Table of Contents
ভূমিকা: সম্ভাব্য জয় ও ভবিষ্যৎ সরকার
জার্মানির কেন্দ্রীয় নির্বাচনের বাকি আর কয়েক সপ্তাহ। সাধারণভাবে দেখা যাচ্ছে যে জনমত জরিপগুলো CDU/CSU জোটকে (Alliance) এগিয়ে রাখছে। ফ্রিডরিশ মের্ত্জ, যিনি এই জোটের নেতা, তিনি চ্যান্সেলরের দায়িত্ব নেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রাখছেন। অতীতে অ্যাঙ্গেলা মার্কেল (Angela Merkel) দীর্ঘ সময় ধরে CDU-র নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ২০০৯ সালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাংবিধানিক (Constitutional) পরিবর্তন এনেছিলেন। এখন আবার CDU ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারে—ফলে অর্থনীতি (Economy), জ্বালানি (Energy), অভিবাসন (Immigration), ইউরোপীয় সম্পর্ক (European Relations) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন হবে, সেটাই আলোচ্য।
অর্থনীতি
স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর কর ছাড় (Tax Burden) হ্রাস: CDU তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের উপর করের বোঝা (Tax Burden) কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আয়করের হার (Income Tax Rate) সামঞ্জস্য করা, ওভারটাইম আয়ের উপর কর মওকুফ (Scrapping Tax on Overtime Pay) করা, এবং যাতায়াত ভাতা বা কমিউটার অ্যালাউন্স (Commuter Allowance) বাড়ানো। যাতায়াত ভাতার মাধ্যমে কর্মীরা তাদের দৈনন্দিন যাতায়াতের খরচের কিছুটা অর্থ সরকার থেকে ফেরত পেতে পারেন। ফলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ কর্মসংস্থান বাড়াতে উৎসাহী হবে বলে দলটির প্রত্যাশা।
কাজের সময়ের আধুনিকীকরণ (Modernising Working Hours): বর্তমানে জার্মানিতে দৈনিক ভিত্তিতে সর্বোচ্চ কাজের সময় (Maximum Working Time) নির্ধারিত থাকে। CDU এই নিয়মকে দৈনিকের বদলে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে (Weekly Basis) নির্ধারণ করতে চায়, যাতে কর্মীরা একটু বেশি নমনীয়তার (Flexibility) সাথে কাজের সূচি চালাতে পারেন। এর পাশাপাশি, বিদেশি কর্মী নিয়োগ ও সংক্রান্ত ভিসা (Visa), আবাস (Residency) ইত্যাদি ব্যবস্থা সহজ করতে একটি নতুন “ওয়ার্ক অ্যান্ড স্টে এজেন্সি” (Work and Stay Agency) গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এই এজেন্সি বিদেশি কর্মী নিয়োগ, ভিসা প্রসেসিং এবং থাকার অনুমোদন সংক্রান্ত কাজগুলো সমন্বয় করবে।
করপোরেট কর (Corporation Tax) ও আমলাতান্ত্রিক বাধা (Bureaucracy) কমানো: CDU ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক ঝামেলা কমানোর দিকে জোর দিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে করপোরেট করের হার (Rate of Corporation Tax) কমানোর কথা বলেছে। পাশাপাশি, সরবরাহ-চেইন আইন (Supply Chain Act) যা জার্মানিতে ১০০০-এর বেশি কর্মী আছে এমন কোম্পানিগুলোকে (Companies) তাদের সাপ্লাই চেইনে (Supply Chain) মানবাধিকার (Human Rights) ও পরিবেশগত (Environmental) ঝুঁকি চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য করে—সে আইনের পরিধি শিথিল করার কথাও উল্লেখ করেছে। তারা চায় ইউরোপীয় আইনের (European Law) ক্ষেত্রে জার্মানির ‘অতিরিক্ত কঠোর’ (Overcompliance) অবস্থান পরিবর্তন হোক।
