ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার সীমানা বিস্তার: সম্ভাবনা ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব

ভূমিকা

গত কয়েক মাস ধরে অনেকেই জল্পনা-কল্পনা করছেন, নতুন মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে আমেরিকার সীমানা প্রসারিত বা বিস্তৃত করতে পারেন। ২০২৪ সালের শেষে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডিসেম্বরে তিনি কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম অঙ্গরাজ্য (51st state) বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, প্যানামা খাল (Panama Canal) পুনর্দখলের কথা বলেছেন, এবং ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)-এ দাবি করেছেন যে গ্রীনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ “অবশ্যই প্রয়োজনীয়” যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।

শুরুর দিকে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই ট্রাম্পের এসব মন্তব্যকে হয় ঠাট্টা, নয়তো শুধুই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার মার-এ-লাগো (Mar-a-Lago)-তে দেওয়া একটি অভাবিত প্রেস কনফারেন্সে ট্রাম্প রীতিমতো ডেনমার্ককে (Denmark) তুলোধোনা করেছেন, হুমকি দিয়েছেন যে ডেনমার্ক যদি গ্রীনল্যান্ড ছেড়ে না দেয় তবে তাদের বিরুদ্ধে “খুব উঁচু মাত্রার” শুল্ক (Tariffs) আরোপ করবেন, এবং সামরিক শক্তি (Military force) ব্যবহার করে হলেও গ্রীনল্যান্ড ও প্যানামা খাল দখল করার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি। একই সঙ্গে তিনি অর্থনৈতিক চাপ (Economic force) প্রয়োগ করে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশে পরিণত করার কথাও বলেছেন।

ট্রাম্পের এই ঘোষণার আগে ট্রুথ সোশ্যাল-এ তার বেশ কিছু পোস্টেও (“ফ্রিওহুইলিং পোস্ট” হিসেবে বর্ণিত) দেখা গেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একীভূতকরণকে (U.S.-Canada merger) “কানাডিয়ান নিরাপত্তাকে আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করবে” বলে দাবি করেছেন এবং গ্রীনল্যান্ডকে “পুনরায় মহান করে তোলার” (Make Greenland great again) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই নিবন্ধে আমরা দেখব, ট্রাম্প আমেরিকার সীমানা বিস্তারের ব্যাপারে কী পরিকল্পনা করছেন, এবং এগুলো বাস্তবসম্মত কি না।

কানাডাকে ৫১তম রাজ্য করার সম্ভাবনা

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বক্তব্যে কানাডা প্রসঙ্গ সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তুলেছে। তিনি বলেছেন, কানাডা সহজেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী অঙ্গরাজ্য হতে পারে, আর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বা অর্থনৈতিক চাপের মাধ্যমে কানাডিয়ানদের এই ধারণা মানতে বাধ্য করতে পারবে। তবে বাস্তবতা হলো:

  1. কানাডিয়ানদের মধ্যে আগ্রহের অভাব (Lack of Canadian interest): জনমত জরিপে বা সাধারণ আলাপ-আলোচনায় কানাডার জনগণ (Canadians) কখনোই এই ধরনের একত্রীকরণে সায় দেয়নি। উল্টো, দুই দেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও, সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) রক্ষার ব্যাপারে কানাডা বরাবরই যত্নবান।
  2. একটি ক্ষুদ্র দলীয় উদ্যোগ (A minor political party): কেবলমাত্র “পার্টি ৫১” (Party 51) নামের একটি ক্ষুদ্র কুইবেক (Quebec)-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল এই ধারণাকে সমর্থন করে। ২০২২ সালের কুইবেক সাধারণ নির্বাচনে (Quebec general election) দলটি মোট ভোটের মাত্র ০.০২% পেয়েছিল, যা রাইনোসেরস পার্টি (Rhinoceros Party) নামের বিদ্রুপাত্মক (Satirical) দলের চেয়েও কম। ওই রাইনোসেরস পার্টি আবার উল্টো যুক্তরাষ্ট্রকে “জয়” করার কথা বলে ব্যঙ্গ করে।

