কেন ট্রাম্প আপাতদৃষ্টিতে ইউক্রেনের পক্ষে?

ভূমিকা

গত কয়েক মাস ধরে ইউরোপীয় নেতারা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউক্রেনকে (Ukraine) সহায়তা করা বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ তিনি নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেছিলেন, “আমি প্রথম দিনেই যুদ্ধ (War) শেষ করে দেব”—যা মূলত ক্রেমলিনের (Kremlin) ইচ্ছার কাছে ইউক্রেনকে ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত বলে অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন।

কিন্তু অফিসে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার মাত্র এক সপ্তাহ পর, এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করা হয়নি। বরং সাম্প্রতিক কয়েক দিনে ট্রাম্প এই ইস্যুতে অস্বাভাবিকভাবে কঠোর (Hawkish) অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার, ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)-এ পোস্ট করে তিনি হুমকি দেন যে, রাশিয়ার (Russia) ‘ব্যর্থ অর্থনীতি (Failing Economy)’ আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞার (Sanctions) মুখে পড়বে, যদি পুতিন (Putin) দ্রুত কোনো শান্তি চুক্তিতে (Peace Deal) সম্মত না হন। পরদিন, দাভোসে (Davos) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (World Economic Forum) সভায় তিনি সৌদি আরবকে (Saudi Arabia) বৈশ্বিক তেলের দাম (Global Oil Prices) কমাতে বলেন, যাতে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র (War Machine) চাপে পড়ে। একইসঙ্গে তিনি রাশিয়াকেই (Russia) শান্তি আলোচনায় বাধা দেওয়ার জন্য দায়ী করেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শিকে (President Xi) এই চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে বলেন।

এই প্রেক্ষাপটে, এই নিবন্ধে আমরা দেখবো কীভাবে ট্রাম্প তার ইউক্রেন-বিষয়ক অবস্থানে (Pro-Ukraine Pivot) এই আকস্মিক পরিবর্তন আনলেন, এবং এটি আসলে কতটা কার্যকর হতে পারে।

পটভূমি: ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের ইউক্রেন (Ukraine) সংক্রান্ত বক্তব্য বরাবরই কিছুটা অনিশ্চয়তায় ভরা ছিল। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বহুবার দাবি করেছেন যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি “চুক্তি (Deal) করতে” পারবেন—এমনকি একদিনের (Day One) মধ্যেই সংকটের সমাধান হতে পারে। কিন্তু অনেকে এটিকে অবাস্তব বলে মনে করেছেন, কারণ ক্রেমলিন (Kremlin) স্পষ্টতই আলোচনায় আগ্রহী ছিল না।

মূল প্রশ্ন ছিল—ট্রাম্প কীভাবে পুতিনকে (Putin) আলোচনার টেবিলে আনবেন? ইউক্রেন ও ইউরোপের মিত্ররা (European Allies) আশঙ্কা করছিলেন যে, ট্রাম্প হয়তো পুতিনকে খুশি করতে বড় ধরনের ছাড় (Unpalatable Concessions) দিয়ে ইউক্রেনকে কার্যকরীভাবে ত্যাগ করতে পারেন।

যদিও কিছু আলামত ইঙ্গিত করেছিল যে, ট্রাম্প হয়তো এতটা পুতিনপন্থী নন যতটা সমালোচকরা ভাবেন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফক্স নিউজে (Fox News) এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেনকে আরও বেশি সামরিক সহায়তা দেওয়ার হুমকি দিয়ে রাশিয়াকে আলোচনায় বাধ্য করতে চান— “আমি জেলেনস্কিকে (Zelensky) বলবো, আর নয়; তোমাকে একটা চুক্তি করতে হবে। আমি পুতিনকেও বলবো, যদি তুমি চুক্তি না করো, তাহলে আমরা ইউক্রেনকে যা যা দরকার তার সবই দেবো—যা আগে তারা কখনোই পায়নি। যদি লাগে, তাহলে আমরা একদিনেই চুক্তি করে ফেলব।”

আরেকটি বিষয়: এমনকি যদি ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে খুব অনুরাগী না-ও হন, তবু এমন কোনো চুক্তি তিনি করতেন না যা আমেরিকাকে দুর্বল বা পরাজিত হিসেবে তুলে ধরবে। গত নভেম্বরে অ্যাক্সিওস (Axios) জানায়, নির্বাচনের পরে ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের (Elon Musk) সঙ্গে জেলেনস্কির একটি ফোনালাপ হয়, এবং জেলেনস্কি এতে কিছুটা আশ্বস্ত (Reassured) বোধ করেন।

