কেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একটি সুবিশাল প্রতারণা বা স্ক্যাম?

একটি মানব জীবনের মূল্য কত?

আপনাকে একটা প্রশ্ন করি—একজন মানুষের জীবনের মূল্য আপনি কত ধার্য করবেন? যুক্তরাষ্ট্রের (US) হিসেবে এটার উত্তর প্রতি বছর প্রায় ৭,০০০ ডলার (dollars)। এটি হচ্ছে গড় বার্ষিক স্বাস্থ্যবিমার (health insurance) খরচ। যুক্তরাষ্ট্র অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে স্বাস্থ্যসেবায় বেশি খরচ করে, অথচ উন্নত দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মানে সেটি সর্বনিম্ন পর্যায়ে থেকে যায়। এদিকে চিকিৎসা পেতে এখনও দেশটির নাগরিকদের টাকা দিতে হয়। এটি এমন এক ব্যবস্থা যা সম্পূর্ণভাবে মুনাফার ওপর নির্ভরশীল এবং প্রতি বছর রোগীদের কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত আদায় করে। এ ব্যবস্থায় কে কিভাবে লাভবান হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যন্ত বদলে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা-কর্মীদের (medical personnel) সেলিব্রেটির মতো দেখা হয়, পেশাজীবীর মতো নয়। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্থনি ফাউচিকে (Anthony Fauci) কেউ কেউ ত্রাণকর্তা হিসেবে দেখে, আবার অন্যদের চোখে তিনি এক খলনায়ক। কিন্তু কেন এই ব্যবস্থা এত ভঙ্গুর? এর পেছনে মূল কারণ অর্থ, আর কিছু কোম্পানি যারা স্বাস্থ্যসেবাকে পরিণত করেছে ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতারণার (scam) যন্ত্রে, যেখানে মানুষের জীবনের চেয়ে প্রোফিটকে বেশি মূল্য দেয়া হয়।

কেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে

প্রায় সব বিদেশির চোখে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা একটা সম্পূর্ণ নৈরাজ্য (dumpster fire) বলে মনে হয়। অথচ অনেক আমেরিকানের কাছে এটা স্বাভাবিক, এমনকি কারো কারো কাছে বেশ ভালোও লাগে। কিন্তু বাস্তবে এটি স্বাভাবিক থেকে অনেক দূরে। প্রথমে কিছু তথ্যের দিকে তাকাই, যা স্পষ্ট করবে এই পরিস্থিতি কতটা খারাপ।

কানাডায় (Canada) একটি ইনসুলিনের (insulin) ভায়াল (vial) দাম প্রায় ৩০ ডলার, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে একই কারখানায় তৈরি একই ওষুধের দাম ১০ গুণ বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় (Australia) এইচআইভি (HIV) প্রতিরোধী ওষুধ ট্রুভাডা (Truvada) মাত্র ৮ ডলার, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে সেটা ২,০০০ ডলার। এই ধরনের উচ্চ মূল্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যবিমা প্রায় অপরিহার্য। কিন্তু বিমা থাকা সত্ত্বেও অনেক আমেরিকানের জন্য চিকিৎসা বিল পরিশোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

৬৩% ভুক্তভোগী তাদের চিকিৎসার জন্য সঞ্চয়ের (savings) বেশিরভাগ বা সবটুকু ব্যয় করেন, এবং ৪০%-এর বেশি মানুষকে চিকিৎসা খরচ মেটাতে দ্বিতীয় চাকরি নিতে হয়। এতো বিশাল চিকিৎসা ব্যয় এমন এক বিপুল সমস্যার সৃষ্টি করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তিগত দেউলিয়া-অবস্থার (personal bankruptcies) দুই-তৃতীয়াংশ চিকিৎসা খরচের সাথে জড়িত। প্রতি বছর প্রায় অর্ধ-মিলিয়ন (৫ লক্ষ) পরিবার চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।

