Table of Contents
ভূমিকা
গত ৫ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচন (US election) পরবর্তী সময়ে, সারা বিশ্বের রাজনীতিকেরা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস (White House) এ ফিরে আসার সম্ভাবনায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইউরোপের (Europe) জন্য ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) নেতাদের প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতা দেখলেই বোঝা যায়—কেউ কেউ (যেমন নেদারল্যান্ডসের ডানপন্থী নেতা গির্ট উইলডার্স (Geert Wilders) ও হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান (Viktor Orban)) ট্রাম্পকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত, অন্যদিকে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শল্ৎস (Olaf Scholz), ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (Emmanuel Macron) ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ (Pedro Sanchez) অপেক্ষাকৃত সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এই প্রবন্ধে আমরা ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক (EU-US relationship), ইউরোপে ট্রাম্পের প্রধান মিত্ররা কারা, এবং এর প্রভাব ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিতে (EU politics) কেমন হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করব।
পটভূমি
দশকজুড়ে ইউরোপ (Europe) ও যুক্তরাষ্ট্রের (US) মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় ছিল। দু’পক্ষই ন্যাটো (NATO) জোটের মাধ্যমে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আবদ্ধ, এবং অর্থনৈতিকভাবে তারা একে অপরের বৃহত্তম অংশীদার। ইইউ (EU) হলো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্য-অংশীদার, যেখানে উভয় পক্ষেরই প্রায় ৯.৪ মিলিয়ন মানুষ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের (bilateral trade) মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ পরস্পরের বড় বিনিয়োগকারীও বটে—যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া প্যাসিফিক (Asia Pacific) অঞ্চলের তুলনায় চার গুণ বেশি বিনিয়োগ করে ইইউতে, অন্যদিকে ইইউ ভারত ও চীনের সম্মিলিত বিনিয়োগের (foreign direct investment) চেয়ে প্রায় দশ গুণ বেশি বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রে।
তবে ১৯৯০-এর দশকের ‘ট্রান্সআটলান্টিক (Transatlantic) সোনালি যুগ’ বেশ পেছনে ফেলে, ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে কিছু সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ সম্পর্ককে অবসানমুখী বলেও আভাস দিয়েছেন। সিসান্ত (Asia) অঞ্চলের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত আগ্রহ বাড়ায় (বিশেষ করে ওবামা প্রশাসনের (Obama administration) সময় থেকে), ইউরোপের গুরুত্ব মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কিছুটা কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের পেছনে একদিকে রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ—বিশ্বের আগামী দিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই এশিয়া থেকে আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, অন্যদিকে ভূ-রাজনৈতিক কারণও আছে—যুক্তরাষ্ট্র চীনকে (China) প্রতিহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ২০২০ সালে চীন পণ্য বাণিজ্যে (trade in goods) ইইউকে ছাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে উঠেছে।
নিউইয়র্কাস ভিনোকুর (Nicolas Vinocure) নামের এক সাংবাদিক পলিটিকোতে (Politico) উল্লেখ করেছেন যে, বিশেষ করে রিপাবলিকান (Republican) নীতিনির্ধারকদের কাছে ইউরোপের গুরুত্ব কিছুটা কমে গেছে, আর ট্রাম্প এই মনোভাবকে আরও তীব্র করে তুলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাটোকে (NATO) ঘিরে ট্রাম্পের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব দেখা গেছে; এমনকি তিনি প্রচারণায় বলেছিলেন, যদি কোনো সদস্যদেশ ২% জিডিপি প্রতিরক্ষা ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করে, তবে রাশিয়া (Russia) সে দেশে যা খুশি করতে পারে, তাতে তিনি হস্তক্ষেপ করবেন না। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিকটিও তার অপছন্দ—কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইইউর সাথে বাণিজ্য ঘাটতিতে (trade deficit) আছে। টাম্পের মতে, এটি “অন্যায্য”। তিনি ব্লুমবার্গকে (Bloomberg) এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “স্কটল্যান্ড ও জার্মানিকে আমরা ভালোবাসি, কিন্তু এর বাইরে গেলে, ইইউ আমাদের প্রতি সহিংস আচরণ করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কেউ ভাবে না, কিন্তু এটা চীনের মতো।”
এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্প ব্রাসেলসে (Brussels) খুব একটা জনপ্রিয় নন। তবে ইউরোপে তার কিছু কট্টর সমর্থক (continental admirers) আছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ সম্ভবত হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান (Viktor Orban)।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান (Viktor Orban)
ভিক্টর অরবান ট্রাম্পের একজন বড় অনুরাগীই নন, বরং ট্রাম্পের “অনুপ্রেরণার” অন্যতম উৎসও বটে। অরবান সম্প্রতি ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রশংসাসূচক বক্তব্যের একটি সংকলন (montage) শেয়ার করেছেন, যেখানে ট্রাম্প তাকে “একজন অত্যন্ত সম্মানিত নেতা,” “দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী নেতা” ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবেও দুই “শক্তি-নেতা” (strong men) অনেক বিষয়ে একই আদর্শ ধারণ করেন।
মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণায় ট্রাম্প আংশিকভাবে অরবানের কৌশল অনুসরণ করেছেন—খ্রিস্টীয় মূল্যবোধ (Christian values) ও পশ্চিমা সভ্যতার (Western civilization) রক্ষক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা, ষড়যন্ত্রতত্ত্বের (conspiratorial forces) বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, ট্রাম্পের কাছে “শত্রু” বা ষড়যন্ত্রকারী “ডিপ স্টেট (deep state)” ও রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা “অশুভ শক্তি,” আর অরবানের কাছে এটি হলেন লিবারাল দাতব্যকারী জর্জ সোরোস (George Soros)।
ট্রাম্প ও অরবান উভয়ই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Putin) সাথে তুলনামূলকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন, এবং ইউক্রেনে (Ukraine) শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অভিবাসন (migration) ইস্যুতেও তাদের অবস্থান একই রকম কঠোর; ট্রাম্প যেমন মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অরবান তেমনি ২০১৫ সালে সার্বিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার সাথে হাঙ্গেরির সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি এ বেড়া আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।
অরবানের “প্যাট্রিয়টস ফর ইউরোপ (Patriots for Europe)” নামে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (European Parliament) একটি গ্রুপিং রয়েছে, যেখানে ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি (Matteo Salvini) -র লেগা (Lega) এবং স্পেনের ভক্স (Vox) পার্টির মতো দল আছে—যারা সকলেই ট্রাম্পঘেঁষা (Trumpophiles)। স্পেনের ভক্স পার্টি চলতি বছরের মে মাসে একটি আন্তর্জাতিক ডানপন্থী সম্মেলনে (right wing summit) প্রো-ট্রাম্প (pro Trump) রিপাবলিকানদের আমন্ত্রণ জানায়।
নেদারল্যান্ডসের গির্ট উইলডার্স (Geert Wilders)
ট্রাম্পের আরেকজন উচ্চৈঃস্বরের অনুরাগী হলেন ডাচ ফ্রিডম পার্টির (Netherlands Freedom Party) নেতা গির্ট উইলডার্স (Geert Wilders)। শুধু ট্রাম্পের আদর্শিক সাদৃশ্যই নয়, উইলডার্স তার চুলের ধরন এবং মেজাজের জন্য “ডাচ ট্রাম্প (Dutch Trump)” নামেও পরিচিত। ট্রাম্পের বিজয়ের পর তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি একটি মেগা (MAGA) ক্যাপ পরে সেলফি তুলে পোস্ট করেছিলেন। অভিবাসন নিয়ে উইলডার্সের অবস্থানও কঠোর; গত সেপ্টেম্বরে তার জোট (coalition) দাবি করে যে, তারা “এ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর আশ্রয় নীতি (asylum policy)” প্রণয়ন করেছে।
উইলডার্স আসলে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী নন; তার ইসলাম-বিরোধী অবস্থানকে (যা অন্য সরকারি জোটের কাছে অসাংবিধানিক বলে বিবেচিত) ঘিরে বিতর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি দেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni)
