Table of Contents
দ্য পপুলেশন কলাপ্স: কেন এখন আর কেউ সন্তান নিতে চায় না? (২৪ নভেম্বর, ২০২৪)
জনসংখ্যা হ্রাসের হুমকি
১৭০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৬০০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়নে পৌঁছায়। কিন্তু তার পরের ২০০ বছরে এই সংখ্যা ৫ বিলিয়ন পেরিয়ে যায়। ১৯৬১ সালে মারিনার এস. একলস (Marriner S. Eccles), যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের (Federal Reserve System) বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন, তিনি বিশ্বের জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হারের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে এটি বিশ্বের সামনে দাঁড়ানো সবচেয়ে জরুরি সমস্যা। এটি এমনকি পারমাণবিক বা হাইড্রোজেন বোমার চেয়েও বেশি বিস্ফোরক প্রভাব ফেলতে পারে।
আজ আমরা অনেকেই টের পাচ্ছি আসল সত্যটা কী: আমাদের পৃথিবীর সামনে সবচেয়ে বড় হুমকি আসলে জনসংখ্যার আধিক্য (overpopulation) নয়, বরং জনসংখ্যার স্বল্পতা (underpopulation)। গত বছর সারা বিশ্বে মাত্র প্রায় ৭০০,০০০ শিশু জন্মেছিল। এভাবে চলতে থাকলে অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যা কর্মরত মানুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। এমনকি ২০৫০ সালের মধ্যে চীনের মোট জনসংখ্যা ৬৫০ মিলিয়নের নিচে নেমে যেতে পারে।
হয়তো আগামী ২০ বছরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে জনসংখ্যা হ্রাস (population collapse)। আমরা মানব ইতিহাসের একটি মৌলিক পরিবর্তনের সূচনায় রয়েছি। কীভাবে এমনটা ঘটলো? এটা কি সত্যিই এত বড় সমস্যা? পৃথিবীতে মানুষ কমে গেলে কি পৃথিবীর পরিবেশের জন্য ভালো হবে না? আর মানবজাতির ভবিষ্যৎ তাহলে কী দাঁড়াবে? এই লেখায় এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
কীভাবে আমরা এই অবস্থায় এলাম?
বিশ্বের জনসংখ্যা ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু করে অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধির মুখোমুখি হয়। অর্থনীতিবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এই সময় থেকেই পল আরলিখ (Paul Ehrlich) নামের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক ১৯৬৮ সালে লেখেন “দ্য পপুলেশন বম্ব (The Population Bomb)” নামে একটি বই। সেই বইয়ের প্রস্তাবনায় প্রথম লাইনেই ছিল মোটামুটি এমন ধারণা: “সমস্ত মানবজাতিকে খাওয়ানোর যুদ্ধ শেষ, ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে শত শত মিলিয়ন মানুষ অনাহারে মারা যাবে, যতই এখন থেকে জোর প্রচেষ্টা নেওয়া হোক না কেন।”
এই বইয়ের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল যে তখনকার বিদ্যমান জনসংখ্যাকে যথেষ্ট খাওয়ানো যাচ্ছিল না, আর যেহেতু জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল, খাদ্য উৎপাদন এর সাথে তাল মিলিয়ে বাড়তে পারবে না; ফলে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ (famine) দেখা দেবে। এই ভাবনা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ (population control) নিয়ে সার্বিক জনমতে বড় প্রভাব ফেলেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (U.S. Agency for International Development বা USAID) তখন পরিবার পরিকল্পনা (family planning) কর্মসূচিকে বিশ্বব্যাপী সমর্থন দিতে থাকে, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে। এর মধ্যে ছিল গর্ভনিরোধক (contraceptives) বিতরণ ও নির্বীজনকরণ (sterilization) ক্যাম্পেইনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া। একই সময়ে চীনে প্রণীত এক সন্তান নীতি (one-child policy) পরিবারের ওপর আর্থিক জরিমানা আরোপ করে যদি তাদের একের বেশি সন্তান থাকে। এছাড়াও, নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পেছনে এই অতিরিক্ত জনসংখ্যাভীতি ভূমিকা রেখেছিল।
এভাবে বিভিন্ন আইন ও নীতি বাস্তবায়নের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২%-এর ওপরে থাকা অবস্থান থেকে এখন প্রায় ০.৮%-এ নেমে এসেছে।
এবার দেখা যাক সেই “পপুলেশন বম্ব” বইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সত্যি হলো। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বাস্তবে দুর্ভিক্ষ পুরোপুরি নির্মূল হয়নি, কিন্তু যেখানে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে সেগুলোর মূল কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, খাদ্যস্বল্পতা নয়। বাস্তবে আজ আমাদের বড় সমস্যা হলো অতিভোজন (over-consumption), খাবারের সংকট নয়। এখন বিশ্বব্যাপী স্থূলতা (obesity) মহামারী দেখা দিয়েছে, ১৯৭০-এর দশক থেকে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণ গড়ে ২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস (type 2 diabetes) রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহারও ১৯৬৫-৭৪ সময়কালে প্রতি ১০০০ জনে ১৩ জন থেকে ১৯৮৫-৯০ সময়কালে প্রতি ১০০০ জনে ১০ জনে নেমে এসেছে। বলা যায়, সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো অনেকটাই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যদিও পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কা যে ভুল ছিল না, তা আমরা এখন অনুভব করছি ক্রমবর্ধমান গরমে জর্জরিত গ্রহে।
কিন্তু এই ভুল পূর্বাভাসের কারণে ভবিষ্যতে আমাদের কী প্রতিক্রিয়া হবে? সেখানেই বিষয়টা হয়ে উঠছে কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন।
ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে?
ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখা যেতে পারে তা বোঝার সহজ উপায় হলো প্রজনন হার প্রতিস্থাপন মাত্রা (fertility rate replacement level) দেখা। এটি হলো প্রতি নারীর জীবদ্দশায় গড়ে যতগুলি সন্তান জন্ম দিতে হবে যাতে তিনি ও তার সঙ্গী মিলে নিজেদের স্থান প্রতিস্থাপন করতে পারেন। এই হার প্রায় ২.১ শিশু প্রতি নারী। যদি একটি দেশের প্রজনন হার ২.১ এ থাকে, তাহলে সেই দেশের জনসংখ্যা বাড়বে না, কমবেও না, অভিবাসন (migration) ছাড়া।
কিন্তু বর্তমানে অনেক দেশের প্রজনন হারই এই প্রতিস্থাপন মাত্রার নিচে। ১৯৭০ সালের কাছাকাছি, অর্থাৎ “পপুলেশন বম্ব” বই প্রকাশের সময়, বিশ্বের প্রায় সব দেশই ধীরে ধীরে ২.১ এর নিচে নেমে যায়। এখন কেবলমাত্র আফ্রিকা এবং ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশে জনসংখ্যা স্থিতিশীল বা কিছুটা বেড়েছে।
ধরে নিন সারা বিশ্বের প্রজনন হার যদি আজকের যুক্তরাষ্ট্রের মতো হতো, তাহলে কয়েকশো বছরের মধ্যেই আমাদের বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রায় ২ বিলিয়নে নেমে আসবে। অর্থাৎ আমাদের সর্বোচ্চ ৮ বিলিয়ন থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন লোক কমে যাবে। এরপরও এই সংখ্যা আরও কমতে পারে, ফলে গোটা জাতির বিলুপ্তি (extinction) ঘটতে পারে।
