Table of Contents
ভূমিকা
ইন্টারনেটে যৌন-সামগ্রী (Adult content) অনেক দিন ধরেই মানুষের জন্য “ফ্রি” অর্থাৎ বিনামূল্যে পাওয়া গেছে। তবে “ওনলি-ফ্যানস” (OnlyFans) নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এই ধারণাটিকে একেবারে পাল্টে দিয়েছে—তারা ব্যবহারকারীদের দিয়ে এই ধরণের কনটেন্টের জন্য টাকা আদায়ে সমর্থ হয়েছে এবং অভাবনীয় লাভ করেছে। মাত্র কয়েক বছরে তাদের রাজস্ব (Revenue) ২০০০%-এরও বেশি বেড়েছে, ২০২৩ সালে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
শুরুতে অনেকের ভাবনা ছিল, পুরনো পদ্ধতিতে যেসব ওয়েবসাইট বিনামূল্যে “এডাল্ট কনটেন্ট” সরবরাহ করে, তাদের সঙ্গেই ওনলি-ফ্যানসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। অথচ ওনলি-ফ্যানস সামগ্রিকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (Social media platform) মতো দেখালেও, এর আড়ালে ভিন্ন এক ব্যবসায়িক কাঠামো (Business model) কাজ করে।
তারা অ্যাপলের (Apple) অ্যাপ স্টোরে নেই, গুগলের (Google) প্লে স্টোরেও নয়—যা মূলধারার বেশিরভাগ অ্যাপ প্ল্যাটফর্মের জন্য অত্যাবশ্যক। তা সত্ত্বেও, তারা কীভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছে? কী তাদের মূলমন্ত্র? এই নিবন্ধে আমরা খুঁটিনাটি দেখব—কেন ওনলি-ফ্যানস ইতালির কোনো দোকান বা অন্যকিছু নয়, বরং ডিজিটাল মার্কেটে এক আধিপত্যশীল প্রবেশদ্বার হতে পেরেছে।
ব্যবসায়িক মডেলের (Business Model) ভিন্নতা
ফ্রি কনটেন্টের যুগে সশুল্ক (Paywall) প্রতিষ্ঠা: অনেক কোম্পানি চেষ্টা করেছে “ইন্টারনেটে নগ্নতা বা যৌন বিষয়” (Being naked online) থেকে অর্থ উপার্জন করার। অনেক ক্ষেত্রে দর্শক অভ্যস্ত “ফ্রি” পর্নোগ্রাফি (Pornography) বা বিনামূল্যের কনটেন্টে। ওনলি-ফ্যানস এই ধারনায় ছেদ এনেছে।
- “ফ্রি”-র বদলে গ্রাহক (Subscriber) সরাসরি কনটেন্ট নির্মাতাকে (Creator) অর্থ প্রদান করে।
- এটি “সোশ্যাল মিডিয়া”র মতো দেখালেও সব টাকা আসে মূলত সাবস্ক্রিপশন ও কাস্টম-সামগ্রী থেকে, বিজ্ঞাপন (Advertisement) নয়।
- ওনলি-ফ্যানসের CEO বা শীর্ষ কর্মকর্তারা বলে থাকেন, “আমরা তখনই উপার্জন করি, যখন ক্রিয়েটর উপার্জন করে” (We only make money when creators make money)।
সরাসরি আয় ও রাজস্ব ভাগাভাগি (Direct Payment & Revenue Share): ক্রিয়েটর (Creator) তাদের ফ্যানদের কাছে মাসিক ৫০ ডলার (50$) পর্যন্ত সাবস্ক্রিপশন ফি ধার্য করতে পারেন। এর ২০% ওনলি-ফ্যানস রাখে, বাকি ৮০% পান ক্রিয়েটর। এটি অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রচলিত কঠিন নিয়মের (যেমন: নির্দিষ্ট সাবস্ক্রাইবার বা ভিউ এর মাইলস্টোন পেরোতে হবে) চেয়ে সহজতর। ৪ বছরে ওনলি-ফ্যানসের (OnlyFans) রাজস্ব ২০০০%+ বেড়েছে। ২০২৩ সালে তারা ৬.৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এদিকে অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি যেমন ফেসবুক (Facebook) বা ইনস্টাগ্রাম (Instagram) প্রধানত বিজ্ঞাপন থেকেই (Advertising) টাকা উপার্জন করে। ওনলি-ফ্যানস বেশ কৌশলী। তারা সবকিছু সোজাসুজি ফ্যান ও ক্রিয়েটরের মাঝে আর্থিক লেনদেনের (Financial transaction) মাধ্যমে চালায়। যেহেতু এটি কাজ করছে, অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো—যেমন টুইটার (Twitter/X), ইনস্টাগ্রাম—এখন সাবস্ক্রিপশন ফিচার আনছে। কিন্তু ওনলি-ফ্যানসের মতে, সাবস্ক্রিপশন শুধু পুরো মডেলের একটা খণ্ডমাত্র; এর বাইরে রয়েছে “পে-পার-ভিউ” (Pay-per-view), টিপ (Tip), কাস্টম ম্যাসেজ (Custom messaging) ইত্যাদি।
লোকের ভুল ধারণা: “শুধু নগ্ন ছবি দিলেই টাকা আসবে?”: কিছু মানুষ ভাবে, ওনলি-ফ্যানসে “কিছু সেক্সি পোশাকে ছবি দিলেই” (Taking some sexy pictures in lingerie) অঢেল টাকা আসবে। কিন্তু আসলে এটি অনেক জটিল। একজন সফল ক্রিয়েটরকে অনেক খাটতে হয়—নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি, ফ্যানদের সঙ্গে বার্তা বিনিময়, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার (Promotion), বিপণন (Marketing), ইত্যাদি। একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিয়েটর যেমন Louise বলেছেন, “অনেক কাজ—আমি যদি কনটেন্ট তৈরি না করি, তখন আমি মেসেজিং করছি, মার্কেটিং করছি। ভাগ্যিস আধা ঘণ্টা টিভি দেখতে পারি।”
ওনলি-ফ্যানসের সূচনা ও অনন্য লাইসেন্সিং কৌশল
প্রতিষ্ঠা ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ভিন্নতা: ২০১৬ সালে ওনলি-ফ্যানস চালু হয়। আগে যেমন Patreon, কেনিয়ান (Kenyans?), ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ছিল, যারা ফ্যানদের কাছ থেকে সমর্থন নিতে দিত, ওনলি-ফ্যানস সেটিকে আরও নিখুঁতভাবে “এডাল্ট কনটেন্ট” (Adult content) সমর্থনের দিকে নিয়ে যায়। একটি বড় পার্থক্য হলো—ফেসবুক, ইউটিউব বা ইনস্টাগ্রামের মতো যেখানে বিজ্ঞাপন প্রধান, সেখানে ওনলি-ফ্যানস আয় করে সরাসরি ফ্যানদের থেকে, কোনো বিজ্ঞাপন নেই। ২০১৮ সালের দিকে টাম্বলর (Tumblr) প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট নিষিদ্ধ করে, ফলে অনেক ক্রিয়েটর প্ল্যাটফর্ম থেকে বিদায় নেয়। কোভিড-১৯ (2020) সময়ে অনেকেই ডিজিটাল আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে ওনলি-ফ্যানসে আসে, ফলে প্ল্যাটফর্ম দ্রুত বিকশিত হয়।
অ্যাপ স্টোর থেকে দূরে থাকা: অনেক বড় সোশ্যাল অ্যাপ—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক—অ্যাপলের (Apple) অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লে স্টোরে (Google Play Store) আছে। ওনলি-ফ্যানস সেখানে নেই, কারণ অ্যাপলের নীতিমালা (Terms of Service) পূর্ণাঙ্গ পর্নোগ্রাফি সমর্থন করে না। এতে ওনলি-ফ্যানসকে কিছুটা “স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার” কাটতে হচ্ছে (Swimming against the current)। তবে এতে তারা ১৫-৩০% অ্যাপ স্টোর কমিশন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এড়াতে পারছে। ফলে তাদের ৮০-২০ ভাগাভাগির (Split) মডেল বজায় রাখা সহজ হয়েছে। যদি অ্যাপলে থাকত, তাহলে তাদের ২০% এর মধ্যেও আরও ৩০% কেটে নিতে হতো—অর্থাৎ লাভ কমে যেত।
অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরতা: তবে বিশাল ইউজারবেস (User base) ধরে রাখার জন্য ওনলি-ফ্যানস ক্রিয়েটরদের ওপর নির্ভর করে, যারা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেই নিজেদের প্রচার করে। আপনি যদি একজন নতুন ক্রিয়েটর হন এবং আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার না থাকে, তাহলে ওনলি-ফ্যানসে স্রেফ উপস্থিতি দিয়ে খুব একটা সাফল্য মিলবে না। একজন ক্রিয়েটর বলেন, “আপনাকে নিজেই গ্রাহক (Customer) নিয়ে আসতে হবে—মার্কেটিং, কনটেন্ট শেয়ার, ইত্যাদি আপনি করেন, ওনলি-ফ্যানস স্রেফ প্ল্যাটফর্ম দেয়।” অবশ্য ২০২১ সালে ওনলি-ফ্যানস “OFTV” নামে এক নিরাপদ (Safe-for-work) প্ল্যাটফর্ম চালু করে, কিন্তু সেটিও মূলত নিয়মিত কনটেন্টের সহযোগী প্রচার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
সার্চ ব্যবস্থা কঠিন: ওনলি-ফ্যানসের সার্চ ফিচার (Search function) ইচ্ছাকৃতভাবে সীমিত করা হয়েছে বলে কোম্পানি বলছে। আইনগত সীমার (Legal line) কাছাকাছি থাকতে চায় তারা—অর্থাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কনটেন্ট না রেখে, বরং নিরাপদ দূরত্বে থাকতে। “Yoga” সার্চ করলে দেখা যাবে, খুব সামান্য ফলাফল পাওয়া যায়, অ্যালগরিদমিক সাজেশন নেই। হোমপেজে (Homepage) বা সাজেস্টেড অ্যাকাউন্টে (Suggested accounts) সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্টগুলো দেখা যায়, কিন্তু ব্যক্তিগত ডেটা বা ব্যবহার অনুসারে কাস্টমাইজ করা হয় না।
মাইক্রো-লেনদেন (Microtransactions) ও সবকিছুর থেকে আয়
সাবস্ক্রিপশন ছাড়াও এককালীন কেনাকাটা (One-off Purchases) বাড়ছে: ওনলি-ফ্যানস এখন শুধু মাসিক সাবস্ক্রিপশন (Monthly subscription) থেকেই বেশি আয় করছে না; তাদের অনেকটাই আসে পে-পার-ভিউ ম্যাসেজ (Pay-per-view messaging), টিপ (Tips), পেইড ডাইরেক্ট ম্যাসেজ (Paid direct messaging), পেইড লাইভস্ট্রিম (Paid livestream), পেইড ভয়েস নোট (Paid voice notes) ইত্যাদি থেকে। ২০২৪ সালের চিত্র অনুযায়ী, ওনলি-ফ্যানসের বেশি আয় এমন ছোট ছোট লেনদেনে (Microtransactions) এসেছে। এর অর্থ কী? — গ্রাহকরা সাবস্ক্রিপশন নিলেও, প্রিয় ক্রিয়েটরকে অতিরিক্ত পরিশোধের মাধ্যমে বিশেষ কনটেন্ট বা ব্যক্তিগত বার্তা পেতে রাজি।
কেন মানুষ অর্থ ব্যয় করে?: বেশি পরিমাণ অর্থের পেছনে অনেকে “ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক” (Deeper relationship) বা “আনন্দদায়ক কথোপকথন” কামনা করেন। কেউ কেউ “একাকীত্ব দূর করতেও” (Someone to talk to) ওনলি-ফ্যানসে যান। এই ধরণের সংযোগমূলক সুবিধাই অন্য ফ্রি পর্নোগ্রাফির চাইতে ওনলি-ফ্যানসের অফারকে আলাদা করে তোলে। ব্যবহারকারীরা সরাসরি মেসেজ/রেসপন্স পান, যা অনেকের কাছে বেশি মূল্যবান।