সাম্প্রতিক ইঙ্গিত: ট্রাম্পের “প্রো-ইউক্রেন” অবস্থান

গত কয়েক দিনে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেনের পক্ষে পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি সোচ্চার হতে যাচ্ছেন। বুধবারের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতটি আসে, যখন তিনি ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)-এ পোস্ট দিয়ে বলেন:

  • তিনি রাশিয়ান জনগণকে (Russian People) ভালোবাসেন, পুতিনের (President Putin) সঙ্গে বরাবরই সম্পর্ক ভালো ছিল,
  • কিন্তু ক্রেমলিন যদি এখনই শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি না হয়, তাহলে রাশিয়া যা কিছু আমেরিকায় বিক্রি করার চেষ্টা করবে, সেগুলোর ওপর কর (Taxes), শুল্ক (Tariffs) ও নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

ওই পোস্টে ট্রাম্প রাশিয়ার অর্থনীতিকে (Russian Economy) “ব্যর্থ (Failing)” হিসেবে উল্লেখ করেন, যা তিনি পুতিনের প্রধান দুর্বলতা (Weak Spot) বলে মনে করছেন। প্রেক্ষাপট হিসেবে, রাশিয়ায় সুদের হার (Interest Rate) অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ে রাখার পরও মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) বাড়ছে। ডিসেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ৯.৫%-এ পৌঁছে যায়, যা ক্রেমলিনের ভেতরেও উদ্বেগের কারণ হয়েছে।

অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা: ইরানের উদাহরণ

অনেকেই ভাববেন, রাশিয়ার ওপর আর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কী হবে? পশ্চিমা বিশ্ব (The West) তো ২০২২ সালের শুরুতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েই চলেছে। কিন্তু টিম ট্রাম্প হয়তো মনে করে, এখনো “আরো কিছু করা যায়”।

ইরানের (Iran) ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা এখানে প্রাসঙ্গিক হতে পারে। ২০১৮ সালে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু চুক্তি (JCPOA) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন। তিনি “সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের (Maximum Pressure Campaign)” নামে ইরানের ওপর কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ফলাফল: ইরান পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করেনি বা বৈদেশিক নীতিতেও বড় পরিবর্তন আনেনি। ইউরোপের বহু মিত্রও এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করেছিল। তবুও, ইরানের অর্থনীতি অস্থির হয়ে পড়ে। চীন ছাড়া আর কেউ ইরানের তেল (Crude Oil) কেনেনি; ইরানি রিয়াল (Iranian Rial) ব্যাপক অবমূল্যায়ন (Depreciation) হয়; মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়; ইরানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (Foreign Exchange Reserves) প্রায় ফুরিয়ে যেতে বসে।

অর্থাৎ, নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক ফলাফল আনতে ব্যর্থ হলেও, অর্থনীতিতে (Economy) প্রচণ্ড চাপ দিতে সক্ষম হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো একই রকম “সর্বোচ্চ চাপ (Maximum Pressure)” রাশিয়ার ওপর পরিকল্পনা করতে পারে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে (Davos) ট্রাম্পের বক্তব্য: তেলের দাম কমানোর আহ্বান

বৃহস্পতিবার, ট্রাম্প দাভোসে (Davos) এক ভাষণে বলেন, তিনি সৌদি আরব (Saudi Arabia) ও ওপেককে (OPEC) অনুরোধ করবেন তেলের দাম (Oil Price) কমাতে। কারণ তেলের দাম কমলে সুদের হার (Interest Rates) কমার সম্ভাবনা আছে। আর কম তেলের দাম মানে রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়ন (War Funding) আরও কঠিন হয়ে পড়বে। ট্রাম্পের ভাষায়, “যদি তেলের দাম নামিয়ে আনা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine War) সাথে সাথেই শেষ হয়ে যাবে। এখন দাম এতটাই বেশি যে এই যুদ্ধ চলছে।”

তিনি মনে করেন, রাশিয়ার হাইড্রোকার্বন রপ্তানি (Hydrocarbon Revenues) থেকেই মূলত যুদ্ধের অর্থ আসে। যদিও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়াকে তার তেল (Oil) একটু কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য করেছে, তবুও বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম যদি উঁচু থাকে, তাহলে রাশিয়া সেটি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারে।