সব মিলিয়ে, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বানানো নিয়ে বাস্তব ক্ষেত্রে কোনো আলোচ্যতা বা ইতিবাচক সাড়া নেই। ট্রাম্পের শুল্ক-হুমকি (Tariff threats) কিংবা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগের ইচ্ছা কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে রাজি করাবে—এই ধারণা অবাস্তব বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

প্যানামা খাল দখলের প্রসঙ্গ

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি প্যানামা খাল পুনর্দখল (Take back control) করতে চান। ইতিহাস পর্যবেক্ষণে দেখা যায়:

  • যুক্তরাষ্ট্রই (US) বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে প্যানামা খাল তৈরি ও পরিচালনা করেছিল।
  • জিমি কার্টার (Jimmy Carter) ১৯৭৭ সালে চুক্তি করে ধাপে ধাপে প্যানামাকে খালটি ফিরিয়ে দেওয়ার (Handing back) প্রক্রিয়া শুরু করেন।
  • পরবর্তী রিপাবলিকান (Republican) প্রেসিডেন্টরা, বিশেষ করে রোনাল্ড রিগ্যান (Ronald Reagan), এ সিদ্ধান্তে খুব একটা খুশি ছিলেন না, কারণ প্যানামা খাল যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক বাণিজ্যের (Maritime trade) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ১৯৯৯ সালে চূড়ান্তভাবে প্যানামার হাতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ যায়। তবে “নিরপেক্ষতা চুক্তি” (Neutrality treaty) অনুযায়ী, খালটি সব দেশের জন্য নিরপেক্ষ ও বৈষম্যহীন (nondiscriminatory) টোল (Tolls) রাখবে এবং খালটির নিরপেক্ষতা বিঘ্নিত হলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপের (Military intervention) অধিকার রাখবে।

ট্রাম্পের সামরিক হুমকি ও বাস্তবতা

ট্রাম্প হয়তো সামরিক পদক্ষেপের কথা বলে প্যানামাকে টোল কমাতে (Reducing toll rates) চাপ দিতে চাইছেন। তবে:

  1. আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্যানামা খালের টোল ইতোমধ্যে তুলনামূলক কম বলে ধরা হয়।
  2. সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি খুবই “অবিশ্বাস্য” (Not really a credible threat) বলে বিবেচিত হচ্ছে।
  3. টোল কমলে যুক্তরাষ্ট্র উপকৃত হবে বটে (কারণ তারা খালের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী), তবে চীনও (China) উপকৃত হবে, কারণ চীন এখন খালের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবহারকারী।

চীন-পানামা সম্পর্ক

  • চীনের সঙ্গে প্যানামার সম্পর্ক সম্প্রতি উষ্ণতর হয়েছে (Warming relations)।
  • ২০১৭ সালে প্যানামা, তাইওয়ান (Taiwan)-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে চীনের স্বীকৃতি দেয়।
  • হংকং ভিত্তিক এক কোম্পানি খালের দুই প্রান্তের বন্দর পরিচালনা করে।

সুতরাং, মার্কিন ও চীনা স্বার্থের দোলাচলে প্যানামা যদি বুঝতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্রের রূঢ় অবস্থান (Bellicose rhetoric) তাদের জন্য “অত্যধিক চাপ” সৃষ্টি করছে, তারা উল্টো চীনের দিকে আরও ঝুঁকতে পারে—যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত ক্ষতি ডেকে আনবে।

গ্রীনল্যান্ড প্রসঙ্গ

গ্রীনল্যান্ডের অবস্থান ও বর্তমান পরিস্থিতি

  • গ্রীনল্যান্ড বর্তমানে ডেনমার্কের (Denmark) একটি স্বশাসিত অঞ্চল (Autonomous territory) হিসেবে পরিচিত, জনসংখ্যা প্রায় ৫৫,০০০।
  • কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই বড় দ্বীপটি আর্কটিক অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ

কানাডা বা প্যানামা খালের মতো “অযৌক্তিক” শোনালেও, গ্রীনল্যান্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনেরই আগ্রহ রয়েছে। অতীত ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়:

