যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ভবিষ্যৎ: লেবার সরকারের PEM কনভেনশন ভাবনা ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বিধা

 

ভূমিকা: ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাস্তবতা

যুক্তরাজ্য যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union বা EU) ছেড়ে বেরিয়ে এলো, তখন দেশের মধ্যেই অনেকে মনে করছিলেন যে, বিচ্ছেদ (Brexit) খুব একটা সুচারুভাবে হয়নি। ইউগভ (YouGov) নামে একটি সংস্থার করা এক জরিপে (poll) দেখা যায়, ৫০%-এরও বেশি উত্তরদাতা মনে করেন ব্রেক্সিটের নেতিবাচক দিক ইতিবাচক দিকগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। মাত্র ১৭% মানুষ এর উল্টো মত পোষণ করেন। কিন্তু ব্রিটিশ জনগণ কী ভাবছে, সেটি বড় ব্যাপার হলেও, বাস্তবতা হলো—শিগগিরই যুক্তরাজ্যের আবার ইইউতে ফিরে যাওয়ার বা এর মূল কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

গত বছর সাধারণ নির্বাচনের (general election) আগে লেবার পার্টি (Labour Party) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা “ইইউতে ফিরে যাওয়া (return to the EU)” তো বটেই, বরং সিঙ্গেল মার্কেট (Single Market), কাস্টমস ইউনিয়ন (Customs Union) বা ফ্রিডম অব মুভমেন্ট (freedom of movement)—কোনো কিছুতেই পুনরায় যোগ দেবে না। অর্থাৎ, ব্রেক্সিটের ভিত্তিমূলগুলোর সাথে বিরোধ সৃষ্টি না করে, তারা সম্পূর্ণত ভিন্ন নীতি অনুসরণ করতে চায়।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একটি ধারণা সামনে এসেছে—লেবার সরকার কীভাবে “প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন না করেই” ইইউ-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য-সুবিধার আওতায় ঢুকতে পারে। বলা হচ্ছে, পান-ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান কনভেনশন (PEM Convention) নামের একটি কাস্টমস স্কিমে যুক্ত হলে লেবার সরকার হয়তো কিছুটা গোপনে (“sneakily”) এই কাজ করে ফেলতে পারবে। এই কনভেনশনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাস্টমস ইউনিয়ন নয়, তাই লেবার সরকারের “রেড লাইন (red lines)”—অর্থাৎ যেসব বিষয় স্পষ্টত প্রত্যাখ্যান করেছে—সেগুলো সরাসরি অতিক্রম করা হবে না। বা কমপক্ষে এমনটাই যুক্তি দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister)-এর মুখপাত্র।

এই প্রেক্ষাপটে, নিচের অংশে আমরা দেখব—PEM কনভেনশন আসলে কী, এটি যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কতটা উপকারী হতে পারে, এবং সত্যি কি লেবার সরকার এতে যোগ দেবে।

পান-ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান (PEM) কনভেনশন কী?

লেবার পার্টি কেন PEM কনভেনশনে (Convention) যোগ দিতে আগ্রহী হতে পারে, তা বুঝতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে এ কনভেনশন কী করে।

উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য: PEM কনভেনশনে যোগদান করলে, সেই দেশের যেসব পণ্য “উৎপত্তিস্থান (originating status)” বৈশিষ্ট্য অর্জন করে (অর্থাৎ কনভেনশনের অন্তর্গত অঞ্চলেই পণ্যটি উৎপাদিত বলে ধরা হয়), সেগুলো অন্য দেশের পণ্যের সাথে মিশলেও তার মূল “উৎপত্তিস্থান” সুবিধা নষ্ট হয় না। সহজ ভাষায়, এর মানে হলো—কোনো একটি দেশ থেকে আনা “originating” পণ্য অন্য এক বা একাধিক দেশের উপাদান বা পণ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন পণ্য তৈরি করলেও, সেটির উপর সেই মূল উৎপত্তির (origin) ভিত্তিতে শুল্কছাড় (preferential treatment) বহাল থাকবে।

