যুক্তরাজ্যের কর ব্যবস্থাটি কেন এত অদ্ভুত?

ভূমিকা

যুক্তরাজ্যের (United Kingdom) ট্যাক্স ব্যবস্থা (Tax system) বেশ অদ্ভুত—কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলবেন “খুবই অদ্ভুত”। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ব্রিটেনের বিভিন্ন সরকার নতুন নতুন কর (Tax) আরোপ করেছে, পুরনো করব্যবস্থায় সংস্কার (Tinker) এনেছে, রিবেট (Rebate) কাঠামোতে ঘন ঘন পরিবর্তন করেছে—ফলে সামগ্রিকভাবে এমন এক পলিসি-জট তৈরি হয়েছে যে, প্রথম দেখায় একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ (Economist) পর্যন্ত চমকে যেতে পারেন।

এটি শুধু সাধারণ মানুষ কিংবা ছোট ব্যবসায়ী নয়, বরং কেতাবি জ্ঞান রাখা লোকজনকেও বিভ্রান্ত করতে পারে। কীভাবে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তার সহজ প্রমাণ দেখা যাবে যুক্তরাজ্যের “মার্জিনাল ট্যাক্স রেট” (Marginal tax rate)-এর বিভিন্ন স্তর (Different levels of income) পর্যালোচনা করলে। সত্যিকারের একটি “প্রগ্রেসিভ ট্যাক্স রেট” (Progressive tax rate) ধাপে ধাপে বাড়তে থাকার কথা, কিন্তু যুক্তরাজ্যের কর প্রথায় তা একেক জায়গায় হঠাৎ লাফ দিয়ে বেড়ে যায়, আবার অন্য জায়গায় কমে আসে—যেন এক অদ্ভুত আঁকাবাঁকা গ্রাফ।

যদিও আলোচনার প্রধান স্থানটি হলো এই মার্জিনাল ট্যাক্স রেটের উদ্ভট অবস্থা, তবে এটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। ইউকে’র করব্যবস্থায় আরও বিচিত্র নিয়ম-কানুন (Weird rules and caps) রয়েছে, যা “কেন” ও “কীভাবে” তৈরি হয়েছে—সেই ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়।

এ নিবন্ধে আমরা দেখব, যুক্তরাজ্যে মার্জিনাল ট্যাক্স রেট কেন এত বিচিত্র ও অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, আর সামগ্রিক কর কাঠামো (Tax system)-তে যেখানে নজর দিই, সেখানেই কেন উদ্ভট সব বিধিনিষেধ ও হার (Rates) চোখে পড়ে।

মার্জিনাল ট্যাক্স রেট বনাম এফেক্টিভ ট্যাক্স রেট

প্রথমেই স্পষ্ট করে নেওয়া দরকার, “মার্জিনাল ট্যাক্স রেট” (Marginal tax rate) আসলে কী এবং এটি “এফেক্টিভ ট্যাক্স রেট” (Effective tax rate)-এর থেকে কেন ও কীভাবে আলাদা। কারণ, জনসাধারণের বড় একটি অংশের মধ্যেই সম্ভবত এ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি (Misunderstanding) আছে।

  • এফেক্টিভ ট্যাক্স রেট (Effective tax rate): কারও মোট আয়ের (Total income) কত শতাংশ সে কর হিসেবে দেয়, সেটাই হলো তার এফেক্টিভ ট্যাক্স রেট। সহজ কথায়, বার্ষিক মোট আয় ধরি X পাউন্ড, আর সেই আয়ের ওপর মোট ট্যাক্স ধরি Y পাউন্ড। তাহলে এফেক্টিভ ট্যাক্স রেট = (Y / X) * ১০০%।
  • মার্জিনাল ট্যাক্স রেট (Marginal tax rate): এটি হলো সেই হার (Percentage) যা কেউ তার “পরবর্তী ১ পাউন্ড” আয়ে দিলে কর হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ, আপনি যদি বর্তমানে ৫০,০০০ পাউন্ড আয় করে থাকেন, পরবর্তী ১ পাউন্ড বা অতিরিক্ত আয় হলে সেই অংশে কত কর আরোপ হবে—সেটাই মার্জিনাল হারের নির্দেশক।

মার্জিনাল ট্যাক্স রেট গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মানুষকে “অতিরিক্ত আয় (Extra income) করার প্রতি” কতটা উৎসাহী (Incentive) বা নিরুৎসাহী (Disincentive) করে তোলে, সেটি নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার মার্জিনাল ট্যাক্স রেট ৭০% হয়, তবে নতুন আয় করা প্রতিটি ১ পাউন্ডের মধ্যে আপনাকে ৭০ পেন্স কর হিসেবে দিতে হবে—ফলে হাতে থাকবে মাত্র ৩০ পেন্স। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, আপনি কি সত্যিই অতিরিক্ত পরিশ্রম (Extra hours) বা ওভারটাইম (Overtime) করতে আগ্রহী হবেন, যদি তার বেশিরভাগ অংশ করেই কাটা যায়?

