সার্বিয়ার ভুচিচের শাসনের পতনের সম্ভাবনা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাশিয়া থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া

ভূমিকা

সার্বিয়ায় (Serbia) কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক গণবিক্ষোভ (Mass Protests) ছড়িয়ে পড়েছে, যা প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচের (Aleksandar Vucic) ক্ষমতায় থাকার বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি (Serbian Progressive Party, সংক্ষেপে SNS) দেশের রাজনীতিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তাদের জনপ্রিয়তা ও শাসনভার ক্রমশ টলে উঠছে।

নোভি সাদ (Novi Sad) শহরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এক ভয়াবহ ঘটনার (Tragedy) মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। এর ফলশ্রুতিতে সার্বিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, স্থানীয় কৃষক সম্প্রদায় এবং সাধারণ মানুষ একত্র হয়ে আন্দোলন জোরদার করছেন।

প্রথমদিকে ছোট পরিসরে শুরু হলেও, এই বিক্ষোভ এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ডিসেম্বরে (২০২৪) একটি বিক্ষোভে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষ জড়ো হয়—এটি সার্বিয়ায় স্লোবোদান মিলোশেভিচ (Slobodan Milosevic) পতনের পর (২৫ বছর আগে) সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বলে অনেকে অভিহিত করেন। প্রতিদিনই চলতে থাকা এই বিক্ষোভে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীরা (Students) সাধারণ ধর্মঘটের (General Strike) ডাক দেয়। সোমবার (২৭ জানুয়ারি), হাজারো মানুষ বেলগ্রেড (Belgrade)—সার্বিয়ার রাজধানীর—প্রধান মহাসড়কগুলোর (Main Highways) একটি অবরোধ করে। নোভি সাদে (Novi Sad) ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ের সামনে যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ (Protest Gathering) ডাকে, তখন সেখান থেকে দুজন সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী বেরিয়ে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই সহিংস ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং জানান, নোভি সাদের মেয়রও (Mayor of Novi Sad) পদত্যাগ করবেন। এরপর সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ (Alexander Vucic) বলেন, ভুচেভিচের পদত্যাগের পর ১০ দিনের মধ্যে হয় নতুন নির্বাচন (New Elections) ডাকার, নয়তো নতুন সরকার (New Government) গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

এই নিবন্ধে আমরা দেখবো কীভাবে ভুচিচ ক্ষমতায় এলেন, কীভাবে তিনি এতদিন তার আধিপত্য বজায় রেখেছেন এবং চলমান বিক্ষোভ (Protests) তার শাসনের জন্য কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। একই সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করব, সার্বিয়া কেন ধীরে ধীরে রাশিয়ার (Russia) কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

ভুচিচের উত্থান: প্রেক্ষাপট

যুগোস্লাভ যুদ্ধকাল ও প্রথম রাজনৈতিক পরিচয়: আলেকসান্ডার ভুচিচের রাজনীতি শুরু হয়েছিল যুগোস্লাভ যুদ্ধ (Yugoslav Wars) চলাকালীন সময়ে। তিনি ছিলেন চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী দল সার্বিয়ান র‍্যাডিকাল পার্টির (Serbian Radical Party) একজন সক্রিয় সদস্য এবং পরবর্তীতে দলের সাধারণ সম্পাদক (General Secretary) হন। ওই সময় সার্বিয়া জুড়ে আল্ট্রা-জাতীয়তাবাদ (Ultra Nationalism) বড় ভূমিকা রাখছিল, আর ভুচিচ সেই ধারার অংশ হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তিনি সমাজতান্ত্রিক সরকারের অংশ হিসেবে স্লোবোদান মিলোশেভিচের (Slobodan Milosevic) অধীনে তথ্যমন্ত্রী (Minister of Information) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়েই সার্বিয়ার মিডিয়া (Media Landscape) ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্যে পড়ে। সরকারি ঘোষণামতে, বিদেশি টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো নিষিদ্ধ করা হয় এবং রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত চ্যানেলগুলোতে সার্ব জাতীয়তাবাদী প্রচারণা (Serbian Nationalist Propaganda) ব্যাপক আকারে চলতে থাকে। সমালোচক সাংবাদিকেরা, যারা বিশেষ করে কসোভো যুদ্ধ (Kosovo War), ন্যাটো বোমাবর্ষণের (NATO Bombing Campaign) ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার (International Sanctions) বিরোধিতা করতেন, তারা নানারকম হয়রানি ও হুমকির শিকার হতেন; অনেকেই চরম পরিণতিতে খুন পর্যন্ত হন।

