Table of Contents
ভূমিকা
৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International) ইসরায়েলকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগ এনেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপকে প্রথমবারের মতো “গণহত্যা (genocide)” বলে আখ্যায়িত করলো কোনো বড় ধরনের মানবাধিকার সংস্থা। তাদের নতুন রিপোর্টকে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম “You Feel Like You Are Subhuman: Israel’s Genocide Against Palestinians in Gaza”। এতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল আনিয়েস ক্যালামার্ড (Agnes Callamard) এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ক তাদের গবেষক বুদুর হাসান (Budour Hassan) কথা বলেছেন।
ভিডিওটি শুরু হয় ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের (Yoav Gallant) একটি উদ্ধৃতির মাধ্যমে। তিনি বলেছিলেন:
“We are laying complete siege on Gaza. No electricity, no food, no water, no fuel. Everything is closed. We are fighting human animals and we act accordingly.”
তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে গাজার ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ (siege) আরোপের ঘোষণা স্পষ্ট হয়।
অবরুদ্ধ গাজায় “লাইভ-স্ট্রিমড” গণহত্যা (Genocide)
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরের এই আক্রমণের পর থেকে গাজায় যা ঘটছে, অনেকেই তাকে “প্রথম লাইভ-স্ট্রিমড (live-streamed) গণহত্যা” বলে অভিহিত করেছেন। দিন দিন এই নিধনযজ্ঞ বাড়ছে, কিন্তু বিভিন্ন দেশের সরকার কী করছে? ভিডিওতে প্রশ্ন তোলা হয় যে, “আপনার সরকার, আপনার রাজনৈতিক নেতারা কী করছেন এই গণহত্যা প্রতিরোধে?”
অ্যামনেস্টির মতে, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে গাজায় ধ্বংসাত্মক ও ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে। ৪৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। গাজায় প্রায় ২০ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। প্রচুর অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বেসামরিক জনগোষ্ঠীর কাছে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী ও জীবনরক্ষাকারী উপকরণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
গণহত্যা (Genocide) শব্দের আইনি সংজ্ঞা
গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৪৮ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ (United Nations) আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যার সংজ্ঞা দেন ও এটিকে আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে। কোনো ঘটনা গণহত্যা কি না, তা বোঝার জন্য দু’টি মূল বিষয় প্রমাণ করতে হয়:
- অন্যায় কর্মকাণ্ডের ধরন: গণহত্যা কনভেনশনে (Genocide Convention) বর্ণিত কমপক্ষে একটি নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত হতে হবে—যেমন জনসমষ্টির সদস্যদের হত্যা, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির সৃষ্টি, এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে ঐ জনগোষ্ঠী ধ্বংসের পথে এগোয় ইত্যাদি।
- ধ্বংসের অভিপ্রায়: কাজটি অবশ্যই কোনো জাতীয়, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভাষ্যমতে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় অন্তত তিনটি নিষিদ্ধ কাজ সংঘটিত হয়েছে:
- গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা (killing members of the group)।
- তাদের গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করা (causing serious mental or bodily harm)।
- এমন জীবনধারা বা পরিস্থিতি চাপিয়ে দেওয়া যা গোষ্ঠীর ধ্বংস ডেকে আনে (inflicting conditions of life calculated to bring about their physical destruction)।
এর উদাহরণ হিসেবে গাজায় বাড়ি-ঘর, কৃষিজমি, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা ধ্বংস করা, অপরিহার্য বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করা, অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বারবার গোষ্ঠীকে স্থানান্তরিত করা, এবং জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ-সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে, ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জেনেশুনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যেখানে ক্ষুধা, রোগব্যাধি ও মৃত্যুহারের বিপজ্জনক সমন্বয় তৈরি হয়েছে।
“ধ্বংসের অভিপ্রায়” (Intent to Destroy)
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভিডিওতে ৩…২…১ কাউন্টডাউন দিয়ে কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হয় যেগুলো ইসরায়েলি নেতারা বা কর্মকর্তারা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ:
“It’s an entire nation out there that is responsible. … It’s absolutely not true this rhetoric about civilians not aware, not involved.”
