আবাসনের অর্থনীতি ও আবাসন সংকট: বিনিয়োগ, ঝুঁকি, কারণ, চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের পথ

Table of Contents

ভূমিকা

যে কোনও বাজার, যে কোনও এলাকাতেই পরিবারের জন্য একটি বাড়ি হচ্ছে আরামের আশ্রয়, একটি পরিবারকে বড় করার চমৎকার জায়গা এবং সর্বোপরি একটি বিচক্ষণ বিনিয়োগ। বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশে একটি বাড়ি পারিবারিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এটি একই সাথে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ এবং প্রায় যেকোনো ব্যক্তির জন্যই এই ক্রমবর্ধমান দুর্লভ বাজারে প্রবেশ করতে পারাটা ভাগ্যের বিষয়। কিন্তু এটা কি সবথেকে ভালো? বাড়িঘর কি জুয়া খেলার চিপসের মতই হয়ে গেছে? কারণ লোকেরা আর সেগুলোকে একটি ক্রমবর্ধমান পরিবারের জন্য আশ্রয় হিসেবে দেখে না, বরং অপ্রত্যাশিত লাভের আশায় বন্য ফটকাবাজির জন্য কেনা সম্পদ হিসেবে দেখে।

২০০৮ সালের শেষ আর্থিক মন্দার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রিয়াল এস্টেটের বাজার। সম্ভবত আবাসন জগতে কী ঘটছে তা পুনরায় মূল্যায়ন করা জরুরি। এটি করার জন্য, আমাদের সত্যিই কয়েকটি বিষয়ের দিকে কয়েকটি স্তরে নজর দিতে হবে— ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক কারণগুলো থেকে, যেমন একটি অতি-উন্নত এবং অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ত পরিবার থেকে শুরু করে অর্থনীতি-ব্যাপী বিষয়গুলো পর্যন্ত, যা শেষ পর্যন্ত কয়েকটি মূল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সামনে আনা হবে। সেই প্রশ্নগুলো হচ্ছে – একটি শক্তিশালী রিয়াল এস্টেট বাজারের বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য কী অর্থ বহন করে? সেখানে কি আরও ভাল বিনিয়োগ আছে? এবং অর্থনীতিগুলো কি এখন অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ত? যদি আমরা এই কারণগুলো বুঝতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের সঙ্গে মোকাবেলা করতে আরও ভালভাবে প্রস্তুত হব।

এদিকে আবাসনের দাম যদি অনেক বেড়ে যায় তাহলে মানুষ শহর ত্যাগ করে শহরতলিতে বাড়ি নিতে শুরু করে, যেটা কোভিড-১৯ এর অতিমারীর সময় ভীষণভাবে প্রকট হয়ে উঠেছিল। এই আবাসন সংকটের কারণে শহর থেকে শহরতলির দিকে যাওয়াটারও একটা ইতিহাস আছে। শিল্প বিপ্লবের পর ১৯৫০ সালে প্রথম শহর ছেড়ে মানুষ শহরতলীতে বসবাস করতে শুরু করে। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের গড়পড়তা বাড়ির দাম ছিল ৭,৪০০ ডলার। যেখানে একটি পরিবারের গড় আয় ছিল ২,৯০০ ডলার এবং সাধারণত পরিবারের একজন সদস্যই উপার্জন করত। এই সময় একটি সাধারণ বাড়ির দাম ছিল একটি পরিবারের গড় আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের সামান্য বেশি। তাই এটা আশা করা অযৌক্তিক ছিল না যে কিছু মানুষ কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের বাড়ির ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তাই অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করার তেমন চাপ ছিল না। তাছাড়া, আবাসনকে তখন খুব একটা বড় খরচ হিসেবেও দেখা হতো না।

এই সময় একটি নতুন গাড়ির গড় দাম ছিল প্রায় ২,০০০ ডলার। তাই যদি কোনো পরিবারের বাড়ির সামনে দুটো গাড়িও থাকত, তাহলেও গাড়িগুলোর দাম বাড়ির চেয়ে বেশি হওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। বিশেষ করে মধ্য-পশ্চিমের (Midwest) মতো জায়গাগুলোতে যেখানে বাড়ির দাম উপকূলবর্তী রাজ্যগুলোর (Coastal states) তুলনায় কম ছিল। অবশ্য, সেই সময় দুটো গাড়ি থাকাটা বেশ আড়ম্বরের বিষয় ছিল, তাই এই পরিস্থিতি খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না।

কিন্তু এখনকার দিনে পরিস্থিতিটা প্রায় অবিশ্বাস্য মনে হয়। শিকাগো (Chicago) বা সিয়াটলের (Seattle) শহরতলীর (suburb) বাইরের কোনো সুন্দর এলাকায় একটি সাধারণ বাড়ির ছবি কল্পনা করুন। এমনকি ভ্যাঙ্কুভার (Vancouver), সিডনি (Sydney), অকল্যান্ডের (Auckland) কথাও ভাবতে পারেন। অথবা যদি আরও বাড়াবাড়ি করতে চান তাহলে লন্ডনকে (London) ধরুন। বাড়ির সামনে পার্ক করা গাড়িগুলো যদি ল্যাম্বরগিনিও (lambos) না হয়, তাহলে এই দুটি সম্পদের দামের তুলনা করাও সম্ভব নয়। আমি জানি আপনারা কী ভাবছেন, “হ্যাঁ, বাড়ির দাম বেড়েছে, এতে নতুন কী?”

আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু এই তুলনাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মহামারীর (pandemic) প্রেক্ষাপটে আবাসন সংকট আবারও একটি বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। শহরে আবাসনের দাম এত বেড়ে যায় যে, ব্যক্তিগত বসবাসের জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজনীয়তা এবং বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধার কারণে মানুষ আবারও শহর ছেড়ে শহরতলীতে যেতে শুরু করে।  এতে দাম বাড়তে শুরু করে। আবাসনের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, কিন্তু এটাকে বাড়তে হবে অন্যান্য পণ্যের মতই স্থিতিশীলভাবে। অস্বাভাবিকভাবে বা অস্থিতিশীলভাবে দাম বাড়াটা অর্থনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। উন্নত দেশগুলোতে এখন যে বাড়ির দাম বাড়ছে, সেগুলোর কারণ ও ফলও আলোচনা করা দরকার, সেই সাথে অতীতের সাথে এর তুলনাও।

উন্নত বিশ্বে আবাসন সংকটের ইতিহাস

১৯৫০-এর দশক: শহর ছেড়ে শহরতলীতে স্থানান্তর

যদি আমরা ১৯৫০-এর দশকে ফিরে যাই, তাহলে দেখব বেশ কিছু কারণে মানুষ শহরের কেন্দ্র ছেড়ে শহরতলীতে বসবাস করতে শুরু করেছিল। শহরের কেন্দ্রগুলোতে মূলত ভাড়াটেরা থাকত, আর শহরতলীতে বাড়ির মালিকানার চল শুরু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় কারণ ছিল তথাকথিত “শ্বেতাঙ্গদের শহর ত্যাগ” (white flight)। মূলত শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্তরা ভেতরের শহরগুলোকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মনে করত না, তাই তারা শহরতলীর দিকে চলে গিয়েছিল। “নিরাপদ” বলতে তারা মূলত “আরও বেশি শ্বেতাঙ্গ” বোঝাত। এই পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েকটি কারণে দ্রুততর হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) পর উন্নত আন্তঃরাজ্য মহাসড়ক ব্যবস্থা (interstate highway system) তৈরি হওয়ায় মানুষ তাদের নতুন কেনা গাড়ি ব্যবহার করে প্রতিদিন সহজে এবং দ্রুত কর্মস্থলে যাতায়াত করতে পারত। এর কয়েক দশক আগেও শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে যেতে হলে ভাগ্যবান হলে ট্রেনে চড়তে হতো, আর ভাগ্য খারাপ হলে ঘোড়ার গাড়িতে যেতে হতো, যা বেশিরভাগ মানুষের দৈনিক যাতায়াতের জন্য বাস্তবসম্মত ছিল না।

পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যেও একই চিত্র ছিল। অস্ট্রেলিয়া (Australia), কানাডা (Canada) এবং এমনকি যুক্তরাজ্যও (UK) যুক্তরাষ্ট্রের দেখানো পথ অনুসরণ করে মহানগরীর অট্টালিকা ছেড়ে শহরতলীতে জমি কিনে বাড়ি বানানোর দিকে ঝুঁকেছিল। এর এমন একটি প্রভাব ছিল যা আজকের দিনে আমাদের কাছে খুব অদ্ভুত মনে হতে পারে। এর ফলে আবাসন আরও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছিল।