মিলোশেভিচের পতন ও নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়: ২০০০ সালে মিলোশেভিচ ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর সার্বিয়ায় দুর্নীতি (Corruption) ও সংগঠিত অপরাধ (Organised Crime) বেড়ে যায়। ঠিক এমন প্রেক্ষাপটে ভুচিচ একটি নতুন দল গঠনে সহায়তা করেন, যা পরবর্তীতে সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি (SNS) নামে আত্মপ্রকাশ করে। এই দলটির মূল কথা ছিল দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (Democratic Party) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তারা জনপ্রিয়তা পায়। ২০১২ সালের নির্বাচনে SNS সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সোশ্যালিস্টদের (Socialists) সঙ্গে জোট গঠন করে সরকার গঠন করে। ভুচিচ শুরুতে উপপ্রধানমন্ত্রী (Deputy Prime Minister) হন, তারপর SNS দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালে সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) হন। ২০১৭ সালে তিনি প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং পরে আবারও মেয়াদ বাড়ান।

ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ

কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা (Authoritarian Bent): ভুচিচ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সার্বিয়ায় অনেকেই আশাবাদী ছিলেন যে, তিনি হয়তো গণতান্ত্রিক ধারা শক্তিশালী করবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, তার শাসন কাঠামো ক্রমশ একধরনের ‘সফট অটোক্র্যাসি’ (Soft Autocracy) বা আংশিকভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসনে পরিণত হচ্ছে। ফ্রিডম হাউস (Freedom House) সার্বিয়াকে “আংশিকভাবে মুক্ত” (Partly Free) রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে—যা বলে দেয় যে, দেশটিতে নির্বাচন ও বিরোধী দল থাকলেও শাসক দল ও রাষ্ট্রযন্ত্রের মধ্যে ব্যাপক হস্তক্ষেপ বিদ্যমান।

দুর্নীতির সূচক ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ: ২০২৩ সালে সার্বিয়ার দুর্নীতির ধারণা সূচক (Corruption Perception Index) দেশটির স্কোরকে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসে। ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে সার্বিয়া ১৮০ দেশের তালিকায় ১০৪তম অবস্থানে নেমে আসে, যেখানে ২০১৭ সালে (ভুচিচ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগের সময়ে) অবস্থান ছিল ৭৭তম। ভুচিচ প্রশাসন কার্যত বিচার বিভাগ (Judiciary), নিরাপত্তা বাহিনী (Security Forces) এবং সর্বোপরি সরকারি সিস্টেমের উপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে অভিযোগ আছে।

মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার: রাষ্ট্রের বড় বড় সংবাদমাধ্যমে (Major Media Outlets) ভুচিচ ও তার প্রশাসনের অংশীদারি আছে বলে অভিযোগ করা হয়। এসব মিডিয়া রাষ্ট্রের বিজ্ঞাপনের (State Advertising) ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার-সমর্থক অবস্থান (Pro-Government Narrative) প্রচারে আর্থিক প্রণোদনা পায়। সমালোচকরা আরও অভিযোগ করেন, ভুচিচ মিলোশেভিচের আমলে (When Vucic was Milosevic’s Minister of Information) যে পদ্ধতিতে সংবাদমাধ্যমকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রেখেছিলেন, এখনো অনেকাংশে সেই একই কৌশল অব্যাহত রেখেছেন।

