কেন ও কিভাবে জার্মানিতে শলৎসের সরকারের পতন হয়?

ভূমিকা

জার্মানির (Germany) কোয়ালিশন সরকার (coalition government) নাটকীয়ভাবে পতনের মুখে পড়েছে। চ্যান্সেলর (Chancellor) ওলাফ শলৎস (Olaf Scholz) ৬ নভেম্বর, ২০২৪ বুধবার রাতে তার অর্থমন্ত্রীকে (Finance Minister) বরখাস্ত করে দেন, যা পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিতে শুরু করে যে ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে একটি আগাম নির্বাচনের (snap election) সম্ভাবনা রয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব—

  • কেন কোয়ালিশনের (coalition) মধ্যে আবারও এত উত্তেজনা সৃষ্টি হল,
  • কেন শলৎস একটি আগাম নির্বাচন ডাকতে চাইলেন,
  • কিভাবে শলৎস অনাস্থা ভোটে পরাজিত হলেন

“ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন” কীভাবে গঠিত হয়েছিল

স্মরণ করা যাক, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানিতে শেষ ফেডারেল নির্বাচন (federal election) অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ওলাফ শলৎসের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Social Democratic Party বা SPD) ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। কিন্তু পার্লামেন্টে (parliament) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে SPD-কে অন্য দলগুলোর সাথে জোট গঠন করতে হয়। তাই তারা তৃতীয় স্থান অধিকারী গ্রিনস (Greens) এবং চতুর্থ স্থান অধিকারী ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Free Democratic Party বা FDP)-র কাছে সহযোগিতার হাত বাড়ায়।

দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে টানাপড়েনের পর একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়, যা ছিল ভবিষ্যতের জন্য একধরনের সংকেত যে এই সরকারকে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। SPD-র প্রধান ওলাফ শলৎস স্বাভাবিকভাবেই জার্মানির চ্যান্সেলর হন, গ্রিনসের সহ-নেতা (Green Co-leader) রবার্ট হাবেক (Robert Harbeck) ভাইস চ্যান্সেলর (Vice Chancellor) এবং অর্থনীতি ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী (Economic Affairs and Climate Minister) পদে আসীন হন, আর FDP-র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার (Christian Lindtner) হন অর্থমন্ত্রী (Finance Minister)।

কিন্তু কোয়ালিশন চুক্তি (coalition agreement)-তে যে সাধারণ ঐক্যমত্য ছিল, তা বেশ দ্রুত মিলিয়ে যেতে থাকে। কোভিড-১৯ (COVID 19) মহামারির শেষভাগ সামাল দিতে না দিতেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া (Russia) ইউক্রেইনে (Ukraine) আক্রমণ করলে সরকারকে একের পর এক সংকটের মোকাবিলা করতে হয়। জ্বালানি সরবরাহ থেকে শুরু করে মুদ্রাস্ফীতি পর্যন্ত—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তীব্র চ্যালেঞ্জ দেখা দেয়।

কেন সরকার পতনের পথে: আর্থিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ বিবাদ

জার্মান অর্থনীতি (German economy) বর্তমানে এক গুরুতর অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে সংকোচনের (contracted) পর ২০২২ সালে জিডিপি (GDP) সামান্য স্থবির (stagnate) হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) অনুমান করছে, ২০২৫ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি (growth) মাত্র ০.৮%-এ গিয়ে দাঁড়াতে পারে, যা বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল পারফরম্যান্সের একটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানির সবচেয়ে বড় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ফক্সভাগেন (Volkswagen) তাদের কয়েকটি উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে—যা হবে কোম্পানির ইতিহাসে এই ধরনের প্রথম ঘটনা।

নানা কারণে সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল। সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপ বলছে, জার্মানদের ৮৫% এই সরকার নিয়ে অসন্তুষ্ট। দলীয়ভাবেও SPD, গ্রিনস, ও FDP তিনটিই খারাপ অবস্থানে রয়েছে। আর ৫৪% মানুষ আগাম নির্বাচনের পক্ষে মত প্রকাশ করে। এই প্রেক্ষাপটে কোয়ালিশনের ভেতরে বাক-বিতণ্ডা ক্রমশ তীব্র হয়।

