Table of Contents
ভূমিকা
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একমত হওয়া যে কতটা কঠিন, তা সহজেই বোঝা যায় যদি আমরা এক রুম ভরা বন্ধুকে একটি বিষয় নিয়ে একমত করানোর চেষ্টা করি। আর এক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিদের একই সিদ্ধান্তে নিয়ে আসা—এটি নিঃসন্দেহে আরও কঠিন কাজ। তবু এই কঠিন কাজটাই করা প্রয়োজন, যখন একটি আন্তর্জাতিকভাবে আইনি-ভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি (internationally legally binding treaty) তৈরির কথা আসে। সম্প্রতি ইনসি ৫ (Inc5) সম্মেলনে প্রতিনিধিরা সমবেত হয়েছিলেন সামুদ্রিক পরিবেশসহ প্লাস্টিক দূষণের (plastic pollution) বিরুদ্ধে একটি বৈশ্বিক চুক্তি তৈরির লক্ষ্যে। এই লেখাটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে এই চুক্তি তৈরির প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে, কে কে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত, কী কী বৈজ্ঞানিক বিষয় এতে গুরুত্বপূর্ণ, কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে পারে।
বৈশ্বিক সমস্যা চিহ্নিত করা: প্লাস্টিক দূষণ সংকট
আন্তর্জাতিক চুক্তি তৈরির প্রথম ধাপ হলো এমন একটি বৈশ্বিক সমস্যা চিহ্নিত করা যেটার সমাধান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই ক্ষেত্রে সমস্যা হলো প্লাস্টিক দূষণ সংকট (plastic pollution crisis)। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি বৈশ্বিক সংকট, কারণ প্লাস্টিক এখন সর্বত্র। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) অনুসারে, বিশ্বব্যাপী বার্ষিক প্লাস্টিক উৎপাদন এখন ৪০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন অতিক্রম করেছে। আর ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে যত বিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে, তার কমপক্ষে ১০%-এরও কম পুনর্ব্যবহার (recycle) হয়েছে, প্রায় ১২% পুড়িয়ে (incinerate) ফেলা হয়েছে, আর বাকি বিশাল অংশই ল্যান্ডফিল (landfill) বা পরিবেশে (environment) ফেলে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের নদী ও মহাসাগরে।
প্রতি বছর আনুমানিক ২০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য জলজ বাস্তুতন্ত্রে (aquatic ecosystems) প্রবেশ করছে, এবং এটি ক্রমশ খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বুসানে বিজ্ঞানী নীল নাথান (Neil Nathan) এ বিষয়ে বলেছিলেন:
“আমার দল, যারা ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন, তারা একটি নতুন বৈশ্বিক মডেল তৈরি করছেন যা বিভিন্ন অঞ্চলের প্লাস্টিক উৎপাদন, ব্যবহার এবং এটির শেষমুহূর্তের ভাগ্য (end of life fate) বোঝায়। আমরা এখন থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত হিসাব করছি কী পরিমাণ প্লাস্টিক ব্যবহৃত হবে, কী পরিমাণ ল্যান্ডফিলে যাবে, কী পরিমাণ পুড়িয়ে ফেলা হবে, কী পরিমাণ পুনর্ব্যবহার করা হবে এবং কতটা প্রকৃতিতে ফেলে দেওয়া হবে। আমরা দেখতে পেয়েছি যে সমস্যার ব্যাপ্তি বিশাল। যদি আমরা কিছুই না করি, বা যদি চুক্তিটি যথেষ্ট দৃঢ় ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী না হয়, আমরা ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ প্লাস্টিক দূষণ প্রত্যক্ষ করব আমাদের পরিবেশে।”
দৃশ্যমান প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণের কেবল এক অংশ। ডক্টর ক্রিস্টোস সিমেয়োনিদেস (Dr. Christos Simeonides) বলছেন, আমরা যেসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক (microplastics) এবং ন্যানোপ্লাস্টিক (nanoplastics) নিয়ে জানি, সেগুলোও যথেষ্ট ভয়ংকর:
