কেন জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে?

ভূমিকা

জাপান (Japan) দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব মঞ্চে (Global Stage) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি (Fourth Largest Economy) এবং সেখানে বৈদ্যুতিক সামগ্রী থেকে শুরু করে গাড়ি প্রস্তুতকারী বড় বড় শিল্পকারখানা (Major Manufacturing Industries) রয়েছে। জি৭ (G7) সদস্যদের মধ্যে এটি একমাত্র দেশ, যা ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত নয়। এ ছাড়া এটি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে (Asia Pacific Region) যুক্তরাষ্ট্রের (US) জোটের (Alliance) অন্যতম প্রধান অংশীদার এবং ন্যাটো-তে (NATO) সদস্য না হয়েও “মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই” (Major Non NATO Ally) মর্যাদা পেয়েছে।

গত কয়েক বছরে জাপানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (Close Relations) বিভিন্ন দিক থেকে আরও দৃঢ় হয়েছে। তবে এর মধ্যেই কিছু সংকেত দেখা গেছে যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন ও মতবিরোধ (Strain & Divergence) বাড়ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সম্ভাবনা আসায় এই অমিলগুলো আরও গভীর হতে পারে। এই লেখায় আমরা দেখব কীভাবে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন এক বিশেষ কঠিন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, কেন এটি আরও খারাপ হতে পারে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব কী রূপ নিতে পারে।

জাপানের পররাষ্ট্রনীতির ভিন্নতা: গাজা সংকটের উদাহরণ

প্রথমেই বলা দরকার, জাপানের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হয় না। সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসাবে নেওয়া যেতে পারে ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের (Hamas) ইসরায়েলে (Israel) আক্রমণ ও পরবর্তীতে গাজায় (Gaza) ইসরায়েলি অভিযানের পর জাপানের প্রতিক্রিয়া (Response)। অনেকেই বলছেন, জাপান খুব সতর্ক (Cautious) ছিল।

  • শুরুতে জাপানের অবস্থান: হামাসের আক্রমণের নিন্দা করলেও জাপান বিবৃতিতে “সন্ত্রাসবাদ (Terrorism)” শব্দটি ব্যবহার করেনি বা ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের (Right to Self-Defence) পক্ষে স্পষ্টভাবে কথা বলেনি। পরে ঠিকই জাপানের বিবৃতিতে এ শব্দগুলো যুক্ত হয়, কিন্তু জি৭-এর (G7) বাকি মিত্রদের তুলনায় একটু দেরি হয়।
  • যৌথ বিবৃতি না দেওয়া: অক্টোবর ২০২৩-এর শেষ দিকে ছয়টি জি৭ দেশ (যাদের নাগরিক জিম্মি বা হতাহত হয়েছিল) ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকৃতি দিয়ে এক যৌথ বিবৃতি সই করে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী সেই বিবৃতিতে সই করেননি। জাপান সরকারের যুক্তি ছিল, এর নাগরিকদের ঐ ঘটনায় সরাসরি অপহরণ বা হতাহত হওয়ার তথ্য নেই।
  • যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন অবস্থান থেকে দূরত্ব: সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যমতে, জাপান গাজায় মানবিক সাহায্য (Humanitarian Pause) নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (UN Security Council) একটি খসড়া প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্র ভেটো (Veto) করে। একইভাবে এপ্রিল ২০২৪-এ ফিলিস্তিনের (Palestine) জাতিসংঘ সদস্যপদের (UN Membership) পক্ষে ভোট দিয়েও একই পরিণতি হয়।

এসব ঘটনায় এটা বোঝায় না যে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র স্থায়ী বৈরিতায় পড়েছে, কিন্তু স্পষ্ট করে যে জাপান সবসময় ওয়াশিংটনের (Washington) পথ অনুসরণ করে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটেই জাপানের নিজস্ব অবস্থান থাকে।

বন্ধুত্বে ফাটল: ইউএস স্টিল ইস্যু

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সত্যিকারের বিরোধের (Butting Heads) সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত ইউএস স্টিল (US Steel) নিয়ে চলমান বিতর্ক। সংক্ষেপে:

  • ইউএস স্টিল কোম্পানি: এটি মূলত আমেরিকারই একটি স্টিল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। জাপানের নিপ্পন স্টিল (Nippon Steel) প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে (15 billion USD) এটি অধিগ্রহণের (Acquisition) চেষ্টা করছিল।
  • বাইডেনের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ (National Security Concerns): ২০২৫ সালের জানুয়ারি শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) এই অধিগ্রহণ ঠেকিয়ে দেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্টিলকে অভ্যন্তরীণভাবে (Domestically Owned) রাখার প্রতিশ্রুতি ও জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তিনি এই ‘টেকওভার বিড’ (Takeover Bid) আটকে দেন।
  • আইনি প্রতিক্রিয়া: নিপ্পন স্টিল ও ইউএস স্টিল উভয়েই এখন বাইডেনের সিদ্ধান্তকে আইনি চ্যালেঞ্জ করছে (Legal Challenges)।
  • জাপানের অসন্তুষ্টি: জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা (Shigeru Ishiba) মন্তব্য করেছেন যে এটি যুক্তরাষ্ট্রে ভবিষ্যৎ জাপানি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারটা যদি ব্যাখ্যা করা না যায়, তবে আলোচনায় অগ্রগতি হবে না।”