শুল্কছাড় ও “Diagonal Cumulation”: সাধারণভাবে, ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টস (free trade agreements)-এ (FTA) যখন পণ্য “originating status” পায়, তখন সেগুলোতে কম শুল্ক বা শুল্কছাড় (lower tariffs) প্রযোজ্য হয়। আর PEM কনভেনশন ঐ “originating” অর্থকে আরও ব্যাপকতার মধ্যে নিয়ে যায়। ফলে, যদি আপনি বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে সেগুলো একত্রে তৈরি করে নতুন পণ্য তৈরি করেন, তাহলেও সেটির উপর শুল্কছাড় বজায় থাকবে—শর্ত হলো, সব দেশকেই PEM কনভেনশনের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এটিকে বলা হয় “Diagonal Cumulation”, যা PEM কনভেনশনের প্রধান সুবিধাগুলোর অন্যতম। এই সুবিধার কারণে উৎপাদকরা তাদের সাপ্লাই চেইন (supply chain) গড়ে তুলতে বেশি স্বাধীনতা পান এবং শেষমেশ রপ্তানি (export) করার সময় কম শুল্ক সুবিধা পেতে পারেন।

কোন কোন দেশ সদস্য?: বর্তমানে PEM কনভেনশনের ২৫টি “কন্ট্র্যাক্টিং পার্টি (contracting parties)” রয়েছে। এর মধ্যে আছে মলডোভা (Moldova), জর্জিয়া (Georgia), ইউক্রেইন (Ukraine), ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ (Faroe Islands), ইইউ (EU) নিজেই, ইএফটিএ (EFTA) সদস্যরা, বার্সেলোনা প্রক্রিয়ায় (Barcelona process) অংশগ্রহণকারী দেশগুলি (এর মধ্যে প্যালেস্টাইন (Palestine) আছে), এবং ইইউ-র স্ট্যাবিলাইজেশন ও অ্যাসোসিয়েশন প্রক্রিয়ায় (EU stabilization and association process) অংশ নেওয়া রাষ্ট্রগুলি (যেমন কসোভো (Kosovo) ইত্যাদি)। সব মিলিয়ে প্রায় ৫২টি দেশ এই স্কিমের আওতায় রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের লাভ কী?: যুক্তরাজ্যের (UK) ইইউর সাথে করা ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তিতে (trade agreement) ডায়াগোনাল কিউমুলেশন ছিল না। যদি যুক্তরাজ্য PEM কনভেনশনে যোগ দেয়, তাহলে ব্রিটিশ নির্মাতারা (UK manufacturers) ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরও বেশি পণ্য প্রায় শুল্কমুক্ত (tariff free) অবস্থায় রপ্তানি করতে পারবে। এ কারণে অনেকেই মনে করছেন, ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুগে যুক্তরাজ্য যদি ইইউর বাজারে আবার কিছুটা “সহজ প্রবেশাধিকার (easier access)” চায়, PEM কনভেনশনে যোগদানের কথা বিবেচনা করতে পারে।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ: লেবার সরকারের “রেড লাইন” ও বাস্তবতা

প্রতিশ্রুতির স্ববিরোধীতা?: লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer) ও বর্তমান লেবার সরকার বারবার বলেছে, তারা গণভোটের (referendum) ফলাফলকে শ্রদ্ধা করে এবং যেকোনো পদক্ষেপ ব্রেক্সিটের রায়কে ব্যাহত করতে পারে—এমন কিছুই করতে চায় না। এমনকি ইউথ মোবিলিটি স্কিম (EU youth mobility scheme)-এ যোগ দেওয়াকেও তারা এড়িয়ে গেছে এই যুক্তিতে যে, এটি “ফ্রিডম অব মুভমেন্টের” (freedom of movement) খুব কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তাহলে প্রশ্ন হলো—একদিকে তারা যুবদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ইউরোপীয় আসা-যাওয়া কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করছে, অন্যদিকে যদি PEM কনভেনশন-এ যোগ দেয়, তাহলে কি সেটি একইভাবে “ব্রেক্সিট রেড লাইন” লঙ্ঘন করবে না? মিডিয়া তখন নিশ্চয়ই বলবে—লেবার সরকার ব্রেক্সিট-পরবর্তী প্রতিশ্রুতি ভেঙে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে “পিছলে” যাচ্ছে।

