Table of Contents
ভূমিকা
রাশিয়ার (Russia) অর্থনীতি বর্তমানে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চড়া হারে সুদের হার (Interest Rate) বাড়িয়েও মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের হিসেব বলছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ৯.৫%-এ পৌঁছেছে এবং রাশিয়ান মুদ্রা রুবল (Ruble)-এর মান এখন সেন্টের (Cent) চেয়েও কম হয়ে গেছে। তবুও বিস্ময়করভাবে, রাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থা (State Finances) বেশ “স্থিতিশীল” বলে দেখানো হচ্ছে। সামরিক ব্যয় (Military Expenditure) বাড়লেও আনুষ্ঠানিক তথ্যমতে, রাশিয়ায় প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ৮% জিডিপির (GDP) সমপরিমাণ। এ হিসেবে দেখে মনে হয়, পুরো যুদ্ধরত একটি দেশের জন্যে সেটি খুব বেশি নয়। তাছাড়া, সরকারি ঘাটতিও (Deficit) বেশ ছোট আকারে রাখার দাবি করা হচ্ছে।
কিন্তু সম্প্রতি “Navigating Russia” সাবস্ট্যাকের (Substack) বিশ্লেষক ক্রেগ কেনেডি (Craig Kennedy) এক নতুন প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন, এসব তথ্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তার দাবি, ক্রেমলিন (Kremlin) রাশিয়ান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে (Commercial Banks) বাধ্য করছে যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট (War-related) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম সুদে ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ দিতে। এতে সরকার যুদ্ধের প্রকৃত খরচকে আড়াল করছে, কিন্তু অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ছে। এই নিবন্ধে আমরা দেখব কীভাবে ক্রেমলিন রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে এভাবে ব্যবহার করছে, কেন এটি পুতিন (Putin) প্রশাসনের জন্য একটি নতুন অর্থনৈতিক ঝুঁকি, এবং এই ঝুঁকি আসলেই কতটা গুরুতর হতে পারে।
ক্রেগ কেনেডির (Kennedy) রিপোর্টের মূল বক্তব্য
ক্রেগ কেনেডির রিপোর্টে প্রধান দাবি হলো, রাশিয়ান সরকার (Kremlin) শুধু সরকারি বাজেট থেকে নয়, বরং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জোরপূর্বক ঋণবৃদ্ধির মাধ্যমেও ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় বহন করছে।
- ফেব্রুয়ারি ২০২২: ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের (Invasion) দুদিন পর, একটি আইন জারি হয় যাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ শর্তে (Preferential Terms) “যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট” কোম্পানিগুলোকে বড় অঙ্কের ঋণ দিতে বাধ্য করা হয়। এই শর্তগুলো সরকার নির্ধারণ করে দেয়।
- এতে ফল কী হয়েছে: ২০২২ সালের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, রাশিয়ায় কর্পোরেট ঋণ (Corporate Lending) প্রায় ৫০% বেড়ে গেছে, পরিমাণে প্রায় ৪১৫ বিলিয়ন ডলার। তুলনামূলকভাবে এটি রাশিয়ার মোট জিডিপির প্রায় ২০%-এর সমান। কেনেডি বলেছেন, এই ঋণের ৭০%-এরও বেশি যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট শিল্প—যেমন অস্ত্র উৎপাদন (Arms Manufacturing), ধাতুশিল্প (Metallurgy) ইত্যাদির পেছনে গেছে।
যেহেতু সরকার ব্যাংকগুলোকে এই ঋণ দিতে বাধ্য করেছে, স্বাভাবিকভাবেই অনেক ঋণই খুব ঝুঁকিপূর্ণ (Risky) হবে। সাধারণ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো এই সব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে আগ্রহী হতো না, কারণ সেগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল বা অনিশ্চিত। তাছাড়া, এ ঋণের সুদের হারও (Interest Rate) কম রাখা হয়েছে (সরকারি নির্দেশে), যা ব্যাংকের জন্য লাভজনক নয়।