তার ওপর, যদি আপনার সন্তানের (Child) জন্য অতিরিক্ত চাইল্ডকেয়ার (Childcare) খরচ করতে হয় ওভারটাইম কাজের ফলে, দেখা যাবে সেই আয় থেকে পাওয়া “নেট” অর্থ চাইল্ডকেয়ারের খরচও মেটাতে পারে না। ফলে এ অবস্থায় আপনি অতিরিক্ত কাজ করতে নিরুৎসাহিত হবেন। এ কারণেই সরকারগুলো চায় না মার্জিনাল হারের মাত্রা অত্যধিক উঁচু হোক—নইলে তা মানুষকে কাজ করার উদ্দীপনা থেকে বিরত রাখতে পারে।

যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন আয়ের স্তরে (Income levels) করের হার ওঠানামা করে, কিছু জায়গায় অনেক বেশি, আবার কিছু জায়গায় কম, যা খোদ অর্থনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ সবার কাছেই বেশ গোলমেলে মনে হয়।

আয়ের ওপর করের ভিত্তি (Income Tax Basics)

কেন এই অদ্ভুত ওঠানামা দেখি, বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে যুক্তরাজ্যে মানুষ কীভাবে আয়কর (Income tax) ও জাতীয় বীমা (National Insurance) দেয়। “অধিকাংশ মানুষ” মূলত দুটি বড় করের আওতায় পড়ে:

  1. ইনকাম ট্যাক্স (Income tax)
  2. ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স (National insurance)

দুটোর ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা আয় স্তরে ভিন্ন ভিন্ন হারে (Different rates at different income bands) কর দিতে হয়। “যত বেশি আয়, তত বেশি কর” — মৌলিক নিয়মটা ঠিকই রয়ে গেছে, কিন্তু করের হার (Tax rates) পাল্টায় বিভিন্ন স্ল্যাব (Band) পেরোলে।

নতুন ট্যাক্স ব্যান্ডে ঢোকার মানে কি?

অনেকেই ভাবেন, যদি আপনি কোনো উচ্চতর করের স্ল্যাবে (Higher tax band) ঢুকে পড়েন, তাহলে আপনার পুরো আয়েই (entire income) সেই উঁচু হারে কর দিতে হবে। কিন্তু আসলে তা নয়। আপনি যেই অংশটি ওই উঁচু স্ল্যাবের মধ্যে পড়ছে, কেবল সেই অংশেই ওই উচ্চ হার প্রযোজ্য—এর আগের স্তরে (threshold) যা আয় করেছেন, সেটিতে আগের হারে কর কাটা হয়।

উদাহরণ হিসেবে, যুক্তরাজ্যে বর্তমান কাঠামো (আমাদের আলোচ্য সময় অনুযায়ী):

  • প্রথম £১২,৫৭০ পর্যন্ত কর (Tax) নেই।
  • পরবর্তী পরিমাণ কোনো স্তরে পড়লে, সে আয় “মৌলিক হার” (Basic rate) বা “উচ্চ হার” (Higher rate) বা “অতিরিক্ত হার” (Additional rate)-এর আওতায় পড়ে।
  • জাতীয় বীমার (National insurance) হারও বেতন অনুযায়ী পাল্টায়।

যেহেতু ইনকাম ট্যাক্স ও ন্যাশনাল ইনসিউরেন্স মিলিয়ে “কম্বাইন্ড রেট” (Combined rate) তৈরি হয়, দেখা যায় এই হারের একটা আকার, কিন্তু সেটি ধারাবাহিকভাবে বাড়ে না—কিছু জায়গায় লাফ দিয়ে বাড়ে, আবার কোথাও কমে যায়।