গোপন উপায়ে “ইইউতে ফেরা”?: অনেক সমালোচক আশঙ্কা করছেন, PEM কনভেনশনে যোগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে লেবার সরকার ধীরে ধীরে ব্রিটেনকে ইইউর কোটায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। যেহেতু লেবার দল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইইউ-র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী, তাই বিরোধীরা (বিশেষ করে ডানপন্থী দলগুলো) এই উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখবে। তবে এর উল্টোদিকে যুক্তি হলো—PEM কনভেনশন আসলে ইইউর কাস্টমস ইউনিয়ন নয়; এটি একাধিক দেশের মধ্যে শুল্কযুক্ত একটি কাঠামো, যেখানে “Diagonal Cumulation”-এর সুযোগ থাকে। সুতরাং, এটিকে হয়তো লেবার সরকার বলবে, “ব্রেক্সিট নীতি অটুট রেখেই বাণিজ্য সম্প্রসারণের একটি উপায়।”

অর্থনৈতিক প্রভাবের দিক: কতখানি লাভবান হবে যুক্তরাজ্য?

লেবার সরকারের চ্যান্সেলর (Chancellor) রেইচেল রিভস (Rachel Reeves) এখন জটিল পরিস্থিতিতে আছেন। যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজারে (financial market) “গিল্ট ইয়িল্ড (gilt yields)” ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, অথচ তিনি বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ব্রিটিশ অর্থনীতি (British economy)-কে আবারও প্রবৃদ্ধির পথে ফেরাবেন। এখন পর্যন্ত সেভাবে আশানুরূপ ফল দেখা যাচ্ছে না। অনেক সাংবাদিক বলছেন, “ট্রেজারি (Treasury) স্টাফরা এখন প্রবৃদ্ধির জন্য অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন (restlessness for growth)”—অর্থাৎ কীভাবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা যায়, তার বিকল্প পথ খোঁজা হচ্ছে। এ অবস্থায় PEM কনভেনশনে যোগদানের বিষয়টি সিরিয়াসভাবে বিবেচনা করা হতে পারে, যদিও এতে রাজনৈতিক ঝুঁকিও কম নয়।

কীভাবে PEM ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে?: উপরের অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, মূল সুবিধাটি হলো—পণ্য তৈরির সময় নানা দেশে উৎপাদিত উপাদান (components) ব্যবহার করে থাকলেও, PEM-এর আওতায় শেষ পণ্যটি শুল্কছাড় বা কম শুল্কের সুবিধা পেতে পারে। ফলে যেসব ব্যবসা ইউরোপীয় অঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে পণ্য তৈরি করে, তাদের জন্য কনভেনশনটি খুবই দরকারী। ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্স (British Chamber of Commerce)-এর প্রধান উইলিয়াম বেইন (William Bain) বলেন, তার সংগঠন PEM কনভেনশনে যুক্ত হওয়ার পক্ষে। গবেষণা অনুযায়ী, ইউরোপীয় অঞ্চলে বাণিজ্যকারী বেশিরভাগ ব্রিটিশ ব্যবসা এটি সমর্থন করবে। কারণ এতে দু’পাশে (UK ও PEM দেশগুলো) নিয়মকানুন ও বিধিবিধানের একধরনের সামঞ্জস্য (align) আসবে, কাগজপত্র ও খরচ (paperwork and costs) কমবে, এবং রপ্তানিকারকদের জন্য সরবরাহ শৃঙ্খল (supply chain) আরও সহজ হবে। এক কথায়, PEM-এ যোগদান ব্রিটিশ ব্যবসাকে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারে, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা (trade frictions) কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়া, ইইউর সাথে সম্পর্ক পুনর্গঠনের (reset relations) একটি পথও হতে পারে। এটি বড় কোনো চুক্তি নয় বটে, কিন্তু ইউরোপীয় নেতাদের কাছে একটি বার্তা যাবে যে, নতুন লেবার সরকার আগের টরি (Tory) সরকারের চেয়ে ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী।

