যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধ কি চীনের অর্থনীতির উপকারে আসতে পারে?

ভূমিকা

২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি, ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের (United States) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চীনের (China) প্রতি তার কঠোর অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়েছে। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি চীনা পণ্যের ওপর বড় মাত্রার শুল্ক বা ট্যারিফ (Tariffs) আরোপ করতে চান—যা একদিকে আমেরিকান শিল্পকে (American Industry) সুরক্ষা দেবে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) কমাবে, এবং একইসঙ্গে চীনের দুর্বল অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে।

তবে প্রচলিত ধারণার বিপরীতে, কেউ কেউ মনে করেন যে এই বাণিজ্য যুদ্ধ (Trade War) দীর্ঘমেয়াদে চীনের অর্থনীতির জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ এর ফলে চীনকে (CCP – Chinese Communist Party) অবশেষে তাদের রপ্তানিমুখী অর্থনৈতিক কাঠামো থেকে সরে এসে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বা ভোগে (Domestic Demand / Consumption) বেশি গুরুত্ব দিতে বাধ্য করবে। অনেকের ভাষায়, এই রপ্তানিমুখী নীতিই (Bias towards exports) চীনের নানামুখী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মূল উৎস।

এই নিবন্ধে আমরা চীনের অর্থনীতির মূল সমস্যা, আসন্ন বাণিজ্য যুদ্ধে এর সম্ভাব্য প্রভাব, এবং কেন কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে এই পরিস্থিতি হয়তো চীনের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে—তা বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করব।

চীনের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত সমস্যা

চীনের অর্থনীতির বর্তমান সঙ্কটের গোড়ায় কী আছে, তা বোঝার জন্য প্রথমে জিডিপি (GDP) গঠনের মৌলিক কাঠামো দেখা যেতে পারে। অর্থনৈতিক তত্ত্ব মতে, একটি দেশের মোট জিডিপি সাধারণত চারটি অংশে বিভক্ত:

  1. সরকারি ব্যয় (Government Spending)
  2. ব্যবসায়িক বিনিয়োগ (Business Investment)
  3. পরিবার/ব্যক্তি খাতের ভোগব্যয় (Household Consumption)
  4. রপ্তানি-আমদানি (Exports – Imports) এর পার্থক্য

অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, চীনের সমস্যার শেকড় “দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা” বা অপর্যাপ্ত ভোগব্যয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে। সেখানে গড়পড়তা পরিবারভিত্তিক ভোগব্যয় চীনের মোট জিডিপির তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কম—প্রায় ৪০% এর আশেপাশে। ফলে, সাধারণ চীনা নাগরিকেরা নিজেরা যথেষ্ট পণ্য ও সেবা কিনে ভোগ করে না; বরং চীনা অর্থনীতি মূলত বিদেশে রপ্তানির (Exports) ওপর নির্ভরশীল।

অতিরিক্ত রপ্তানি ও বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Trade Surplus): যেহেতু অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল, চীনের শ্রমিকেরা তাদের উৎপাদনের তুলনায় কম পণ্যসামগ্রী কিনতে পারে। এতে করে চীন একধরনের উদ্বৃত্ত (Surplus) পণ্য তৈরি করে, যা তারা বিশ্বের অন্যত্র রপ্তানি করে। এর ফলশ্রুতিতে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Trade Surplus) ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ (US) বিভিন্ন দেশে।

ভোগব্যয় দুর্বল হলে কী সমস্যা হয়:

