মিলেনিয়াল বনাম জেন জি – পার্থক্য কোথায়?

ভূমিকা

মিলেনিয়ালস (Millennials) বা জেনারেশন ওয়াই (Generation Y) হল সেই প্রজন্ম যারা মূলত ১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে জন্মগ্রহণ করেছেন। এই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে জন্মহার বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদেরকে মাঝে মাঝে ইকো বুমারস (Echo Boomers)-ও বলা হয়।

অন্যদিকে, জেনারেশন জি (Generation Z) বা জেন জি (Gen Z) হল সেই প্রজন্ম যারা ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে ২০০০-এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের আইজেনারেশন (iGeneration) বা পোস্ট-মিলেনিয়ালস (Post-Millennials) নামেও ডাকা হয়।

ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তার ও ডিজিটাল বিপ্লবের অগ্রগতির কারণে দুটি প্রজন্ম পার্শ্ববর্তী হওয়া সত্ত্বেও তাদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে একাধিক পার্থক্য দেখা যায়। উপরন্তু, ভিন্ন সময়ের অভিভাবকদের প্রভাবও তাদের মনোভাব ও আচরণে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। গবেষণালব্ধ তথ্যের আলোকে এই নিবন্ধে থাকছে দশটি দিক, যেখানে মিলেনিয়াল ও জেন জি ভিন্ন।

১. মনোযোগের স্থায়িত্ব (Attention Span)

  • জেন জি খুব দ্রুত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে, এমনকি মিলেনিয়াল-দের থেকেও দ্রুত।
  • জেনারেশন জি অনেক অ্যাপ—যেমন ভাইন (Vine ) এবং স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat)—ব্যবহার করে বেড়ে উঠেছে, যেখানে দ্রুতগতিতে তথ্য আদান-প্রদান হয়। ফলে তাদের মনোযোগের স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে ছোট।
  • এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৪% মিলেনিয়ালস ও তার আগের প্রজন্ম মনে করে যে ১৩ বছর বয়সেই স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করা যায়, বিপরীতে জেনারেশন জি-এর ১৮% সদস্য মনে করে এটি স্বাভাবিক।

২. বহুকাজ সম্পাদনের দক্ষতা (Multi-Tasking)

  • মনোযোগের স্থায়িত্ব কম হলেও, জেন জি-এর শক্তি হলো তারা একই সাথে বহু কাজ করতে পারে।
  • জেনারেশন জি কম্পিউটারে লেখাপড়ার কাজ করার সময় ট্যাবলেটে তথ্য খুঁজে দেখতে পারে, আবার সেই সঙ্গে নোট নেওয়াও চালিয়ে যেতে পারে।
  • এমনকি সন্ধ্যায় তারা টিভিতে সিনেমা চালিয়ে ফোন বা ল্যাপটপে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বন্ধুর সাথে চ্যাটও চালিয়ে যায়।

৩. স্বাধীনতা বনাম সহযোগিতাপূর্ণ প্রবণতা (Independent vs Collaborative)

  • ৭১% জেনারেশন জি বিশ্বাস করে, “If you want it done right, then do it yourself (যদি কাজটি সঠিকভাবে করতে চাও, নিজে করো)”—এই নীতিতে।
  • জেনারেশন জি প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবাপন্ন এবং ব্যক্তিগত বা পেশাগত কাজে ‘Do it yourself (নিজে করো)’ মানসিকতা রাখে।
  • কর্মক্ষেত্রে ৬৯% জেনারেশন জি নিজের আলাদা ওয়র্কস্পেস (workspace) পছন্দ করে, যেখানে মিলেনিয়ালস সহকর্মীদের সাথে একত্রে কাজ করতে বা কোনো সহযোগী পরিবেশে কাজ করতে বেশি স্বচ্ছন্দ।

৪. ডিজিটাল অগ্রজ (The Digital Pioneers)

  • ৪০% জেনারেশন জি মনে করে, নিরবচ্ছিন্ন ওয়াই-ফাই নিরবচ্ছিন্ন বাথরুম সুবিধার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
  • পিউ রিসার্চ অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ১৪% পূর্ণবয়স্কের ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার ছিল, যা ২০১৪ সালে ৮৭%-এ পৌঁছে।
  • মিলেনিয়াল ডিজিটাল যুগের অগ্রজ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং, ইন্টারনেট সার্চিং—এসবের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে।
  • জেনারেশন জি জন্মের পর থেকেই ডিজিটাল পরিবেশে বড় হওয়ায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মিলেনিয়ালদের থেকে একেবারেই ভিন্ন।

৫. সরাসরি মুখোমুখি কথা বলা নাকি ডিজিটাল চ্যাট? (Face to Face or Digital Chat)

