), যিনি সামনের মাসের ফেডারেল নির্বাচনে (Federal Election) জয়ী হয়ে চ্যান্সেলর হওয়ার প্রায় নিশ্চয়তা রাখেন, স্পষ্টই জানিয়েছেন—জার্মানি এখনই ৫% লক্ষ্যমাত্রা নিতে প্রস্তুত নয়। বরং তিনি বলছেন, “আমাদের আগে সত্যিকার অর্থে ২% লক্ষ্যমাত্রা স্থায়ীভাবে অর্জন করতে হবে। আমরা এখনো সেই অবস্থায় পৌঁছাইনি।”
এ থেকে অনুমান করা যায়, ট্রাম্পের এই ৫% দাবি হয়তো আলোচনার সময় ‘চাপের কৌশল’ (Coercive Tactic) বা প্রাথমিক অবস্থান (Opening Position) হিসেবে ব্যবহৃত হবে, প্রকৃতভাবে সে দাবি সম্ভবত কিছুটা কমে আসবে।
কে ৫%কে সমর্থন করছে, কে করছে না?
অনেক দেশ আগে থেকেই মনে করে, ২% লক্ষ্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দূরের কথা, শান্তিকালেও (Peacetime) যথেষ্ট নয়। কারণ রাশিয়া এবছর (২০২৫) আনুষ্ঠানিক বাজেটে জিডিপির প্রায় ৮% প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ করছে, এর বাইরে ব্যাংকঋণের মাধ্যমে পরোক্ষ বা “অফ-বুক” খাতে আরও অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। ফলে ইউরোপে, বিশেষ করে বাল্টিক (Baltic) ও নর্ডিক (Nordic) অঞ্চলের কিছু রাষ্ট্র অনুভব করে যে, ২% ব্যয় কেবলই অপ্রতুল।
- এস্তোনিয়া (Estonia): দেশটির প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পের ৫% প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন। তিনি বলেছেন, এটাই সেই বার্তা যেটা এস্তোনিয়া বরাবর প্রচার করে আসছিল। ২০২৫ সাল থেকে অন্তত ২০৩০ সাল পর্যন্ত এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া (Lithuania) উভয়েই জিডিপির ৫% বা তার বেশি প্রতিরক্ষায় ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই হার এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়াকে প্রথম ন্যাটো দেশ হিসেবে জিডিপির ৫% ছুঁতে সাহায্য করবে।
- লিথুয়ানিয়া (Lithuania): বর্তমানে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় জিডিপির ২.৭%। যেটি এখন প্রায় দ্বিগুণ করে ৫%-এ নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ চলছে।
- সুইডেন (Sweden): দেশটি এখনো ন্যাটোর পূর্ণাঙ্গ সদস্য নয় (আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিতর্ক চলছে), তবুও তারা প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ২.১% অবধি বাড়িয়েছে। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এ বিষয়ে একটি বিস্তৃত ঐক্যমত্য রয়েছে যে, ব্যয় আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
- পোল্যান্ড (Poland): ন্যাটোতে জিডিপির অনুপাতে সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা ব্যয়কারী এই দেশ (বর্তমানে ৪%-এর কাছাকাছি) বলছে, ইউরোপের উচিত ট্রাম্পের ৫% লক্ষ্যের বিরোধিতা না করে বরং গ্রহণ করা।
ন্যাটো কি নতুন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে?
