ব্রিকসের নতুন মুদ্রা কি সত্যিই মার্কিন ডলারের বিকল্প হতে পারে?

ভূমিকা

৩০ নভেম্বর, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) এক টুইটে হুমকি দেন যে, ‘ব্রিকস’ (BRICS) দেশগুলো যদি মার্কিন ডলারের (US dollar) প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কোনো নতুন মুদ্রা তৈরি করতে যায়, তবে তাদের পণ্যের ওপর তিনি ১০০% শুল্ক (tariffs) আরোপ করবেন। অনেকের কাছে এটি আকস্মিক মনে হতে পারে, কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই অন্তত ইন্টারনেটের কিছু আলোচ্যাংশে জোর সম্ভাবনা বা জল্পনা ছিল যে, ব্রিকস জোট নাকি ডলারকে প্রতিস্থাপন করার মতো কোনো মুদ্রা আনতে পারে।

এই নিবন্ধে আমরা বিশ্লেষণ করব—

  • ১) মার্কিন ডলার কীভাবে “বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা” (world’s reserve currency) হয়ে উঠেছে এবং ব্রিকস দেশগুলো কেন এতে অসন্তুষ্ট,
  • ২) এই সুদৃঢ় ডলারব্যবস্থাকে সত্যিই কি কোনো নতুন ব্রিকস মুদ্রা টলাতে পারবে,
  • ৩) কেন যুক্তরাষ্ট্রই (US) হয়তো ডলারের জন্য বড় হুমকি, তার কারণসমূহ।

ব্রিকস (BRICS) কী এবং এর জোট সম্প্রসারণ

“ব্রিকস” (BRICS) হলো ব্রাজিল (Brazil), রাশিয়া (Russia), ভারত (India), চীন (China) ও দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa)-এর আদ্যক্ষর নিয়ে গঠিত একটি পরিচিতি। ২০০১ সালে গোল্ডম্যান স্যাকসের (Goldman Sachs) এক বিশ্লেষক প্রথম এই শব্দটি চালু করেন—তবে তখন এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল না।

  • জোটের উৎস: ২০০৬ সালে ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (UN General Assembly) ফাঁকে এক ব্রিকস মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করেন। ২০০৯ সালে রাশিয়া প্রথম ব্রিকস সম্মেলন (BRICS summit) আয়োজন করে, যা এরপর থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
  • দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) যোগদান: ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এই জোটে যুক্ত হয়।
  • নতুন সদস্য: ২০২৩ সালে আরও চারটি দেশ—মিসর (Egypt), ইথিওপিয়া (Ethiopia), ইরান (Iran), সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE)—ব্রিকস পরিবারে যোগ দিয়েছে।

বর্তমানে এই জোটকে “বৃহত্তর ব্রিকস” বলা যায়, তবে সাধারণত সেই নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করেও অনেকে “ব্রিকস” নামটি ব্যবহার করে। এরা সম্মিলিতভাবে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৪৫% এবং ক্রয়ক্ষমতা ভিত্তিতে (purchasing power) প্রায় ৩৫% মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) উপস্থাপন করে। অনেকে ব্রিকসকে “non-Western counterpoint to the G7″ বলে অভিহিত করেন; যদিও বাস্তবে এরা এখনো মূলত আলোচনা প্ল্যাটফর্ম ছাড়া আর কিছু নয়।

কিন্তু বারবার দেখা গেছে, ব্রিকস সম্মেলনগুলোর অন্যতম সাধারণ আলোচ্য বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রের ডলার আধিপত্য (dominance of the dollar) সম্পর্কে অসন্তোষ। এটি আবার কোনো নতুন চিন্তা নয়; তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা (US sanctions) বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারব্যবস্থার ওপর চাপ ও বিরোধ আরো প্রকাশ্যে এসেছে।

ডলারের রিজার্ভ কারেন্সি (Reserve Currency) মর্যাদা ও এর প্রভাব

মার্কিন ডলারকে বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা বলা হয়, কারণ সবচেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক (central banks) ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান (financial institutions) তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে (foreign exchange reserves) ডলার সংরক্ষণ করে। এর মূল কারণ—ডলারকে অপেক্ষাকৃত “নিরাপদ” (safe) ও “নির্ভরযোগ্য” (reliable) মনে করা হয়, আর যুক্তরাষ্ট্র হলো বিশাল ও উন্মুক্ত অর্থনীতির (massive open economy) অধিকারী।

ডলারের এই অবস্থানের কয়েকটি কার্যকরী প্রভাব:

  1. ডলার তুলনামূলক বেশি মূল্যমান ধরে রাখে—যদি শুধু বাণিজ্য প্রবণতার (trade patterns) ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারিত হতো, ডলারের মান এত উঁচুতে থাকতো না। এর মানে, আমেরিকা তুলনামূলকভাবে বেশি আমদানি (import) করতে পারে, যদিও এটি মার্কিন উৎপাদন খাতের (manufacturing) জন্য নেতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। (উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে অতীতে ডলারের মূল্য কমাতে চাওয়ার কথা বলেছেন, যাতে আমেরিকান রপ্তানি প্রতিযোগিতামূলক হয়।)
  2. ডলারে উঁচু চাহিদা (demand) থাকার ফলে আমেরিকা বেশি ঋণ (debt) নিতে পারে, কারণ বিশ্বজুড়ে সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার ও ডলারে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড (US treasuries) কিনতে আগ্রহী। ফলে মার্কিন সরকার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সহজে ও কম খরচে ঋণ পায়।
  3. বৈশ্বিক বাণিজ্যের বড় অংশ ডলারে নির্ভরশীল, বিশেষ করে পণ্য বা কৃষি-পণ্য (commodities) বাণিজ্য। এমনকি যেখানে কোনো পক্ষই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র নয়, সেখানেও অনেক সময় পরিশোধ ডলারে হয়, যা মার্কিনিদের বিনিময় হারজনিত (exchange rate) ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখে।
  4. মার্কিন নিষেধাজ্ঞার (US sanctions) ক্ষমতা অত্যন্ত উচ্চ, কারণ বিশ্বের ব্যাংকিং ও লেনদেন ব্যবস্থায় ডলারের প্রভাব গুরুতর। যে দেশ বা সংস্থা ডলারের ব্যবস্থার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তারা কার্যত গ্লোবাল ফাইনান্সের বিশাল অংশ থেকে বাদ পড়ে।

মার্কিন প্রতিপক্ষ ও এমনকি কোনো কোনো মিত্রদেশ বহুদিন ধরেই ডলারের এই আধিপত্যকে নানাভাবে সমালোচনা করে আসছে। ১৯৬০-এর দশক থেকেই “ডলারের ওপর বিরক্তি” (dollar resentment) রয়েছে, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকা যেভাবে তীব্রহারে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করছে, তাতে এই অনুযোগ আরও জোরদার হয়েছে। তারই ফলস্বরূপ, “ব্রিকস বিকল্প মুদ্রা” নিয়ে চর্চা বা গুঞ্জন বেড়েছে, যা এখন ট্রাম্পের দৃষ্টিগোচরে এসেছে, আর তিনি “১০০% শুল্কের” হুমকি দিয়েছেন।

ব্রিকসের বাস্তবতা: নতুন মুদ্রা কি সত্যি সম্ভব?

প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্পের উদ্বেগ কি যৌক্তিক? ব্রিকস কি সত্যিই ডলারের স্থলাভিষিক্ত হতে পারবে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর: সম্ভবত না। ইতিহাস বলে, একটি সুপ্রতিষ্ঠিত রিজার্ভ মুদ্রাকে অপসারণ করা কঠিন। কারণ “নেটওয়ার্ক এফেক্ট” (network effects) অত্যন্ত শক্তিশালী—আমরা ডলারে লেনদেন করি, কারণ সবাই ডলারে লেনদেন করে। সবাই ডলারে মূল্য পেতে রাজি, কারণ ভবিষ্যতে সেই ডলার অন্য কোথাও বিক্রি বা ব্যবহার করা যাবে।

  • ডলারের বিলুপ্তির কথা: ১৯৭০-এর দশক থেকেই ডলারবিনাশী ভবিষ্যদ্বাণী চলে আসছে, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট নিকসন (Richard Nixon) স্বর্ণের মান (gold standard) থেকে ডলারের যোগসূত্র ছিন্ন করার পর থেকেই। কিন্তু এখনো ডলার শক্তিশালী অবস্থানে আছে। গত দু’দশকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের শেয়ার সামান্য কমলেও, আন্তর্জাতিক লেনদেনে তা এখনো প্রধান মুদ্রা।
  • ইতিহাসে একবার বড় রদবদল: একমাত্র বড় পালাবদল ঘটেছিল ২০শ শতকের গোড়ার দিকে, যখন গ্রেট ব্রিটেনের পাউন্ডকে (British pound) আস্তে আস্তে সরিয়ে ডলার বিশ্বের শীর্ষ অবস্থান দখল করে। এটি ঘটাতে বিশ্বযুদ্ধ (World Wars) সহ নানা বিশাল ভূ-রাজনৈতিক কারণ ছিল, আর যুদ্ধে ব্রিটেনের ঋণদাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ব্রিকসের চ্যালেঞ্জ