বড় ধাক্কা: ৬০ বিলিয়ন ইউরোর ঘাটতি: ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট (Federal Constitutional Court) সরকারের বাজেট নীতির (budget policy) একটি অংশকে অসাংবিধানিক (unconstitutional) ঘোষণা করে। এর ফলে সরকারের বাজেটে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ইউরোর বাজেট ঘাটতি তৈরি হয়। নেতৃত্বস্থানীয় কোয়ালিশন দলগুলো পরবর্তী সময়ে এই বিশাল অর্থের ঘাটতি পূরণ নিয়ে ব্যাপক মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ে। বাজেট-বাণিজ্যিক ভাবনা নিয়ে প্রত্যেকের আলাদা অবস্থান, বিশেষ করে কোন খাতে টাকা কাটছাঁট হবে, কোন খাতে বাড়বে, এসব প্রশ্নে তীব্র দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব: FDP-র গোপন পরিকল্পনা ফাঁস

গত সপ্তাহে FDP-র অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনার (Christian Lindner) ১৮ পৃষ্ঠার একটি নীতি প্রস্তাব (policy proposal) তৈরি করেন, যা ফাঁস হয়ে যায়। ওই প্রস্তাবে অর্থনীতিতে গতি আনার জন্য নানা পরিকল্পনার কথা বলা হয়, যেমন—

  • সামাজিক ব্যয় (social spending) হ্রাস করা,
  • নতুন নিয়ম-কানুন জারিতে বিরতি (moratorium on new regulations),
  • জার্মানির সলিডারিটি ট্যাক্স (Solidarity tax) বাতিল করা,
  • জাতীয় স্তরে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জলবায়ু নীতি (national climate policies) বন্ধ করে ইউরোপীয় (European) স্তরের নীতিতে জোর দেওয়া।

এসব প্রস্তাব FDP-র বাজারমুখী (free market) ও আর্থিকভাবে রক্ষণশীল (fiscally conservative) অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কিন্তু SPD ও গ্রিনসের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। SPD সামাজিক কর্মসূচি ছাঁটাই (cutting social programs) করার বিরোধী, গ্রিনস চায় পরিবেশবান্ধব খাতে বড় বিনিয়োগ (significant investments)। ফলে এই নথি ফাঁস হওয়ার পর কোয়ালিশনকে আরও বড় সংকটে পড়তে হয়। অনেকেই এই ঘটনা তুলনা করছে ১৯৮২ সালের একটি ঘটনার সঙ্গে, যখন FDP-র তৎকালীন অর্থমন্ত্রী SPD সরকারের নীতি-বিরোধী নানা সংস্কার প্রস্তাব করেন। সেই ঘটনার পরই SPD সরকারের পতন ঘটে।

চূড়ান্ত ভাঙন: অর্থমন্ত্রী বরখাস্ত ও আগাম নির্বাচন

এরপর সপ্তাহ জুড়ে চ্যান্সেলর শলৎস ও তার কোয়ালিশন অংশীদারদের মধ্যে “সংকট বৈঠক” (crisis talks) চলে। শলৎস ও গ্রিনস ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেক (Vice Chancellor Robert Harbeck) দু’জনই চেয়েছিলেন কোয়ালিশন একসঙ্গে থাকুক। হাবেক বলেছিলেন, “এটি আমাদের সরকারের পড়ে যাওয়ার (fall) জন্য সবচেয়ে খারাপ সময়”—ইউক্রেইনের যুদ্ধ, জার্মানির অর্থনৈতিক সমস্যা, এমনকি আমেরিকার (US) পরবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে এটি বিপজ্জনক হবে।

কিন্তু লিন্ডনার এই বক্তব্যকে “ধারণাগত অসহায়ত্ব (conceptual helplessness)” বলে প্রত্যাখ্যান করেন। মূলত কোয়ালিশনের তিন দলের মূল ফারাক এখানেই—বামমুখী (left-leaning) SPD ও গ্রিনস সরকারী ব্যয় (spending) বাড়াতে আগ্রহী, যেখানে FDP কঠোর বাজেটীয় (budgetary) ও ঋণ সীমা (debt limits) মেনে চলতে চায়। পরের বছরের ফেডারেল বাজেট পাস করার সময়সীমা ঘনিয়ে আসছিল, অথচ ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর পথ বড়ই অনিশ্চিত ছিল।