ঋণ-নিয়ন্ত্রণ বা ডেট ব্রেক (Debt Break) প্রসঙ্গ: যদিও জার্মানির অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো CDU-ও এখনো প্রকাশ্যে জানায়নি যে তারা ভবিষ্যতে ডেট ব্রেককে (Debt Break) কীভাবে বিবেচনা করবে, এটি আগামী সরকারের এক বিতর্কিত বিষয় হয়ে থাকছে। ২০০৯ সালে অ্যাঙ্গেলা মার্কেল সংবিধানে যে ডেট ব্রেক অন্তর্ভুক্ত করেন, সেটি ফেডারেল সরকারের বার্ষিক ঘাটতিকে (Annual Deficit) জিডিপির (GDP) ০.৩৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখে, এবং ১৬টি রাজ্য (Bundesländer) পুরোপুরি ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। জার্মান অর্থনীতি স্থবির (Stagnated) হয়ে পড়ায়, অনেকে ডেট ব্রেক সংস্কার (Reform) বা বাতিল (Abolish) করার দাবিও জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি International Politik Quarterly-এর করা একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বেশিরভাগ জার্মান এই ডেট ব্রেক সংস্কার বা পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে। আগের মাসগুলোতে এ সমর্থন ধাপে ধাপে বেড়েছে—২০২৪ সালের জুলাইয়ে এক জরিপে দেখা গিয়েছিল মাত্র ৩২% মানুষ এটির পক্ষে ছিল, নভেম্বরে “Forcer” নামের আরেকটি জরিপে দেখা গিয়েছিল ৪৪% মানুষ সংস্কার চায়। এখন এই হার আরও বেড়ে গেছে। মের্ত্জের দল CDU-এর মধ্যেও এ নিয়ে স্পষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মের্ত্জ কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরের দিকে তিনি বলেছিলেন যে বড় কোনো বিনিয়োগের (Investment) স্বার্থে ডেট ব্রেক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হতে পারে, যদিও তখনও তিনি খুব স্পষ্ট ছিলেন না। ধরে নেওয়া হচ্ছে, যদি ডেট ব্রেক নিয়ে সংবিধান সংশোধন (Constitutional Reform) করতে হয়, তবে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (Two-Thirds Majority) লাগবে। যে দুটি দল—AfD ও FDP—ডেট ব্রেক সংশোধনের ঘোর বিরোধী, তারা যদি নির্বাচনে মিলিতভাবে ২৫% বা তার বেশি ভোট পায় (এবং FDP ৫% এর প্রয়োজনীয় থ্রেশহোল্ড পেরিয়ে সংসদে প্রবেশ করতে পারে), তখন এই সংশোধন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
জার্মানিতে ডেট ব্রেক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন – জার্মানি কেন সম্ভবত ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Debt Brake) নীতি থেকে সরে আসবে? (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪)
জ্বালানি
ফ্রিডরিশ মের্ত্জের নেতৃত্বে CDU আগের সরকারে গৃহীত জলবায়ু সুরক্ষা (Climate Protection) নীতিগুলোকে “আদর্শিক ভাবে পরিচালিত” (Ideologically Driven) বলে সমালোচনা করছে। তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে (Manifesto) উল্লেখ রয়েছে যে, আগের সরকারের তাপ ব্যবস্থাপনা (Heating Law) বাতিল করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই আইনটির নাম ছিল “বিল্ডিং এনার্জি অ্যাক্ট” (Building Energy Act), যা ২০২৩ সালে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। এই আইনের অধীনে তেল (Oil) ও গ্যাস (Gas) ব্যবস্থাকে বিল্ডিং সেক্টর থেকে ধাপে ধাপে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল, যার ফলে মানুষকে নতুন পরিবেশবান্ধব (Environmental Standards) যন্ত্রপাতি কিনতে বাধ্য করা হতো—যেমন হিট পাম্প (Heat Pumps)।
CDU বিদ্যুৎ কর (Electricity Tax) ও গ্রিড ফি (Grid Fees) কমানোর কথা বলছে এবং সামগ্রিকভাবে জার্মানির জ্বালানি সরবরাহ (Energy Supply) বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও তাদের ইশতেহারে স্পষ্ট করে বলা হয়নি কীভাবে তারা সরবরাহ বাড়াবে, তবে এটিতে পরমাণু শক্তি (Nuclear Power) পুনরায় আনয়নের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে। বিশেষত, তারা চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের পরমাণু প্রযুক্তি (Fourth and Fifth Generation Nuclear Technology), ছোট মডুলার রিয়্যাক্টর (Small Modular Reactors) এবং ফিউশন পাওয়ার প্ল্যান্ট (Fusion Power Plants) নিয়ে গবেষণা বাড়ানোর কথা বলেছে।
