২০২৫ সালে ট্রাম্প অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কী কী করতে যাচ্ছেন?

ভূমিকা

নতুন বছর মানেই অনেকের কাছে নতুন কিছু শুরু করার সময় – নতুন সব প্রতিজ্ঞা (Resolutions), জিম মেম্বারশিপ (Gym Membership) শুরু করার উৎসাহ (যদিও বেশির ভাগই বেশিদিন টেকে না), আর আপনার জেন জি (Gen Z) কাজিনদের টুইট করা “New Year, New Me!” এই সাধারণ চিত্রের মধ্যে ২০২৫ সালের শুরুতে আমেরিকায় ফিরে এলেন সেই পুরনো প্রেসিডেন্ট – ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। যেন নতুন বছর হলেও, প্রেসিডেন্ট ঠিক আগের মানুষটিই।

ঠিক যখন আপনি নিজে নববর্ষের হ্যাংওভার (Hangover) সামলাতে ব্যস্ত, তখন ট্রাম্পকে নিতে হবে ২০২৫ সালে তার দ্বিতীয় মেয়াদের (Second Term) শুরুতে একগাদা দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হ্যাংওভার সামলানোর চ্যালেঞ্জ। আজকের এই বিশদ আলোচনায় আমরা দেখব, ট্রাম্প আবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে (Oval Office) ফিরে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

তেলের দাম, জ্বালানি মূল্য ও বৈশ্বিক প্রভাব

বিগত তিন বছরের শিক্ষা

গত তিন বছরে বিশ্ব দেখেছে, তেল (Oil) ও জ্বালানির (Energy) দাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ। মহামারির (Pandemic) পরপরই জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যায়, এর সঙ্গে যুক্ত হয় পুতিনের (Vladimir Putin) ইউক্রেন (Ukraine) আক্রমণ; ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিঘ্নিত হয় এবং পুরো বিশ্বের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়।

২০২২ ও ২০২৩ সালে অধিকাংশ দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি (Inflation) দেখা দিয়েছিল, যার মূল চালিকাশক্তি ছিল এই তেল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। এটি শুধু বিশ্ব অর্থনীতিকেই (Global Economy) ঝাঁকুনি দেয়নি, বরং অনেক দেশের নির্বাচনী ফলাফলেও প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি যে সব সরকার বা ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের মুখোমুখি হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই ভোটের ব্যালট বাক্সে বিপাকে পড়েছে।

৯০-এর দশক ও ২০০০-এর শুরুর দশকে এ সমস্যা উপেক্ষিত

এই তেলের দাম ও জ্বালানির কেন্দ্রীয়তা (Centrality of Energy) আসলে মার্কিন রাজনীতিতে মাঝেমধ্যেই উঠে আসে। কিন্তু ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর গোড়ার দিকে তেলের দাম গড়ে ব্যারেলপ্রতি ৫০ ডলারের আশেপাশে ছিল বলে ব্যাপারটি অনেকটা ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু ২০১০-এর দশকের গোড়ায় তেলের দাম যখন আবার বাড়তে থাকে, তখন বিষয়টি নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বারাক ওবামা (Barack Obama) “আমেরিকান শেল (American Shale)” তেলের প্রতি জোরালো সমর্থন দিয়েছিলেন, যাতে জ্বালানির দাম কমিয়ে রাখা যায় এবং আমেরিকার জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা (Energy Independence) নিশ্চিত হয়।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জ্বালানি ভাবনা

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর (২০১৭-২০২১) জ্বালানি ইস্যুতে খুবই মনোযোগী ছিলেন। তিনি প্রাক্তন এক্সন (Exxon) সিইও (CEO) রেক্স টিলারসন (Rex Tillerson)-কে তার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানান এবং অফিসে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই বিতর্কিত কিস্টোন পাইপলাইন (Keystone Pipeline) অনুমোদন করেন। সেই সময় ট্রাম্প যুক্তি দিয়েছিলেন, এই পাইপলাইন আমেরিকার জ্বালানি স্বনির্ভরতা (Energy Independence) বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

এ ছাড়া তিনি বিশ্বের বৃহত্তম তেল-উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেককে (OPEC – Organization of the Petroleum Exporting Countries) টুইটারে প্রায়ই আক্রমণ করতেন, যখনই তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি আনুমানিক ৭০ ডলারের বেশি উঠত। ট্রাম্প খোলাখুলিভাবে সৌদি আরবের (Saudi Arabia) মতো দেশের নিরাপত্তাগত নির্ভরতার (Security Reliance) কথা মনে করিয়ে দিতেন, যাতে তারা তেল উৎপাদন বাড়িয়ে বৈশ্বিক মূল্য কমায়।