ধরি, আপনি বার্ষিক £৫০,২৭০ পর্যন্ত আয় করছেন, তখন একভাবে কম্বাইন্ড রেটে কর দিতে হয় (প্রায় ২০% ইনকাম ট্যাক্স প্লাস কিছু ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স মিলিয়ে আনুমানিক ২৮% হতে পারে)। আবার আপনি যদি বার্ষিক £১২৫,১৪০ পেরিয়ে যান, সেক্ষেত্রে “অতিরিক্ত” হারে (Additional rate) প্রায় ৪৭% কম্বাইন্ড রেট হতে পারে। কিন্তু এর মাঝে আবার কিছু স্তরে করের হার (Marginal rate) ৪২% হয়েছে, কোথাও বেড়ে ৪৭%, কোথাও স্টুডেন্ট লোন থাকলে আরও বেশি।

এক কথায়, “ধাপে ধাপে” গিয়ে বেড়ে চলে ঠিকই, কিন্তু সেটি সুন্দরধারা “রৈখিক” (Smooth linear) নয়। বরং একেক লেভেলে বড় বড় “জাম্প” (Jumps) আছে।

যেমন, “ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেট” (Effective rate) শেষমেশ বেশিরভাগ মানুষের জন্যই সামগ্রিক হারে (Progressive) বাড়ে, কিন্তু “মার্জিনাল রেট” (Marginal rate) মাঝেমধ্যে অস্বাভাবিক বেশি বা কম হতে দেখা যায়।

অনান্য কর ও বেনিফিটের প্রভাব: চাইল্ড বেনিফিট ও হাই ইনকাম বেনিফিট চার্জ

হুটহাট “লাফ” দিয়ে মার্জিনাল রেট বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরেকটা বড় কারণ হলো অতি নানামুখী কর (Tax) ও বেনিফিট (Benefit) ব্যবস্থা একে ওপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে। এরই অন্যতম উদাহরণ হল চাইল্ড বেনিফিট (Child benefit)।

একজন বাবা বা মা (Parent) সরকারের কাছ থেকে চাইল্ড বেনিফিট পেতে পারেন। কিন্তু তাদের আয় (Income) যদি £৬০,০০০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে “হাই ইনকাম বেনিফিট চার্জ” (High income benefit charge) প্রযোজ্য হয়। এটি কাজ করে এভাবে:

  • ৬০,০০০ পাউন্ড আয়ের পর থেকে অতিরিক্ত প্রতি £১০০ আয় বাড়ার জন্য ১% করে চাইল্ড বেনিফিট কেটে নেওয়া হবে। (ভিডিওতে বলা হয়েছে ২০০ পাউন্ডের জন্য ১% কাটা হয়, তবে বর্তমান কিছু সূত্রে ভিন্ন হতে পারে—এখানে মূল বক্তব্য নিশ্চয়ই এই যে ধাপে ধাপে কেটে নেওয়া হয়)।
  • এর মানে, যেই ব্যক্তি £৮০,০০০ আয় করেন, তার চাইল্ড বেনিফিট পুরোটাই (১০০%) প্রায় কাটা যাবে—অর্থাৎ তিনি আর প্রকৃতপক্ষে কোনো বেনিফিট পাবেন না।

এই ব্যবস্থাটি আয় ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ পাউন্ডের মধ্যে পড়া লোকজনের জন্য মার্জিনাল হারে একটা অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। ফলে সেই অংশে মার্জিনাল রেট এক লাফে প্রায় ৫৬.৫% পর্যন্ত পৌঁছতে পারে—যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০০,০০০ পাউন্ডের বেশি আয়কারীদের থেকে বেশি মার্জিনাল রেট। এটি অদ্ভুত শোনালেও এমনটাই ঘটে।

আরও একটি বড় বাধা: পারসোনাল অ্যালাওয়েন্স ফেজ-আউট

আবার ১০০,০০০ পাউন্ড আয়ের ওপরে আরেকটি জায়গায় কর বাড়ে, সেটি হলো ব্যক্তিগত ছাড়ের পরিমাণ (Personal allowance) ধাপে ধাপে হারিয়ে ফেলা। যুক্তরাজ্যে প্রথম £১২,৫৭০ আয় করমুক্ত (Tax-free) হিসেবে ব্যক্তিগত ভাতা (Personal allowance) ধরা হয়। কিন্তু একবার যখন কারও আয় £১০০,০০০ ছাড়িয়ে যায়, তখন প্রতি £২ অতিরিক্ত আয়ের জন্য তার পার্সোনাল অ্যালাউন্স £১ করে কমতে থাকে।

