Table of Contents
ভূমিকা
যখন আসাদের (Assad) শাসন প্রশাসন পতনের মুখে পড়ল, তখন এক বড় প্রশ্ন ছিল—সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে কার্যত (de facto) কুর্দি রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে, তার ভবিষ্যৎ কী হতে পারে। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল, কুর্দিরা নিরাপদ থাকবে। নতুন বিদ্রোহী সরকার (rebel government) বারবার জানিয়েছিল যে তারা সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করবে, আর শোনা যাচ্ছিল যে তুরস্কের (Turkey) মদদপুষ্ট বাহিনী এবং কুর্দি বাহিনীর (Kurdish forces) মধ্যে ইউফ্রেটিস (Euphrates) নদীর কাছাকাছি একটি মার্কিন (US) মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির (ceasefire) সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক দিনে, তুরস্ক-সমর্থিত (Turkish proxies) গোষ্ঠীগুলো আবার কুর্দি অবস্থানগুলোর উপর হামলা শুরু করেছে। একই সময়ে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া মার্কিন কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে (Turkish Syria border) তুর্কি সেনাদের সমাবেশ দেখে মনে হচ্ছে যে একটি আক্রমণ খুব দ্রুত শুরু হতে পারে।
এই লেখায় আমরা দেখব—কেন সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কার্যত গড়ে ওঠা এই কুর্দি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে , কেন তারা আবার এক আক্রমণের পরিকল্পনা করে থাকতে পারে এবং এরপর কী ঘটতে পারে।
সিরিয়া কীভাবে কার্যত দুটি অংশে বিভক্ত হল?
তুরস্ক কেন সিরিয়ায় আক্রমণ করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা বুঝতে হলে জানতে হবে—সিরিয়া এখন কার্যত (de facto) দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। বিষয়টি হল, ২০১০ সালের শুরুর দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ (civil war) শুরু হলে, দেশের উত্তরের (north) কুর্দি সংখ্যালঘু (Kurdish minority), যারা বরাবরই বেশি রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন (political autonomy) চাইত, সুযোগ বুঝে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়।
এই রাষ্ট্রের সরকারিভাবে নাম রাখা হয়েছিল অটোনোমাস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব নর্থ অ্যান্ড ইস্ট সিরিয়া (Autonomous Administration of North and East Syria), তবে সাধারণভাবে এটি রোজাভা (Rojava) নামেই পরিচিত। রোজাভা (Rojava) আসলে কুর্দি রাষ্ট্র নয় বলেই প্রচার করা হয়; এর সংবিধানে (constitution) বলা আছে যে অঞ্চলের সব জাতিগোষ্ঠীর (ethnic groups) মধ্যে সমতা রক্ষা করা হবে। এমনকি, সেখানে কুর্দিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কি না, সেটিও স্পষ্ট নয়। তবে এর সামরিক বাহিনী—সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (Syrian Democratic Forces বা SDF)—মূলত কুর্দি বাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত, আর অঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক দল, ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি (Democratic Union Party), কুর্দিদের দল।
রোজাভার প্রধান রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো জোর দিয়ে বলে যে তারা স্বাধীনতা চায় না। বরং তারা চায়—একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় (federal) সিরিয়ার (Syria) মধ্যে রোজাভা স্বায়ত্তশাসিত (autonomous) থাকুক (সম্ভবত ইরাকের (Iraq) কুর্দিস্তান অঞ্চলের (Kurdistan region) মতো) আর তারা মনে করে তাদের বর্তমান শাসনব্যবস্থা (governance structure) সমগ্র সিরিয়ার জন্য একটি মডেল হতে পারে। তবুও সবার অনুমান ছিল—যদি রোজাভাকে উল্লেখযোগ্য মাত্রার স্বায়ত্তশাসন না দেওয়া হয়, তবে তারা সিরিয়ার বাকি অংশের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা সহজে মেনে নেবে না।
গৃহযুদ্ধ চলাকালে রোজাভার সীমানা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়েছে, বিশেষ করে ২০১৭ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র (US) এসডিএফের (SDF) সঙ্গে জোট বাঁধে আইএসআইএসকে (ISIS) মধ্য সিরিয়া থেকে হটাতে। এসডিএফ তখন নবদখলকৃত এলাকাগুলোকে রোজাভার অংশ হিসেবেই ঘোষণা করে। বর্তমানে, এসডিএফ ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বদিকের প্রায় সব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকি পশ্চিম তীরে (western bank) কিছু শহরও তাদের দখলে আছে—যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল মান্বিজ (Manbij) এবং দেইর ইজ্ জোর (Deir EZ Zur)।
তুরস্কের দীর্ঘদিনের কুর্দি-সংকট