এ কারণেই বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক বলছেন, এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে মাঝারি মাত্রায় চাপে রেখেছে—কিন্তু সম্পূর্ণ পঙ্গু করেনি। তেলের দাম যদি যথেষ্ট কমে যায়, রাশিয়া নগদ আয়ের উৎস রীতিমতো হারাতে শুরু করবে।

সৌদি আরব ও ওপেকের ভূমিকা

তেলের দামে সামগ্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সৌদি আরবের (Saudi Arabia) সহযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ:

  • সৌদি আরব হলো পৃথিবীর বৃহত্তম তেল উৎপাদক (Biggest Oil Producer)।
  • ওপেকের (OPEC) ভেতরে সৌদির ভূমিকা প্রভাবশালী।
  • সৌদি আরব হলো সেই “সুইং প্রডিউসার (Swing Producer)”—অর্থাৎ তারাই দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে বা কমিয়ে বিশ্ববাজারে তেলের দামকে প্রভাবিত করতে পারে।

এই বিষয়ে ট্রাম্পের আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (First Term) মোহাম্মদ বিন সালমান (Mohammed bin Salman) বা এমবিএসের (MBS) সঙ্গে তার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মানবাধিকার (Human Rights) লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে তিনি খুব একটা “উদ্বিগ্ন” ছিলেন না, বাইডেন প্রশাসনের (Biden Administration) মতো নয়।

ট্রাম্পের সময়ে তেলের দাম বেশিরভাগ সময়ে ৭০ ডলারের নিচে ছিল। যখনই দাম বাড়ত, ট্রাম্প টুইট করে ওপেককে উৎপাদন বাড়াতে বলতেন। বেশিরভাগ সময়ে এই চাপ কাজ করত। এমনকি ২০২০ সালে, যখন রাশিয়া ও সৌদি আরবের মধ্যে দাম নিয়ে লড়াই (Price War) শুরু হয়েছিল, যা তেলের দাম শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করে একধরনের “অয়েল পিস (Oil Peace)” করিয়ে দেন, যাতে আমেরিকার শেল-তেল (Shale Oil) উৎপাদকরাও টিকে থাকতে পারে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা

ট্রাম্প দাভোসের বক্তব্যে এটাও বলেন যে, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে (Xi Jinping) এই যুদ্ধ থামাতে সাহায্য করতে চান। এছাড়া রাশিয়াকেই দোষ দেন যে, তারা শান্তি আলোচনাকে (Peace Talks) আটকে রেখেছে; ইউক্রেন এই মুহূর্তে চুক্তি করার জন্য প্রস্তুত।

তবে মনে রাখতে হবে, এটিই ট্রাম্পের প্রকৃত অবস্থান না-ও হতে পারে। বরং সম্ভাবনা হলো, তিনি এমন এক ‘চুক্তি’ চান যা—

  1. দীর্ঘস্থায়ী (Sustainable) হবে,
  2. আমেরিকাকে শক্তিশালী (America Look Strong) হিসেবে উপস্থাপন করবে।

এছাড়া ট্রাম্প ন্যাটো (NATO) নিয়ে বরাবরই বিরাগভাজন—তিনি হয়তো ইউরোপের (Europe) ওপর চাপ বাড়াবেন যেন তারা ভবিষ্যতে ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি (Post-War Security Guarantee) নিজেরাই বহন করে। তবু, এটা স্পষ্ট যে, ট্রাম্প পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি “প্রো-ইউক্রেন” (Pro-Ukraine) অবস্থান নিচ্ছেন।

ট্রাম্পের “প্রো-ইউক্রেন” অবস্থানের সম্ভাব্য উদ্দেশ্য

আমেরিকার ভাবমূর্তি রক্ষা: ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, আমেরিকা যেনো ‘পরাজিত’ বা ‘দুর্বল’ দেখা না যায়। যদি তিনি পুতিনের কাছে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে ইউক্রেনের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করেন, তবে সেটা আমেরিকান নেতৃত্ব (American Leadership) ও ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হবে।

দ্রুত চুক্তি ও সাফল্যের দাবিদার হওয়া: ট্রাম্প নিজেকে সবসময় একজন “ডিলমেকার (Deal Maker)” হিসেবে তুলে ধরেন। যদি তিনি ইউক্রেন সংকটের একটা সমাধান দ্রুত করতে পারেন, সেটা তার বড় কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন। কিন্তু সমাধানটি এতটা দুর্বল হতে পারে না যাতে আমেরিকা হেরে গেল মনে হয়।