কীভাবে আমরা এত নিচু প্রতিস্থাপন হারে চলে এলাম? একটা বই তো এত বিশাল ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে না! আসলে এর পেছনে অনেকগুলো অপ্রত্যাশিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন একসাথে কাজ করেছে। এসব না বুঝলে পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা খুবই কম।
গ্রামীণ অঞ্চল
এটি মূলত শুরু হয়েছে যখন আমরা গ্রামীণ জীবনধারা (rural lifestyle) থেকে শহুরে (urban) জীবনে ব্যাপক স্থানান্তর ঘটালাম। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা প্রায়ই স্থিতিশীল থাকে, কিন্তু যেসব এলাকা নগরায়িত হয়েছে (urbanized) সেসব ক্ষেত্রে জন্মহার (birth rate) হ্রাস পেয়েছে।
এর একটি বড় কারণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। গ্রামীণ কৃষি নির্ভর সমাজে বড় পরিবারের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ কৃষিকাজে পরিবারের সকলের সহায়তা প্রয়োজন হয়। এছাড়া গ্রামীণ সমাজে সবাই সবাইকে চেনে, ফলে সামাজিক নিয়মভঙ্গ করলে সুনাম নষ্ট হবার ভয় থাকে। তাছাড়া গ্রামে নারীরা কম শিক্ষাগত ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, ফলে তারা অল্প বয়সেই বিয়ে করে সন্তান নেওয়ায় বেশি আগ্রহী হয়। গ্রামীণ সমাজ সাধারণত বেশি ধার্মিক (religious) ও রক্ষণশীল (conservative), যা বড় পরিবার গড়ার গুরুত্বকে জোর দেয়।
বর্তমানেও অ্যামিশ (Amish) সম্প্রদায়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত এই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পরিবারে সাধারণত ৬-৭টি সন্তান থাকে। তারা খুব কঠোরভাবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ মেনে চলে এবং বাইরের জগতের প্রভাবের সুযোগ কম। ফলে তাদের মধ্যে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব ও স্থিতিশীল পরিবার পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়।
শহুরে অঞ্চল
এখন শহুরে শিল্পায়িত বিশ্বের দিকে তাকাই, যেখানে প্রায় ৯০% মানুষ বাস করে। এখানে বড় পরিবার রাখার অনুপ্রেরণা অনেক কম। কেন? কারণ শহরে আপনি আসলে কমিউনিটি বা প্রতিবেশী হিসেবে খুব একটা পরিচিতি পান না। আপনার “প্রতিবেশী” বলতে হয়তো আপনার অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের হলওয়েতে দেখা হওয়া ব্যক্তিদের বোঝায়। এছাড়া বহু শহর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, এমনভাবে পরিকল্পিত যে আপনাকে সর্বদাই গাড়িতে চড়ে ঘুরতে হয়, ফলে সামাজিক মেলামেশার জন্য তৃতীয় কোনো জায়গা (third place) খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাড়ি আর অফিসের বাইরে যেই জায়গাটিতে মানুষ মিলিত হয়ে আড্ডা দিত, তা অনেকাংশেই হারিয়ে গেছে।
অন্যদিকে শহরে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি, ফলে নারীরা আর আগের মতো অল্প বয়সে বিয়ে করে সন্তান নেওয়ার ওপর নির্ভরশীল নয়। গর্ভনিরোধক আর জন্মনিয়ন্ত্রণ বড় কোনো অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণকে (unintended pregnancy) রোধ করে, যদিও এটি নিম্নআয়ের (low-income) নারীদের ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্থক্য আনতে পারেনি।
তরুণরা ক্রমশ ডিজিটাল ডিভাইসে (digital devices) বেশি সময় দিচ্ছে, বাস্তব জগতের মানুষের চেয়ে ভার্চুয়াল ছবিতে মানুষ দেখা, সোশ্যাল মিডিয়ায় সুদৃশ্য মানুষদের দেখে নিজেদের মানদণ্ড উঁচু করা—সব মিলে “সৌন্দর্যের মুদ্রাস্ফীতি (beauty inflation)” তৈরি করেছে। তারা বাস্তব জীবনের গড় মানুষের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের নির্বাচিত সেরা চেহারার মানুষ দেখে আকর্ষণের মান নির্ধারণ করছে। ফলে বাস্তবে কাউকে পছন্দ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও ডেটিং অ্যাপ (dating apps) মানুষকে পণ্যের মতো করে ভাবতে উৎসাহিত করছে, যেখানে একজন পার্টনারকে সহজে বাতিলযোগ্য (disposable) হিসেবে দেখা হয়। এর ফলে নারী ও পুরুষের মূল্যবোধের মধ্যে বড় বিভাজন তৈরি হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, তরুণ পুরুষরা দিন দিন বেশি রক্ষণশীল (conservative) আর তরুণ নারীরা বেশি উদারপন্থী (liberal) হয়ে উঠছে। “মেন গোইং দেয়ার ওন ওয়ে বা মিগটাউ (Men Going Their Own Way বা MGTOW)” আন্দোলন বা দক্ষিণ কোরিয়ার নারীদের মধ্যে “4B মুভমেন্ট (4B movement)” এই বিভাজনের উদাহরণ।
শহুরে সমাজে সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের এরকম খিচুড়ির কারণে ফলস্বরূপ একই দেশের দুইজন মানুষের মূল্যবোধের মিল পাওয়া কঠিন হয়। এর ফলে তারা একত্রে জীবন গড়ার ব্যাপারে অনিচ্ছুক হয়ে পড়ে। এর সাথে যোগ করুন ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার খবর, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অস্থিরতা – যা মিডিয়ায় ক্রমাগত উঠে আসছে, তরুণ প্রজন্মের অনেকেই মনে করে, “এমন একটা অনিশ্চিত বিশ্বে আমি কেন সন্তান আনব?”
এছাড়া জীবনযাত্রার ব্যয় (cost of living) এবং সন্তানের খরচও এক বড় বাধা। একসময় কলেজ ডিগ্রি মানেই ছিল একটা স্থিতিশীল চাকরি ও একটা বাড়ি কেনার সামর্থ্য, যা পরিবার গড়ার পথ সহজ করত। এখন এই নিশ্চয়তা অল্প সংখ্যক মানুষের কাছেই সীমিত। যেসব দেশে জন্মহার সবচেয়ে কম, দেখা যায় সেসব দেশে তরুণ বেকারত্ব (youth unemployment) বেশি এবং বাড়ির দাম আয় অনুপাতে অনেক বেশি। ফলে তরুণদের কাছে বাড়ি কেনা দূরাশা হয়ে দাঁড়ায়।
কেন এটা নিয়ে বেশি আলোচনা হয় না?
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, এই বিষয়টা নিয়ে কেন বেশি কথা হচ্ছে না? কারণ এখনো বয়স্ক (older) জনসংখ্যা আমাদের মোট জনসংখ্যার বড় অংশ ধরে রেখেছে। মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়ার ফলে মনে হচ্ছে যেন এখনো সবকিছু মোটামুটি স্থিতিশীল বা উন্নতির দিকে। কিন্তু জন্মহার হ্রাসের আসল প্রভাব আমরা সামনে দেখতে পাবো, যখন এই বয়স্কদের পরবর্তী প্রজন্ম যথেষ্ট পরিমাণে আসবে না।
জনসংখ্যা হ্রাসের পরিণতি
জনসংখ্যা হ্রাসের ফলে কী হবে? কম তরুণ কর্মী মানে কম শ্রমশক্তি (labor force) আর কম করদাতা (taxpayer)। কর কমলে প্রাথমিকভাবে ভালো লাগলেও, দীর্ঘমেয়াদে সরকারি সেবায় (public services) কাটছাঁট বা বিদ্যমান মানুষের ওপর কর বাড়ানোর দরকার হতে পারে। তরুণ কর্মী কমে গেলে বৃদ্ধদের দেখাশোনার (healthcare, pension) জন্যও সমস্যা হবে। কারণ অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধদেরকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তরুণ কর্মীবাহিনী প্রয়োজন।
কিছু মানুষের ধারণা, জনসংখ্যা কমলে পরিবেশের ওপর চাপ কমবে। কিন্তু অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে তখন পরিবেশ সংরক্ষণে (environmental protection) বিনিয়োগ করাও কঠিন হতে পারে।
জনসংখ্যা কমলে দেশের উৎপাদনে চাপ পড়ে, তাই ইমিগ্রেশন প্রমোট করার দরকার হয়, আর অনেক সময় বিজাতীয় লোকেদের আগমনের ফলে সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
আমরা কী করতে পারি?