অথচ বিশ্বের অন্যত্র এরকম হওয়াটা একটি অস্বাভাবিক বিষয়। আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র উন্নত দেশ, যেখানে সার্বজনীন (universal) স্বাস্থ্যসেবা নেই। এমনকি অনেক অনুন্নত দেশেও নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা আছে, যেমন ইরান (Iran), বতসোয়ানা (Botswana), কিউবা (Cuba), রুয়ান্ডা (Rwanda), পাকিস্তান (Pakistan)। তাই অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি যে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো চিকিৎসা নামক একটি মৌলিক মানবাধিকারে (basic human right) বাধা দিচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে বিগ বিজনেসের (big business) হাতে পরিচালিত এক অদ্ভুত প্রভাব ও প্ররোচনা, যেখানে প্রথম কুশীলব হচ্ছে স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানিগুলো (health insurers)।

স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানিগুলোর ম্যানিপুলেশন বা প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের একটি “স্বাভাবিক” হস্পিটাল বিলের চিত্রটা অনেকটা এরকম – ১১ দিনের হাসপাতাল থাকায় বিল এলো ধরুন ৩,৬০,১০৪ ডলার! কিন্তু ভাগ্যক্রমে এই রোগীর স্বাস্থ্যবিমা ছিল, যা তাকে বিশাল দায় থেকে কিছুটা রেহাই দেয়। প্রথমে বিমা কোম্পানি হাসপাতালের বিল থেকে প্রায় ২,৬০,০০০ ডলার ছাড় (discount) আদায় করে নেয়। ফলে বাকি থাকে ১,০০,১০৪ ডলার। বিমা পরে এখানে থেকে ১,০০,০০০ ডলার পরিশোধ করে, রোগীর কাঁধে থাকে মাত্র ১০৪ ডলার। দেখলে মনে হয় বিমা কি না দারুণ একটা সুবিধা দিল!

কিন্তু আসল ব্যাপার হলো এই “ডিসকাউন্ট” একটি সুপরিকল্পিত প্রতারণা (scam), যা হাসপাতাল ও বিমা কোম্পানির পারস্পরিক সুবিধামূলক চুক্তির ফল। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিমার প্রধান বিক্রয় কৌশল হলো, তারা নাকি হাসপাতালের সাথে দর-কষাকষি করে খরচ কমাতে পারে, যা রোগীদের হাজার হাজার ডলার সাশ্রয় করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কারো কাছে সঠিক তথ্য ছিল না—কত দাম বিমাহীন (without insurance) রোগীকে দিতে হতো আর বিমাযুক্ত (with insurance) রোগীর জন্য দর কত হতো। ২০২০ সালে ফেডারেল সরকার হাসপাতালগুলোকে বাধ্য করে তাদের বিমা কোম্পানির সাথে দর-কষাকষি করা মূল্যের তালিকা প্রকাশ করতে। এরপরই সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে কেন এতদিন এই তথ্য গোপন রাখা হয়েছিল।

একটি হাসপাতালে বিমাহীন এক রোগীর কোলনস্কপি (colonoscopy) খরচ ৭৮২ ডলার, কিন্তু বিমা সহ রোগীর জন্য একই পরীক্ষা ২,০০০ ডলারের বেশি—প্রায় তিন গুণ! বা পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (University of Pennsylvania Hospital) বিমা নেই এমন রোগীর জন্য একটি প্রেগন্যান্সি টেস্ট (pregnancy test) ১০ ডলার, অথচ বিমাযুক্ত রোগীর জন্য একই পরীক্ষা প্রায় ১০ গুণ বেশি দামি! সহজভাবে বললে, বিমাযুক্ত রোগীদেরকে অনেক ক্ষেত্রে বিমাহীনদের চেয়েও বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। অর্থাৎ বিমা কোম্পানিগুলো আসলে সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নেয়। তারা যে বিশাল ডিসকাউন্ট পাওয়ার দাবি করে, তা মূলত তাদেরই তৈরি কৃট্রিমভাবে স্ফীত ( artificially inflated) দামের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ। ফলে আমেরিকানদের কাছে এই ধারণা তৈরি হয় যে বিমা না থাকলে তারা শেষ – কেননা স্থূলভাবে বাড়ানো দামের ওপর কৃত্রিম ছাড় দেখিয়ে তাদের এই “মূল্যবান” পরিষেবা (service) ধারণাটা গেলানো হয়।