  • ১৮৬৭ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম স্যুয়ার্ড (William Seward) ডেনমার্ক থেকে গ্রীনল্যান্ড ও আইসল্যান্ড (Iceland) কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
  • ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা করেছিল মিন্দানাও ও পালাওয়ান (Mindanao and Palawan) দ্বীপ—যেগুলো ফিলিপাইনসের (Philippines) অংশ—সেগুলো ডেনমার্ককে দিয়ে (যাতে ডেনমার্ক পরে জার্মানির (Germany) সঙ্গে অঞ্চল বিনিময় করতে পারে) গ্রীনল্যান্ড নিয়ে নেওয়ার।
  • যুক্তরাষ্ট্র ১৯১৭ সালে ড্যানিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ (Danish West Indies) কেনার আগে শর্ত ছিল তারা গ্রীনল্যান্ডের ওপর ডেনমার্কের অধিকার স্বীকার করবে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) সময় নিরাপত্তার কারণে যুক্তরাষ্ট্র গ্রীনল্যান্ড দখল করেছিল।
  • ১৯৪৬ সালে আবার গ্রীনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ১০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যে (বর্তমান মূল্যমান প্রায় ১ বিলিয়ন)। ডেনমার্ক তা প্রত্যাখ্যান করে।
  • ১৯৫১ সালে ডেনমার্ক এক চুক্তি সই করে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রীনল্যান্ড রক্ষার অধিকার ও দায়িত্ব (Right & responsibility to defend) প্রদান করা হয়।

কোল্ড ওয়ার শেষে গ্রীনল্যান্ডের প্রতি মার্কিন আগ্রহ কিছুটা কমে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক উত্তেজনা আবার বেড়ে যাওয়ায়, আর্কটিক অঞ্চলে গ্রীনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটি উত্তর আটলান্টিকে এমন এক স্থান দখল করে আছে, যা রুশ সাবমেরিন পর্যবেক্ষণ এবং রাশিয়া বা চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে (US mainland) নিক্ষেপিত সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে কাজে লাগতে পারে।

ট্রাম্পের আগ্রহ পুনরায় উত্থিত

  • ২০১৯ সালের আগস্টে ট্রাম্প প্রথমবার প্রকাশ্যে গ্রীনল্যান্ড কেনার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। তখন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন (Mette Frederiksen) এটিকে “অযৌক্তিক” বলে মন্তব্য করেন।
  • ট্রাম্প এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন।
  • দ্বিতীয় মেয়াদে (Second term) ট্রাম্প আবার বলছেন, গ্রীনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বা অন্তত মার্কিন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে বহুবার “মেক গ্রীনল্যান্ড গ্রেট এগেইন” (Make Greenland great again) স্লোগান দিয়েছেন এবং ডেনমার্ককে শুল্কের হুমকি দিয়েছেন।

গ্রীনল্যান্ড শীঘ্র স্বাধীন হতে পারে

অবশ্য গ্রীনল্যান্ডের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে স্বাধীনতা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে:

  • স্বাধীনতাপন্থী দলগুলো (Pro-independence parties) গ্রীনল্যান্ডের স্থানীয় নির্বাচনে ভালো করছে।
  • গ্রীনল্যান্ড প্রতিবছর ডেনমার্ক থেকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান (Grant) পায়। স্বাধীন হলে এই অনুদান বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • গ্রীনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুটে এগে (Múte B. Egede) নিজেই নতুন বছরে (New Year’s address) স্বাধীনতার লক্ষ্যে এগোনোর কথা বলেছেন।
  • ট্রাম্প ভাবতে পারেন, আর্থিক বা সামরিক চাপ প্রয়োগ করে নতুন স্বাধীন গ্রীনল্যান্ডকে (Newly independent Greenland) যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে বাধ্য করা যাবে। কারণ গ্রীনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের “ডি ফ্যাক্টো সিকিউরিটি গ্যারান্টি” (De facto security guarantee)-এর ওপর অনেকটা নির্ভর করে।

তবে বর্তমান গ্রীনল্যান্ড সরকার ট্রাম্পের ধারণা পরিষ্কারভাবে নাকচ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এগে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “আমরা বিক্রির জন্য নই (We are not for sale)”, এবং গ্রীনল্যান্ডের স্বাধীনতার লড়াইকে (Long struggle for freedom) কোনোভাবেই খাটো করতে চান না।

গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন – অবশেষে কি ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হবে?

