Table of Contents
ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ক্ষমতায় বসার আগ থেকেই বৈশ্বিক রাজনীতিতে একাধিক আলোড়ন তুলেছেন। তিনি অনেকগুলো দেশে হুমকি দিয়েছেন আক্রমণ চালানোর, গাজায় (Gaza) একটি যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) চাপিয়ে দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে, আর এবার তার ঘোষণা করা কিছু অর্থনৈতিক নীতির কারণে ডলারের (US Dollar) মূল্য ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
প্রথম শুনলে মনে হতে পারে ডলারের এই উল্লম্ফন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই শুভবার্তা বয়ে আনবে। কিন্তু বাস্তবে, এই শক্তিশালী ডলার ট্রাম্পের নিজস্ব লক্ষ্য—যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) কমানো ও আমেরিকান শিল্প (American Manufacturing) পুনর্জাগরণের পথকে বেশ কঠিন করে তুলতে পারে। তাছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও এটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সূচনা করতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা মার্কিন ডলারের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির পেছনের কারণ, এর প্রভাব এবং এটি কেন অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ট্রাম্পের জন্যও অস্বস্তি তৈরি করতে পারে, সে বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচনা করব।
ডলারের সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতি
ডলারের শক্তিশালী হওয়া বোঝার জন্য সাধারণত একটি “ডলার ইনডেক্স” (Dollar Index) ব্যবহৃত হয়, যা একগুচ্ছ বৈদেশিক মুদ্রার (Basket of Currencies) বিপরীতে ডলারের মূল্যকে ওজনকৃতভাবে (Weighted) যাচাই করে। বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন ডলার ইনডেক্স আছে, তবে ফেডারেল রিজার্ভের (Federal Reserve) ব্রড রিয়েল ডলার ইনডেক্স (Broad Real Dollar Index) অনুসারে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে ডলারের মূল্যধারা অবিচলভাবে বাড়ছিল। আর বর্তমানে এই সূচকে ডলারের দাম বহু দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
ডলারের এই উত্থান আমরা একক কোনো মুদ্রার বিপরীতে দেখলে পুরো চিত্র বোঝা মুশকিল। কেননা অন্য মুদ্রার (Currency) মূল্য কমলে ডলার আপেক্ষিকভাবে বাড়তে পারে, যা ডলারের নিজস্ব শক্তি সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেয় না। তাই একগুচ্ছ প্রধান মুদ্রার তুলনামূলক ওজন বিশ্লেষণ বেশি কার্যকর বলে গণ্য হয়।
শক্তিশালী ডলারের পেছনে কারণ
১. নিরাপদ আশ্রয়
ডলারকে বিশ্বব্যাপী “রিজার্ভ কারেন্সি” (Reserve Currency) বলা হয়। অনেক কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Banks) এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (Financial Institutions) ডলারকে নিরাপদ সম্পদ (Safe Asset) হিসেবে ধরে রাখে। অর্থনৈতিক কিংবা ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিলে, বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই ডলার কিংবা ডলার-সংশ্লিষ্ট সম্পদ (যেমন মার্কিন ট্রেজারি বন্ড—Treasuries) কিনতে শুরু করে। মজার বিষয় হলো, অনিশ্চয়তার উৎপত্তি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই হোক বা অন্য কোনো দেশ থেকে, ডলারের নিরাপদ আশ্রয়ের এই ভূমিকা কম-বেশি অটল থাকে। ফলে সংকটময় সময়ে ডলারের দাম বাড়ে।
ট্রাম্পের চরমপন্থী (Unorthodox) অবস্থানগুলো—যেমন একাধিক দেশে হুমকি, আরেকটি মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের মধ্যস্থতা—বৈশ্বিক অস্থিরতা (Geopolitical Uncertainty) বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ডলারের দিকে ঝুঁকছেন, যা ডলারের মানকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছে।
২. যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাফল্য
ডলারের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক কার্যক্ষমতা (Economic Performance) বড় ভূমিকা পালন করেছে।
- উচ্চ জিডিপি (GDP) প্রবৃদ্ধি: জোই পলিটানো (Joey Politano) নামের এক বিশ্লেষকের গবেষণা (X প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী) বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি-পরবর্তী সময়ে জি৭ (G7) দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে ভালো জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মূল্যস্ফীতি (Inflation) ও জনসংখ্যা (Population) বৃদ্ধির বিষয় মাথায় রেখেও এই সাফল্য তুলনামূলকভাবে উল্লেখযোগ্য।
- উচ্চ উৎপাদনশীলতা (Productivity): একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো “প্রোডাক্টিভিটি” (Productivity), অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় কর্মীরা কী পরিমাণ আউটপুট বা জিডিপি (GDP) তৈরি করতে পারছে। অন্যান্য জি৭ দেশে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থবির (Stagnant) বা নিম্নমুখী, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক সময়ে উৎপাদনশীলতায় বেশ উন্নতি হয়েছে।
- আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য: যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যখন তুলনামূলক ভালো করছে, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা (Global Investors) বেশি করে আমেরিকান সম্পদে (US Assets) বিনিয়োগ করে। এর ফলে ডলারের চাহিদা (Demand) বাড়ে, ডলারের দামও বেড়ে যায়।
তবে এ কথা ঠিক যে, যুক্তরাষ্ট্রে আয়ের বৈষম্য (Inequality) চরম পর্যায়ে এবং এই অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি। তবু সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র অন্য জি৭ দেশগুলোর চেয়ে ভালো করছে—এটা ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে বড় অনুঘটক হয়েছে।
৩. ট্রাম্পের নীতি
২০২৪ সালের শেষে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভের পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অর্থনৈতিক নীতিগুলো তার দায়িত্ব নেবার আগ থেকেই বাজারকে আগেভাগেই প্রভাবিত করতে শুরু করে। গত এক বছরে ডলারের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর নাগাদ ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় ডলারের দাম আরও বাড়তে শুরু করে। নির্বাচনের পর থেকে সে উত্থান দ্রুততর হয়েছে।
যে নীতিগুলো ডলারের মান বাড়াতে পারে, সেগুলো হচ্ছে—
- বিশাল শুল্ক (Massive Tariffs): ট্রাম্প একাধিক দেশে আমদানি পণ্যে উচ্চ শুল্ক (Tariffs) আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে বিদেশি পণ্য আমেরিকায় বিক্রি করা ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে, যেটি আমেরিকান পণ্যকেও তুলনায় দামে চড়া করবে (কারণ প্রতিযোগিতা কমবে বা বাধাপ্রাপ্ত হবে)। দাম বাড়লে সাধারণত মুদ্রাস্ফীতিও (Inflation) বেড়ে যায়।
- কর ছাঁটাই (Tax Cuts): ট্রাম্প বলছেন তিনি বড় ধরনের কর ছাড় দেবেন (Tax Cuts), যা মানুষের হাতে অর্থের প্রবাহ বাড়াবে। খরচ বাড়লে (Household Spending) বাজারে পণ্যের মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়।
- ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি (Interest Rate Hikes): মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে। উচ্চ সুদের হার (High Interest Rates) ডলারের চাহিদা বাড়ায় (যেহেতু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেশি সুদ পেতে চায়) ডলারের মান আরও উঁচুতে যায়।
