চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চুক্তি কেন সম্ভবত হবে না?

ভূমিকা

১৯৬৫ সালে, যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাকি অঞ্চলগুলো একে একে স্বাধীন হচ্ছিল (Decolonised), ব্রিটেন নিরবে তাদের শেষ ও নতুনতম উপনিবেশ তৈরি করে: ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরি (British Indian Ocean Territory, সংক্ষেপে BIOT)। এটি বেশ কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যা চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Archipelago) নামে পরিচিত এবং ভারত মহাসাগরের (Indian Ocean) ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। ঐ সময়ে এই দ্বীপগুলোকে মরিশাসের (Mauritius) ঔপনিবেশিক প্রশাসন (Colonial Administration) থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। আজ এই দ্বীপগুলোর একটি অংশে গড়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম গোপনীয় (Secretive) সামরিক ঘাঁটি।

গত কয়েক দশক ধরেই মরিশাস, জাতিসংঘের (UN) সমর্থনসহ, এই দ্বীপগুলো পুনরায় নিজেদের হাতে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মরিশাসে নির্বাচন-পরবর্তী কিছু অচলাবস্থা দেখা গেলেও, গত সপ্তাহে মনে হচ্ছিল লেবার পার্টির (Labour Government) নতুন সরকার আর মরিশাসের মধ্যে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবর ছড়ায় যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) অনুমোদন না দিলে লেবার সরকার তড়িঘড়ি কোনও চুক্তি সম্পন্ন করবে না। আর ট্রাম্প বা তার উপদেষ্টারা এ ব্যাপারে আগ্রহী নন বলেই জানা যাচ্ছে। ফলে কার্যত এই চুক্তি আদৌ সম্ভব নয়। আজকের নিবন্ধে আমরা এই দ্বীপগুলো সম্পর্কে, প্রস্তাবিত চুক্তিতে কী ছিল এবং কেন এই চুক্তি ভেস্তে যেতে বসেছে, তা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করব।

পটভূমি: চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Archipelago)

চাগোস দ্বীপপুঞ্জে (Archipelago) মোট ৫৮টি দ্বীপ ও অ্যাটল (Atolls) রয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো দিয়েগো গার্সিয়া (Diego Garcia), যা দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থান করছে। এটির আকার অশ্বখুরাকৃতি (Horseshoe Shape), দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ মাইল ও প্রস্থ প্রায় ৪ মাইল। চাগোসের মোট স্থলভাগের অর্ধেকের বেশি অংশই এই দিয়েগো গার্সিয়ার।

  • এই দ্বীপপুঞ্জের নিকটতম রাষ্ট্র হলো মালদ্বীপ (Maldives), যা প্রায় ৭০০ কিলোমিটার উত্তরে।
  • সেশেলস (Seychelles) প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার পশ্চিমে।
  • মরিশাস প্রায় ২২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

গত কয়েকশো বছর চাগোস দ্বীপগুলোকে মরিশাসের নির্ভরতাশীল এলাকা বা ডিপেন্ডেন্সি (Dependencies) হিসেবেই গণ্য করা হতো। প্রথমে ডাচরা ১৫৯৮ সালের দিকে মরিশাসে উপস্থিত হয়; পরে ১৭১৫ সালে ফ্রান্স (France) সেখানে ‘ইলে দে ফ্রঁস (Ile de France)’ নামে একটি উপনিবেশ গড়ে তোলে। চাগোসে নারকেল বাগান (Coconut Plantations) প্রতিষ্ঠা করা হয়, আর দাস শ্রমিকদের (Slaves) নিয়ে আসা হয় আফ্রিকা ও মাদাগাস্কার (Madagascar) থেকে।

১৮১০ সালে ব্রিটেন (Britain) ‘ইলে দে ফ্রঁস’ দখল করে ‘মরিশাস (Mauritius)’ নাম দেয়, আর ১৮১৪ সালের প্যারিস চুক্তি (Treaty of Paris) অনুযায়ী ফ্রান্স কর্তৃক মরিশাস ও এর সব ‘ডিপেন্ডেন্সি’ ব্রিটেনের হাতে চলে যায়। ১৮১৪ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চাগোস দ্বীপগুলো মরিশাসের অংশ হিসেবে ব্রিটেন দ্বারা শাসিত হতো। বিভিন্ন হিসাবে জানা যায়, ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি প্রায় দু-হাজার চাগোসীয় (Chagossians) সেই দ্বীপগুলোতে বসবাস ও কাজ করতেন।

ঔপনিবেশ-উত্তর পরিস্থিতি: দ্বীপগুলো কিভাবে বিচ্ছিন্ন হলো

১৯৬০ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UN General Assembly) রেজ্যুলেশন ১৫১৪ (Resolution 1514) পাস করে, যেখানে সম্পূর্ণ ডিকলোনাইজেশন (Total Decolonisation)-এর আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাজ্য তখন মরিশাসকে স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।