আংশিকভাবে অবশ্য ট্রাম্প নিজে এখানে কিছুটা সফলও ছিলেন, কিংবা বলা যায় তার শাসনামলে তেলের দাম আপেক্ষিকভাবে স্থিতিশীল ছিল। প্রথম মেয়াদে গড় দাম ছিল প্রায় ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলার, যা ওবামা বা জো বাইডেনের (Joe Biden) সময়ের চেয়ে কিছুটা সহনীয়।

বেশি দাম বনাম কম দাম: শেল তেলের দ্বন্দ্ব

তবে মজার ব্যাপার হলো, ট্রাম্প সবসময় যে তেলের দাম কমাতে চেয়েছেন, তা নয়। কেননা তেলের দাম খুব বেশি কমে গেলে আমেরিকান শেল (Shale) তেলশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেল তেল উত্তোলন তুলনামূলক ব্যয়বহুল, তাই দাম একেবারে নিচে নেমে গেলে আমেরিকান শেল শিল্প টিকতে পারে না।

সেই কারণেই, যখন কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম দিকে তেলের দাম বড় রকমের ধস নামে, তখন ট্রাম্প সৌদি আরব ও রাশিয়ার (Russia) সঙ্গে বসে উৎপাদন কমানোর (Production Cuts) মাধ্যমে দাম স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেন। এই সমঝোতা দেখায় যে ট্রাম্পের জ্বালানি নীতিতে দ্বৈত স্বার্থ ছিল—একদিকে আমেরিকান ভোটারদের জন্য তুলনামূলক কম তেলের দাম, অন্যদিকে আমেরিকান শেল প্রযোজকদের সুরক্ষা, যাদের উঁচু দাম দরকার।

“ড্রিল, বেবি, ড্রিল!” (Drill, Baby, Drill)

২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প পুরনো স্লোগানকে পুনর্জীবিত করেন—জন ম্যাককেইন (John McCain) ২০০৮ সালে যে “ড্রিল, বেবি, ড্রিল” স্লোগান দিয়েছিলেন, ট্রাম্প সেটি আবার কাজে লাগান। তিনি বারবার প্রতিশ্রুতি দেন যে গ্যাসের (Gas) দাম আবার কমিয়ে আনবেন।

অবশ্য বাস্তবে ২০২৫ থেকে ২০২৯ পর্যন্ত সময়ে তেলের দাম বা জ্বালানির মূল্য কেমন থাকবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক (Global Macroeconomic) পরিস্থিতির ওপর, ট্রাম্পের নীতির ওপর নয়। তারপরও ট্রাম্প কমপক্ষে শুরুতে কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন, কারণ ২০২৫ সালে চীনের (China) তুলনামূলক দুর্বল চাহিদা, ওপেকের স্বেচ্ছায় উৎপাদন কমানোর মেয়াদের অবসান (সম্ভবত এপ্রিল নাগাদ) ইত্যাদি কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমতে পারে।

তবে আরেকটি দিক হলো, দাম খুব বেশি কমে গেলে আবার আমেরিকান উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে কীভাবে তিনি জ্বালানির দামের এই দুই বিপরীতমুখী চাহিদাকে ভারসাম্যে রাখবেন—এটা ২০২৫-২০২৯ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ তদারকি-সূচক (Key Indicator) হয়ে থাকবে।

ডলারের মূল্য ও ট্রাম্পের দ্বিমুখী চাওয়া

ডলারের শক্তিশালী না দুর্বল—কোনটি চাই?

ডলারের (Dollar) ভবিষ্যৎ গতিপ্রকৃতি ট্রাম্পের জন্য আরেকটি বড় প্রশ্ন। তার যেমন স্বার্থ আছে ডলারের মূল্য কিছুটা দুর্বল রাখতে—যাতে আমেরিকান রফতানি (American Exports) প্রতিযোগিতামূলক হয়, ঠিক তেমনি তিনিই আবার শক্তিশালী ডলার (Strong Dollar) চান, কারণ আমদানি (Imports) সস্তা থাকলে ভোক্তারা খুশি এবং আমেরিকার আর্থিক প্রাধান্য (Financial Dominance) বজায় থাকে।