জুনে (সম্ভবত ২০২৫ সালের মাঝামাঝি) ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটা (Mark Rutte) এর ভাষ্য অনুযায়ী, নতুন লক্ষ্য সম্ভবত ৩% থেকে ৩.৫% এর মধ্যে থাকবে—যা ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৫% এর তুলনায় কিছুটা কম। তবে এমনকি ৩% বা ৩.৫% লক্ষ্যমাত্রাও অনেক দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) নিয়ম অনুযায়ী জিডিপির ৩% এর বেশি বাজেট ঘাটতিতে (Budget Deficit) ভুগছে, আবার তারা ন্যাটোর ২% সামরিক ব্যয় লক্ষ্যও পূরণ করতে পারছে না। উদাহরণস্বরূপ:
- ইতালি (Italy)
- বেলজিয়াম (Belgium)
- স্পেন (Spain)
যেসব দেশের ঋণের বোঝা (Debt Levels) ও সুদের খরচ (Interest Costs) বেশি, তাদের পক্ষে নতুন করে ঋণ নেওয়া কঠিন। ফলে প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হলে সামাজিক কল্যাণ (Welfare) বা অন্য কোনো খাত থেকে ব্যয় কেটে নিতে হবে।
“পিস ডিভিডেন্ড” (Peace Dividend) উল্টে দেওয়া: সামাজিক ব্যয় বনাম প্রতিরক্ষা
রাশিয়া (Russia) বরাবরই ইউরোপীয়দের উদ্দেশে বলে আসছে, “পিস ডিভিডেন্ড” যুগের অর্থ সাশ্রয়ের সময় শেষ। ইউরোপে গড়ে জনগণের কল্যাণ, স্বাস্থ্য ও পেনশনে (Pensions, Health, Social Security) জাতীয় আয়ের বড় অংশ ব্যয় করা হয়। রাশিয়ার যুক্তি, এদের মধ্যে সামান্য অংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করলেই সামরিক দিক অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
কিন্তু বাস্তবে, ইউরোপীয় সরকারগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা কমাতে হিমশিম খাচ্ছে—জনপ্রিয়তা হারানোর আশঙ্কায় কেউই বড় ধরনের কাটছাঁট করতে চায় না।
সমাধান: যৌথ ঋণ (Joint Borrowing) ও যৌথ কেনাকাটা (Joint Procurement)?
এমন একটি বিকল্প ভাবনা হলো—ইইউ/ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো যদি সামরিক ব্যয়ের জন্য যৌথভাবে ঋণ (Joint Borrowing) নেয়। মহামারির সময় ইইউ যেভাবে যৌথ বন্ড (Jointly Backed Bond) ইস্যু করেছিল, এখানেও অনুরূপ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যেই ইইউর প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রধান এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (Emmanuel Macron) এ ধারণার পক্ষে কথা বলেছেন। এমনকি ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এটি সমর্থন করে থাকেন।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী কাইয়া কলাস ভ্রাসা (Kaiakalis Vrasa) আবার বলেছেন, যৌথভাবে অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনার (Joint Procurement) মাধ্যমে খরচ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। যদি এই ব্যয় দক্ষতার মাধ্যমে অর্জিত হয়, তবে হয়তো ৫% লক্ষ্য কিছুটা কমিয়ে রাখা গেলেও সামরিক শক্তি বাড়ানো সম্ভব হতে পারে।
তবে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের (The Netherlands) মতো তুলনামূলক ‘মিতব্যয়ী’ (Frugal) দেশগুলো যৌথ ঋণের বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না। জার্মানিতে আগামী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ত্জ (Friedrich Merz) ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, আরও বেশি ঋণভিত্তিক ভাগাভাগিতে তিনি খুব একটা স্বস্তি বোধ করছেন না।
আবার, যৌথ ক্রয় (Joint Procurement) বড় ধরনের সাশ্রয় আনতে পারে বটে, কিন্তু ইউরোপজুড়ে যেভাবে ইইউবিরোধী (EU Skepticism) ভাবনা বাড়ছে, সেক্ষেত্রে যৌথ প্রতিরক্ষা কাঠামোতে অনেক দেশ দ্বিধা বা আপত্তি জানাতে পারে।
উপসংহার: ৫% কি বাস্তবে সম্ভব?
