Table of Contents
ভূমিকা
“তোমাদের এই টিকটক (TikTok) নিয়ে লাফালাফি! এই বয়সে আমরা খনিতে কাজ করতাম!” — গ্র্যান্ডপা মুখভর্তি ম্যাশড পটেটো খেতে খেতে এই কথাগুলো বলছিলেন। আর এটা শুনে আপনার ১২ বছর বয়সী রিলেটিভ আইফোন থেকে চোখ না তুলেই জবাব দেয়, “ওকে, বুমার (Okay, boomer)!”
আর এই সময়ে আপনি হয়তো চাকরির তালিকা স্ক্রোল করে যাচ্ছেন, একটা সাইড হাসল খুঁজছেন একটু স্বস্তিতে বাঁচার জন্য। কিন্তু কীভাবে আমরা এখানে এলাম? কেন এখন মনে হয় প্রজন্মগুলোর মধ্যে যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধ চলছে? সব সময় তো এমন ছিল না। গত ১৮০০ শতকেও হয়তো অনেকে অভিযোগ করত যে ঐ ‘১৮১২-দের (1812-ers)’ কারবারে কীভাবে রেভোল্যুশনারি ওয়ার (Revolutionary War) প্রজন্মের অর্জনগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রজন্মভিত্তিক লেবেলিং (labeling) আর সেটাকে সাংস্কৃতিক সংঘাতে পরিণত করার প্রবণতা আসলে ২০শ শতাব্দীরই একটা আবিষ্কার।
আগে প্রজন্মের ধারণা ছিল স্রেফ পারিবারিক বয়সভিত্তিক স্তর নির্দেশের জন্য। তারপর কেউ একজন ভাবল, “চলুন, এটা নিয়ে পড়াশোনা করি… আর একটু তর্ক করি!” এভাবেই সাতটা স্বতন্ত্র প্রজন্ম গড়ে উঠল, যার প্রত্যেকেই মনে করে যে তারাই সবকিছু ঠিকমতো করছে। কিন্তু কেন যেন সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন কোনো দোষারোপের যুদ্ধ, আর যুদ্ধের বিষয়টি হচ্ছে “কে এই পৃথিবীর সমস্যার জন্য বেশি দায়ী?”
দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন (The Greatest Generation) – ১৯০১ থেকে ১৯২৭
এই প্রজন্ম জন্মেছিল উনিশ শতকের শেষপ্রান্তে, এক নতুন শতাব্দীর (new century) শুরুতে—যেখানে মানুষ আশা, অগ্রগতি আর উত্তেজনা নিয়ে দিন শুরু করেছিল। কিন্তু ইতিহাসের হয়তো তাদের নিয়ে ভিন্ন পরিকল্পনাই ছিল। এই প্রজন্মের শুরুর দিকের লোকেরা বড় হওয়ার সময় চোখের সামনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘটতে দেখেছে অনেকে। সেই সাথে স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu) মহামারির আতঙ্কও এদের পিছু ছাড়েনি। তবু একই সময়ে তারা ‘রোরিং টুয়েন্টিজ’ (roaring twenties) নামক একরকম সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঝড় তুলেছিল, আর জ্যাজ (Jazz) ও সুইং (Swing) এর সুরে মানুষকে মুগ্ধ করেছিল।
কিন্তু উত্থানের পরপরই নেমে এসেছিল তীব্র ধস। এই প্রজন্ম কৈশোর পেরিয়ে প্রায় পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পথে তখন মহামন্দা (Great Depression) আঘাত হানে। সারা বিশ্বের অর্থনীতিকেই অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল এই মহামন্দা। তারপর শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বাভাস…
এভাবেই এই প্রজন্ম তাদের ‘গ্রেটেস্ট’ নামটি অর্জন করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এদের বেশির ভাগই যুদ্ধে যাওয়ার বয়সে ছিল। আমেরিকার ইতিহাসে যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের যে বিজয়গাথা, তা ছিল সবচেয়ে আইকনিক। যদিও বহু মানুষের জীবন অকালে ঝরে গেছে, তবু যারা ফিরে এসেছিল, তাদের বীরের মর্যাদা আর উদযাপন জানানো হয়েছিল। দেশে ফিরে ব্যবসা, সংস্কৃতি (culture) বা নানা ক্ষেত্রে তারা সাফল্য অর্জন করে। এই প্রজন্মের লোকেরা প্রায়ই নতুন প্রজন্মের লোকেদেরকে একটা ‘গুড ওল্ড ডেজ’ (good old days) গল্প শুনিয়ে থাকে।