১৯৭০-এর দশকে সাশ্রয়ী আবাসন

দুই দশক পর, ১৯৭০ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে একটি গড় বাড়ির দাম ছিল ১৭,০০০ ডলার। যা ১৯৫০-এর দশকের চেয়ে বেশি হলেও খুব বেশি নয়। প্রকৃতপক্ষে, এই সময়ে দাম শুধুমাত্র মুদ্রাস্ফীতির (inflation) সাথে তাল মিলিয়ে চলেছিল। এর বিপরীতে, এই সময়ে গড় বেতন প্রায় তিনগুণ বেড়ে ৮,৭০০ ডলারে পৌঁছেছিল। যার মানে দাঁড়ায় একটি গড় বাড়ির দাম ছিল একটি পরিবারের গড় আয়ের দুই গুণেরও কম। অনেকেই তাদের বার্ষিক আয়ের চেয়েও কম দামে বাড়ি কিনছিলেন। এর কারণ ছিল সরবরাহ বেশি থাকা। শহরগুলো বাড়তে শুরু করেছিল এবং সর্বত্র নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছিল। এর চেয়েও বড় কথা, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি ছিল। আজকের জনসংখ্যার তুলনায় তখন জনসংখ্যা ছিল দুই-তৃতীয়াংশ এবং রিয়েল এস্টেটে (real estate) বিনিয়োগের ধারণাটি তেমন প্রচলিত ছিল না।

সত্তরের দশকে ক্যাশ রেটও (cash rates) ১৩ শতাংশের মতো বেশি ছিল। যার অর্থ দাঁড়ায় নিজের বসবাসের জন্য নেওয়া মর্টগেজ (mortgage) ধরে রাখাই কঠিন ছিল, সেখানে বিনিয়োগের জন্য সম্পত্তি কেনা তো দূরের কথা। রিয়েল এস্টেট ছিল একটি সাধারণ পণ্য। কাঠ, লোহার আকরিক, কমলার রস বা চালের মতো। এটি এমন কিছু ছিল যা মানুষের প্রয়োজন ছিল, মূল্যবান ছিল, তবে একটি যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পাওয়া যাবে বলেই আশা করা হতো।

১৯৮০-এর দশকে বিনিয়োগের হাতিয়ার হিসাবে রিয়েল এস্টেট

তবে ১৯৮০-এর দশকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এই সময়ে রিয়েল এস্টেট সাধারণ পণ্যের চেয়ে বিনিয়োগের হাতিয়ার হিসেবে বেশি কাজ করা শুরু করে। ১৯৮০-এর দশকে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। মানুষ আবারও শহরের দিকে ফিরতে শুরু করে এবং শহরের কাছাকাছি বসবাস করা কিছু শহরতলির জন্য আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। ১৯৮১ সালের অর্থনৈতিক মন্দার (recession) পর বিশাল সংখ্যক খেলাপি হওয়া রিয়েল এস্টেট বিক্রি হওয়ার কারণে মানুষ আকৃষ্ট হয় এবং কম দামে কিছু সম্পত্তি কিনে রিয়েল এস্টেটে প্রথমবার বিনিয়োগের সাহস পায়। লুই রেনি’র (Louis Rennie) মর্টগেজ বন্ডের (mortgage bond) ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এই প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে যায়।

এখান থেকেই একটি নতুন প্রবণতা শুরু হয়, যেখানে বাড়ির দামের বৃদ্ধি বেতন বৃদ্ধির হারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। তিন দশক পর, যুক্তরাষ্ট্রের গড় বাড়ির দাম গড় বেতনের চারগুণেরও বেশি হয়ে যায়। এবং এই হিসাব ২০১০ সালের, যখন বাড়ির দাম সাব-প্রাইম মর্টগেজ সংকট (sub-prime mortgage crisis) থেকে পুনরুদ্ধার হচ্ছিল।

তবে এটা কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা ছিল সহজ চাহিদা এবং সরবরাহের বিষয়। মানুষ শুধু বড় বাড়িই চাইছিল না, সেই সাথে শহর কেন্দ্র বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কাছাকাছি বাড়িও চাচ্ছিল। এতে সরবরাহ সীমিত হয়ে যায়। ৩০ বছরের মর্টগেজের ব্যাপক ব্যবহার, কম সুদের হার, বেশি আয় এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (finance industry) বেশি বেশি ঋণ দেওয়ার প্রবণতা চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। ব্যস!

অর্থনীতিতে আবাসন : বিনিয়োগ ও পণ্য হিসেবে

বিনিয়োগ হিসাবে আবাসন

আবাসনকে কোন বিষয়টি একটি সূক্ষ্ম অর্থনৈতিক স্তরে মূল্যবান করে তোলে, তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাড়ি দুটি জিনিসের কাজ— জমি (যে মাটির প্লটের ওপর এটি দাঁড়িয়ে আছে) এবং কাঠামো (আসল বিল্ডিং, যেখানে শয়নকক্ষ এবং বাথরুম এবং সেই মজাদার জিনিসগুলো রয়েছে)। সাধারণত জমি হল সেই জিনিস যা রিয়েল এস্টেট বাজারে মূল্যবান হয়। যদি জমিটি কোনও আকাঙ্খিত এলাকায় থাকে, যেমন কোনও শহরের কেন্দ্র যেখানে প্রচুর ভালো চাকরির সুযোগ আছে, তাহলে জমির মূল্য বাড়বে।

উদাহরণস্বরূপ, সান ফ্রান্সিসকো (San Francisco) এবং সিলিকন ভ্যালির (Silicon Valley) কথা ধরুন। এই শহরগুলো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে পরিপূর্ণ, যারা নতুন এবং উত্তেজনাপূর্ণ প্রযুক্তি বিকাশের জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার ডেভেলপার (developer) এবং ইঞ্জিনিয়ারদের (engineer) লক্ষ লক্ষ ডলার বেতন দেয়। এখন এই প্রযুক্তিবিদদের সকলেরই কোথাও না কোথাও থাকতে হবে, তাই এই অফিসগুলোর কাছাকাছি রিয়েল এস্টেটের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই উচ্চ আয়ের কারণে, যারা এই বাড়িগুলো চান তাদের কাছে কিছু গুরুতর প্রস্তাব দেওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতাও রয়েছে। ফলস্বরূপ, এই জমিগুলোর দাম অনেক হয়।

সামাজিকভাবে, এটি শিল্পের অংশগ্রহণগ্রহণ করেনা এমন লোকদেরকে এমন একটি শহরের বাজার থেকে ছিটকে দিতে পারে যেখানে তারা সম্ভবত সারাজীবন ধরে বসবাস করেছে এবং সম্ভবত এটি একটি খারাপ জিনিস। তবে এখানে কোনও মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা নেই। এই অতি উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ের এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি (inflation) নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, আসলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই— যতক্ষণ এই এলাকার আয়ের স্তর একই হারে বাড়তে থাকে। এটা আশা করাই যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছোট শহরগুলোতেও তাদের সম্পত্তির জন্য উচ্চ মূল্য চাওয়া হবে এবং ধরা যাক সাহারা-নিম্ন আফ্রিকার (Sub-Saharan Africa) রিয়েল এস্টেটের দামের চেয়ে বেশি হবে। এটি কেবল সেই এলাকার বাসিন্দারা কতটা ধনী তার উপর নির্ভর করে।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে তা হল বিদেশী ক্রেতাদের বা ভাড়াটেদের কাছে কোনও এলাকার আবেদন। উদাহরণস্বরূপ, এস্পেন কলোরাডোর (Aspen Colorado) মতো একটি জায়গার কথা ভাবুন। এটি একটি সুন্দর এলাকা, তবে এটি ঠিক বিনিয়োগ ব্যাংক বা প্রযুক্তি স্টার্টআপের কেন্দ্র নয়। এখানকার সম্পত্তিগুলোর এত দাম হওয়ার কারণ হল এই এলাকার বাইরের লোকেরা, তা এই লোকেরা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনও এলাকা বা অন্য কোনও দেশ থেকেই হোক না কেন। শীতকালে স্কি ঢালু উপভোগ করতে একটি হলিডে হোম (holiday home) বা মৌসুমী ভাড়ার জন্য অনেক টাকা দিতে রাজি থাকে। পুরো শহরগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সিডনি (Sydney), ভ্যাঙ্কুভার (Vancouver) এবং লন্ডনের (London) মতো শহরগুলোর সম্পত্তি বাজারে বিদেশ থেকে উচ্চ আয়ের উপার্জনকারীদের সম্পত্তি কেনার কারণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে।