সমালোচনামূলক গবেষণা: CITP-এর দৃষ্টিভঙ্গি: অন্যদিকে, সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ ট্রেড পলিসি (Centre for Inclusive Trade Policy বা CITP) একটি গবেষণায় দেখিয়েছে—যুক্তরাজ্যে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে মাত্র ১.১% থেকে ২%, বা গড়ে ১.৮%-এর মতো পণ্য PEM দেশগুলো থেকে সংগৃহীত উপাদান ব্যবহার করে। অর্থাৎ PEM কনভেনশনে যোগ দিলেও, বাস্তবে খুব বেশি সংখ্যক রপ্তানিকারকের ওপর প্রভাব পড়বে না। এই কারণেই CITP বলছে—PEM-এ যোগদান কোনো “গেম চেঞ্জার (game changer)” হবে না। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে বিশাল প্রবৃদ্ধির আশা হয়তো করা যাবে না। সুতরাং, রাজনীতিতে যে ঝুঁকি, আলোচনা, ও সমালোচনা বয়ে আনবে, সেটির তুলনায় অর্থনৈতিক সুফল ক্ষুদ্র হতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: লেবার সরকার কী পদক্ষেপ নেবে?

লেবার সরকারের দ্বিধা: লেবার সরকার এখনো দৃঢ়ভাবে বলেনি, তারা PEM কনভেনশনে যোগ দিতে যাচ্ছে। তারা বলেছে, এটি তাদের ব্রেক্সিট-উত্তর “রেড লাইন” লঙ্ঘন হবে না। চ্যান্সেলর রেইচেল রিভস বলেছেন, এই স্কিমে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তিনি “ভালোভাবে খতিয়ে দেখবেন (happy to look at the prospect)”, কিন্তু এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক পরিকল্পনা নেই। এসব মন্তব্যের পরপরই যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী রাজনীতিকদের (right wing of UK politics) মধ্যে প্রবল আপত্তি দেখা দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, এভাবে লেবার সরকার যুক্তরাজ্যকে ধীরে ধীরে আবার ইইউর কক্ষপথে টেনে আনতে পারে। সুতরাং, রিভস যদি শেষমেশ PEM কনভেনশনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে এটি নিয়ে বড় ধরনের রাজনৈতিক লড়াই (almighty fight) শুরু হতে পারে।

সার্বিক মূল্যায়ন: সুতরাং, পরিস্থিতি এখন এমন যে—একদিকে ব্রিটিশ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর চাপ, অন্যদিকে ব্রেক্সিট-পরবর্তী প্রতিশ্রুতি না ভাঙার বাধ্যবাধকতা। PEM কনভেনশনে যোগ দিলে ব্যবসায়িক খাতে কিছুটা সুফল আসবে, ইইউর সঙ্গে সম্পর্কও কিছুটা উন্নত হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, CITP-এর গবেষণা বলছে, এতে খুব বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। সেই তুলনায়, ব্রেক্সিটপন্থী (pro-Brexit) রাজনীতিকদের কাছ থেকে যে বিরোধিতা আসতে পারে, তা বেশ বড়সড় হতে পারে। লেবার সরকার এখনো এই ব্যাপারে অনিশ্চিত, কারণ যুব মোবিলিটি স্কিমের মতো ছোটখাটো উদ্যোগও তারা সরাসরি ফিরিয়ে দিয়েছে “ফ্রিডম অব মুভমেন্ট” ইস্যুতে আপত্তি তুলে। অথচ PEM কনভেনশন অনেক বড় পরিসরে ইইউ-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার মতোই শোনাচ্ছে। মিডিয়াও এই বিষয়টি নিয়ে সরব হবে, প্রশ্ন তুলবে যে, লেবার কি আদতে ব্রেক্সিটের মূল চেতনাকে পেছনে ফেলে নতুন করে ইউরোপীয় বাণিজ্য কাঠামোতে প্রবেশ করছে?

উপসংহার

ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের জন্য অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দুই ধরনের চ্যালেঞ্জই বর্তমান। একদিকে, অর্থনীতিকে চাঙা করতে এবং ব্রিটিশ রপ্তানিকারকদের (British exporters) সুবিধা বাড়াতে সরকারকে নতুন বাণিজ্য চুক্তি বা কাঠামো অনুসন্ধান করতে হবে। কিন্তু অন্যদিকে, ব্রেক্সিট গণভোটের রায়কে শ্রদ্ধা দেখানোর প্রতিশ্রুতি এবং দলের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপের কারণে বিরোধীদের কাছে সন্দেহের উদ্রেক না করার দায়বদ্ধতাও আছে।