রোজাভার এই বিস্তার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ এরদোয়ানকে (Recep Erdogan) প্রবলভাবে বিচলিত করেছিল। কারণ, তুরস্ক বহুদিন ধরে দেশের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী (Kurdish separatist) আন্দোলনের সঙ্গে লড়ে আসছে, যেখানে প্রায় ২ কোটি কুর্দি বাস করে। আশির দশকে এই সংকট তীব্র রূপ নেয়, যখন পিকেকে (PKK) নামে পরিচিত প্রো-ইন্ডিপেনডেন্স কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি (Kurdish Workers Party) তুর্কি সরকারের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ (insurgency war) শুরু করে।
আশির দশকের শেষ দিকে ধারাবাহিক অন্তর্দ্বন্দ্ব (serial infighting) এবং সাধারণ কুর্দিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারণে পিকেকে সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে ইরাকের উত্তরে (Northern Iraq) একটি স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চল (autonomous Kurdish region) গঠনের পর পিকেকে আবার উদ্দীপনা পায়। ওই সময়ে জাতিসংঘ (UN) সমর্থিত একটি নো-ফ্লাই জোন (no fly zone) ওই অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইরাকি কুর্দিস্তান (Iraqi Kurdistan) পিকেকের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় এবং অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ২০০০-এর দশকে এসে তাদের বিদ্রোহ আবার জোরদার হয়।
প্রায় ৫০ বছর ধরে চলমান এই দ্বন্দ্ব যেখানে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি লোকের প্রাণ গেছে, সেখানে ‘কুর্দি প্রশ্ন’ (Kurdish question) যে তুরস্কের প্রধান পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার হবে, তা আর আশ্চর্যের কিছু নয়। সুতরাং এরদোয়ান স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন ছিলেন যে দেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটি কুর্দি রাষ্ট্র গড়ে উঠলে তুরস্কের অভ্যন্তরে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদী (separatist) মানসিকতা আরও উসকে দিতে পারে এবং কুর্দি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এই রাষ্ট্রকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
২০১৯ সালের তুরস্কের আগ্রাসন ও বাফার জোন
এই উদ্বেগ থেকেই ২০১৯ সালে তুরস্ক রোজাভায় আক্রমণ চালায়, উদ্দেশ্য ছিল একটি ‘বাফার জোন’ (buffer zone) তৈরি করা। বর্তমানে তুর্কি রাষ্ট্র কার্যত সিরিয়ার উত্তরে দুটি বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে স্থানীয়দের মধ্যে লিরা (lira) চালু আছে, সরকারী কর্মচারীরা (civil servants) বেতন পায় তুরস্ক সরকারের কাছ থেকে, আর বিদ্যুৎ (electricity) আসে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ-গ্রিড (electricity grid) থেকে।
এ ছাড়া তুরস্ক উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে (rebel groups) সহায়তা করেছিল কুর্দিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। তুরস্ক এইচটিএসকে (HTS – Hay’at Tahrir al-Sham) সমর্থন দিয়েছিল, যারা বিদ্রোহীদের পক্ষে আসাদ সরকারকে (Assad) উৎখাত করার সাম্প্রতিক অভিযানে (offensive) নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু তারা আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে (Syrian National Army বা SNA) (যা আগে ইদলিবে (Idlib) অবস্থান করত) আরও বেশি সমর্থন দিয়েছিল। বর্তমানে এসএনএ (SNA) প্রায় তুরস্কের প্রক্সি বাহিনীতে (Turkish proxy group) পরিণত হয়েছে, এবং তাদের প্রধান কাজ কুর্দিদের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
এই কারণেই, যখন এইচটিএস (HTS) আলেপ্পো (Aleppo) থেকে দামাস্কাসের (Damascus) দিকে এগোচ্ছিল, এসএনএ (SNA) ঠিক সেই সময়ে ইউফ্রেটিসের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত কয়েকটি কুর্দি ঘাঁটির মধ্যে অন্যতম মানবিজে (Manbij) কুর্দি বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। এই মানবিজ ছিল ইউফ্রেটিসের পশ্চিম তীরে (west of the Euphrates) কুর্দিদের হাতে থাকা অল্প কয়েকটি এলাকাগুলোর অন্যতম।
এইচটিএস ক্ষমতায় আসার পর রোজাভার ভবিষ্যৎ
যখন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠল যে এইচটিএস এবং তাদের নেতা আবু মোহাম্মদ আল জোলানি (Abu Mohammed Al Jilani) সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল দখলে নিয়েছে, তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন—রোজাভার ভবিষ্যৎ কী হবে? প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল যে রোজাভা নিরাপদ থাকবে, কারণ এইচটিএস ও জোলানি বারবার বলেছিল যে তারা সিরিয়ার সংখ্যালঘুদের (minorities) অধিকারকে সম্মান করতে চায় এবং নতুন সিরিয়ায় রোজাভাকে অন্তত কিছুটা স্বায়ত্তশাসন দেবে বলে ইঙ্গিত করেছিল।
