Table of Contents
ভূমিকা
তিন দশকের বিরতির পরে, যুক্তরাষ্ট্র (United States) আবারও পারমাণবিক অস্ত্র (Nuclear Weapons) তৈরি করছে। শুধু মিসাইল (Missiles) আর বোমা (Bombs) নয়, তৈরি করা হচ্ছে নতুন সাবমেরিন (Submarines), নতুন এয়ারপ্লেন (Airplanes) এবং সেগুলো উৎক্ষেপণের জন্য নতুন ভূগর্ভস্থ সাইলো (Underground Silos)। আগামী তিন দশকে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে—ফলে প্রায় পুরোনো সম্পূর্ণ শীতল যুদ্ধের (Cold War) অস্ত্র ভাণ্ডারকে প্রতিস্থাপন করা হবে।
তুলনার জন্য, আসল ম্যানহাটন প্রকল্প (Manhattan Project)–এর খরচ ছিল প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) সমন্বয় করা হয়েছে। অন্যভাবে বললে, পরবর্তী ৩০ বছরের জন্য আমেরিকান জনগণ প্রতি পাঁচ মাসে আরেকটি ম্যানহাটন প্রকল্প-সমমানের খরচ দেবে।
শীতল যুদ্ধের অস্ত্রের সংখ্যা ও পরবর্তী অবস্থা
শীতল যুদ্ধের (Cold War) শেষ ভাগে, যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন (Soviet Union) মিলে মোট ৬০,০০০-এর বেশি পারমাণবিক অস্ত্র জমিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার সময় থেকে সংখ্যা কমতে শুরু করে, ২০০৯ সালে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১১,০০০-তে। ওই বছর, নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (Barack Obama) পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের ডাক দেন, যার জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (Nobel Peace Prize) পান। পরের বছর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া (Russia) “নিউ স্টার্ট (New Start)” নামে একটি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (Arms Control Treaty) স্বাক্ষর করে, যা প্রতিটি দেশের সক্রিয়ভাবে মোতায়েনকৃত (Actively Deployed) ওয়ারহেড (Warheads)–এর সংখ্যা সীমিত করে। তখন অনেকের কাছেই মনে হয়েছিল যে পারমাণবিক অস্ত্র অচিরেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে। বেশির ভাগ মানুষের ভাবনাতেই বিষয়টি সেখানেই আটকে ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই অস্ত্রগুলো ধীরে ধীরে আবারও ফিরে আসছে। রাশিয়ার সাথে সেই চুক্তির অনুমোদন পেতে (Ratify) ওবামা রিপাবলিকান (Republican) সেনেটরদের সঙ্গে এক সমঝোতায় যান—যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভাণ্ডারের আধুনিকায়নের (Modernize) জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়। আর একবার যখন এই দরজা খুলে গেল, সেটিকে আর বন্ধ করা যায়নি। বিলিয়ন থেকে খরচ গিয়ে দাঁড়াল ট্রিলিয়নে (Trillions)।
পুরোনো অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকায়ন: ‘প্রয়োজনীয় টিউন-আপ’ না অপচয়?