যুদ্ধের প্রকৃত খরচ আড়াল?: রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বলছে যে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৮%-এর মতো। যেকোনো চলমান যুদ্ধের জন্য (Full on War) এটা যথেষ্ট কম বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। কেনেডি বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনীর (Defence) সরাসরি বাজেট ছাড়াও যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে জোরপূর্বক কম সুদে ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধের বড় অংশের অর্থায়ন করা হচ্ছে, যা সরকারি বাজেটে সরাসরি প্রতিফলিত হচ্ছে না। ফলে ক্রেমলিন মুদ্রণ (Printing) ছাড়াই অর্থের জোগান পাচ্ছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকিং খাত (Banking Sector) এর উপর মারাত্মক চাপ তৈরি হচ্ছে।
উচ্চ সুদের হার ও মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে অস্থিরতা
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Russian Central Bank) মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি ঠেকাতে ইতোমধ্যে সুদের হার ৭.৫% থেকে বাড়িয়ে ২১%-এর মতো উচ্চ হারে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে (US, Europe) যেখানে সুদের হার প্রায় ৫%, সেখানে রাশিয়ায় ২১% সত্যিই খুবই উচ্চহার। তবু মুদ্রাস্ফীতি কমছে না; বরং ডিসেম্বরের হিসেবে ৯.৫%-এ পৌঁছেছে, এবং রুবলের মানও পড়ে গেছে।
ক্রেগ কেনেডির যুক্তি হলো, এত উচ্চ সুদের হার সাধারণ মানুষের ঋণ বা ভোক্তা খরচে (Household Borrowing) কিছুটা প্রভাব ফেললেও, কর্পোরেট সংস্থাগুলো (Corporate Borrowing)—বিশেষ করে যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে—ঋণ নেওয়া অব্যাহত রয়েছে। কারণ সরকার ব্যাংকগুলোকে “সুবিধাজনক” (Favorable) শর্তে এসব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিতে বাধ্য করছে। ফলে অর্থের প্রবাহ (Money Supply) বাড়ছে, আর সেটাই মূল্যস্ফীতিকে চাঙ্গা রাখছে।
পুতিনের উদ্বেগ: ব্যাংক খাত কি ধসে পড়বে?
এখানে বিশ্লেষকরা মোটামুটি দুইভাবে বিষয়টি দেখছেন –
১. কেনেডির দৃষ্টিকোণ: তীব্র সঙ্কটের ঝুঁকি: কেনেডি মনে করেন, এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের পাহাড় রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে (Russian Banks) বিরাট বিপদে ফেলতে পারে। যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বড় একটি অংশ আগের মতোই আর্থিকভাবে দুর্বল, তাই তাদের অনেকেই আদতে ঋণ ফেরত দিতে পারবে না। এ অবস্থায়:
- যদি বিপুলসংখ্যক কোম্পানি ঋণখেলাপি (Default) হয়ে যায়, ব্যাংকগুলো বড় লোকসানের সম্মুখীন হবে। এতে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া (Bankrupt) হয়ে যেতে পারে।
- সাধারণ আমানতকারী (Depositors) এটা বুঝতে পারলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার (Bank Runs) হিড়িক পড়তে পারে। এতে পুরো ব্যাংক খাতেই হঠাৎ আস্থা সংকট (Confidence Crisis) দেখা দেবে।
কেনেডি বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি বা ধীরগতির অর্থনীতি (Attritional Economic Risk) এক জিনিস, কিন্তু ব্যাংকিং সঙ্কট (Credit Event) সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার হঠাৎ ও ব্যাপক ধসের ঝুঁকি তৈরি করে। এই ধরনের সঙ্কট অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ক্রেমলিনকে (Kremlin) অপ্রস্তুত অবস্থায় ফেলবে। এ তত্ত্ব অনুসারে, রাশিয়ার আসল অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা (Vulnerability) অনেক বেশি। পশ্চিমা বিশ্বের (West) উচিত নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরও কঠোর করা, যাতে রাশিয়ান অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়ে ইউক্রেনে আলোচনা বা সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয়।