তবে টেকসই জ্বালানিকে (Renewable Energy) পুরোপুরি বিরোধিতা না করে CDU সব ধরনের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎস (All Renewables) বিকাশে কাজ করতে চায়। তারা নিঃসরণ বাণিজ্য (Emissions Trading) ব্যবস্থার প্রতিও অঙ্গীকারবদ্ধ; যেখানে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্বন নিঃসরণের অনুমতিপত্র (Permits) বেচাকেনার ব্যবস্থা রাখে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো কম নিঃসরণে (Emissions) উৎসাহিত হয়।
ডিজিটালাইজেশন
CDU জার্মানিতে পুনরায় শিল্পায়ন (Reindustrialisation) ঘটিয়ে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করতে চায়। তারা মনে করে প্রযুক্তি (Tech), ডিজিটালাইজেশন (Digitalisation) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) হবে এর কেন্দ্রবিন্দু। সেজন্য তারা একটি নতুন ফেডারেল ডিজিটাল মন্ত্রণালয় (Federal Digital Ministry) গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে গবেষণা ও উন্নয়নে (Research and Development) জিডিপির ৩.৫% ব্যয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
এছাড়া মহাকাশ (Aerospace) উদ্ভাবনে বিনিয়োগ ও উচ্চাভিলাষী স্পেস স্ট্র্যাটেজি (Space Strategy) গ্রহণ করার কথাও বলেছে। নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো (Startups) শুরুতে যেন কঠোর নিয়মকানুনে আক্রান্ত না হয়, সেজন্য শুরুর পর্যায়ে তাদেরকে কিছু সরকারি বিধিনিষেধ (Regulations) থেকে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
অভিবাসন
CDU অভিবাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ (Strict Limitation) করতে চায়। তাদের পরিকল্পনা হল—আরও বেশি দেশকে নিরাপদ উৎসদেশ (Safe Countries of Origin) হিসেবে চিহ্নিত করা, যাতে সেই দেশগুলো থেকে আগত মানুষ সহজে আশ্রয় (Asylum) না পায়। তারা চায় বহিষ্কার (Deportation) দ্রুততর হোক, পরিবার পুনর্মিলন (Family Reunification) স্থগিত রাখা হোক, এবং শুধুমাত্র সীমিত “বেড, ব্রেড অ্যান্ড সোপ” (Bed, Bread and Soap) পরিষেবায় এই বহিষ্কারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। এছাড়া নিরাপদ তৃতীয় কোনো দেশে (Safe Third Countries) আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তর করার কথাও বলেছে, যেমন সম্ভবত রুয়ান্ডা (Rwanda)।
সামাজিক নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা
এই ক্ষেত্রে CDU একটা “৩৬০ ডিগ্রি স্ট্র্যাটেজি” (360 Degree Strategy) গ্রহণের কথা বলছে, যা চরমপন্থা (Extremism), সহিংসতা (Violence) ও সন্ত্রাসের (Terror) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর মধ্যে রয়েছে—
- বহিষ্কার (Expulsions) ও রেসিডেন্স পারমিট (Residence Permits) বাতিলের মাধ্যমে উগ্রপন্থীদের (Extremists) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
- ডানপন্থী (Right Wing) ও বামপন্থী (Left Wing) উভয় ধরনের উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই
- ইহুদিবিদ্বেষী (Anti-Semitic) বক্তব্য ও অসাংবিধানিক প্রতীক (Anti-Constitutional Symbols), যেমন স্বাস্তিকা (Swastikas) নিষিদ্ধ করা
