ফরাসি বামপন্থা কি আবার দ্বিধাবিভক্ত?

ভূমিকা

১৯ জানুয়ারিতে ফ্রান্সের (France) বর্ষীয়ান বামপন্থী নেতা জাঁ-লুক মেলাঁশোঁ (Jean-Luc Mélenchon) কেন্দ্র-বামপন্থী (Left of Centre) সোশ্যালিস্ট পার্টির (Socialist Party) বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ তোলেন। অভিযোগের সূত্রপাত, সোশ্যালিস্টরা সম্প্রতি সরকারের বিরুদ্ধে মেলাঁশোঁর দলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে (No Confidence Motion) সমর্থন না দিয়ে, বরং সরকারের পক্ষের অবস্থান করে একপ্রকার “রক্ষাকবচ” (Lifeline) দিয়েছে। ফলে দুই দল, যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মিত্র’ হিসেবে কাজ করার কথা, তারা আবারও দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থানের প্রেক্ষিতে ফরাসি বামপন্থার সাম্প্রতিক “ঐক্য” (Unity) সম্ভবত আবারও ভেঙে যেতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব ফরাসি বামপন্থার বর্তমান অবস্থা, কেন এই নড়বড়ে ঐক্য ভাঙনের দিকে যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট মাকরঁর (President Macron) জন্য এটি কী অর্থ বহন করছে, এবং ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে।

পটভূমি: সোশ্যালিস্ট পার্টির (Socialist Party) সংকট ও মেলাঁশোঁর উত্থান

ফ্রান্সে কয়েক দশক ধরে বামপন্থী রাজনীতিতে মূলধারার দল ছিল সোশ্যালিস্ট পার্টি। তবে ২০১৭ সালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা-হ্রাসে ভোগা প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলের (François Hollande) মেয়াদের শেষে দলটি কার্যত ভেঙে পড়ে। ২০১৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সোশ্যালিস্ট প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে মাত্র ৬% ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থানে থাকেন, বিপরীতে ফ্রঁস আনবোঁ (France Unbowed) দলের জাঁ-লুক মেলাঁশোঁ প্রায় ১৯.৫% পেয়ে চতুর্থ স্থান দখল করেন।

পরের নির্বাচন, অর্থাৎ ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সোশ্যালিস্ট পার্টি আরও খারাপ করে—এইবার তারা প্রথম রাউন্ডে ১.৭৫% পেয়ে দশম স্থানে চলে যায়, আর মেলাঁশোঁ প্রায় ২২% পেয়ে খুব অল্পের জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে ব্যর্থ হন। বলতে গেলে, সোশ্যালিস্টদের ধসে মেলাঁশোঁর ফ্রঁস আনবোঁই (France Unbowed, যাকে অনেকে far-left হিসেবে বিবেচনা করেন) ফরাসি বামপন্থার নতুন প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, মধ্যপন্থী (Centrist) ইমানুয়েল মাকরঁর নেতৃত্বে গঠিত জোটও সোশ্যালিস্টদের সমর্থকগোষ্ঠী খানিকটা কেড়ে নেয়।