যাই হোক, এই অসামান্য উত্তরাধিকারের (legacy) পরের প্রজন্ম কিছুটা যেন তাদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়।
সাইলেন্ট জেনারেশন (Silent Generation) – ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫
সাইলেন্ট জেনারেশনকেও একই ঐতিহাসিক ঘটনার ছাপ বইতে হয়েছে, তবে এদের বেড়ে ওঠা একইভাবে হয়নি। অর্থনৈতিক মন্দা (depression) তাদের শৈশবে বড় প্রভাব ফেলেছিল, অনেকেই পরিবারসহ দুঃস্থ ও অস্থির অবস্থায় বেড়ে উঠেছে। যুদ্ধ (war) চলায় রেশনিং (wartime rationing) চালু ছিল, এবং অনেকে পিতামাতাকে যুদ্ধক্ষেত্রে হারিয়েছে। এদের বেড়ে ওঠার সময় চারপাশের পরিবেশ ছিল তীব্র দেশপ্রেমে (patriotic) ভরা—সরকারবিরোধী কথা বলাকে তেমন উৎসাহিত করা হতো না। সমাজের প্রতি এক ধরনের সমষ্টিগত দায়বদ্ধতা (collectivism) এদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
এভাবেই তাদের “সাইলেন্ট (Silent)” আখ্যা দেওয়া হয়। এক যুদ্ধ (World War II) শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আরেক যুদ্ধ (Cold War) শুরু হয়। এই প্রজন্ম মূলত ঠান্ডা যুদ্ধের (Cold War) যুগে বেড়ে উঠেছে। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন পরমাণু অস্ত্র পেয়ে গেল, তখন আমেরিকায় শুরু হলো আরও বড় বিপদের আশঙ্কা। ম্যাকার্থি যুগে (McCarthy era) তারা মুখ বন্ধ করে থাকতে পছন্দ করত—যেন কোনো ঝামেলায় জড়াতে না হয়—এবং শৈশব থেকেই এরা কঠোর পরিশ্রমের (work ethic) শিক্ষা পেয়েছিল।
এরপর শুরু হয় ‘বেবি বুমার্স (Baby Boomers)’ যুগ।
বেবি বুমার্স (Baby Boomers) – ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪
‘বেবি বুম (Baby Boom)’ কথাটা এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে (late 1940s and 1950s) জন্মহার বেড়ে যাওয়ার ফলস্বরূপ। যুদ্ধফেরত সৈন্যরা বাড়ি ফিরে এলো, অবসাদগ্রস্ত অর্থনীতি (economy) আবার ঘুরে দাঁড়াতে থাকল, উন্নতি হল বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে (commerce and technology)। আর এই সময়ে ব্যাপক আকারে “woo-hoo” শব্দের আনন্দোৎসবও ঘটল! ফলস্বরূপ জন্মহার বৃদ্ধি পেল। শুধু আমেরিকাতেই ৭৬ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই প্রজন্মে জন্মেছে, যা তখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ প্রজন্ম হিসাবে ধরা হয়।
এরা এমন একটা যুগে বড় হয়েছে, যখন অতি দ্রুত সামাজিক অগ্রগতিগুলো ঘটছিল। স্পেস রেস (Space Race), সিভিল রাইটস মুভমেন্ট (Civil Rights Movement), উডস্টক (Woodstock)—এসব সাংস্কৃতিক হাইলাইট তৈরি করছে “টিপিক্যাল আমেরিকান চাইল্ডহুড” ধারণা। কিন্তু একই সময়ে, পারমাণবিক যুদ্ধের (nuclear annihilation) আতঙ্ক সারাক্ষণ ছিল। কেউ “ডাক অ্যান্ড কভার (Duck and Cover)” কথা শুনলে যদি সাথে সাথে টেবিলের নিচে ঢুকে পড়তে চায়, তবে সে সম্ভবত বেবি বুমার! কারণ, কিউবান মিসাইল সংকট (Cuban Missile Crisis) যেমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, তাতে মানুষ ভয়ে তটস্থ ছিল।