অর্থনৈতিক সাফল্যের যুক্তি: ভুচিচ নিজেকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছেন বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প (Infrastructure Projects) ও দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার (Economic Stability) দাবি তুলে। তিনি বলেছেন, তার শাসনামলে মজুরি (Wages), কর্মসংস্থান (Employment) ও জিডিপি (GDP) দ্রুত বেড়েছে। যদিও এর পেছনে মুদ্রাস্ফীতির (Inflation) বাস্তবতা বা আয়বৈষম্যের (Income Inequality) বিষয়টি অনেক সময় আলোচনায় আসে না। অনেক সাধারণ নাগরিকও মনে করেন, ভুচিচের বিকল্প হিসেবে বিরোধী দলগুলোকে (Opposition Parties) খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। বিরোধীদের উপর “এলিটিস্ট” (Elitist) ও “জনতার সাথে সংযোগহীন” (Out of Touch) হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাই ভুচিচের কিছু স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা থাকলেও, সেটি মেনে নেওয়া শ্রেয় বলে অনেকে ভাবেন।

সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভের সূচনা

শুরু: ২০২৩ সালের দুটি গুলিবর্ষণের ঘটনা: গত এক-দেড় বছরে সার্বিয়াতে একাধিকবার গণবিক্ষোভ হয়েছে, যা ভুচিচের শাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে দুটি পৃথক গুলিবর্ষণের ঘটনায় (Mass Shootings) বহু হতাহতের পর মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিরোধীরা বলেন, সরকার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া (Government-Controlled Media) সহিংসতার এক সংস্কৃতি (Culture of Violence) গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। এ ঘটনার পর ভুচিচ আগাম নির্বাচনের (Snap Elections) ডাক দেন। কিন্তু নির্বাচনে তার দল বিশাল জয় (Landslide Victory) পাওয়ার পর, ফলাফল নিয়ে জালিয়াতির (Electoral Fraud) অভিযোগ ওঠে। এর জেরে আবারও ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়।

পরিবেশ সঙ্কট ও লিথিয়াম খনি: ২০২৪ সালের আগস্টে আবার এক দফা বিক্ষোভ দেখা যায় পরিবেশগত (Environmental) উদ্বেগ নিয়ে। ভুচিচ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) ও রিও টিন্টো (Rio Tinto) কোম্পানির সঙ্গে ২.৪ বিলিয়ন ডলারের লিথিয়াম খনি প্রকল্পের (Lithium Mining) চুক্তি করেন। কিন্তু ২০২২ সালে ঠিক একই ধরনের লিথিয়াম খনি প্রকল্প ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে নিষিদ্ধ হয়েছিল। নাগরিকদের বক্তব্য—এ ধরনের খনি প্রকল্প পরিবেশ বিনাশী (Environmentally Destructive)। ফলে আগের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নতুন করে চুক্তি হওয়ায় মানুষের মাঝে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস ও গণঅসন্তোষ বাড়ে।

নোভি সাদ (Novi Sad) ট্র্যাজেডি: ২০২৪ সালের নভেম্বরে নোভি সাদ শহরের এক সম্প্রতি পুনর্নির্মিত রেলওয়ে স্টেশনের ছাদ ধসে (Canopy Collapse) ১৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনাটি ইতিমধ্যেই ক্রুদ্ধ জনমনে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। সমালোচকরা বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত (Corrupt) অবকাঠামো নির্মাণ কাজই (Poor Reconstruction Work) এই দুর্ঘটনার কারণ। চীনা কোম্পানির (Chinese Companies) কনসোর্টিয়ামকে এই নির্মাণচুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু শর্তাবলি ছিল গোপন এবং স্থানীয় সাবকন্ট্রাক্টরদের (Local Subcontractors) মাধ্যমে কাজ চলছিল, এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঠিকঠাক পরিদর্শন (Inspection) ছাড়াই কাজ শেষ করার অভিযোগও আছে। অনেকে মনে করেন, প্রকল্পের ব্যয় (প্রায় ১৬ মিলিয়ন ইউরো) অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল, যার একটি বড় অংশ ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে (Pocketed by Corrupt Officials)। রাষ্ট্রের প্রসিকিউশন অফিস (Prosecutor’s Office) ১৩ জনকে অভিযুক্ত করলেও, অভিযোগপত্রে (Indictment) দুর্নীতির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। পরিবহনমন্ত্রী (Transport Minister) পদত্যাগ করলেও সরকার এ ঘটনার জন্য দায় স্বীকার করেনি।