গড় আয়ের তথ্য (Average Earnings) ও বাস্তবতা: কোম্পানি “গড় ক্রিয়েটরের” আয়ের (Average creator’s earnings) স্পষ্ট কোনও সংখ্যা দেয় না। কিন্তু ফাউন্ডার ও কর্মকর্তারা বলেন, এখানে কেউ কেউ বিশাল পরিমাণ উপার্জন করেন, আবার কেউ সামান্য কিছু, অনেকের মাঝামাঝি। সফল উদাহরণ হতে পারেন কেউ, যিনি আগে শিক্ষকতা করতেন, খাদ্যব্যাংকে (Food bank) সহায়তা নিতেন; পরে ওনলি-ফ্যানসে এসে তিনি “এক মিলিয়ন ডলার” (Million) আয় পার করেছেন। তবে এমন অনেকে আছেন, যাদের আয় সামান্য।
ব্যাংক ও অর্থপ্রদানের চ্যালেঞ্জ
২০২১ সালের অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট নিষিদ্ধের চেষ্টা: ২০২১ সালে ওনলি-ফ্যানসের CEO “অ্যাডাল্ট কনটেন্ট” নিষিদ্ধের (Banned adult content) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা কয়েক দিনের মধ্যে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কারণ মূল সমস্যা ছিল, বড় ব্যাংক ও পেমেন্ট প্রসেসরদের (Payment processors) সাথে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এর আগে কোম্পানি অনেক দ্রুত বড় হয়েছে, “অতিরিক্ত রাজস্ব” দেখে অনেকে ভয় পেয়েছে। কিছু ব্যাংক “সেক্স ওয়ার্ক” (Sex work) বা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মকে “হাই-রিস্ক” (High-risk) ধরে, তাই তারা উচ্চ ফি বা সেবাই দেয় না। বর্তমান CEO ক্লেইলি (Keily) বলেন, এখন তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দেখাতে পেরেছেন যে তাদের “নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা” শক্তিশালী। ফলে ধীরে ধীরে তারা আবার সম্পর্ক স্থাপন করতে পারছেন।
কেন উচ্চ ঝুঁকি?: পেমেন্ট প্রসেসররা বলে, প্রাপ্তবয়স্ক বাণিজ্যে “বাধ্যতামূলক ছলে প্রতারণা,” “রিফান্ড/চার্জব্যাক” (Chargebacks) বা “আইনি ও নৈতিক ঝুঁকি” থাকে—এসবের জন্য তারা অধিক ফি নেয়। অনেক ক্ষেত্রে ১-৩% এর জায়গায় ১০% পর্যন্ত কেটে নেয়। ওনলি-ফ্যানস একই সঙ্গে বহু পেমেন্ট প্রোভাইডার (Payment provider) ব্যবহার করে বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করতে। আর সাথে সাথে তারা নিশ্চিত করতে চায়, কোনো “অবৈধ কনটেন্ট” (Illegal content) যেন না থাকে। “আইনি সামগ্রী” (Legal) রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কোম্পানি সরাসরি নগদ লেনদেনে যুক্ত।
বয়স যাচাই (Age Verification) ও নিরাপত্তা
ওনলি-ফ্যানসে ক্রিয়েটর (Creator) হতে চাইলে ৯টি প্রমাণপত্র (ID) জমা দিয়ে প্রমাণ করতে হয় যে আপনি ১৮ বছরের ওপরে। কিন্তু দর্শকের (Viewer) জন্য অনেকটা সহজ।
ইমেইল ঠিকানা ও পেমেন্ট পদ্ধতি (Payment method) দিলেই অ্যাকাউন্ট তৈরি করা যায়। পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখ স্ক্যান (Face scan) করতে হয়, যা শুধুমাত্র যাচাই করে আপনি কি ১৮ বছরের ওপর? — তারপর তাৎক্ষণিকভাবেই এক্সপ্লিসিট (Explicit) কনটেন্টে প্রবেশ।