কিন্তু এইচটিএস (HTS) মুখে যতই বন্ধুত্বপূর্ণ লাগুক না কেন, তুরস্ক-সমর্থিত এসএনএ (SNA) কুর্দি অবস্থানের উপর হামলা চালিয়ে যেতে থাকে। তখন কুর্দিরা যুক্তরাষ্ট্রের (US) কাছে সাহায্য চায়, যাদের এখনো আনুমানিক ৯০০ সৈন্য (troops) সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের সঙ্গে একটি সমঝোতা করার চেষ্টা করেছিল, যার সারকথা ছিল কুর্দিদেরকে ইউফ্রেটিসের পূর্বদিকে (east of the Euphrates) পিছু হটতে রাজি করানো—বিনিময়ে তুরস্ক ও তাদের সমর্থিত বাহিনী যেন কুর্দিদের উপর আর আক্রমণ না করে।
কিন্তু এ নিয়ে বার্তা মিশ্র (mixed) ছিল। পেন্টাগন (Pentagon) প্রথমে দাবি করেছিল যে তুরস্কের তরফ থেকে কোনো বড় ধরনের উত্তেজনা (escalation) থেকে বিরত থাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যেন যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। কিন্তু এসডিএফের (SDF) পক্ষ থেকে বলা হয়, তুরস্ক-সমর্থিত এসএনএ (SNA) ইউফ্রেটিসের পূর্বদিকে, বিশেষ করে কোবানির (Kobani) আশপাশে, কুর্দি অবস্থানের উপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। কোবানি তুরস্কের সীমান্তের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত, এবং বাফার জোনের (buffer zones) মধ্যবর্তী অঞ্চলে পড়ে।
এর চেয়েও বেশি উদ্বেগের বিষয় হল, বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (Turkish Defence Ministry) জানায় যে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি (ceasefire deal) হয়নি, আর তারা এসডিএফের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাবে না। একই সময়ে, মার্কিন (US) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে তুরস্ক সিরিয়া সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করছে, যা দেখে মনে হয় যে কোনও মুহূর্তে একটি পূর্ণমাত্রার আক্রমণ (full scale invasion) শুরু হতে পারে।
সামনে কী হতে যাচ্ছে
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, তুরস্কের আক্রমণ এখন বেশ সম্ভাব্য হয়ে উঠেছে। এরদোয়ান অতীতেও সিরিয়ার ভূখণ্ড দখল করতে পিছপা হননি, আর বর্তমান সৈন্য-সমাবেশ ২০১৯ সালের মতোই মনে হচ্ছে, যখন শেষমেশ রোজাভায় আক্রমণ করা হয়েছিল।
মূল প্রশ্ন হল—এই আক্রমণের মাত্রা কতটা বিস্তৃত হবে? মোটাদাগে, এরদোয়ানের সামনে দুটি পথ খোলা আছে –
প্রথমত, তুরস্ক তাদের ইতোমধ্যে থাকা দুটি বিচ্ছিন্ন বাফার জোনকে একত্রিত করার জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভূখণ্ড দখল করতে পারে। এইভাবে তারা সিরিয়ার উত্তরে একটি সংযুক্ত (contiguous) বাফার জোন তৈরি করবে।
দ্বিতীয়ত, আরেকটি পথ হল, রোজাভা পুরোপুরি দখল করে (full scale invasion) ওই অঞ্চলে থাকা সব কুর্দি বাহিনীকে (Kurdish forces) নির্মূল করা—যা এরদোয়ানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্যের মধ্যে পড়ে।
আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রথম বিকল্পটি বর্তমানে বেশি সম্ভাবনা রাখে। কারণ এরদোয়ান হয়তো সম্পূর্ণ আক্রমণ চালানোর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Trump) ক্ষমতায় বসার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন—যদি ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসেন, তিনি হয়তো এই ৯০০ মার্কিন সৈন্য (US troops)-কে সিরিয়া থেকে সরিয়ে নেবেন। কারণ তার প্রথম মেয়াদকালে ট্রাম্প কুর্দিদের প্রতি সেভাবে ইতিবাচক ছিলেন না এবং তুর্কি অনুরোধে সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারে আগ্রহী ছিলেন। ওই মার্কিন সৈন্যরা এখন কার্যত কুর্দিদের জন্য একটি নরম নিরাপত্তা-জাল (soft security guarantee) হিসেবে কাজ করছে।
তথ্যসূত্র
1 – https://en.wikipedia.org/wiki/Autonomous_Administration_of_North_and_East_Syria
2 – https://en.wikipedia.org/wiki/Syrian_Democratic_Forces
3 – https://www.economist.com/middle-east-and-africa/2019/10/14/turkeys-invasion-has-thrown-a-once-stable-corner-of-syria-into-chaos
4 – https://www.economist.com/middle-east-and-africa/2021/03/13/ten-years-of-war-have-broken-syria-into-pieces
5 – https://www.ft.com/content/a14241de-8dbf-4a69-b064-2991f5992503
6 – https://arabcenterdc.org/resource/syrias-kurds-facing-dangerous-headwinds/
7 – https://x.com/ragipsoylu/status/1869672287827603760
8 – https://www.jpost.com/middle-east/article-833777
Leave a Reply