বিক্ষোভের বিস্তার ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অবরোধ ও দাবি: নভি সাদ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জবাবদিহিতার অভাব (Lack of Accountability) দেখে প্রথমে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা (Accountability) নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা নির্মাণ সংক্রান্ত নথিপত্র (Construction Documents) ও প্রকল্পের আর্থিক লেনদেন (Financial Investigation) প্রকাশের দাবি তোলে। শিক্ষার্থীরা দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবরোধ (Blockade) গড়ে তোলে। তারা মনে করে, কর্তৃপক্ষ প্রকৃত সত্য গোপন করছে এবং জবাবদিহি এড়াতে চাইছে।

বড় মাপের সমাবেশ (২২ ডিসেম্বর): ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর বেলগ্রেডে (Belgrade) প্রায় ১ লক্ষাধিক মানুষ একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ দেখায়—যা মিলোশেভিচ পতনের পর (দুই দশক আগের ঘটনার পরে) বৃহত্তম সমাবেশ বলে অনেকে উল্লেখ করেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিক, পরিবেশবাদী কর্মী, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক ও কৃষকসহ (Farmers) বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এই বিক্ষোভে যোগ দেন। নতুন বছরের (২০২৫) শুরুতেও এই বিক্ষোভ চলমান থাকে। সরকারপন্থী মিডিয়া (Pro-Government Media) কিছু শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করলে (Personal Data Leaked) শিক্ষার্থীরা জানায়, সার্বিয়ান রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা (Serbian State Security) তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে এবং শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে তাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে জনগণকে প্ররোচিত করছে।

সরকারের দমনপীড়ন (Crackdown) ও প্রসারমান অস্থিরতা: ভুচিচ সরকার বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিজে প্রকাশ্যে বলেছেন, এসব শিক্ষার্থী “পশ্চিমা তহবিল” (Money from the West) পাচ্ছেন, অর্থাৎ তারা বিদেশি স্বার্থরক্ষা করছে। প্রো-গভর্নমেন্ট মিডিয়ায়ও (Pro-Government Media) বিক্ষোভকারীদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা ছড়ানো হয়। সম্প্রতি বেলগ্রেডে এক চালক ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে এক শিক্ষার্থী বিক্ষোভে আঘাত করে, যার ফলে একজন নারী আহত হন। কেউ কেউ মনে করেন, প্রেসিডেন্টের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য (Incitement of Violence) এ ধরনের ঘটনার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। একটি এনজিও (NGO) ইতোমধ্যে ভুচিচের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে আইনি অভিযোগ (Criminal Complaint) দায়ের করেছে। এসব ঘটনার পর বিক্ষোভ আরো তীব্র হয়। হাজার হাজার মানুষ সার্বিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি অফিসের সামনে জড়ো হয়ে (Serbia’s State TV) সরকারপন্থী পক্ষপাতের (Pro-Government Bias) বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে।