এখন, এই সব কিছুই জমির মূল্য বাড়িয়ে তোলে। এই অঞ্চলের আশেপাশের জমি শেষ পর্যন্ত একটি সীমিত সম্পদ, যার সরবরাহ সীমাবদ্ধ। সিলিকন ভ্যালি (Silicon Valley) বা ম্যানহাটন (Manhattan) বা এস্পেনের (Aspen) ভিলেজ চেয়ারলিফটের (village chairlift) ৩০ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাসযোগ্য স্থানের পরিমাণ সীমিত। তাই, ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং সীমাবদ্ধ সরবরাহ সহ যেকোনো কিছুর মতোই দাম বাড়বে। তাহলে আবাসন কি একটি ভাল বিনিয়োগ? হ্যাঁ, যতক্ষণ না আপনারা একটি বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সেই একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন যা আপনারা শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে করতেন— এটির কি ভাল প্রমাণপত্র, একটি ভাল ইতিহাস, ভবিষ্যতের বৃদ্ধির একটি ভাল পথ আছে এবং এটি কি বেশি মূল্যবান? যদি এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে এগিয়ে যান। তবে শুধু মনে রাখবেন, এটি অন্য যেকোনো বিনিয়োগের মতোই এবং বৃদ্ধির কোনও গ্যারান্টি নেই।

এছাড়াও, কিছু এলাকায় বন্ধকী পরিশোধ করা আসলে ভাড়া দেওয়ার চেয়ে সস্তা হতে পারে। তাই দাম একেবারেই না বাড়লেও আপনারা শেষ পর্যন্ত লাভবান হবেন। এবং এর উপরে, এটা ভুলে গেলে চলবে না যে মাঝে মাঝে আমাদের ঠান্ডা মাথার অতি-যুক্তিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ হওয়া বন্ধ করতে হবে এবং উপলব্ধি করতে হবে যে দিনের শেষে লোকেরা সবসময় সবচেয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয় না। মাঝে মাঝে এটা বলা ভালো লাগে যে “আমার বাড়ি আমার দুর্গ” এবং এটি সম্পূর্ণরূপে আমার। এখন ওসব বাদ দিয়ে, আসুন দেখি এই বিনিয়োগটি কোথায় একটু অদ্ভুত হয়ে যায়।

পণ্য হিসাবে আবাসন

অর্থনৈতিক অর্থে একটি বাড়ি কেবল একটি পণ্যের মতো, যেমন একটি গাড়ি বা এক টুকরো সাবান বা এক বোতল জল। এটি এমন একটি জিনিস যা আমরা কিনতে এবং বিক্রি করতে পারি এবং কিছু ধরণের মূল্য পেতে পারি। তবে এটি ঠিক কী ধরণের পণ্য তা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা কিছুটা কঠিন। অনেকে যুক্তি দেবেন যে আবাসন হল অপরিশোধিত তেল বা সোনা বা কফির মতো একটি পণ্য। এটি প্রায়শই ফটকাবাজারগুলোতে লেনদেন করা হয় এবং দিনের শেষে এটি এমন একটি জিনিস যা শেষ ব্যবহারকারীর জন্য একটি লক্ষ্যের মাধ্যম। এখানে প্রধান পার্থক্য হল বাস্তবিকভাবে শুধুমাত্র জমিই এরকম একটি পণ্য যার দাম বাড়ে। অন্যদিকে জমির উপর যে কাঠামোটি থাকে, অর্থাৎ বাড়িটা অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মত কাজ করে যেগুলোর দাম কমে। এটি কাঁচামাল থেকেই তৈরি এবং সময়ের সাথে সাথে একটি গাড়ির মূল্য যেমন হ্রাস পায় তেমনিভাবেই বাড়ির দামও হ্রাস পায়। একটি নতুন বাড়ি শুনতে চমৎকারই লাগে এবং প্রায়শই লোকেরা মনে করে যে বাড়ি এবং জমি উভয়েরই বাজারের সাথে মূল্য বাড়বে। তবে বাস্তবতা হল যে অন্যান্য উন্নত উৎপাদনকারী পণ্যের মতো বাড়িঘরও ভেঙে যায় এবং পুরানো হয়ে যায়। পার্থক্য শুধু এইটুকু যে প্রায়সই কোন বাড়ির মূল্যহ্রাস সেটা যে জমির উপর অবস্থিত তার মূল্যবৃদ্ধির জন্য আড়াল হয়ে যায়। তাই যদি কেউ এমন কোনও এলাকায় থাকে যেখানে জমির মূল্য কাঠামোর মূল্যের সমান বা তার চেয়ে কম, তাহলে জমির মূল্যবৃদ্ধি বনাম কাঠামোর মূল্যহ্রাসের উপর বিবেচনা করতে হবে, কারণ এটি খুব দ্রুত সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর এই ব্যাপারটাই আমাদেরকে নিয়ে যায় অর্থনীতির উপর এর প্রভাবের দিকে।

কোভিড-১৯ এর পর আবাসনের সম্প্রতি আকাশচুম্বি দাম ও এর কারণ

আশ্রয় একটি মৌলিক মানবাধিকার (fundamental human right)। একটি উন্নত অর্থনীতিতে আমরা অনেকেই আশা করি আশ্রয় আরামদায়ক ও যথেষ্ট বড় হবে এবং একেবারে অনুপযুক্ত স্থানে হবে না। আকাশচুম্বী দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। সিডনির মতো শহরগুলোতে দেখা যায়, ১০ বা তার বেশি ছাত্রছাত্রী একটি দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে গাদাগাদি করে থাকছে আকাশছোঁয়া ভাড়া ভাগ করে নেওয়ার জন্য। একইভাবে, অকল্যান্ডে গত বছর গড় বাড়ির দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। যার মানে দাঁড়ায়, গড় আয়ের একটি তরুণ দম্পতি যদি তাদের আয়ের পুরোটাই জমাতে পারে, তবুও তাদের পক্ষে বাড়ি কেনার স্বপ্ন ক্রমশ দূরে চলে যাবে।

বৈশ্বিক অতিমারীর (global pandemic) সময় এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে অদ্ভুত। সিডনি এবং অকল্যান্ডের পাশাপাশি ভ্যাঙ্কুভার, টরন্টো (Toronto) এবং কিছুটা হলেও লন্ডনের মতো শহরগুলোর পরিস্থিতি বিশেষভাবে আশ্চর্যজনক। কারণ এই শহরগুলো ঐতিহাসিকভাবে বিদেশি অর্থের উপর নির্ভরশীল। বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (foreign direct investment) এই শহরগুলোর কেন্দ্রস্থলে একটি বড় বিতর্কের বিষয় ছিল। কারণ ধনী বিদেশি বিনিয়োগকারীরা (investors) স্থানীয় বাসিন্দাদের আবাসন বাজারে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে লকডাউনের (lockdown) কারণে এটা সম্ভব হয়নি। অন্তত আগের মতো তো নয়ই। তা সত্ত্বেও, এই শহরগুলোর সম্পত্তি বাজার এবং উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ প্রধান শহরের কেন্দ্রগুলোতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আকাশচুম্বী দাম বেড়েছে। সম্প্রতি এই দাম বৃদ্ধির কারণ –