- যেখানে ঘৃণা প্রচার করা হয়, এমন মসজিদ বন্ধ (Closing Mosques Where Hatred Is Preached) করা
- একটি নতুন “কাস্টমস পুলিশ ফোর্স” (Customs Police Force) তৈরি করা, যাতে সংগঠিত অপরাধ (Organised Crime) থেকে প্রাপ্ত অর্থ—যেমন প্রাসাদ বা ইয়ট কেনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না—তা রোধ করা যায়
ইউরোপীয় ও বৈদেশিক নীতি
CDU ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (EU) সমর্থন করে এবং চায় যে জার্মানি তার জাতীয় স্বার্থ আরও কৌশলীভাবে (Strategically) সুরক্ষা করুক, “আন্তর্জাতিক অংশীদারদের তেমন পৃষ্ঠপোষণ না করে।” তারা শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক (Competitive) একটি ইইউ চায়, যেখানে ফ্রান্স (France) ও পোল্যান্ডের (Poland) সঙ্গে জার্মানির সম্পর্ক উন্নত হবে।
CDU ইউরোপীয় ডেট-শেয়ারিংয়ের (European Debt Sharing) বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্য হল, “আমরা অন্য ইইউ রাষ্ট্রগুলোর ঋণের জন্য যে কোনো জার্মান দায়বদ্ধতাকে (German Liability) দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি।”
ইউক্রেন (Ukraine) প্রসঙ্গে, CDU বলছে তারা কূটনৈতিক (Diplomatic), আর্থিক (Financial) ও মানবিক (Humanitarian) সহায়তার পাশাপাশি অস্ত্র সহায়তাও (Arms Deliveries) দেবে। এছাড়া ইসরায়েলকে (Israel) এর “বৈধ সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই”-এ (Legitimate Fight Against Terror) সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
সামরিক বিষয়াদি
CDU জার্মানির প্রতিরক্ষা শিল্প (Defence Industry) শক্তিশালী করতে চায়, বিশেষ করে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম ও সরবরাহের ক্ষেত্রে আরও বেশি সহযোগিতা (Collaboration) বাড়াতে চায়। তারা ন্যাটোর (NATO) ২% প্রতিরক্ষা ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা (Defence Spending Target) পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং একটি ইউরোপীয় মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (European Missile Defence Shield) গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী।
সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হতে পারে, তারা আবারও সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত বাধ্যতামূলক সেবা বা বাধ্যতামূলক নিয়োগ (Conscription) চালু করতে আগ্রহী। অনেক বাল্টিক (Baltic) ও নর্ডিক (Nordic) দেশে এটি আগেই পুনরায় চালু হয়েছে, তবে পশ্চিম ইউরোপে এখনো তা সাধারণ নয়।
সাংস্কৃতিক বিষয়াদি
CDU “বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তি চুক্তি” (Mandatory Integration Agreements) চালু করার কথা বলেছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের জন্য জার্মান শেখা ও জার্মান সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। তাদের উদ্দেশ্য হল অভিবাসীদের মধ্যে যাতে আরও দ্রুত মূলধারার সমাজে মিশে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
তারা “রিমোটলি কন্ট্রোলড ইসলামিক” (Remotely Controlled Islamic) চর্চা—অর্থাৎ বিদেশি সরকারগুলোর (Foreign Governments) দ্বারা পরিচালিত মসজিদ সমিতি (Mosque Associations)— প্রতিরোধ করতে চায়। বিশেষ করে, তুরস্ক (Turkey) সহ কিছু দেশের সরকার জার্মানিতে অবস্থিত মসজিদ বা ধর্মীয় সংগঠনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে—CDU এই প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী।