বলা হয়, প্রত্যেকটি কনটেন্ট স্বয়ংক্রিয় ও মানুষ (Automated + human) দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। তবে ভুল বা ফাঁক থেকে যেতেই পারে। যুক্তরাজ্যের (UK) নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওনলি-ফ্যানসের এই মুখ স্ক্যান পদ্ধতি যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে তদন্ত করছে।
অন্যান্য ধাঁচের ক্রিয়েটর ও ভবিষ্যৎ
প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট ছাড়াও: ওনলি-ফ্যানস নিজেকে শুধু “এডাল্ট” প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং সাধারণ ক্রিয়েটর ইকোনমির (Creator economy) অংশ বলে চিহ্নিত করছে, যার বাজার ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এখন সেখানে খেলোয়াড়, কৌতুকশিল্পী (Athletes, comedians), ইত্যাদি সবাই যুক্ত হতে পারে। সিইও কেলি (CEO Keily) বলেন, “আমি চাই সবধরণের ক্রিয়েটর ওনলি-ফ্যানসে আসুক। আমাদের গল্পটা যেন এখানে একটা বড় বিজনেস সাকসেস।” রাইটার্স, গেমার, শেফ—যারাই ব্যক্তিগত পেইড কনটেন্ট বিক্রি করতে চান, তাদের জন্য ওনলি-ফ্যানস পথ খুলে দিতে চায়।
ব্যবসায়িক সাফল্য: “কিছুটা নোংরা” হলেও সত্য?:
কিছু সমালোচক বলছেন, ওনলি-ফ্যানস একধরনের “কুসংস্কার ভাঙার” (They treat business, not dirty) শক্তি দেখিয়েছে—তারা ব্যবসাটা দেখছে একেবারে মূল ধারার মতো, “নোংরা” নয়, বরং আইনি ও স্বচ্ছ উপায়ে। অন্যরা বলছেন, অন্য কেউ যেন ওনলি-ফ্যানসের মতন সেবা টেকওভার করতে পারছে না। কারণ এই আঙ্গিকে এই ব্যবসা “কঠিন” কিন্তু ওনলি-ফ্যানস তুলনামূলক সফল।
অ্যাপ স্টোর এড়িয়ে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার
ওনলি-ফ্যানসের বলছে, “আমরা না থাকলে অনেক এডাল্ট কনটেন্ট নির্মাতাই মূল্যবান আয়ের পথ হারাতেন। আমরা ২০ বিলিয়ন ডলার (20 billion) ইতোমধ্যে ক্রিয়েটরদের পরিশোধ করেছি।” তাদের গ্রাহক ৩০ কোটি এর বেশি, ক্রিয়েটর ৪০ লাখ। অ্যাপ স্টোর বা প্লে স্টোর এড়িয়ে তারা ৮০-২০ ভাগাভাগি বজায় রাখতে পারছে, যা ক্রিয়েটরদের কাছে আকর্ষণীয়। একইসাথে, অন্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম (টুইটার, টিকটক) ব্যবহার করে ক্রিয়েটররা ওনলি-ফ্যানসের গ্রাহক টেনে আনেন। কাজেই, ওনলি-ফ্যানস অন্যদিকে এসইও (SEO) বা ইন্টারনাল সার্চের দক্ষতা কম রেখেছে, যেন অ্যাপ স্টোরের বিধিনিষেধ বা আইনগত জটিলতা এড়িয়ে চলতে পারে।
স্পষ্ট অবস্থান—“অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট নিষিদ্ধ নয়”