এখন আপনি চাইলে নিজেও এই বিল কমাতে দর-কষাকষি করতে পারেন, কিন্তু সেখানেও আরেক ফাঁদ পাতা থাকে। বিমা নেই এমন একজন রোগী এক ঘণ্টার চিকিৎসার জন্য ৩১,০০০ ডলারের বেশি বিল পেয়ে তা কমাতে চেয়েছিলেন। অথচ যেখানে বিমা কোম্পানিগুলো অনায়াসে ৮০% ছাড় আদায় করে, সেখানে তিনি পেলেন মাত্র ৪৩% ছাড়। একজন চিকিৎসক জানালেন, কারণ ওই রোগীর কোন “প্রতিনিধিত্ব” (representation) নেই। সহজ কথায়, যুক্তরাষ্ট্রে বিমা থাকার আসল সুবিধা হলো আপনি “বিমা ক্লাবের” সদস্য। তখন হাসপাতাল আপনাকে সর্বনিম্ন রেট দিতে রাজি হয়। এক লেখকের ভাষায়, আপনি যদি স্বাস্থ্যবিমা না কেনেন, তবে হাসপাতালগুলো আপনার বিলের ওপর শত শত শতাংশ জরিমানা (surcharge) বসায়। আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা খাতের মূল্য নির্ধারণে প্রায় কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই—তাই এটি কার্যত একটি বৈধ চাঁদাবাজি।

মোট কথা, হাসপাতাল ও বিমা কোম্পানিগুলো যেন একটি মাফিয়া চক্র (mafia protection racket)। আপনি যদি বিমা ফি না দেন, তবে আপনার আর্থিক ধ্বংসের ঝুঁকি, এমনকি জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হাসপাতালগুলোর অতিরিক্ত মূল্য আদায়

এবার আমরা আবার মূল আলোচনায় ফিরি। বিমা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবার মূল্য বহুস্তরে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়। এটা ঘটে এমনকি সবচেয়ে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবাতেও, যেমন: শিশু জন্মদান (childbirth) ও জরুরি চিকিৎসা (emergency visits)।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন প্রায় ১০,০০০ শিশু জন্মায়, যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সি-সেকশন (C-section) দ্বারা জন্মগ্রহণ করে। বিশ্বব্যাপী এই হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে এটি দ্বিগুণেরও বেশি। কেন এমন হয়? বিভিন্ন প্রতিবেদনের মতে এর সাথে মা বা শিশুর কল্যাণের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং কারণ হচ্ছে সি-সেকশনের জন্য হাসপাতাল গড়ে প্রায় ৫,০০০ ডলার বেশি পায়, যা স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অনেক লাভজনক। ফলে অপ্রয়োজনীয় হলেও সি-সেকশন করা হয়।

আপনি যদি সি-সেকশনের পর আপনার নবজাতককে বুকে নিতে (skin-to-skin contact) চান, হাসপাতাল আপনাকে তার জন্যও ৪০ ডলার অতিরিক্ত চার্জ করতে পারে। এই অতি-মূল্য-আদায় বা ওভারচার্জিং প্রায় সবখানেই দেখা যায়, এমনকি জরুরি কক্ষ বা ইমার্জেন্সি রুমেও (ER)। যুক্তরাষ্ট্রে ইমার্জেন্সি রুম (ER) সফরের চার্জ রোগীর অবস্থা কতটা গুরুতর তার ওপর নির্ভর করে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত কোডিং করা হয়। কোড যত উঁচু, বিল তত বেশি। গত দুই দশকে হাসপাতাল ও ডাক্তাররা শিখে গেছে যে বেশি কোড (upcoding) দিলে বেশি অর্থ মেলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭ বছরের মধ্যে গুরুতর আহত রোগীদের সর্বোচ্চ স্তরের (level 5) ভিজিট ৪৫% বেড়ে গেছে। বীমাকারীরা (insurer) তো আর রোগীর সাথের ঘরে থাকে না, ফলে আসলেই এত গুরুতর অবস্থা ছিল কিনা তা যাচাই করা কঠিন। এতে হাসপাতাল চাইলেই বিল বাড়াতে পারে।