  • ১. মুদ্রাস্ফীতি না হয়ে বরং মূল্যপতন বা স্বল্পমূল্য প্রবণতা (Deflationary Crisis): সাধারণ ভোক্তারা (Consumers) যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য না কেনে, তবে চাহিদা কমে যায়। এতে পণ্যের দাম বাড়ার পরিবর্তে কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা উৎপাদকদের জন্য ক্ষতিকর।
  • ২. সম্পত্তি বা রিয়েল এস্টেট খাতের সঙ্কট (Property Crisis): অনেক চীনা বিনিয়োগকারী ও ধনী ব্যক্তি উচ্চ হারে সঞ্চয় (Savings) করে। চীনে বিনিয়োগের সুযোগ যদি কম থাকে (যেহেতু অভ্যন্তরীণ ভোগ চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম), তখন তারা এই অর্থ সম্পত্তি খাতে (Property) ব্যয় করে ফেলে, যেমন—অপ্রয়োজনীয় ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট, নানান পরিকাঠামো ইত্যাদি। এতে একধরনের সম্পত্তি-বুদবুদ বা প্রোপার্টি বাবল (Property Bubble) তৈরি হয়, যার ঝুঁকি মারাত্মক।
  • ৩. স্থানীয় সরকারের ঋণের বোঝা (Local Government Debt): স্থানীয় সরকারগুলো (Local Governments) বিশাল সব অবকাঠামো প্রকল্পে (Infrastructure Projects) বিনিয়োগ করে—যেমন উচ্চগতির রেল (High-Speed Rail), বড় সেতু (Massive Bridges), ইত্যাদি। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যথেষ্ট না থাকলে এই প্রকল্পগুলোয় প্রত্যাশিত কর রাজস্ব (Tax Receipts) পাওয়া যায় না। ফলে বিশাল ঋণ (Debt) জমে।

ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (IMF) সহ পশ্চিমা অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই চীনকে পরামর্শ দিচ্ছেন যে তারা যেন অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় (Consumption) বৃদ্ধি করে অর্থনীতিকে পুনর্ব্যালান্স (Rebalance) করে। এ জন্য ঘরোয়া পরিবার ও ভোক্তাদের আরও উৎসাহমূলক প্রণোদনা দিতে হবে। যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন কিছু উদ্দীপনা প্যাকেজ (Stimulus Packages) চালু করেছে, কিন্তু সেগুলো এখনো পর্যাপ্ত নয়। ২০২৪ সালে চীন আবারও প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের রপ্তানি উদ্বৃত্ত অর্জন করেছে—যা প্রতীয়মান করে অর্থনীতি এখনো অতি রপ্তানি-নির্ভর।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্ক ও ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি

চীন যে বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে, এর বড় অংশ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) বিপুল—অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র আমদানি বেশি করে, রপ্তানি তুলনামূলক কম।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি (Bilateral Trade Deficit): সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে প্রায় ২৭০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করে—নিজের রপ্তানির তুলনায়। যদিও অর্থনীতিবিদরা দ্বিপাক্ষিক ঘাটতির চেয়ে সামগ্রিক বা সার্বিক ঘাটতি (Overall Trade Balance) বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন (কারণ পণ্য অনেক সময় তৃতীয় কোনো দেশের (Third Country) মাধ্যমে ঘুরপথে প্রবেশ করে) তবুও যে হিসাবেই দেখি না কেন, স্পষ্ট যে চীন রপ্তানিতে এগিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র বড় আমদানিকারক।

ট্রাম্পের অবস্থান: ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এই চীনা পণ্য আমদানি মার্কিন উৎপাদনখাতকে (American Manufacturers) ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি মনে করেন, “অন্যায়” (Unfair) চীনা প্রতিযোগিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে “ডিইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন” (Deindustrialization) বা শিল্প-বিনাশ বেড়েছে। এজন্যই ট্রাম্প বড় ধরনের শুল্ক বসানোর কথা বলেছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের প্রবেশ আরও কঠিন হয়। ফলে, আমেরিকান কোম্পানিগুলো স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারবে।

বাণিজ্য যুদ্ধ (Trade War): অস্থায়ী আঘাত নাকি দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক?

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বাণিজ্য যুদ্ধ স্বল্পমেয়াদে চীনের জন্য সমস্যা তৈরি করবে—এটি প্রায় সকলেই একমত। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল নিয়ে মতভেদ আছে। অন্তত একদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি আসলে চীনের অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় বাড়ানোর একটি অনুঘটক (Catalyst) হতে পারে। কীভাবে?