ট্রাম্পের আরেক সম্ভাব্য মিত্র এবং এই তালিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনীতিক হলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। তিনি অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং তথাকথিত “ইউরোপীয় ঐতিহ্যগত মূল্যবোধ” (traditional European values) রক্ষায় সোচ্চার। সাম্প্রতিককালে তিনি ট্রাম্পের কথিত ডানহাত ইলন মাস্কের (Elon Musk) সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। শোনা যাচ্ছে, মাস্ক তার স্যাটেলাইট ব্যবসা স্পেসএক্স (SpaceX) -এর কার্যক্রম ইতালিতে বাড়াতে আগ্রহী এবং ইতালির সরকার সম্প্রতি স্যাটেলাইট যোগাযোগের (satellite communications) মাধ্যমে একটি রিজার্ভ ট্রান্সমিশন ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য একটি নীতিমালা পাস করেছে।
তবে শুধু প্রযুক্তি বা বাণিজ্য নয়, মাস্ক হয়তো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে (EU vs. social media giants) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চলমান দ্বন্দ্বেও মেলোনিকে কাছে পেতে চাইছেন। কারণ, ইইউ এর ডিজিটাল নীতিমালার বিরুদ্ধে সমর্থন পেলে মাস্কের প্ল্যাটফর্মগুলো সুবিধাজনক অবস্থান পেতে পারে। অন্যদিকে, মেলোনি নিজেও সম্প্রতি ইউরোপের “কৌশলগত স্বায়ত্তশীলতা” (strategic autonomy) সমর্থন করেছেন। তিনি গত সপ্তাহে বুদাপেস্টে (Budapest) ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জন্য কী করতে পারে তা ভাববেন না, বরং ইউরোপকে কী করতে হবে, সেটা ভাবুন।” এর মাধ্যমে তিনি আকারে বুঝিয়েছেন—ট্রাম্প জিতে গেলে ইউরোপ আর আগের মতো আমেরিকার ওপর নির্ভর করতে পারবে না; বরং সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপকে স্বনির্ভর হতে হবে।
ইইউতে এর সম্ভাব্য প্রভাব
ট্রাম্প জয়ী হওয়ায় তার ইউরোপীয় সমমনা নেতারা আরও সাহস পেতে পারেন এবং বিভিন্ন সদস্যদেশে “ট্রাম্পমতো” নীতি (Trump-like policies) জোরদার করার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু ব্যবহারিক বাস্তবতায়, ইইউর সংসদীয় নির্বাচন (EU elections) ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডানপন্থী দলগুলো ভালো করেছে বটে, তবে বর্তমানে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এখনো মূলধারার (pro-EU centrist) দলগুলোর দখলে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের ১০-২০% হারে শুল্ক (tariffs) আরোপের পরিকল্পনা এবং কৃষি পণ্য (agricultural products) রপ্তানির দাবি ইউরোপে খুব একটা জনপ্রিয় হবে না— এমনকি ট্রাম্পপন্থী মিত্রদের কাছেও। কারণ, ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ইউরোপের কৃষকরা (farmers) নানা ইস্যুতে বিরাট বিক্ষোভ করেছেন; অতিরিক্ত কৃষিপণ্য আমদানি এ সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করতে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে ইউরোপের কাছে তিনি কীভাবে এগিয়ে যাবেন, সেটি অনেকটাই নির্ভর করবে পরবর্তী চার বছরে ইউরোপের দেশে দেশে কে ক্ষমতায় আসবে তার ওপর। এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, তবে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিকে আরও বিভক্ত করতে পারে, আর এই বিভক্তিই হয়তো হবে তার সবচেয়ে বড় প্রভাব।
শেষ কথা
সংক্ষেপে, ইউরোপে ট্রাম্পের বেশ কয়েকজন উচ্চপ্রোফাইল মিত্র থাকলেও (ভিক্টর অরবান, গির্ট উইলডার্স, জর্জিয়া মেলোনি প্রমুখ), ইইউর সামগ্রিক কাঠামোতে তার জনপ্রিয়তা সীমিত। তবু তার ফিরে আসা ইউরোপীয় রাজনীতিতে নানা পরিবর্তনের জন্ম দিতে পারে—অভিবাসন নীতি থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক চুক্তি ও প্রতিরক্ষা জোট পর্যন্ত সব কিছুতেই প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্যসূত্র
EU-US Relations
https://policy.trade.ec.europa.eu/eu-trade-relationships-country-and-region/countries-and-regions/united-states_en
https://www.politico.eu/article/donald-trump-kamala-harris-jd-vance-tim-waltz-eu-nato-us-elections-weapons/
https://edition.cnn.com/2024/02/10/politics/trump-russia-nato/index.html
https://www.bloomberg.com/features/2024-trump-interview-transcript/
Trump’s EU Allies
https://x.com/PM_ViktorOrban/status/1854206869515944269
https://www.euractiv.com/section/global-europe/news/hungary-ready-to-build-another-fence-on-southern-border/
https://x.com/geertwilderspvv/status/1854054407274475924
https://www.euronews.com/next/2024/09/25/elon-musk-and-giorgia-meloni-what-could-an-alliance-between-the-divisive-figures-mean-for-
https://x.com/elonmusk/status/1837420823340093801
Leave a Reply