ক্রিসমাসের ইতিহাস – ধর্মীয় ও প্যাগান উৎস

ভূমিকা

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ২৫শে ডিসেম্বর পালিত হয় ক্রিসমাস (Christmas)। যদিও অনেক দেশে ২৪ তারিখের সন্ধ্যা থেকে ক্রিসমাস ইভ (Christmas Eve) উদযাপন শুরু হয়। এই উৎসব কেবল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেই নয়, বরং বহু অখ্রিস্টান দেশেও পালন করা হয়ে থাকে। অনেক স্থানে স্রেফ সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে অনেকে ক্রিসমাস উদযাপন করেন। যেমন, জাপানে (Japan) ক্যাথলিক জনসংখ্যা খুবই কম, তবু সেখানেও ক্রিসমাস বেশ জনপ্রিয়। অনেকে ক্রিসমাসকে সম্পূর্ণ সেক্যুলার (secular) দৃষ্টিকোণ থেকে উদযাপন করেন—পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে উপহার বিনিময়, ঘর সাজানো, ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) বসানো প্রভৃতি আয়োজনের মাধ্যমে।

একটি মানচিত্রে দেখা যায়, বেশিরভাগ দেশেই ক্রিসমাস উপলক্ষে সরকারি ছুটি রয়েছে বা অন্তত দিনটি কোনো না কোনোভাবে পালন করা হয়। কেবল হাতে গোনা কয়েকটি দেশে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হয় না।

সংক্ষেপে বললে, ক্রিসমাস (Christmas) মূলত যিশু খ্রিস্ট (Jesus Christ)-এর জন্মোৎসব হিসেবে খ্রিস্টানরা পালন করে আসছে। যদিও প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী যিশুর প্রকৃত জন্মদিন ২৫শে ডিসেম্বর ছিল না, বরং রোমান (Roman) সাম্রাজ্যে প্রচলিত শীতকালীন সূর্যঅয়ন বা উইন্টার সলস্টিস (Winter Solstice)-এর উৎসবের সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এই দিন নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ক্রিসমাস ক্রমে ধর্মীয় ও সেক্যুলার – দুই ধরণের উদযাপন পেয়েছে। এখানে খ্রিস্টধর্মীয় দিক যেমন গির্জায় প্রার্থনা, যিশুর জন্মগাথা স্মরণ—এসব গুরুত্বপূর্ণ; তেমনি প্যাগান (pagan) উৎসব থেকে আসা ক্রিসমাস ট্রি, মিসলটো (Mistletoe) ব্যবহার, ক্যারোলিং (Caroling) ও বিশেষ খাবার-দাবারের ঐতিহ্যও যুক্ত হয়েছে। আজকের দিনে অনেকেই কেবল সেক্যুলার আনন্দের অংশ হিসেবেই ক্রিসমাস পালন করেন, ধর্মীয় দিকটি সেভাবে গুরুত্ব পায় না।

ক্রিসমাসের তারিখ নির্ধারণ

ক্রিসমাস (Christmas) যিশু খ্রিস্টের জন্মোৎসব হলেও, ধর্মীয় বর্ণনামতে কোথাও নির্দিষ্ট করে ২৫শে ডিসেম্বর উল্লেখ নেই। অনেকে মনে করেন, রোমানরা তাদের সূর্যদেব ‘সোল ইনভিক্টাস (Sol Invictus)’-কে এই সময়ে সম্মান জানাতো। সেটিকে মিলিয়ে খ্রিস্টানদের মধ্যে ২৫শে ডিসেম্বরকে যিশুর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করার রীতি গড়ে ওঠে।

ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোমে (Rome) প্রথম ২৫শে ডিসেম্বর ক্রিসমাস পালনের লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়। যদিও খ্রিস্টীয় ২০০ সালের দিকে আলেকজান্দ্রিয়ার (Alexandria) ক্লিমেন্ট (Clement) লিখেছিলেন যে কেউ কেউ যিশুর জন্মদিন ২০ মে বলে মনে করেন। তবু রোমান সাম্রাজ্যে ক্রমশ যখন খ্রিস্টধর্ম শক্তিশালী হলো, তখন শীতকালীন সূর্যঅয়নের উৎসবকেই (Winter Solstice) যিশুর জন্মোৎসবের দিন বলে গ্রহণ করে নেয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়। কারণ, যিশুকে সূর্যের (Sun) সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বাইবেলের (Bible) বহু স্থানে, যেমন- “Unto you shall the Sun of righteousness arise।” সুতরাং ২৫শে ডিসেম্বরকে পবিত্র দিন হিসেবে নির্ধারণের ইতিহাসে সূর্যদেবতাকে কেন্দ্র করে রোমান উৎসবের প্রভাব স্পষ্ট।

প্যাগান ঐতিহ্য

ক্রিসমাসের (Christmas) অনেক প্রচলিত রীতি-নীতি আসলে প্রাচীন প্যাগান (pagan) ঐতিহ্য থেকে গৃহীত। ইউরোপের (Europe) বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন উৎসব ছিল বছরের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। উত্তর ইউরোপের কেল্ট (Celt) ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর কাছে শীতের সময় মিসলটো (Mistletoe) ও আইভি (Ivy) ব্যবহারের চল ছিল। অ্যাংলো-স্যাক্সন (Anglo-Saxon) এবং নর্স (Norse) জনগোষ্ঠী “ইউল (Yule)” নামের শীত উৎসব উদযাপন করত, যে শব্দটি এখনো ক্রিসমাসের সময় ব্যবহৃত হয়। সেই ‘ইউল’ উৎসব থেকেই কিছু খাবার, যেমন শূকর বা ছাগলের মাংস রান্না করা, এখনও অনেক দেশে দেখা যায়। তাছাড়া ‘ইউল লগ (Yule Log)’ নামের বড় কাঠের গুঁড়ি জ্বালানোর ঐতিহ্যও আছে; পরে এটি খাবারের ইউল লগ কেক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছে।

ক্রিসমাস ট্রির উৎপত্তি

ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) ব্যবহারের ধারণা মধ্যযুগে লিভোনিয়া (Livonia) অঞ্চল (যা বর্তমান এস্টোনিয়া (Estonia) ও লাটভিয়া (Latvia)) থেকে আসতে পারে বলে ইতিহাসবিদরা মনে করেন। পরে জার্মান (German) প্রোটেস্ট্যান্ট (Protestant) সম্প্রদায় এভাবে গাছ সাজানোর রীতি প্রবর্তন করে। শুরুতে ক্যাথলিক (Catholic) গির্জা ক্রিসমাস ট্রি ব্যবহারকে ভালোভাবে নেয়নি; এটি লুথেরীয় (Lutheran) প্রোটেস্ট্যান্টদের ঐতিহ্য ছিল। এমনকি ভ্যাটিকান সিটিতে (Vatican) প্রথম ক্রিসমাস ট্রি বসানো হয় ১৯৮২ সালে।

পূর্ব ইউরোপে (Eastern Europe) “কোলিতা (Kolita)” নামের একটি শীত উৎসবে দল বেঁধে গান গাওয়ার রেওয়াজ ছিল, যা পরে ক্রিসমাস ক্যারোল (Christmas Carol) হিসেবে রূপ নেয়। তবে উপহার বিনিময়ের ধারণাটি আংশিকভাবে বাইবেলের সেই কাহিনির অনুষঙ্গ, যেখানে যিশুর জন্মের পর ম্যাজাই (Magi) বা জ্ঞানী ঋষিরা ও রাখালেরা যিশুকে উপহার দিয়েছিলেন। স্পেনে (Spain) উপহার বিনিময় ঐতিহ্যগতভাবে ৬ জানুয়ারি (তিন জ্ঞানী ঋষির আগমন– “Epiphany”) দিনেই হয়ে থাকে।