ব্রিকসের পক্ষে রিজার্ভ মুদ্রা তৈরির চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। বিক্ষিপ্ত উদাহরণ:

  1. চীনের ভূমিকা ও ইউয়ান (Yuan):
    • চীনা অর্থনীতিই ব্রিকসের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী। সুতরাং যদি কোনো ব্রিকস মুদ্রা তৈরি হয়, তাতে চীনের ইউয়ানের ভূমিকা বিশাল হবে।
    • কিন্তু চীন তার মুদ্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে (পুঁজি প্রবাহে কড়া নিয়ন্ত্রণ), বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সবসময় নিশ্চয়তা নেই যে তারা যখন-তখন টাকা বের করে আনবে না। ফলে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানের গ্রহণযোগ্যতা সীমিত।
    • উপরন্তু, চীন হয়তো নিজেও চায় না যে ইউয়ান “বিশ্বের প্রধান মুদ্রা” হয়ে যাক; কারণ তখন ইউয়ানকে এমনভাবে স্থিতিশীল রাখতে হবে, যাতে চীনের পক্ষে ইচ্ছামতো মূল্য কমিয়ে রপ্তানি সুবিধা নেওয়া সম্ভব না হয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র রিজার্ভ মুদ্রার মর্যাদা হারালে আমদানি কমাতে শুরু করবে, যা চীনের রপ্তানিকেও আঘাত হানতে পারে—এটা চীন পছন্দ করবে না।
  2. যুক্ত মুদ্রা (Joint currency) আলোচনা:
    মাঝে মাঝে শোনা যায়, ব্রিকস দেশগুলো কোনো “যৌথ মুদ্রা” (joint currency) আনতে পারে, হয়তো স্বর্ণ (gold) বা নানাবিধ মুদ্রার ঝুড়ির (basket of currencies) ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ঐক্যমত বা ফলাফল আসেনি।
  3. আন্তঃব্যাংক লেনদেন ব্যবস্থা (Interbank system):
    সাম্প্রতিক ব্রিকস সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন তার নতুন “BRICS Bridge” নামের আন্তঃব্যাংক মেসেজিং সিস্টেম প্রস্তাব করেন, যাতে সুইফ্ট (SWIFT) -এর বিকল্প তৈরি হয় ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিন্তু অন্য ব্রিকস দেশগুলো তেমন সাড়া দেয়নি। কারণ—

    • সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস (Bank for International Settlements) ইতোমধ্যে “Enbridge” নামে একটি আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থা চালু করেছে, যা হয়তো একই কাজ করতে পারে।
    • অন্য দেশগুলো এই ভয়ে আছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা করে “বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থা” তৈরি করলে আমেরিকা তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা (sanctions) দিতে পারে।
  4. বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য:
    ব্রিকস গোষ্ঠী আদর্শিকভাবে খুবই বিচিত্র—রাশিয়া-চীনের লক্ষ্য আলাদা, আবার ভারত ও অন্যদের লক্ষ্য ভিন্ন। যেমন, ভারত (India) মার্কিন ডলার থেকে সরতে খুবই অনিচ্ছুক; তাদের অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার মতো দেশের মতো ভারত ডলার পরিত্যাগে মরিয়া নয়। ফলে রাশিয়ার কিছু “অতি-উদ্ভট পরিকল্পনা” (harebrained schemes) ভারত সহজে মেনে নেবে না, বিশেষ করে যদি তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ডেকে আনে।

ডলারের সবচেয়ে বড় হুমকি: যুক্তরাষ্ট্র নিজেই?

যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বৈশ্বিক পরিসরে ডলারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বা হুমকি আসতে পারে ব্রিকসের মতো কোনো জোট থেকে, বাস্তবে মার্কিন স্ববিরোধী নীতিগুলো ডলারের অবস্থানকে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। উদাহরণ:

  1. যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য একঘেয়েমি ও শুল্কনীতি: ট্রাম্পের আমলের মতো উচ্চ শুল্ক বা সবার সাথে বাণিজ্য-সংঘাত (trade war) চালালে মার্কিন অর্থনীতি আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন (isolated) হয়ে পড়তে পারে। গ্লোবাল চেইন থেকে দূরে সরে গেলে ডলারের মাধ্যমিক ব্যবহারও কমতে পারে।
  2. নিষেধাজ্ঞার (sanctions) অতিরিক্ত ব্যবহার: অতিরিক্ত একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে অন্য দেশগুলোও বিকল্প ব্যাংকিং-পথ বা নতুন মুদ্রা ব্যবস্থার খোঁজ চালাবে। এটি ধীরে ধীরে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে পারে।
  3. ফেডের রাজনীতিকরণ (Politicizing the Federal Reserve): মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Fed) স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হলে বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়লে বিনিয়োগকারীরা ডলারে আস্থা হারাতে পারে। রিজার্ভ মুদ্রায় স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  4. অতিরিক্ত ফেডারেল ঋণ (unsustainable federal debt): আমেরিকা যদি লাগামছাড়া ধার-দেনার দিকে এগোয়, তাহলে এক সময় বিনিয়োগকারীরা U.S. Treasuries বা ডলার-অধ্যুষিত সম্পদে আস্থা হারাতে শুরু করতে পারে।
  5. ‘ডলার ব্যবহার করো না হলে শুল্ক দেব’ মার্কা ব্ল্যাকমেইল টুইট: ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ১০০% শুল্কের হুমকি দেওয়া টুইট আসলে ডলার ব্যবস্থায় আস্থাকে ক্ষয় করতে পারে। কারণ, সমগ্র বিশ্ব দেখছে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আধিপত্য রক্ষায় সরাসরি “চাপে” রাখতে চাইছে—এতে অনেকেই বিকল্প খোঁজার চিন্তা করবে।

উপসংহার

ব্রিকসের যৌথ মুদ্রা বা “ইউয়ান-কেন্দ্রিক” (yuan-centered) কোনো ব্যবস্থা ডলারের বিকল্প হয়ে উঠবে কিনা সেই ব্যাপারে নিরন্তর আলোচনা চলছে। ইতিহাস ও বাস্তবতা বলে, ডলারের মতো সুপ্রতিষ্ঠিত রিজার্ভ মুদ্রাকে হঠাৎ ঠেলে সরানো অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে ব্রিকসের মতো ভিন্ন স্বার্থ ও আদর্শিক দূরত্ব থাকা দেশগুলো একমত হয়ে নতুন মুদ্রা প্রচলন করাটা আরো দুরূহ।

তার ওপর চীনের নিজস্ব স্বার্থ ও মুদ্রানীতির সীমাবদ্ধতা, ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান, অন্যান্য ব্রিকস দেশের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ভয়—এ সবকিছু মিলে ব্রিকসের মধ্যেই “ডলারবিমুখতা” নিয়ে ঐক্য প্রায় অসম্ভব। যদিও রাশিয়া নতুন আন্তঃব্যাংক মেসেজিং সিস্টেম ও বিকল্প কাঠামো গড়ার চেষ্টা করছে, অন্যরা বাড়তি ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক।

অবশ্যই ডলারকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করা সম্ভব—কিন্তু তার বড় কারণ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরই নীতি—নিষেধাজ্ঞার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, উচ্চ শুল্ক ও বানিজ্য বিরোধ, ফেডের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণকরণ, লাগামছাড়া সরকারি ঋণ, এবং বিশ্বকে ব্ল্যাকমেইল করার মতো কূটনৈতিক আক্রমণাত্মক অবস্থান। এসবের সমাহারে যদি বিশ্ব ডলারের ওপর আস্থা হারায়, তবে তা ধীরে ধীরে বিকল্পের পথ তৈরি করতে পারে।

কিন্তু আজ-কালকের মধ্যে কেবল “ব্রিকস মুদ্রা” গড়ে উঠে ডলারকে অচল করে দেবে—এমন দৃশ্যপট আপাতত অবাস্তব বলেই অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের মত। এই অবস্থায় ট্রাম্পের ১০০% শুল্কের হুমকি কিংবা ব্রিকস নেতাদের মাঝেমধ্যে “নতুন মুদ্রার” কথা বলা—সবই সম্ভবত বড় পরিসরের বাস্তবতার তুলনায় তুলনামূলক ছোট ঢেউয়ে রয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে আসলেই যদি ডলারের পতন ঘটে, তা হবে আরও গভীর কাঠামোগত ও বৈশ্বিক পরির্তনের ফল, যা এক-আধ বছরের মধ্যে আসবে না বলেই বিশ্লেষকেরা বিশ্বাস করেন।

তথ্যসূত্র

1 – https://x.com/realDonaldTrump/status/1863009545858998512
2 – House of Commons Briefing Report on BRICS (and their expansion): https://commonslibrary.parliament.uk/research-briefings/cbp-10136/#:~:text=Four%20further%20countries%20joined%20the,as%20the%20’BRICS%2B
3 – Washington Post piece on America’s escalating sanctions habit: https://www.washingtonpost.com/business/interactive/2024/us-sanction-countries-work/
4 – https://www.economist.com/special-report/2024/10/14/chinas-yuan-is-nowhere-close-to-displacing-the-greenback

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.