সেই সময়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের (Vietnam war) মতো বিতর্কিত যুদ্ধও চলেছে, এবং বিশাল এক যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনও (anti-war movement) দানা বেঁধেছিল—যা এদের রাজনৈতিক মানসিকতা গড়ে তুলতে বিরাট ভূমিকা রাখে। এই প্রজন্ম থেকে অন্তত চারজন প্রেসিডেন্ট এসেছেন – ক্লিনটন (Clinton), বুশ জুনিয়র (Bush Jr.), ওবামা (Obama) ও ট্রাম্প (Trump)। অনেকে মনে করে এরা রক্ষণশীল (conservative) ঝোঁকের, বিশেষ করে তুলনামূলকভাবে আর্থসামাজিক সুবিধা বেশি পাওয়ার কারণে। কিন্তু এদের মধ্যেও যেমন বিভিন্ন আদর্শিক দল আছে, ঠিক তেমনই এদের বিপুল জনসংখ্যার কারণে এখনও এরা রাজনীতি এবং সমাজে অগাধ প্রভাব ধরে রেখেছে।
বেবি বুমার্সদের বিশাল ছায়ার কারণে পরবর্তী প্রজন্মে যেন কিছুটা “চিলড আউট” ভাব এসেছে।
জেনারেশন এক্স (Generation X) – ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০
পুরোনোদের ভাষায় এই প্রজন্ম নাকি “স্ল্যাকার জেনারেশন (slacker generation)”, কারণ এদের তেমন কোনো বিশাল যুদ্ধে (major war) জড়িয়ে পড়তে হয়নি। বেবি বুমারদের অনেকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে গেছে, কিন্তু জেনারেশন এক্স বেড়ে উঠেছে যখন ঠান্ডা যুদ্ধের উত্তেজনা ধীরে ধীরে কমছিল। গালফ ওয়ার (Gulf War) ঘটলেও তা ছিল একটি সীমিত পর্যায়ের যুদ্ধ, কোনো বাধ্যতামূলক নিয়োগ বা ড্রাফট (draft) ছিল না। তাই এদের মনোযোগ বেশি ছিল গার্হস্থ্য বিষয়গুলোতে (domestic affairs) এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা সমালোচনা করার ব্যাপারে এরা হয়ে ওঠে বেশ সরব।
এই সময় এলজিবিটি (LGBT) অধিকার নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়, যখন এইডস (AIDS) মহামারি প্রতিটি বাড়ির আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্ব হয়তো আর ‘নিশ্চিত পারমাণবিক ধ্বংসের (nuclear annihilation)’ দ্বারপ্রান্তে ছিল না, কিন্তু সামাজিক বড় পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটতে থাকে।
এ সময়ের বড় একটা সাংস্কৃতিক মোড়ক হলো—টেলিভিশন (TV)।
জেনারেশন এক্স মানেই মনে করা হয়, এরা কী দেখতো (MTV) আর কী শুনতো (grunge music)। এই যুগেই এমটিভি (MTV) শুরু হয়, গ্রাঞ্জ (grunge) মিউজিকের উত্থান ঘটে। অন্যদিকে শিশুদের অপহরণ বেড়ে যায় (rise in kidnappings), স্যাটানিক প্যানিক (Satanic Panic) নামে অদ্ভুত এক ভয় ঢুকে যায় সমাজে। ফলে পিতামাতা সন্তানের ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ে, ‘ফ্রি-রেঞ্জ (free-range childhood)’ বেড়ে ওঠার দিন শেষ হয়ে গেল, ‘হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং (helicopter parenting)’ চলে এলো। মানে এই সময় থেকে বাবা-মা আগের তুলনায় সন্তানদের অনেক বেশি দেখে শুনে রাখার বা নজর দারিতে রাখা শুরু করল। সাইলেন্ট জেনারেশনের মতো, জেনারেশন এক্স-ও আগের ও পরের প্রজন্মের মধ্যে কিছুটা আড়ালে রয়ে গেল—এদের মধ্য থেকে এখনও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট (President) পাওয়া যায়নি, যদিও এদের অনেকেই এখন প্রায় ষাটোর্ধ্ব।
এবার আমাদের মনোযোগ যাবে সেসব প্রজন্মের দিকে, যাদের একসময় “বাচ্চা” ভাবা হতো—কিন্তু তারা এখন কত বড় হয়ে গেছে!