রোমানদের (Romans) শীতকালীন উৎসব ‘স্যাটার্নালিয়াতে (Saturnalia)’ উপহার বিনিময়ের রেওয়াজ ছিল। গির্জায় বা ঘরে যিশুর জন্মদৃশ্যের (Nativity Scene) সাজসজ্জা ১০ম শতক থেকে পাওয়া যায়, এবং সেন্ট ফ্রান্সিস অব অ্যাসিসি (Saint Francis of Assisi) ১২২৩ সালে এটিকে জনপ্রিয় করেন।

ক্রিসমাসের রং

ক্রিসমাসের (Christmas) ঐতিহ্যগত রংগুলোর মধ্যে রয়েছে লাল (Red), সবুজ (Green) ও সোনালি (Gold)।

  • ধর্মীয় ব্যাখ্যায় লাল চিহ্নিত করে যিশুর রক্তকে, সবুজ চিরসবুজ অনন্ত জীবনকে নির্দেশ করে, আর সোনালি ম্যাজাইদের (Magi) দেওয়া উপহারের অন্যতম।
  • বাণিজ্যিক বা জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে লাল রঙটি সাধারণত সান্তা ক্লজের (Santa Claus) লাল পোশাকের সঙ্গে যুক্ত, আর সবুজ রঙটি ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) থেকে এসেছে।

সান্তা ক্লজের (Santa Claus) উৎপত্তি (Origin of Santa Claus)

প্রায় সবাই ক্রিসমাস (Christmas) মানেই সান্তা ক্লজ (Santa Claus)-এর কথা ভাবেন। সান্তা ক্লজের ধারণা এসেছে সেন্ট নিকোলাস (Saint Nicholas) নামের একজন সন্ন্যাসী থেকে, যিনি আনুমানিক ২৮০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান তুরস্ক (Turkey) অঞ্চলে বসবাস করতেন। তিনি তার সব সম্পত্তি দান করে দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করতেন, যার কারণে ইউরোপ জুড়ে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় সেন্টে পরিণত হন। ডিসেম্বরেই ছিল তার মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণ করার দিন, যা পরবর্তী সময়ে ক্রিসমাসের (Christmas) কাছাকাছি হওয়ায় সেন্ট নিকোলাসের নাম ক্রিসমাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।

ডাচ (Dutch) উচ্চারণে সেন্ট নিকোলাসকে বলা হতো ‘সিন্টারক্লাস (Sinterklaas)’—সেখান থেকেই ‘সান্তা ক্লজ (Santa Claus)’ নামটির উৎপত্তি। ১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ায় (Philadelphia) একটি দোকানে প্রথমবারের মতো পূর্ণ আকৃতির সান্তা ক্লজ মডেল স্থাপন করা হয়। পরে বই, গান, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সান্তার লাল পোশাক আর হাসিখুশি চেহারা জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে জায়গা করে নেয়।

প্রথম দিকে সান্তাকে নীল, সাদা বা সবুজ পোশাকেও দেখানো হতো। পরে বিখ্যাত কোমলপানীয় ব্র্যান্ড কোকা-কোলা (Coca-Cola) নিজেদের বিজ্ঞাপনে সান্তাকে লাল পোশাকে উপস্থাপন করলে সেটিই স্থায়ী হয়ে যায়। সান্তার বাসস্থান হিসেবে ‘উত্তর মেরু (North Pole)’ ধারণা আসে মূলত আমেরিকান কার্টুনিস্ট থমাস নাস্ট (Thomas Nast)-এর আঁকা অনেকগুলো ক্রিসমাস চিত্রের মাধ্যমে। তিনি ১৮৬৩ সালে হার্পার’স উইকলি (Harper’s Weekly) পত্রিকায় সান্তা ও তার রেনডিয়ার (Reindeer)-এর ছবি একে বিষয়টিকে জনপ্রিয় করেন।