তরুণদের (Young People) জন্য তারা একটি “বাধ্যতামূলক গ্যাপ ইয়ার” (Mandatory Gap Year) চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। তারা মনে করে, এ ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মকে আরও বেশি সুযোগ দেবে এবং জাতীয় ঐক্যের (Sense of Unity) অনুভূতি তৈরি করবে।
একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের স্ব-নির্ধারণ আইন (Self Determination Act)—যার আওতায় ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কেউ আনুষ্ঠানিক নথিতে নিজের লিঙ্গ (Gender) ও নাম পরিবর্তন করতে পারে—সেই আইন প্রত্যাহার (Repeal) করার কথা বলছে CDU। তাদের মতে, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে (Family Issues), CDU চায়—
- বাবা-মায়েদের ছুটি (Parental Leave) ও ভাতা (Benefits) বৃদ্ধি করা
- শিশু ভাতা (Child Benefits) বাড়ানো
- শিশুদের যত্ন (Childcare) আরও সাশ্রয়ী করতে (Affordability) করের ছাড় বা ট্যাক্স ডিডাকশন (Tax Deduction) বাড়ানো
উপসংহার
সারসংক্ষেপে, জার্মানির সম্ভাব্য নতুন সরকার গঠনের পথে থাকা CDU/CSU তাদের ২০২৫ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা বলেছে। অর্থনীতিতে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের উপর করের বোঝা কমানোর প্রতিশ্রুতি, করপোরেট কর হ্রাস, জ্বালানিতে পরমাণু শক্তিকে (Nuclear Power) পুনরায় গুরুত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা, ডিজিটাল খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান, জাতীয় প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়ানো এবং ইউরোপীয় স্তরে ঋণ-শেয়ারিং প্রত্যাখ্যান—সবগুলোই আগামী কয়েক বছরের জন্য জার্মানির নীতি নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ডেট ব্রেক (Debt Break) নিয়ে দলটির স্পষ্ট অবস্থান এখনো জানা যায়নি, কিন্তু দেশটির সাম্প্রতিক জনমত এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিবেচনায় এ নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক দেখা দিতে পারে। কোনো ধরনের সাংবিধানিক সংশোধন করতে গেলে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের দরকার হবে, যা FDP এবং AfD-র বিরোধিতার কারণে কঠিন হতে পারে।
জ্বালানির ক্ষেত্রে আগের বাম-ঘেঁষা (Centre Left) জোটের নেওয়া পরিবেশবান্ধব আইনের বেশ কয়েকটি বিষয় (যেমন বিল্ডিং এনার্জি অ্যাক্ট) CDU বাতিল করতে চায়। তবে নিঃসরণ বাণিজ্য (Emissions Trading) ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি (Renewable Energy) নিয়ে তাদের পুরোপুরি বিরোধিতা নেই। তারাই আবার একদিকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তির পক্ষে জোর দিচ্ছে।
অভিবাসন ও সংস্কৃতি প্রশ্নে তারা অনেক বেশি কঠোর অবস্থান (Hardline Position) নিতে যাচ্ছে বলে বোঝা যাচ্ছে। নানান দেশকে নিরাপদ উৎসদেশ হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বহিষ্কার করা, পরিবার পুনর্মিলন স্থগিত রাখা, এমনকি বাইরের সরকার-নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা—এসব প্রস্তাব আগে থেকেই বিতর্কিত। এছাড়া বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা (Conscription) এবং বাধ্যতামূলক গ্যাপ ইয়ার (Mandatory Gap Year) চালু করাও পশ্চিম ইউরোপে বেশ সংবেদনশীল বিষয়।
