Table of Contents
ভূমিকা
ইউটিউবের সাফল্য এর প্রত্যেক ক্রিয়েটর (creator) ও শিল্পীর (artist) মতোই বৈচিত্র্যময়। এটা হতে পারে আত্মপ্রকাশের (self expression) জন্য, সম্প্রদায় গঠন ও খুঁজে পাবার (finding community) উদ্দেশ্যে, বা আর্থিক স্বাধীনতা (financial freedom) অর্জনের জন্য। ইউটিউব চাচ্ছে টেকসই সুযোগ নিয়ে আসতে, যাতে সবাই নিজের গতিপথ গড়ে নিতে পারে।
এবারে ইউটিউব সেই পথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) রূপান্তরমূলক শক্তিকে যুক্ত করছে। তারা মনে করে এটা তাদের দায়বদ্ধতারই অংশ, এআই (AI) সৃজনশীলতার নতুন মাত্রা উন্মোচন করবে, আর তার শক্তি যেন ব্যবহারকারীদের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির (creative vision) জন্য কাজে লাগানো যায়।
১. ড্রিম স্ক্রিন (Dream Screen) আরও স্বপ্নময় হবে গুগল ডিপমাইন্ডের ভিও (Veo) দিয়ে
২০২৩ সালে ইউটিউব দেখিয়েছিল কীভাবে ড্রিম স্ক্রিন (Dream Screen) ইউটিউব শর্টসে (YouTube Shorts) কাল্পনিক সব ব্যাকগ্রাউন্ড (backgrounds) তৈরি করতে দেয়—এই পটভূমি কেবল আপনার কল্পনার সীমায় আবদ্ধ। ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষ এটি ব্যবহার করছেন, কিন্তু এটা ভবিষ্যতের অফুরন্ত সম্ভাবনার অগ্রভাগ মাত্র। এটা স্রেফ আপনার সৃজনশীলতাকে (creativity) ক্ষমতায়ন (empowering) করতে, প্রতিস্থাপন (replacing) করতে নয়।
তারা এবারে ইউটিউব শর্টসে গুগল ডিপমাইন্ডের (Google DeepMind) সর্বাধুনিক ভিডিও-জেনারেটিং মডেল, ভিও (Veo) সংযুক্ত করতে যাচ্ছে।
- আপনি আরও অবিশ্বাস্য ভিডিও ব্যাকগ্রাউন্ড বানাতে পারবেন, এমন ধারণাগুলো বাস্তব করতে যা আগে অসাধ্য ছিল। কল্পনা করুন, একজন বুকটিউবার (BookTuber) ক্লাসিক উপন্যাস The Secret Garden-এর পৃষ্ঠায় ঢুকে যাচ্ছেন, অথবা একজন ফ্যাশন ডিজাইনার (fashion designer) মুহূর্তেই মজার ও উদ্ভাবনী ডিজাইনের ধারণা শেয়ার করছেন।
- প্রথমবারের মতো, শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড নয়, আপনি ৬ সেকেন্ডের স্বতন্ত্র ভিডিও ক্লিপও (standalone video clips) তৈরি করতে পারবেন শর্টসের (Shorts) জন্য, ভিও (Veo)-র সাহায্যে। ধরুন, আপনি নিজের ধারণকৃত ফুটেজের (footage) মধ্যে একটা অংশে কিছু অভাব অনুভব করছেন, যেটা পুরো ভিডিওর সুরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়—এই ফিচার দিয়ে আপনি সহজেই একটি ক্লিপ তৈরি করতে পারবেন, যা আপনার পুরো কনটেন্টের (content) সঙ্গে মিশে যাবে।
- এই সৃষ্টিগুলোতে সিংথআইডি (SynthID) ব্যবহার করে ওয়াটারমার্ক (watermark) যোগ করা হবে, সঙ্গে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে যে এটি “AI দ্বারা তৈরি” (generated with AI)।