আমরা হয়তো ভাবতে পারি ডাক্তার-নার্সরা (staff) লোভী বলে এমন হয়। কিন্তু আসলে সমস্যা পেছনে আরও গভীরে, যেখানে রয়েছে বিশাল বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (investment firms)।

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (Investment firms) স্বাস্থ্য খাতে প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা মুনাফাকেন্দ্রিক (for-profit), যেটা অন্য কোন দেশে দেখা যাবেনা। অর্থাৎ সেখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানুষের সেবার জন্য নয়, লাভ করার জন্য। ব্ল্যাকস্টোন (Blackstone) হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান (investment firm)। যুক্তরাষ্ট্রে এটি টিম হেলথ (Team Health) নামক এক বৃহত্তম চিকিৎসাকর্মী সরবরাহকারী কোম্পানির (medical staffing company) মালিক। অর্থাৎ আপনি যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে গেলে আপনার ডাক্তার বা নার্স সম্ভবত টিম হেলথের কর্মী।

টিম হেলথের দুর্নাম আছে যে, এটি গ্রাহকদের কাছ থেকে অত্যধিক মূল্য আদায় করে, যা অন্যান্য সরবরাহকারীর তুলনায় ৯৫% এর বেশি এবং মেডিকেয়ার (Medicare)-এর তুলনায় ৯ গুণ বেশি। প্রতিষ্ঠানটির এক নির্বাহী (executive) স্বীকার করেছেন, প্রকৃত চিকিৎসা ব্যয় তাদের মূল নির্ধারণে কোনো ভূমিকা রাখে না। অর্থাৎ তারা ইচ্ছেমতো দাম বসিয়ে দিতে পারে, এতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার গিয়ে পড়ে ব্ল্যাকস্টোন ও অন্যান্য ধনী বিনিয়োগকারীদের পকেটে।

সব মিলিয়ে আমেরিকানদের আসলে বিকল্পের তেমন সুযোগ নেই। প্রায় সব পাবলিকলি ট্রেডেড (publicly traded) হাসপাতাল, মেডিক্যাল ও ফার্মা (pharma) কোম্পানির কিছু অংশের মালিকানা ব্ল্যাকরক (BlackRock) ও ভ্যানগার্ড (Vanguard)-এর মতো প্রতিষ্ঠানের হাতে। এরা যুক্তরাষ্ট্রের গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যত নিজেদের কব্জায় রেখেছে। সহজেই অনুমেয়, এসব মুনাফালোভী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে এই পুরো ব্যবস্থাকে পরিচালনা করছে।

কেন দরিদ্ররা বেশি ভুক্তভোগী?

যখন কোনো ব্যবস্থায় এমন অপব্যবহার ঘটে, তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী। চিকিৎসা ব্যয় বাড়তে থাকায় এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বিমাহীন মানুষের সংখ্যা ৩৫% বেড়ে গেছে। ফলে অনেকে চিকিৎসা প্রয়োজন হলেও হাসপাতালে যান না, কারণ তারা খরচ বহন করতে পারেন না।

অনেকেই গুরুতর আহত হলেও হাসপাতালে না নিয়ে যাবার অনুরোধ করেন—কারণ হাসপাতাল খরচ মেটানোর সামর্থ্য নেই। মৃগী (Seizure) রোগীরাও এমনিতেই ব্রেসলেট (bracelet) পরে থাকেন যেখানে লেখা থাকে “Do not call an ambulance” (অ্যাম্বুলেন্স ডাকবেন না) কারণ তারা হাজার ডলারের বেশি ভাড়া বহন করতে পারবেন না।

