ট্রাম্প কি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারেন?

ভূমিকা

২০২৫ সালের ২২ জানুয়ারি, যুক্তরাষ্ট্রের (United States) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিকেই বেশ কিছু আলোচিত নির্বাহী আদেশ (Executive Orders) স্বাক্ষর করে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন। প্রথম দিনেই তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার নির্বাহী আদেশে সই করেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি (Paris Climate Agreement) থেকে আবারও বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন, এবং অতিরিক্তভাবে মেক্সিকো উপসাগর (Gulf of Mexico)-এর নাম পরিবর্তন করে ‘গাল্ফ অব আমেরিকা’ (Gulf of America) রাখার চেষ্টা করেন। তবে সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে তার জন্মগত নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) বাতিলের উদ্যোগ—বিশেষ করে অনথিভুক্ত (Undocumented) ও সাময়িক (Temporary) অভিবাসীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে। এটি প্রায় ১৫০ বছর ধরে চলে আসা ‘জুস সোলি’ (Jus Soli) দ্বারা নাগরিকত্ব প্রাপ্তির ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা।

এ নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে দেখব কেন ট্রাম্প জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল করতে চাইছেন, এটি কীভাবে তার সামগ্রিক অভিবাসন নীতির (Immigration Policy) অংশ, এবং আদালতে (Courts) এর পরিণতি কী হতে পারে।

জন্মগত নাগরিকত্ব: ‘জুস সোলি’ (Jus Soli) ও ‘জুস স্যাংগুইনিস’ (Jus Sanguinis)

সংজ্ঞা: প্রথমেই জেনে রাখা দরকার, জন্মগত নাগরিকত্ব মূলত দুই প্রকারের হতে পারে:

  1. জুস স্যাংগুইনিস (Jus Sanguinis): অর্থাৎ “রক্তের ভিত্তিতে অধিকার (Right by blood)”, যেখানে পিতা-মাতা নাগরিক হলে তাদের সন্তানও নাগরিকত্ব পায়।
  2. জুস সোলি (Jus Soli): অর্থাৎ “মাটির ভিত্তিতে অধিকার (Right by soil)”, যেখানে কোনো ব্যক্তি একটি দেশের ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করলেই নাগরিকত্ব লাভ করে।

আমেরিকার (American) প্রেক্ষাপটে, জন্মগত নাগরিকত্ব নিয়ে আলোচনা সাধারণত ‘জুস সোলি’ নিয়েই হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের (Constitution) ১৪শ সংশোধনী (14th Amendment) অনুসারে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে—আমেরিকান সামোয়া (American Samoa) ব্যতীত—যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলেই শিশু নাগরিকত্ব পেয়ে থাকে।

১৪শ সংশোধনী ও ‘সিটিজেনশিপ ক্লজ’ (Citizenship Clause): ১৪শ সংশোধনী ১৮৬৮ সালের জুলাই মাসে গৃহীত হয়। এর “সিটিজেনশিপ ক্লজ” (Citizenship Clause) অংশে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ রয়েছে: “সব ব্যক্তি, যারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে (born) বা স্বাভাবিকীকরণের (naturalized) মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এখতিয়ারের (jurisdiction) অধীন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং তারা যে অঙ্গরাজ্যে (State) বাস করে তারও নাগরিক।”

এই সংশোধনী প্রায়শই বেড়ে ওঠার পেছনে কারণ ছিল কুখ্যাত ড্রেড স্কট রায় (Dred Scott ruling), যেখানে সর্বোপরি দাসদের (Slaves) বংশধরদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছিল। ১৪শ সংশোধনী সেই রায়কে কার্যত বাতিল করে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মাত্রই অনথিভুক্ত অভিবাসীরা (Undocumented Immigrants) যুক্তরাষ্ট্রের এখতিয়ারের অধীনে থাকেন—এমনটাই প্রচলিত ব্যাখ্যা। ফলে তাদের সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পেয়ে যায়। আইনি বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, ১৪শ সংশোধনী অনুযায়ী এটাই স্বাভাবিক ব্যাখ্যা।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট: বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের নাগরিকত্ব অর্জনে এখন জুস সোলি ও জুস স্যাংগুইনিসের একটি মিশ্র পদ্ধতি মেনে চলে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো নিঃশর্ত (Unconditional) জন্মগত নাগরিকত্ব অনেক দেশে নেই। বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশে (European Countries), উদাহরণস্বরূপ, অন্তত একজন পিতা-মাতা আগে থেকেই নাগরিক না হলে জন্মগতভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না। তাই এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা আলাদা—এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই মূলত ট্রাম্পের উদ্যোগ।

