কেন ট্রাম্প ডলারের মূল্য কমাতে চান?

ভূমিকা

নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) জয়ী হওয়ার পরপরই ডলারের (dollar) মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক (tariffs) আর কর-ছাড় (tax cuts) বিষয়ক নীতিমালা ডলারের মূল্য আরও বাড়াবে। প্রাথমিকভাবে এটা শুনতে ভালো খবর মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স (J.D. Vance) প্রচারণার সময় জোর দিয়েছেন একটি “দুর্বল ডলার” (weak dollar)-এর ওপর। তাদের আশা, ডলারের অবমূল্যায়ন (devaluation) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনমুখী শিল্পখাত বা ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরকে (manufacturing base) পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করবে।

এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করব কেন ট্রাম্প ডলারের মূল্য কমাতে চান এবং কীভাবে তিনি বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি (reserve currency) ডলারের মান নামানোর চেষ্টা করতে পারেন।

ট্রাম্প কী বলেছেন?

ট্রাম্প ডলারকে দুর্বল করতে চাইছেন তা নতুন কোনো ধারণা নয়। তবে সর্বশেষ প্রকাশ্যভাবে তিনি এই বিষয়ে কথা বলেন ২০২৪ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে, ব্লুমবার্গকে (Bloomberg) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ডলারের শক্তিশালী অবস্থান, বিশেষ করে জাপানি ইয়েন (yen) ও চীনা ইউয়ানের (yuan) বিপরীতে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় সমস্যা তৈরি করছে।

আসলে ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদের সময় থেকেই ডলারের “মূল্য বেশি” (overvalued) হওয়া নিয়ে অভিযোগ করে এসেছেন। তখনও তিনি ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve) বা “ফেড”কে সুদের হার (interest rates) কমাতে চাপ দিয়েছিলেন, যাতে ডলারের মান নামানো যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্সও (J.D. Vance) একই যুক্তি তুলে ধরেন। ২০২৩ সালে ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েলকে (Jerome Powell) জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি বলেন, “ডলারের মূল্য মৌলিকভাবেই বেশি” (fundamentally overvalued)। একই বছরের এপ্রিলে পলিটিকোকে (Politico) দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “ডেভালুয়েশন (devaluing) ভয়ের শব্দ মনে হতে পারে, কিন্তু এটার মানে হলো—মার্কিন রপ্তানি (exports) সাশ্রয়ী বা প্রতিযোগিতামূলক হবে।”

ডলার “বেশি মূল্যায়িত” (Overvalued) কেন?

অনেক অর্থনীতিবিদ ডলারের উচ্চ মূল্যের বিষয়ে একমত। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) আনুমান করে, ডলার প্রায় ১০% বেশি মূল্যে অবস্থান করছে। গত দুই দশকে তথাকথিত “ব্রড ডলার ইনডেক্স” (Broad Dollar Index) ২৫% বেড়েছে, অথচ এই সময়ে আমেরিকা বড় বাণিজ্য ঘাটতি (trade deficits) সামলাচ্ছে—সাধারণভাবে ভাবলে বেশি আমদানি (import) ও কম রপ্তানির (export) কারণে মুদ্রার মূল্য দুর্বল হওয়ার কথা।

ডলার এত শক্তিশালী থাকার বড় কারণ হলো এর বিশ্ব রিজার্ভ কারেন্সি (world’s reserve currency) হিসেবে মর্যাদা। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরা “নিরাপদ সম্পদ” (safe asset) হিসেবে ডলার সংরক্ষণ করে, যার ফলে ডলারের চাহিদা (demand) আরও বাড়ে এবং স্বাভাবিকভাবেই মূল্যও বেশি থাকে।

তাহলে ট্রাম্প কেন ডলারের মান কমাতে চাইছেন?

প্রথম দৃষ্টিতে ডলারের উচ্চমূল্য দেখে মনে হতে পারে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিধাজনক—কারণ এতে আমদানি সস্তা হয় এবং বিশ্ববাজারে আর্থিক ক্ষমতাও বেড়ে যায়। রাশিয়া (Russia) ও চীনা (China) নেতারা বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন যে যুক্তরাষ্ট্র “ডলারের সুবিধা” নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করছে। ডলারের উচ্চমূল্যের সুবাদে আমেরিকা ইউনিল্যাটারাল ফিনানশিয়াল স্যাংকশন আরোপ করতে পারে, যা অন্য দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। (ইউনিল্যাটারাল ফিনানশিয়াল স্যাংকশন (Unilateral Financial Sanction) বলতে একটি দেশের দ্বারা অন্য কোনো দেশ, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞাকে বোঝায়, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মতি ছাড়াই এককভাবে প্রণয়ন করা হয়। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত করা হয়, যেমন তাদের আর্থিক লেনদেন, সম্পদ হস্তান্তর বা আন্তর্জাতিক বাজারে অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা সাধারণত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা নিরাপত্তাজনিত কারণে আরোপিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ।)

