মোজাম্বিকে (Mozambique) নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা কেন বাড়ছে?

ভূমিকা

মোজাম্বিক (Mozambique), আফ্রিকার (Africa) দক্ষিণপূর্ব উপকূলের একটি দেশ, যার জনসংখ্যা প্রায় ৩.৪ কোটি। অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে সেখানে কয়েক মাস ধরেই রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত এবং আরও কয়েকশো মানুষ আহত হয়েছে। সহিংসতার ধরন হিসেবে আছে দাঙ্গা (rioting), লুটপাট (looting), রাস্তা অবরোধ (road blockages) এবং অগ্নিসংযোগ (arson)–এর মতো ঘটনা।

মোজাম্বিকের নির্বাসিত বিরোধীদলীয় নেতা ভেনানসিও মনডেলেইন (Venancio Mondelein) দাবি করেছেন যে নির্বাচন কারচুপি করা হয়েছে। তিনি আরও দুই থেকে তিন মাসের মতো প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে একটি গণঅভ্যুত্থানের (popular uprising) ডাক দিয়েছেন। এই প্রতিবেদনে মোজাম্বিকের অস্থির রাজনৈতিক ইতিহাস, বর্তমান পরিস্থিতি এবং এ থেকে সামনে কী হতে পারে তা বিশদে আলোচনা করা হবে।

মোজাম্বিকের অস্থির রাজনৈতিক ইতিহাস

মোজাম্বিকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক জটিল। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এর পটভূমিতে রয়েছে অনেকগুলো বিষয়, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত চলা গৃহযুদ্ধ (civil war) এবং পরবর্তী সময়ের অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবেশ, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট সহিংসতা ও ইসলামপন্থী বিদ্রোহ (Islamist insurgencies) ইত্যাদি।

মূলত মোজাম্বিকের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা একতরফা ক্ষমতাধর সরকার ও দুর্বল বিরোধী দলের মাঝে ভারসাম্যহীনতার ফল। ১৯৯৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে একই দল, মার্কসবাদী ফ্রেলিমো পার্টি (Marxist FRELIMO Party) (সরকারি নাম মোজাম্বিক লিবারেশন ফ্রন্ট (the Mozambique Liberation Front)) ক্ষমতায় আসছে।

ফ্রেলিমোর (FRELIMO) উত্পত্তি ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার আগে। পর্তুগিজ (Portuguese) ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে এটি জাতীয়তাবাদী গেরিলা আন্দোলন হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৭৪ সালে পর্তুগাল (Portugal) যখন মোজাম্বিককে স্বাধীনতা দিতে সম্মত হয়, তখন কোনও নির্বাচন বা গণভোট ছাড়াই তারা ফ্রেলিমোর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এতে করে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে আশঙ্কা জাগে যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) এবং চীন (China) (যারা ফ্রেলিমোকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছিল) মোজাম্বিকের পরবর্তী রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। জিওপলিটিক্যালি বিষয়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মোজাম্বিক সীমান্তবর্তী ছিল সেসময়ের দুটি কমিউনিবিরোধী (anti-communist) রাষ্ট্র: বর্ণবৈষম্যতান্ত্রিক দক্ষিণ আফ্রিকা (apartheid South Africa) ও রোডেশিয়া (Rhodesia) (বর্তমান জিম্বাবুয়ে (Zimbabwe))।

স্বাধীনতা-উত্তর (post-independence) সময়ে, ফ্রেলিমো (FRELIMO) মোজাম্বিককে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে (one party socialist state) পরিণত করে। তারা ভিন্ন মত দমিয়ে রাখে, ফ্রেলিমো-বিরোধীদের বা পর্তুগিজ সহযোগীদের গ্রেফতার করে এবং ছোটখাটো রাজনৈতিক দলগুলোকে গুঁড়িয়ে দেয়। একই সময়ে, দেশটি মারাত্মক অর্থনৈতিক (socioeconomic) সংকটের সম্মুখীন হয়। প্রায় সব দক্ষ জনবল দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মাথাপিছু অক্ষরজ্ঞান (literacy) মাত্র ৫%-এ নেমে আসে।