জন্মগত নাগরিকত্বের বিরোধিতার পেছনের যুক্তি

গত কয়েক দশকে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ার সাথে সাথে জন্মগত নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়েও রাজনৈতিক বিরোধ বেড়েছে। কঠোর অভিবাসন-নীতির পক্ষের লোকেরা দাবি করে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্মগত নাগরিকত্ব ব্যবস্থা আসলে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের আকৃষ্ট করে। অনেকে এটিকে “অ্যাঙ্কর বেবি” (Anchor Baby) পরিস্থিতি বলে অভিহিত করেন—অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান জন্ম দিলে ওই পরিবার পরবর্তীতে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের পথ সহজতর করতে পারে।

অতীতের উদ্যোগ: এ নিয়ে প্রথম জোরালো উদ্যোগগুলোর একটি দেখা যায় ১৯৯০-এর দশকের গোড়ায়। ডেমোক্র্যাট সিনেটর হ্যারি রিড (Harry Reid) তৎকালীন সময়ে একটি দ্বিদলীয় প্রচেষ্টা (Bipartisan Effort) চালিয়েছিলেন, যার মাধ্যমে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব আসে। তিনি তখন বলেছিলেন, “কোনো সুস্থ-সচেতন দেশই অনথিভুক্ত অভিবাসীদের জন্য জন্মগত নাগরিকত্ব রাখবে না।” কিন্তু ধীরে ধীরে বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে; এটি রিপাবলিকানদের (Republicans) পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে সংবিধান সংশোধন (Amend the Constitution) করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। উপরন্তু, জনমত জরিপেও (Polling) দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।

  • Rasmussen-এর ২০১০ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ৫৮% আমেরিকান অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষে ছিল, এবং ৪১% ছিল বিপক্ষে।
  • কিন্তু Pew-এর ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ৩৭% জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের পক্ষে, আর ৬০% বিপক্ষে।

ট্রাম্পের অবস্থান ও পদক্ষেপ

প্রচারকাল থেকে বর্তমান: ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের (২০১৬) সময় থেকেই জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিলের কথা বলেছিলেন। ২০১৮ সালে Axios-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে, ১৪শ সংশোধনী পরিবর্তনের জন্য তিনি আসলে সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজন মনে করেন না—তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই এটি করতে পারেন বলে দাবি করেছিলেন। যদিও সেটি তখনকার মেয়াদে আর বাস্তবায়িত হয়নি, তবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প একটি নীতি গ্রহণ করেন, যার মাধ্যমে সন্দেহভাজন “বার্থ ট্যুরিজম” (Birth Tourism) ঠেকাতে গর্ভবতী নারীদের আমেরিকায় প্রবেশ কঠিন করা হয়। বাইডেন প্রশাসন (Biden Administration) ক্ষমতায় এসে সেটি বাতিল করে দেয়।

দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাহী আদেশ: এবার, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে (দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম সপ্তাহে), ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মগত নাগরিকত্ব প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে। আদেশে বলা হয়েছে:

  • যদি সন্তানের মায়ের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান “অবৈধ” (Unlawfully present) হয়, বা
  • সন্তানের বাবাও (Father) নাগরিক না হন বা আইনি স্থায়ী বাসিন্দা (Lawful Permanent Resident) না হন, কিংবা
  • মায়ের অবস্থান যদি “আইনসম্মত কিন্তু সাময়িক” (Lawful but temporary) হয়,

