১৮ ডিসেম্বর, ২৪ সংবাদ: আয়ারল্যান্ড-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব, চাগোস নিয়ে ইউকে-ইউএস-মরিশাস দ্বন্দ্ব, ইরানে কঠোর হিজাব আইন স্থগিত, রাশিয়ায় জেনারেল হত্যার সন্দেহভাজন আটক

আয়ারল্যান্ড (Ireland)-ইসরায়েল (Israel) কূটনৈতিক বিরোধের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা

আয়ারল্যান্ড (Ireland) এবং ইসরায়েল (Israel)-এর মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক বিরোধ আরও গভীরতর হয়েছে। ইসরায়েল (Israel) সম্প্রতি ডাবলিনে (Dublin) অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরায়েলের (Israel) পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’র (Gideon Saar) এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে আয়ারল্যান্ডের (Ireland) সরকারকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের নীতিকে তিনি চরম পর্যায়ের “অ্যান্টি-ইসরায়েল (anti Israel)” বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলি (Israeli) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ড (Ireland) ফিলিস্তিন (Palestinian) রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (International Criminal Court – ICC) ইসরায়েলি (Israeli) নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাকে সমর্থন করা, এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার (International Court of Justice – ICJ)-এ ইসরায়েলের (Israel) বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) মামলাকে সহযোগিতা করা—এসবই ইসরায়েলের (Israel) প্রতি আয়ারল্যান্ডের (Ireland) শত্রুতামূলক মনোভাবের প্রমাণ।

ইসরায়েলের (Israel) ডাবলিন দূতাবাস জানায় যে আয়ারল্যান্ড (Ireland) বৈধ সমালোচনার সীমা অতিক্রম করেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড ও ভাষ্য ইসরায়েলকে (Israel) প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্যভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের (Ireland) তাইশাখ (Taoiseach) বা প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস (Simon Harris) ইসরায়েলের (Israel) এই পদক্ষেপকে “বিভ্রান্তিকর কূটনীতি (diplomacy of distraction)” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনি জানেন আমি কোন জিনিসটাকে নিন্দা করি? শিশু হত্যা। আমি মনে করি এটি নিন্দনীয়।” তিনি আরও বলেন, গাজায় (Gaza) যে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং আয়ারল্যান্ড (Ireland) বরাবরই ফিলিস্তিনিদের (Palestinians) পক্ষ অবলম্বন করে কথা বলে আসছে বলে তিনি গর্বিত।

এই বাদানুবাদের পর ইসরায়েলের (Israel) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিসকে (Simon Harris) ইহুদিবিদ্বেষী (anti Semitic) বলে আখ্যায়িত করেন এবং ইসরায়েলের (Israel) বিরুদ্ধে উত্থাপিত শিশুদের উপবাসে রাখা বা সাহায্য পাঠাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। জবাবে সাইমন হ্যারিস (Simon Harris) জানান, তিনি ইসরায়েলি (Israeli) সরকারের কাছ থেকে আসা ব্যক্তি-নির্দিষ্ট এবং মিথ্যা অভিযোগের জবাব দেবেন না।

আয়ারল্যান্ডের (Ireland) প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি. হিগিন্স (Michael D. Higgins) অবশ্য ইসরায়েলি (Israeli) রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই ধরনের মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে তিনি ফিলিস্তিনি (Palestinian) রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিগিন্স বলেন, আয়ারল্যান্ডের (Ireland) জনগণকে ইহুদিবিদ্বেষী (antisemitism) বলা “গভীর অপবাদ (deep slander)”। তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ড (Ireland) ইসরায়েলি (Israeli) প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) কর্মপন্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, প্রতিবেশী তিনটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে তার বিরোধিতা করছে। আয়ারল্যান্ডের (Ireland) ইতিহাসের কারণে “উচ্ছেদ (dispossession), দখলদারিত্ব (occupation)” ইত্যাদি শব্দের মর্ম আয়ারল্যান্ডের (Ireland) মানসে গভীরভাবে প্রোথিত।

আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট (Irish Independent) পত্রিকা জানায়, আইরিশ সরকার (Irish government) এই বিরোধের সম্ভাব্য পরিণতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা উল্লেখ করে যে ইসরায়েল (Israel) দূতাবাস বন্ধের ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডকে (Ireland) বিশেষভাবে বেছে নেওয়া হওয়াটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য (Middle East) থেকে আসা খবরে গাজায় (Gaza) যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকরা সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে হয়তো শিগগিরই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। গাজা (Gaza) স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সোমবার জানান, গত ১৪ মাস ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

কেন আয়ারল্যান্ড হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে ফিলিস্তিনপন্থী সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে এখানে যান।

তথ্যসূত্র

https://www.rte.ie/news/ireland/2024/1217/1486987-ireland-israel/
https://www.independent.ie/irish-news/president-michael-d-higgins-says-it-is-slander-for-israeli-minister-to-accuse-irish-people-of-antisemitism-over-gaza-stance/a348839003.html
https://www.reuters.com/world/middle-east/israeli-foreign-minister-brands-irish-pm-antisemitic-2024-12-16/
https://news.un.org/en/story/2024/12/1158206

মরিশাস (Mauritius)-ইউকে (UK) চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Islands) সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে সংকট

যুক্তরাজ্য (United Kingdom – UK) সরকারের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা, কারণ মরিশাসের (Mauritius) নতুন প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Islands) নিয়ে ইউকের (UK) সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি তাদের সন্তুষ্ট করেনি। তিনি চুক্তিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। মূল চুক্তিটি অক্টোবরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে ইউকে-র (UK) লেবার সরকার মরিশাসের (Mauritius) সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে ইউকে (UK) অন্তত ৯৯ বছরের জন্য দিয়েগো গার্সিয়া (Diego Garcia) দ্বীপের লিজ (lease) ধরে রাখত, যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র (US)-ইউকে (UK) সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের অল্প কিছু পরেই মরিশাসে (Mauritius) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন সরকার গঠিত হয়। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাভিন রামগুলান (Navin Ramgoolen) চুক্তির পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন এবং মরিশিয়ান (Mauritian) সংসদে (parliament) মঙ্গলবার জানান, এই চুক্তি দেশটির প্রত্যাশিত সুবিধা দিতে পারবে না। তিনি লন্ডনে (London) পাল্টা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। যদিও তিনি পাল্টা প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ করেননি, কিন্তু উল্লেখ করেছেন যে মরিশাস (Mauritius) এখনো যুক্তরাজ্যের (UK) সাথে একটি সমঝোতায় উপনীত হতে চায় এবং যুক্তরাজ্যের (UK) জবাব বর্তমানে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য (UK) সরকার দাবি করেছে যে চুক্তিটি ভেঙে যাচ্ছে না, বরং নতুন মরিশিয়ান (Mauritian) সরকারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যুক্তিসঙ্গত। তবে কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন যে বাইডেন প্রশাসন (Biden administration) যে চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছিল, তা হয়তো ভাবি ট্রাম্প প্রশাসনের (Trump administration) অধীনে বাধাগ্রস্ত বা বিপন্ন হতে পারে।

চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে দ্বন্দ্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে যান।

তথ্যসূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/cm2ekk2pv1no
https://www.theguardian.com/world/2024/dec/17/uk-government-denies-rift-with-mauritian-pm-over-chagos-island-deal

ইরানে কঠোর হিজাব (hijab) আইনের কার্যকরকরণ স্থগিত

অন্য এক খবরে, ইরান (Iran) মহিলাদের জন্য কড়া হিজাব আইন কার্যকর স্থগিত করেছে। এই আইনে কঠোর শাস্তির বিধান ছিল যারা হিজাব পরিধান করতে অস্বীকার করে তাদের জন্য, পাশাপাশি যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এদের সেবা দিত তাদের জন্যও। আন্তর্জাতিক চাপ এবং ইরানের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসউদ পসেসকিয়ান (Massoud Possesskian)-এর বিরোধিতার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি সতর্ক করেছিলেন যে কঠোর হিজাব আইন ২০২২ সালে মাহজো আমিনির (Mahzo Amini) মৃত্যুর পর যেসব বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল সেরকম আরো বিক্ষোভ উস্কে দিতে পারে।