তবে বিভিন্ন দেশে উপহারদাতা চরিত্রের রকমভেদ আছে। যেমন—জার্মানি (Germany) ও সুইজারল্যান্ডে (Switzerland) ক্রিস কিংল (Kris Kringle) বা ‘ক্রিস্টকিন্ড (Christkind)’ নামে এক দেবদূতসদৃশ চরিত্রকে উপহার বিলির দায়িত্বে ভাবা হয়। স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় (Scandinavia) ‘ইউল তোমতে (Jule Tomte)’ নামের এক এলফ ছাগল-টানা স্লেজে চড়ে উপহার বিলি করে। ফিনল্যান্ডে (Finland) ‘ইওলোপুকি (Joulupukki)’ আদিতে ‘ইউল গোট (Yule Goat)’ রূপে কিছুটা ভয়ানক চেহারায় প্রকাশ পেত। পরে সেও সান্তার মতো এক শুভ চরিত্রে পরিণত হয়। ইতালিতে (Italy) ‘লা বেফানা (La Befana)’ নামের এক ডাইনির গল্প প্রচলিত আছে, যে ঝাড়ুতে চড়ে উড়ে গিয়ে চিমনি বেয়ে শিশুদের জন্য উপহার রেখে আসে।

ক্রিসমাস উদযাপনের ইতিহাস

ইউরোপে (Europe) মধ্যযুগে ক্রিসমাস (Christmas) অনিয়মিতভাবে পালিত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে আমেরিকা (America), আফ্রিকা (Africa) ও এশিয়া (Asia) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার সময় এটি আরো সুপ্রতিষ্ঠিত উৎসবে পরিণত হয়।

প্রথমদিকে, মধ্যযুগে (Middle Ages) ডিসেম্বরের ক্রিসমাস দিনটিকে কখনো কখনো ছাপিয়ে যেত জানুয়ারির ৬ তারিখের ‘এপিফানি (Epiphany)’—যেখানে ম্যাজাই (Magi) বা জ্ঞানী ঋষিদের যিশুকে উপহার দেওয়ার ঘটনা স্মরণ করা হতো। স্পেন (Spain) এখনো ৬ জানুয়ারিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করে; ঐ দিনটি “তিন রাজা” বা “তিন জ্ঞানী ঋষির দিন” হিসেবে পরিচিত।

তবে আস্তে আস্তে ২৫শে ডিসেম্বরের ক্রিসমাস প্রধান উৎসবে পরিণত হয়। ইউরোপের রাজা ও সম্রাটরা বড় আয়োজনে এই দিনটি উদযাপন করতেন। যেমন, ইংল্যান্ডের (England) রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড (King Richard II) ১৩৭৭ সালে যে ক্রিসমাস ভোজের আয়োজন করেন, সেখানে ২৮টি গরু ও ৩০০টি ভেড়া খাওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। সেই সময় উপহার বিনিময় সাধারণত পরিবারের মধ্যে নয়, বরং যাদের মধ্যে আইনি সম্পর্ক আছে—যেমন জমিদার ও প্রজাদের মধ্যে—তাদের মধ্যে বেশি প্রচলিত ছিল। বড় বড় রাজোৎসবের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্রিসমাস উদযাপনের আগ্রহ বাড়তে থাকে।

ধর্মীয় সংস্কারের সময়—১৬ ও ১৭ শতকে (Reformation period)—অনেক প্রোটেস্ট্যান্ট (Protestant) ২৪ বা ২৫ ডিসেম্বর উপহার বিনিময়ের রীতি চালু করেন এবং উপহার বিলি করার জন্য সান্তার মতো নতুন চরিত্র “তৈরি” করেন। কিছু সময়ের জন্য কঠোর পিউরিটান (Puritan) মনোভাবের কারণে ক্রিসমাস নিষিদ্ধ বা সীমিত হওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে সেসব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অবশেষে উনবিংশ শতকে (19th century) ইংল্যান্ডে ক্রিসমাস ডে (Christmas Day) সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষিত হয়। জার্মানিতে (Germany) জন্মগ্রহণকারী ইংলিশ রানি শার্লট (Queen Charlotte) তখন রাজপরিবারে ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) ব্যবহারের প্রচলন শুরু করলে সেটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৪৮ সালের রাজপরিবারের ক্রিসমাস ট্রি-সহ একটি চিত্র এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নিদর্শন।