মিলেনিয়ালস (Millennials) – ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬
ঠান্ডা যুদ্ধ (Cold War) প্রায় শেষের পথে যখন এই প্রজন্ম বড় হতে শুরু করে, তখনই এক নতুন যুগের সূচনা হয়। মিলেনিয়াল প্রজন্ম মানেই প্রযুক্তির (technology) সাথে বেড়ে ওঠা। শৈশবে তারা হয়তো টয়’আর আস (Toys ‘R Us) আর ওয়াল ফোন (wall phones) দেখেছে, কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে দেখেছে ইন্টারনেটের (internet) আবির্ভাব, এবং কলেজ বা উচ্চবিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় তারা ঢুকে পড়েছে এক নতুন ডিজিটাল দুনিয়ায়। ২০০০ সাল শুরু হওয়ার সময় তাদের চোখে ছিল সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন—সবকিছুই হয়তো এখন থেকে উন্নতির দিকে যাবে! কিন্তু ইতিহাসের নাটকীয় অনিশ্চয়তা তাদের মাথায় আঘাত হানে।
নতুন সহস্রাব্দ (new millennium) শুরু হওয়ার পরই ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বহু বিতর্ক হল, হাড্ডাহাড্ডি ফলাফল ও আইনি জটিলতা দেখে অনেক মিলেনিয়াল রাজনীতি নিয়ে হতাশ বা উদাসীন হয়ে পড়ে। তারপর ৯/১১ হামলা (9/11 attacks) নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আঘাত হানে, শুরু হয় গ্লোবাল ওয়ার অন টেরর (global war on terror)—পুরোনো প্রজন্মের মতো বাধ্যতামূলক ড্রাফট হয়নি বটে, কিন্তু সন্ত্রাস ও যুদ্ধের ছায়া এদের তারুণ্যে গাঢ় প্রভাব ফেলে। এরপর ২০০৮ সালে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা (financial crisis) তাদের পেশাগত পরিকল্পনায় বড় বাধা সৃষ্টি করে। পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় অনেক মিলেনিয়ালকে বাবা-মায়ের সাথে একই বাড়িতে থাকতে হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি চাকরি পেতে কষ্ট করতে হয়েছে।
এই প্রজন্মের রাজনৈতিক ঝোঁক তাই তুলনামূলকভাবে বেশি উদারপন্থী (liberal) হয়ে উঠেছে। যেমন, অ্যালেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিও-কোর্টেজের (Alexandria Ocasio-Cortez) মতো তরুণ রাজনৈতিক নেতারা বেশ আইকনোক্লাস্ট। যদিও এখনও অনেক সময় ‘মিলেনিয়াল’ শব্দটা ব্যবহার করা হয় ‘তরুণদের’ বোঝাতে, কিন্তু বাস্তবে পুরোনো মিলেনিয়ালরা ইতোমধ্যেই ৪০ পার করে ফেলেছে—কেউ কেউ তো গ্র্যান্ডপা-গ্র্যান্ডমাও হয়ে গেছেন!
তাই এখন এরাও অনেক সময় “ওকে, মিলেনিয়াল (Okay, Millennial)” কথাটা শুনতে পারে।
জেনারেশন জি (Generation Z) – ১৯৯৭ থেকে ২০১০
মিলেনিয়ালরা যে প্রযুক্তির উত্তাল ধাপটা সামনে পেয়েছিল, জেন জি (Gen Z) সেটাকে প্রায় জন্মগতভাবেই পেয়েছে—ডিজিটাল নেটিভস (digital natives) হিসেবে। এই প্রজন্মের বেশির ভাগ শিশু-কিশোর বয়সেই সেলফোন (cell phones) পেয়েছে, আর অল্প সময়ের মধ্যে স্মার্টফোন (smartphones) এসে সব পাল্টে গেছে—এখন সারাক্ষণ পকেটে একটা কম্পিউটার (computer) নিয়ে ঘুরছে তারা। যখন বুমাররা “আজকালকার বাচ্চারা জানে না টাইপরাইটার (typewriter) কী, বা পত্রিকায় সিনেমার সময় খোঁজার কষ্ট কী” এসব বলে আফসোস করে, জেন জি হয়তো বলবে, “সেগুলো আমাদের লাগবেই বা কেন?”