নুপ (NUPES) জোট ও ২০২২ সালের আইনসভার নির্বাচন: ২০২২ সালের জুনে (প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর) আইনসভার (Legislative) নির্বাচন হয়। মেলাঁশোঁ নিজেকে “প্রধানমন্ত্রীর (Prime Minister) প্রার্থী” হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, যদিও ফ্রান্সে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা কোনো সরাসরি ভোট নেই। কিন্তু বামপন্থী দলগুলো—সোশ্যালিস্ট, গ্রিন (Green) ও কমিউনিস্ট (Communist)—একই প্ল্যাটফর্মে ভোট ভাগাভাগির ক্ষতি এড়াতে “নুপ” (NUPES – New Ecologic and Social People’s Union) নামক জোট গঠন করে। এই জোটের লক্ষ্য ছিল মেলাঁশোঁকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বসানো (যদি তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়)। নুপ জোট তুলনামূলকভাবে ভালো করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন জেতে এবং প্রেসিডেন্ট মাকরঁর জোটকে (Ensemble) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বাধা দেয়। কিন্তু এই জোট বরাবরই ছিল অস্বস্তিকর একটি “সমঝোতা”। একদিকে মেলাঁশোঁর ফ্রঁস আনবোঁ, অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী সোশ্যালিস্ট পার্টি—এর মধ্যে পার্থক্য ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে সংসদীয় কৌশল (Parliamentary Strategy) অবধি নানা বিষয়ে। এছাড়া মেলাঁশোঁর ব্যক্তিত্ব (Personality) ও তার চাঁচাছোলা অবস্থান (Firebrand Leadership) নিয়ে সোশ্যালিস্টদের অস্বস্তি ছিল। নুপ জোট ২০২৩ সালের শেষের দিকে মূলত ভেঙে পড়ে, যখন হামাসের (Hamas) সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের পরে মেলাঁশোঁ হামাসকে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠী (Terrorist Group)” হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই অবস্থান সোশ্যালিস্টদের কাছে ছিল অগ্রহণযোগ্য, তাই তারা নুপ থেকে নিজেদের কার্যত প্রত্যাহার করে নেয়।

২০২৪ সালের ইউরোপীয় নির্বাচন ও পরবর্তী ঘটনা

সোশ্যালিস্ট পার্টি ২০২৪ সালের ইউরোপীয় নির্বাচনে (European Elections) আশাতীতভাবে ভালো করে, এমনকি ফ্রঁস আনবোঁকেও পেছনে ফেলে। এটি সোশ্যালিস্টদের মনে নতুন উদ্যম আনে। তবে পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট মাকরঁ হঠাৎ করে আগাম নির্বাচন ডেকে বসেন (Snap Legislative Election), যেখানে কট্টর ডানপন্থী (Far Right) ন্যাশনাল র‍্যালি (National Rally) শক্তিশালী হতে থাকে। তার মোকাবিলায় মূল বামপন্থী দলগুলো আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরা নতুন জোট গঠন করে—“নিউ পপুলার ফ্রন্ট” (NFP) নাম দিয়ে, যেখানে ফ্রঁস আনবোঁ, সোশ্যালিস্ট, গ্রিন ও কমিউনিস্টরা ছিল।

এনএফপি (NFP) জোটের সাফল্য: নতুন এই ফ্রন্ট (NFP) বেশ ভালো করে জাতীয় সংসদের (National Assembly) সবচেয়ে বড় জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যদিও সংসদ ছিল “ডেডলকড” (Deadlocked), মানে সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা কারো ছিল না। ফ্রান্স আনবোঁ এখনো এনএফপির মধ্যে সবচেয়ে বড় দল, কিন্তু সোশ্যালিস্ট এবং গ্রিন দলের তুলনামূলক আসনসংখ্যা আগের চেয়ে বেশি। এছাড়া ২০২৪-এর আগাম নির্বাচনের সময় সোশ্যালিস্ট, গ্রিন ও কমিউনিস্ট নেতারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এই জোট আর মেলাঁশোঁকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চায় না—অন্তত সেটিই তাদের সরকারি অবস্থান। নানামুখী রাজনৈতিক বিতর্ক ও নানা আলোচনা সত্ত্বেও, এনএফপি বেশ কিছু দিন ঐক্যবদ্ধ ছিল। তারা মাকরঁ (Macron) কর্তৃক মনোনীত প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়েকে (Michel Barnier) দু’বার ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিল—একবার অক্টোবরে ব্যর্থ হয়, আবার ডিসেম্বরে সফল হয়। কিন্তু এই সাফল্যের পর, এনএফপির মধ্যে দূরত্ব আবার বাড়তে থাকে।