মঙ্গলবার ইরানের (Iran) ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহরাম দাবিরি (Shahram Dabiri) ঘোষণা দেন যে আইনটি পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে (National Security Council), এবং এখন এই আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অনেক ইরানি (Iranian) নারী এখনও বাধ্যতামূলক হিজাব বিধি অমান্য করছেন, যা ইরানের (Iran) কঠোর ইসলামপন্থী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের প্রতিফলন।

তথ্যসূত্র

https://www.dw.com/en/iran-temporarily-halts-strict-new-headscarf-law/a-71088907

রাশিয়ায় জেনারেল হত্যার সন্দেহভাজন আটক: ইউক্রেনের সম্পৃক্ততা সন্দেহ

গতকালের ডেইলি ব্রিফিং (Daily Briefing)-এর মূল খবরের হালনাগাদে জানা যাচ্ছে, রাশিয়া (Russia) বলছে তারা একজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে, যিনি মস্কোতে (Moscow) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইগর কুরিলভ (Igor Kurilov)-কে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার এই বোমা হামলার ঘটনায় ইগর কুরিলভ (Igor Kurilov) (যিনি রাশিয়ার (Russia) পারমাণবিক, জীবাণু ও রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ছিলেন) তার বাসভবনের বাইরে নিহত হন। একই সাথে তার সহযোগীরাও নিহত হন। একটি ইলেকট্রিক স্কুটারে রাখা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

ইউক্রেনের এসবিইউ (SBU) গোয়েন্দা সংস্থা এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। তারা অভিযোগ করে যে রাশিয়া (Russia) ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা রাশিয়া (Russia) অস্বীকার করে।

রাশিয়া (Russia) জানায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইউক্রেনীয় বিশেষ পরিষেবার (Ukrainian special services) নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। এফএসবি (FSB) – রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত এক ভিডিওতে এক গম্ভীর চেহারার কৃষ্ণকেশী ব্যক্তি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে স্বীকারোক্তি দেন যে তাকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (European Union) প্রবেশের সুযোগের বিনিময়ে কুরিলভকে (Kirilov) হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

এফএসবি (FSB) জানায়, ইউক্রেনের (Ukraine) নির্দেশে ওই ব্যক্তি মস্কোতে (Moscow) গিয়েছিলেন এবং সেখানেই একটি হাতে-তৈরি বিস্ফোরক ডিভাইস (homemade explosive device) পান। সেটি তিনি একটি ইলেকট্রিক স্কুটারে স্থাপন করে কুরিলভের (Kirilov) অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের প্রবেশমুখে রেখে যান। এরপর তিনি একটি গাড়ি ভাড়া করেন এবং ড্যাশবোর্ডে একটি ক্যামেরা স্থাপন করেন, যা ইউক্রেনের দনিপ্রো (Dnipro) শহরে তার নির্দেশদাতাদের কাছে সরাসরি সম্প্রচার করছিল। এফএসবি (FSB)-র ভাষ্যমতে, যখন তারা দেখল কুরিলভ (Kirilov) বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন, তখন ওই ব্যক্তিকে দূরবর্তী নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাশিয়া (Russia) এই হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে অঙ্গীকার করেছে। এটি এমন একটি হত্যা, যা রাশিয়ান (Russian) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে শত্রুপক্ষের বেশ গভীরে গিয়ে পরিচালিত হয়েছে, এবং ইউক্রেনীয় (Ukrainian) কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার (Russia) নিরাপত্তা পরিষদের (Security Council) উপপ্রধান দিমিত্রি মেডভেদেভ (Dmitry Medvedev) নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা আছে তাদের ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র

https://www.reuters.com/world/europe/russia-detains-suspect-over-murder-general-investigative-committee-says-2024-12-18/
https://www.ft.com/content/b3a24ce6-5d1a-4773-b6eb-96f5cf676a6b
https://www.bbc.co.uk/news/articles/cge9rv38x98o

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.