  • প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এই দুই প্রজন্মের যোগাযোগের ধরনেও বৈচিত্র্য এনেছে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে ৭৪% জেনারেশন জি মুখোমুখি কথা বলা পছন্দ করে।
  • মিলেনিয়ালস বিভিন্ন ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমের উত্থানের সাক্ষী; তারা প্রযুক্তিগত উপায়ে কাজ করলেও জেনারেশন জি ব্যক্তিগত সংযোগকেও গুরুত্ব দেয়।
  • ফলে ভবিষ্যতে অনলাইন ও অফলাইন যোগাযোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে জেনারেশন জিের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

৬. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি (Optimistic Vision)

  • ২০১৬ সালে লিংকন ফাইন্যানশিয়াল গ্রুপ (Lincoln Financial Group)-এর এক জরিপে দেখা গেছে, জেনারেশন জি মিলেনিয়ালদের তুলনায় অনেক বেশি আশাবাদী।
  • ৫০% জেনারেশন জি বলে, “আমেরিকা সঠিক পথেই এগোচ্ছে,” যেখানে মিলেনিয়ালদের ক্ষেত্রে এ হার ৪২%।
  • আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জেনারেশন জি ১৩ বছর বয়স থেকেই আলোচনা ও গবেষণা শুরু করে, এবং একবার পরিকল্পনা করা শুরু করলে তাদের ৯৫% নিজের সামগ্রিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী থাকে।

৭. সুবিধা-সুবিধা বনাম ব্র্যান্ড (Convenience over brands)

  • অ্যাকসেঞ্চার (Accenture)-এর গবেষণায় উঠে এসেছে, জেনারেশন জি দ্রুত ও প্রযুক্তিনির্ভর কেনাকাটার অভিজ্ঞতা যেমন “ওয়ান-আওয়ার ডেলিভারি” (1-hour delivery), “অ্যাক্টিভেটেড শপিং” (activated shopping), ইন-স্টোর “কিওস্ক” (kiosks) ইত্যাদি পছন্দ করে।
  • ব্র্যান্ড (brand) তাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ; বরং যে খুচরা বিক্রেতা বা রিটেইলার এ ধরনের সুবিধা দিতে পারে, তারা সেই ব্র্যান্ড বেছে নেয়।
  • তারা কেনাকাটাকে সামাজিক অভিজ্ঞতা (social experience) হিসেবে দেখে, বন্ধুবান্ধবের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এবং কোনও কারণে খারাপ অভিজ্ঞতা হলে কঠোর রিভিউ দেয়।
  • পণ্য কেনার আগে তারা মিলেনিয়ালদের দ্বিগুণ হারে ইউটিউব (YouTube) দেখে মতামত সংগ্রহ করে।

৮. শেখার ভিন্নতা (Different ways of learning)

  • স্পার্কস অ্যান্ড হানি (Sparks & Honey)-এর তথ্যানুযায়ী, জেনারেশন জি-এর ৭৫% মনে করে, কলেজে না গিয়েও ভালো শিক্ষার বিকল্প আছে।
  • মিলেনিয়ালদের মধ্যে অনেকেই এখন বড় অঙ্কের শিক্ষাঋণ (student debt) মাথায় নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে ৪৪% নতুন স্নাতক ডিগ্রিধারী এমন চাকরিতে আছেন যেখানে ডিগ্রির প্রয়োজনই নেই।
  • জেনারেশন জি, এই অভিজ্ঞতা সামনে রেখে তাদের শিক্ষাগত সিদ্ধান্ত নেয়।

৯. সহনশীলতা (Tolerance)

  • মিলেনিয়ালরা তুলনামূলকভাবে বেশি সহনশীল  বলে মনে করা হয়, কারণ বাস্তবে তারা বিভিন্ন বিপত্তি ও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে।
  • জেনারেশন জির লক্ষ্য কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা। কোনো সমস্যায় পড়লে তারা হয়তো অন্যত্র চলে যায়।
  • উদাহরণস্বরূপ, অনলাইনে কেনাকাটার সময় কারিগরি ত্রুটির সম্মুখীন হলে জেনারেশন জি সেই ওয়েবসাইট ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবে, কিন্তু মিলেনিয়াল দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে পারে।

১০. সামাজিক ‘ইনফ্লুয়েন্সার’-ই আধুনিক সেলিব্রিটি (Social influencers are today’s celebrities)

  • জেনারেশন জি টিভি বা সিনেমা হলে সময় না কাটিয়ে ইউটিউবে সময় ব্যয় করতে বেশি আগ্রহী।
  • ৬৩% জেনারেশন জি তাদের বিজ্ঞাপনে সত্যিকারের মানুষ দেখতে পছন্দ করে, সেলিব্রিটি নয়।
  • এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের (social media influencers) কদর অনেক বেড়েছে।

তথ্যসূত্র

  • https://www.huffingtonpost.com/george-beall/8-key-differences-between_b_12814200.html
  • https://www.inc.com/ryan-jenkins/generation-z-vs-millennials-the-8-differences-you-.html
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Generation_Z
  • https://en.wikipedia.org/wiki/Millennials
  • https://www.magnani.com/blog/generationz
  • https://www.socialmediatoday.com/news/comparing-the-differences-between-generation-z-and-millennials-infographic/517903/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.