মেক্সিকো প্রসঙ্গ

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রেস কনফারেন্সে মেক্সিকো নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তার প্রশাসন উত্তরে মেক্সিকোর অংশে “সফট ইনভেইশন” (Soft invasion) বা সীমিত সামরিক অনুপ্রবেশ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে কিছু অঞ্চল ড্রাগ কার্টেল (Drug cartels) কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, এই অপরাধচক্রকে নির্মূল করতে সামরিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে।

আইনি ও আন্তর্জাতিক জটিলতা:

  • মেক্সিকোর সরকার এতে পরিষ্কারভাবে অস্বস্তি প্রকাশ করেছে। তারা অনুমতি দেয়নি এবং দেবে না বলেই ইঙ্গিত।
  • মেক্সিকোর ভূখণ্ডে মার্কিন সামরিক অভিযান (Military action) আন্তর্জাতিক আইনের (International law) গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
  • যদি অভিযান দীর্ঘায়িত হয় বা সফলতা দ্রুত না আসে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সাময়িকভাবে মেক্সিকোর কিছু অঞ্চল “দখলে” রাখতে বাধ্য হতে পারে, বা “বাফার জোন” (Buffer zone) তৈরি করতে পারে।

এই সিনারিও আসলে ভৌগোলিক সীমানা একীভূতকরণের (Annexation) চেয়ে সামরিক/নিরাপত্তা (Security) সূত্রে সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি করে। যদিও অনেকের চোখে এটি একধরনের “আক্রমণাত্মক সম্প্রসারণ” (Aggressive expansion) হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

সম্ভাব্য সীমানা বদল: কতটা বাস্তবসম্মত?

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় বড় কোনো রদবদল (Territorial changes) হবে—এমন আশঙ্কা এখনো অনেকেই “অবিশ্বাস্য” বলে মনে করেন। তবু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রীনল্যান্ড এবং মেক্সিকোর প্রসঙ্গে বিষয়টা পুরোপুরি অসম্ভবও নয়। কেননা:

  1. গ্রীনল্যান্ডে স্বাধীনতার সম্ভাবনা: গ্রীনল্যান্ড যদি ডেনমার্ক থেকে বেরিয়ে আসে, আর্থিকভাবে টিকে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাওয়ার দরকার হতে পারে। সেই ফাঁক গলেই ট্রাম্প চাপ প্রয়োগ করে গ্রীনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে বাধ্য করার চেষ্টা চালাতে পারেন।
  2. মেক্সিকোতে সামরিক অভিযানের ঝুঁকি: যদি ড্রাগ কার্টেল দমনে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ ব্যর্থ হয় বা দীর্ঘায়িত হয়, তখন “অস্থায়ী দখল” (Temporary occupation) বা স্থায়ী সীমানা বিস্তারের দাবি উত্থাপিত হতে পারে—যা গোটা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে পারে।

অনেকটা অসম্ভব হলেও ইতিহাস বলে, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে অঞ্চল কেনা বা দখল করেছে (যেমন আলাস্কা (Alaska) রাশিয়ার কাছ থেকে কিনে নেওয়া, হাওয়াই (Hawaii) দখল ও যুক্তকরণ, পুয়ের্তো রিকো (Puerto Rico) দখল ইত্যাদি)। ফলে “একেবারে হতে পারে না” বলাও ভুল হবে।

ভূ-রাজনৈতিক অশান্তির সম্ভাবনা

ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুমকি বা ঘোষণাগুলো সবই অন্য দেশগুলোর সার্বভৌমত্বকে (Sovereignty) চ্যালেঞ্জ করে। এর মধ্যে আছে:

  • মিত্র বা বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র যেমন কানাডা ও ডেনমার্ক—এদেরকে শুল্ক বা সামরিক হুমকি দিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা।
  • প্যানামা বা মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে সামরিক শক্তির ব্যবহার বা হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত।

যদিও বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করছেন এসব দাবি বাস্তবে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান যথেষ্ট অস্থির হতে পারে—এমনটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ, একদিকে বড় শক্তিগুলোর (চীন, রাশিয়া) সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমে জটিল হচ্ছে, অন্যদিকে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গেও পুরনো টানাপোড়েন আছে। এখন কানাডা বা ডেনমার্ককেও চাপে ফেলার চেষ্টা করলে উত্তেজনা আরও বাড়বে।