আজ যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত (abortion) প্রার্থী নারীদের ৭৫% দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। রো ভার্সাস ওয়েড (Roe versus Wade) উল্টে যাওয়ার পর অর্থনীতিবিদরা বলছেন তাদের অবস্থা আরো খারাপ হবে। কারণ এখন হয়তো দরিদ্র নারীরা বাধ্য হবে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ বহন করতে বা ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে গর্ভপাত করতে। অন্যদিকে ধনী নারীরা অন্য রাজ্য বা দেশে গিয়ে নিরাপদ গর্ভপাত করানোর সামর্থ্য রাখেন, যা দরিদ্র নারীদের জন্য অনুপলব্ধ।

স্বাস্থ্য মেসেজিং-এর (health messaging) নিয়ন্ত্রণ যখন বড় ব্যবসারগুলোর হাতে 

এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এত ভেঙে পড়ে আছে, তবু কেন অনেক আমেরিকান এটিকে একরকম স্নেহভরে গ্রহণ করছে? কারণ স্বাস্থ্যসেবা শিল্প (medical and pharmaceutical industry) বিজ্ঞাপন (advertising) এবং জনসংযোগে (PR) প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এর মাধ্যমে তারা একটি গল্প বা ন্যারেটিভ তৈরি করে, যাতে সবকিছু আগের মতোই থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে মেডিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি (pharmaceutical industry) লবিংয়ে (lobbying) যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে, অন্য কোনো খাত তার ধারে-কাছেও নেই। অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে তারা দ্বিগুণ ব্যয় করে, যাতে এমন আইন প্রণয়ন করা হয় যা তাদের জন্য যত বেশি সম্ভব লাভ নিশ্চিত করে। এরা প্রতিবছর বিজ্ঞাপনে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আমেরিকানদের এটা বোঝাতে যে, তাদের ব্যবস্থাটা ভালভাবেই কাজ করছে। কিন্তু যদি সত্যিই ভালোভাবে কাজ করতো, তবে পরিসংখ্যান এত হতাশাজনক হতো না।

উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গড় আয়ু (life expectancy) সবচেয়ে দ্রুত কমছে। যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র উন্নত দেশ যেখানে মাতৃমৃত্যুর হার (maternal mortality rate) কমার বদলে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাগত ত্রুটি (medical error) তৃতীয় বৃহত্তম মৃত্যুর কারণ, আর এটা মোট মৃত্যুর ১০% এর জন্য দায়ী। ৯২% চিকিৎসকই (physicians) স্বীকার করেন যে আইনি ঝামেলা এড়াতেই তারা রোগীর সুস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য অনেক সিদ্ধান্ত নেন। সংক্ষেপে বলা যায়, এই হচ্ছে বাস্তবতা।

আপনি যদি আইসল্যান্ডে বা অস্ট্রেলিয়ায় বা অন্য যে কোন উন্নত দেশে থাকেন তবে আপনি ইচ্ছা করে আঙুল কেটে ফেললেও আপনাকে কোন রকম অর্থের চিন্তা করতে হবে না। সোজা হাসপাতালে যাবেন, চিকিৎসা পাবেন। আপনার বিমা আছে কি না তা আপনাকে ভাবতে হবে না, চিকিৎসার বিল আপনাকে দেউলিয়া করবে—এমন চিন্তা আপনার মাথায়ও আসবেও না। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক উল্টো। আর এই ব্যবস্থার জন্য দায়ী কারা, আশা করি তা বোঝা এখন আপনার জন্য সহজ হবে।

তাহলে, আবারও সেই একই প্রশ্ন রাখছি — একটি মানব জীবনের মূল্য কত? যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মতে, এই মূল্যের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। যত টাকা খসানো যায়, ততই।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.