Table of Contents
ভূমিকা
কানাডার (Canada) ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির (Liberal Party) নেতা জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau) গত মাসে পদত্যাগ (Resigned) করার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, এটা আর দাঁড়াতে পারবে না। কারণ তার জায়গায় জনপ্রিয় কোনো উত্তরসূরি (Successor) চোখে পড়ছিল না। সে সময় ভোটের জরিপে (Polling) ট্রুডোর লিবারেলরা পিয়ের পোলিয়েভরে’র (Pierre Polievre) নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভদের (Conservatives) তুলনায় ৩০ পয়েন্টেরও বেশি পিছিয়ে ছিল। আর যেহেতু সর্বোচ্চ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, তাই অনেকে ধরে নিয়েছিলেন লিবারেলদের পক্ষে খুব একটা আশার আলো নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে, কনজারভেটিভরা এখনো এগিয়ে থাকলেও লিবারেলরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে যদি ট্রুডোর জায়গায় মার্ক কার্নি (Mark Carney) আসেন—যিনি আপাতত বুকমেকারদের (Bookies) হিসাবে এগিয়ে আছেন এবং অপ্রত্যাশিতভাবে জনপ্রিয় বলেই গণ্য হচ্ছেন—তাহলে লিবারেলদের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা সাম্প্রতিক ভোটের জরিপ বিশ্লেষণ করব, দেখব কেন কনজারভেটিভদের বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও সেটি নড়বড়ে প্রমাণিত হচ্ছে, এবং মার্ক কার্নি সত্যিই লিবারেলদের বাঁচাতে পারবেন কি না তা মূল্যায়ন করব।
পটভূমি: লিবারেলদের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি
গত কয়েক বছরে কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি ভাল সময় কাটায়নি। আগের বিভিন্ন নিবন্ধে বা তথ্যসূত্রে আমরা দেখেছি, তাদের জনপ্রিয়তা (Poll Numbers) ধাপে ধাপে পড়ে যাচ্ছিল। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ তারা পিয়ের পোলিয়েভরে’র নেতৃত্বাধীন মূল বিরোধী দল কনজারভেটিভদের চেয়ে প্রায় ২৫ পয়েন্ট পেছনে ছিল। পাশাপাশি তারা আগের কোয়ালিশন (Coalition) মিত্র হিসেবে কাজ করা নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (New Democratic Party – NDP) চেয়েও খুব বেশি এগিয়ে ছিল না। এই নিম্নমুখী সমর্থনের নানা কারণ রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট
বিশ্বব্যাপী অন্য অনেক ক্ষমতাসীন সরকার (Incumbent) যেমন ২০২২ ও ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতি (Inflationary Spike) নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে চাপে পড়েছে, তেমনি কানাডার লিবারেল সরকারকেও একই সমস্যায় ভুগতে হয়েছে। খাদ্যপণ্য ও পণ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে।
নেতিবাচক ব্যক্তিগত ইমেজ: জাস্টিন ট্রুডো
যদিও এসব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে অনেক সরকারই লড়েছে, তবে কানাডার লিবারেলদের জনপ্রিয়তা কমার অন্যতম বড় কারণ হল তাদের নেতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ব্যক্তিগতভাবে খুবই অজনপ্রিয় হয়ে পড়েছিলেন।
- ক্ষমতার শুরুতে (২০১৫ সালের দিকে) ট্রুডোকে বেশ উদারপন্থী (Liberal) ও উদ্ভাবনী নেতা হিসেবে দেখা হতো।
- একসময় অ্যাঙ্গাস রিড (Angus Reid)-এর জরিপ অনুযায়ী, তার জনপ্রিয়তা (Approval) ৬০% পর্যন্ত ছিল, যেখানে ৩০% মানুষ তার বিরোধিতা (Disapproval) করত।
- কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকে তার গ্রহণযোগ্যতা দ্রুত কমতে থাকে। মহামারির (Pandemic) সময়ে তা মাঝারি স্তরে থাকলেও (মাইনাস ১৫ বা তার কাছাকাছি), ২০২৩ ও ২০২৪ সালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ট্রুডোর ওপর চাপ বেড়ে যায়। ট্রাম্প চাইছিলেন কানাডা যেন কিছু নির্দিষ্ট নীতি মেনে চলে বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। কিন্তু ট্রুডো সেই বিষয়ে দৃশ্যত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না বলে তার নিজের মন্ত্রীপরিষদ থেকে (Ministers) অনেকে তাকে অর্থনৈতিক অপব্যবস্থাপনা (Economic Mismanagement) এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সামলাতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে পদত্যাগ (Resigning) করেন। এসব ঘটনা ট্রুডোর জনপ্রিয়তাকে আরও তলানিতে নিয়ে যায়।