অনেক নেতিবাচক কথা বললাম। এবার সমাধানের দিকে তাকাই। শুধু অর্থনৈতিক প্রণোদনা (financial incentives) দিয়ে এই সমস্যা মিটবে না। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, যাদের জন্মহার খুবই কম, তারা সন্তান নেওয়া পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েও খুব একটা সুফল পায়নি। কারণ সমস্যাটি বহুমুখী (multi-faceted)।
আমি নিজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী (individualist) চিন্তাধারার পক্ষে, এবং গ্লোবালাইজেশন (globalization) তরুণদের ভিন্ন মতামত, ভিন্ন মূল্যবোধ জানার সুযোগ করে দিয়েছে—যা ভালো। তরুণদের এখন আগের মতো কম বয়সেই বিয়ে বা পরিবার গড়তে বাধ্য করা হচ্ছে না। তারা বেশি বিকল্প পাচ্ছে। কিন্তু এই স্বাধীনতার চরম রূপ আবার কিছু খারাপ ব্যাপার নিয়ে এসেছে।
আমার আশা, আমরা আধুনিকতা (modernity) আর ঐতিহ্যবাহী (traditional) মূল্যবোধের মধ্যে একটা ভারসাম্য (balance) আনতে পারবো। মানুষ সবসময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এখন আমরা অনেক বেশি জটিল বিষয়ে দ্রুত পরিবর্তন আনছি, যা সবসময় কিছু বাধা সৃষ্টি করবে। কিন্তু আমরা এখন শিখতে শুরু করেছি কী কী আমাদের জন্য ক্ষতিকর।
এর অর্থ হলো ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সীমিত করা, যাতে মানুষ বাস্তব সমাজে মেলামেশা করে কমিউনিটি গড়তে পারে। তরুণদের জন্য আরো বেশি সামাজিক পরিসর (third place) তৈরি করা, ডেটিং অ্যাপগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে তারা মানুষকে পণ্যের মতো না দেখে, কাজের ঘন্টা কমিয়ে, আয় বাড়িয়ে, সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরি করা। এছাড়া তরুণদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশা ও বিশ্বাস (hope and faith) ফিরিয়ে আনতে হবে—ধর্ম (religion) না হোক, অন্তত এমন সমাজব্যবস্থা গড়তে হবে যাতে তারা আবার আগ্রহী হয় সামনে এগোতে এবং পরিবার গড়তে।
প্রশ্ন হলো: কীভাবে আমরা আবার সেই সামাজিক পরিবেশের দিকে ফিরব, যেখানে সম্প্রদায়বোধ আর সহযোগিতা ছিল কেন্দ্রে? আমাদের বুঝতে হবে কোন অংশগুলি আধুনিক সমাজে কাজ করছে না এবং সেগুলো সংশোধন করে ইতিবাচক অগ্রগতি বজায় রাখতে হবে।
মানবজাতি ও মহাবিশ্ব সবসময় কোনো না কোনো ভারসাম্যে (equilibrium) ফিরে যেতে চায়। আমাদের জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়া এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনেরই অংশ, আমাদের পরবর্তী বিবর্তনের (evolution) ধাপ।
যুক্তরাষ্ট্রের মেধাবী কর্মীদের কানাডায় অভিবাসন (২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪)
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ প্রযুক্তি কর্মীদের আনার জন্য এইচ-১বি ভিসা প্রোগ্রাম (H-1B visa program) অপরিহার্য। তবে অভিবাসন নীতি নিয়ে আলোচনার পর, দক্ষ প্রযুক্তি কর্মীরা এখন কানাডার দিকে ঝুঁকছেন। অনেকে সতর্ক করে বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি বিশ্বের সেরা প্রতিভাদের আকৃষ্ট করার উপায় খুঁজে না পায়, তবে কানাডার মতো দেশগুলো সেই সুযোগটি নেবে। কানাডা এই প্রতিভাদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানির দেশ কিভাবে দক্ষ কর্মীদের হারাচ্ছে? এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা। প্রতি বছর এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করা বেশ চাপের। এটি একটি সরল প্রক্রিয়া নয়, বরং বেশ জটিল এবং দীর্ঘসূত্রিতার। এই ভিসার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সেই দেশে কাজ করা এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ একটি লটারির (lottery) উপর নির্ভর করে।
এইচ-১বি ভিসা একটি অ-অভিবাসী ভিসা (nonimmigrant work visa), যা মার্কিন নিয়োগকর্তাদের (US employers) বিশেষ পেশায় বিদেশী কর্মীদের নিয়োগের অনুমতি দেয়। এই ভিসার জন্য কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। সাধারণত, প্রযুক্তিখাতের দক্ষ কর্মীরা এই ভিসার জন্য আবেদন করেন। ১৯৯০ সালে এই ভিসা চালুর পর থেকে, কংগ্রেস (Congress) প্রতি বছর এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা সীমিত করে দিয়েছে। বর্তমানে এর সংখ্যা বছরে ৬৫,০০০, এবং মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর বা ডক্টরেট ডিগ্রিধারীদের জন্য অতিরিক্ত ২০,০০০ ভিসা বরাদ্দ রয়েছে। যেহেতু এই ভিসার স্পন্সর (sponsor) নিয়োগকর্তা, তাই চাকরি হারালে ভিসাধারীদের নতুন চাকরি খুঁজে নিতে ৬০ দিন সময় পান, অন্যথায় তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হতে পারে। শিবা কৌল (Shiva Koul) ২০১৩ সালে ভারতে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে এসেছিলেন এবং ২০১৮ সালে মাইক্রোসফটে (Microsoft) কাজ শুরু করেন, যারা তার এইচ-১বি ভিসার স্পন্সর ছিল। এইচ-১বি ভিসা পাওয়া বেশ প্রতিযোগিতামূলক। কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার স্পন্সরশিপ (sponsorship) এবং একটি কঠিন আবেদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যোগ্য প্রার্থীদের একটি পুলের (pool) অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ভিসা দেওয়া হয়।
জর্জিয়া স্টেট (Georgia State) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং এইচ-১বি ভিসাধারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হরিন্দর সিংকে (Harinder Singh) তিনবার লটারিতে অংশ নিতে হয়েছে। ২০২১ সালে, প্রায় অর্ধেক যোগ্য আবেদনকারী লটারিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের জন্য ৭ লক্ষ ৫৮ হাজারটি আবেদনের মধ্যে মাত্র ১ লক্ষ ৮৮ হাজারটি চূড়ান্ত লটারির জন্য নির্বাচিত হয়েছে, অর্থাৎ ২৫% এরও কম ভিসা পেয়েছেন। এইচ-১বি ভিসা পাওয়ার পরেও ভিসাধারীদের অনেক বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। এই ভিসাধারীরা চাকরির পরিবর্তন বা অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না। এমনকি তাদের স্ত্রী বা সন্তানও কাজের অনুমতি ছাড়া কাজ করতে পারেন না। ফলে অনেক উচ্চশিক্ষিত স্ত্রীকেও যুক্তরাষ্ট্রে বেকার জীবন কাটাতে হয়। স্থায়ী বসবাসের (permanent residency) জন্য গ্রিন কার্ডের (green card) আবেদন করা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও, ভারত ও চীনের মতো জনবহুল দেশের ভিসাধারীদের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে গ্রিন কার্ডের ক্ষেত্রে একটি দেশের জন্য ৭% এর সীমা নির্ধারণ করা আছে, যার কারণে ভারত ও চীনের মতো দেশের এইচ-১বি ভিসাধারীদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। ২০২৩ সালে এই অপেক্ষার তালিকা ১৮ লক্ষে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ১১ লক্ষই ভারতের নাগরিক। স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ কম থাকায়, অনেক এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মী কানাডায় যাওয়ার কথা ভাবছেন।
অনেক এইচ-১বি ধারী কর্মী কানাডায় গিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদন করছেন। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো প্রচুর পরিমাণে এইচ-১বি ভিসার অনুমোদন করিয়ে থাকে। অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপল (Apple) এবং মেটা গত দুই বছরে ৬০,০০০-এর বেশি ভিসার অনুমোদন করিয়েছিল। তবে অ্যাপল বাদে বাকি সব কোম্পানি গত বছর বড় ধরনের কর্মী ছাঁটাই করেছে, যার ফলে এইচ-১বি ভিসাধারীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, চাকরি হারানোর পরে তাদের ৬০ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হয়। ঘানার নাগরিক আনোকিয়ে (Anokye) ২০১৯ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। এ বছর মাইক্রন (Micron) থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর, তিনি এইচ-১বি ভিসা থেকে ভিজিটর ভিসায় (visitor visa) পরিবর্তন করেছেন এবং নতুন চাকরির সন্ধান করছেন। অক্টোবর ২০২২ থেকে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ৫০,০০০ এইচ-১বি ধারী বেকারত্বের কারণে তাদের ভিসা স্ট্যাটাস হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ১২,৫০০ জন অন্য কোনো বৈধ ভিসায় স্থানান্তরিত হননি, অর্থাৎ তাদের নতুন স্পন্সর খুঁজে না পেলে ৬০ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়তে হতো।