৬ নভেম্বর অবস্থার অবনতি ঘটে। সংকট আলোচনায় কোনো সমাধান না আসায় শলৎস ঘোষণা করেন যে, তিনি অর্থমন্ত্রী লিন্ডনারকে বরখাস্ত করছেন। তিনি জানান, এটি “দেশের ক্ষতি এড়াতে (prevent harm to our country)” দরকার ছিল। শলৎসের অভিযোগ, লিন্ডনার অনেক সময় “উপযুক্ত পন্থায় আইন পাসে বাধা” দিয়েছেন, “ছোটখাটো দলীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশে (petty party politics tactics)” কাজ করেছেন, এবং বারবার শলৎসের আস্থার অপব্যবহার করেছেন।

অন্যদিকে, লিন্ডনার বলেন, তিনি যদি রাজস্বনীতি (fiscal rules) শিথিল করতেন, তবে সেটি তার “শপথ ভঙ্গ (violated his oath of office)” হত। অর্থাৎ, তিনি বাজেট কঠোরতার বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ার পক্ষে অটল ছিলেন।

অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার পর শলৎস ঘোষণা দেন যে, তিনি ১৫ জানুয়ারি তার নিজের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট (no confidence vote) আহ্বান করবেন। অনুমান করা হয় যে, সে ভোটে তিনি হারবেন এবং ফলস্বরূপ মার্চ মাসের (end of March) মধ্যেই একটি আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা বর্তমানে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই হবে।

FDP-র কৌশলগত হিসাব

অনেকেই বলছেন, কোয়ালিশনের পতন অনেকদিন ধরেই যেন ঘনিয়ে আসছিল, এবং FDP ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যাতে শলৎস বাধ্য হয়ে লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেন। এখানেই FDP-র রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে। কারণ, তিনটি কোয়ালিশন দলই জনমতে খারাপ করছে, তবে FDP-র অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়—তারা ৫% ভোটসীমার (5% threshold) নিচে অবস্থান করছে, যেখানে সেই সীমা না পেরোলে পার্লামেন্টে (Bundestag) কোনো আসনই নিশ্চিত হয় না। এটা FDP-র অস্তিত্বের (existential) প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

ফলে কোয়ালিশন থেকে বেরিয়ে এসে রক্ষণশীল (conservative) এবং ব্যবসাবান্ধব (business-minded) ভোটারদের মন জয় করাই হতে পারে FDP-র কৌশল। অনেকে বলছেন, লিন্ডনারের ১৮ পৃষ্ঠার নীতিপত্র (policy paper) মূলত এই দলকে নির্বাচনী প্রোগ্রামের (election campaign program) মতো করে উপস্থাপন করে। কেবল মাত্র “জোটবিরোধী” অবস্থান নিয়ে ও কঠোর বাজেটনীতি (strict fiscal policy) দেখিয়ে FDP হয়তো আগামী নির্বাচনে কিছু ভোট টানতে পারবে।

আগাম নির্বাচন: সম্ভাব্য সময় ও শক্তি-সমীকরণ

শলৎস বলেন, কেন তিনি জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন অনাস্থা ভোটের জন্য—তিনি চান এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইন পাস করতে, যেমন বাজেট আইন (budget) ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত আইন (defence legislation)। এসব ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতা ফ্রিডরিশ মের্জ (Friedrich Mertz) এর সহযোগিতা চাইতে পারেন, যাতে আইনগুলো পাস করানো যায়।

কিন্তু মের্জের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল CDU (সিএডিইউ) চাইছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। তারা মনে করছে, নির্বাচনে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ভোটগ্রহণ করলে তাদের জন্য ফল ভালো হবে। আসলে, প্রকাশিত জনমত জরিপে (polls) দেখা যাচ্ছে CDU/CSU বেশ কিছুদিন ধরে (অনেকটা দুই বছর) শক্ত অবস্থানে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে SPD ও গ্রিনস তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে এবং চরম ডানপন্থী দল (far right) AfD দ্বিতীয় অবস্থানে।