অ্যাঙ্গাস রিডের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ট্রুডোর নিট অনুমোদন হার (Net Approval Rating) মাইনাস ৫২ (-52)-তে নেমে গিয়েছে, যেখানে মাত্র ২২% মানুষ তাকে সমর্থন করেন। এমনকি মাত্র ১৬% মানুষ বলেছিলেন তারা পরবর্তী নির্বাচনে (Next Election) লিবারেলদের ভোট দেবেন। এতে বোঝা যায়, লিবারেলরা প্রায় ৩০ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল কনজারভেটিভদের তুলনায়, এবং এমনকি এনডিপির চেয়েও ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। এটিকে অনেকে লিবারেল পার্টির ১৫৭ বছরের ইতিহাসে (Liberals’ 157 Year History) সবচেয়ে খারাপ পর্যায় বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ তাদের ভোট-ভিত্তি এতটা খারাপ অবস্থায় এর আগে কখনো দেখা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১১ সালের নির্বাচনে তারা তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স করেও ১৯% ভোট পেয়েছিল, এবং নির্বাচনের আগে সর্বনিম্ন ১৭%-এ ছিল তাদের জরিপ।
এমন ভয়াবহ অবস্থার চাপে অবশেষে ২০২৫ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে ট্রুডো পদত্যাগ করেন, যা লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনের (Leadership Election) প্রক্রিয়া শুরু করে। মার্চের মধ্যেই নতুন নেতা নির্ধারণ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লিবারেল নেতৃত্বের লড়াই: ফ্রিল্যান্ড বনাম কার্নি
ট্রুডো পদত্যাগ করার পরপরই, দুইজন প্রধান নেতৃত্বপ্রার্থী (Frontrunners) উঠে আসেন:
- ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড (Chrystia Freeland): তিনি ট্রুডোর সাবেক অর্থমন্ত্রী (Former Finance Minister)। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনিই পদত্যাগ করে ট্রুডোর প্রস্থান ত্বরান্বিত করেন। ফ্রিল্যান্ড নিজেকে অভিজ্ঞ মন্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যে অভিজ্ঞতা তাকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কঠিন নেতাকে সামলাতে সক্ষম করে তুলবে বলে তিনি দাবি করেন।
- মার্ক কার্নি (Mark Carney): ব্যাংক অব কানাডার (Bank of Canada) সাবেক গভর্নর (Governor)। তিনি শুধু কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নয়, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (Bank of England) গভর্নর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্রিটিশ (British) দর্শকরা তাকে সেখান থেকেই মনে করতে পারেন। পরবর্তীতে তিনি জাতিসংঘের (United Nations) একটি প্রতিনিধি হিসেবে জলবায়ু বিষয়ক (Climate Issues) কাজও করেছেন।
মার্ক কার্নি কানাডায় তুলনামূলক ইতিবাচক ভাবমূর্তি (Relatively Fondly Remembered) পেয়েছেন, বিশেষ করে আর্থিক খাতে। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার (2008 Crisis) সময় তিনি দ্রুত সুদের হার (Interest Rates) কমিয়ে কানাডার অর্থনীতিকে (Canadian Economy) তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রাখতে পেরেছিলেন। তখন কানাডা জি-সেভেন (G7) দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে নিজের জিডিপি (GDP) ও কর্মসংস্থান (Employment) পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনে।
যদিও কার্নি সরাসরি রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ (Unknown Quantity in Canadian Politics), তবে তিনি এটিকে নিজের শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছেন। তিনি বলছেন, তিনি লিবারেল পার্টিকে (Stagnant Party) পুনরুজ্জীবিত করতে তরুণ ও নতুন মুখ (Fresh Face) হিসেবে আসছেন। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্ড যুক্তি দিচ্ছেন, তিনিই একমাত্র প্রার্থী যিনি যথেষ্ট মন্ত্রী-অভিজ্ঞতা (Ministerial Experience) দিয়ে ট্রাম্পের মতো বিশ্ব রাজনীতির শক্ত নেতার মুখোমুখি হতে পারবেন।
জরিপের সাম্প্রতিক ফলাফল: লিবারেলদের পুনরুত্থান
ট্রুডোর পদত্যাগের পর এবং নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে—এই সম্ভাবনা সামনে আসতেই লিবারেলদের জনপ্রিয়তায় তাৎক্ষণিক উত্থান ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে।
- Ecosystem Polling (১৩-১৫ জানুয়ারি) ফলাফল
সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা যায়, লিবারেলরা এখন ৩২% সমর্থন পাচ্ছে, যা কনজারভেটিভদের থেকে মাত্র ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে। আগের ২৫ থেকে ৩০ পয়েন্টের ব্যবধানের তুলনায় এটি নাটকীয় উন্নতি। - অ্যাঙ্গাস রিড (Angus Reid) জরিপ