২. বিকল্প বিশ্লেষণ: পুতিনের সঙ্কট মোকাবিলার সক্ষমতা: অপরপক্ষের মত হলো, যদিও এটি ভালো খবর নয়, তবে পুতিন প্রশাসনের জন্য তাৎক্ষণিক ব্যাপক সঙ্কটের কারণ হয়ে উঠতে পারে না। অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম টুজ (Adam Tooze)-সহ অনেকেই বলছেন, রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ক্রেমলিন বরং খুবই দক্ষতার সাথে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জবাব দিয়ে এসেছে—ন্যূনতম ক্ষতি নিয়ে টিকে আছে। তাদের হাতে এখনো মানি প্রিন্ট করার (Print Rubles) ক্ষমতা ও অন্যান্য সরঞ্জাম আছে, যা দিয়ে ব্যাংকিং খাতকে “বেইল-আউট” (Bailout) করতে পারবে।
- যদি বড় কোনো ব্যাংক বিপদে পড়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অসীম পরিমাণ রুবল ছাপিয়ে (Theoretically) ব্যাংকটির তারল্য (Liquidity) নিশ্চিত করতে পারে। আমানতকারী বা গ্রাহকদের যদি নিশ্চয়তা দেওয়া যায় যে সরকার যেকোনো মূল্যে ব্যাংকটিকে টিকিয়ে রাখবে, তাহলে ব্যাংক রান বড় আকার ধারণ করবে না।
- এর ফলে ইনফ্লেশন (Inflation) আরও বেড়ে যেতে পারে, কারণ অর্থ সরবরাহ (Money Supply) বৃদ্ধি পায়। কিন্তু উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি রাশিয়ার জন্য “মরণঘাতী” সঙ্কট নয়; বরং কিছুটা অস্বস্তিকর মাত্র।
- তাছাড়া রাশিয়ান অর্থনীতি এখন আন্তর্জাতিকভাবে অনেকটা বিচ্ছিন্ন (Closed Economy) হয়ে গেছে নিষেধাজ্ঞার কারণে। বড় কোনো পুঁজি উড়ে যাওয়া (Capital Flight) বা বিদেশে অর্থপাচার (নতুন করে) হওয়ার সুযোগ কমে গেছে। তাই সার্বিকভাবে রাশিয়ান অর্থনীতি বাইরে থেকে প্রবল ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ মেনে নিয়েও পুতিন প্রশাসন ধীরে ধীরে অর্থনীতিকে ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করতে পারবে। বড় কোনো আর্থিক ধস (Financial Crisis) না ঘটলে, এটি অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বা ব্যয়বৃদ্ধির আরেকটি ধীরগতির সমস্যা হিসেবেই রয়ে যাবে।
যুদ্ধ সম্পর্কিত ব্যাংকঋণ: দ্বৈত ফলাফল ও ভবিষ্যত অনুমান
- খারাপ দিক: ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ অনুৎপাদনশীল ঋণ (Non-performing Loans) নিয়ে বসে আছে। রাশিয়ান অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষেত্রেও (শিল্প, রপ্তানি) নানা বাধা, নিষেধাজ্ঞা আছে। ফলে ভবিষ্যতে এসব ঋণের অনেকটাই ফেরত আসবে না, বা আসলেও আংশিক। এটি ব্যাংক খাতে আস্থা সংকট তৈরি করতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়াতে থাকবে।
- সম্ভাব্য প্রতিকার: রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ব্যাংকিং সঙ্কট এড়াতে বিশাল অঙ্কের রুবল ছাপে (Print Rubles), তাহলে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেতে পারে। একে কমিয়ে আনার জন্য সরকার পরে ভর্তুকি ছাড় বা অন্য খাত থেকে অর্থ সরিয়ে নিতে পারে। এভাবে দফায় দফায় রাশিয়ান অর্থনীতি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির এক সংকর দশায় পড়ে থাকবে। যাকে অনেকে “স্ট্যাগফ্লেশন” (Stagflation) হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন।
যারা মনে করেন এটাই রাশিয়াকে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটে ফেলতে যথেষ্ট, তারা জানিয়েছেন, এরকম অনিয়মিত “ক্রেডিট ইভেন্ট” (Credit Event) হঠাৎ ফাটল ধরাতে পারে। আবার অন্যরা বলছেন, পুতিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই “চাপা ক্ষত” সামলে চলেছে, কাজেই এখানে তাৎক্ষণিক ধস নাও হতে পারে।
কীভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) এতে ভূমিকা রাখতে পারে?
নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার হলে রাশিয়ার ব্যাংক ও কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক আর্থিক বাজার থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এর ফলে:
- বিদেশি মুদ্রায় (Foreign Currency) ঋণ সংগ্রহ করা কঠিন: রাশিয়ান সংস্থাগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে অভ্যন্তরীণভাবে (Domestic) ঋণ নিতে হবে, যার সুদের হার অনেক বেশি হতে পারে অথবা সরকারী হস্তক্ষেপে কম সুদে পেলেও সেটি ব্যাংককে আরো ঝুঁকিতে ফেলবে।
- অর্থপ্রবাহের (Capital Flow) ঘাটতি: যদি আন্তর্জাতিক পুঁজি রাশিয়া থেকে সরে যায় বা নতুন করে বিনিয়োগ না আসে, অর্থনীতির সম্প্রসারণ কঠিন হয়ে পড়বে।
- সরকারি ভর্তুকি বা আর্থিক সহায়তা: অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি পূরণে সরকারকে (বা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে) অনবরত ভর্তুকি দিতে হতে পারে, যা সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন করবে।
এ থেকে বোঝা যায়, নিষেধাজ্ঞা বাড়লে ব্যাংক খাতের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাবে। তবে আবারও, কেউ কেউ বলছে যে রাশিয়া ইতিমধ্যেই সেসব নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে “বন্ধ অর্থনীতি” (Closed Economy)-র দিকে এগিয়েছে, যেখানে অভ্যন্তরীণ যোগান ও চাহিদার মধ্যেই তারা টিকে থাকার চেষ্টা করবে।
রাশিয়ান অর্থনীতির বড় লুকানো সমস্যা, নাকি সামলানো সম্ভব “প্রান্তিক” ঝুঁকি?
নীচে দুটো ব্যাখ্যা পুনরায় তুলে ধরা যাক –
- “ব্যাংকিং ধসের” আলমত:
- ব্যাঙ্কগুলো মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ঋণ দিচ্ছে, খেলাপি বাড়লে পুতিন প্রশাসনকে বড় মাপের ব্যাংক বেইল-আউট বা জাতীয়করণের (Nationalization) পথে যেতে হবে।
- অত্যধিক রুবল ছাপানো (Money Printing) মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় আরও চাপে পড়বে।
- দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কমে যাবে, অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা বাড়লে সরকারি সম্প্রীতি ক্ষয় হতে পারে—যা পুতিন প্রশাসনের স্থিতিশীলতা হুমকিতে ফেলতে পারে।
- “নিয়ন্ত্রণযোগ্য চাপ”:
- রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক দক্ষতার সাথে আর্থিক পরিস্থিতি সামলানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে। প্রয়োজনে আরও মুদ্রা ছাপিয়ে কিংবা সরাসরি আর্থিক নিয়ন্ত্রণ (Capital Control) দিয়ে দেশীয় বাজার স্থিতিশীল রাখবে।
- ব্যাংকিং সঙ্কট বড় আকারে দেখা দিলে তাৎক্ষণিক “বেইল-আউট” করে জনগণকে আশ্বস্ত করা হবে।
- নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের আর্থিক প্রবাহ বহুলাংশে অভ্যন্তরীণ হয়ে থাকায় বাইরের “প্যানিক সেল-অফ” (Panic Sell-off) বা পুঁজি প্রত্যাহারের ঝুঁকি কম।
- মুদ্রাস্ফীতি বা নিম্ন প্রবৃদ্ধি স্বল্প-মেয়াদে নাগরিক অসন্তোষ তৈরি করতে পারে, কিন্তু পুতিন প্রশাসন এটিকে চাপিয়ে বা বিধিনিষেধ বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
উপসংহার