ইউরোপের ওপর দায় চাপানো: দীর্ঘমেয়াদে ট্রাম্পের অবস্থান হতে পারে, ‘ইউরোপ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজেরাই বেশি খরচ করুক’। এটা ন্যাটো বিরোধী অনুভূতি (Anti-NATO Sentiment) থেকেই আসতে পারে। সুতরাং যুদ্ধের দায় ও পরবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থার (Post-War Security) বোঝা ইউরোপের ঘাড়ে চাপাতে চাইবেন তিনি।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য দৃশ্যপট

শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার সাড়া: ট্রাম্পের এই হুমকি (নতুন নিষেধাজ্ঞা) ও পরিকল্পনা (তেলের দাম কমিয়ে রাশিয়ার আয় হ্রাস) কি পুতিনকে আলোচনায় আসতে বাধ্য করবে? রাশিয়ার অর্থনীতির দুর্বলতাই এখানকার মূল ফ্যাক্টর। যদি পুতিন স্বার্থ দেখেন যে, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়, তখন হয়তো তিনি কথা বলতে রাজি হবেন।

ইইউ-কানাডা-যুক্তরাজ্য-নাটোর ভূমিকা: যদি ট্রাম্প সত্যি সত্যি ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ান, ইউরোপীয় দেশগুলোও (European Countries) হয়তো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে। কিন্তু ট্রাম্প তাদের সঙ্গেও বাণিজ্য (Trade) ও নিরাপত্তা (Security) ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিতে পারেন। তবু ইউক্রেন ইস্যুতে পাশ্চাত্য ঐক্য (Western Unity) বজায় থাকতে পারে।

কীভাবে শেষ হবে যুদ্ধ?: ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘একদিনে চুক্তি’ করা সম্ভব—এটা হয়তো অতিরঞ্জিত। তবু তিনি দ্রুত কোনো সমাধান পেতে আগ্রহী হবেন। কিন্তু সেই সমাধান হবে এক ধরনের মীমাংসা (Settlement), যেখানে রাশিয়া কিছু ছাড় পাবে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) বড় অংশে অক্ষুণ্ণ থাকবে। বাস্তবে, এটা কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

উপসংহার

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউক্রেনকে সাহায্য করবে না—এমন আশঙ্কা অনেকেই করেছিলেন। তিনি সবসময় বলেছিলেন, প্রথম দিনেই যুদ্ধ শেষ করে দেবেন, যা অনেকের মনে শঙ্কা জাগিয়েছিল যে, তিনি হয়তো পুতিনকে খুশি করতে ইউক্রেনকে উৎসর্গ করে দেবেন।

কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি অন্য রকম। ট্রাম্প রাশিয়ার অর্থনীতিকে “ব্যর্থ” হিসেবে আক্রমণ করছেন, নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছেন, সৌদি আরবকে তেলের দাম কমাতে বলছেন যাতে রাশিয়ার মূল অর্থায়নের উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া চীনকেও (Xi Jinping) এই সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছেন।

অবশ্যই এটা মানে নয় যে, ট্রাম্প হঠাৎ ‘ইউক্রেনপ্রেমী’ হয়ে গেছেন। বরং তিনি এমন এক শান্তি চুক্তি করতে চান, যা দ্রুত হবে, দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে এবং আমেরিকাকে শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরবে। তার ন্যাটোবিরোধী মানসিকতা (Anti-NATO Stance) সম্ভবত ইউরোপের ওপর ভবিষ্যতে আরও দায় চাপাবে, যেমন—ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি নিতে ইউরোপেরকেই উদ্যোগী হতে হবে। তবু অন্তত স্বল্পমেয়াদে, ট্রাম্পের এই কঠোর রাশিয়া-বিরোধী অবস্থান (Hawkish Stand) ইউক্রেনের পক্ষে ইতিবাচক বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ

রাশিয়া সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে যান এখানে – রাশিয়া ও ইউক্রেইন সংবাদ

তথ্যসূত্র

1 – https://www.axios.com/2024/11/08/musk-trump-zelensky-ukraine-call
2 – https://truthsocial.com/@realDonaldTrump/posts/113872782548137314
3 – https://www.reuters.com/world/europe/putin-growing-concerned-by-russias-economy-trump-mulls-more-sanctions-2025-01-23/
4 – https://www.phenomenalworld.org/reviews/the-sanctions-age/
5 – https://www.cfr.org/blog/did-maximum-pressure-campaign-against-iran-fail
6 – https://www.weforum.org/stories/2025/01/davos-2025-special-address-donald-trump-president-united-states/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.