এই ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ প্রসঙ্গটি জাপানকে বেশি বিচলিত করছে, কারণ জাপান যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। জাপানের বৃহত্তম ব্যবসায়িক লবির (Business Lobby) প্রধান এই ঘটনার পর বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বলেছে মিত্রদের (Like-minded Countries) সঙ্গে মিলেমিশে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা (Economic Security) নিশ্চিত করতে চায়, যেমন ফ্রেন্ডশোরিং (Friendshoring)। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তাতে নীতি ও বাস্তবতার মধ্যে সামঞ্জস্য পাওয়া কঠিন।”

বিদ্বেষমূলক মন্তব্যে ‘বিষণ্নতা’

ঘটনাটিকে আরও খারাপ করেছে ক্লিভেল্যান্ড ক্লিফস (Cleveland-Cliffs) নামের আরেক আমেরিকান স্টিল কোম্পানির সিইও-এর বক্তব্য। ক্লিভেল্যান্ড ক্লিফস ইউএস স্টিল কিনতে আগ্রহী। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, “জাপান দুষ্ট (Japan is evil)।” তার দাবি, জাপান চীনকে (China) শিখিয়েছে কীভাবে স্টিল ডাম্পিং (Steel Dumping) করতে হয়। তিনি সরাসরি বলেছেন, “চীন খারাপ, কিন্তু জাপান আরও খারাপ।” এই ধরনের মন্তব্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অতিরিক্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন: সম্পর্ক আরও খারাপ নাকি ভালো হবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১) তিনি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে (Shinzo Abe)-র সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। আবে ছিলেন ২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করা প্রথম বিদেশি নেতা। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার (Shigeru Ishiba) পরিস্থিতি তেমন আশাব্যঞ্জক নয়।

  • ইশিবার গুঞ্জন: ২০২৪ সালের নভেম্বরের আমেরিকার নির্বাচনের পর তিনি প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, যখন তিনি দক্ষিণ আমেরিকা সফর শেষে ফিরছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের টিম “অফিসে বসার আগে কোনো বৈঠক নয়” বলে তা প্রত্যাখ্যান করে।
  • অন্য নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ: অথচ ট্রাম্প সে সময়ই জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau), ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (Emmanuel Macron), ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy), জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni), হাভিয়ের মিলে (Javier Milei)–এসব নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ফলে জাপানের কাছে এটি অবজ্ঞার (Snub) মতো লেগেছে।
  • ইশিবার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: তিনি বলেছেন যে তিনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, উপযুক্ত সময়ে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। সম্ভবত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির আগেই যুক্তরাষ্ট্র সফর করতে পারেন।

ট্রাম্পকে ঘিরে জাপানের তিনটি বড় উদ্বেগ

১) আমেরিকান ঘাঁটির জন্য খরচ বাড়ানোর চাপ: ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে জোর দিয়েছিলেন যে জাপান আরও অর্থ পরিশোধ করুক দেশটিতে থাকা মার্কিন সামরিক উপস্থিতির (US Military Presence) জন্য। আবারও এমন চাপ দিলে মিত্রতায় (Alliance) অবনতি ঘটতে পারে, বিশেষ করে ইশিবার নিজস্ব মত হলো যে ইউএস-জাপান মিত্রতা ‘অসম’ (Unequal) এবং যুক্তরাষ্ট্রই বেশি সুবিধা পায়।

২) শুল্ক (Tariff) আরোপের প্রবণতা: ট্রাম্প শুল্ক আরোপে আগ্রহী, শুধু চীনের ওপরই নয়, বরং প্রায় সব দেশের ওপরই যাদের মধ্যে মিত্র রাষ্ট্ররাও অন্তর্ভূক্ত। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে জাপানের বড় উদ্বৃত্ত (Trade Surplus) আছে, তাই ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে জাপানি পণ্য। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প জাপানি স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দিয়েছিলেন। এখন জাপানের বড় বড় গাড়ি প্রস্তুতকারকদের (Automobile Manufacturers) আশঙ্কা, পরের বার তাদের ওপর আঘাত আসতে পারে।

৩) বড় ধরণের কূটনৈতিক চুক্তি থেকে জাপানকে বাদ দেওয়ার শঙ্কা: জাপানের ভয়ের বিষয়, ট্রাম্প চীনের সঙ্গে কোনো “গ্র্যান্ড বারগেইন (Grand Bargain)” করে ফেলতে পারেন, যেমন ২০১৮ সালে তিনি উত্তর কোরিয়ার (North Korea) কিম জং উনের (Kim Jong Un) সঙ্গে সরাসরি কথা বলে জাপানকে প্রক্রিয়ার বাইরে রেখেছিলেন। এই ধরনের ঘটনায় জাপানের কূটনীতিকরা ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকেন।

চীন-মুখী ‘গরম সম্পর্ক’ (Warming Relations) একটি কৌশল?

অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে জাপান নতুন করে “ডুয়াল হেজিং (Dual Hedging)” কৌশল নিচ্ছে—যেখানে তারা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে থাকার পাশাপাশি চীনের (China) সঙ্গেও সম্পর্ক উষ্ণ রাখবে। ইশিবা সরাসরি বলেছেন, তিনি জাপান-চীন সম্পর্ক (Japan-China Relationship) উন্নত করতে চান। একই মাসে তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping)-এর সঙ্গে প্রথম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন (যে মাসে ট্রাম্প তার সঙ্গে সাক্ষাৎ বাতিল করেন)। এ ছাড়া ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথম জাপান ও চীনের শাসক দলের উচ্চপর্যায়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও (Official Dialogue) অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভবিষ্যতের আভাস: মিত্রতায় বিপর্যয় নাকি কৌশলী ভারসাম্য?

এখানে স্পষ্ট করে বলে রাখা দরকার, আমরা বলছি না যে ইউএস-জাপান সম্পর্ক নাটকীয়ভাবে ভেঙে যাবে (Dramatic Collapse)। কিন্তু কয়েকটি বিষয় উন্মোচিত হচ্ছে:

  • বহু অমীমাংসিত ইস্যু (Unresolved Tensions): যেমন বাণিজ্য, শুল্ক, জাতীয় নিরাপত্তা, সামরিক ব্যয় ভাগাভাগি ইত্যাদি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধের সম্ভবনা বাড়ছে।
  • সমন্বয়ের কূটকৌশল (Delicate Approach): ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ (If Trump returns) হতে পারে অশান্ত চার বছর—যেখানে জাপানকে কৌশলে চলতে হবে, যাতে উত্তেজনা না বাড়ে আবার নিজের স্বার্থও রক্ষা হয়।

ইশিবা সরকারের জন্য কাজটা সহজ হবে না। একদিকে জাপান নিজের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি (Independent Foreign Policy) বজায় রাখতে চায়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাও (Security Umbrella) দরকার—বিশেষ করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখে। সেই সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগ সবই এমন একটি মিশ্র চিত্রে প্রতিফলিত হচ্ছে যেখানে জাপান হয়তো একই সঙ্গে ওয়াশিংটন ও বেইজিং—দুটো দিকেই যোগসূত্র ঠিক রেখে চলে।

সামনের দিনগুলোয় এই দ্বন্দ্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা মূলত নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন কীভাবে জাপানের অগ্রাধিকারের (Priorities) প্রতি সাড়া দেয়, আর জাপান নিজে কতটা কৌশলগতভাবে ভারসাম্য (Strategic Balance) বজায় রাখতে পারে, তার ওপর।

তথ্যসূত্র

Japan’s response to Gaza:
https://www.ips-journal.eu/topics/foreign-and-security-policy/guardians-of-the-international-order-7126/
https://www.mofa.go.jp/press/release/press7e_000049.html
https://www.lemonde.fr/en/opinion/article/2023/11/06/between-israel-and-palestine-japan-practises-a-discreet-balancing-act_6231217_23.html
https://thediplomat.com/2023/11/japans-balanced-position-on-palestine-fails-to-impress/
https://www.reuters.com/world/g7s-political-relevance-stake-over-israel-gaza-response-2023-11-06/
https://www.lemonde.fr/en/opinion/article/2023/11/06/between-israel-and-palestine-japan-practises-a-discreet-balancing-act_6231217_23.html
https://news.un.org/en/story/2023/10/1142507
https://press.un.org/en/2024/sc15670.doc.htm

Biden blocks US Steel takeover:
https://www.whitehouse.gov/briefing-room/presidential-actions/2025/01/03/order-regarding-the-proposed-acquisition-of-united-states-steel-corporation-by-nippon-steel-corporation/

Fallout from US Steel saga:
https://www.japantimes.co.jp/news/2025/01/06/japan/ishiba-blocked-us-steel-deal-investments/
https://www.japantimes.co.jp/business/2025/01/14/companies/japan-clevelandcliffs-ceo/
https://fortune.com/asia/2025/01/14/cleveland-cliffs-ceo-blasts-evil-japan-home-rival-nippon-steel/

Trump & Ishiba:
https://asia.nikkei.com/Politics/International-relations/Trump-won-t-meet-with-Japan-PM-before-taking-office
https://english.kyodonews.net/news/2025/01/c309b52f380a-urgent-japan-foreign-minister-iwaya-says-he-will-attend-trumps-inauguration.html?phrase=aegis&words=
https://www.cfr.org/article/japan-braces-trump-20
https://www.eurasiagroup.net/issues/Top-Risks-2025-Implications-for-Japan
https://www.politico.eu/newsletter/china-watcher/trump-sparks-japanese-jitters/

Japan & China:
https://observingjapan.substack.com/p/the-double-hedge-revisited
https://asia.nikkei.com/Politics/International-relations/China-and-Japan-eye-rapprochement-on-eve-of-Trump-s-2nd-term

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.