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করতেন যে ডলারের মূল্য “অতিরিক্ত” বেশি (Overvalued), যা আমেরিকান নির্মাতাদের (Manufacturers) ক্ষতি করছে। তখন তিনি ফেডারেল রিজার্ভকে (Federal Reserve) সুদের হার (Interest Rates) কমাতে চাপ দিতেন, যাতে ডলারের মূল্য নিচে নামানো যায়। ২০২৪ সালের প্রচারের সময় হয়তো বিষয়টি তিনি কম উচ্চারণ করেছেন, কিন্তু ২০২৫ সালে ক্ষমতায় ফিরেই আবার এই প্রসঙ্গ উঠতে পারে।

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ইয়েন (Yen) ও ইউয়ানের (Yuan) বিপরীতে ডলারের অতিরিক্ত শক্তি নাকি “বড় মাপের কারেন্সি সমস্যা (Currency Problem)।” তারই সঙ্গী (উপ-রাষ্ট্রপতি বা Vice President) জেডি ভ্যান্স (J.D. Vance) গত এপ্রিলে পলিটিকো (Politico)-কে বলেছেন, “ডেভ্যালুইং (Devaluing) কথাটি ভীতিকর শোনালেও এর মানে হচ্ছে আমেরিকান পণ্য সস্তা হয়ে যাবে, আমেরিকান রফতানি বাড়বে।” ফলে বোঝা যায়, ট্রাম্প ও ভ্যান্স উভয়েই ডলারের মূল্য কমিয়ে আমেরিকান শিল্পের (Manufacturing) পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাইছেন।

বিরোধপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা

কিন্তু এখানে আবার একটা বিরোধ তৈরি হয়। ট্রাম্প চায় ডলার বিশ্ব রিজার্ভ মুদ্রা (World’s Reserve Currency) হিসেবে তার আধিপত্য ধরে রাখুক। কারণ এই মর্যাদা ডলারের ওপর বৈশ্বিক চাহিদা বাড়িয়ে দেয়, যা ডলারের দাম উঁচু করে রাখে। অথচ তিনি আবার ডলারকে দুর্বল করতে চান রপ্তানি বাড়ানোর জন্য!

এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্প যেসব নীতি নিতে যাচ্ছেন—যেমন বড় অঙ্কের শুল্ক (Tariffs) আরোপ—সেগুলো আসলে মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) বাড়াতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়াবে (Interest Rate Hike), যা ডলারকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ছাড়া যেসব দেশ ট্রাম্পের শুল্কের শিকার হবে, তারা যদি নিজেদের মুদ্রার মান ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেয়, তাহলেও ডলারের মূল্য আপেক্ষিকভাবে বেড়ে যাবে। (শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতারা বিদেশি পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত হয়। মুদ্রার মান কমিয়ে সেই দেশ শুল্কের প্রভাবকে আংশিকভাবে অফসেট করতে পারে, যাতে আমেরিকান ক্রেতারা তাদের পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী থাকে।)

এর পাশাপাশি কর কমানোর (Tax Cuts) প্রতিশ্রুতি থাকায় অর্থনীতিতে প্রবাহিত অর্থের জোগান বাড়তে পারে, যা আবার মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে। সব মিলিয়ে এই দ্বিমুখী অবস্থান থেকে ট্রাম্প আসলে কোন দিকে যাবেন—ডলারের মান কমিয়ে রপ্তানি খাতকে চাঙ্গা করা, নাকি ডলারের রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা বজায় রাখা—২০২৫ সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ধাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

বাজেট ঘাটতি ও সরকারি ব্যয়

তেল ও ডলারের প্রসঙ্গ ছাড়াও ২০২৫ সালে আরেকটি বড় রাজনৈতিক অগ্নিপরীক্ষা হতে যাচ্ছে বাজেট ঘাটতি (Budget Deficit)। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতিগুলো—বিশেষত কর কমানো—বাজেট ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

দ্য কমিটি ফর এ রেসপনসিবল ফেডারেল বাজেট (Committee for a Responsible Federal Budget) নামের অরাজনৈতিক সংস্থার (Non-Partisan Organization) হিসাব অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে ট্রাম্পের নীতিগুলো বাস্তবায়িত হলে মার্কিন বাজেট ঘাটতি জিডিপির (GDP) ১০ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে, যা বর্তমানে প্রায় ৬ শতাংশের একটু বেশি।

ট্রাম্পের প্রচার শিবির অবশ্য বলছে, তারা ট্যাক্স বাড়িয়ে নয়, বরং ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৩ শতাংশে নামিয়ে আনবে। কিন্তু এত বড় অঙ্কের ঘাটতি কমাতে গেলে শত শত বিলিয়ন (হয়তো ট্রিলিয়ন) ডলারের ব্যয় ছাঁটাই করতে হবে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে সরকারি ব্যয় কমানোর (Spending Cuts) বিষয়টি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি, তাই প্রশ্ন থেকে যায়—এই বিপুল পরিমাণ কাটছাঁট কোথা থেকে করা হবে?

ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE)

ট্রাম্প প্রশাসনের তথাকথিত “মহৌষধ” হতে পারে ডিপার্টমেন্ট অফ গভার্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (Department of Government Efficiency), সংক্ষেপে ডোজ (DOGE)। এটি পরিচালনা করবেন ইলন মাস্ক (Elon Musk) ও বিবেক রামাস্বামী (Vivek Ramaswamy)।

মাস্ক দাবি করেছেন, তিনি ২ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো সরকারি অপচয় (Waste) চিহ্নিত করে সেটা দূর করতে পারবেন, যা প্রায় পুরো বাজেটকেই ভারসাম্যে (Balance) নিয়ে আসবে। মাস্কের ভাষ্য অনুযায়ী, এগুলো হবে পুরোপুরি দক্ষতা বৃদ্ধি (Efficiency Savings)—অর্থাৎ, সরকারি সেবা বা কাজের পরিধি না কমিয়েই খরচ বাঁচানো সম্ভব হবে।

যদি সত্যিই তিনি এই ব্যাপক পরিমাণ সাশ্রয় করতে পারেন, সেটা হবে এক বিরাট সাফল্য। কিন্তু ইতিহাস বলে অন্য কথা। অতীতে প্রায় সব প্রেসিডেন্টই কোনো না কোনোভাবে সরকারি অপচয় কমানোর (Cut Government Waste) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রোনাল্ড রেগান (Ronald Reagan) ১৯৮২ সালে প্রাইভেট সেক্টর সার্ভে অন কস্ট কন্ট্রোল (Private Sector Survey on Cost Control) নামে “গ্রেস কমিশন” (Grace Commission) গঠন করেছিলেন—যা অনেকাংশে আজকের DOGE-এরই পূর্বসূরী। সেখানে প্রায় ২,০০০ ব্যবসায়িক কর্মকর্তা (Business Executives) ১৮ মাস খেটে সরকারি ব্যয় কমানোর উপায় খুঁজেও তেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি।

সুতরাং, মাস্ক ও রামাস্বামী সাময়িকভাবে কিছু টুকিটাকি ব্যয় কমাতে পারলেও, ২ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো বিশাল পরিমাণ “নিষ্কণ্টক সাশ্রয়” (Pure Efficiency Savings) পাওয়া কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। উপরন্তু, DOGE-কে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই (mid-2026) কাজ শেষ করতে হবে, যা সময়সীমাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?

ধরে নিলাম, মাস্ক যদি সেই ২ ট্রিলিয়ন না খুঁজে পান, তাহলে ট্রাম্পকে কী করতে হবে? হয় তাকে বাজেট ঘাটতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে, নয়তো কঠিন স্পেন্ডিং-কাট এর মুখোমুখি হতে হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প আসলে ঘাটতি কমাতে কতটা আগ্রহী, আর ইলন মাস্কের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবই বা কতটা—এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

যদি দেখা যায় যে ট্রাম্প আসলে ঘাটতি বাড়তে দিতে দ্বিধাবোধ করছেন না, তবে বন্ড মার্কেট (Bond Market) ও ঐতিহ্যগতভাবে “ব্যয়সংকোচী” (Fiscal Restraint) রিপাবলিকান পার্টি (Republican Party) কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। রেগান-যুগ থেকেই রিপাবলিকান পার্টি সরকারী ব্যয় হ্রাস ও বাজেট ভারসাম্যকে (Balanced Budget) নীতিগতভাবে সমর্থন করে আসছে, যদিও বাস্তবে তা সবসময় ঘটেনি। যদি ট্রাম্প ঘাটতি বাড়ার পথ বেছে নেন, সেটি ভবিষ্যতে আরও রাজনৈতিক বিরোধের জন্ম দিতে পারে।

২০২৫: দীর্ঘ এক বছরের সূচনা

সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। তেল ও জ্বালানির দাম, ডলারের মূল্য, সরকারি ঘাটতি – এই তিনটি বড় খাতে ট্রাম্পের অবস্থান বা পদক্ষেপ কী হবে, সেটাই দেখার বিষয়। একদিকে তিনি ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করবেন, অন্যদিকে করপোরেট স্বার্থ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক ব্যবস্থার বিভিন্ন চাপও সামলাতে হবে।

আরও পড়ুন – ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো এবং এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে যেভাবে রূপান্তরিত হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে চাইলে দেখুন – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.