২০২৩ সালের ২৭শে জুন কানাডা ঘোষণা করে যে, তারা বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী কর্মীদের জন্য একটি বিশেষ স্ট্রিম তৈরি করবে, যার মাধ্যমে তারা কাজের প্রস্তাব থাকুক বা না থাকুক, কানাডার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে কাজ করার সুযোগ পাবে। এরপর ১৬ই জুলাই কানাডা একটি পাইলট প্রোগ্রামের (pilot program) অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ১০,০০০ এইচ-১বি ভিসাধারীকে তিন বছরের জন্য কানাডায় কাজের অনুমতি দেওয়ার জন্য ভিসার আবেদন গ্রহণ শুরু করে। অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে প্রথম দিনেই এই প্রোগ্রামের ১০,০০০ ভিসার কোটা পূরণ হয়ে যায়। তবে এই পাইলট প্রোগ্রামটি কানাডার বৃহত্তর পরিকল্পনার একটি অংশ। কানাডার প্রযুক্তি বাজারে ২০২০ সাল থেকে ১৫.৭% প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১.৪%। বর্তমানে কানাডায় ১১ লক্ষ প্রযুক্তি কর্মী রয়েছে, যা দেশটির মোট কর্মশক্তির ৬.৫%।
টরন্টো (Toronto) এবং ভ্যাঙ্কুভারকে (Vancouver) যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সেরা দশটি প্রযুক্তি শহরের মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে। অটোয়া (Ottawa) এবং মন্ট্রিয়লও (Montreal) আটলান্টা (Atlanta) এবং শিকাগোর (Chicago) মতো বড় শহরগুলোর চেয়ে এগিয়ে আছে। কানাডায় শপিফাইয়ের (Shopify) মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানির পাশাপাশি ডেল (Dell), ইন্টেল (Intel), মাইক্রোসফট এবং অ্যামাজনের মতো কোম্পানিরও কার্যক্রম রয়েছে। কর্মী ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়া অনেক কর্মী কানাডার ওয়ার্ক পারমিটের (work permit) জন্য আবেদন করেছেন। কানাডার এই ওয়ার্ক পারমিট কোনো নির্দিষ্ট কাজের জন্য নয়, অর্থাৎ এই ভিসাধারীরা যেকোনো শিল্পে কাজ করতে পারবেন এবং এইচ-১বি ভিসার মতো তাদের আগে থেকে চাকরির ব্যবস্থা করারও প্রয়োজন নেই। সিং অন্য একটি প্রোগ্রামের (program) অধীনে কানাডার ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেছিলেন এবং কানাডাকে একটি ব্যাকআপ অপশন (backup option) হিসেবে রেখেছিলেন। কানাডা সরকার অনুমোদিত আবেদনকারীদের কানাডায় পৌঁছানোর পরে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করে। এখন পর্যন্ত ৬,০০০-এর বেশি ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা হয়েছে।
কানাডার অভিবাসনমন্ত্রী মার্ক মিলারকে (Marc Miller) সাক্ষাৎকারের জন্য পাওয়া যায়নি, তবে তার একজন মুখপাত্র জানান, কানাডার এইচ-১বি ভিসা আবেদন প্রোগ্রামের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ প্রমাণ করে যে, কানাডা বিশ্ব মঞ্চে কতটা প্রতিযোগিতামূলক। ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে স্টেমের (STEM – বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) চাকরির সংখ্যা ১০.৫% বেড়ে ১ কোটি ১৩ লক্ষে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৪% স্টেম গ্র্যাজুয়েট স্নাতকের পর স্টেম-সম্পর্কিত (STEM-related) পেশায় কাজ করেছেন। অন্যদিকে, কানাডায় ৬২% কলেজ শিক্ষার্থী স্টেম বিষয়ে পড়াশোনা করেও নন-স্টেম (non-STEM) পেশায় কাজ করেন। কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ীভাবে বসবাসের পথ অনেক সহজ। হাকুনা কোচার (Hakuna Kochar) ভারতের একজন প্রযুক্তি কর্মী, যিনি স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডায় এসেছিলেন এবং পরবর্তীতে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। তিনি এমন কোনো দেশে যেতে চাননি, যেখানে তিনি দীর্ঘকাল ধরে বিদেশি হিসেবে পরিচিত হবেন। কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থা কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ হলেও, এটি বিশ্বায়ন এবং শ্রমবাজারের পরিবর্তনের সাথে দ্রুত সাড়া দেয়। এটি স্থায়ীভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে অনেক বেশি নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অভিবাসন ব্যবস্থায় সহজে পাওয়া যায় না। অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখার জন্য কংগ্রেসের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি কর্মীরা নিজেদের কোথায় দেখতে চান? কেউ যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চান, আবার কেউ কানাডাকে ভালো বিকল্প মনে করেন। কেউ কেউ ইউরোপ (Europe), কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়াকে (Australia) পছন্দের তালিকায় রাখছেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, ক্যারিয়ারের অগ্রগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি সুযোগ রয়েছে। আবার অনেকে কানাডাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান।
জাপান কি অবশেষে অভিবাসনকে আলিঙ্গন করছে? (১৫ মে, ২০২৪)
কূটনৈতিক ঝড়: বাইডেনের মন্তব্য: এই মাসের শুরুতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি কূটনৈতিক ঝড় সৃষ্টি করেন যখন তিনি দাবি করেন যে, আমেরিকার অর্থনীতি জাপানের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ আমেরিকা অভিবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছে, যখন জাপান, বাইডেনের ভাষায়, “বিদেশি-ভীত” (xenophobic)। আশ্চর্যজনকভাবে, জাপান, যারা দীর্ঘদিনের মার্কিন মিত্র, এই মন্তব্যকে দুঃখজনক এবং অসত্য বলে বর্ণনা করে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: জাপানের অভিবাসন সন্দেহবাদিতা (Migrant Skepticism): বাইডেনের মন্তব্যের পক্ষে বিচার করা যাক, জাপান যে অনন্যভাবে অভিবাসন-সন্দেহবাদী (migrant-skeptic) তা জনপ্রিয় এবং কিছুটা সত্য। ঐতিহাসিকভাবে, জাপানে অভিবাসনের হার বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক কম, এবং এটি তাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থবিরতা বা সাথে থাকা জনসংখ্যাগত সংকট সমাধানে সাহায্য করেনি। তবে, গত কয়েক বছরে বিষয়গুলি পরিবর্তিত হয়েছে, এবং জাপানি রাজনীতিবিদরা দৃঢ়ভাবে “অভিবাসন” (immigration) শব্দটি ব্যবহার না করলেও, জাপান নীরবে অভিবাসনের প্রতি অনেক বেশি ইতিবাচক হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতির পরিবর্তন: তাহলে, এই প্রবন্ধে আমরা জাপানের অভিবাসন নীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি, পরিবর্তনের পেছনের কারণগুলি, এবং এই হৃদয়ের পরিবর্তনটি জাপানের অর্থনৈতিক বা জনসংখ্যাগত সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারবে কিনা তা দেখব।
জাপানের কঠোর অভিবাসন নিয়ম: আসুন একটু ইতিহাস দিয়ে শুরু করি। মূলত জাপান সরকার এবং জনগণ জাপানকে একটি জাতিগতভাবে অভিন্ন জাতি-রাষ্ট্র (ethnically homogeneous nation-state) হিসাবে বিবেচনা করে। জাপানে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন নিয়ম ছিল, বিশেষ করে স্থায়ী বাসস্থান বা নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে। খুব সম্প্রতি পর্যন্ত, জাপানের মোট বিদেশি জনসংখ্যা পুরো জনসংখ্যার ২% এরও কম ছিল, এবং এদের বেশিরভাগই হয় নিক্কেই অথবা জাইনিচি। নিক্কেইরা (Nikkei) হলো দক্ষিণ আমেরিকা, সাধারণত ব্রাজিল থেকে আসা জাতিগত জাপানি অভিবাসী, আর জাইনিচিরা (Zainichi) হলো কোরিয়ান বংশোদ্ভূত লোক যারা প্রধানত জাপানে জন্মগ্রহণ করেছে এবং শুধুমাত্র জাপানি ভাষায় কথা বলে কিন্তু কোরিয়ান পাসপোর্ট বহন করে কারণ জাপানে জন্মগত নাগরিকত্ব নেই এবং নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল এবং কঠিন)। প্রসঙ্গত, এটি গ্লোবাল গড় ৩.৫% এর প্রায় অর্ধেক, ওইসিডি গড় ৭% এর তুলনায় অনেক কম, এবং ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় অনেক পিছনে, যেমন জার্মানি, যেখানে আজ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% বিদেশি।
শরণার্থী নীতি ও জনসংখ্যাগত সংকট: জাপানও উল্লেখযোগ্যভাবে কম শরণার্থী গ্রহণ করে, এবং যে কোন বছরে শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃত আশ্রয়প্রার্থীদের অনুপাত সাধারণত ১% এরও কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে, জাপান মাত্র ৪৪ জন শরণার্থী গ্রহণ করে, যাদের সংখ্যা মোট আবেদনকারীদের মাত্র ০.৪% ছিল। প্রসঙ্গত, সেই একই বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪৫৫,০০০ শরণার্থী গ্রহণ করে এবং জার্মানি প্রায় ৫৫,০০০ শরণার্থী গ্রহণ করে, যেগুলোর স্বীকৃতির হার ছিল যথাক্রমে মোট শরণার্থীর ৩০% এবং ২৬%।