প্রধানমন্ত্রী ভুচেভিচের পদত্যাগ

পদত্যাগের ঘোষণা: সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ (Milos Vucevic) গতকাল (মঙ্গলবার) পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সার্বিয়ায় বহুমুখী ও ব্যাপক বিক্ষোভের (Mass Anti-Government Protests) ঢেউ উঠেছে, যা মূলত তিন মাস আগে নোভি সাদ (Novi Sad) শহরের একটি ট্রেন স্টেশনে (Train Station) সম্প্রতি সংস্কার করা ছাদ (Renovated Canopy) ধসে ১৫ জন মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, সেটিকে ঘিরে প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণসভা (Commemorative Gatherings) হলেও, সরকারের দিক থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধাচরণ যথেষ্ট না হওয়া ও স্টেশনের পুনর্নির্মাণ-সংক্রান্ত দলিলপত্র (Reconstruction Documents) প্রকাশ না করায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিক্ষোভকারীরা দায়ীদের জবাবদিহি (Indict) করার দাবি জানায়।

বিক্ষোভের বিস্তার: প্রথমদিকে ছোট পরিসরে শুরু হলেও, এই বিক্ষোভ এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ডিসেম্বরে (২০২৪) একটি বিক্ষোভে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষ জড়ো হয়—এটি সার্বিয়ায় স্লোবোদান মিলোশেভিচ (Slobodan Milosevic) পতনের পর (২৫ বছর আগে) সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বলে অনেকে অভিহিত করেন। প্রতিদিনই চলতে থাকা এই বিক্ষোভে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীরা (Students) সাধারণ ধর্মঘটের (General Strike) ডাক দেয়। সোমবার (২৭ জানুয়ারি), হাজারো মানুষ বেলগ্রেড (Belgrade)—সার্বিয়ার রাজধানীর—প্রধান মহাসড়কগুলোর (Main Highways) একটি অবরোধ করে। নোভি সাদে (Novi Sad) ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ের সামনে যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ (Protest Gathering) ডাকে, তখন সেখান থেকে দুজন সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী বেরিয়ে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই সহিংস ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং জানান, নোভি সাদের মেয়রও (Mayor of Novi Sad) পদত্যাগ করবেন। তিনি বলেন, “নোভি সাদে যা ঘটেছে, তার জন্য আমরা বাস্তবিকভাবে দায়বদ্ধ, তাই পদত্যাগ করছি এবং রাজনৈতিক মূল্য (Political Price) পরিশোধ করছি। এতে উত্তেজনা কমবে ও সংলাপ (Dialogue) ফিরবে বলে আশা করছি।”
নির্বাচনের সম্ভাবনা: সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ (Alexander Vucic) বলেন, ভুচেভিচের পদত্যাগের পর ১০ দিনের মধ্যে হয় নতুন নির্বাচন (New Elections) ডাকার, নয়তো নতুন সরকার (New Government) গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

বহিঃপ্রভাব ও সামাজিক চাপ

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা (US Sanctions) ও কৃষকদের উদ্বেগ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সার্বিয়ার তেল কোম্পানি এনআইএস (NIS) এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করেছে, যা দেশটির জ্বালানি খাতকে (Energy Sector) ব্যাহত করতে পারে। এর ফলে কৃষকরা (Farmers) কম মূল্যে জ্বালানি (Cheaper Fuel Subsidies) পাওয়ার ভর্তুকি হারানোর আশঙ্কা করছেন, কারণ তারা জ্বালানির ওপর বিশেষ ভর্তুকি পেতেন। এখন এ সুবিধা হারানোর আশঙ্কায় ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ কৃষকরা ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি (Solidarity) জানিয়ে বলে, প্রয়োজনে তারা শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে সুরক্ষা দেবেন। কৃষকরা ট্রাক্টর (Tractors) নিয়ে মিছিল করে বিক্ষোভে যোগ দিতে শুরু করে, যা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে।