২. ইউটিউব ইনস্পিরেশন ট্যাব (YouTube Inspiration Tab)
নতুন আর আকর্ষণীয় ভাবনা পাওয়া কঠিন হতে পারে। তাই তারা এবার ইনস্পিরেশন ট্যাবকে (Inspiration Tab) এক নতুন রূপে সাজাচ্ছে – একটি জেনারেটিভ এআই (generative AI)-চালিত ব্রেইনস্টর্মিং (brainstorming) সাথী হিসেবে। এটি আপনাকে গাইডলাইন বা পরামর্শ দেবে, সেখান থেকে আপনি পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প (fully-fledged projects) বানাতে পারবেন—ভিডিও আইডিয়া (video ideas), শিরোনাম (titles), থাম্বনেল (thumbnails) আর আউটলাইন (outlines)—যা আপনার স্টাইলের সঙ্গে মানানসই।
২০২৫ সালে তারা এমন একটি শর্টকাট (shortcut) আনতে যাচ্ছে, যা আপনাকে যেকোনো উৎস থেকে (যেমন, আপনার শীর্ষ মন্তব্য, অন্য ভিডিও, এমনকি নিজের ভিডিয়ো তালিকা) সরাসরি এই ইনস্পিরেশন ট্যাবে নিয়ে যাবে।
৩. আরও গভীর সংযোগ গড়ে তোলা (Building deeper connections)
ইউটিউবে আপনার সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ ভক্তদের (loyal fans) সঙ্গে এক বিশেষ বন্ধন গড়ে ওঠে—যারা কখনোই আপনার আপডেট মিস করে না। তাদের সঙ্গে সংযোগ আরও গাঢ় করার জন্য কিছু নতুন সুযোগ:
- কমিউনিটিজ (Communities): মন্তব্যের (comments) বাইরে এসে ক্রিয়েটরের চ্যানেলগুলোতে (creator’s channels) নিজস্ব এক “ইন্টারনেট কোণ” তৈরি করা হচ্ছে। এটি হবে এক কেন্দ্রস্থল, যেখানে ভিডিও নিয়ে আলোচনা, ফ্যান আর্ট (fan art) শেয়ার, একই মনোভাবাপন্ন মানুষদের (like-minded individuals) সঙ্গে সংযোগ আর একটি প্রাণবন্ত সম্প্রদায় (belonging) গড়ে তুলতে পারবেন। এই ফিচার এখন সীমিত কিছু চ্যানেলে চালু; চলতি বছর আরও বিস্তৃত পরিসরে পরীক্ষা করা হবে, আর ২০২৫ সালের শুরুর দিকে আরও চ্যানেলে বিস্তৃতভাবে চালু হবে।
- হাইপ (Hype): নতুন বা উদীয়মান ক্রিয়েটরদের (rising stars) উচ্চতর পরিচিতি দিতে পাবে “হাইপ” ব্যবস্থা। ফ্যানরা “হাইপিং” করে তাদের পছন্দের ক্রিয়েটরকে নতুন দর্শকের কাছে তুলে ধরতে পারে। সবচেয়ে বেশি হাইপ পয়েন্ট পাওয়া ভিডিওগুলো এক বিশেষ লিডারবোর্ডে (leaderboard) উঠবে, যা তাদের আরো আলোচনায় আসতে সাহায্য করবে। আমরা ইতিমধ্যে ব্রাজিল, তুরস্ক ও তাইওয়ানে পরীক্ষা করেছি, শিগগিরই আরও দেশে প্রসারিত করব।
- অটো ডাবিং (Auto Dubbing): তারা একটি ডাবিং টুল (dubbing tool) পরীক্ষা করছে, যাতে আপনি আপনার ভিডিওয় অন্য ভাষায় অডিও ট্র্যাক তৈরি করতে পারেন। সীমিত সংখ্যক ক্রিয়েটরদের সঙ্গে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, শিগগিরই আরও অনেকের কাছে পৌঁছাবে। এগুলো স্প্যানিশ (Spanish), পর্তুগিজ (Portuguese), ফরাসি (French), ইতালীয় (Italian), হিন্দী (Hindi) ইত্যাদি ভাষা সমর্থন করে, পরে আরও ভাষা যুক্ত হবে। ফলে আরও বেশি মানুষের কাছে আপনার কনটেন্ট (content) পৌঁছানো সহজ হবে। সেই সাথে তারা একটি নতুন ফিচার পাইলট করছে, যা আপনার আসল কণ্ঠস্বরের (tone and intonation) আভা বা পরিবেশ (ambiance) ধরে রাখবে, এবং এর ফলে ডাব করা অডিওকে আরো বেশি প্রাকৃতিক (natural) শোনাবে।