অর্থনৈতিক বুম এবং শ্রমের অভাব: এখন স্পষ্টতই জাপানের এই নীতি সম্প্রতি চাপের শিকার হয়েছে, আর সেটা জাপানের জনসংখ্যাগত সংকটের (demographic crisis) কারণে। তবে তার আগেই, যখন জাপানের অর্থনীতি ৮০ এর দশকে বুম করছিল, জাপানের ব্যবসায়িক নেতারা শ্রমের অভাব পূরণের জন্য সরকারকে আরও বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, বিশেষ করে তথাকথিত 3K কাজগুলিতে, যে কাজগুলোর মূলত কম মজুরির, কঠিন, এবং যেগুলোকে বেশিরভাগ জাপানিরা নিচু মনে করত। অন্যদিকে স্বল্পমেয়াদী দক্ষ শ্রম অভিবাসীদের জন্য (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) জাপানের নীতি তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক বা ওয়েলকামিং ছিল, এবং এখনও আছে। কিন্তু জাপান সরকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অদক্ষ শ্রমিক গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল, কারণ তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মতো পরিস্থিতি আবার ঘটতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ইউরোপে ব্যাপক শ্রমের অভাব দেখা দেয়, এবং সেই অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি শ্রমিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রাথমিকভাবে এই শ্রমিকদের অস্থায়ীভাবে থাকার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে দেখা যায় যে তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে থেকে যান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এতে করে ইউরোপের সমাজে বেশ কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসে, যা অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, জাপান সরকার অদক্ষ শ্রমিকদের প্রবেশে কঠোর নিয়মাবলী আরোপ করে, যাতে তারা নিশ্চিত করতে পারে যে এই শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময় শেষে ফিরে যাবেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য জাপানে থাকার কোন সুযোগ পাবেন না। এভাবেই তারা তাদের জনসংখ্যাগত এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করে।
বিতর্ক এবং বিধিনিষেধের শিথিলকরণ: যদিও ৯০ এর দশকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি সংশোধনের মাধ্যমে এবং ১৯৯৩ সালে তথাকথিত টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করার মাধ্যমে অভিবাসন আইনের কিছুটা শিথিলকরণ ঘটেছিল, তবুও পরিসংখ্যানের খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি এবং মোট শ্রম শক্তিতে বিদেশি শ্রমিকের শেয়ার কখনই ৩% এর উপরে যায়নি। এর উপরে, টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কের পয়েন্ট হয়ে ওঠে। অস্থায়ী শ্রমিকদের সাথে খুব খারাপভাবে আচরণ করা হত, এবং ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র অধিদপ্তর (US State Department) সতর্ক করেছিল যে এটি মানব পাচারের একটি রূপ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এই ইন্টার্নদের সুরক্ষার অভাবের পেছনে আংশিকভাবে যে কারণটি কাজ করেছিল তা ছিল, জাপান সরকার চায়নি অতিথি শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে থেকে যাক, এবং তাদের ৯৭% তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে চলে গিয়েছিল।
জনসংখ্যাগত সংকট ও নীতির পরিবর্তন: তবে, গত কয়েক বছরে, জাপানের জনসংখ্যাগত সংকট শুরু হয়েছে এবং সরকার নীরবে তার অভিবাসন নিয়ম শিথিল করে চলেছে। জাপানের উর্বরতার হার—অর্থাৎ, প্রতিটি নারীর গড় সন্তানের সংখ্যা—৭০ এর দশকে ২.১ এর রিপ্লেসমেন্ট রেটের নিচে নেমে গিয়েছিল এবং আজ প্রায় ১.২ তে নেমে এসেছে। কিছু খুব উদার পরিবার-বান্ধব নীতির পরেও জাপানের শ্রম শক্তি ৯০ এর দশকে সঙ্কুচিত হতে শুরু করে, এবং ২০০০ এর দশকে জাপানের মোট জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। জাপান তার শ্রমের অভাব সাময়িকভাবে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল নারীদেরকে শ্রম শক্তিতে নিয়ে এসে, কিন্তু এটি সর্বদাই একটি সাময়িক ব্যবস্থা ছিল, এবং ২০২২ সালে, শ্রম শক্তি আবার সঙ্কুচিত হতে শুরু করে।
শ্রমের অভাব (Labor Shortages) ও উদারীকরণ অভিবাসন নীতি: এটি জাপানের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠেছে। গত এক দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে জাপানের বেকারত্বের হার ৩% এর নিচে ছিল, এবং ৮৬% জাপানি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। সমস্যা আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে জাপান সরকার নীরবে এবং ধীরে ধীরে তার শ্রম অভিবাসন নীতির উদারীকরণ করেছে। ২০০০ এর দশকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামটিকে আরও শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রি অন্তর্ভুক্ত করার সম্প্রসারিত করা হয়েছিল, এবং সর্বাধিক থাকার সময় ৩ বছর থেকে ৫ বছরে বাড়ানো হয়েছিল। তবে, বড় পরিবর্তনটি ঘটে ২০১৯ সালে যখন জাপান সরকার নীরবে নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন ভিসা তৈরি করে, যা এসএসডব্লিউ১ ভিসা নামে পরিচিত। মূলত, এটি বিদেশি নাগরিকদের যাদের টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে তাদের ১২টি নির্দিষ্ট খাতে (যা শ্রমের অভাবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে) জাপানে ৫ বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেয়
বিদেশি জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং নতুন ভিসা: জাপানের বিদেশি জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০১০-এর দশকের মধ্যভাগের এদের সংখ্যা ছিল ২ মিলিয়ন, আর মহামারীর আগে এই সংখ্যা প্রায় ৩ মিলিয়নে পউছে। তারপর, গত বছর, যখন অনেকের এসএসডব্লিউ১ (SSW1) ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছিল, তখন জাপানি ব্যবসায়ীরা সরকারকে জানায় যে তারা এই শ্রমিকদের প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে না, তাই সরকার সবচেয়ে বেশি চাহিদার এসএসডব্লিউ১ শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন এসএসডব্লিউ২ ভিসা চালু করে। এখন এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, এই এসএসডব্লিউ২ (SSW2) শ্রমিকরা তাদের পরিবারকে জাপানে নিয়ে আসতে পারে, এবং এটি যে কোন সংখ্যকবার পুনর্নবীকরণ করা যায়, অর্থাৎ, এসএসডব্লিউ২ শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে জাপানে থাকতে পারে। মূলত, এসএসডব্লিউ২ সীমিত ছিল নির্মাণ এবং জাহাজ নির্মাণ খাতে, কিন্তু জুনে, সরকার এটিকে আরও নয়টি অন্যান্য খাতে প্রসারিত করতে সম্মত হয়, যেগুলোর মধ্যে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন এমন সেবা খাত (hard-to-define service sector) অন্তর্ভুক্ত, এবং তারপরে তার বার্ষিক ভিসার সীমা ১৬০,০০০-কে দ্বিগুণ করা হয়।
স্থায়ী বাসস্থান এবং জনমতের ধারণা: এই প্রথমবারের মতো জাপান শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান অনুমোদন করেছে, এবং এটি জাপানে বৃহত্তর স্কেলে অভিবাসনের দরজা খুলে দিচ্ছে। এখন এর পুরোটাই খুব নীরবে করা হয়েছে, এবং জাপানি কর্মকর্তারা মূলত কখনই “অভিবাসন” শব্দটি ব্যবহার করেন না, পরিবর্তে তারা সবাই লেবর বা শ্রম এর কথা বলছে। সম্ভবত এই অভিবাসনের ক্ষেত্রে জনমতের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তারা উদ্বিগ্ন, তাই তাদের এরকম আচরণ। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, জরিপগুলি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের উদ্বেগগুলি ভিত্তিহীন হতে পারে। বেশিরভাগ জাপানি তাদের জনসংখ্যাগত সমস্যা সম্পর্কে খুব সচেতন এবং তাই আরও বেশি অভিবাসী-পন্থী হয়ে উঠেছে। এটা ঠিক যে, জাপানিদের সাথে অভিবাসী গ্রহণ করা দেশগুলোর লোকেদের অভিবাসন নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির তুলনাটা করা উচিৎ না, কারণ জাপানিরা এখনও অভিবাসনের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয়। কিন্তু যেসব জরিপ করা হয়েছে সেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে জাপানি জনগণ এখন পুরো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসীপন্থী, এবং গত বছরের শেষের একটি জরিপে দেখা গেছে যে ৮৬% জাপানি পৌরসভা আরও বিদেশি শ্রমিক চায়।