রাশিয়ার ব্যাংকগুলো যুদ্ধকালীন অর্থায়নের লুকানো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থায় (Financial System) বড় ধরনের ঝুঁকি জমছে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞমহল একমত। এ থেকে পুতিন প্রশাসন চূড়ান্ত বড়সড় সঙ্কটে পড়বে কি না, তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। ক্রেগ কেনেডি ও তার মতো বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে লুকানো ঋণ ও ঝুঁকি পুঞ্জীভূত হয়ে “ক্রেডিট ইভেন্ট”—অর্থাৎ আকস্মিক ব্যাংকিং সঙ্কট ঘটাতে পারে। অন্যদিকে অ্যাডাম টুজসহ আরেকদল মনে করেন, রাশিয়া “বন্ধ অর্থনীতির” (Closed Economy) পথে হেঁটে কঠোর সরকারি হস্তক্ষেপ (State Intervention) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইচ্ছেমতো মুদ্রা ছাপানোর মাধ্যমে বড়সড় বিপর্যয় এড়াতে সক্ষম হতে পারে, অন্তত স্বল্পমেয়াদে।
এমনকি যদি এটি সম্পূর্ণ ব্যাংকিং মন্দায় রূপ না নেয়, তবুও রাশিয়ার অর্থনীতিতে এটিকে একটি “স্লো বার্নিং” ধরনের সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে—উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, নিম্ন প্রবৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের অনাস্থা এবং অত্যধিক ঋণের বোঝা। আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে হয়তো চাপ বেড়ে যাবে, কিন্তু সেটি কি রাশিয়াকে এতটাই বিপর্যস্ত করবে যে তারা ইউক্রেন থেকে ফিরে আসবে? অনেকে মনে করেন, “নকআউট ব্লো” (Knockout Blow) সম্ভাবনা খুব একটা বেশি নয়। বরং এ দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক জটিলতা পুতিন প্রশাসনের জন্য গলার কাঁটা হতে পারে—যা তারা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে নানা উপায়ে।
সিদ্ধান্তত, রাশিয়া উন্মুক্ত বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে অভ্যন্তরীণ বাহনগুলো দিয়ে যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলক ঋণ দিতে বাধ্য করে আপাতভাবে সরকারি হিসাব “সুন্দর” দেখালেও, দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে দেউলিয়া ব্যাংক, বেইল-আউটের প্রয়োজন, মুদ্রাস্ফীতি আর্থিক অনিশ্চয়তার দোলাচলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অস্থিরতা বাড়তে পারে। রাশিয়া কতদিন এরকম চাপ ধরে রাখতে পারবে, সেটি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরুরি সহায়তা, পুতিনের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ভবিষ্যৎ মাত্রার ওপর। আপাতত, এটুকু পরিষ্কার যে রাশিয়ান ব্যাংক খাত যতটা স্থিতিশীল বলে উপস্থাপন করছে, বাস্তবে ততটা নয়—আর এটাই পুতিনের জন্য আরেকটি অনিশ্চয়তার কারণ।
আরও পড়ুন –
- কেন অচিরেই রাশিয়ার জ্বালানি আয়ের পতন ঘটতে পারে? (১৫ জানুয়ারি, ২০২৫)
- ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস যুগের সমাপ্তি (২ জানুয়ারি, ২০২৫)
- বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের শক্তির পরিবর্তন: যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা (৩০ নভেম্বর, ২০২৪)
- অর্থনৈতিক সংকটে রাশিয়া (১৯ নভেম্বর, ২০২৪)
রাশিয়া সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানতে যান এখানে – রাশিয়া ও ইউক্রেইন সংবাদ
তথ্যসূত্র
1 – https://www.osw.waw.pl/en/publikacje/osw-commentary/2024-11-22/russias-budget-2025-war-above-all
2 – https://navigatingrussia.substack.com/p/russias-hidden-war-debt
3 – https://tradingeconomics.com/russia/inflation-cpi
4 – https://adamtooze.substack.com/p/chartbook-345-a-house-of-cards-russias
Leave a Reply