অনাস্থা ভোটে শলৎসের পরাজয়

কিন্তু শলৎস ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেননি। ১১ ডিসেম্বর, বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট জমা পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর দুপুর নাগাদ শলৎস বুন্দেস্ট্যাগে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন এবং বিকেল ৪টার দিকে রোল কল ভোটে (roll call vote) এর মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারিত হয়।

ভোটের ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পরাজিত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই ভোটে ৭১৭ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩৯৪ জন তার বিপক্ষে ভোট দেন, ২০৭ জন তার পক্ষে এবং ১১৬ জন ভোটদানে বিরত থাকেন। এর ফলে, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দেশটিতে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেন, এবং ইতোমধ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাবে সম্মতির ইঙ্গিত দেয়া হয়।

৩ বছর আগে ১৬ বছরব্যাপী CDU শাসনের (২০০৫-২০২১) অবসান ঘটিয়ে শলৎস সরকার গঠন করেছিলেন। এখন তিনি নিজেই “এন্টি-ইনকাম্বেন্ট ট্রেন্ড” (anti-incumbent trend)-এর সর্বশেষ শিকার। ইউরোপসহ আরও কিছু অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলগুলোর বিরুদ্ধে ভোটাররা বিরূপ হয়ে উঠেছে এবং দ্রুত সরকার পরিবর্তন করতে চায়। জার্মানিতেও সেই ধারাটাই দেখা গেল।

আরও দেখুন – 

জার্মানি সম্পর্কিত আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে যান এখানে – জার্মানি সংবাদ

তথ্যসূত্র

Polling:
https://www.tagesschau.de/inland/deutschlandtrend/deutschlandtrend-3442.html
https://www.politico.eu/europe-poll-of-polls/germany/

Germany’s struggling economy:
https://www.imf.org/en/Publications/WEO/Issues/2024/10/22/world-economic-outlook-october-2024
https://edition.cnn.com/2024/10/30/business/german-economy-volkswagen/index.html

Coalition budget feud:
https://www.dw.com/en/germanys-coalition-government-falls-apart-how-it-happened/a-70717066
https://www.tagesschau.de/inland/ampel-aus-100.html

Lindner proposals:
https://www.politico.eu/wp-content/uploads/2024/11/01/20241031_Anlage_Schreiben_BM_Lindner_Konzeptpapier_-2-clean.pdf

Crisis talks and collapse:
https://www.tagesschau.de/inland/innenpolitik/ampelkoalition-krise-streitpunkte-100.html
https://www.politico.eu/article/german-government-us-election-olaf-scholz-robert-habeck-fdp-greens-spd-global-politics/
https://www.nytimes.com/2024/11/02/world/europe/germany-coalition-government.html
https://www.ft.com/content/b1d2784b-0756-4d3c-9faa-7d8a87beb9d8
https://www.barrons.com/news/germany-risks-political-crisis-at-worst-time-vice-chancellor-ca976048
https://www.reuters.com/world/europe/risk-german-coalition-breaking-up-rises-fate-hinges-fdp-liberals-2024-10-29/
https://www.reuters.com/world/europe/germanys-habeck-lays-out-plan-boost-economy-calls-investment-fund-2024-10-23/
https://www.politico.eu/article/germany-coalition-government-collapse-olaf-scholz-finance-minister-christian-lindner/
https://edition.cnn.com/2024/11/06/europe/germany-government-scholz-finance-minister-intl-latam/index.html
https://www.politico.eu/article/germany-coalition-government-collapse-olaf-scholz-finance-minister-christian-lindner/
https://www.dw.com/en/german-government-descends-into-crisis-mode/a-70686610
https://www.reuters.com/world/europe/german-coalition-collapses-what-comes-next-2024-11-06/

vote of no confidence:
https://www.ft.com/content/cbff5965-69e3-4d61-8190-b20fcecb74a9
https://www.euronews.com/2024/12/16/german-chancellor-olaf-scholz-faces-vote-of-confidence-what-can-we-expect

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.