বড় প্রশ্ন: এটি কি অনেক দেরি হয়ে গেছে?: আসল প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন এই অভিবাসন পলিসি জাপানের অর্থনীতিকে আসলেই রক্ষা করতে পারবে, নাকি খুব দেরি হয়ে গেছে। জাপানের জনসংখ্যাগত সংকট ইতিমধ্যেই বেশ ভয়াবহ, এবং দুর্বল ইয়েন এবং কয়েক দশকের অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে, জাপান অভিবাসীদের জন্য আর আগের মত অত আকর্ষণীয় গন্তব্য নয়। তবে সব শেষে বলতে হয়, এটা বিভিন্ন বিষয় যেমন অর্থনীতি, বাণিজ্যের ধরণ, জনমত, বিভিন্ন জনসংখ্যাগত বিষয়, ও অবশ্যই এআই ও রোবটিক্সের মত নতুন টেকনোলজিকাল রেভোল্যুশনের মত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করবে। দেখা যাক…
তথ্যসূত্র :
- https://www.japantimes.co.jp/news/2024/05/04/japan/politics/tokyo-biden-xenophobia-response/
- https://eastasiaforum.org/2023/11/23/why-wont-kishida-adopt-a-formal-immigration-policy/
- https://ceias.eu/zainichi-koreans-in-japan-exploring-the-ethnic-minoritys-challenges/
- https://www.noahpinion.blog/p/japan-is-not-a-xenophobic-country
- https://www.dw.com/en/germany-immigrants-made-up-over-18-of-2022-population/a-65383249
- https://www.nippon.com/en/in-depth/d00920/
- https://www.jcer.or.jp/english/historical-background-of-the-japanese-restrictive-immigration-policy
- https://thediplomat.com/2021/03/japans-changing-immigration-and-refugee-policy
- https://www.statista.com/statistics/612396/japan-total-labor-force/
- https://www.oecd.org/els/emp/1941679.pdf
- https://www.statista.com/statistics/263700/unemployment-rate-in-japan/
- https://www.japantimes.co.jp/news/2023/09/17/japan/society/japan-foreign-workers/
অভিবাসন ইউরোপের জনসংখ্যা বদলে দিচ্ছে (২২ এপ্রিল, ২০২৪)
ভূমিকা
ইউরোপের জনমিতিক বিন্যাস (demographic makeup) অভিবাসনের (immigration) কারণে বদলে যাচ্ছে। তথ্য বেশ স্পষ্ট। প্রায় সব ইউরোপীয় দেশে স্থানীয় (native) জনসংখ্যার অনুপাত কমে আসছে। অথচ অনেকেই বিষয়টি অস্বীকার করে বলছে, “আমরা সব সময়ই অভিবাসী (immigrants) এবং শরণার্থী (refugees) পেয়ে এসেছি”—কিন্তু এতে তারা ইউরোপের বাইরের (non-European) অভিবাসনের নজিরবিহীন মাত্রা ও ব্যাপকতাকে উপেক্ষা করছে। আবার অন্যদিকে ষড়যন্ত্রমূলক “রিপ্লেসমেন্ট থিওরি (replacement theory)” বা প্রতিস্থাপন তত্ত্বের মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইউরোপের স্থানীয় জনগণকে স্বেচ্ছায় ইউরোপবহির্ভূত (non-European) লোকজন দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে, আমি খতিয়ে দেখেছি কীভাবে অভিবাসন ইউরোপের জাতিগত বিন্যাস (ethnic makeup) বদলে দিচ্ছে। এর জন্য আমি জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরগুলো (national statistical databases) এবং সরকারি (government) প্রতিবেদনের (reports) ডেটা দেখেছি, যার মধ্যে ছিল ইউকে সেনসাস ডেটা (UK census data), ইউরোস্ট্যাট (Eurostat), এবং ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত নন-ইউরোপীয়দের (non-ethnic Europeans) জন্মসংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ (scientific papers)। এসব তথ্য নিয়ে আমি বর্তমান অভিবাসন পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করার চেষ্টা করেছি, এবং দেখেছি ভবিষ্যতে এটি কীভাবে এগোতে পারে।
এটি আসলে অভিবাসনের জনমিতির (demographics of immigration) গল্প।
ইউরোপের বর্তমান জনমিতি
২০২২ সালে আনুমানিক ১২ লক্ষ মানুষ নিয়মিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (EU) প্রবেশ করেছে, আর প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ অনিয়মিত পথে এসেছে। যুক্তরাজ্যে (UK) এই সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৭ লক্ষ অনিয়মিত অভিবাসী (irregular migrants), সাথে প্রায় ৪০ হাজার অনিয়মিত প্রবেশ (irregular entries)। যদি জনসংখ্যার শতাংশের হিসাব করা হয়, তাহলে ইইউর জন্য এটি মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৪% আর যুক্তরাজ্যের জন্য প্রায় ১%।
কিন্তু যেহেতু এই প্রবাহ (flow) বেশ ধারাবাহিকভাবে (pretty constant) চলছে, তাই এই সংখ্যাগুলো যোগ হয়ে বড় হয়ে উঠছে; একই সাথে ইউরোপের বিদেশে জন্মগ্রহণকারী (foreign-born) জনসংখ্যার অনুপাতও বেড়ে চলেছে। আসলে, বহু পশ্চিম ইউরোপীয় (Western European) দেশে বিদেশে জন্মগ্রহণকারীদের অনুপাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States) তুলনায় বেশি, অথচ অনেক আগে থেকেই আমেরিকাকে অভিবাসনের “রাজা” বলে মনে করা হতো।
এটি মূলত দু’টি কারণে হয়েছে।
- প্রথমত, শেঙ্গেন এলাকা (Schengen Area) ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে, ফলে ইউরোপের মানুষের মধ্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়াটা সহজ হয়েছে।
- দ্বিতীয়ত, গত কয়েক দশকে অভিবাসনের বিভিন্ন ঢেউ ইউরোপে এসেছে—যেমন ৫০ ও ৬০-এর দশকের অতিথি শ্রমিক (guest workers), ৯০-এর দশকে যুগোস্লাভ (Yugoslav) যুদ্ধের সময়কার শরণার্থী (refugees), এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিবাসন সংকট (migration crisis)।
এখন বিদেশে জন্মগ্রহণকারী (foreign-born) জনসংখ্যাকে যদি উৎস অঞ্চলের (region of origin) ভিত্তিতে ভাগ করা হয়—যেমন ইইউভুক্ত (EU) ও ইইউবহির্ভূত (non-EU)—তাহলে কী দেখা যায়? যুক্তরাজ্যও (UK) এইভাবে ভাগ করে থাকে। তবে এতে কিছু ইউরোপীয় নাগরিক হিসেব থেকে বাদ যায়, বিশেষ করে ইউক্রেনীয় (Ukrainian) ও বাল্কান (Balkan) দেশগুলোর নাগরিক, এবং একই সাথে ইইউতে বসবাসরত যুক্তরাজ্যের নাগরিকেরাও। যেমন স্পেনে (Spain) ৩ লক্ষ আর ফ্রান্সে (France) ১ লক্ষ ৬৩ হাজার যুক্তরাজ্যের অভিবাসী (UK migrants) আছেন।
যেসব দেশে ইইউর বাইরে (non-EU) জন্মগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে রয়েছে সুইডেন (Sweden), আয়ারল্যান্ড (Ireland) এবং মজার বিষয় হলো এস্তোনিয়া (Estonia)। সেখানে জাতিগত রুশ (ethnic Russian) জনগোষ্ঠীকে ‘নাগরিকত্ববিহীন (non-citizens)’ হিসেবে গণনা করা হয়েছে। অন্যদিকে এই তালিকার একেবারে নিচের দিকে রয়েছে হাঙ্গেরি (Hungary), পোল্যান্ড (Poland), স্লোভাকিয়া (Slovakia) আর বুলগেরিয়া (Bulgaria)।
কিন্তু জনমিতিক পরিবর্তন (demographic change) বুঝতে গেলে আমাদের আরো পেছনে তাকাতে হবে। পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশে ইউরোপবহির্ভূত (non-European) অভিবাসন শুরু হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকে। অভিবাসীদের সন্তান ও নাতি-নাতনি রয়েছে, তাদেরও যোগ করতে হবে সামগ্রিক নন-ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত (non-European descended) জনসংখ্যা বের করতে হলে।
এ বিষয়ে একটা উপায় হল ইইউ লেবার ফোর্স সার্ভে (EU’s Labor Force Survey) দেখা, যা ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের নিয়ে সমীক্ষা করে এবং তাদেরকে তাদের অভিবাসন পটভূমি (migration background) ও পিতা-মাতার পটভূমি অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করে। যদিও এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যেমন ১৫ বছরের নিচে যারা তাদের হিসাব এর আওতায় আসে না। ফলে সাম্প্রতিকতম অভিবাসনের শিশুদের (যারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম) হিসাব এখানে ধরা পড়ে না। একইসাথে প্রাচীন অভিবাসন-ঢেউয়ের তৃতীয় প্রজন্মের মানুষেরাও (third generation) এর বাইরে থেকে যেতে পারে।
ফলে, এই সংখ্যাগুলো প্রকৃত অভিবাসী-বংশোদ্ভুত (immigrant descended) জনসংখ্যার তুলনায় কম, তবে অন্তত ধারা (trend) বোঝার জন্য এগুলো একটি ধারণা দেয়। যে দেশগুলোতে নন-ইউরোপীয় জনসংখ্যার (non-European population) হার সবচেয়ে বেশি, সেগুলো পশ্চিম ও উত্তর ইউরোপে (western and northern Europe)। বেশিরভাগ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশে এই হার ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে। তবে সুইডেন (Sweden) ও বেলজিয়াম (Belgium) এই হিসাব থেকে বাদ গেছে, কারণ তারা ইউরোস্ট্যাটে (Eurostat) ডেটা এন্ট্রি করতে গিয়ে গোলমাল করে ফেলেছিল, ফলে তাদের মোট সংখ্যা ১০০ শতাংশে মেলেনি!
