দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি ইউরোপের জন্য কী অর্থ বহন করবে?

ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সম্প্রতি বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণত, আমেরিকান নির্বাচন ইউরোপের জন্য সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এবার ব্যাপারটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কমলা হ্যারিস (Kamala Harris) ও ট্রাম্পের ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU – European Union), ইউক্রেন (Ukraine) এবং ন্যাটো (NATO – North Atlantic Treaty Organization) সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে তফাৎ যথেষ্ট স্পষ্ট। সুতরাং দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে, ইউরোপ কীভাবে এর জবাব দিতে পারে, এবং এটি ট্রান্সআটলান্টিক অ্যালায়েন্সের (Transatlantic Alliance) শেষের শুরু কিনা – এসব নিয়েই এই বিশ্লেষণ।

ট্রাম্পের দুটি মূল নীতি ও ইউরোপে প্রভাব

নতুন ট্রাম্প প্রশাসন থেকে ইউরোপ সরাসরি কোন কোন বিষয়ে প্রভাবিত হতে পারে? মূলত দুটি নীতিতে এ প্রভাব সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যেতে পারে:

  1. ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি (Foreign Policy)
  2. ট্রাম্পের শুল্ক-কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক নীতি (Tariff-Centric Economic Policy)

পরবর্তীতে এই দুটি দিক আলাদা ভাবে বিশ্লেষণ করা হলো।

ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি: ইউক্রেন ও ন্যাটোর প্রসঙ্গ

ইউক্রেন (Ukraine) প্রসঙ্গ

ইউরোপের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ট্রাম্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতির বিষয় হলো ইউক্রেন ও বৃহত্তর পরিসরে ন্যাটো। ট্রাম্পের ইউক্রেন সংক্রান্ত বক্তব্য বেশ কয়েকবার শোনা গেছে – তার মূল অবস্থান হলো যুদ্ধ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করা। তিনি একাধিকবার দাবি করেছেন, ক্ষমতায় এসেই কিংবা ক্ষমতা গ্রহণের আগেই রাশিয়া (Russia) ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (Deal) করে ফেলবেন।

সম্প্রতি লেক্স ফ্রিডম্যান পডকাস্ট (Lex Friedman podcast)-এ ট্রাম্প বলেছেন যে, তার কাছে একটি “খুব নির্দিষ্ট পরিকল্পনা” (A Very Exacting Plan) আছে, যা দিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যেকার সংঘাত বন্ধ করা সম্ভব। তবে সেই পরিকল্পনা তিনি ফাঁস করতে চান না, কারণ করলে সেটি আর “অবাক করা” হতো না।

এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে কিইভ (Kyiv) এবং ইউরোপের অন্যান্য রাজধানীতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, এখন যদি কোনো শান্তিচুক্তি (Peace Deal) হয়, তাহলে সেটি রাশিয়ার পক্ষে বেশি সুবিধাজনক হতে পারে, অথবা ইউক্রেনের সর্বোচ্চ দাবিকে (Maximalist War Aims) পূরণ নাও করতে পারে। ইউক্রেন তার ২০১৪ সালের আগের সমস্ত ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করতে চায়, যা বাস্তবতা বিবেচনায় বেশ কঠিন দেখাচ্ছে। ইউক্রেনের এই উদ্বেগকে আরো উসকে দিয়েছে জেডি ভ্যান্স (J.D. Vance)-এর একটি সাক্ষাৎকার। তিনি সেপ্টেম্বরে ‘শোন রায়ান শো’ (Sean Ryan Show)-তে বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষ করতে বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর একটি ডিমিলিটারাইজড জোন (Demilitarised Zone) গড়ে তোলা হতে পারে। সেইসাথে ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে (Neutral State) পরিণত করার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না।

যদিও এখন ন্যাটো ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের সদস্যপদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে, আর ইউক্রেনের দৃষ্টিতে ভবিষ্যতে রাশিয়ান আগ্রাসন ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ন্যাটো সদস্যপদ নিশ্চিত করা। তবু ট্রাম্প যদি সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন, তবে ইউক্রেনকে কোনো আপসচুক্তিতে যেতে বাধ্যও করতে পারেন, যেমন তার প্রথম মেয়াদে তিনি সহায়তা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এটি তখনই সম্ভব হবে, যদি অন্য ন্যাটো মিত্ররা একযোগে সহায়তা বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি পূরণ না করে বা ইউক্রেন একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থান না নেয়।