জানুয়ারির শেষের দিকে করা অ্যাঙ্গাস রিডের অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চিত্রটি একটু ভিন্ন হলেও, সেখানে স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে যে ফ্রিল্যান্ড বা কার্নির অধীনে লিবারেলরা ট্রুডোর তুলনায় ভালো করবে।- ফ্রিল্যান্ড লিডার হলে লিবারেলরা ২৪% সমর্থন পেতে পারে।
- কার্নি লিডার হলে সমর্থন বেড়ে ২৯%-এ উঠবে।
কেন কার্নি একটু বেশি সমর্থন পাচ্ছেন? সম্ভাব্য কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, তিনি এনডিপি (NDP) সমর্থকদের (Supporters) এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ ভোটারদের (Young Voters) কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। অবশ্য এই ২৯% সমর্থন এখনো কনজারভেটিভদের ৪৩% এর তুলনায় অনেকটাই কম, এবং কানাডার ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (First Past the Post) নির্বাচনী ব্যবস্থায় (Electoral System) ৪৩% ভোট পেলে কনজারভেটিভদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার (Outright Majority) পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবুও এটা বোঝা যাচ্ছে, লিবারেলদের এতদিনের দুরবস্থার বড় অংশ ছিল ট্রুডোর চরম অজনপ্রিয়তার ফল, যার কারণে সমর্থকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন।
কার্নি বনাম ফ্রিল্যান্ড: নেতৃত্ব নিয়ে জল্পনা
নেতৃত্ব নির্বাচন খুব কম সময়ের মধ্যেই (By March) শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বল্পসময়ের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনী গতিপ্রকৃতি (Gauging the Race) নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তা থাকলেও, বুকমেকারদের হিসাবে (Bookies Currently Suggest) কার্নি সামান্য এগিয়ে আছেন। তিনি মন্ত্রীদের কাছ থেকেও বেশি সমর্থন (Ministerial Endorsements) পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
যদি শেষ পর্যন্ত কার্নি জয়ী হন, তাহলে কনজারভেটিভদের (Conservatives) উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ, ইতোমধ্যেই জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, মার্ক কার্নির নিট অনুমোদন হার (Net Approval Rating) +১৩ (+13), যা ট্রুডো বা অন্য কোনো বড় দলীয় নেতার চেয়ে অনেক বেশি।
পিয়ের পোলিয়েভরে’র জনপ্রিয়তার সত্যতা: আসলেই কতটা শক্তিশালী?
পিয়ের পোলিয়েভরে (Pierre Polievre) কানাডার কনজারভেটিভ নেতাকে (Canadian Conservative Leader) অনেকে “অনলাইন রাইট” (Online Right) মহলে রাজনৈতিক তারকা (Political Superstar) হিসেবে দেখিয়ে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা জনপ্রিয় নন বলে জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
- পোলিয়েভরে’র নিট অনুমোদন হার (Net Approval) গত কয়েক বছর ধরে প্রায় -১৫ (মাইনাস ১৫) এর কাছাকাছি ঘুরপাক খাচ্ছে।
- লিবারেলরা যখন প্রচণ্ড অজনপ্রিয় ছিল, কনজারভেটিভদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল মূলত লিবারেলদের প্রতি মানুষের অনাস্থা থেকে, পোলিয়েভরে’র ব্যক্তিগত আবেদন (Own Appeal) থেকে নয়।
অন্যদিকে, এনডিপি নেতা জগমিত সিং (Jagmeet Singh) ও তার দলের জনসমর্থনও সাম্প্রতিক সময়ে কমতে শুরু করেছে। তার নিট অনুমোদন হার এখন প্রায় -২৫ (মাইনাস ২৫), যেখানে আগে বেশ সময় ধরে তা ইতিবাচক বা অন্তত শূন্যের কাছাকাছি ছিল। এর বড় একটি কারণ হল, তিনি ট্রুডোর সাথে করা আস্থাভোট ও অর্থ বরাদ্দ-ভিত্তিক চুক্তি (Confidence and Supply Agreement) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিড়ে ফেলার কথা বললেও, এরপর কোনো অনাস্থা ভোটে (No Confidence Vote) তিনি লিবারেলদের বিরুদ্ধে ভোট দেননি। এতে অনেক ভোটারের চোখে এনডিপি কিছুটা স্ববিরোধী (Hypocritical) অবস্থান নিয়েছে। পাশাপাশি ধারণা জন্মেছে, সিং পার্লামেন্ট সদস্য (MP) হিসেবে নিজের পেনশন (Pension) নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন দেরি করতে চাইছিলেন, কারণ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ তিনি পেনশনের জন্য যোগ্য হতেন। এসব কারণে এনডিপির জনপ্রিয়তাও নিম্নমুখী।
লিবারেলদের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ চিত্র