  • কম সুদের হার (low interest rates): প্রথম কারণটি অবশ্যই কম সুদের হার (low interest rates)। এর ফলে বেশি টাকা ধার করা সহজ হয়। যা মানুষকে সম্পত্তি কেনার দর কষাকষিতে আরও বেশি আর্থিক ক্ষমতা দেয়। যেখানে তারা সাধারণত এমন লোকেদের সাথে প্রতিযোগিতা করে যারা সহজেই বেশি টাকা ধার করতে সক্ষম।
  • উদ্দীপনা প্যাকেজগুলো (stimulus measures): দ্বিতীয় কারণটিও প্রথমটির মতোই। উদ্দীপনা প্যাকেজগুলো (stimulus measures) অর্থনীতির ভেতরে প্রচুর অর্থ পাঠায় এবং সেই অর্থের একটি বড় অংশ ধনী লোকেদের হাতে যায়। এরা এই অতিরিক্ত অর্থ বাড়ির ডাউন পেমেন্ট (down payment) হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। (ডাউন পেমেন্ট (Down payment) হল কোনো বড় ঋণ বা ক্রয়ের জন্য প্রথমে পরিশোধ করা একটি অর্থের পরিমাণ, যা সাধারণত মোট ক্রয়ের মূল্য বা ঋণের পরিমাণের একটি নির্দিষ্ট শতাংশ হয়। এটি মূলত ঋণের বাকী অংশ পরিশোধের জন্য লোন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চিত করে এবং এটি সাধারণত গৃহ ঋণ (mortgage) বা গাড়ি ঋণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি একটি বাড়ি কিনতে চান যার দাম ১,০০,০০,০০০ টাকা এবং আপনার ডাউন পেমেন্ট ২০% (২০,০০,০০০ টাকা) হয়, তবে আপনি প্রথমে ২০,০০,০০০ টাকা প্রদান করবেন এবং বাকী ৮০,০০,০০০ টাকা ঋণ হিসেবে পাবেন। ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ বাড়ালে ঋণের পরিমাণ কম হয় এবং পরিশোধের সময়সীমাও কমানো যেতে পারে।) এই পরিস্থিতি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় অস্ট্রেলিয়ান সরকার (Australian government) একটি বিতর্কিত পদক্ষেপের মাধ্যমে নাগরিকদের তাদের সুপারঅ্যানুয়েশন (superannuation) বা অবসরকালীন সঞ্চয় থেকে ২০,০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার পর্যন্ত তোলার অনুমতি দেয়, যা আমেরিকানদের ৪০১(কে) এর সমতুল্য। এই টাকা সাধারণত অবসর নেওয়ার আগে তোলা যেত না। এই অর্থ সংকটে পড়া পরিবারগুলোকে জীবনধারণের জন্য দেওয়ার কথা ছিল, যারা তাদের দোষ ছাড়াই চাকরি হারিয়েছিল। কিন্তু অনেকেই এটি তাদের সেভিংসের পরিমাণ বাড়াতে ব্যবহার করেছে। মজার ব্যাপার হলো, এই নীতি চালু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে, তরুণ অস্ট্রেলিয়ানদের প্রথম বাড়ি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় গড় সেভিংসের পরিমাণ প্রধান শহরগুলোতে ২০,০০০ ডলার বেড়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় কারণে যে আসলে কেবল সম্পত্তির দামই বেড়ে যায় তা না, এর ফলে বিশ্বজুড়ে মুদ্রার মান কমে যায়।
  • মানুষ সত্যিই বাড়ির জন্য বেশি টাকা খরচ করতে চাওয়া: তৃতীয় কারণটি হলো, মানুষ সত্যিই বাড়ির জন্য বেশি টাকা খরচ করতে চাইছে। কোভিডের কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে ঘরের ভেতরে আটকে থাকার মানে হলো মানুষ অতিরিক্ত জায়গা চাইছে। এর মানে, যারা এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে থাকে তারা হয়তো এমন একটি অ্যাপার্টমেন্ট চাইছে যেখানে তাদের নিজস্ব হোম অফিস (home office) থাকবে। যারা দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে থাকে তারা হয়তো একটি টাউন হাউসের (townhouse) বাইরের খোলা জায়গা চাইছে। আর যারা টাউন হাউসে থাকে তারা হয়তো একটি সম্পূর্ণ আলাদা বাড়ি চাইছে, যেখানে তারা তাদের পরিবারের থেকে কিছুটা আড়াল থাকতে পারবে, যাদের সাথে তারা সারাক্ষণ আটকে আছে। সবার বড় বাড়িতে ওঠার আকাঙ্ক্ষা পুরো আবাসন বাজারের চাহিদাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
  • মানুষের সঞ্চয় বৃদ্ধি: চতুর্থ কারণটি হলো, মানুষের সঞ্চয় বেড়েছে। প্রথম সম্পত্তি বা প্রথম বিনিয়োগের সম্পত্তি (investment property) অথবা একটি বড় পারিবারিক বাড়িতে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ডাউন পেমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সঞ্চয় করা। অনেক পরিবারের জন্য এই বাধা এখন কমতে শুরু করেছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ সঞ্চয়ের হার দেখা যাচ্ছে। এর একটা কারণ অবশ্যই মানুষ ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তিত এবং সরকারি উদ্দীপনা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের চাকরি থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত। তাই মানুষ ভবিষ্যতের জন্য বেশি করে সঞ্চয় করছে। তবে এর একটি বড় অংশ প্রায় সম্পূর্ণ আকস্মিক। ছুটি কাটাতে যেতে না পারা, বাইরে খেতে না পারা বা সপ্তাহান্তে মলে গিয়ে টাকা নষ্ট করতে না পারার সাথে কিছু উদার সরকারি উদ্দীপনা যোগ হওয়ায় মানুষের সঞ্চয় অ্যাকাউন্টে অনেক বেশি টাকা জমা হয়েছে। এই অর্থ পরবর্তীতে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • বাড়ি বিক্রি করতে ভয় পাওয়া: পঞ্চম কারণটি বেশ অদ্ভুত। মানুষ বাড়ি বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছে। প্রচলিত অর্থনীতি অনুযায়ী, কোনো পণ্যের দাম যত বাড়তে থাকে, ততই বেশি সংখ্যক বাজার অংশগ্রহণকারী সেই উচ্চ মূল্যে চাহিদা মেটাতে ইচ্ছুক হবে। কিন্তু এখানে সমস্যা হলো, আবাসন একটি প্রয়োজনীয় জিনিস। আমরা দেখেছি রিয়েল এস্টেট বর্তমানে বিনিয়োগের হাতিয়ার এবং একটি মৌলিক প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যেকার সীমারেখাকে অস্পষ্ট করে তুলেছে। এই উভয় শ্রেণিবিন্যাস বাজারের আচরণ সম্পর্কে আমাদের নিখুঁত অর্থনৈতিক ধারণার ফলাফলকে বিকৃত করে। মানুষের জন্য অপরিহার্য হওয়ায়, বাড়ির দাম বাড়লে সবসময় মানুষ তাদের বাড়ি বিক্রি করতে উৎসাহিত হয় না। কারণ তাদের একই বাজারে ফিরে আসতে হবে, ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ভাড়াটে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হবে অথবা রাস্তায় বসবাস করতে হবে। এই বিকল্পগুলোর কোনটিই তাদের অবস্থার উন্নতি করে না। এর চেয়েও বড় কথা, এই ভয় নিজের উপর আরও বেশি করে চেপে বসে। খুব বেশি মানুষ বিক্রি করছে না, তাই যারা বিক্রি করতে ইচ্ছুক তারা যদি একই বাজারে নতুন বাড়ি কিনতে চায়, তাহলে দ্রুত উপযুক্ত বাড়ি খুঁজে না পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এবং এর ফলে বাজারের দাম দ্রুত বেড়ে গেলে তাদের হয় খারাপ মানের বাড়ি কিনতে হবে, না হয় একই মানের সম্পত্তি কিনতে আরও বেশি ঋণে জর্জরিত হতে হবে। এই সবকিছুর মানে হলো মানুষ বিক্রি করা থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করে এবং এই চক্র চলতেই থাকে। বাড়ি কেনাবেচার সাথে জড়িত খরচগুলোর কথা বিবেচনা করলে এই প্রক্রিয়া আরও বেড়ে যায়। রিয়েল এস্টেট এজেন্টের কমিশন (real estate agent commissions), মূলধন লাভকর (capital gains taxes), বিক্রয় কর (sales taxes), আইনি ফি (legal fees), সম্পত্তি মূল্যায়ন ফি (property evaluation fees), মালপত্র সরানোর খরচ ইত্যাদি এখানে যুক্ত হয়। এভাবে বাড়ি বদলানো একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার হয়ে যায় এবং যতক্ষণ না এর পেছনে যথেষ্ট লাভ থাকে ততক্ষণ মানুষ এটা করে না। অবশ্যই এমন কিছু লোকেরাও আছেন যাদের নিজেদের বসবাসের জন্য কোনো বাড়ি নেই, তারা শুধুমাত্র বিনিয়োগের সম্পত্তি হিসেবে কিনে রেখেছেন। কিন্তু তাদের বিক্রির সিদ্ধান্ত সাধারণ বাজারের নিয়ম-কানুন দ্বারা চালিত হয় না। মানুষের আবেগ তাদের ভালো ফল দেওয়া বিনিয়োগ ধরে রাখতে উৎসাহিত করে। এই স্ববিরোধী বাজার প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রিপ্টোকারেন্সির (cryptocurrencies) দিকে চোখ রাখতে পারেন। অবশ্যই এর একটা সীমা আছে। বিশেষ করে স্থানীয় বাজারে। যদি কোন ব্যক্তি তার বাড়িটি বিক্রির জন্য ১০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব পায়, তবে অবশ্যই সেই ব্যক্তি এক মুহূর্তও দেরি না করে রাজি হয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব যখন সম্পত্তির মূল্য তাকে সেই বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সম্পদ দেয়।
  • নির্মাণ সামগ্রীর (building supplies) মারাত্মক অভাব: ষষ্ঠ কারণটি সাম্প্রতিক কালে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। সেটি হলো নির্মাণ সামগ্রীর (building supplies) মারাত্মক অভাব। আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে (international supply chains) ধীরগতি এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন শিল্পকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফ্রেম তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোর মতো মৌলিক জিনিসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে নির্মাতারা কাজ ফিরিয়ে দিচ্ছেন, কারণ জনবলের অভাবের কারণে নয়, বরং তাদের কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ নেই। এর ফলে মানুষ যে ধরনের বাড়ি খুঁজছে তার সরবরাহ আরও সীমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মানে হলো যদি কোনো পরিবার আগে থেকে তৈরি করা কোনো বাড়ি কেনা এবং নিজেদের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তাহলে তাকে আগে থেকে তৈরি করা বাড়ি কিনতে হবে, আর তাই ইতিমধ্যে তৈরি করা বাড়ির দামও বেড়ে যায়।