“গত ২০ বছরে আমরা বুঝতে পেরেছি প্লাস্টিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় ভেঙে যেতে পারে। এখন আমরা জানি, এরা আমাদের চারপাশের পরিবেশের সবখানেই আছে। আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের (air that we breathe) মধ্যেও আছে, পানীয় জলের (water that we drink) মধ্যেও আছে, এবং সেগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো আমাদের অন্ত্রে (guts) রয়েছে বলে আমরা এখন জানি। এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিধি এখনও সীমিত, তবে আমরা যা জানি তা উদ্বেগজনক।”
চুক্তি তৈরির কাঠামো: প্রথম পদক্ষেপ
এই গুরুতর প্লাস্টিক দূষণ সংকটের মুখে ২০২২ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ পরিষদ (United Nations Environment Assembly) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। তারা একটি রেজোলিউশন (Resolution) ৫/১৪ (514) পাস করে, যেখানে প্লাস্টিক দূষণ, বিশেষ করে সামুদ্রিক পরিবেশসহ, রোধে একটি আন্তর্জাতিকভাবে আইনি-ভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তি (internationally legally binding treaty) তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে সম্মতি দেওয়া হয়। এই রেজোলিউশন পাস হওয়ার পর, জাতিসংঘ (UN) গঠন করে ইন্টার গভর্নমেন্টাল নেগোশিয়েটিং কমিটি (Intergovernmental Negotiating Committee বা INC), যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা কাজ শুরু করেন, এবং এই কাজ ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ শেষ করার উচ্চাশা স্থির করা হয়।
আলোচনা কীভাবে চলে: INC সম্মেলনগুলোর ভেতর-বাহির
INC-১ থেকে ৪ পর্যন্ত বৈঠকে এবং মধ্যবর্তী বিভিন্ন ইন্টারসেশনাল বৈঠকে অনেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন এবং সম্ভাব্য চুক্তির ব্যাপ্তি (scope), উদ্দেশ্য (objectives) ও কাঠামো (structure) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আমরা সরাসরি এগিয়ে যাব ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত INC-৫ সম্মেলনে, যেখানে চূড়ান্ত আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, এবং একটি চূড়ান্ত চুক্তি (agreement) গৃহীত হওয়ার কথাও ছিল।
নভেম্বর ২০২৪-এর শেষ সপ্তাহে, প্রায় ১৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা বুসানে জড়ো হন এই লক্ষ্যে যে, তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ৩,৮০০ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন—প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক, সিভিল সোসাইটি (civil society), বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী সংগঠন, আদিবাসী জনগোষ্ঠী (indigenous groups) এবং বেসরকারি খাতের মানুষজন। অবশ্যই এখানে ফসিল ফুয়েল (fossil fuel) এবং রাসায়নিক শিল্পের (chemical industry) লবিস্টরাও (lobbyists) রেকর্ড সংখ্যায় হাজির ছিলেন।
দ্বন্দ্বময় স্বার্থ: দুটি প্রধান গ্রুপ
স্বাভাবিকভাবেই, প্লাস্টিক দূষণ সংকট নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে বেশ বড় মতপার্থক্য আছে, যা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি তৈরির পথে জটিলতা বাড়ায়। সাধারণভাবে, দুইটি প্রধান শিবির স্পষ্ট হয়ে ওঠে:
- হাই অ্যাম্বিশন কোয়ালিশন টু এন্ড প্লাস্টিক পলিউশন (High Ambition Coalition to End Plastic Pollution): নাম থেকেই বোঝা যায়, এটি প্রায় ৭০টি দেশের বড় একটি জোট—এর মধ্যে যুক্তরাজ্য (UK), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU), আফ্রিকার অনেক দেশ, ওসেনিয়া (Oceania) ও লাতিন আমেরিকার (Latin America) বহু দেশ অন্তর্ভুক্ত। রুয়ান্ডা (Rwanda), ফিজি (Fiji) ও পানামা (Panama) এই জোটের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। এই সব দেশ প্লাস্টিক দূষণ সমস্যার পুরো জীবনচক্র (whole life cycle), অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবহারের পর কী করা হবে—সবখানেই নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে। এদের দাবি, উৎপাদনের মাত্রাও কমাতে হবে।