- কমিউনিটি ট্যাব (Community Tab) পুর্নগঠন: ইউটিউব স্টুডিও অ্যাপে (YouTube Studio app) কমেন্টস ট্যাবকে (Comments tab) রূপান্তর করে নাম দেয়া হচ্ছে ‘কমিউনিটি’ (Community)। এখানে আরও গভীর ভক্ত-সম্পৃক্ততা (fan engagement) হবে। মন্তব্যের স্তুপে জবাব দেওয়া কঠিন হয়, তাই তারা এআই (AI)-সমর্থিত রিপ্লাই সাজেশন (reply suggestions) দিতে যাচ্ছে, যা আপনার স্টাইলের সঙ্গে মিল রেখে আপনাকে প্রাথমিক খসড়া দেবে, আর আপনি সহজে কাস্টমাইজ করে ফেলতে পারবেন। পাশাপাশি আরও কিছু সময়-সাশ্রয়ী (time-saving) টুল—যেমন কমিউনিটি স্পটলাইট ও দর্শক ম্যাট্রিকস—শিগগিরই আসছে।
৪. ব্যবসা গড়ার আরও নতুন উপায় (Unlocking more avenues to build a business)
বর্তমানে ইউটিউবই (YouTube) একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যা বড় পরিসরে (at scale) ক্রিয়েটরদের সঙ্গে রাজস্ব ভাগ করে (revenue sharing), একাধিক ফরম্যাটজুড়ে। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YouTube Partner Program) অন্য যেকোনো ম্যানিটাইজেশন প্ল্যাটফর্মের তুলনায় বেশি পরিশোধ করে, গত তিন বছরে তারা $৭০ বিলিয়ন দিয়েছি ক্রিয়েটর (creators), শিল্পী (artists) ও মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে। যেহেতু তাদের ক্রিয়েটর-ইকোসিস্টেম (creator ecosystem) বড় হচ্ছে, তারা চাচ্ছে আরও অনেক ক্রিয়েটর যাতে সুযোগ পায়, তারা যেকোন ফরম্যাটে কাজ করুক, যেকোন সময় কাজ শুরু করুক।
(ক) গিফটস (Gifts), জুয়েলস (Jewels): গিফটস চালু হচ্ছে, যে ডিজিটাল আইটেমগুলোর পেছনে জুয়েলস (Jewels) রয়েছে। এগুলো রিয়েল-টাইম ফ্যান এঙ্গেজমেন্ট (fan engagement) ঘটাবে, আর এক নতুন উপায়ে ক্রিয়েটরেরা অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। প্রথমে এই ফিচার ভার্টিক্যাল লাইভস্ট্রিম (vertical livestreams)-এ শুরু হবে (US-এ), যাতে দর্শকরা মুহূর্তের উত্তেজনা প্রকাশ করতে পারে।
(খ) ইউটিউব শপিং (YouTube Shopping): ইতিমধ্যে ২৫০,০০০+ ক্রিয়েটর ইউটিউব শপিং-এ যুক্ত আছেন! ইউটিউব শপিং অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম (affiliate program) এখন US ও দক্ষিণ কোরিয়ায় (South Korea) সচল, এবং আজ তারা ইন্দোনেশিয়ায় (Indonesia) চালু করছি, সেখানে শপির (Shopee) সঙ্গে অংশীদারিত্বে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে প্রসারিত হবে, যাতে বিশ্বজুড়ে আরও ক্রিয়েটর পছন্দের পণ্য (products) ভক্তদের কাছে তুলে ধরতে পারেন, এবং ব্যবসার (business) বিস্তৃতি ঘটাতে পারেন।