২০২১ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট নিষিদ্ধের (Adult content ban) ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক হলেও, ওনলি-ফ্যানস আবার তা ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে, “আমরা অ্যাডাল্ট কনটেন্ট নিষিদ্ধ করছি না।” একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ব্যাংক ও পেমেন্ট প্রসেসরদের সাথে সম্পর্ক, যারা “উচ্চ ঝুঁকি” বিবেচনায় ফি বা সেবা প্রদানে সমস্যা তৈরী করে। কিন্তু ওনলি-ফ্যানস দাবি করে, তাদের সিকিউরিটি ও ঝুঁকি-নিয়ন্ত্রণ উচ্চমাত্রার, তাই ধীরে ধীরে অনেকে তাদের পরিষেবা দিচ্ছে। এক আইনি বিশেষজ্ঞের ভাষায়, “আপনি যখন সরাসরি পর্নোগ্রাফির অর্থের সঙ্গে যুক্ত, তখন আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে সবকিছু বৈধ ও নিরাপদ; নইলে বিরাট ঝুঁকি।”
বৃহত্তর ক্রিয়েটর অর্থনীতি ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
ক্রীড়াবিদ থেকে গায়ক, সকলের জন্য:
এখন ওনলি-ফ্যানস শুধু প্রাপ্তবয়স্ক বিষয় না, বরং খেলোয়াড়, গায়ক, কমেডিয়ান—সবার জন্য “সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতি” অফার করছে। ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বৃহত্তর ক্রিয়েটর ইকোনমিতে (Creator economy) তারা নিজেদের অন্যতম বড় প্লেয়ার করতে চায়। যদিও একসময় কেউ ভাবত, এটি “এডাল্ট” মুখ্য প্ল্যাটফর্ম; এখন তারা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভবিষ্যতে আরও বহুমুখী কনটেন্ট আসবে। একই সঙ্গে ফ্যানেরা “প্রিয় তারকা” বা “সেলিব্রিটি”-কে সরাসরি অর্থ দিয়ে যোগাযোগ বা এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট পাবেন।
“ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্প”:
CEO কেলি বলেছেন, “আমি চাই সবাই আমাদের ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্পটি চিনুক—এখানে শুধু এডাল্ট কনটেন্ট নয়, বরং নতুন ধাঁচের ডিজিটাল অর্থনীতি।” অনেকে মনে করছেন, ওনলি-ফ্যানস ভবিষ্যতে আরও mainstream হতে পারে, যদিও এডাল্ট কনটেন্ট তাদের মুখ্য চালিকাশক্তি।
উপসংহার
ওনলি-ফ্যানস (OnlyFans) “অ্যাপ স্টোরের বাইরের” (Outside Apple’s App Store) একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে, যেখানে সরাসরি ভোক্তা-ক্রিয়েটর লেনদেন হয়। পর্নোগ্রাফি বা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টকে (Adult content) সশুল্ক পদ্ধতিতে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তারা অন্যতম অগ্রগামী কোম্পানি।
তবে তাদের সাফল্যের পেছনে রয়েছে—
- স্বতন্ত্র ব্যবসায়িক মডেল (Distinct business model): বিজ্ঞাপন নয়, বরং সরাসরি সাবস্ক্রিপশন, পে-পার-ভিউ, টিপ ইত্যাদি থেকে অর্জিত আয়।
- অ্যাপ স্টোর এড়িয়ে স্বাধীনতা (Avoiding app stores): অ্যাপলের ৩০% চার্জ থেকে মুক্ত থেকে তারা ৮০-২০ ভাগাভাগি মডেল বজায় রাখতে পেরেছে।
- উচ্চঝুঁকি যৌনসামগ্রী থেকে আইনি নিরাপত্তা (Legal compliance for adult content): যেখানে ব্যাংক ও পেমেন্ট প্রসেসরের সাথে ভাল সম্পর্ক রক্ষায় নিরাপত্তা ও যাচাই (ID verification, monitoring) ব্যবস্থায় বড় বিনিয়োগ।