সেনা ও সরকারি কর্মকর্তাদের এমন জাতিবিদ্বেষী (racist), অমানবিক (dehumanizing) ও গণহত্যামূলক (genocidal) মন্তব্যকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার আহ্বান হিসেবে দেখা হয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে, তারা মোট ১০০টিরও বেশি মন্তব্য পর্যালোচনা করেছে, যার মধ্যে ২২টি সরাসরি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সামরিক অফিসারদের কাছ থেকে এসেছে। এদের অনেকেই গাজার বিস্তৃত অঞ্চলে “ভূমি পুড়িয়ে ফেলা (scorched earth)” এবং “কোনো ভবিষ্যৎ নেই”—এই ধরনের বার্তা দিচ্ছেন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (Israeli soldiers) ভিডিওতে দেখা গেছে, তারা উপাসনালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিজমি ধ্বংস নিয়ে উল্লাস করছে। এসব ঘটনায় এই প্রশ্ন সামনে আসে: “স্পষ্টতই এটি ধ্বংসের উদ্দেশ্য নিয়েই করা হচ্ছে কি না?” অ্যামনেস্টি বলছে, নিরবচ্ছিন্নভাবে ১৭ বছর ধরে গাজা অবরোধ (blockade) এবং সামগ্রিকভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর আরোপিত বর্ণবৈষম্যমূলক (apartheid) ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে এটিকে গণহত্যার (genocide) সুস্পষ্ট প্রমাণ বলে উল্লেখ করা যেতে পারে।
মর্মান্তিক মানবিক বিপর্যয় (Humanitarian Catastrophe)
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, গাজায় আনুষঙ্গিক হারে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, পরিকাঠামোর ধ্বংস, অগণিত পরিবারকে নিজের হাতে সন্তানদের মৃতদেহ উদ্ধারের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা—সবকিছু মিলে এক ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা (healthcare) ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
তাদের মতে, এই অবস্থা বন্ধ করতে হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে হবে—অস্ত্র স্থানান্তর (transfer of weapons) বন্ধ করতে হবে, কারণ এসব অস্ত্রই সরাসরি শিশু-সহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে। যুদ্ধাপরাধী (war criminals) যেন নির্বিঘ্নে বেঁচে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিচারব্যবস্থাকে (National tribunals, Universal jurisdiction, International Criminal Court) সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় করতে হবে।
ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান ও মার্কিন প্রতিক্রিয়া
২৯৬ পৃষ্ঠার বিশদ রিপোর্টে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে অভিযোগ এনেছে, তা ইসরায়েল সরকার সম্পূর্ণ “মিথ্যা ও বানোয়াট (fabricated and based on lies)” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েলের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Deputy Minister of Foreign Affairs) শ্যারন হ্যাস্কেল (Sharren Haskel) বলেছেন,
“Amnesty International thinks that you’re stupid … They actually altered and changed the legal terms and definition for what is a genocide because Israel doesn’t meet those criteria.”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (U.S. State Department) মুখপাত্রও বলেছেন যে, তারা অ্যামনেস্টির রিপোর্টের সঙ্গে “অসন্তুষ্ট” এবং “গণহত্যার অভিযোগ (genocide allegations) ভিত্তিহীন” বলে মনে করেন।
অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে বুদুর হাসান (Budour Hassan)
রিপোর্টটির বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলবিষয়ক গবেষক বুদুর হাসান রামাল্লা (Ramallah, Occupied West Bank) থেকে যুক্ত হন। তিনি বলছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়া নতুন নয়। বরং প্রশ্ন হওয়া উচিত, “এতদিন সময় লাগলো কেন অ্যামনেস্টির এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে?” কারণ, গণহত্যার সংজ্ঞাকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার জন্য তারা ব্যাপক তথ্য-উপাত্ত ও বিশ্লেষণের আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (International Court of Justice) গ্রহণযোগ্য বিচারধারা (jurisprudence) অনুযায়ী তারা প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন। মাটিতে থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত, স্যাটেলাইট চিত্র, প্রকাশ্য সূত্রে (publicly available evidence) পাওয়া তথ্য সব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ইসরায়েল নিঃসন্দেহে ফিলিস্তিনিদের হত্যায় লিপ্ত এবং এমন সব ব্যবস্থা নিচ্ছে যা গোষ্ঠীটির ধ্বংস ডেকে আনে।
এরপরের ধাপ ছিল এই প্রশ্ন: “এসব কর্মকাণ্ড কি ইচ্ছাকৃতভাবে (specific intent) ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে পরিচালিত?” এক্ষেত্রে তারা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আক্রমণাত্মক ও পুনরাবৃত্ত হামলা, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, বেসামরিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা এবং সর্বোপরি বিভিন্ন ইসরায়েলি কর্মকর্তার প্রকাশ্য উসকানিমূলক মন্তব্য পর্যালোচনা করেছেন।
মার্কিন প্রেস ব্রিফিংয়ে বিতর্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের (State Department) মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল (Vedant Patel) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট বলেন যে, “গণহত্যার অভিযোগ ভিত্তিহীন (unfounded)।” যদিও প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন তোলেন যে গাজায় প্রায় ২০ লাখ মানুষকে জোর করে সরিয়ে নেওয়া, তথাকথিত “নিরাপদ আশ্রয়” হিসেবে নির্দেশিত স্থানে বোমাবর্ষণ করা, কৃষি খাত থেকে শুরু করে অবকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা—এগুলো আর কতটা ঘটলে একে গণহত্যা বলে ঘোষণা করা হবে।