রাশিয়ার হুমকি এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। ২% লক্ষ্যমাত্রা নতুন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ৫%-এর মতো উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় সব দেশের জন্যই বড় ধরনের আর্থিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
- জার্মানি, যারা ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিগুলোর একটি, সদ্য ২% স্পর্শ করেছে। তারা এখনও ৫% নিয়ে ভাবতে নারাজ।
- ইতালি, স্পেন, বেলজিয়াম-এর মতো দেশগুলোর ঋণ ও বাজেট ঘাটতি এমনিতেই সমস্যাজনক। ওদের পক্ষে আবার সামাজিক খাত কাটছাঁট করে সামরিক খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করা কঠিন।
- বাল্টিক অঞ্চলের ছোট রাষ্ট্রগুলো (যেমন এস্তোনিয়া ও লিথুয়ানিয়া) বরং ৫% লক্ষ্যকে স্বাগত জানিয়েছে, কারণ তাদের জন্য রাশিয়া-সংলগ্ন নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক বেশি উদ্বেগের।
- পোল্যান্ড এরই মধ্যে উচ্চমাত্রায় প্রতিরক্ষা ব্যয় করছে এবং ট্রাম্পের ৫% লক্ষ্যমাত্রাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে।
সম্ভাব্য সামনে যা ঘটতে পারে:
- ন্যাটো হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে ৩% বা ৩.৫% এর মত একটি আপাতসীমা নির্ধারণ করবে।
- যৌথভাবে সামরিক সরঞ্জাম কেনার (Joint Procurement) মাধ্যমে কিছু দেশ ব্যয় কমিয়ে আনতে চেষ্টা করবে।
- যৌথ ঋণের (Joint Borrowing) কোনো পরিকল্পনা আসতে পারে, যা ফ্রান্সের মতো দেশ সমর্থন করবে কিন্তু জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের মতো ‘মিতব্যয়ী’ দেশগুলো দ্বিধায় পড়বে।
- ইউরোপীয় সরকারগুলোকে (বিশেষ করে ঋণে জর্জরিত দেশগুলো) বেছে নিতে হবে—সামাজিক কল্যাণ বনাম প্রতিরক্ষা ব্যয়।
সব মিলিয়ে, ইউরোপের সামরিক ব্যয় নতুন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর চাপের ফলে ২% টার্গেটের সীমানা অতিক্রম করে আরও উচ্চহারে পৌঁছাতে ইউরোপীয় দেশগুলো বাধ্য হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে জিডিপির ৫% ব্যয় করা—এটি অনেকের কাছে এখনো স্বপ্নাতীত, বিশেষ করে বড় অর্থনীতিসম্পন্ন কিন্তু ঋণ-বোঝা দেশগুলোর জন্য।
তাই শেষ পর্যন্ত, ন্যাটোর আসন্ন সম্মেলন ও পরবর্তী কয়েক বছরের রাজনৈতিক বাস্তবতা বলে দেবে ইউরোপ আসলে কতখানি এগোতে পারে। সর্বোপরি, প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো মানে হয়ত সামাজিক খাতে কাটছাঁট—যেটি জনপ্রিয়তা হারানোর বড় ঝুঁকি। অথবা যৌথ ঋণ—যা অনেককে আর্থিকভাবে বন্ধনে আবদ্ধ করে। যে পথই হোক, ইউরোপের সামনে এখন এক কঠিন বিবেচনার সময় এসে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যসূত্র
How NATO increased defence spending https://www.atlanticcouncil.org/blogs/econographics/whos-at-2-percent-look-how-nato-allies-have-increased-their-defense-spending-since-russias-invasion-of-ukraine/ https://www.economist.com/graphic-detail/2017/02/16/military-spending-by-nato-members https://www.aljazeera.com/news/2024/7/11/how-much-does-each-nato-country-spend-in-2024 https://www.bbc.co.uk/news/world-europe-18023383
Peace dividend context
https://www.wsj.com/world/europe/europe-has-a-painful-choice-war-vs-welfare-41e9e7f7
https://www.nytimes.com/interactive/2025/01/25/world/europe/nato-europe-defense-spending.html
https://theconversation.com/defence-cuts-effectively-paid-for-uk-welfare-state-for-60-years-but-that-looks-impossible-after-ukraine-178680
Lithuania and Estonia pledge to meet 5%
https://www.ft.com/content/a999f239-3104-419a-95dc-bf9c04242b2f
Europe split on 5% target
https://www.politico.eu/article/donald-trump-tells-allies-spend-5-percent-gdp-defense-nato/
Poland supports 5%
https://www.reuters.com/world/europe-should-welcome-trumps-nato-spending-call-says-polands-tusk-2025-01-22/
EU countries running deficits
https://www.ft.com/content/5125db1e-a0c4-4d5e-9960-59ee781ac88f
Europe’s welfare states at risk
https://www.aol.com/europe-welfare-states-risk-trump-070057272.html
Joint borrowing for defence
https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-12-05/eu-defense-chief-floats-joint-debt-funding-based-on-nato-target?embedded-checkout=true
Leave a Reply