প্রাথমিক যুক্তি ছিল যে, অনেক পারমাণবিক অস্ত্র ৩০, ৪০, এমনকি ৫০ বছর আগের তৈরি—ফলে এগুলো নানাভাবে মেরামত বা আধুনিকায়ন করা দরকার। যেমন ধরুন প্লুটোনিয়াম পিটস (Plutonium Pits)। প্রতিটি পারমাণবিক অস্ত্রের কেন্দ্রভাগে (Inside Every Nuclear Weapon) থাকে বলিং বলের (Bowling Ball) আকারের একটি সংকুচিত প্লুটোনিয়াম গোলক, যেটি বিস্ফোরণের সূচনা ঘটায়। জানা যায়, প্লুটোনিয়াম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যায়, কিন্তু সঠিকভাবে কতটা সময় লাগে তা অজানা। ২০০৭ সালে একদল স্বাধীন বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখান যে এই পিটস কমপক্ষে ১০০ বছর স্থায়ী হতে পারে। পরবর্তীতে তারা আরও পরীক্ষায় দেখতে পান ১৫০ বছর বয়সী প্লুটোনিয়ামে (Plutonium) তেমন কোনো অপ্রত্যাশিত ত্রুটি দেখা যায়নি।
তবু যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রতি বছরে প্রায় ৮০টি নতুন প্লুটোনিয়াম পিটস বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে, যার সম্ভাব্য খরচ ১৮ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার। এবং এটি হচ্ছে কেবল শুরু।
নিউক্লিয়ার ট্রায়াড (Nuclear Triad): তিন স্তম্ভের একযোগে বদল
আমেরিকার নিউক্লিয়ার ট্রায়াডের তিনটি অংশ রয়েছে—বিমান (Air), সমুদ্র (Sea) এবং স্থল (Land)। এখন এই তিনটিকে একই সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
১. বিমান বাহিনী (Air Leg): যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী (US Air Force) নর্থ ডাকোটা (North Dakota), লুইজিয়ানা (Louisiana), এবং মিসৌরি (Missouri)–এই তিনটি ঘাঁটি (Bomber Bases) থেকে তাদের পারমাণবিক বোমারু বিমান (Nuclear Bomber) পরিচালনা করে। সেখানে আছে প্রায় ৬৬টি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বিমান, যার মধ্যে রয়েছে B52 এবং B2 বোমারু বিমান (Bombers)। এর মধ্যে B52 বিমানগুলো সম্পূর্ণরূপে নতুন B21 মডেলে প্রতিস্থাপিত হবে, আর B2 বিমানগুলোর ইঞ্জিন (Engines) পুনর্বিন্যাস বা উন্নত করা হবে।
২. নৌবাহিনী (Sea Leg): যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর (US Navy) অধীনে ১৪টি ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (Ballistic Missile Submarines) রয়েছে—এর মধ্যে আটটি প্রশান্ত মহাসাগরে (Pacific), ওয়াশিংটন (Washington) অঙ্গরাজ্যে অবস্থান করছে, আর ছয়টি আটলান্টিকে (Atlantic), জর্জিয়া (Georgia) অঙ্গরাজ্যে রয়েছে। এই ওহাইও-ক্লাস (Ohio Class) সাবমেরিনগুলোকে এখন কলাম্বিয়া-ক্লাস (Columbia Class) সাবমেরিন দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হবে, যার সম্ভাব্য খরচ অন্তত ১১২ বিলিয়ন ডলার।
৩. স্থল বাহিনী (Land Leg): মন্টানা (Montana), নর্থ ডাকোটা (North Dakota), ওয়াইওমিং (Wyoming), কলোরাডো (Colorado) এবং নেব্রাস্কা (Nebraska) জুড়ে রয়েছে প্রায় ৪৫০টি সুরক্ষিত খোলা জায়গা, যেগুলো দেখলে সাধারণ কোনো বেড়া দেওয়া ভূমির মতো মনে হয়। কিন্তু এর নিচে রয়েছে সাইলো (Silos), যার ভেতরে রাখা আছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল (Intercontinental Ballistic Missiles)। এগুলোকে বলা হয় মিনিটম্যান (Minuteman) মিসাইল, কারণ ৩০ মিনিটের কম সময়ে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু সেটাও নাকি যথেষ্ট নয়। বিমান বাহিনী (Air Force) এখন সবকিছু—মিসাইল, সাইলো, নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র (Command Centers) ও তাদের সাথে সংযুক্ত ৭,৫০০ মাইল দীর্ঘ ভূগর্ভস্থ ক্যাবল (Underground Cables)—সবই আপগ্রেড (Upgrade) করছে।
সত্যিকারের প্রয়োজন কী?