পান-ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান কনভেনশন (Pan-Euro-Mediterranean Convention) একটি সম্ভাব্য পথ খুলে দিতে পারে, যেখানে যুক্তরাজ্য Diagonal Cumulation-এর সুবিধা পেতে পারে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্য অনেক দেশের সাথে ব্যবসার ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা (tariff benefits) অর্জন করতে পারে। এর ফলে কিছু ব্যবসা লাভবান হবে—বিশেষ করে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ সংগ্রহ করে পণ্য তৈরি করে। তবে ঠিক কতটা বড় পরিমাণে তা অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে মতভেদ আছে।

লেবার সরকার যদি এই কনভেনশনে যোগ দেয় তাহলে রাজনৈতিকভাবে এটি বড় একটি ধাপ হতে পারে। তবে তারা দেখাবে যে, তারা ইউরোপের সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। একইসঙ্গে, বিরোধীরা (ডানপন্থী ও উগ্র ব্রেক্সিটপন্থী) এটিকে ব্রেক্সিটের “মৌলিক চেতনাবিরোধী” বলে আক্রমণ করতে পারে। ফলে সরকারকে এক কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে।

এখনো স্পষ্ট নয় যে, লেবার সরকার PEM-এ সত্যিই যোগ দেবে কি না। তারা এটিকে তাদের “ব্রেক্সিট রেড লাইন” লঙ্ঘন করবে না বলে ঘোষণা করলেও, শেষমেশ যোগ দিলে রাজনৈতিক সমালোচনা অবশ্যম্ভাবী। অতএব, রেইচেল রিভস (Rachel Reeves) ও তার দপ্তরকে (Treasury) ভাবতে হবে—এই ঝুঁকি নেওয়া সত্ত্বেও অর্থনীতির সম্ভাব্য লাভ কি যথেষ্ট হবে, নাকি এত অল্প সুফলের জন্য বড় রাজনৈতিক মূল্য গুনতে হবে?

আমরা এখন এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য ও রাজনৈতিক অবস্থান দোদুল্যমান। PEM কনভেনশনে যোগ দেওয়া মানে ইউরোপের সঙ্গে আরেকটু নিবিড় সম্পর্ক গড়া, যা অনেক ব্যবসায়ীকে স্বস্তি দিলেও ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পক্ষে কঠোর সমর্থকদের মধ্যে আশঙ্কা বাড়াবে। লেবার সরকার কি এই দ্বৈরথে ঝুঁকি নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেবে, নাকি শেষ পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে—সেই প্রশ্নের উত্তরই হয়তো গড়ে দেবে ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য পথচলার চেহারা।

তথ্যসূত্র

No 10 on the PEM Convention
https://www.theguardian.com/politics/live/2025/jan/23/keir-starmer-eu-sadiq-khan-latest-live-politics-news

The Guardian Explainer on the PEM Convention
https://www.theguardian.com/business/2025/jan/23/what-is-the-pan-europe-customs-area-pem

CITP Analysis of UK Benefits of PEM Convention
https://citp.ac.uk/publications/should-the-uk-join-pem

YouGov Polling on Attitudes Towards Brexit
https://yougov.co.uk/topics/politics/survey-results/daily/2024/08/28/d229d/1

Labour Party Manifesto
https://labour.org.uk/wp-content/uploads/2024/06/Labour-Party-manifesto-2024.pdf

BBC Reporting on the UK Government and the PEM Convention
https://www.bbc.co.uk/news/articles/cq5g48yx0dvo

European Commission on the UK/EU Trade Agreement
https://taxation-customs.ec.europa.eu/customs-4/international-affairs/third-countries/united-kingdom_en

Explainer on the PEM Convention
https://bsc.croneri.co.uk/questions-and-answers/what-pem-convention?product=142

European Movement’s Arguments for the PEM Convention
https://www.europeanmovement.co.uk/uk_should_join_pem

CITP Arguments for the PEM Convention
https://citp.ac.uk/publications/should-the-uk-join-pem

Daniel Hannan (the Telegraph) Arguments against the PEM Convention
https://www.telegraph.co.uk/news/2025/01/25/cold-self-interest-force-even-keir-starmer-embrace-brexit/

Rachel Reeves on the PEM Convention
https://www.telegraph.co.uk/politics/2025/01/26/rachel-reeves-pan-euro-mediterranean-convention-labour/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.