শুল্ক বা ট্যারিফ বাড়লে চীনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়বে। তখন চীনা উৎপাদকেরা (Chinese Producers) অনেক পণ্য মজুদ হয়ে যেতে দেখে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে (Domestic Market) ক্রেতা খুঁজতে বাধ্য হবে। এটা করতে গেলে চীনকে (CCP) অভ্যন্তরীণ ভোক্তাদের হাতে আরও ক্রয়ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। ফলে, যা এতদিন আইএমএফ (IMF) এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন—অর্থনীতিকে ভোগব্যয়মুখী করার প্রক্রিয়া—তা দ্রুততর হবে।

উদাহরণ ও বিশ্লেষক মতামত:

  • এশিয়ার বৃহত্তম অ্যাসেট ম্যানেজারদের (Asset Managers) একজন ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ব্লুমবার্গকে (Bloomberg) দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের জন্য খারাপ নাও হতে পারে।”
  • গোল্ডম্যান স্যাকস (Goldman Sachs) ২০২৪ সালের নভেম্বরে একটি ইনভেস্টর নোট (Investor’s Note) প্রকাশ করে জানায়, “যদি চীনা পণ্যের ওপর উচ্চহারে মার্কিন শুল্ক আরোপ হয়, তবে এটি চীনের অর্থনীতিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদার দিকে আরও জোর দিতে বাধ্য করবে।”

এসব বিশ্লেষণের সারকথা—যদি যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে প্রবেশে বাধা তৈরি হয়, চীন তার রপ্তানি উদ্বৃত্তের বিকল্প ব্যবহার নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে, যার মধ্যে রয়েছে ঘরোয়া খরচ বাড়ানো।

মূল প্রশ্ন: আসলে কে দায়ী? চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্র?

এটি আসলে অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি “গ্লোবাল ট্রেড ইমব্যালান্স” (Global Trade Imbalance)-এর শিকড় কোথায় মনে করেন। বিভিন্ন মতামত রয়েছে:

  1. যুক্তরাষ্ট্রের অতিচাহিদা তত্ত্ব (US Overconsumption Theory): কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা অতিরিক্ত ঋণ (Debt) নিয়ে পণ্য কেনেন, যা বিদেশী সরবরাহকে (যেমন চীনা পণ্য) বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের সীমাহীন আমদানি চাহিদাই মূল সমস্যা। শুল্ক বসিয়ে বা আমদানি সীমিত করে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের রপ্তানির তুলনায় আমদানি কমায়, তবে চীনের উদ্বৃত্ত পণ্যের বাজার তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অবস্থায় চীনা উৎপাদকরা বাধ্য হবে দেশীয় ভোক্তাদের প্রতি নজর দিতে। এতে চীনা ভোক্তাদের হাতে আরও ক্রয়ক্ষমতা যেতে পারে, পণ্যমূল্য কমে তাদের জন্য স্বস্তি তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতা কিছুটা কমতে পারে, কারণ উভয় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি-উদ্বৃত্তের অস্বাভাবিকতম কাঠামো হয়তো খানিকটা স্বাভাবিক হবে।
  2. চীনা মজুরি দমনের তত্ত্ব (CCP Suppressing Wages): অন্যদিকে, আরেকদল বলছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (CCP) সাধারণ শ্রমিকের (Ordinary Chinese Workers) মজুরি (Wages) কমিয়ে রপ্তানি খাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করে। এভাবে ভূরাজনৈতিক (Geopolitical) কারণে তারা রপ্তানি-নির্ভর বৃদ্ধি ধরে রাখে। যতক্ষণ না স্বল্প মজুরির শ্রমিকেরা অভ্যন্তরীণভাবে ভোগ বা খরচ করার সক্ষমতা অর্জন করেন, চীনে অর্থনীতির পুনরায় ব্যালেন্স খুব একটা হবে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের আমদানি কমিয়ে দেয়, চীন হয়তো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (Southeast Asia) বা অন্যান্য উদীয়মান বাজারে (Emerging Markets) নতুন ক্রেতা খুঁজে নেবে। অথবা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে (যেমন মেক্সিকো – Mexico) সেই পণ্য আবারও মার্কিন বাজারে প্রবেশ করাতে পারে।

পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা: ২০০৮ সালের পরবর্তী পরিস্থিতি: অনেকেই যুক্তি দেন, ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার (Financial Crisis) পরে চীনের রপ্তানি সাময়িকভাবে কমেছিল—বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস পাওয়ায়। তখন বলা হয়েছিল, চীন অভ্যন্তরীণভাবে ভোগ বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সাময়িক ধাক্কা কাটিয়ে চীনের রপ্তানি আবারও বেড়ে যায় এবং বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আগের মতোই বাড়তে থাকে। এই ইতিহাস দেখে কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ যদি স্বল্পমেয়াদি ধাক্কা দেয়ও, পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা পণ্যের চাহিদা পুনরায় বাড়লে চীন আবারও রপ্তানিমুখী প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যেতে পারে।