(গ) লিভিং রুমে (Living room) ইউটিউব কনটেন্ট: আজকাল টিভির বড় পর্দায় (TV screens) ইউটিউব দেখা ক্রমশ জনপ্রিয়। অনেক ক্রিয়েটরই এই বড় পর্দার জন্য বিশেষভাবে কনটেন্ট তৈরি করছেন, এবং এতে তাদের আয় (revenue) বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় টিভি পর্দায় আয় করা ক্রিয়েটরের সংখ্যা ৩০% বেড়েছে। তাই ইউটিউব অচিরেই ক্রিয়েটরদের কনটেন্টকে সিজন (seasons) ও এপিসোড (episodes) আকারে বিন্যস্ত করার সুবিধা আনতে যাচ্ছে, যেন দর্শকদের জন্য “ওয়ান-স্টপ” এর মতো হয়ে ওঠে। সঙ্গে আরও কিছু আপডেট আসছে, যেমন ইমারসিভ কনটেন্ট (immersive content) যা সরাসরি ক্রিয়েটরের চ্যানেল থেকে চালু হবে, সাবস্ক্রিপশন সহজতর, ভিডিওর ডিসক্রিপশনে (description) থাকা লিংকে প্রবেশ করা আরও সহজ।
শেষ কথা
ইউটিউব তাদের বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের (global community) জন্য নিরলসভাবে নতুনত্ব আনার পথে আছে। ইউটিউব ইতিমধ্যেই স্ট্রিমিং মার্কেটে সবচেয়ে এগিয়ে। এই খাতে তারা নেটফ্লিক্স ও ডিজনিকে টপকে উপরে উঠে গেছে। ইউটিউব চালু হয়েছিল ২০০৫ সালে—গুগল (Google) তা কিনে নেয় ২০০৬ সালে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে। সে সময় কেউ কল্পনাও করেনি যে এটি একদিন সবচেয়ে শক্তিশালী ভিডিও প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে। যদিও শুরুতে ইউটিউবের মূল পরিচয় ছিল: “যে কেউ ভিডিও আপলোড করতে পারে, আর অন্যরা তা দেখে আনন্দ পেতে পারে”—একটি ব্যবহারকারী-সৃষ্ট কনটেন্টের (user-generated content) প্ল্যাটফর্ম। অনেকেই এটিকে হালকাভাবে নিতেন, ভাবতেন এখানে কেবল বিড়ালের ভিডিও বা বাড়তি বিনোদন মেলে। কিন্তু এখন আর আগের সেই অবস্থা নেই। যুগের পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে মানুষ টেলিভিশন ছেড়ে অনলাইনের স্ট্রিমিং সারভিস যেমন নেটফ্লিক্সে মুভ করেছে, আর তারপর এগুলো দেখার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিওতেই সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো শুরু করেছে। আর ইউটিউব সামনে এটা আরও বাড়াবে। বর্তমান এআই বিপ্লবের সম্ভাব্য সকল সুফলই ব্যবহার করবে ইউটিউব। বিশ্ব যখন এআই এর দ্বারা জব রিপ্লেসমেন্টের আতঙ্কে শঙ্কিত, সেখানে ইউটিউব এআই-কে কাজে লাগাতে চাচ্ছে ক্রিয়েটরদের সৃজনশীলতার বিকাশে, মানুষকে আরও সৃষ্টিশীল করার উদ্দেশ্যে। সময়ই বলে দেবে আগামী এআই আমাদের কোন পথে নিয়ে যায়, আর এখানে যদি কোন ইতিবাচক কিছু থাকে, এটুকু বলতে পারি তাতে ইউটিউবের একটা ভাল ভূমিকা থাকবে।
তথ্যসূত্র
A future full of opportunities, Made On YouTube – YouTube Blog
Leave a Reply