সব মিলিয়ে, জার্মানির আগামী দিনের সরকারে CDU/CSU ক্ষমতায় এলে অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি—সব ক্ষেত্রেই আমরা কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। মের্ত্জের বক্তব্য অনুযায়ী, তাকে ডেট ব্রেকের মতো ইস্যুতে নমনীয় হতে দেখা যেতে পারে, তবে আবার কোনো কোনো বিষয়ে তিনি অনেকটা অনড় (Rigid) অবস্থানও নিতে পারেন। যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন, সেক্ষেত্রে সরকার গঠনকালে জোটের শরিকদের (Coalition Partners) সঙ্গে সমঝোতা করতেই হবে। ফলে, আইনি সংস্কার থেকে শুরু করে অভিবাসন ও কর-ব্যবস্থার মতো স্পর্শকাতর (Sensitive) বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
তবে এক বিষয় স্পষ্ট—CDU/CSU-র ইশতেহারে যে রূপরেখা দেয়া হয়েছে, তা জার্মানির অর্থনীতি ও সমাজে বেশ কিছু পরিবর্তন ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে, অভিবাসন সীমিতকরণ, পরমাণু শক্তির পুনর্বহাল, এবং বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা-সহ নানা দৃষ্টিভঙ্গি আগের সরকারগুলোর চেয়ে যথেষ্ট ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে। তাই নির্বাচনের পরপরই ইউরোপের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মানচিত্রে কী কী পরিবর্তন আসে, তা দেখার জন্য বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
এই ছিল জার্মানির CDU/CSU মেনিফেস্টোর প্রধান দিকনির্দেশনা ও তার বিশদ বিশ্লেষণ। আমি আগামী নির্বাচনে এই দলটির সম্ভাব্য জয় দেখলে বাস্তবে ঠিক কোন কোন নীতি কার্যকর হয়, সেদিকে নজর রাখব। তবে এখন পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে, জার্মানি আরও রক্ষণশীল অভিমুখে (Conservative Direction) যেতে পারে এবং ইউরোপের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভাবধারা অনুযায়ী অভিবাসন, প্রতিরক্ষা, ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে কিছু অনুধ্যানমূলক (Reflective) পরিবর্তন ঘটতে পারে। সময়ই বলে দেবে, এসব পরিকল্পনা এবং প্রতিশ্রুতি কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং সেগুলোর প্রভাব জার্মানি ও ইউরোপের বাকি অঞ্চলে কতটা স্থায়ী ছাপ রাখে।
আরও দেখুন –
- কেন ও কিভাবে জার্মানিতে শলৎসের সরকারের পতন হয়? (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫)
- জার্মানির এএফডি (AfD) দলের ম্যানিফেস্টো ব্যাখ্যা (১৭ জানুয়ারি, ২০২৫)
- জার্মান গ্রিন (Green) পার্টির সমর্থন কেন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে? (৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪)
- জার্মানি কেন সম্ভবত ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Debt Brake) নীতি থেকে সরে আসবে? (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪)
জার্মানি সম্পর্কিত আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে যান এখানে – জার্মানি সংবাদ
তথ্যসূত্র
CDU/CSU Manifesto & 10-Point Plan
https://www.cdu.de/app/uploads/2025/01/wahlprogramm-cdu-csu-kurzfassung-englisch.pdf
https://www.politikwechsel.cdu.de/sites/www.politikwechsel.cdu.de/files/downloads/cdu-csu_politikwechsel_10-punkte_flugblatt_btw2025.pdf
German Debt Brake
https://www.economist.com/europe/2025/01/23/germans-are-growing-cold-on-the-debt-brake
https://ip-quarterly.com/en/what-germans-think-about-debt-brake-reform
https://think.ing.com/articles/schuldenbremse/
https://think.ing.com/articles/how-the-main-political-parties-plan-to-make-the-german-economy-great-again/
Heating Law Controversy
https://www.politico.eu/article/heat-pumps-exploded-germany-ruling-coalition-green-law/
Leave a Reply