- সাবস্ক্রিপশন + মাইক্রো-লেনদেন (Subscription + microtransactions): মানুষের “ঘনিষ্ঠ সংযোগ” চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে উচ্চ পরিমাণ আয়।
- নতুন বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট (Diversification): ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মিউজিশিয়ান, অন্যান্য স্রষ্টা যুক্ত হতে পারে—এতে ভবিষ্যতে “সেক্স ওয়ার্ক” ছাড়াও অন্যান্য কনটেন্টের বাজার পাকা হবে।
ব্যবসায়িকভাবে ওনলি-ফ্যানস ইতিমধ্যে বিশাল সাফল্য দেখিয়েছে—২০২৩ সালে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার (6.6 Billion) আয়। ২০২৪-এর পরিস্থিতিতে তারা আরও বিস্তারে যাচ্ছে। এর মধ্যে কোনো “নোংরা” লেবেল থাকার পরও, বাস্তবে এটিকে “প্রযুক্তি-ভিত্তিক পরিসেবার উদ্ভাবনী মডেল” হিসেবে দেখা যায়। “Apple বা Google প্লে স্টোরে না থেকেও কিভাবে এই বিশাল অর্থ অর্জন?”—উত্তর হলো, ওনলি-ফ্যানস নিজের পথ বেছে নিয়েছে: সরাসরি ওয়েবসাইট, নিজস্ব পেমেন্ট সিস্টেম, ক্রিয়েটরদের অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করার স্বাধীনতা। তারাই দেখিয়ে দিয়েছে, “এডাল্ট” বা যেকোনো প্রাইভেট কনটেন্ট ফ্রি পদ্ধতিকে পাল্টে দেওয়া সম্ভব, যদি একজন ক্রিয়েটর ও দর্শকের মাঝে সরাসরি সংযোগের মানসিকতা গড়ে তোলা যায়। শেষমেশ, বৃহত্তর “ক্রিয়েটর ইকোনমি”র এক উল্লেখযোগ্য অংশ এখন ওনলি-ফ্যানসের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।
সাবস্ক্রাইবারেরা বারবার চিৎকার করে বললেও, “গুগল প্লে বা অ্যাপ স্টোরে চলে আসুন”—ওনলি-ফ্যানসের CEO ও মালিকপক্ষ এটিতে ইচ্ছাকৃত আগ্রহ দেখায় না। এভাবেই তারা এ খাতের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে বিভিন্নতর রয়ে গেছে, এবং গ্রাহকদের কাস্টমাইজড অভিজ্ঞতার (Custom experience) জন্য ফি নেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে, “ওনলি-ফ্যানস কি কেবলই এডাল্ট কনটেন্টের জন্য?”—অংশত হ্যাঁ, তবে এটি যে ডিজিটাল জগতে বড় মাত্রায় কমার্স (Commerce) পরিবর্তন করে দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। বড় বিনিয়োগকারী ও সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মগুলোও এখন সাবস্ক্রিপশন পদ্ধতি আনছে, তবে ওনলি-ফ্যানস এরই মধ্যে বিপুল ধন-সম্পদ ও লয়্যাল ক্রিয়েটর-ভিত্তি গড়ে তুলেছে। সেইসাথে তারা আরও “মূলধারায়” প্রবেশের চেষ্টা করছে—যেমন: ক্রীড়াবিদ, সংগীতশিল্পী, মডেল ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হতে।
শীঘ্রই যদি কোনো বড় স্ক্যান্ডাল বা আইনি বাধা না আসে, তাহলে ওনলি-ফ্যানস তার অনন্য পদ্ধতিতে ডিজিটাল কনটেন্ট বাজারে “সেচুরেটেড” হতে পারবে—এবং অ্যাপলের ৩০% ছাড়াই, অত্যধিক লাভ ধরে রাখবে। এভাবেই ওনলি-ফ্যানস সম্ভবত অনেকদিন “শীর্ষ সাবস্ক্রিপশন-কেন্দ্রিক” প্ল্যাটফর্ম হিসেবে টিকে থাকবে।\
বিশ্বের বিভিন্ন বিজনেস নিয়ে আরও জানতে দেখুন – ব্যবসা সংবাদ
Leave a Reply