কিন্তু ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র (US) ব্রিটেনকে অনুরোধ করে দিয়েগো গার্সিয়ায় একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সুযোগ দিতে। এর পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে, ব্রিটেন ল্যাঙ্কাস্টার হাউস অ্যাগ্রিমেন্ট (Lancaster House Agreement) এর মাধ্যমে প্রায় ৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে মরিশাস থেকে চাগোস দ্বীপগুলোকে কার্যত ‘কিনে’ নেয়—বা, বলা যায় মরিশাস থেকে আলাদা করে নেয়। এতে চাগোস দ্বীপগুলোকে ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটরি (BIOT)’ ঘোষণা করা হয়।

১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ৭০ বছরের জন্য চাগোস দ্বীপপুঞ্জ ভাড়ায় নেওয়ার (Lease) চুক্তি করে, যেখানে দেয়া গার্সিয়ায় (Diego Garcia) সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে। ১৯৬৮ সালে মরিশাস স্বাধীন হয়, তবে চাগোসের ‘ভার’ সে পায়নি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন যৌথভাবে চাগোস থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ (Deportation) করা শুরু করে। নারকেল বাগান অপ্রতুল আয় দেওয়ায় অর্থনীতিও ভেঙে পড়ে; খাদ্য ও অন্যান্য সরবরাহের জাহাজ চলাচল কমে যায়। ১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে উচ্ছেদ শুরু হয় এবং ১৯৭৩ নাগাদ সব চাগোসীয়কে মূলত মরিশাস ও সেশেলসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন স্বীকার করে যে এই ‘উচ্ছেদ’ লজ্জাজনক ও ভুল ছিল (Shameful and Wrong)।

যুক্তরাষ্ট্র পরে দিয়েগো গার্সিয়ায় “ফুটপ্রিন্ট অব ফ্রিডম (Footprint of Freedom)” নামে নৌ ঘাঁটি (Naval Base) গড়ে তোলে, যা আজ বিশ্বের অন্যতম গোপনীয় সামরিক ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

আইনগত বিতর্ক ও সাম্প্রতিক কালের রায়

মরিশাসের দাবি, তারা চাপে পড়ে চাগোস দ্বীপগুলো ‘বিক্রি’ করতে বাধ্য হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক আইনের (International Law) লঙ্ঘন। ২০১৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (International Court of Justice, ICJ) মরিশাসের পক্ষে রায় দেয়, জানায় ব্রিটেন অবৈধভাবে (Unlawfully) চাগোসকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। একই বছরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UN General Assembly) একটি রেজ্যুলেশন পাস করে, যাতে যুক্তরাজ্যকে ছয় মাসের মধ্যে যেকোনো উপনিবেশিক প্রশাসন (Colonial Administration) প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।

সেই সময় লেবার নেতা জেরেমি করবিন (Jeremy Corbyn) তেরেসা মে (Theresa May) সরকারের এই রায় উপেক্ষা করাকে আক্রমণ করেন, আর ঋষি সুনাক (Rishi Sunak) তখন ইঙ্গিত দেন হয়তো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের শেষ দিকে ডেভিড ক্যামেরন (David Cameron) পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Foreign Secretary) হওয়ার পর এই আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে লেবার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর, গত বছর (২০২৪) শরৎকালে আলোচনা ফের শুরু হয়।

প্রস্তাবিত চুক্তি: সার্বভৌমত্ব মরিশাসের, ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে দুপক্ষ জানায়, তারা একটা সমঝোতায় পৌঁছেছে:

  • মরিশাস সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) পাবে, কিন্তু দিয়েগো গার্সিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি আরও ৯৯ বছরের জন্য লিজ (Lease) হিসেবে থাকবে।
  • যুক্তরাজ্য (UK) মরিশাসকে আর্থিক সহায়তার একটি প্যাকেজ দেবে। কিন্তু কোন পক্ষই সেসময় সুনির্দিষ্ট পরিমাণের উল্লেখ করেনি।

কিন্তু নভেম্বরের নির্বাচনে মরিশাসের সেই সরকার বড় পরাজয় বরণ করে। নতুন সরকার জানায়, তারা এই চুক্তিতে সন্তুষ্ট নয়—তারা ছোট মেয়াদের লিজ এবং আরও বেশি অর্থ চায়। লেবার সরকার তাই নতুন করে সমঝোতার জন্য অগ্রসর হয়।

গত সপ্তাহে খবর ছড়ায় যে লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer) ৫০ বছরের লিজ মেয়াদ এবং ৯ বিলিয়ন পাউন্ড (9 billion GBP) পরিশোধের একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন, যেখানে প্রাথমিক সাত বছরে প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড (650 million GBP) আগাম দেওয়া হবে (Front Loaded)।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও ভেতরের আপত্তি

যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক মহল, বিশেষ করে ডানপন্থী (Right-Wing) শিবির এ চুক্তির খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