এই ছয়টি কারণের মানে হলো বিশ্ব অর্থনীতিতে এত অস্থিরতা সত্ত্বেও বাড়ির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। কিন্তু সম্ভবত এটাই ভালো।

আবাসনের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাবের স্বরূপ

আবাসন, মূল্যস্ফীতি ও বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেটের ভূমিকা

আবাসন সবার জন্য একটি অপরিহার্য পরিষেবা। মানুষের প্রয়োজন অনুসারে আশ্রয় জল, বাতাস এবং খাদ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই অন্তর্নিহিত প্রয়োজনীয়তার অর্থ এই নয় যে বাজার অতিরিক্ত ঋণ এবং এর সাথে আসা অপ্রীতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত। শুরু থেকেই রিয়েল এস্টেটের দাম মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম শক্তিশালী চালক। কেন তা ব্যাখ্যা করার জন্য, আমাদের আবাসিক বাজারের বাইরে কিছুক্ষণ দেখতে হবে এবং বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট সহ রিয়েল এস্টেটের দিকে নজর দিতে হবে। বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট হল দোকানের সামনের অংশ, অফিসের ভবন এবং গুদাম ঘরের মতো জিনিস। এর বেশিরভাগই এখনও বিনিয়োগকারীদের মালিকানাধীন এবং ব্যবসার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়, ঠিক যেভাবে কেউ একটি বাড়ি ভাড়া দিতে পারে। এখন যদি সম্পত্তি বা রিয়াল এস্টেটের বাজার ভাল যায়, দাম বাড়তে থাকে, তাহলে এই বাণিজ্যিক সম্পত্তি বা বাণিজ্যিক রিয়াল এস্টেটগুলোর ভাড়াও বাড়বে। বেশিরভাগ ব্যবসায়, প্রাথমিক ব্যয়ের কেন্দ্র হল কর্মীদের বেতন এবং তারপর ভাড়া। যদি কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রে এসব বাণিজ্যিক রিয়াল এস্টেটের ভাড়া প্রতি বছর তিন থেকে চার শতাংশ বৃদ্ধি পায়, তাহলে তাদের হয় সেটিকে লোকসান হিসাবে মেনে নিতে হবে অথবা সেই ব্যয় তাদের ভোক্তাদের উপর আরও বাড়িয়ে দিতে হবে তাদের পণ্য বা সেবার দাম আরও বাড়িয়ে দেবার মাধ্যমে। আর এভাবেই বাণিজ্যিক রিয়াল এস্টেটের দামের বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি ঘটাতে অবদান রাখে। আসলে এটি কার্যকরভাবে খরচ-বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতির (cost-push inflation) একটি পরোক্ষ রূপ, যেখানে জিনিসগুলোর দাম বাড়ছে কারণ সেগুলো সরবরাহ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এই মূল্যস্ফীতি পণ্য বা সেবার চাহিদা বৃদ্ধির জন্য নয় বরং সরবরাহ কঠিন হয়ে যাবার কারণে হচ্ছে। এবং এটি সাধারণত খারাপ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি হিসাবে স্বীকৃত, অথবা অন্তত সেই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

অনলাইন কেনাকাটা, কর্মসংস্থান এবং রিয়েল এস্টেটের প্রভাব

বেশিরভাগ দেশে খুচরা দোকানগুলোর জন্য প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু আমরা অনলাইন অর্ডারের ব্যাপকতায় এক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিবর্তন দেখেছি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, অনলাইনে অর্ডার করতে হলে এই দোকানদারদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হয়না। তবে আংশিকভাবে এর কারণ হচ্ছে এই যে, অনলাইনে জিনিসপত্র সস্তা। এগুলো সস্তা কারণ অনলাইনের প্রোডাক্টগুলোর দাম বাণিজ্যিক রিয়াল এস্টেটের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে তেমন বাড়েনা। সেই সাথে অনলাইন বিতরণকারীরা রিয়াল এস্টেট সহ খুচরা বিক্রেতাদের তুলনায় অনেক কম লোককে নিয়োগ করে, ফলে সেই খরচটাও কমে যায়। সব মিলে অনলাইন কেনাবেচার প্রোডাক্ট হয় সরাসরি উৎপাদনকারী, না হয় অনলাইন বিতরণকারী কেন্দ্রগুলো থেকে আসে, যেগুলোর সংখ্যা খুচরা বিক্রেতার দোকানগুলোর থেকে অনেক কম, আবার অনলাইন বিতরণকারীর সাথে সম্পর্কিত লোকের সংখ্যা অফলাইনে খুচরা বিক্রির সাথে সম্পর্কিত লোকের সংখ্যার থেকে অনেক কম হয়। এর অর্থ অনলাইন বিক্রির ক্ষেত্রে অফলাইন বিক্রির তুলনায় বাণিজ্যিক রিয়াল এস্টেটের ভাড়া ও কর্মীদের মজুরি দুইই কম লাগে, আর তার ফলে প্রোডাক্টের পেছনে এরকম ব্যয়ও কমে যায়। এর ফলে প্রোডাক্টগুলোর দাম কমে, আর রিয়াল এস্টেটের দাম বৃদ্ধির সাথে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সম্পর্কও কমে। যাই হোক, এর ফলে খুচরা বিক্রেতার দোকানগুলোর প্রয়োজনীয়তা কমে যায়, মানে এর সাথে সম্পর্কিত লোকেরা বেকার হয়ে পড়ে। এখন অনেকেই মনে করতে পারে এই ব্যাপারটা প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ার অনিবার্য অগ্রগতির ফল। কিন্তু প্রযুক্তির বাস্তবায়ন তখনই হয় যখন এগুলো আগের ব্যবস্থার চেয়ে সাশ্রয়ী হয়। আর অনলাইন কেনাবেচাকে বেশি সাশ্রয়ী বলে মনে হয়েছে রিয়াল এস্টেটের দাম অনেক বেড়ে যাবার জন্যই। এভাবে আমরা দেখছি রিয়াল এস্টেটের দাম বৃদ্ধির প্রভাব বেকার সমস্যা বৃদ্ধি ঘটায়। শুধু তাই না, অর্থনীতির সমস্ত ক্ষেত্রেই এর প্রভাবটা ছড়িয়ে পড়ে।