- লাইক-মাইন্ডেড গ্রুপ (Like Minded Group): অপরদিকে, দ্বিতীয় গ্রুপ মূলত রাশিয়া (Russia), ইরান (Iran) ও সৌদি আরব (Saudi Arabia)-এর মতো বড় তেল-উৎপাদক (major oil producers) দেশ নিয়ে গঠিত। এরা বেশ দৃঢ়ভাবে যে কোনো ধরনের উৎপাদন হ্রাস বা ক্ষতিকর রাসায়নিক তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর কারণ, বিশ্ব ক্রমেই জ্বালানি (fuel) ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির (fossil fuels) ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছে; ফলে পেট্রোকেমিক্যালস (petrochemicals) — যেমন প্লাস্টিক — বড় তেল-উৎপাদকদের জন্য একটি বাঁচার পথ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধারণা করা হয়, চলতি দশকের যেকোনো সময় থেকেই তেলের চাহিদা বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে পেট্রোকেমিক্যালস।
সুতরাং, লাইক-মাইন্ডেড গ্রুপ প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাসের প্রস্তাবকে তাদের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখে এবং প্লাস্টিক দূষণের সমস্যাকে শুধুমাত্র রিসাইক্লিং (recycling) এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় (waste management) সীমাবদ্ধ রাখতে চায়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, বৈজ্ঞানিক তথ্য বলে দেয় যে কেবল রিসাইক্লিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দিয়ে এই সংকট পুরোপুরি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। নীল নাথান আবারও স্মরণ করিয়ে দেন:
“শুধু রিসাইক্লিং দিয়ে আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারব না। এটা অবশ্যই সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে একমাত্র উপায় নয়। ২০৫০ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যদি আমরা ডাউনস্ট্রিম (downstream) উদ্যোগে—যেমন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং—বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগও করি, তবু শেষ পর্যন্ত প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। এর কারণ, ২০৪০ সালের কাছাকাছি সময়ে অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত প্রবৃদ্ধির ফলে প্লাস্টিকের ব্যবহার আরও বেড়ে যাবে। যদি উৎপাদন কমানোর নির্দিষ্ট পদক্ষেপ না থাকে, পরিবেশে দূষণ চলতেই থাকবে। কাজেই সত্যিকার অর্থে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়তে হলে, আমাদের অবশ্যই উৎপাদন কীভাবে কমানো যায় সেদিকে জোর দিতে হবে।”
আলোচনা প্রক্রিয়া: কীভাবে এগোয়
আলোচনার শুরু, মাঝামাঝি ও শেষের দিকে যে বৃহৎ সমাবেশগুলো (plenary sessions) হয়, সেগুলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এখানে সব প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন এবং অনেকে তাদের জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন—কখনও তা অগ্নিঝরা ও তীব্র, কখনও বা লম্বা ও দীর্ঘায়িত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হয় ছোট ছোট যোগাযোগ দলগুলোতে (contact groups), যেখানে সম্ভাব্য চুক্তির আলাদা আলাদা ধারাগুলো (specific articles) নিয়ে আলোচনা হয়।