অন্যদিকে, রাশিয়াও (Kremlin) ট্রাম্পের এই “দ্রুত শান্তি সমাধান” নিয়ে খুব উৎসাহ দেখাচ্ছে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ (Dmitry Peskov) বলেছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা “কল্পনার রাজ্যে” (Realm of Fantasy) অবস্থান করছে। আর জেডি ভ্যান্সের প্রস্তাবিত সমাধান রাশিয়ার পক্ষে কিছুটা ভালো মনে হলেও, এটি পুতিনের (Putin) সর্বোচ্চ দাবির (Maximalist War Aims) কাছাকাছি নয়। ২০২২ সালে রাশিয়া লুহানস্ক (Luhansk), দোনেস্ক (Donetsk), খেরসন (Kherson) ও জাপোরিঝিয়া (Zaporizhzhia) – এই চারটি ওব্লাস্ট (Oblast) সংযুক্ত করে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এখনো রাশিয়া ডোনেস্ক, খেরসন বা জাপোরিঝিয়ার পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে না, তাই বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধ “ফ্রিজ” (Freeze) করলে পুতিনের ঘোষিত লক্ষ্য পূরণ হবে না, বিশেষত যদি কোনো বাফার জোন (Buffer Zone) তৈরি হয়।

রাশিয়া যদি ট্রাম্পের সম্ভাব্য “দ্রুত শান্তিচুক্তি” প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ট্রাম্প কীভাবে সাড়া দেবেন সেটিও একটি প্রশ্ন। অনেকে মনে করেন, তিনি পুতিনকে (Putin) ছাড় দেবেন। তবে ২০২৩ সালে ফক্স নিউজকে (Fox News) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, যদি রাশিয়া চুক্তিতে রাজি না হয়, তিনি ইউক্রেনকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে “আরো বেশি” সহায়তা দেবেন যাতে রাশিয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়।

ন্যাটো (NATO) প্রসঙ্গ

ট্রাম্পের ন্যাটো-সংক্রান্ত অবস্থানও সম্ভবত আগের মেয়াদের মতোই থেকে যাবে, তবে আরো চরমভাবে। তিনি একাধিকবার বলেছেন, অন্য ন্যাটো সদস্য দেশগুলোকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে, অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষা করবে না। এই অবস্থান ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫ (Article 5) সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি করতে পারে। অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে বাকি সব সদস্য রাষ্ট্র মিলে তাকে রক্ষা করবে। কিন্তু ট্রাম্প সরাসরি জানিয়েছেন, যে দেশ “পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করবে না” তাকে সুরক্ষা দানে তিনি অনিচ্ছুক।

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি: শুল্ক (Tariff) ও তার প্রভাব

ট্রাম্প আবারও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি কিছু শুল্ক আরোপ করলেও সেগুলো তার ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারের ভাষণের তুলনায় বেশ “নরম” ছিল। তবে এবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসা সমস্ত পণ্যে ১০% বা ২০% হারে ফ্ল্যাট শুল্ক (Flat Tariff) আরোপের কথাও ভাবছেন। উল্লেখ্য, ফ্ল্যাট শুল্ক (Flat Tariff) হলো একটি নির্দিষ্ট হারের শুল্ক যা কোনো পণ্যের আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে ধার্য করা হয়, পণ্যের ধরন, মূল্য, বা উৎসদেশ নির্বিশেষে। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি অভিন্ন হার (fixed rate) হিসেবে কাজ করে, যেখানে সব পণ্য একই হারে শুল্কের আওতায় পড়ে। যাই হোক, কিছুদিন আগে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চীনের (China) মতো উল্লেখ করে বলেন, এ দুটো বড় বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Trade Surplus) পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে।

লন্ডন স্কুল অব ইকনমিকস (LSE – London School of Economics)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, এসব শুল্ক ইউরোপীয় অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তবে চীন বা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপ অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পণ্য রপ্তানি করে, যেমন জার্মানি (Germany), তারা বেশি সমস্যায় পড়বে।

দীর্ঘমেয়াদে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব শুল্ক ইউরোপের চলমান শিল্প-হ্রাস বা বিশিল্পায়ন (Deindustrialization) প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। কারণ বিভিন্ন কোম্পানি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য বিক্রি করতে আমেরিকাতেই কারখানা স্থানান্তর করে ফেলতে পারে। ফলে ইউরোপের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।

ইউরোপের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ইউরোপ কীভাবে সাড়া দেবে, সেটি বড় প্রশ্ন। এখানে মূলত তিনটি ভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসতে পারে।