অন্যদিকে, রোডেশিয়া (Rhodesia) এবং দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) সাহায্যপুষ্ট রেনামো (Renamo) বা মোজাম্বিক ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স (the Mozambique National Resistance) (যেটি ছিল একটি সাম্যবাদবিরোধী (anti-communist) বিদ্রোহী গোষ্ঠী) দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উভয় পক্ষের সংঘাত গড়ায় গৃহযুদ্ধে, যা মোজাম্বিক সিভিল ওয়ার (Mozambique civil war) নামে পরিচিত। এতে অর্থনীতিতে (economy) ১৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে ধারণা করা হয়। আনুমানিক ১০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায় এবং প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষকে দেশত্যাগ করতে হয়। অধিকন্তু, মানবাধিকার লঙ্ঘন, শিশু সৈন্য (child soldiers) নিয়োগ, বেসামরিক জনগণের ওপর অত্যাচার, গ্রামাঞ্চলকে প্রস্তরযুগে (Stone Age condition) ফিরিয়ে নেওয়া–এমন অগণিত সহিংস ঘটনা ঘটে।

১৯৯২ সালে রোম জেনারেল পিস অ্যাকর্ডস (Rome General Peace Accords) সইয়ের মাধ্যমে ফ্রেলিমো সরকার (FRELIMO government) এবং রেনামোর (Renamo) মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহযুদ্ধের ইতি ঘটে। কিন্তু ২০১৩ সালে রেনামো ফের এই শান্তিচুক্তি বাতিল করে। ৯০-এর দশকে মোজাম্বিক ছিল বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলোর (least developed countries) মধ্যে একটি। তখন দেশটির শিশু মৃত্যুহার (child mortality rate) ছিল প্রতি ১০০০ জনে ২৫৮ জন, আর মাথাপিছু আয় (per capita income) ছিল মাত্র ১৫০ ডলার।

আজও অনেক মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমায় (absolute poverty) বাস করে। তা সত্ত্বেও, ১৯৯৪ সালের পর থেকে প্রতিটি সাধারণ নির্বাচনে ফ্রেলিমো (FRELIMO) ৫২% থেকে শুরু করে আরও বেশি শতাংশ ভোটে জয়লাভ করে। রেনামো (Renamo), যারা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল, প্রতিবারই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনও ছিল সহিংসতায় পরিপূর্ণ। উত্তরাঞ্চলে ইসলামপন্থী হামলা (Islamist attacks) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) ও বেশ কয়েকটি এনজিওর (NGO) পর্যবেক্ষণে অনিয়ম (irregularities), কারচুপি (manipulation), ভয়ভীতি প্রদর্শন (intimidation) ইত্যাদির প্রমাণ মেলে। মাত্র দুই সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারণায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষকও ছিলেন।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি: ২০২৪ সালের নির্বাচন ও পরবর্তী সহিংসতা

চলতি বছরের (অক্টোবর ২০২৪) সপ্তম সাধারণ নির্বাচনে আবারও ফ্রেলিমো (FRELIMO) ৭০% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। এর ফলে দলটির প্রার্থী ড্যানিয়েল চ্যাপো (Daniel Chapo) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে এবার নবীন রাজনৈতিক দল পোডেমোস (Podemos) (যার পুরো নাম পার্টি ফর দ্য অপ্টিমিস্টিক ডেভেলপমেন্ট অব মোজাম্বিক (the Optimist Party for the Development of Mozambique)) ২০% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে। রেনামো (Renamo) নেমে যায় তৃতীয় স্থানে, মাত্র ৬% ভোট পেয়ে।

অবশ্য ফলাফল প্রকাশের পর সবকিছু থেমে থাকেনি। পোডেমোস-এর নেতা ভেনানসিও মনডেলেইন (Venancio Mondelein) এই ফলাফলকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেন এবং নিজেকে বিজয়ী বলে দাবি করেন। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) পর্যবেক্ষকগণ নির্বাচন কেন্দ্রে ও জেলা পর্যায়ে অনিয়মের (unjustified alteration of election results) কথা বলেছেন, মনডেলেইন তার বিজয়ের পক্ষে কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেননি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও এখন পর্যন্ত তাকে সমর্থন করেননি।

তারপরও মনডেলেইন গত কয়েক মাস ধরে ফ্রেলিমো সরকারের (FRELIMO government) বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। এসব বিক্ষোভ ক্রমশ সহিংস রূপ নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে এনজিওগুলো জানিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিরোধী দলের কর্মী; নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তারা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার কঠোর হাতে এই বিক্ষোভ দমনে নামায় দেশটির অর্থনীতি (economy) প্রায় অচল হয়ে পড়েছে, সীমান্ত বন্ধ (borders shut) করে দেওয়া হয়েছে এবং বাণিজ্যে (trade) বড় রকমের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

মনডেলেইন এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। তিনি ফেসবুকে (Facebook) অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভে উসকানি দিচ্ছেন এবং দাবি করছেন যে তাকে দুই দফা হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে মোজাম্বিকে এমন একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।