এভাবে যদি কেউ £১২৫,১৪০ আয় অর্জন করেন, তাহলে তার আর কোনো ব্যক্তিগত ভাতা অবশিষ্ট থাকে না। ফল? ১০০,০০০ থেকে ১২৫,১৪০ পর্যন্ত আয়ের মধ্যে মার্জিনাল রেট লাফিয়ে ৬২%-এ গিয়ে পৌঁছাতে পারে (যদি স্টুডেন্ট লোন (Student loan) থাকে তবে আরও বেশি)।

তারপর যখন আপনি ১২৫,১৪০ অতিক্রম করে যান, তখন সেই ৬২% মার্জিনাল হার আবার কমে গিয়ে ৪৭%-এ নামতে পারে। এটি নিঃসন্দেহে একটি অদ্ভুত বৈপরীত্য (Bizarre dip)।

এখানে আবার মনে রাখতে হবে, মার্জিনাল রেট (Marginal rate) ৬২% মানে এই নয় যে কোনও মানুষ £১০০,০০০ ইনকাম করলেই আগের চেয়ে মোট কর বেশি হয়ে যাচ্ছে বা অন্য কেউ £৯৯,৯৯৯ আয় করলে কম কর দিচ্ছেন—তার চেয়ে বেশি কর দিচ্ছেন। আসলে এটি একমুখী “পরবর্তী আয়” কে ঘিরে।

কিন্তু তবুও, হঠাৎ ৬২% মন্দ নয়—বরং খুব উচ্চ করের হার—যা কাজের আগ্রহ বা আয় বাড়ানোর আগ্রহ কমাতে পারে, বিশেষ করে ওই নির্দিষ্ট আয়ের পরিসরে থাকা লোকজনের জন্য।

ইউকে’র করব্যবস্থার ‘প্রগ্রেসিভ’ হওয়ার চেষ্টা, কিন্তু…

ইনকাম ট্যাক্স ও ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স আসলে “প্রগ্রেসিভ” (Progressive) হতে চেষ্টা করে—অর্থাৎ বেশি উপার্জনকারীদের একটু বেশি হারে কর প্রদান, যাতে সামগ্রিক কর-ব্যবস্থা আয়ে বৈষম্য কমায়। কিন্তু বাস্তব চিত্র হলো, নানা ব্যতিক্রম (Exemptions), অতিরিক্ত চার্জ, ফেজ-আউট, বেনিফিট কাটা ইত্যাদির কারণে এ ব্যবস্থা অনেকখানি এলোমেলো।

এই ধরনের উদাহরণ শুধু ইনকাম ট্যাক্স নয়, বরং যুক্তরাজ্যের অন্যান্য করেও (Other taxes) বিদ্যমান।

কাউন্সিল ট্যাক্স (Council Tax): অদ্ভুত ফিক্সড ব্যান্ড: কাউন্সিল ট্যাক্স (Council tax) মূলত বাড়ির (House) মূল্যায়নের (Valuation) ওপর ভিত্তি করে একটি স্থানীয় পরিষেবা কর, যেখানে মূল্যবান বাড়ির জন্য বেশি ট্যাক্স দেওয়া হয়। এটি আংশিকভাবে প্রগ্রেসিভ। কিন্তু সমস্যা হলো, কাউন্সিল ট্যাক্সের সবচেয়ে উঁচু “ব্যান্ড” হলো Band H, যা প্রযোজ্য শুধু £৩২০,০০০ বা তার বেশি মূল্যের বাড়ির জন্য। এখন, যদি আপনার বাড়ির মূল্য £৩২১,০০০ হয় কিংবা কয়েক কোটি পাউন্ডের (Multi-million pound) প্রাসাদতুল্য বাড়ি হয়—দুই ক্ষেত্রেই একই হারে কাউন্সিল ট্যাক্স! অর্থাৎ অত্যন্ত উচ্চমূল্যের সম্পদ মালিকদের জন্য, তুলনামূলকভাবে বললে, এটা মোটেই বেশি কর নয়।

ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (Capital Gains Tax): ধনী ও সাধারণের জন্য প্রায় একই হার: ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (Capital gains tax) পরিশোধ করতে হয় যখন কেউ কোনো সম্পদ (Asset) বিক্রি করে, এবং বিক্রির সময় মূল্যবৃদ্ধি (Value increase) ঘটে। করের হার ইনকাম ট্যাক্সের হারের ওপর নির্ভর করে কিছুটা ভিন্ন হয় বটে (বেসিক রেট বনাম উচ্চ রেট), কিন্তু সর্বোপরি এটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম, এবং খুব বেশি উচ্চ আয়ভুক্ত বা অতিদরিদ্র—দু’দলের জন্যই সেই হারে বড় কোনো ফারাক নেই।

ফলে বাস্তবে যারা “প্রোগ্রেসিভ” কাঠামো দাবি করেন, তারা এখানে বড় ফাঁক দেখছেন—ধনীরা যথেষ্ট বেশিমাত্রায় কর দিচ্ছেন না, বরং আয়নির্ভর করদাতাদের ওপর চাপ বেশি পড়ছে।

কেন এমন হলো?