অন্যান্য ধর্মে ক্রিসমাসের বিকল্প

যদিও ক্রিসমাস (Christmas) মূলত খ্রিস্টানদের (Christianity) প্রধান উৎসব, শীতের শেষ ভাগে বা বছরের শেষ দিকে বহু ধর্মেই নানা উৎসব পালন করা হয়। যেমন—

  • ইহুদিরা (Jewish) পালন করে হানুকা (Hanukkah), যাকে “আলো উৎসব” (Festival of Lights) বলা হয়। এটি আট দিন ধরে চলে, তবে তারিখ হিব্রু (Hebrew) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বদলে যায়।
  • মুসলিমরা (Muslim) রমজান শেষে ঈদ-উল-ফিতর (Eid al-Fitr) উদযাপন করেন। যদিও এটি ডিসেম্বরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়; হিজরি মাস অনুসারে তারিখ পরিবর্তিত হয়।
  • হিন্দু ধর্মে (Hinduism) ২৫শে ডিসেম্বর কৃষ্ণের (Krishna) জন্মদিন হিসেবে গণ্য করার ঐতিহ্য আছে, যদিও এটি অনেকাংশে আঞ্চলিক ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে।
  • আফ্রিকান-আমেরিকান সম্প্রদায়ে (African-American) ‘কওয়ানজা (Kwanzaa)’ নামে একটি সাংস্কৃতিক উৎসব ২৬শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সাতদিন ধরে চলে।

অনেক অখ্রিস্টানরাও (Non-Christian) ক্রিসমাসের সেক্যুলার (secular) দিকটি, যেমন ক্রিসমাস ট্রি ও উপহার বিনিময়, উদযাপন করে থাকেন। আসলে ধর্মীয় বিধিনিষেধ না থাকলে অথবা সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের কারণে বহু দেশে ক্রিসমাস কোন না কোনভাবে পালন করা হয়।

সংক্ষিপ্তসার

ক্রিসমাস (Christmas) মূলত যিশু খ্রিস্ট (Jesus Christ)-এর জন্মোৎসব হিসেবে শুরু হলেও, এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ইউরোপের প্রাচীন প্যাগান (pagan) শীত উৎসবের নানা উপাদান—ক্রিসমাস ট্রি, মিসলটো (Mistletoe), ক্যারোলিং (Caroling) সহ বিভিন্ন ঐতিহ্য। ২৫শে ডিসেম্বর তারিখ নির্বাচন করার পেছনে রোমানদের (Romans) শীতকালীন সূর্যঅয়ন (Winter Solstice) উদযাপনের প্রভাব লক্ষণীয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ও সেক্যুলার দিক মিলে একটি বৈশ্বিক উৎসবে রূপ নিয়েছে ক্রিসমাস। সান্তা ক্লজ (Santa Claus) চরিত্রটি সেন্ট নিকোলাস (Saint Nicholas) নামে এক দানশীল সন্ন্যাসী থেকে উদ্ভূত হয়ে আজ বিশ্বের সর্বাধিক পরিচিত উপহার-প্রদায়ী চরিত্রে পরিণত হয়েছে।

পরিশেষে, বছর শেষের এই সময়টিতে মানুষ নানা কারণে একত্রিত হয়—ধর্মীয় বিশ্বাস হোক বা স্রেফ আনন্দ ও বন্ধুত্বের উপলক্ষ হোক। ক্রিসমাস ছাড়াও অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিন্ন উৎসব রয়েছে; তবুও এর মূল চেতনাই বন্ধুবান্ধব ও পরিবারসহ সবাইকে নিয়ে উদযাপন ও শুভেচ্ছা বিনিময়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.