সাম্প্রতিক অনাস্থা প্রস্তাব ও দ্বন্দ্ব

ডিসেম্বরের পরে, মাকরঁ ফ্রান্সোয়া বাইরুকে (François Bayrou) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। প্রত্যাশিতভাবেই মেলাঁশোঁ জানিয়ে দেন যে তিনি জানুয়ারিতে আরেকটি অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন। বহু আলোচনা-সমঝোতার পর, সোশ্যালিস্ট নেতা ওলিভিয়ার ফো (Olivier Faure) ঘোষণা দেন—তাদের দল এই অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন দেবে না, কারণ বাইরু কিছু বিষয়—যেমন ২০২৩ সালের বিতর্কিত পেনশন সংস্কার (Pension Reform) পুনর্বিবেচনা করা, ৪০০০ শিক্ষকের চাকরি কাটছাঁট বাতিল করা এবং স্বাস্থ্য খাতে সরকারি রেয়াত (State Medical Reimbursements) বহাল রাখা—ইত্যাদি নিয়ে ইতিবাচক সংকেত দিয়েছেন।

ফো জোর দিয়ে বলেছেন, এটা সরকারের প্রতি দীর্ঘমেয়াদী সমর্থন নয়; পরিস্থিতি পরিবর্তন হলে তারা পরবর্তীকালে অনাস্থায় সমর্থন দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি প্রধানমন্ত্রী বাইরুর জন্য “লাইফলাইন” হিসেবে কাজ করবে, কারণ তিনি এখন জানেন যে শুধু ন্যাশনাল র‍্যালি (Marine Le Pen-এর দল) নয়, সোশ্যালিস্টদের “ট্যাসিট সাপোর্ট” (Tacit Support) থাকতেও পারে। ন্যাশনাল র‍্যালিও আপাতত সরকারকে “শাসন করার সুযোগ” দিতে চায়, পরে পরিস্থিতি দেখে প্রস্তাব তুলবে।

মেলাঁশোঁর ক্ষোভ: সোশ্যালিস্টদের এই সিদ্ধান্ত মেলাঁশোঁকে ক্ষুব্ধ করেছে। তিনি এটিকে “গভীর বিশ্বাসঘাতকতা (Profound Betrayal)” বলে অভিহিত করেন এবং সোশ্যালিস্টদের আর সত্যিকারের মিত্র মনে করছেন না। তিনি হুমকি দিয়েছেন, যদি সোশ্যালিস্টরা এ মাসের শেষের দিকে আসন্ন বাজেট নিয়ে সরকারের পক্ষে যায় (বা অনাস্থার পক্ষে না থাকে), তাহলে এনএফপি চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়বে। সোশ্যালিস্টদের দিক থেকে, সম্ভবত তারা এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। কারণ মেলাঁশোঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর ফলে তারা অপেক্ষাকৃত মধ্যপন্থী (Centrist) ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারবে—যারা মেলাঁশোঁকে খুবই চরমপন্থী বলে মনে করে। এছাড়া তারা ভবিষ্যতে “দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সরকারকে সাহায্য করছে” এমন ভাবমূর্তি পেতে পারে, তাতে জনমত তাদের পক্ষে যেতে পারে। তবে তাদেরকেও অবশ্যই বাম ঐক্য (Left Unity) পুরোপুরি ভেঙে না ফেলার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে, কারণ অনেকে ধারণা করছে চলতি বছরের শেষের দিকে হয়তো আবার সাধারণ নির্বাচন হবে।

পর্যালোচনা: মাকরঁর জন্য স্বস্তি, কিন্তু অনিশ্চয়তা রয়েই গেল

১. প্রধানমন্ত্রী বাইরুর স্বস্তি: সোশ্যালিস্টদের এই আংশিক সমর্থন বা অন্তত অনাস্থা সমর্থন না করা প্রধানমন্ত্রী বাইরুকে সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে সরকার একদম নিরাপদ নয়। সোশ্যালিস্ট ও ন্যাশনাল র‍্যালি—উভয়েই বলেছে, পরিস্থিতি বদলালে তারা ভবিষ্যতে বাইরুকে সরাতে পারে। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাজেট নিয়ে বড় ভোট হবে, যা পরবর্তী বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকার যদি তখন সোশ্যালিস্ট বা ন্যাশনাল র‍্যালির কোনো এক দলের সাপোর্ট হারায়, তখন বিপদে পড়বে।

২. ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: বামপন্থার অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন: প্রেসিডেন্ট মাকরঁ তৃতীয়বার দাঁড়াতে পারবেন না, কাজেই ২০২৭ সালে “খোলা মাঠে” লড়াই হবে। অনেকেই বলছেন, সোশ্যালিস্ট পার্টির মধ্যপন্থীরা (Centrist Wing) মনে করছে, এটি তাদের সেরা সুযোগ—মেলাঁশোঁ ও তার “চরম বামপন্থী” ভাবমূর্তি পেরিয়ে আবার ঐতিহ্যবাহী বামপন্থার রাজদণ্ড ফিরে পেতে। এখনই যদি মেলাঁশোঁর সাথে খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা দেখায়, তারা ঐ ইমেজ পেতে ব্যর্থ হবে। তবে বামপন্থা যদি আবার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে, ভোট ভাগাভাগির কারণে ২০১৭ ও ২০২২ সালের মতোই দ্বিতীয় রাউন্ডে (Run-off) কোনো বামপন্থী প্রার্থী নাও যেতে পারে।

উপসংহার

ফ্রান্সের বামপন্থায় সম্প্রতি যে ঐক্য দেখা দিয়েছিল, তা আবারও ফাটল ধরতে বসেছে। সোশ্যালিস্ট পার্টি ও জাঁ-লুক মেলাঁশোঁর ফ্রাঁস আনবোঁর মধ্যে মতপার্থক্য গভীরতর হয়েছে—বিশেষ করে সর্বশেষ সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সোশ্যালিস্টদের আপোষহীন অবস্থানের কারণে। মেলাঁশোঁ এটিকে “গভীর বিশ্বাসঘাতকতা” বললেও, সোশ্যালিস্টরা মনে করছে যে নির্দলীয় বা মধ্যপন্থী অবস্থান নেওয়া তাদের রাজনৈতিক কৌশল এবং ভবিষ্যতের ভোটারদের সমর্থন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট মাকরঁ আপাতত কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী বাইরু সময় পেয়ে যাচ্ছেন, অন্তত পরবর্তী বড় কোনো ভোট পর্যন্ত। তবে এই স্থিতি অস্থায়ীও হতে পারে, কারণ সোশ্যালিস্ট ও ন্যাশনাল র‍্যালি উভয়েই ভবিষ্যতে আবার সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে।

সবমিলিয়ে, ফ্রান্সের বামপন্থীরা যদি শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা আবারও ভোটভাগাভাগির মুখে পড়তে পারে, এবং একের পর এক নির্বাচনে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। সেই ফাঁকে মধ্যপন্থী শিবির ও কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র‍্যালি নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারে। সুতরাং ফরাসি বামপন্থার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চয়তার বেড়াজালে বন্দি।

ফ্রান্স সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে যান এখানে – ফ্রান্স সংবাদ

তথ্যসূত্র

Bayrou no confidence vote:
https://www.reuters.com/world/europe/french-parliament-head-warns-against-backing-no-confidence-vote-versus-2025-01-16/
https://www.france24.com/en/france/20250116-french-pm-bayrou-set-to-survive-first-no-confidence-vote-in-parliament
https://www.politico.eu/article/france-pm-francois-bayrou-thrown-surprise-lifeline-by-socialists/

Mélenchon’s response:
https://melenchon.fr/2025/01/19/jean-luc-melenchon-invite-du-grand-jury/
https://www.lemonde.fr/idees/article/2025/01/17/le-retour-des-deux-gauches_6502670_3232.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.