রাশিয়া থেকে দূরে সরে যাওয়া (Moving Away from Russia): সার্বিয়া ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে এসেছে, বিশেষ করে সার্বীয় জাতীয়তাবাদ ও স্লাভিক ঐতিহ্য (Slavic Heritage) নিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সঙ্গে অর্থনৈতিক চুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের (US) নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত বিষয়, এবং চীনের (China) সঙ্গে কিছু প্রকল্পে জড়িয়ে পড়ায় সার্বিয়া একটি জটিল পররাষ্ট্রনীতির (Foreign Policy) দিকে এগোচ্ছে। এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও, সার্বিয়া এখন ইউরোপীয় বাজার বা পশ্চিমা বিনিয়োগ (Western Investment) থেকে সুবিধা গ্রহণে বেশি আগ্রহী বলে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia-Ukraine War) প্রেক্ষাপটে ইউরোপের বাকি দেশগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সার্বিয়া তাদের নিরপেক্ষতার (Neutrality) অবস্থান কখনোই পুরোপুরি ধরে রাখতে পারছে না। ফলে “রাশিয়া থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে আসা” বলাটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতারই প্রকাশ।

বিরোধী দল ও ভবিষ্যতের সংকট

প্রায় তিন মাসের বিক্ষোভ, বিরোধী দলের দুর্বলতা: এই বিক্ষোভ এখন টানা তিন মাস ধরে চলছে। সবার মনে প্রশ্ন—শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল বিষয় হলো—বিরোধী দলগুলো (Opposition Parties) যদি একত্র হয়ে শক্তিশালী কোনো বিকল্প (Viable Alternative) তৈরি করতে পারে, তাহলে ভুচিচের শাসন টালমাটাল হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সার্বিয়ার বিরোধী দলগুলো বিক্ষোভে সরাসরি জড়িত নয়। বরং এই আন্দোলনকে অনেকেই শিক্ষার্থী-নাগরিক বিক্ষোভ হিসেবে দেখছেন। এই বিরোধী দলগুলো সামনে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ঐক্য ঘোষণা করলে ভুচিচ আরও চাপে পড়বেন। ইতিহাস সাক্ষী, ২০০০ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন (Student-Led Movement) ও গণবিক্ষোভ মিলোশেভিচের পতনে (Ousting of Milosevic) বড় ভূমিকা রেখেছিল। তবে এখনো সম্পূর্ণভাবে ভুচিচকে সরিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে হয় না। বিরোধী দলগুলোকে বহুদিন ধরেই “ভুচিচের বিকল্প নয়” বলে মনে করেন অনেকে; এমনকি সাধারণ মানুষের একাংশের মতে, এরা ক্ষমতা হারাবার পর গত দেড় দশকে নিজেদের অবস্থান গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, ভুচিচের পতন বা তার ক্ষমতাচ্যুতি ঘটাতে হলে বিরোধীরা কোনো সুসংগঠিত রূপরেখা নিয়ে আসতে পারবে কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন।

জনমত জরিপ ও গণভোট প্রসঙ্গ: সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, যদি ভুচিচের ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে গণভোট (Referendum) হয়, তাহলে ৫২% মানুষ তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট ভুচিচ অবশ্য এই ফলাফলকে “বিদেশি প্রভাব” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি বিরোধী দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা চাইলে গণভোটের ব্যবস্থা করুক। কিন্তু বিরোধীরা এটাকে একটি “রাজনৈতিক ফাঁদ” (Political Bait) বলে উল্লেখ করে গণভোটের উদ্যোগে যায়নি। তারা বরং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Transitional Government) গঠনের দাবি তুলেছে, যা ভুচিচ সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভুচেভিচের পদত্যাগের ঘোষণা দেবার পর প্রেসিডেন্ট ভুচিচ বলেন ভুচেভিচের পদত্যাগের পর ১০ দিনের মধ্যে হয় নতুন নির্বাচন (New Elections) ডাকার, নয়তো নতুন সরকার (New Government) গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ক্ষমতার সংহতকরণ ও সম্ভাব্য দৃশ্যপট: ইতিহাস বলছে, যদি বিক্ষোভ আরও বেড়ে যায়, ভুচিচ নিজেকে রক্ষা করতে ক্ষমতা আরও সংহত করার (Consolidate Power) চেষ্টা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ১০ দিন পর নতুন নির্বাচন বা নতুন সরকার গঠনের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এরপরও যে তিনি জরুরি অবস্থা বা অন্য কোনো কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিরোধী কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না তা বলা যায়না। তবে ভুচিচের কাজে জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা না গেলে আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার নিয়ে পরিস্থিতি সহিংসতার (Violence) দিকেও মোড় নিতে পারে। একইসঙ্গে বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ বিকল্প না থাকলে, সাধারণ মানুষ হয়তো ‘স্থিতিশীলতার’ যুক্তিতে আবারও ভুচিচের দিকেই ঝুঁকবেন—এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সার্বিয়া-রাশিয়া সম্পর্কের মোড়