উপসংহার

সবমিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার সীমানা বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও, প্রায় সবাই এটা স্বীকার করেন যে উল্লেখযোগ্য কোনো “অধিগ্রহণ” (Annexation) বা “ইনভেইশন” (Invasion) ঘটবে কি না, তা অনিশ্চিত এবং বাস্তবসম্মত নয়।

  1. কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া প্রায় অবাস্তব। কানাডিয়ানদের মধ্যে এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই; বরং প্রতিক্রিয়া নেগেটিভ।
  2. প্যানামা খাল পুনর্দখলও (Take back control) তেমন যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না, কারণ আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বাস্তবতার সামনে এটি অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।
  3. গ্রীনল্যান্ডের ক্ষেত্রে কিছুটা ফাঁক আছে, কেননা দ্বীপটি স্বাধীনতার পথে এগোতে পারে, এবং তখন অর্থনৈতিক ও সামরিক নিশ্চয়তার অভাব পূরণে যুক্তরাষ্ট্রকে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবু গ্রীনল্যান্ডের সরকার স্পষ্ট করেছে—তারা “বিক্রির জন্য নয়”।
  4. মেক্সিকো-সংলগ্ন অঞ্চলে সামরিক পদক্ষেপও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গুরুতর লঙ্ঘন। দ্রুত সাফল্য না এলে তা দীর্ঘস্থায়ী দখলের দিকে গড়াতে পারে।

যদিও এ সবগুলোই এখনো সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের স্তরে যায়নি, তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নীতির “আক্রমণাত্মক” (Aggressive) ধরণ বলে দিচ্ছে, তার দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিবেশী ও মিত্র দেশগুলোর সম্পর্কে জটিলতা ও “অসম্মানজনক কূটনীতি” (Contentious diplomacy) বেড়ে যেতে পারে। আর তা যদি ঘটে, বিশ্ব রাজনীতি আরও অস্থির হয়ে উঠতে বাধ্য।

যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে যান এখানে – যুক্তরাষ্ট্র সংবাদ

গ্রিনল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকো, পানামা সহ উত্তর আমেরিকার অন্যান্য দেশ সম্পর্কে সংবাদ ও বিশ্লেষণ জানতে যান এখানে – উত্তর আমেরিকা (কানাডা, মেক্সিকো, গ্রিনল্যান্ড, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল) ও আর্কটিক সংবাদ

তথ্যসূত্র

1 – https://www.bbc.co.uk/news/articles/c98l9wj67jgo
2 – https://www.bbc.co.uk/news/articles/c791xy4pllqo
3 – https://truthsocial.com/@realDonaldTrump
4 – https://en.wikipedia.org/wiki/Rhinoceros_Party#Rhinoceros_Party_of_Canada_(1963%E2%80%9393)
5 – https://en.wikipedia.org/wiki/Parti_51
6 – https://www.nytimes.com/2025/01/02/us/politics/trump-panama-canal-china.html
7 – https://truthsocial.com/@realDonaldTrump/posts/113715171941661598
8 – https://en.wikipedia.org/wiki/Proposals_for_the_United_States_to_purchase_Greenland#:~:text=Since%201867%2C%20the%20United%20States,much%20control%20over%20its%20defense
9 – https://www.northcom.mil/Portals/28/OmurFinalwDisclamer.pdf
10 – https://www.theguardian.com/world/2019/aug/19/trump-greenland-tower
11 – https://www.nbcnews.com/politics/donald-trump/trump-says-ownership-greenland-absolute-necessity-rcna185197
12 – https://www.ft.com/content/e6c351ab-b41e-4e53-b6db-18d6c3e9ab4c
13 – https://www.rollingstone.com/politics/politics-features/trump-mexico-invasion-plan-1235223266/
14 – https://m.economictimes.com/news/international/us/donald-trump-to-initiate-military-operations-in-mexico-heres-the-reason-why-he-wants-to-take-such-a-drastic-action/amp_articleshow/116896218.cms

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.