এমন একটি যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, এত বড় ঝুঁকির বিষয় যখন, তখন কিছু প্লুটোনিয়াম পিটস নতুন করে বানানোর পরিকল্পনা খারাপ নয়—এতে আমরা বিশ্বকে দেখাতে পারি যে ৩০ বছর বিরতির পরও আমরা এগুলো বানাতে সক্ষম। যদি বিদ্যমান পিটস সময়ের আগে নষ্ট হতে শুরু করে, তবে এটাই হবে আমাদের ‘ব্যাকআপ প্ল্যান (Backup Plan)’। কিন্তু বছরে ৮০টির মতো প্লুটোনিয়াম পিটস তৈরির যৌক্তিকতা বোঝা কঠিন—এটি বিরাট এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল মাত্রার পুনরাবৃত্তি (Redundancy) বলে মনে হয়।
প্রায় সব আপগ্রেড নিয়েই এমন কথা বলা যায়। কারণ বর্তমানে যেকোনো সময়ে, যে-কোনো দিনে, যুক্তরাষ্ট্রের ১,৭০০ পারমাণবিক ওয়ারহেড সক্রিয় (Deployed) অবস্থায় থাকে—কয়েক ডজন সাবমেরিন সমুদ্রের গভীরে, কয়েকশো মিসাইল সাইলো সঙ্গে সঙ্গে উৎক্ষেপণের (Launch) জন্য প্রস্তুত, আর ডজন ডজন বোমারু বিমান ৫০,০০০ ফুট উচ্চতায় অদৃশ্যভাবে উড়তে সক্ষম। প্রতিটি ওয়ারহেড একটি মাঝারি আকারের শহর ধ্বংস করতে পারে, আর প্রতিটি সাবমেরিন এবং বোমারু বিমানে একাধিক ওয়ারহেড থাকে। অর্থাৎ, আমাদের প্রতিপক্ষ যদি আগে আক্রমণ করে, আমরা পাল্টা আঘাত করার সক্ষমতা অনেক আগেই নিশ্চিত করে রেখেছি। ফলে এই বিশাল আগ্নেয়াস্ত্র-সম্ভার আপগ্রেডের বাড়তি সুবিধা কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাজেট, সময়সীমা ও ঝুঁকি
আপগ্রেডগুলো যদি কেবলমাত্র অপচয় (Wasteful) হতো, তাহলে এক কথা ছিল। কিন্তু আসলে সবকিছুই সময়ের চেয়ে পিছিয়ে (Behind Schedule) আর বাজেটের চেয়ে বেশি খরচে (Over Budget) চলছে। উদাহরণস্বরূপ, নতুন আইসিবিএম (ICBMs)–এর খরচ ২০২০ সালের হিসেবের থেকে ৮১% বেড়ে এখন প্রায় ১৪১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্লুটোনিয়াম পিটস তৈরির বাজেট ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনগুণের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে অর্ধ বিলিয়ন ডলারের অপচয়ের কারণ ছিল একটি ছাদের উচ্চতা প্রয়োজনের তুলনায় ১৩ ফুট কম ডিজাইন করা হওয়া!
এছাড়া এই আধুনিকায়ন শুধু অপচয় নয়, বিপজ্জনকও (Dangerous)। নিউক্লিয়ার ট্রায়াডের স্থলভাগ (Land Leg) নিয়ে ভাবুন। একসময় নিশ্চল মিসাইলগুলোকে যৌক্তিক মনে করা হতো “টিকে থাকার” (Survivability) কারণে—সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়তো এত বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে থাকা সবগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে পারবে না, ফলে পাল্টা আক্রমণের ক্ষমতা অটুট থাকবে। কিন্তু আজকের দিনে প্রযুক্তি অনেক উন্নত, আর আমাদের সাবমেরিন তো বটেই, স্টেলথ (Stealth) বোমারু বিমানও অনেক বেশি কার্যকর ও ব্যয়সাশ্রয়ীভাবে একই কাজ করতে পারে। সমুদ্রের তলদেশে লুকিয়ে থাকা মাত্র একটি সাবমেরিনকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করা গুগল আর্থে (Google Earth) স্পষ্ট দেখা যায় এমন ৪০০টি সাইলো ধ্বংস করার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।
এখন অনেকে বলছেন, এই স্থলমুখী মিসাইলগুলো রাখার কারণ হলো এগুলো ‘নিউক্লিয়ার স্পঞ্জ (Nuclear Sponge)’ হিসেবে কাজ করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে চাইলে শত্রুপক্ষকে আগে নিজেদের প্রায় ৪০০ অস্ত্র (Warheads) ব্যয় করতে হবে এসব সাইলো ধ্বংস করতে। এটা কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক চিন্তা নয়, কারণ এর ফলে লাখো বা মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হবার সম্ভাবনা রয়েছে— এমনকি যদি কৌশলিকভাবে “কাজও” করে। আপনি হয়তো