তবু, ডলারের এই “অতিরিক্ত শক্তি” (overvalued) মার্কিন শিল্পখাতের (manufacturing) জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, ডলার যত শক্তিশালী, বিদেশে মার্কিন পণ্য (exports) তত ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে; পাশাপাশি আমদানি পণ্যগুলো সস্তা হওয়ায় দেশের বাজারে স্থানীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা শক্তি কমে যায়। ট্রাম্প ও ভ্যান্স যুক্তি দেন, আমেরিকার ডলার দুর্বল হলে রপ্তানি বাড়বে, শিল্পখাতের বিকাশ হবে। এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, অনেক উৎপাদক (manufacturer) অভিযোগ করেন যে তাদের পণ্য খুবই ব্যয়বহুল দেখাচ্ছে, কারণ ডলারের মান অনেক বেশি। ভ্যান্স একে “মার্কিন উৎপাদনের ওপর শুল্কের মতো (massive tax on American producers)” বলে অভিহিত করেছেন।

অনেকেই মনে করেন, চীনের অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে তাদের মুদ্রার ইচ্ছাকৃত অবমূল্যায়নের (deliberately devaluing) বড় ভূমিকা ছিল। এতে চীনা পণ্য বিশ্ববাজারে সস্তা থেকে প্রতিযোগিতায় টিকে গিয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকার ডলারের উচ্চমূল্য দেশের শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাছাড়া গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র নানা আর্থিক নিষেধাজ্ঞা (financial sanctions) ব্যবহার করায় অন্য দেশগুলোও ডলারের রিজার্ভ স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

ট্রাম্পের অন্যান্য অর্থনৈতিক পদক্ষেপ কি ডলার দুর্বল করবে, নাকি শক্তিশালী করবে?

এখানে একটু গোলমাল আছে। কারণ, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত অন্যান্য অর্থনৈতিক নীতি (যেমন উচ্চ শুল্ক, বৃহৎ কর ছাড়) বাস্তবায়িত হলে ডলার বরং আরও শক্তিশালী হতে পারে।

  • উচ্চ শুল্ক (tariffs): বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, উচ্চ শুল্ক প্রয়োগ করলে পণ্যের দাম বেড়ে (মূল্যস্ফীতি বা inflation বাড়ায়) ফেড সুদের হার (interest rate) বাড়ানোর দিকে যেতে পারে। আর সুদের হার বাড়লে মুদ্রার মূল্য সাধারণত শক্তিশালী হয়, কারণ সেই মুদ্রায় সঞ্চয় (savings) রাখা বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। (বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের জন্য মুদ্রার চাহিদা বাড়লে, সেই মুদ্রার বিনিময় হার শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ, অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় সেই মুদ্রার মান বৃদ্ধি পায়।) তাছাড়া যেসব দেশ শুল্কের স্বীকার হবে, যেমন চীন, তারা প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিজ মুদ্রার মান কমাতে পারে, যার ফলে তুলনামূলকভাবে ডলার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। (যখন একটি দেশ, যেমন চীন, তাদের পণ্যের ওপর বিদেশি শুল্কের সম্মুখীন হয়, তখন তাদের রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতাদের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে, চীন তাদের মুদ্রার মান কমিয়ে (মুদ্রার অবমূল্যায়ন) রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামূলকতা বজায় রাখতে পারে।)
  • কর ছাড় (tax cuts): কর ছাড়ে মানুষের হাতে বিনিয়োগ/ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। একই যুক্তিতে ফেড সুদের হার বাড়ালে ডলারের মান আরও উঁচুতে উঠতে পারে।

ট্রাম্প ইতোমধ্যে বিশ্ব রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের অবস্থান রক্ষা করার ঘোষণাও দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, যদি কোনো দেশ ডলারের বাইরে চলে যেতে চায়, তিনি ১০০% শুল্ক আরোপ করবেন। এ ছাড়া নিউ ইয়র্কের ইকোনমিক ক্লাবে (Economic Club of New York) দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, “বিশ্ব মুদ্রার (world currency) মর্যাদা হারানো যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সমতুল্য।” এর মানে, ডলারের রিজার্ভ স্ট্যাটাস ধরে রাখতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু সেটি বজায় রেখে ডলারকে দুর্বল করা পরস্পরবিরোধী বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

ডলারের মান কীভাবে কমানো যায়?