তারপর আমরা ভাবলাম, আরেক ধাপ এগিয়ে দেখা যাক—শুধু দ্বিতীয় প্রজন্ম নয়, বরং নতুন প্রজন্ম (third generation) বা আরও পুরোনো প্রজন্মও গণনায় আনা যাক। এর জন্য আমাদের কিছু দেশের জাতীয় পরিসংখ্যান ডেটাবেসে (national statistical databases) ঢুঁ মারতে হয়েছে, যেসব দেশ আসলে এসব তথ্য প্রকাশ করে।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলস (England and Wales) এর ক্ষেত্রে বিষয়টি সহজ, কারণ সরকার জাতি (race) ও ধর্ম (religion) অনুযায়ী মানুষের ওপর বিস্তারিত পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে। এই আলোচনার জন্য, মানুষকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যাক:
- হোয়াইট ব্রিটিশ আইল্যান্ড নেটিভ (White British Island natives)
- অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ (whites, including mixed race)
- নন-মিক্সড নন-হোয়াইট (non mixed non whites)
- মিশ্রিত জাতিগত (mixed race) ব্যাকগ্রাউন্ড
পরিসংখ্যান বলছে, পুরো ব্রিটিশ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৫% হল নেটিভ শ্বেতাঙ্গ (native white), যেখানে প্রায় ২০% জনগণ নন-ইউরোপীয় (non-European) পটভূমি থেকে এসেছে।
অন্যদিকে মহাদেশীয় (continental) বেশিরভাগ দেশে এমন জাতিগত ডেটা (ethnic data) প্রকাশিত হয় না। অতীতে এগুলো ভুল কাজে ব্যবহৃত হয়েছে—বিশেষ করে ২০শ শতাব্দীর গণহত্যা (genocides) ইত্যাদিতে—তাই তারা এখন এটি করা থেকে বিরত থাকে। তবু, কিছু বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে।
ডেনমার্ক (Denmark) উদাহরণস্বরূপ, তারা “পশ্চিমা (Western)” ও “অ-পশ্চিমা (non-western)” অভিবাসী পটভূমি হিসেবে মানুষকে আলাদা করে, এমনকি যদি তারা দেশটির নাগরিকও হয়। এই ‘অ-পশ্চিমা’ (non-Western) চিহ্ন সরানোর একমাত্র উপায় হলো, অন্তত একজন ডেনিশ (Danish) বা পশ্চিমা (Western) পিতা-মাতা থাকতে হবে এবং সেখানেই জন্মগ্রহণ করতে হবে। তাদের হিসেবে ৮৪% মানুষ ছিল “নেটিভ ডেনিশ (native Danish),” আর প্রায় ১০% ছিল “অ-পশ্চিমা (non-Western) বংশোদ্ভুত।”
ফ্রান্সের (France) স্ট্যাটিস্টিকস অফিস জাতিগত পটভূমি নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। সেখানে ৬০ বছরের নিচে জনগোষ্ঠীর তৃতীয় প্রজন্ম পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, এখানে যদি কারো বাবা-মা বা গ্র্যান্ডপ্যারেন্টসের (grandparents) মধ্যে একজনও অভিবাসী হন, সেও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সুতরাং অভিবাসী বংশোদ্ভুত (immigrant descended) জনসংখ্যার সংখ্যা এখানে কিছুটা বাড়িয়ে দেখানোর সম্ভাবনা আছে। তথ্যানুযায়ী, প্রায় ৬৭% মানুষের পুরোপুরি স্থানীয় (fully native) বংশ ছিল; প্রায় ১৫% এর অন্তত একজন ইউরোপীয় (European) পূর্বপুরুষ (grandparent) ছিল; আর ১৭% এর অন্তত একজন নন-ইউরোপীয় (non-European) পূর্বপুরুষ ছিল।
ইউরোপের ভবিষ্যত জনসংখ্যা
এখন প্রশ্ন হল, ভবিষ্যতে এই ধারা কীভাবে এগিয়ে যাবে? আগেই উল্লেখ করেছি, অভিবাসীদের (immigrants), বিশেষ করে ইউরোপবহির্ভূত (non-European) অভিবাসীদের জন্মহার (birth rates) স্থানীয়দের (natives) তুলনায় বেশি। তাছাড়া অধিকাংশ স্থানীয় আর ইউরোপীয় অভিবাসীদের গড় বয়স তুলনামূলক বেশি, যা সামগ্রিক জনসংখ্যাকে তুলনামূলক ‘ইউরোপীয়’ (European) দেখায়। কারণ তরুণ প্রজন্ম (younger generations) আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ (diverse)।
ভবিষ্যতে ইউরোপের জনমিতি (demographic) কেমন হবে, তা দেখতে গেলে আমাদেরকে বিভিন্ন দেশে জন্মগ্রহণকারীদের সংখ্যা (number of births) দেখতে হবে। এখানেও একই সমস্যা—অনেক দেশ এসব তথ্য প্রকাশ করে না, বা ইউরোপীয় ও অ-ইউরোপীয় (non-European) অভিবাসীকে আলাদা করে ডেটা দেখায় না। যেমন জার্মানি (Germany), ইটালি (Italy), অস্ট্রিয়া (Austria) বা সুইডেন (Sweden) তাদের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে না, অথবা ইউরোপীয় ও নন-ইউরোপীয় (non-European) অভিবাসীদের আলাদাভাবে দেখায় না। তাই আবারও আমাদেরকে ইউকে (UK), ডেনমার্ক (Denmark), ফ্রান্স (France) আর নেদারল্যান্ডস (Netherlands) এর ডেটার উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে, কেননা নেদারল্যান্ডস তুলনামূলকভাবে ইউরোপীয় ও অ-ইউরোপীয় এই বিভাজন করে থাকে।
ডেনমার্কে (Denmark) দেখা যায়, জন্মের অনুপাত মোটামুটি স্থিতিশীল—অর্থাৎ অ-ইউরোপীয় জন্ম (non-European births) ডেনমার্কের জনসংখ্যায় তাদের যে অংশ তার কাছাকাছি।
নেদারল্যান্ডসে (Netherlands) অ-ইউরোপীয় জন্ম (non-European births) মোট জন্মের ১৮%; অথচ ৫৫ বছরের নিচে যারা বিদেশে জন্ম নিয়েছে অথবা বিদেশি বাবা-মা রয়েছে, তাদের অনুপাত প্রায় ১০% এর মতো। তবে এখানে আগের মতই সেই সমস্যা আছে—তৃতীয় প্রজন্ম (third generation) ঠিকমতো ধরা পড়ে না।
যুক্তরাজ্যে (UK) শ্বেতাঙ্গ (white) ও নন-শ্বেতাঙ্গ (nonwhite) জনগোষ্ঠীর মধ্যে আনুমানিক ১০% পয়েন্টের ফারাক দেখা যায় জন্মহার পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে। সেখানে মিশ্রিত জাতিগত (mixed race) ক্যাটাগরি অ-শ্বেতাঙ্গ (nonwhite) বৃদ্ধির অর্ধেকের বেশি অংশের জন্য দায়ী। যুক্তরাজ্যে মিশ্রিত জাতিগত (mixed race) জনগোষ্ঠী মোটের ৯% এবং এর মধ্যে ৬% হচ্ছে শ্বেতাঙ্গ ও অন্য কোন জাতির মিশ্রণ (mixed white ethnicity)।
ফ্রান্সে (France) স্থানীয় ও ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত (native and European descended) জনগণের অনুপাত তরুণ প্রজন্মে প্রায় ১৫% কমে গেছে, তবে একই সাথে মিশ্র বংশোদ্ভুত (mixed) সন্তানের হার ৬% পয়েন্ট বেড়েছে। ফ্রান্সে তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসীদের (third generation immigrants) মধ্যে অনেকে মিশ্র বংশোদ্ভুত (mixed ancestry)। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর আফ্রিকার (North African) অভিবাসীদের ৭১% ও অন্য আফ্রিকার (African) অভিবাসীদের ৮৯% মানুষেরই ১ বা ২ জন নন-নেটিভ গ্র্যান্ডপ্যারেন্টস (non-native grandparents) ছাড়া অন্যরা স্থানীয় বংশোদ্ভুত।