বিশ্বাস করতে পারেন যে ট্রায়াডের বাকি দুই পা—সাবমেরিন আর বোমারু বিমান—দিয়েই পাল্টা আক্রমণের নিশ্চয়তা রয়েছে, সেক্ষেত্রে আইসিবিএমগুলো পুরোপুরি অর্থহীন বিশাল এক ব্যয়। অথবা আপনি বিশ্বাস করতে পারেন যে আইসিবিএম দরকারি, সেক্ষেত্রে এগুলো আসলে দেশের অভ্যন্তরে পারমাণবিক হামলার লক্ষ্যবস্তু তৈরি করছে। আর যদি তাতেও কোনো ‘মূল্য’ থেকে থাকে, সেটা আবার সংঘাতের সময় একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনাপ্রবণ সম্ভাবনাও তৈরি করে। কেননা সাবমেরিন বা বোমারু বিমান মাঝপথে ফিরে আসতে পারে, কিন্তু একবার মিসাইল উৎক্ষেপণ (Launch) হয়ে গেলে আর থামানোর উপায় থাকে না।
শীতল যুদ্ধের তুঙ্গ মুহূর্তে (Heat of the Cold War), সময়ের (Speed) বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—কারণ যে কোনও মুহূর্তে পারমাণবিক আক্রমণের ঝুঁকি খুব বেশি ছিল। কিন্তু আজকের দিনে সেই ‘দ্রুততা’ বরং বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা ও প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া: আবারও অস্ত্র প্রতিযোগিতা (Arms Race)?
নতুন মিসাইল, সাবমেরিন বা বোমারু বিমান একা হয়তো সরাসরি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War) সূচনা করবে না। কিন্তু প্রতিপক্ষের (Adversaries) কাছে এ যেন একটা বড় ধরনের উসকানি হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত যেসব সরকারি প্রকল্প নিছক অপচয়, সেগুলো ততটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু এই ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের (Project) ক্ষেত্রটি আলাদা। শুরুতে এটিকে বলা হয়েছিল, “পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, প্রতিরোধ ক্ষমতা (Deterrence) বজায় রাখা এবং পারমাণবিক সাম্যাবস্থা (Nuclear Equilibrium) স্থিত রাখা।” কিন্তু এর মাপ-পরিসর যত বেড়েছে, প্রতিপক্ষের কাছে ততই এটি হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। পারমাণবিক প্রতিরোধ (Deterrence) সর্বদাই ধারণার ওপর নির্ভর করে, অর্থাৎ অন্যরা কীভাবে বিষয়টি দেখে।
ফলে আমরা হয়তো এমন এক পরিস্থিতিতে আটকে গেছি যেখানে এই নতুন অস্ত্রগুলো আমাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করছে না; বরং রাশিয়া, চীন (China) আর উত্তর কোরিয়া (North Korea)-এর প্রতিক্রিয়ার (Reaction) কারণে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্তত এটুকু পরিষ্কার যে, ২ ট্রিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প বিশ্বকে দেখাচ্ছে, আমরা পারমাণবিক অস্ত্রকে (Nuclear Weapons) শিগগিরই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে দিচ্ছি না। এমন পরিস্থিতিতে মস্কো (Moscow), বেইজিং (Beijing) বা পিয়ংইয়ং (Pyongyang) যদি এই ঘটনায় মনোযোগ না দিত, সেটাই অস্বাভাবিক হতো। বাস্তবে, তারা খুব ভালোভাবেই নজর রাখছে।
আমাদের অস্ত্রভাণ্ডার উন্নত করার পর থেকে শত্রুপক্ষেরাও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাশিয়া, বিশেষ করে ইউক্রেনের (Ukraine) সাথে যুদ্ধের সময় পারমাণবিক হুমকি (Nuclear Blackmail) দিয়েছে, এমনকি তাদের কিছু পারমাণবিক অস্ত্র বেলারুশে (Belarus) স্থানান্তরিত করেছে। তারা নতুন ধরনের অস্ত্রও তৈরি করছে এবং নিউ স্টার্ট (New Start) চুক্তি থেকে পুরোপুরি সরে গেছে—ফলে ২০২৬ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ইচ্ছেমতো পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে। অন্যদিকে চীনের মজুদ এখনো রাশিয়া বা আমেরিকার তুলনায় কম হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেটা দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