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডের (Federal Reserve) কাছে একচেটিয়া অধিকার রয়েছে ডলারের জোগান (supply) নিয়ন্ত্রণ করার। ফেড সরকারি হুকুমে ডলারের জোগান বাড়িয়ে বাজারে বিক্রি করে ডলারের মান নামাতে পারে, অথবা সুদের হার কমাতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ফেড স্বশাসিত (operationally independent)—মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি তাদের কী করতে হবে তা বলতে পারেন না। তবে তাত্ত্বিকভাবে কয়েকটি পথ খোলা থাকে:

ফেডকে চাপে রাখা: ট্রাম্প চাইলেই ফেডকে রাজনৈতিক চাপ দিতে পারেন, যেন তারা সুদের হার কাটে বা সরাসরি মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপ করে (currency intervention)। তবে ফেডের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হলে বাজারে বড় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে।

সরকারি হস্তক্ষেপ (Treasury intervention): যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজেই বিপুল পরিমাণ ডলার ছাপিয়ে (অথবা ধার করে) অন্য মুদ্রা কিনতে পারে, ফলস্বরূপ ডলারের মান কমবে। কিন্তু এজন্য সত্যিই “ট্রিলিয়ন ডলার” পরিমাণ ব্যয় প্রয়োজন হতে পারে, যা নতুন করে সরকারি ঋণ (borrowing) বাড়াবে।

পুঁজি নিয়ন্ত্রণ (Capital Controls) বা ডলারের ওপর ট্যাক্স: সরকার চাইলে বিদেশিদের হাতে কত ডলারভিত্তিক সম্পদ থাকবে, সেটায় সীমা (capital controls) আরোপ করতে পারে, অথবা ডলারভিত্তিক সম্পদের ওপর একটি কর (tax) বসাতে পারে। এতে ডলারের চাহিদা কমে তার মূল্যও নামবে। কিন্তু এর ফলে ডলারের রিজার্ভ স্ট্যাটাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থাও তার “উন্মুক্ত” (open financial system) বৈশিষ্ট্য হারাবে।

“প্লাজা অ্যাকর্ড”-সদৃশ সমঝোতা (Multilateral Currency Agreement): সবচেয়ে বাস্তবসম্মত হতে পারে ১৯৮৫ সালের প্লাজা অ্যাকর্ড (Plaza Accord)-এর মতো আন্তর্জাতিক সমঝোতায় পৌঁছানো। তখন ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডলারের মান নামাবে। জাপান ও জার্মানি ঘরোয়া চাহিদা বাড়াতে কর ছাড় (tax cuts) দেয়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারি ব্যয় কেটে চাহিদা কমায়। পাশাপাশি সবাই মিলে মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপ করে ডলারের মান কমিয়েছিল। নিঃসন্দেহে প্লাজা অ্যাকর্ড কার্যকর হয়েছিল, কিন্তু এখনকার সময়ে তা নতুনভাবে কার্যকর করা কঠিন। কারণ, মুদ্রাবাজার এখন অনেক বড় ও ছড়িয়ে পড়া; যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার চীন, যা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মতো সহজে আলোচনা টেবিলে বসে যাবে কি না, তা সন্দেহজনক।

উপসংহার

সারসংক্ষেপে, ট্রাম্প ডলারের মান কমাতে চাইছেন মূলতঃ মার্কিন রপ্তানিকে প্রতিযোগিতামূলক করে দেশটির উৎপাদনশীল খাতকে চাঙা করতে। কিন্তু অন্যদিকে তিনি এমন সব নীতি নিচ্ছেন বা নেওয়ার কথা বলছেন—যেমন উচ্চ শুল্ক, বড় করছাড়, ডলারের রিজার্ভ স্ট্যাটাস রক্ষা—যেগুলো ডলারকে আরও শক্তিশালী করতেও পারে। তাছাড়া ফেডের স্বাধীনতা, আন্তর্জাতিক আর্থিক সম্পর্ক, বহুপাক্ষিক সমঝোতা—এসব মিলিয়ে ডলার দুর্বল করা সহজ হবে না।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে আমেরিকার শিল্পক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, একে ইচ্ছেমতো নামানো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ জটিল। হয়তো কোনও বিন্দুতে ট্রাম্প প্রশাসন “প্লাজা অ্যাকর্ড” ধাঁচের আরেকটি চুক্তি করে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে ঘাট দেবার চেষ্টা করতে পারে, তবে সেটি আদৌ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

তথ্যসূত্র

1 – https://www.bloomberg.com/features/2024-trump-interview-transcript/?sref=dvYXhtRg
2 – https://www.brookings.edu/articles/unintended-consequences-trump-and-warrens-bipartisan-plan-for-the-us-dollar/
3 – https://fred.stlouisfed.org/series/DTWEXBGS
4 – https://www.vance.senate.gov/press-releases/icymi-senator-vance-questions-chairman-powell-on-the-u-s-dollars-reserve-currency-status/
5 – https://www.ft.com/content/ac708b43-64ae-45b8-b60d-997e7904086a
6 – https://www.ft.com/content/a4d645d0-78cc-4453-8802-1e05d4f91f5e
7 – https://carnegieendowment.org/research/2024/10/trade-intervention-for-freer-trade?lang=en
8 – https://www.investopedia.com/terms/p/plaza-accord.asp

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.