তবে ওই সন্তান জন্মগত নাগরিকত্ব পাবে না। এখানে “আইনসম্মত কিন্তু সাময়িক” বলতে ফি-১ (F1) স্টুডেন্ট ভিসা, এইচ১-বি (H1B) ওয়ার্ক ভিসার মতো সাময়িক (Temporary) ভিসাধারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। অর্থাৎ, মাত্র পড়াশোনা বা কাজের সুযোগ পেয়ে অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ব্যক্তিদের সন্তানরাও নাগরিকত্ব পাবে না। এটি যথেষ্ট বড় ধরনের পরিবর্তন।

একই সময়ে অন্য নির্বাহী আদেশগুলো

জন্মগত নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আদেশের পাশাপাশি ট্রাম্প আরও কয়েকটি কঠোর অভিবাসন-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন:

  1. “রিমেইন ইন মেক্সিকো” (Remain in Mexico) পলিসি পুনর্বহাল: আগের মেয়াদে আলোচিত ও বিতর্কিত ছিল এই নীতি, যাতে করে অভিবাসন-প্রত্যাশী আশ্রয়প্রার্থীদের (Asylum Seekers) প্রক্রিয়া চলাকালে মেক্সিকোতে থাকতে হয়।
  2. মেক্সিকান কার্টেলগুলিকে (Mexican Cartels) সন্ত্রাসী সংগঠন (Terror Organizations) হিসেবে ঘোষণা: এর ফলে সংশ্লিষ্টদের ওপর আইনি চাপ ও নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  3. বিদেশি নাগরিকদের (Foreign Nationals) নিরাপত্তা যাচাইকরণ (Security Screening and Vetting) কঠোর করা: যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে আরও নিবিড় পরীক্ষা ও যাচাই করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  4. সম্ভাব্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা (Travel Restrictions) বিষয়ে সুপারিশ: ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নতুন করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
  5. দক্ষিণ সীমান্তে (Southern Border) জরুরি অবস্থা (Emergency) ঘোষণা: ন্যাশনাল ইমার্জেন্সিজ অ্যাক্ট (National Emergencies Act) অনুযায়ী জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে ট্রাম্প কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সীমান্ত প্রাচীর (Border Wall) নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত তহবিল (Federal Funding) পেতে পারেন। একইসঙ্গে সামরিক বাহিনী (Military) মোতায়েনের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে (Department of Defense) প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে স্পষ্ট, ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রারম্ভে অভিবাসন ইস্যুকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং দক্ষিণ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করতে চান।

আইনি প্রতিবন্ধকতা ও সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) ভূমিকা

ট্রাম্প প্রশাসনের এতোসব উদ্যোগ চূড়ান্তভাবে কার্যকর হতে পারবে কি না, সেটি সুপ্রিম কোর্টসহ বিভিন্ন আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের জন্মগত নাগরিকত্ব সীমিত করার নির্বাহী আদেশটি চ্যালেঞ্জ হয়েছে আদালতে।

১৪শ সংশোধনীর সরাসরি বিরোধ?: সবচেয়ে বড় বিরোধের বিষয় হলো, ১৪শ সংশোধনী স্পষ্ট করে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে শিশুটি নাগরিকত্ব পায়—“বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের এখতিয়ারের (jurisdiction) অন্তর্ভুক্ত” থাকলেই। অনথিভুক্ত হলেও সেই শিশুটির মা যখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অবস্থান করছেন, তখন আইনত তিনি এখতিয়ারের বাইরে নন। কাজেই এ আদেশ ১৪শ সংশোধনীকে সরাসরি লঙ্ঘন করছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে।