- অন্যান্য মুদ্রার পতন: ট্রাম্পের শুল্কনীতি অন্য বড় মুদ্রাগুলোকে যেমন ইউয়ান (Yuan) বা ইউরো (Euro) চাপে ফেলতে পারে। চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের পর (২০১৮ সালের প্রেক্ষিতে) ইউয়ানের মূল্য বেশ কমে গিয়েছিল, প্রায় ১০% হ্রাস পেয়েছিল বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। যেহেতু ডলারের মান অন্য মুদ্রার তুলনায় পরিমাপ করা হয়, অন্য মুদ্রার পতন ডলারের আরও বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
শক্তিশালী ডলারের প্রভাব
১. আমেরিকান ভোক্তা ও আমদানিকারকদের জন্য সুফল
একদিকে, ডলারের এই ঊর্ধ্বগতি আমেরিকানদের জন্য (অন্তত যারা পণ্য আমদানি করেন বা বিদেশ থেকে জিনিস কেনেন) ভালো খবর।
- উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা (Purchasing Power): শক্তিশালী ডলারের মানে হলো, বৈদেশিক পণ্য বা সেবা আমেরিকানদের কাছে তুলনামূলকভাবে সস্তা মনে হবে।
- বিরূপ মূল্যস্ফীতি প্রতিরোধ (Disinflationary Effects): ডলার শক্তিশালী হলে বৈদেশিক পণ্যের দাম কমে, ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।
- ওয়াল স্ট্রিটের দৃঢ়তা (Wall Street’s Dominance): ডলারের আধিপত্য ধরে রাখার মাধ্যমে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও মার্কিন আর্থিক খাতের (Financial Sector) কেন্দ্রীয় ভূমিকা আরও প্রতিষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বড় অংশ ডলারে হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজার লাভবান হয়।
২. বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা
মার্কিন ডলারের এই অতিমূল্যায়ন (Super Strong Dollar) বিশ্বের অন্য দেশগুলোর, বিশেষ করে উদীয়মান বাজার অর্থনীতির (Emerging Market Economies) জন্য বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
- উত্তপ্ত আমদানি ব্যয় (Expensive Imports): বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের ব্যবহার হয়। তেলের মতো (Oil) অপরিহার্য পণ্য আমদানি করতে গিয়ে অন্য দেশগুলোকে এখন বেশি অর্থ গুণতে হবে, কারণ ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার মূল্য পড়ে গেছে। এর ফলে সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে।
- বিনিয়োগ ও ঋণপ্রাপ্তিতে সমস্যা (Difficulty in Financing): ডলারের দাম বেড়ে গেলে, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা মূলত যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয় (উচ্চ সুদ পাওয়ার আশায়)। ফলে অন্য অনেক দেশ—বিশেষত উন্নয়নশীল অর্থনীতি—বিদেশি বিনিয়োগ পেতে বা ঋণ তুলতে (Borrowing) হিমশিম খায়। সুদের হার বেড়ে যায়, আমানত কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ (Fiscal Position) দুর্বল হয়ে পড়ে, বাধ্য হয়ে তারা কর বাড়াতে বা ব্যয় কমাতে (Austerity) বাধ্য হতে পারে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে দেশগুলো ঋণখেলাপি (Default) হতে পারে।
- ১৯৮০-এর দশকের পুনরাবৃত্তি ঝুঁকি (Echo of the 1980s Debt Crises): ১৯৮০-এর দশকে ডলার অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠলে বিশ্বজুড়ে একাধিক ঋণ সংকট (Debt Crisis) দেখা দিয়েছিল। যদিও এখন উন্নয়নশীল দেশগুলো ডলারে ঋণ নেওয়া কিছুটা কমিয়ে এনেছে, তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নয়। ডলার-নির্ভর অর্থনীতি এখনও নানা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
ডলারের উত্থান কেন ট্রাম্পের জন্য সমস্যাজনক?
ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে শক্তিশালী ডলার চান কি না—তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধা দেখা যায়। একদিকে তিনি সবসময় চেয়েছেন, ডলার বিশ্ব রিজার্ভ মুদ্রা (Reserve Status) হিসেবে তার প্রভাব ধরে রাখুক। অন্যদিকে তিনি আবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে (Reduce Trade Deficit) ও কারখানা পুনর্জাগরণ (Rejuvenate American Manufacturing) করতে চান। কিন্তু ডলারের বেশি উচ্চমূল্য এই লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
- মার্কিন রপ্তানি প্রতিযোগিতা (US Exports Competitiveness): ডলার শক্তিশালী হলে আমেরিকান রপ্তানি পণ্য বৈশ্বিক বাজারে তুলনামূলকভাবে বেশি দামি হয়ে পড়ে। ফলে রপ্তানিকারকদের (Exporters) পক্ষে বিদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিন হয়ে যায়।
- আমদানি সস্তা, ঘরোয়া শিল্প ব্যয়বহুল (Cheaper Imports vs. Domestic Production): ডলারের দাম বাড়লে আমদানি পণ্য তুলনামূলকভাবে সস্তা হতে থাকে, যা ঘরোয়া উৎপাদনকারীদের (Domestic Manufacturers) চাপে ফেলে।
- ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধির আশঙ্কা (Interest Rate Hikes): ট্রাম্প আগেও ফেডারেল রিজার্ভকে সুদের হার কম রাখতে চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারই নীতির ফলশ্রুতিতে (কর ছাড়, শুল্ক) মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়াবে—যা ট্রাম্প একেবারেই পছন্দ করেন না, কারণ এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে (Economic Growth) শ্লথ করতে পারে।
এ কারণে ডলারের অব্যাহত শক্তি ট্রাম্পের দুই উদ্দেশ্যের মধ্যে বিরোধ তৈরি করেছে—একদিকে শক্তিশালী বিশ্বময় আধিপত্য, অন্যদিকে স্বল্পমূল্যের ডলার রক্ষা ও রপ্তানি-বান্ধব উৎপাদন বৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের দাম বর্তমানে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। এর পেছনে কয়েকটি মৌলিক কারণ বিদ্যমান—ডলারকে নিরাপদ আশ্রয় (Safe Haven) মনে করা, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনামূলক অর্থনৈতিক সাফল্য, আর ট্রাম্পের নীতিগত ঘোষণা যা বাজারকে আগেভাগেই প্রভাবিত করছে।
শক্তিশালী ডলার যেমন আমেরিকান ভোক্তা, আমদানিকারক ও আর্থিক খাতের (Financial Sector) জন্য স্বস্তিকর, তেমনি উন্নয়নশীল অর্থনীতি থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক দেশের জন্য এটি বড় বোঝা হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া স্বয়ং ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য—বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, মার্কিন নির্মাণখাতকে চাঙ্গা করা—এসবের সঙ্গে ডলারের উচ্চমূল্য সাংঘর্ষিক।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প কীভাবে এই দ্বৈত বাধাকে সামলাবেন, সেটাই দেখার বিষয়। একদিকে তিনি ডলারকে বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী অবস্থানে দেখতে চান, অন্যদিকে তিনি চান রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ফিরে আসুক। কিন্তু যদি ডলার অত্যধিক শক্তিশালী হতে থাকে, তা রপ্তানি খাতকে আবার পেছনে ঠেলে দেবে। একই সঙ্গে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ানোর পথে গেলে, ট্রাম্পের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল শুরু হওয়ার আগেই ডলারের এই নাটকীয় উত্থান শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলছে। হোয়াইট হাউসে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগে ট্রাম্পকে হয়তো ইতোমধ্যেই বুঝতে হবে যে অর্থনৈতিক নীতির একেকটি পদক্ষেপ কেমন করে ভিন্ন ভিন্ন অংশকে প্রভাবিত করে এবং কেন সব লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জন সবসময় সম্ভব হয় না।
আরও পড়ুন –
- কেন ট্রাম্প ডলারের মূল্য কমাতে চান? (২২ নভেম্বর, ২০২৪)
- ২০২৫ সালে ট্রাম্প অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কী কী করতে যাচ্ছেন? (৩ জানুয়ারি, ২০২৫)
- ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো এবং এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে যেভাবে রূপান্তরিত হতে পারে (২ নভেম্বর, ২০২৪)
যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ
তথ্যসূত্র
1 – https://www.bloomberg.com/opinion/articles/2025-01-17/dollar-s-smile-for-trump-can-change-the-world
2 – https://x.com/JosephPolitano/status/1862628321332216043/photo/1
3 – https://x.com/JosephPolitano/status/1862628326415728866/photo/1
4 – https://www.chathamhouse.org/2024/11/donald-trumps-policies-risk-making-us-dollar-source-global-instability
5 – https://www.sciencespo.fr/ceri/sites/sciencespo.fr.ceri/files/TheDebtCrisisOfThe1980s-Introduction.pdf
Leave a Reply