  • রিফর্ম পার্টির (Reform Party) নেতা নাইজেল ফারাজ (Nigel Farage) বলেন, এটি ‘চাগোস বিক্রি’ (Chagos Sellout) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (Donald Trump) প্রশাসনের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ করবে।
  • কনজারভেটিভ নেতা (Conservative Leader) কে সবাডেনক (Kemi Badenoch) অভিযোগ করেন যে স্টারমার বিনামূল্যে সব কিছু দিয়ে দিচ্ছেন।
  • দ্য টাইমস (The Times) সম্পাদকীয়তে লিখে, “খারাপ চুক্তির থেকে চুক্তি না হওয়াই ভালো” (No deal is better than a bad deal)।
  • পলিসি এক্সচেঞ্জ (Policy Exchange) নামে একটি কনজারভেটিভ থিঙ্কট্যাঙ্ক এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করে: “Averting a Strategic Misstep”, যেখানে বলা হয়,
    1. আসল চাগোসীয়রা (Chagossians) মরিশাসের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে না।
    2. ICJ-এর ২০১৯ সালের রায় আসলে বাধ্যতামূলক নয় (Non-Binding)।
    3. মরিশাসের দাবি মেনে নিলে জিব্রাল্টার (Gibraltar), ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ (Falkland Islands) কিংবা সাইপ্রাসের (Cyprus) ব্রিটিশ সার্বভৌম ঘাঁটির মতো অন্য ব্রিটিশ বিদেশি অঞ্চলগুলোর (British Overseas Territories) জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হতে পারে।

শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল, লেবার এই চুক্তি সম্পন্ন করবেই। মরিশাস সরকার বুধবার (এই সপ্তাহ) সকালে সংবাদ সম্মেলন ডেকে রেখেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ লেবার অবস্থান বদলে জানায় যে তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার (Inauguration) আগে কোনো চুক্তি করবে না।

বাস্তবিকভাবে, এর মানে হলো এই চুক্তি হয়তো আর এগোচ্ছে না। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বয়ং এ নিয়ে কিছু বলেননি বটে, তবে তার সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Secretary of State) মার্কো রুবিও (Marco Rubio) আর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (National Security Adviser) মাইক ওয়াল্টজ (Mike Waltz)—দুজনেই এই চুক্তির প্রকাশ্য সমালোচক। তাদের যুক্তি: চীনের (China) সঙ্গে মরিশাসের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক (Closest Economic Partner), আর ট্রাম্প নিজেও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাংদেহী (Hawkish) অবস্থানে। তাই তিনি এই চুক্তিকে সহজভাবে নেবেন বলে মনে হয় না।

ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক হিসেব

লেবার নেতা স্টারমারের (Starmer) জন্য এটি কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতি—এত বড় চুক্তির খবর ছড়িয়ে আবার পিছিয়ে আসা। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় হয়তো এটি একটি ‘যুক্তিযুক্ত’ পদক্ষেপ। এদিকে লেবার-এর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে খারাপ, সুতরাং যদি ট্রাম্প প্রশাসন পরবর্তীতে ঝামেলা করে, সেটি যুক্তরাজ্যের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জটিলতা হতে পারে। আবার বর্তমান আর্থিক অস্থিতিশীলতার (Fiscal Climate) মধ্যে, শুধু জমি নয়, আরও কয়েকশ মিলিয়ন পাউন্ড মরিশাসকে দেওয়া হবে—এমনটি শোনার পর ব্রিটিশ ভোটাররা (British Electorate) আদৌ খুশি হবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সব মিলিয়ে, চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চুক্তিটি আদৌ এগোবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, incoming মার্কিন প্রশাসনের অনাগ্রহ ও ব্রিটিশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপে এটি সম্পূর্ণ ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আরও পড়ুন – 

যুক্তরাজ্য সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাজ্য সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ

তথ্যসূত্র

1 – https://www.hrw.org/report/2023/02/15/thats-when-nightmare-started/uk-and-us-forced-displacement-chagossians-and#_ftn1

2 – https://media.defense.gov/2020/Jun/08/2002311975/-1/-1/1/HARRIS.PDF

3 – https://asia.nikkei.com/Opinion/U.S.-should-accept-that-its-Indian-Ocean-base-belongs-to-Africa

4 – https://veteranlife.com/military-history/diego-garcia/

5 – https://www.icj-cij.org/public/files/case-related/169/169-20190225-ADV-01-00-EN.pdf

6 – https://en.wikipedia.org/wiki/Diego_Garcia

7 – https://www.hrw.org/report/2023/02/15/thats-when-nightmare-started/uk-and-us-forced-displacement-chagossians-and

8 – https://www.bailii.org/ew/cases/EWHC/QB/2003/2222.html

9 – https://inkstickmedia.com/the-us-base-at-diego-garcia-holds-a-dirty-secret/

10 – https://press.un.org/en/2019/ga12146.doc.htm

11 – https://www.theguardian.com/world/2019/may/01/corbyn-condemns-mays-defiance-of-chagos-islands-ruling

12 – https://www.bbc.co.uk/news/articles/cj49qjypqv4o

13 – https://www.ft.com/content/f4d70560-5ae6-4450-8e2d-dab5bb1b3487

14 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2025-01-14/uk-closes-in-on-chagos-deal-with-7-years-of-payments-up-front?srnd=homepage-uk

15 – https://x.com/Nigel_Farage/status/1879154379565183336

16 – https://policyexchange.org.uk/wp-content/uploads/Averting-a-Strategic-Misstep_.pdf

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.