এককভাবে মস্কো, বেইজিং কিংবা ওয়াশিংটন কেউই হয়তো স্বীকার করে না যে তারা আগ্রাসীভাবে অস্ত্র বাড়াচ্ছে। তারা বলবে, “উদীয়মান হুমকি মোকাবিলায়” আমরা শুধু “পুনরায় প্রতিরোধ ক্ষমতা” (Restoring Deterrence) সৃষ্টি করছি। কিন্তু সকলেই যদি একসঙ্গে “পুনরায় প্রতিরোধ ক্ষমতা” সৃষ্টির কথা বলে, সেটাকেই আমরা অস্ত্র প্রতিযোগিতা (Arms Race) বলে থাকি।
উপসংহার
এই হলো সামগ্রিক চিত্র। আমাদের সামনে ৩০ বছরের এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি অংশে বিশাল বাজেট, সময়সীমা আর জটিলতার বোঝা যুক্ত হচ্ছে। এদিকে, প্রতিপক্ষেরাও নিশ্চুপ নেই; তারাও নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশে মনোযোগ বাড়িয়েছে। ইতিহাস বলে, পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা কারও জন্যই স্বস্তিকর নয়—এতে শুধু ব্যয় কিংবা দুর্ঘটনার ঝুঁকিই নয়, বরং গোটা বিশ্বের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ে।
তথ্যসূত্র
- https://www.foreignaffairs.com/china/crumbling-nuclear-order
- https://www.ft.com/content/561d16ee-5dd5-4ee6-8c42-63372040b37b
- https://www.gao.gov/assets/gao-23-105698.pdf
- https://www.scientificamerican.com/article/the-u-s-s-plans-to-modernize-nuclear-weapons-are-dangerous-and-unnecessary/
- https://www.scientificamerican.com/article/behind-the-scenes-at-a-u-s-factory-building-new-nuclear-bombs/
- https://inkstickmedia.com/does-the-us-need-new-plutonium-pits/
- https://thebulletin.org/2023/04/dealing-with-a-debacle-a-better-plan-for-us-plutonium-pit-production/
- https://armscontrolcenter.org/wp-content/uploads/2021/08/Plutonium-Pit-Production.pdf
- https://www.gao.gov/assets/d24106740.pdf
- https://www.armscontrol.org/act/2021-03/focus/enough-already-no-new-icbms
- https://warontherocks.com/2024/02/how-many-sentinel-missiles-does-the-united-states-need/
- https://fnl.mit.edu/may-june-2021/dont-renew-the-icbm-force-eliminate-it/
- https://armscontrolcenter.org/factsheet-the-nuclear-triad/
- https://thebulletin.org/premium/2024-05/united-states-nuclear-weapons-2024/#post-heading
- https://www.tandfonline.com/doi/epdf/10.1080/00963402.2024.2339170
- https://www.stimson.org/2024/americas-nuclear-weapons-quagmire/
- https://www.popularmechanics.com/military/weapons/a60255563/w93-nuclear-bomb/
- https://www.foreignaffairs.com/china/chinas-misunderstood-nuclear-expansion
- https://www.foreignaffairs.com/united-states/time-rethink-america-nuclear-strategy
- https://www.foreignaffairs.com/united-states/why-america-stands-lose-if-it-resumes-nuclear-testing
- https://www.foreignaffairs.com/united-states/us-nuclear-arsenal-can-deter-both-china-and-russia
- https://www.wsj.com/politics/national-security/u-s-should-prepare-to-expand-its-nuclear-forces-expert-panel-says-3e7b8f42
- https://www.armscontrol.org/issue-briefs/2024-06/2024-presidential-race-and-nuclear-weapons-threat
- https://www.ft.com/content/3ad88a65-cada-4f8a-a28a-70ad80f037e6
- https://www.nytimes.com/interactive/2024/10/10/opinion/nuclear-weapons-us-price.html
- https://thebulletin.org/2021/02/why-is-america-getting-a-new-100-billion-nuclear-weapon/
Leave a Reply