ঋণ, রিয়েল এস্টেটের দাম এবং বিনিয়োগের ঝুঁকি

এদিকে সবকিছুর সঙ্গেই ঋণের সম্পর্ক আছে। বর্তমানে ২০২০ সালে অনেক দেশই ঋণের ফাঁদে পড়েছে। রিয়েল এস্টেটের দাম শেষ পর্যন্ত চাহিদা এবং সরবরাহের একটি কাজ এবং চাহিদা নির্ভর করে লোকেরা কতটা উপার্জন করে এবং তারা কতটা ধার করতে পারে তার উপর। যখন উচ্চ আয়ের অঞ্চলে রিয়াল এস্টেটের মূল্যবৃদ্ধি হয়, তখন সেটি ঠিক ছিল কারণ উচ্চ আয়ের কারণে রিয়াল এস্টেটের উচ্চ দাম সমস্যার কিছু ছিল না। তবে বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ অঞ্চলে দেখা যায় সেগুলোতে রিয়েল এস্টেটের দাম বাড়ছে, কিন্তু মানুষের মজুরি বা আয় প্রায় স্থিরই রয়েছে, তেমন বাড়েনি। কেন এটা হয়েছে? রিয়াল এস্টেটের দাম অবশ্যই রিয়াল এস্টেটের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য বৃদ্ধি পায়। আর চাহিদা বৃদ্ধি পায় ব্যক্তির আয় ও ধার বা ঋণ করার ফলে। যেহেতু আয় তেমন বাড়েনি, সেহেতু ধরে নিতেই হয় যে মানুষের ঋণ গ্রহণ বেড়েছে, অর্থাৎ সেই সব দেশে ঋণদান আরও উদার হয়েছে। অর্থাৎ বলা যায়, কোন দেশে রিয়াল এস্টেটের জন্য ঋণ সুবিধা বেড়ে গেলে রিয়াল এস্টেটের দামও বাড়তে থাকে। আবাসনের জন্য ঋণকে মর্টগেজ বলে।

২০০৮ সালের সাবপ্রাইম মর্টগেজ সংকট (subprime mortgage crisis) ঘটে। এর ফলে পরে ঋণদানে একটি বিশাল কাটছাঁট করা হয়েছিল, কারণ ব্যাংকগুলো সরাসরি দেখেছিল যে কীভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন ঋণদান তাদের আর্থিক অবস্থার ক্ষতি করতে পারে। তবে তারপর থেকে এটি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। ২০০৮ সালের সমস্যাটি ছিল এই যে এমন ব্যক্তিদের মর্টগেজ দেওয়া হচ্ছিল যাদের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা খুবই কম, খারাপ ক্রেডিট (credit) এবং অস্থির ব্যক্তিগত পরিস্থিতি ছিল। সৌভাগ্যবশত সেই পরিস্থিতিটির পুনরাবৃত্তি তেমন হয়নি। তাই পরবর্তীতে ঋণ দানের কারণে সমস্যা হলে অন্য ফ্যাক্টরের জন্য হবে। 

অন্য প্রান্তে, ধনী বাড়িওয়ালাদের সাথেও রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ দুটি কারণে অদ্ভুত— প্রথমত, এটি একটি অত্যন্ত লেভারেজড (leveraged) বিনিয়োগ। যদি কেউ কোনও রিয়াল এস্টেটে ইনভেস্ট করার সময় নিজের টাকা থেকে ১০% দেন, এবং বাকি ৯০% ধার করে দেন, তাহলে সেটা টেন টু ওয়ান লেভারেজ পজিশন হয়ে যায়। এর মানে হচ্ছে এই বিনিয়োগের পর রিয়াল এস্টেটের দাম যদি ১০% বাড়ে, তাহলে ব্যক্তির রিটার্ন ১০০% হচ্ছে, সেখান থেকে তিনি ঋণ পরিশোধ করে অনেক লাভ পাচ্ছেন। কিন্তু এতে যদি লস হয় তাহলে তিনি প্রায় সবই হারিয়ে ফেলছেন। কেউই শেয়ার বাজারে এরকম টেন টু ওয়ান লেভারেজ পজিশনে বিনিয়োগ করেনা। এটা করা হয় কেবল রিয়াল এস্টেটেই কারণ সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী মনে করেন সবসময়ই জমির দাম বাড়বে। এভাবে দিনের শেষে আবাসন কেবল আরেকটি ফটকা বিনিয়োগই। অনেক বাড়িওয়ালা এমনকি এই সংকটের শুরুতে ধরা পড়েছিলেন কারণ তারা রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের ধারণা নিয়ে প্রবেশ করেছিলেন যে এটির দাম কেবল বাড়তেই থাকবে, ভাড়া বাড়তেই থাকবে এবং তারা ধনী হয়ে যাবে। তবে বাস্তবতা আঘাত হানে, আর এর মাধ্যমে দেখা যায় যে, রিয়াল এস্টেটে বিনিয়োগও আরেকটি ফটকা বাজার এবং এখানেও রিটার্ন চাইতে গেলে ঝুঁকি নিতেই হবে।

ঋণের উপর নির্ভরতা, বাজেয়াপ্তির ঝুঁকি এবং অর্থনীতির ভিত্তি

আরেকটি বড় সমস্যা আছে। ব্যাংক তো আবাসন কেনার জন্য বা আবাসনে বিনিয়োগ করার জন্য ঋণ এমনি এমনি দেবে না। সেই ঋণ পাবার যোগ্যতা অর্জন করার জন্যেও আপনার অধিকারে থাকা অন্য রিয়াল এস্টেট বা সম্পত্তি থেকে আয় দেখাতে হবে। বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ ব্যাংকই সেই আয়কেই এক্ষেত্রে বিবেচনা করবে যে আয় সেই সম্পত্তিটাকে ভাড়া দিলে পাওয়া যাবে এবং তার ভিত্তিতেই ঋণের আবেদন অনুমোদিত হবে কিনা তা ঠিক হবে। এখন যারা বসবাসের জন্য বাড়ি কিনছেন তাদের জন্য এটা সমস্যা না। কিন্তু যারা বিনিয়োগ করার জন্য বাড়ি কিনতে যাচ্ছেন তাদের জন্য এটা বিশাল সমস্যা তৈরি করে। অনেক লোক চাকরি হারাবার কারণে, বিশেষ করে অনলাইনে বেচাকেনা শুরু হবার ফলে রিয়াল এস্টেটে ভাড়া কমে যায়। এদিকে রিয়াল এস্টেটের বাজারেও এখন আগের চেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী এই রিটার্নের উপর নির্ভর করছেন কারণ তাদের কাছে তাদের বন্ধকী পরিশোধ করার মতো নিয়মিত আয় আর থাকছে না। তাই তারা হয় বাজারের মন্দার সময়ে তাদের বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা এই অতিরিক্ত লেভারেজড সম্পদের আরও অবমূল্যায়ন ঘটায়, অথবা তারা তাদের বন্ধকির ঋণে খেলাপি করছেন, যা আর্থিক বাজারে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং শেষ পর্যন্ত এমন এর ফলে এক সময় তার বাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে যা বাজারের মন্দার সময়ে বিক্রি করা হবে। আর এটা এই অতিরিক্ত লেভারেজড সম্পদের আরও বেশি অবমূল্যায়ন ঘটাবে।

এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, ব্যাংকগুলো তো ব্যবসার উদ্যোগের অর্থায়নের জন্যেও নিয়মিত অর্থ ধার দেয়। তাহলে এখানে এত পার্থক্য কেন? পার্থক্য এখানেই যে, ব্যবসাগুলো রিয়াল এস্টেটে বিনিয়োগের মতো প্রাথমিকভাবে এতটা অতিরিক্ত লেভারেজড হয় না। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য যেটা সেটা হচ্ছে, ব্যবসাগুলো আসলে বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য কিছু না কিছু উৎপাদন করে। কিন্তু রিয়াল এস্টেট থেকে আসলে কিছুই উৎপাদিত হয়না। যখন অর্থনীতিবিদরা বিনিয়োগের কথা ভাবেন, তখন তারা সাধারণত মূলধনী পণ্যের (capital goods) কথা ভাবেন। লোকেরা সাধারণত শেয়ারের মাধ্যমে কোনও সংস্থায় বিনিয়োগ করে এবং সেই সংস্থা এই তহবিল ব্যবহার করে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন মেশিন ইত্যাদি কিনতে। এগুলো সবই মূলধনী পণ্য, যেমন এমন পণ্য যা আরও পণ্য উৎপাদন করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো সাধারণত বেশ ভাল বিনিয়োগ হয় কারণ আপনারা যদি এমন একটি মেশিন কেনেন যা একটি কাঁচামালকে একটি ভোগ্যপণ্যে পরিণত করে, তাহলে আপনারা ইনপুট (input) এবং আউটপুটের (output) দামের মধ্যে পার্থক্য থেকে লাভ করতে পারেন। এটি হল মূল্য-সংযোজন উৎপাদনের মূল বিষয়। এখন বাড়িঘরকে কখনও কখনও মূলধন হিসাবে বিবেচনা করা হয় ঠিকই, তবে তারা আসলে তেমন কিছুই নয়। বাড়িঘর বা আবাসনগুলো যে জমির উপর বসে আছে সেই জমি এবং কাঠামোটি নিজে কার্যকরভাবে একটি ভোগ্যপণ্য। এটিতে বিনিয়োগ করায় আবাসন ব্যয়বহুল হয়, আর উলটে এই ব্যয়বহুল আবাসন থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত জমিকে সত্যিকারের লাভজনক শিল্পের আরেকটি উৎপাদন কারণ হওয়া থেকে বঞ্চিতই করা হচ্ছে, যেটা না হলে পণ্যগুলোতে মূল্য যোগ করে একটি ধনী অর্থনীতি তৈরি করা যেতে পারতো।