ঐতিহাসিক বন্ধুত্বে ফাটল?: সার্বিয়া ও রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ইউরোপীয় অভিমুখী নীতিতে (Pro-European Policy) সার্বিয়া অনেকাংশে রাশিয়ার চেয়ে পশ্চিমা অংশীদারদের (Western Partners) প্রতি বেশি ঝুঁকছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইউরোপীয় বিনিয়োগ, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়—সব মিলিয়ে সার্বিয়া আর আগের মতো রাশিয়ান বলয়ে (Russian Sphere of Influence) থাকতে আগ্রহী নয় বলে আন্দাজ করা যায়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ঝোঁক ও ভেতরকার দ্বন্দ্ব: একদিকে সার্বিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায়—যাতে করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়াতে পারে। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিন্ন করে ফেলা সহজ নয়। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গেও (Chinese Investment) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিকাশ ঘটিয়েছে, যার ফলে সার্বিয়া একধরনের ত্রিমুখী দোদুল্যমান অবস্থানে রয়েছে। এরই মাঝে দেশের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র, পরিবেশ, দুর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে যে বিক্ষোভ চলছে, তাতে পশ্চিমা মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক মহল বেশ মনোযোগ দিচ্ছে। আবার রাশিয়া পরিস্থিতির সুযোগ নেবে কিনা, সেটিও পর্যালোচনার বিষয়। তবে “রাশিয়া থেকে সার্বিয়ার ধীরে ধীরে সরে যাওয়া”—এ ধারণা মূলত পশ্চিমা অন্তর্ভুক্তির (Western Integration) প্রক্রিয়া আর চীনের বিনিয়োগের (Chinese Investment) বাস্তবতা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে।

উপসংহার

সার্বিয়ার রাজনীতিতে আলেকসান্ডার ভুচিচ এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি সরকার, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং রাষ্ট্রায়ত্ত মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষমতা সুসংহত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্বল বিরোধী দল এবং ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। অন্যদিকে, অবকাঠামো প্রকল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচারের মাধ্যমে তিনি জনসমর্থন ধরে রেখেছেন।

তবে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সার্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। একের পর এক গণবিক্ষোভ, দুর্নীতির অভিযোগ, পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে অসন্তোষ এবং নোভি সাদ ট্র্যাজেডির মতো ঘটনা ভুচিচের শাসনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে ও তার জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থী, কৃষক ও সাধারণ নাগরিক সহ বিভিন্ন মহলের সম্মিলিত আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং সরকারবিরোধী স্রোত শক্তিশালী করছে। সরকার নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি মিডিয়ার মাধ্যমে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করলেও আন্দোলন এখনো থামেনি।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন খনি চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক—ভূ-রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া ঘনিষ্ঠ সার্বিয়া পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ঝুঁকছে, যা অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ফল।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভুচিচ কিভাবে গণবিক্ষোভ সামাল দেবেন, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ১০ দিন পর কী সিদ্ধান্ত আসে আর তাতে জনতা কিরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় তার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, সার্বিয়ার রাজপথ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হওয়া ক্ষোভ সহজে থামবে না।