আদর্শ পরিস্থিতিতে এই যোগাযোগ দলগুলো ধাপে ধাপে চুক্তির লিখিত খসড়া প্রস্তুত করবে, যা পরে আইনি খুঁটিনাটি (legal drafting) যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হবে। তারপর চূড়ান্ত চুক্তি প্লেনারি (plenary) অধিবেশনে বিবেচনা ও অনুমোদন পেতে পারত (যেখানে সকল সদস্য বা অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি প্রয়োজন), এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর স্বাক্ষর ও অনুমোদনের (ratification) মধ্য দিয়ে কার্যকর হতো।
কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি এত সহজে এগোয় না। মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই বিরোধ দেখে বোঝা যায় কেন আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রক্রিয়া অগ্রসর করা কঠিন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানাপোড়েন চলে। উদাহরণস্বরূপ, INC-5-এর উদ্বোধনী অধিবেশনেই (opening plenary) সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো লাইক-মাইন্ডেড দেশগুলোর ওপর অভিযোগ ওঠে যে তারা দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়াগত বিতর্কের (procedural matters) মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ বা দেরি ঘটানোর কৌশল (delay tactics) নিচ্ছে, যা আলোচনা এগিয়ে নেওয়া ব্যাহত করছে।
অবশেষে কিছুটা দেরিতে হলেও যোগাযোগ দলগুলোর (contact groups) কাজ শুরু হয়। কিন্তু মাঝামাঝি সময়ের মূল মূল্যায়ন বৈঠকে (midweek stocktake) সম্মেলনের চেয়ার স্পষ্টই বলেন যে, অগ্রগতি খুবই ধীর—কিংবা একপ্রকার স্থবির। এর অন্যতম প্রধান অন্তরায় হলো “সম্মতি” (consensus) প্রয়োজনীয়তা, যা অনেকদিন ধরেই পরিবেশ-বিষয়ক আলোচনা ও চুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। লাইক-মাইন্ডেড গ্রুপের দেশগুলো এই নীতির পক্ষে ছিল। এর মানে, কোনো বিষয়ে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সব পক্ষের একমত হওয়া চাই। একমাত্র একটি দেশও আপত্তি তুললে সেটি কার্যকর করা যায় না। পক্ষগুলো যখন উৎপাদন হ্রাস, ক্ষতিকর রাসায়নিকের (harmful chemicals) ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, আর্থিক সহায়তা (financing) ইত্যাদি নিয়ে একেবারেই ভিন্ন অবস্থানে থাকে, তখন এই অবস্থায় একটি ঐক্যবদ্ধ চুক্তিতে পৌঁছানো খুবই কঠিন হয়ে ওঠে।
চূড়ান্ত ফলাফল: অনিশ্চয়তার মধ্যে নতুন সম্ভাবনা
সপ্তাহের শেষ নাগাদ বুসানে (Busan) চূড়ান্ত কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। ২০২৪ সালের শেষ সময়সীমা পার হয়ে যায়, এবং প্রতিনিধিরা ২০২৫ সালে পুনরায় একত্রিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন—এটি নাম দেওয়া হয়েছে “INC ৫.২” (Inc 5.2)। সম্মেলনের চেয়ার যে খসড়া পাঠ (text) প্রস্তুত করেছেন, সেটিকে ভিত্তি হিসেবে ধরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে সম্মতি হয়। তবে ওই খসড়ায় অসংখ্য বন্ধনী (brackets) রয়েছে, যার মধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে দলগুলো এখনো ঐ বিষয়গুলিতে একমত হতে পারেনি।
উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো, বুসানে (Inc5) কোনো বড় সাফল্য ছাড়াই শেষ হলেও এটিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই আরও জোরালো পদক্ষেপ চায়। উদাহরণস্বরূপ, ১০০টির বেশি দেশ প্লাস্টিক উৎপাদন সীমিত করার পক্ষে মত দিয়েছে, এবং ১৪০টির বেশি দেশ ক্ষতিকর রাসায়নিক ও কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করার (phase out) পক্ষে মত দিয়েছে। তাই একথা স্পষ্ট যে, বৈজ্ঞানিক সুপারিশ অনুসরণ করে, প্লাস্টিকের পুরো জীবনচক্র—উৎপাদন, ডিজাইন (design) ও নিষ্পত্তি (disposal)—সব কিছু বিবেচনা করে একটি শক্তিশালী সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন এমন একটি চুক্তিতে, যা সত্যিকার অর্থেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী গড়ার পথ প্রশস্ত করবে।
Leave a Reply