অর্থনীতির ভিত্তি হল এই ধারণা যে আমাদের অসীম চাহিদা রয়েছে এবং সেই চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য সীমিত সম্পদ রয়েছে। ভাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা একটি জাতির উৎপাদন ক্ষমতা প্রসারিত করার চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষার উপর নির্মিত, যাতে আরও বেশি মানুষের কাছে আরও বেশি সম্পদ উপলব্ধ করা যায়। জমির ব্লকগুলোকে এলোমেলোভাবে সরিয়ে দেওয়া এবং তাদের আরও উচ্চতর মূল্য নির্ধারণ করা মূল্যবান কিছু তৈরি করে না। এটি তার বিশুদ্ধতম রূপে কাগজের সম্পদ। সেরা পরিস্থিতিতে এটি কিছুই অর্জন করে না তবে বাস্তবিকভাবে এটি ভোক্তাদের ঋণে ফেলবে, একটি জাতিকে অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ত করবে এবং সত্যিকারের শিল্পকে এমন একটি এলাকায় চালিত করবে যেখানে তারা কম দামে রিয়াল এস্টেট নামক এই গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কারণটি পেতে পারে।

রিয়াল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে চাওয়ার কারণ ও তাতে অর্থনীতিতে সম্ভাব্য লাভ

বাড়ির দাম বেশি হওয়া নিয়ে অভিযোগকারীর অভাব নেই। তবে খুব কম লোকই ভেবে দেখেছে যে এটি আসলে কোনো সমস্যা কিনা। আজকের উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই অধিকাংশ মানুষ বাড়ির মালিক। এটা ধরে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত যে এই বাড়িগুলোর মালিকরা চাইবেন তাদের সম্পত্তির মূল্য বাড়ুক, তাই না? এই বর্ধিত মূল্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে (বিক্রির পর আরকি)। মানুষ এই ইক্যুইটি (equity) ব্যবহার করে নির্মাণ বা বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন করতে পারে। 

সম্পত্তির দাম বাড়লে মানুষ ধনী অনুভব করে এবং তাদের ভোগের প্রবণতাও বাড়ে। যদি কারও একটি সম্পত্তি থাকে যা তিনি ৫ লক্ষ ডলারে কিনেছেন এবং যার বিপরীতে ৪ লক্ষ ডলার ঋণ আছে, এবং একই সময়ে সেই সম্পত্তির দাম বেড়ে ১০ লক্ষ ডলার হয় এবং তিনি সেই ঋণের ২ লক্ষ ডলার পরিশোধ করেন, তাহলে তিনি কার্যত শুধুমাত্র একটি বাড়িতে বসবাসের মাধ্যমে তার সম্পদের পরিমাণ আটগুণ বাড়িয়েছেন।

এই ধরনের বিশাল লাভের সম্ভাবনা লেভারেজ (leverage) ব্যবহার করে করা সমস্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কিন্তু একটি মর্টগেজের জন্য যে ফাইভ টু ওয়ান লেভারেজ আদর্শ (বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৫ ভাগের ১ ভাগ নিজের টাকা, বাকিটা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া), সেটা দিয়ে স্টক (stocks) কিনলে সাধারণত বেশি সুদের হার এবং মার্জিন কলের (margin calls) মতো ঝুঁকিপূর্ণ চুক্তির শর্ত চলে আসে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত নয়। এর চেয়েও বড় কথা, ফাইভ টু ওয়ান লেভারেজের স্টক পোর্টফোলিওতে (stock portfolio) টিকে থাকা সম্ভব না।

সেই সাথে রিয়াল এস্টেট খুবই চমৎকার কারণ এটি অবসরকালীন সঞ্চয়ের (retirement saving) একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। গড়পড়তা মানুষ আর্থিকভাবে বেশ বোকা। বেশিরভাগ মানুষই অবসর গ্রহণের জন্য তেমন কোনো চেষ্টা করে না, এমনকি যদি তারা সক্ষমও হয়। তবে একটি পারিবারিক বাড়ির মালিক হওয়ার মাধ্যমে, ৩০ বছর ধরে একটি মর্টগেজ পরিশোধ করার মাধ্যমে মানুষ এমন একটি সম্পদে ইক্যুইটি তৈরি করবে যা অবসরের সময় বিভিন্নভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। ধরে নেওয়া যাক তাদের সন্তানরা বড় হয়ে নিজেদের মতো বেরিয়ে গেছে (যা আজকাল খুব একটা নিশ্চিত নয়)। তারা সেই বাড়ি বিক্রি করে ছোট কোনো বাড়িতে চলে যেতে পারে এবং দামের পার্থক্যটা তাদের অবসরকালীন জীবন নির্বাহের জন্য ব্যবহার করতে পারে। তারা সেই বাড়ি ভাড়া দিয়ে সেই আয়ের মাধ্যমে নিজেরা ছোট কোনো বাসায় থাকতে পারে এবং অবসর জীবন কাটাতে পারে। অথবা তারা তাদের ঋণমুক্ত বাড়িতেই বসবাস করতে পারে। যার মানে তাদের যা কিছু আয় হবে তার বেশিরভাগ অংশ আবাসন বাবদ খরচ করতে হবে না, যা বেশিরভাগ মানুষের বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। এই ধরনের স্ব-অর্থায়িত অবসর (self-funded retirement) আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, কারণ বয়স্ক জনসংখ্যা রাষ্ট্র-চালিত অবসর ব্যবস্থার (state-funded retirement systems) উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে।

আরেকটি যুক্তি সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিক না হয়ে দার্শনিকও বটে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে ভোটিং জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশেরই একটি সম্পদ শ্রেণির (asset class) মূল্যবৃদ্ধিতে স্বার্থ আছে, সেখানে সরকারের সেই বৃদ্ধি রোধ করার জন্য নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া কি সত্যিই ন্যায্য? আবারও বলছি, এটি সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিক যুক্তি নয়, তাই আমি আপনাকে বলতে চাই না কোনটি সঠিক বা কোনটি ভুল।