‘ওয়ং কিম আর্ক বনাম যুক্তরাষ্ট্র’ (Wong Kim Ark v. United States) রায়: ১৮৯৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় হলো “ওয়ং কিম আর্ক বনাম যুক্তরাষ্ট্র (১৮৯৮)”, যেখানে আদালত জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশু, এমনকি যদি তার পিতা-মাতা অভিবাসী হন, তবুও সে জন্মগত নাগরিকত্ব পাবে। অনেকে মনে করেন, এটি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পরিপন্থী। যদিও সেখানে “লিগ্যাল ইমিগ্রান্ট” (Legal Immigrants)-এর সন্তানদের ক্ষেত্রে রায়টি প্রযোজ্য ছিল, অনথিভুক্তদের সন্তানের ক্ষেত্রে সরাসরি উল্লেখ ছিল না। তবু এই রায় সাধারণভাবে জন্মগত নাগরিকত্বের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ নজির (Precedent) হয়ে আছে।

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক সহানুভূতি: বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মেয়াদে কিছু রায়ে তার নীতির প্রতি সহানুভূতিশীল মনে হয়েছে। কাজেই ১৪শ সংশোধনী ও “ওয়ং কিম আর্ক” রায়ের আলোকেও হয়তো চূড়ান্ত রায়ে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। তবে অনেকে মনে করছেন যে একে সংবিধানের মৌলিক স্বীকৃত অধিকার হিসেবে ব্যাখ্যা করা হবে এবং ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ টিকবে না। সময়ই বলে দেবে শেষ পর্যন্ত কী ঘটে।

সম্ভাব্য পরিণতি: রাষ্ট্রহীনতার (Stateless) ঝুঁকি

যদি সত্যিই ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশ আদালতে জয়ী হয়ে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রে গত ১৫০ বছরে নাগরিকত্ব-আইনে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে বিবেচিত হবে। এর ফলে দেশে এক নতুন ধরনের রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠী (Stateless People) তৈরি হতে পারে। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ঘরে কয়েক লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে—যদি তারা আমেরিকান নাগরিকত্ব হারায় এবং তাদের পিতা-মাতার দেশও তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়, তবে তারা হবে রাষ্ট্রহীন। এমন ঘটনা সমাজে, অর্থনীতিতে ও নৈতিকভাবে গুরুতর সংকটের জন্ম দিতে পারে।

উপসংহার

সব বিবেচনায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই অভিবাসন কঠোরকরণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রেখেছেন। জন্মগত নাগরিকত্বের (Birthright Citizenship) মতো দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ, সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি, মেক্সিকোতে আশ্রয়প্রার্থীদের অপেক্ষা করানোর পলিসি পুনর্বহাল—সব মিলিয়ে তার প্রশাসন স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছে যে তারা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ব্যাপারে শূন্য সহনশীলতা (Zero Tolerance) নীতি বজায় রাখবে।

তবে আইনি বাধা অতিক্রম করা যে সহজ হবে না, তা-ও স্পষ্ট। ১৪শ সংশোধনী এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক সুপ্রিম কোর্ট রায় ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বাতিল করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। যদি আদালত ট্রাম্পের পক্ষে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আইনে (Citizenship Laws) যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটবে। অন্যদিকে, আদালত যদি আদেশটি বাতিল করে, তবে ট্রাম্পের এই অভিবাসন-নীতি আবারও স্থগিত হয়ে যাবে। যেভাবেই হোক, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন-ব্যবস্থায় গুরুতর বিতর্ক ও আইনি প্রক্রিয়া সামনে যে জোরালো হবে, তা বলাই বাহুল্য।

অবশেষে, জন্মগত নাগরিকত্বের ভবিষ্যৎ প্রশ্নটি শুধু আইনি বা সাংবিধানিক বিষয়ই নয়; এটি যুক্তরাষ্ট্রের পরিচয়, মূল্যবোধ ও অভিবাসন-ঐতিহ্যের (Immigration Heritage) সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাই এখানকার আদালত, কংগ্রেস (Congress), প্রেসিডেন্ট—সকলের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে লাখ লাখ মানুষের নাগরিকত্বের অধিকার, এবং সে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক “অভিবাসীর দেশ” পরিচয়ের ভবিষ্যৎ।

যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.