তিনি যুক্তি দেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই অভিযোগ সমর্থন করে না। সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন ছিল—আরও কত মানুষকে নির্মূল করতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে গণহত্যা বলে মেনে নেবে? কিন্তু এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের দায়
বুদুর হাসান বলেন, “একটি মাত্র দেশ যা ইসরায়েলকে থামাতে পারত, তা হলো যুক্তরাষ্ট্র। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এত ক্ষমতা ও প্রভাব আছে যে, তারা চাইলে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ (arm supply) বন্ধ করতে পারত।” কিন্তু বরং তারা ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রকেও গণহত্যার সহযোগী (complicity) হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার (Rwanda) গণহত্যার সময়ও যুক্তরাষ্ট্র “গণহত্যা” শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছিল, যাতে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের হস্তক্ষেপের বাধ্যবাধকতা তৈরি না হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমা চায়। বুদুর হাসান মনে করিয়ে দেন, “এখনও যখন এই ঘটনা চলছে, তারা অস্বীকার করছে; কিন্তু ভবিষ্যতে তারা হয়তো বলবে – ‘আমরা দেখেও কিছু করতে পারিনি, আমরা দুঃখিত।’” কিন্তু ততদিনে হাজার হাজার মানুষ নিধনযজ্ঞের শিকার হবেন।
কেন “গণহত্যা (Genocide)” সংজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ
গণহত্যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (International Criminal Court) অধীনে একটি গুরুতর অপরাধ। একে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য (absolutely prohibited) বলা হয়, বিশেষত সশস্ত্র সংঘাত চলাকালীনও এটা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। “গণহত্যায় সহযোগীতা (complicity) করাও গণহত্যার কনভেনশনের অধীনে অপরাধ,” বলে উল্লেখ করেন বুদুর হাসান। অর্থাৎ যারা ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে, তারাও এই অপরাধের অংশীদার হতে পারে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে (Occupied West Bank) চলমান পরিস্থিতি
রামাল্লায় অবস্থানরত বুদুর হাসান জানিয়েছেন, গাজায় সংঘটিত ঘটনার বাইরেও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনী ও প্রশাসন ভূমি জবরদখল ও দখলদারির (annexation) প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে সামরিক আদেশ জারি করে বা “স্টেট ল্যান্ড (state land)” হিসেবে ঘোষণা করে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। অক্টোবরের পরে পশ্চিম তীরে প্রায় ৩০০ পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের মতে, গাজায় গণহত্যা আর পশ্চিম তীরে ধীর গতির (slow but systematic) উচ্ছেদ—দুটিই ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলার লক্ষ্যেই করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য ও ন্যায়বিচারের দাবি
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই রিপোর্ট তৈরির সময় ২২ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। কেউ কেউ তাদের পুরো পরিবার, এমনকি সব সন্তানকে হারিয়েছেন। এক পিতা জানিয়েছেন, তিনি সহানুভূতি চান না—তিনি সন্তানদের ফিরে পেতে চান। যদিও তা সম্ভব নয়, অন্তত যারা এই গণহত্যা চালাচ্ছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক—এই দাবি তাদের। কেউ কেউ অসংখ্যবার স্থানান্তরিত হয়েছেন, বিশুদ্ধ পানি বা সামান্য রুটি পেতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।
বুদুর হাসান বলেন, “এঁরা আমাদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, কারণ অন্তত কেউ যেন তাদের কষ্টের কথা শুনে, সাক্ষ্য সংরক্ষণ করে এবং এ থেকে আইনি পদক্ষেপের পথ তৈরি করে।”
শেষকথা (Conclusion)
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এই বিস্তৃত (২৯৬ পৃষ্ঠার) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এই ধ্বংসযজ্ঞ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা বহু দশকের বর্ণবৈষম্য (apartheid), অবরোধ (blockade) ও দখলদারি (occupation) নীতির ধারাবাহিক ফল। আর এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও অনেক রাষ্ট্রের সক্রিয় বা নীরব সমর্থন রয়েছে।
শিরোনাম “You Feel Like You Are Subhuman: Israel’s Genocide Against Palestinians in Gaza” শীর্ষক এই রিপোর্টে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, বিশ্ববাসীকে এখনই সোচ্চার হতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ যে যে দেশ ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা জোগাচ্ছে বা কূটনৈতিক সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের থামাতে হবে। এই অপরাধের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর, যখন অ্যামনেস্টির এই বক্তব্য আলোচনায় এসেছে, তখন ইসরায়েল সরকার রিপোর্টটিকে পুরোপুরি “মিথ্যা” বলে দেগে দিয়েছে। অপরদিকে আমেরিকা ও অন্যান্য বড় শক্তিশালী রাষ্ট্র সরাসরি “গণহত্যা” শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
ফলে, ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের ওপরই নির্ভর করছে গাজার ভাগ্য। যত দিন ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ ও মানবিক বিপর্যয় চলবে, তত দিন এই বিতর্ক ও প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরাসরি বলছে, “ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা (genocide) চালাচ্ছে।” এর বিপরীতে ইসরায়েল সরকার ও যুক্তরাষ্ট্র — উভয়েই এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছে। কিন্তু গাজায় ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের আর্তচিৎকার, বেঁচে থাকার লড়াই এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা, সব মিলিয়ে অ্যামনেস্টির এ বক্তব্যকে সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
রিপোর্টটি ডাউনলোড করুন এখান থেকে – Israel/Occupied Palestinian Territory: ‘You Feel Like You Are Subhuman’: Israel’s Genocide Against Palestinians in Gaza – Amnesty International
Leave a Reply