সামনের সম্ভাব্য পরিণতি

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান আলোচনা শেষে, গত সোমবার মোজাম্বিকের কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল (Constitutional Council) (যেখানে সাতজন বিচারক (judges) রয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয়জনই ফ্রেলিমো (FRELIMO) কর্তৃক নিযুক্ত) অক্টোবর নির্বাচনের ফলাফলকে বৈধ ঘোষণা করেছে। এর ফলে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ড্যানিয়েল চ্যাপো (Daniel Chapo) নির্ধারিত সময়েই শপথ নেবেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট, যিনি ফ্রেলিমো দলের বর্তমান নেতা, জানিয়েছেন যে তিনি জরুরি অবস্থা (state of emergency) জারি করবেন না এবং ১৫ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হলে চ্যাপোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

কিন্তু কোনও পক্ষই আপাতত পিছু হটতে রাজি নয়। মনডেলেইন (Mondelein) আরও দুই থেকে তিন মাস বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার সমর্থকদের ক্রিসমাস (Christmas) ও নববর্ষ (New Year’s) উদযাপন বন্ধ রেখে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর অর্থ আরও লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (looting and arson) হতে পারে, বিশেষ করে বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (foreign businesses) ও খনিশিল্পের ঘাঁটিগুলো (mining compounds) বা বিমানবন্দর (airports) এবং সমুদ্রবন্দর (port cities) লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।

এ ছাড়া, নভেম্বরে মনডেলেইন সরকারের কাছে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার, কারাগারে থাকা বিক্ষোভকারীদের মুক্তি, এবং তথাকথিত “নির্বাচনী সত্য” (electoral truth) প্রকাশ করা। সরকার এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করায় মনডেলেইন চ্যাপোর সাথে একটি পূর্ব-নির্ধারিত বৈঠক বর্জন করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।

অবশেষে, রাজনৈতিকভাবে যা-ই ঘটুক না কেন, অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে হয়। এরই মধ্যে মোজাম্বিকের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলে জিহাদিস্ট (jihadist) হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। অবকাঠামোর (infrastructure) যে ক্ষতি হয়েছে, তা মেরামত করতেও বিপুল অর্থের প্রয়োজন হবে, এবং সহিংসতার ঝুঁকিতে বিদেশি বিনিয়োগও (foreign investment) শ্লথ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa), এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। সরাসরি বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বহু মানুষ পালিয়ে এই অঞ্চলজুড়ে উদ্বাস্তু (refuge) হয়ে যেতে পারে।

তথ্যসূত্র

Political Context
https://www.hrw.org/reports/Mozamb927.pdf
https://www.bmz.de/en/countries/mozambique/political-situation-146330
https://www.hrw.org/world-report/2020/country-chapters/mozambique
https://2009-2017.state.gov/r/pa/ei/bgn/7035.htm
https://www.prb.org/resources/mozambique-struggles-to-shake-off-effects-of-civil-strife/
https://www.dw.com/en/violence-threatens-mozambican-elections/a-50678227

Jihadist Insurgency
https://www.crisisgroup.org/africa/southern-africa/mozambique/winning-peace-mozambiques-embattled-north
https://www.bbc.co.uk/news/world-africa-68477274

2024 Election Controversy
https://www.france24.com/en/live-news/20241223-mozambique-on-edge-as-judges-rule-on-disputed-election
https://www.eeas.europa.eu/eom-mozambique-2024/eu-eom-mozambiques-second-post-election-press-statement_en
https://www.theguardian.com/world/2024/dec/22/mozambique-constitutional-council-results-disputed-election
https://clubofmozambique.com/news/mozambique-elections-attorney-generals-office-summons-venancio-mondlane-aim-268731/
https://aimnews.org/2024/12/06/no-christmas-this-year-decrees-mondlane/

Anti-Government Protests
https://www.economist.com/middle-east-and-africa/2024/12/11/protests-have-shut-down-mozambique
https://www.bbc.co.uk/news/articles/c1lg01rv3vyo
https://crisis24.garda.com/alerts/2024/12/mozambique-opposition-leader-calls-for-renewed-nationwide-protests-dec-4-11-update-13
https://www.hindustantimes.com/world-news/venancio-mondlane-leading-mozambique-s-vote-dispute-from-exile-101734850590984.html

What Next?
https://www.crisisgroup.org/africa/east-and-southern-africa/mozambique/what-driving-mozambiques-post-electoral-protests
https://al24news.com/en/mozambican-president-nyusi-announces-power-transfer-to-daniel-chapo-rules-out-state-of-emergency/
https://www.fides.org/en/news/75783-AFRICA_MOZAMBIQUE_Ongoing_protests_against_election_results_have_significant_impacts_on_the_economy

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.