বর্তমানে লিবারেলরা এখনও কনজারভেটিভদের চেয়ে পিছিয়ে, কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপ ও মার্ক কার্নির জনপ্রিয়তা তাদের জন্য আশার আলো জাগাচ্ছে। সম্পূর্ণ বিজয় (Outright Victory) সম্ভব না হলেও, অন্তত কনজারভেটিভদের দুর্দান্ত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Majority Government) গড়তে বাধা দিতে পারে এমন ফলাফল পাওয়া লিবারেলদের পক্ষে এখন আর অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
কানাডিয়ান রাজনীতিতে অতীতেও আমরা দেখেছি যে ভোটাররা হঠাৎ করে বড় ধরনের মোড় নিতে পারে (Dramatic Shift)। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে কানাডিয়ান কনজারভেটিভরা এত বাজেভাবে হেরেছিল যে দলটি কার্যত ভেঙে পড়েছিল (Essentially Collapsed)। যাই হোক, এখন লিবারেলরা হয়তো ঠিক সে রকম কিছু আশা করছে না, তবে তারা অন্তত কনজারভেটিভদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঠেকিয়ে রাখতে চাইবে এবং সম্ভব হলে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার একটা পথ খুঁজবে।
কার্নির তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটকালে কানাডার অর্থনীতির প্রতি তার অবদান, এবং রাজনীতিতে “নতুন মুখ” হওয়ার কারণে ভোটারদের মধ্যে যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে—এ সবই লিবারেলদের অনুকূলে যেতে পারে। অন্যদিকে, ফ্রিল্যান্ডেরও জনপ্রিয়তা আছে এবং তিনি সরাসরি মন্ত্রী হিসেবে জাস্টিন ট্রুডোর সরকারে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা তাকে অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে তুলে ধরে।
যাই হোক, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, লিবারেলদের সাম্প্রতিক দুর্দশার বড় কারণ ছিল ট্রুডোর চরম অজনপ্রিয়তা। তার প্রস্থানে দলের যে “ইমিডিয়েট বাউন্স” (Immediate Spike in the Polls) ঘটেছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে—যদি নতুন নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত হয়ে আরও সুসংহত প্রচারণা শুরু করতে পারে, তাহলে অন্তত তুলনামূলক ভালো ফলাফল করা সম্ভব।
উপসংহার
সবকিছু মিলিয়ে, কানাডার আগামী নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ অস্থির এবং আকর্ষণীয়। লিবারেল পার্টির নির্দিষ্ট একজন নেতৃত্ব নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত (সম্ভবত মার্চ নাগাদ) সবকিছু অনিশ্চিত থাকবে। তবে এতদিন যে লিবারেলরা তলানিতে ছিল, তারা এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে নতুন জরিপে বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে মার্ক কার্নি (Mark Carney) নেতৃত্বে আসলে লিবারেলরা উল্লেখযোগ্যভাবে সমর্থন বাড়িয়ে নিতে পারে, যা সরাসরি পিয়ের পোলিয়েভরে (Pierre Polievre) ও তার কনজারভেটিভদের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
পোলিয়েভরে ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা জনপ্রিয় না হওয়া, এনডিপির (NDP) নেতৃত্বের প্রতি আস্থা কমে যাওয়া—এসব মিলিয়ে আগামী কয়েক মাসে কানাডার রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা জোরালো। যদিও এখনো অনেকেই মনে করেন, কনজারভেটিভরা খানিকটা এগিয়ে রয়েছে, তবে লিবারেলদের মাঝে “উত্তর-ট্রুডো” (Post-Trudeau) যুগের নতুন প্রত্যাশা ভোটারদের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন আনছে। আগামী দিনগুলোতে দেখা যাবে, ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড (Chrystia Freeland) নাকি মার্ক কার্নি (Mark Carney) শেষ পর্যন্ত নেতা হন, এবং তাদের কার্যকরী নেতৃত্ব কনজারভেটিভদের যে বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকার কথা, সেটি কতটা সংকুচিত করতে পারে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, ট্রাম্প প্রশাসনের (Trump Administration) সঙ্গে সম্পর্ক, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা—সবমিলিয়ে ২০২৫ সালের নির্বাচন কানাডার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত বলছে, লিবারেলরা সাম্প্রতিক পুনরুদ্ধারের ধারা বজায় রাখতে পারলে, তারা অন্তত অত্যন্ত খারাপ পরাজয় এড়াতে সক্ষম হতে পারে। এদিকে, কনজারভেটিভরা যদি পোলিয়েভরের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে না পারে, তবে অনেকে ভাবছেন, একসময় তারা নিশ্চিন্তভাবে “বড় জয়” পেয়ে যাবে যেটা ধরে রেখেছিল—সেটা হয়তো আর ততটা সহজ হবে না।
Leave a Reply