স্থিতিশীল মূল্য বৃদ্ধিই হলো সম্ভাব্য সমাধান 

তাহলে ব্যক্তিগত স্তরে রিয়েল এস্টেট কি একটি ভাল বিনিয়োগ? অবশ্যই না। এটি একটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, অত্যন্ত লেভারেজড এবং অ-বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আরও বেশি ঋণ নেওয়ার অবিরাম চাপ এখানে আছেই। হয়তো অন্তত যে বাড়িতে থাকা হয় সেটি নিজের করে নেওয়া খুব খারাপ ধারণা নাও হতে পারে। তবে ম্যাক্রো লেভেলে একটি শক্তিশালী আবাসন বাজার একটি সত্যিকারের বোঝা। এটি এমন লোকদের কাছ থেকে অর্থ কেড়ে নেয় যারা অন্যথায় পণ্য বা পরিষেবার উপর ব্যয় করতে পারত বা এমন জিনিসগুলোতে বিনিয়োগ করত যার প্রকৃত মূল্য রয়েছে এবং এটি সেই শিল্পগুলোকে শ্বাসরোধ করে যা অর্থনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থান পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর সমাধানগুলো জটিল কারণ প্রায়শই একটি সরকারকে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন বাজারের দায়বদ্ধতার বিকল্প খুঁজতে হয়। আর এটা করতে গেলে সরকারকে মানুষের এই বৃহত্তম বিনিয়োগের খাতের বিরুদ্ধে যেতে হয়, কিন্তু এটা করলে তার ফল সরকারের পরবর্তী নির্বাচনের ফলে পড়তে পারে। যেটা করা যায় তা হচ্ছে ঋণদানকে দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করাটাকে নিশ্চিত করা। রেকর্ড-নিম্ন সুদের হার মানে হল আরও বেশি সংখ্যক লোক আরও বেশি অর্থ ধার করতে পারে এবং মনে করে যে তারা অন্যান্য লোকেদের কাছে জমিটি বিক্রি করার পরে খুব বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর মতো কাজ করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা তার থেকে জমিটি কিনল তারাও আসলে ব্যাংক থেকে কম সুদের হারে ধার করেই কিনলো। সব মিলে এমন কিছুতে বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেওয়া যা কিছুই উৎপাদন করে না তা সামষ্টিক অর্থনৈতিক (macroeconomic) স্তরে প্রায় সবসময়ই একটি খারাপ ধারণা। এটি কি কখনও সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে? বলা কঠিন। দিনের শেষে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব সত্তা এবং তাদের নিজস্ব লাভের উদ্দেশ্য রয়েছে এবং তারা নিশ্চিত করতে চায় যে তারা কোনও ভাল সুযোগ হাতছাড়া করছে না। একই কথা প্রযোজ্য স্বতন্ত্র ফটকাবাজারিদের ক্ষেত্রেও। আর স্বাধীনতা যখন ক্ষতিকর হয়ে যায় তখন রাষ্ট্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা।

আবাসন সহজলভ্যতার সংকটের (housing affordability crisis) সমাধান কী তা নিয়ে সবার নিজস্ব মতামত রয়েছে। তবে এর আগে জানতে হবে লক্ষ্য কী হওয়া উচিত। নিশ্চিতভাবেই আমরা চাই না যে রিয়াল এস্টেটের দাম কমে যাক। কারণ এতে অনেক মানুষ তাদের হোম লোনের (home loans) চেয়ে বেশি ঋণে ডুবে যাবে এবং ২০০৮ সালে আমরা যেমনটা দেখেছি তেমন আরও অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। তবে আমরা সম্ভবত এটাও চাই না যে বাড়িঘর কেবল সমাজের ধনী ব্যক্তিদের জন্য সহজলভ্য হোক। এবং গত দশকে যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে।

আবাসনকে একটি পণ্যের মত দেখেই এর দাম বৃদ্ধির লাভ ক্ষতি বিবেচনা করলে বিষয়টা অনেক স্পষ্ট হয়। একে গমের সাথেই তুলনা করুন। রুটি, পাস্তা বা পিজ্জা তৈরির মাধ্যমে এটি আমাদের মূল্য সরবরাহ করে। মানুষ কমোডিটিস মার্কেটে (commodities markets) এর উপর ফটকা লাগাতে পারে এবং বাস্তবে তা করেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ আগামী দশকে এর দাম চারগুণ বেড়ে যাবে এরকম দীর্ঘমেয়াদী লাভের আশায় গম ধরে রাখে না। প্রকৃতপক্ষে, যদি গমের দাম চারগুণ বেড়ে যায় তবে আমরা সম্ভবত এটিকে বাজারের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখব। কারণ এতে হঠাৎ করে আমাদের অনেক খাবারের দামই অনেক বেশি হয়ে যাবে। আবাসনকেও সেরকমভাবেই দেখা দরকার। আমরা গমের ক্ষেত্রে যেমন দাম দীর্ঘমেয়াদে চারগুণ বেড়ে যাবে এমনটা আশা করতে পারিনা বা এরকম হলে অর্থনীতির ব্যর্থতা হিসেবে দেখি, আবাসনের ক্ষেত্রেও সেভাবেই দেখা উচিৎ। আর সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিৎ। আর লক্ষ্য হওয়া উচিৎ যাতে এর মূল্যবৃদ্ধিটা স্থিতিশীল থাকে।

রিয়েল এস্টেট ও আবাসনও একটি পণ্যই। এটি আমাদের বসবাস, কাজ বা চাষাবাদের জন্য জায়গা দেওয়ার মাধ্যমে মূল্য সরবরাহ করে। আমাদের সম্পত্তির মূল্যবৃদ্ধিকেও অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মতোই দেখা শুরু করা উচিৎ, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হলে তাকে কমিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা উচিৎ। এর অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, যারা সম্পত্তি বাজারে প্রবেশ করতে চাইছে তাদের একটি পরিবর্তনশীল লক্ষ্য থাকবে না, যেখানে তাল মিলিয়ে চলার জন্য তাদের আরও বেশি অর্থ সঞ্চয় করতে হবে। এটি মানুষকে তাদের মর্টগেজ পরিশোধ করে বা ভাড়া সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেও সম্পদ তৈরি করা থেকে বিরত করবে না। কারণ এগুলো এখনও স্থিতিশীল নগদ প্রবাহ সরবরাহ করবে। অধিকতর স্থিতিশীল মূল্যবৃদ্ধি মানে অর্থনৈতিক মন্দার সময় দাম কমার সম্ভাবনাও কম থাকবে। যার মানে মানুষের তাদের মর্টগেজের চেয়ে কম মূল্যের সম্পত্তির মালিক হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। এর চেয়েও বড় কথা, স্থিতিশীল মূল্য নির্ধারণের মানে হলো আপনি মূলধন লাভকরের (capital gains taxes) হাত থেকে বাঁচতে পারবেন, যেখানে এটি প্রযোজ্য। এর ফলে যারা তাদের বাড়ি বদল করতে চান তারা আরও সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, কারণ তাদের পরিবারের আকার জীবনকালে পরিবর্তিত হতে থাকে।

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন এই সমস্ত সুবিধার জন্য দরিদ্র বাড়িওয়ালাদের ক্ষতি হবে। তবে এটি আংশিক সত্য। যে সম্পত্তি বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র সম্পত্তির উপর বসে থাকে এবং দাম বাড়ার জন্য অপেক্ষা করে, হ্যাঁ, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে তাতে কি? সেই অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করলে অর্থনীতি আরও ভালো ফল পাবে। বরং অর্থ সেই বিনিয়োগকারীদের কাছে যাবে যারা বাজারে মূল্য যোগ করে। ঠিক যেমনটা সাধারণ পণ্যের ক্ষেত্রে হয়। যদি কেউ দক্ষতার সাথে লোহার আকরিক থেকে ইস্পাত তৈরি করে, তবে সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি যে মূল্য যোগ করেছেন তা থেকে লাভ পাবেন। কেউ যদি যদি গম থেকে রুটি তৈরি করেন তবে তিনি যে মূল্য যোগ করেছেন তা থেকে লাভবান হবেন। এবং কেউ যদি একটি জরাজীর্ণ বাড়িকে অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে (apartment blocks) রূপান্তরিত করেন তবে সেক্ষেত্রে তিনি সেই মূল্য থেকে লাভবান হবেন যা তিনি মানুষকে বসবাসের জন্য জায়গা তৈরি করে যোগ করেছেন, যা আগে ছিল না।

এই কাল্পনিক পরিস্থিতি জাপানের (Japan) বাস্তবতার মতো, যেখানে গত দশকে বাড়ির দাম খুব কমই বেড়েছে। এটাই কি আদর্শ? বাড়ির মালিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠকে রাজি করানো কঠিন হতে পারে। তবে এটিকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা উচিত নয়। বিশেষ করে যখন এটা না করলে মানুষ আরও বেশি করে আবাসনেই বিনিয়োগ করতে থাকবে, আর তাতে এমন এক ভবিষ্যত আসবে যেখানে মানুষ তাদের কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় ধরে প্রায় অসাধ্য ঋণের বোঝা নিয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হবে, শুধুমাত্র একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়ার জন্য।

তথ্যসূত্র

  • Jowsey, E., 2011. Real estate economics. Macmillan International Higher Education.
  • Evans, A.W., 2008. Economics, real estate and the supply of land
  • Barlowe, R., 1978. Land resource economics: the economics of real estate.
  • DiPasquale, D. and Wheaton, W.C., 1996. Urban economics and real estate markets (Vol. 23, No. 7). Englewood Cliffs, NJ: Prentice Hal
  • Wheaton, W.C., 1999. Real estate “cycles”: some fundamentals. Real estate economics

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.