যেসব দেশের (যেমন জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইডেন) ডেটা পাওয়া যায়নি, সেগুলোতে অনুমান করা যায় একই ধারা বজায় আছে। বিশেষত ২০১৫ সালের পরে জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও সুইডেনে যে বড় আকারের অ-ইউরোপীয় অভিবাসন ঘটেছে, তাতে তাদের জন্মসংখ্যার অনুপাত ফ্রান্স বা যুক্তরাজ্যের মতো বা তার থেকেও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, জাতীয় (national) স্তরে যা দেখা যায়, শহর এলাকায় (cities) তার থেকে পুরোটাই ভিন্ন হতে পারে। কারণ অভিবাসীরা সাধারণত শহরে ক্লাস্টার আকারে (cluster) থাকতে পছন্দ করে। ফলে সেসব অঞ্চলে অ-ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত (non-European descended) জনসংখ্যার শেয়ার অনেক বেশি। যেমন যুক্তরাজ্যের (UK) জাতিগত মানচিত্রে (ethnic maps) দেখা যায়, লন্ডন (London), বার্মিংহাম (Birmingham) ও লেস্টারে (Leicester) শ্বেতাঙ্গ (white) বা ইউরোপীয় (European) বংশোদ্ভুতরা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। ফ্রান্সের সেঁ-সাঁ-দেনি (Seine-Saint-Denis), নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম ওয়েস্ট (Amsterdam West), বা জার্মানির বার্লিন (Berlin) ইত্যাদি এলাকায়ও এমন দৃশ্য দেখা যায়। তাই যারা ওই এলাকায় থাকেন, তাদের কাছে জনমিতিক পরিবর্তন (demographic shift) অনেক বেশি স্পষ্ট।
পরবর্তীতে কী ঘটবে? তাত্ত্বিকভাবে সামনে দু’টি পথ রয়েছে। একদিকে অ-ইউরোপীয় জনসংখ্যার স্বতন্ত্র সম্প্রদায় (separate and growing ethnic minorities) বাড়তে থাকায়, তারা হয়তো অধিকসংখ্যায় স্বতন্ত্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবেই থাকবে। অন্যদিকে, অনেক অভিবাসী স্থানীয়দের (natives) সঙ্গে বিয়ে করে সন্তান নিতে পারে, ফলে সমাজে একটি মিশ্র জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে। আমরা আগেই বলেছি, যুক্তরাজ্যে (UK) মিশ্র জনগোষ্ঠীর (mixed background population) ক্রমবর্ধমান অনুপাত প্রায় ৯%, এবং ফ্রান্সে প্রায় ১২.২% জন্ম মিশ্র জাতিগত পটভূমি থেকে (mixed origin) এসেছে।
এ বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হল আন্তঃবিবাহের হার (intermarriage rates)। ২০০৬ সালের একটি গবেষণায় (study) ইউরোপের সাতটি দেশে (seven European countries) অভিবাসী সম্প্রদায়ের “এক্সোগামাস বিহেভিয়র (exogamous behavior)” বা বাইরের গোষ্ঠীতে বিয়ে করার প্রবণতা দেখা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, দ্বিতীয় প্রজন্মের (second generation) অভিবাসীরা প্রথম প্রজন্মের (first generation) তুলনায় বেশি হারে স্থানীয় বা অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে করে।
তবে “কোন গোষ্ঠীর মানুষ কোথায় বিয়ে করছে”—এতে বড় ধরনের সাংস্কৃতিক (cultural) পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত পশ্চিমা (Western) অভিবাসীরা স্থানীয়দের সঙ্গে বিয়ে করার প্রবণতা বেশি। কিন্তু তুরস্ক (Turkey) থেকে আগত অভিবাসীদের মাঝে এ হার সবচেয়ে কম—তারা সাধারণত নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যেই বিয়ে করে।
অবশ্য অন্য গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রবণতা দেখা যায়। যেমন যুক্তরাজ্যে, ভারতীয় (Indian) আর ক্যারিবিয়ান (Caribbean) অভিবাসীদের মধ্যে গোষ্ঠীর বাইরে বিয়ের হার তুলনামূলক বেশি। ফ্রান্সে, উত্তর আফ্রিকার (North African) অভিবাসীরা বেলজিয়ামে (Belgium) বসবাসরত মরক্কানদের (Moroccans) তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি হারে স্থানীয়দের সাথে বিয়ে করে। ফ্রান্সের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (French statistics office) তথ্যমতে, প্রায় ৪০% বিয়ে স্থানীয়দের (natives) সাথে হচ্ছে। তবে এখানে আরেকটি বিষয় বিবেচ্য—চতুর্থ প্রজন্মের (fourth generation) অনেকে যেহেতু স্থানীয় (native) হিসেবে গণ্য হয়, সেক্ষেত্রে বিয়ের বাইরে আসলে দু’পক্ষই সম্ভবত অভিবাসী বংশোদ্ভুত হতে পারে, কিন্তু কাগজে-কলমে একজনকে “স্থানীয়” ধরায় আন্তঃবিবাহের হারটা বেশি দেখাতে পারে।
নেদারল্যান্ডস সরকারের (Dutch government) ২০২২ সালের আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, মরক্কান (Moroccans) ও তুর্কিদের (Turks) মধ্যে স্থানীয়দের সাথে বিয়ে করার হার কম, কিন্তু ইন্দোনেশীয়দের (Indonesians) ক্ষেত্রে ডাচ (Dutch) নাগরিকদের সাথে বিয়ের হার অনেক বেশি।
সুতরাং, সব মিলিয়ে কী বলা যায়? অ-ইউরোপীয় জন্মের (non-European birth) উচ্চ হার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামীতে অ-ইউরোপীয় বংশোদ্ভুত (non-European descended) জনসংখ্যার অনুপাত বাড়বে। তবে ঠিক কতটা বাড়বে, তা নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অভিবাসী ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্মহার কেমন হবে এবং স্থানীয়দের জন্মহার কেমন থাকবে। যেমন নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্কে বিদেশী মায়েদের সন্তানের সংখ্যা স্থানীয় মায়েদের তুলনায় খুব বেশি নয়, কোনো ক্ষেত্রে সমান বা কমও হতে পারে। আবার ফ্রান্স, জার্মানি বা যুক্তরাজ্যে এটি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
এছাড়াও ভবিষ্যতে অভিবাসন (immigration) কীভাবে চলবে, সেটিও বড় ফ্যাক্টর। যদি অভিবাসন আরও বাড়ে, তাহলে অবশ্যই অ-ইউরোপীয় (non-European) বংশোদ্ভুত জনসংখ্যা আরও বাড়বে।
সব মিলিয়ে একটি মিশ্র চিত্র পাওয়া যায়। ইউরোপে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে স্পষ্টতই একটি বদল (demographic shift) ঘটছে, বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে (Western Europe) বৈচিত্র্য (diversity) বাড়ছে। কিছু দেশে এসব অভিবাসী সম্প্রদায় মূল জনসংখ্যা থেকে বিচ্ছিন্ন। আবার যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্সের মতো দেশে দেখা যাচ্ছে তারা হয়তো ধীরে ধীরে একটা মিশ্র-সাংস্কৃতিক (melting pot) রূপ নিচ্ছে, যেখানে স্থানীয় (native) ও কিছু অ-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর মধ্যে আন্তঃবিবাহ (intermarriages) ও মেলবন্ধন তুলনামূলক বেশি। তবে এদের মধ্যে নতুন কোন মূল্যবোধ (values) গড়ে উঠবে, কিংবা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলো ইউরোপীয় মূল্যবোধকে (European values) গ্রহণ করবে, নাকি নিজেদের সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখবে—সেটি এখনও উন্মুক্ত প্রশ্ন। অবশ্য, এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অন্য আরেকটি আলোচনার বিষয়।
Leave a Reply