ট্যাক্স বাড়ানো রাজনীতিবিদদের (Politicians) জন্য মোটেও সহজ কাজ নয়। যুক্তরাজ্যের মিডিয়া (Press) বা ভোটার (Voters) সাধারণত কর বৃদ্ধিকে (Tax rise) ভালো চোখে দেখে না, বিশেষত যদি তা মধ্যবিত্ত (Middle class) বা সাধারণ আয়শ্রেণিকে (Not just super rich) আঘাত করে। প্রভাবশালী পত্রিকা বা সংবাদমাধ্যম যদি দেখায় যে “এই কর বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী”—তবে সরকার খুব দ্রুত জনরোষে (Public outcry) পড়ে যেতে পারে।

ফলে রাজনীতিবিদরা অনেক সময় কর বাড়ানোর সময় বড় জনসমষ্টির ওপর বাড়ানোর পরিবর্তে “কৌশলগত” উপায় অবলম্বন করেন—যেমন, খুব নির্দিষ্ট (Highly specific) কাউকে লক্ষ্য করে কর বাড়ানো, বা কিছু বিশেষ ব্যতিক্রম (Exemptions) ও ছাড় (Reliefs) দেওয়া, যাতে জনতার এক বড় অংশ আপত্তি না করে। কিন্ত এসবের ফলে হরেক রকম আইন, রিবেট, স্ল্যাব, শর্ত ইত্যাদি যুক্ত হতে থাকে; প্রতিবার নতুন কিছু সংযোজনই করব্যবস্থাকে আরেক ধাপ জটিল (Complex) করে তোলে।

অর্থাৎ, প্রতিবার যখন নতুন আইন বা রিবেট যুক্ত হয়, একটা “নতুন খেয়াল” (Weird incentives) তৈরি হয় কর কাঠামোতে। সময়ের সঙ্গে এসব “খেয়ালি” সংযোজন জট বাঁধতে বাঁধতে আজকে এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, মার্জিনাল রেটের মানচিত্রটা দেখলে কেউ কেউ তো হতবাক হয়ে যান।

ট্যাক্স সহজীকরণ নাকি মুখরক্ষা?

সম্ভবত সবচেয়ে “সুন্দর” সমাধান হতো যদি রাজনীতিবিদেরা “ট্যাক্স সরলীকরণ” (Tax simplification) নীতিতে রাজি হতেন—যেখানে একই সাথে নানান ব্যতিক্রম ও অদ্ভুত নিয়ম বাদ দিয়ে, একটি বেশ স্বচ্ছ (Transparent) ও ধারাবাহিক (Consistent) কাঠামো তৈরি করা যায়। তবে এটিও অত্যন্ত বিতর্কিত পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়াতে পারে, কেননা অনেক গোষ্ঠী (Groups) এতে তাদের চলমান সুবিধা হারানোর শঙ্কা অনুভব করবে।

এর ওপর, কর সহজীকরণ করতেই হলে কিছু লোক “বর্তমান কিছু ছাড়” থেকে বঞ্চিত (Missing out) হবে, যা দ্রুত রাজনৈতিক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। ফলে স্বার্থান্বেষী রাজনীতির বাস্তবতায় (Political reality), খুব সহজে আশা করা যায় না যে সহসা কেউ জটিল এই কাঠামো ভেঙে সবার জন্য সুদৃশ্য ব্যবস্থা নিয়ে আসবে।

তাই শ্বাস আটকে অপেক্ষা করার দরকার নেই যে, সাম্প্রতিক সময়ে বা নিকট ভবিষ্যতে বড় কোনো পরিবর্তন হবে। বরং সম্ভবত এই “খণ্ডে খণ্ডে জোড়াতালি” approach আরও কিছুদিন বহাল থাকবে।