  1. আশাবাদী (Optimistic) দৃষ্টিভঙ্গি: কিছু বিশ্লেষক, বিশেষ করে মুজতবা রহমান (Mujtaba Rahman) ‘পলিটিকো’ (Politico)-তে একটি বিতর্কিত লেখায় উল্লেখ করেছেন, দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি ইউরোপের জন্য ইতিবাচকও হতে পারে। কারণ এতে ইইউকে (EU) প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে বেশি সহযোগিতা এবং আরো দৃঢ় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবে। ফ্রান্স (France) দীর্ঘদিন ধরে চেয়েছে যে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক, যা শুরু করেছিলেন শার্ল দ্য গল (De Gaulle)। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে সেই স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে।
  2. নিরপেক্ষ (Neutral) দৃষ্টিভঙ্গি: আরেকটি সম্ভাবনা হলো, ইইউ আগের মতোই চলবে; তারা ট্রাম্পকে বিরক্ত না করে যতটা সম্ভব সম্পর্ক ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা করবে। ২০১৬-২০ মেয়াদে যেমন তারা ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে (Damage Control) ব্যস্ত ছিল, এবারও তেমনটাই করা হতে পারে। তারা হয়তো আশা করবে, এরপর যেকোনো নতুন নির্বাচনে আবারো যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপপন্থী (Atlantist) কোনো প্রেসিডেন্ট আসবেন – যেমন ২০২০ সালে বাইডেন (Biden) এসেছিলেন।
  3. হতাশাবাদী (Pessimistic) দৃষ্টিভঙ্গি: সবচেয়ে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গিতে, দ্বিতীয় ট্রাম্প মেয়াদে ইউরোপে বিভাজন বাড়তে পারে। কারণ ভিক্টর অরবান (Viktor Orbán), গের্ট ভিল্ডার্স (Geert Wilders), জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni) প্রমুখ ইউরোপীয় নেতারা অনেকাংশে ট্রাম্পের রাজনীতির সাথে একমত। আগের মেয়াদে ইইউ মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ ছিল, কিন্তু এবারে এই “ট্রাম্পপন্থী” (Pro-Trump) গোষ্ঠী আরো বড় হয়ে যাওয়ায় ইউরোপের অভ্যন্তরীণ ঐক্য রক্ষা করা কঠিন হতে পারে।

উপসংহার

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ ইউরোপের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে। তার বৈদেশিক নীতি, বিশেষ করে ইউক্রেন ও ন্যাটো বিষয়ে, ইউরোপকে সুরক্ষা ও কূটনৈতিক বিন্যাস নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে। একইভাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপের ফলে ইউরোপের কিছু বড় রপ্তানিকারক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, আবার দীর্ঘমেয়াদে শিল্প-কারখানা স্থানান্তর বেড়ে যেতে পারে।

সর্বোপরি, ইউরোপের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে ইউরোপীয় দেশগুলো কেমন করে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় বা নেয় না তার ওপর। এটি একই সাথে সুযোগ ও হুমকি নিয়ে আসছে—কেউ কেউ মনে করেন, দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি ইইউকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে তুলতে পারে, আবার অনেকে শঙ্কা করেন যে এটি ইউরোপকে আরো বিভক্ত করবে। এখন দেখার বিষয়, সময়ের সাথে ইউরোপ ঠিক কোন পথে হাঁটে।

তথ্যসূত্র

Trump comments on plan for Ukraine https://www.aljazeera.com/news/2024/9/17/whats-donald-trumps-plan-to-end-russias-war-on-ukraine
JD Vance comments on plan for Ukraine https://www.aljazeera.com/news/2024/9/17/whats-donald-trumps-plan-to-end-russias-war-on-ukraine
Peskov response to Trump plan https://www.aljazeera.com/news/2024/9/17/whats-donald-trumps-plan-to-end-russias-war-on-ukraine
Trump’s threat to quit NATO https://www.politico.eu/article/donald-trump-says-he-wont-quit-nato-if-europe-pays-its-way/
Trump’s comments on not defending NATO members who don’t pay 2% https://edition.cnn.com/2024/02/10/politics/trump-russia-nato/index.html
Trump interview with Bloomberg transcript https://www.bloomberg.com/features/2024-trump-interview-transcript/
LSE research on impact of Trump tariffs https://www.lse.ac.uk/granthaminstitute/publication/the-economic-impacts-of-trumps-tariff-proposals-on-europe/
Mujahtba Rahman piece on why Trump could be good for Europe https://www.politico.eu/article/europe-hope-donald-trump-victory-nato-defense-security-debt/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.