ভোক্তা আস্থার (Consumer Confidence) ব্যাপার: বাণিজ্য যুদ্ধের অস্থিরতা চীনের ভোক্তা আস্থা (Consumer Confidence) কমিয়ে দেবে কি না—এটিও বড় প্রশ্ন। যদি মানুষ বুঝতে পারে যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে, তারা খরচ আরো কমিয়ে দেবে, ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সুতরাং স্বল্পমেয়াদে এটি বরং অর্থনীতিকে আরও মন্থর করে দিতে পারে।

সম্ভাব্য পরিণতি ও একটি নতুন আর্থিক ব্যবস্থার প্রয়োজন

সব মিলিয়ে, আসন্ন বাণিজ্য যুদ্ধ কীভাবে এগোবে তা নিয়ে স্পষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন। তবে একটি বড় বিষয় স্পষ্ট—বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা (Global Trading System) দিন দিন গভীরভাবে “ভারসাম্যহীন” (Unbalanced) হয়ে উঠছে এবং এটিই দু’টি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার (Geopolitical Tension) অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনেকে মনে করেন, একটি টেকসই সমাধান পেতে হলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র—উভয়কেই নতুন কোনো আর্থিক বা মুদ্রানীতি ভিত্তিক চুক্তিতে (Monetary Order) একমত হতে হবে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত ভোগপ্রবণতা ও চীনের অতি রপ্তানি নির্ভরতা উভয়ই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। এখনই এটি অবাস্তব মনে হতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে সংঘাত এড়াতে হয়তো এধরনের ঐকমত্য প্রয়োজন পড়বে।

উপসংহার

  • চীনের অর্থনৈতিক সঙ্কট মূলত দেশটির অভ্যন্তরীণ দুর্বল চাহিদা ও রপ্তানিমুখী কাঠামো থেকে উদ্ভূত।
  • ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ স্বল্পমেয়াদে চীনের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে, কিন্তু কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি অভ্যন্তরীণ ভোগ-বৃদ্ধির পথে চীনকে অনিবার্যভাবে এগিয়ে দেবে।
  • প্রতিকূল মত বলছে, চীনের নিম্ন মজুরি ব্যবস্থা ও CCP-র ভূরাজনৈতিক লক্ষ্য এতো সহজে পাল্টাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে গেলে, অন্য বাজার বা বিকল্প রপ্তানি-পথ অনুসন্ধান করবে চীন।
  • ইতিহাস বলে, ২০০৮ সালের মন্দার পরও চীনের রপ্তানি উদ্বৃত্ত ফের বেড়ে গিয়েছিল, ফলে সাময়িক ধাক্কা দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন আনে না।
  • তবু, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে স্থায়ী উত্তেজনা নিরসনে হয়তো উভয় পক্ষকে ভবিষ্যতে নতুন কোনও “মুদ্রাব্যবস্থা” বা অর্থনৈতিক চুক্তিতে (Monetary Order) পৌঁছতে হবে।

সবচেয়ে বড় কথা, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাণিজ্য সম্পর্ক আগামী বছরগুলোতে বৈশ্বিক অর্থনীতির (Global Economy) অভিমুখ অনেকটাই নির্ধারণ করবে। “ট্যারিফ ও পাল্টা ট্যারিফের” এই খেলা শেষ পর্যন্ত চীনের অভ্যন্তরীণ কাঠামোকে বদলে দিতে পারে, আবার হয়তো সাময়িক বিপত্তি শেষে একই ধরনের রপ্তানি-নির্ভর ব্যবস্থা বহাল থাকতে পারে। চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে—কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এটাই আগামী সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক গল্প হয়ে উঠবে।

চীন সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ পড়তে চাইলে এখানে যান – চীন সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ

তথ্যসূত্র

1 – https://jobenomics.com/consumption-based-economy/
2 – https://www.ft.com/content/f71a3570-020f-4c43-a0ab-7143f5f9fd98
3 – https://www.census.gov/foreign-trade/balance/c5700.html
4 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-10-30/pag-co-founder-sees-trade-war-benefiting-china-in-the-long-run
5 – https://www.nytimes.com/2025/01/12/business/china-trade-surplus.html

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.