কিন্তু তা বলে ভাববেন না যে এরা বাস্তবতা থেকে দূরে সরে আছে।
এই প্রজন্ম সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বরাবরই বেশ সক্রিয় (highly engaged)। ইন্টারনেট তাদের জানার পরিধি অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন (anti-war), বন্দুক নিয়ন্ত্রণ (gun control), বা জলবায়ু পরিবর্তন (anti-climate change) নিয়ে সরব। তবে ঐতিহ্যবাহী ভোট বা রাজনৈতিক সংগঠনের পরিবর্তে তারা প্রতিবাদ (protest movements) আর অনলাইন মাধ্যমকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। এতে পুরোনো প্রজন্ম কিছুটা বিরক্ত হলেও যুগের পরিবর্তনকে তো আর থামানো যায় না। তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে রাজনীতি আর বিশ্বপরিবেশে কী প্রভাব ফেলবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
জেন আলফা (Gen Alpha) – ২০১১ থেকে ?
এই নতুন প্রজন্ম এখনো সবে শুরু করেছে। অনেকের মতে, জেন আলফা (Gen Alpha) আরও একধাপ এগিয়ে—এরা ‘স্মার্টফোন নেটিভস (smartphone natives)।’ একটা সার্বক্ষণিক তথ্যপ্রবাহ (constant stream of information) ছাড়া এরা অন্য কোনো পৃথিবী দেখেনি। অনেক শিক্ষকের মতে, এতে তাদের মনোযোগ বা পড়ার অভ্যাসের (attention span) ক্ষতি হতে পারে, কারণ তারা ছোট ছোট ভিডিও কনটেন্টের (short-form video like TikTok) উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ঠিক একই সময়েই এরা বড় হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির উত্থানের মাঝে, যা মানুষের কাজ ও শিক্ষার ধরন পাল্টে দিতে শুরু করেছে।
তবে প্রতিটি প্রজন্মের মতোই, এখানেও অন্য এক দিক আছে।
জেন আলফা আগের চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক ও পরিবেশগত (activism and justice) বিষয় নিয়ে সচেতন—তারা যে শুধু ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে তাই নয়, অনেকে নিজেই প্রযুক্তি তৈরি বা কোডিং করছে (creating it)। রোব্লক্স (Roblox)-এর মতো প্ল্যাটফর্মে লাখো শিশুই খেলা শেখার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং (coding) করছে। তবে একই সাথে, বিশ্ব আজ আরও অস্থিতিশীল—দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ, রাজনৈতিক মেরুকরণ ও তথ্যভিত্তিক বিভ্রান্তি তাদের বেড়ে ওঠার সময়কে জটিল করে তুলছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এদের মধ্যে উগ্রপন্থা (radicalized) দুই ধারাতেই বাড়তে পারে। কিন্তু তারা যখন উচ্চবিদ্যালয় (high school) ও কলেজে (college) প্রবেশ করবে, তখনই বোঝা যাবে পৃথিবীতে তাদের প্রভাব আসলে কেমনভাবে ফুটে ওঠে।
তথ্যসূত্র
- https://en.wikipedia.org/wiki/Generation
- https://www.parents.com/parenting/better-parenting/style/generation-names-and-years-a-cheat-sheet-for-parents/
- https://en.wikipedia.org/wiki/Greatest_Generation
- https://en.wikipedia.org/wiki/Silent_Generation
- https://en.wikipedia.org/wiki/Baby_boomers
- https://en.wikipedia.org/wiki/Generation_X
- https://en.wikipedia.org/wiki/Millennials
- https://en.wikipedia.org/wiki/Generation_Z
- https://en.wikipedia.org/wiki/Generation_Alpha
Leave a Reply