উপসংহার

যুক্তরাজ্যের ট্যাক্স ব্যবস্থা (UK tax system) আজকের দিনে বিস্তর মিশ্রন (Patchwork) ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ (Inconsistent)। আমরা দেখলাম, কীভাবে ইনকাম ট্যাক্স (Income tax), ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স (National insurance), চাইল্ড বেনিফিট চার্জ (Child benefit charge), পার্সোনাল অ্যালাউন্স (Personal allowance) ফেজ-আউট—সব মিলিয়ে মার্জিনাল রেট (Marginal tax rate) এলোমেলো এক চেহারা নিয়েছে।

  • ৬০,০০০ থেকে ৮০,০০০ পাউন্ড আয়ের মধ্যে চাইল্ড বেনিফিট প্রায় পুরোপুরি কাটা যায়, ফলে মার্জিনাল হার ৫৬.৫% এর মতো বেড়ে যেতে পারে।
  • ১০০,০০০ থেকে ১২৫,১৪০ পাউন্ড আয়ের মধ্যে পার্সোনাল অ্যালাউন্স প্রত্যাহারের (Withdrawal) কারণে মার্জিনাল হার ৬২% পর্যন্ত উঠতে পারে, তারপর ১২৫,১৪০ পাউন্ডের পরে আবার হঠাৎ করে কমে ৪৭%-এ নেমে আসে।

ফলাফল? কয়েকটি আয়ের স্তরে (Income thresholds) মানুষ হয়তো বাড়তি কাজ করা, বা বেতন বাড়ানোর সুযোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকে, কারণ হয়তো চাইল্ডকেয়ার, স্টুডেন্ট লোন কিংবা অন্য খরচ মেটানোর পর হাতে যা থাকে তা পর্যাপ্ত নয়।

এটি শুধু ইনকাম ট্যাক্সেই সীমাবদ্ধ নয়। কাউন্সিল ট্যাক্স (Council tax) বা ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স (Capital gains tax)—এগুলোতেও বিভিন্নভাবে অল্ট্রা ধনী (Ultra rich) ও তুলনামূলক মধ্যম আয়ের (Middle or upper-middle) মানুষের মধ্যে কর-ব্যবধান (Tax gap) পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান নয়। এটি “চাইলে তো প্রগ্রেসিভ হওয়া যেত,” কিন্তু আসলে “পুরোপুরি প্রগ্রেসিভ” নয়।

রাজনৈতিকভাবে কর বাড়ানো কঠিন বলে, রাজনীতিবিদরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বা শর্ত-target করে করের হার পাল্টে—এভাবে সময়ের সঙ্গে এক বিশৃঙ্খল (Chaotic) সিস্টেম গড়ে উঠেছে। ট্যাক্স সহজীকরণের (Simplification) পথ প্রশস্ত, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং। অনেক গোষ্ঠী এর বিরোধিতা করবে, কারণ তাদের বর্তমান ছাড় বা সুবিধাগুলো হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

অতএব, সামনের দিনগুলোতে বড় রকমের সংস্কার (Overhaul) বা “সুন্দর রৈখিক প্রগ্রেসিভ ট্যাক্স” পাওয়ার আশা ক্ষীণ। বরং এই রকম ‘লাফানো’ মার্জিনাল রেট ও বিচিত্র বিধিনিষেধের হাল আরও কিছুদিন বহাল থাকা খুবই সম্ভব।

এক কথায়, “যুক্তরাজ্যে ট্যাক্স ব্যবস্থা কেন এত অদ্ভুত?”—তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল রাজনৈতিক বাস্তবতা, মানুষের মনস্তত্ত্ব, মিডিয়া প্রতিক্রিয়া, পক্ষকালীন সুবিধা দান—সব মিলিয়ে এক জটিল আবর্ত। এর অদূর ভবিষ্যতে এর নাটকীয় উন্নতি বা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

যুক্তরাজ্য সম্পর্কিত আরও সংবাদ ও বিশ্লেষণ দেখুন এখানে – যুক্তরাজ্য সংবাদ

তথ্যসূত্র

Tax Policy Associates on Marginal Tax Rates
https://taxpolicy.org.uk/2024/06/18/what-are-marginal-rates-and-why-do-they-matter/

BBC News Explainer on Marginal Tax Rates
https://www.bbc.co.uk/news/58870012

High income Child Benefit Tax Charge https://www.turn2us.org.uk/get-support/information-for-your-situation/child-benefit/high-income-child-benefit-tax-charge

Income Tax and Personal Allowances Government Explainer
https://www.gov.uk/income-tax-rates/income-over-100000

Capital Gains Tax Government Explainer
https://www.gov.uk/capital-gains-tax/rates

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.