সার্বিয়া সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে দেখুন – ইউরোপ (অন্যান্য) সংবাদ

তথ্যসূত্র

Corruption in Serbia
https://www.transparency.org/en/cpi/2023?gad_source=1&gclid=Cj0KCQiAy8K8BhCZARIsAKJ8sfQEoPMGIg85vL1qUlVdDrh4bQbdC2tXSbFjOs8E_A2on5nKQxb_NfIaAtgpEALw_wcB
https://frontierview.com/insights/serbias-escalating-corruption-risks-eu-dreams/
https://freedomhouse.org/country/serbia

Why some citizens continue to support Vucic
https://balkaninsight.com/2024/03/13/theres-a-reason-why-many-serbs-support-their-flawed-president/

Recent Protests
https://www.politico.eu/article/serbia-culture-of-violence-protests/
https://www.bbc.co.uk/news/business-67817072
https://www.youtube.com/watch?v=j8qgzzRf7vI
https://www.euractiv.com/section/enlargement/news/thousands-across-serbia-protest-lithium-mine-restart/

Controversy surrounding the construction of Novi Sad railway station
https://europeanwesternbalkans.com/2024/11/30/political-tensions-in-serbia-keep-rising-after-the-novi-sad-tragedy/ https://www.slobodnaevropa.org/a/novi-sad-srbija-zeleznicka-stanica-nesreca-inspekcija-nadstresnica/33208355.html https://novaekonomija.rs/vesti-iz-zemlje/sa-tri-na-16-miliona-evra-zasto-su-poskupeli-radovi-na-zeleznickoj-stanici-novi-sad#google_vignette

Current protests
https://balkaninsight.com/2024/12/23/mass-rally-blocks-serbias-capital-demanding-accountability-for-station-disaster/ https://www.euractiv.com/section/politics/news/serbias-vucic-under-fire-after-driver-rams-student-protest-in-belgrade/
https://www.euronews.com/my-europe/2025/01/18/thousands-protest-outside-serbias-state-tv-accusing-it-of-pro-government-bias https://www.intellinews.com/mass-protests-in-serbia-test-ruling-party-s-grip-on-power-362166/?source=serbia

Polling showing discontent of Vucic and regime
https://www.bgnesnews.com/balkans/crta-52-of-serbs-against-vucic-corruption-and-poverty-are-the-biggest-problems-in-serbia#google_vignette

Distance from Russia
https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-01-18/war-in-ukraine-strains-ties-between-putin-and-his-ally-vucic-in-serbiaKosović, N., 2016. What makes Russia so popular in Serbia? Origins of Russian soft power (Doctoral dissertation, Central European University).
https://theins.ru/en/politics/253594
https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-01-18/war-in-ukraine-strains-ties-between-putin-and-his-ally-vucic-in-serbia
https://www.euractiv.com/section/politics/news/serbia-says-goodbye-to-russian-weapons-as-break-with-kremlin-remains-unclear/
https://www.reuters.com/world/europe/frances-macron-visits-serbia-boost-eu-ties-discuss-rafale-deal-2024-08-29/
https://www.defensenews.com/global/europe/2025/01/10/serbia-cancels-russian-arms-deals-amid-ukraine-war-western-sanctions/
https://www.euractiv.com/section/politics/news/us-tells-serbia-to-zero-out-russian-ownership-of-largest-national-oil-company/
https://www.reuters.com/business/energy/russias-lavrov-says-moscow-contact-with-serbia-regarding-ownership-nis-2025-01-14/
https://balkaninsight.com/2024/07/08/why-russia-tolerates-serbia-sending-arms-to-ukraine/

Resignation of Serbia’s Prime Minister
https://n1info.rs/english/news/armed-thugs-assault-students-in-novi-sad/
https://n1info.rs/english/news/vucic-decision-on-elections-or-new-government-in-next-10-days/
https://n1info.rs/english/news/serbian-pm-vucevic-resigns/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.