উত্তর বঙ্গের লোক সঙ্গীত : ভাওয়াইয়া গান – শ্রীমন্তকুমার জানা 

মর্তপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ মাটি-ঘেঁষা মানুষের কল্যাণপ্রস্থ বিচিত্র কর্মকে সমস্ত ক্ষয়-ক্ষতির উর্ধ্বে চিরকালের একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস বলে শ্রদ্ধানম্র সানন্দ স্বীকৃতি দিয়েছেন। যারা হাটবাট, মাঠ-ঘাটের মানুষ; মাটির সঙ্গে যাদের ঘনিষ্ঠ সংযোগ – যারা “বীজ বোনে, পাকাধান কাটে, ‘ -ঘরে, মাঠে, বনে, নদীতে নানা কাজ করে—তাদের কর্মের উপর ভিত্তি করেই সমস্ত সংসার এগিয়ে চলেছে। কর্মের সাথে সাথে তাদের নিতান্ত সহজ সরল ছোটখাটো সুখদুঃখ আনন্দ বেদনামিশ্রিত বিচিত্র রসানুভূতির সৃজনকার্যও নিঃশব্দে নিভৃতে চলেছে। বাংলার লোক- সাহিত্যগুলি তার প্রমাণ। বাংলার লোক-সাহিত্যের মধ্যে অল্প শিক্ষিত গ্রাম্য কবির ভাবভাবনার আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত গ্রাম্য-জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখের অস্তরঙ্গ প্রতিচ্ছবিও ফুটে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের উক্তি প্রণিধানযোগ্য :

‘জনপদে যেমন চাষ-বাস এবং থেয়া চলিতেছে। সেখানে কামারের ঘরে লাঙলের ফলা, ছুতারের ঘরে ঢেঁকি এবং স্বর্ণকারের ঘরে টাকা দামের মোটরি নির্মাণ হইতেছে, তেমনি সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে একটা গঠন-কার্যও চলিতেছে—তাহার বিশ্রাম নাই। প্রতিদিন যাহা বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন খণ্ড খণ্ড ভাবে সম্পন্ন হইতেছে সাহিত্য তাহাকে ঐক্যসূত্রে গাঁথিয়া নিত্যকালের জন্য প্রস্তুত করিতে চেষ্টা করিতেছে। গ্রামের মধ্যে প্রতিদিনের বিচিত্র কাজও চলিতেছে এবং তাহার ছিদ্রে ছিদ্রে চিরদিনের একটা রাগিনী বাজিয়া উঠিবার জন্য নিয়ত প্রয়াস পাইতেছে।’ [১]

এই জন্যই গ্রাম্য সাহিত্যের আবেদন সর্বসাধারণের কাছে খুব ব্যাপক ও গভীর।

বাংলা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকসঙ্গীতের মধ্যে সুর, ভাব, ভাষা ও আঞ্চলিক পরিবেশগত স্বতন্ত্র ধর্ম পরিলক্ষিত হয়। কবিগান, পূর্ববঙ্গগীতিকা, ময়মনসিংহ গীতিকা, ভাটিয়ালী, বাউল সঙ্গীত প্রভৃতি তাদের মধ্যে অন্যতম। ব্যাপক প্রচারের ফলে এই সমস্ত লোকসঙ্গীত বহুজন পরিচিত। তার তুলনায় উত্তর বঙ্গে ভাওয়াইয়া গানের আলোচনাও প্রচার খুব বেশী হয় নি।

ভাওয়াইয়া কুচবিহারের বিশিষ্ট পল্লী-সঙ্গীত। এই সঙ্গীত কুচবিহারের অল্পশিক্ষিত শ্রমিকশ্রেণী মানুষের অন্তরস্থিত স্বাভাবিক কবিত্বশক্তি থেকে উত্থিত। অন্যান্য লোক-সঙ্গীতের মত ভাব, ভাষা, পরিবেশ ও সুরের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ভাওয়াইয়া নূতন মর্যাদা পাবার অধিকারী। বর্তমানে কুচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ মহকুমায় ভাওয়াইয়া গানের চর্চা খুব বেশী। ১৭৭৩ খৃষ্টাব্দের পূর্বে এই জেলার সীমা যখন আসাম, জলপাইগুড়ি এবং রংপুর অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল তখন সে সব অঞ্চলেও এই গানের প্রচার ছিল। বর্তমানে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি অঞ্চলেও এই গানের কিছু কিছু প্রচার আছে ৷ তা এই প্রচারগত ব্যাপ্তির দিক থেকে একে কুচবিহারের সঙ্গীত না বলে উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত নামে অভিহিত করাই সমীচীন।

ভাওয়াইয়া বহু পুরাতন গান ৷ এর উৎপত্তি কোন সময় সঠিক কিছু জানা যায় নি। মোটামুটি ভাবে বলা চলে ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এই গানের প্রচলন সুরু হয়েছে। কুচবিহারের মহারাজ নরনারায়ণের সময়ে (১৫৩৩-৩৪ খৃঃ ১৫৮৭) এই সঙ্গীত প্রচলিত ছিল। তার প্রমাণ সেই সময়ে রচিত রামায়ণ এবং অন্যান্য কাহিনী থেকে ভাওয়াইয়ার পরিচয় পাওয়া যায়।

কুচবিহারের বংশের ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, মহারাজ নৃপেন্দ্রনারায়ণের সময়ে (১৮৬২ – ১৯১১) ভাওয়াইয়া সঙ্গীত বিশারদগণ বৃত্তি পেতেন ৷ তখনকার দিনের খান ও পাতান (জাতি মুসলমান) চাউলিয়া, (হিন্দু) চকোরপতি (মুসলমান) ভাওয়াইয়া বিশারদ ছিলেন। এরা উল্লিখিত রাজার নিকট হতে বৃত্তি পেতেন।

১৯৩৭ সালে সুরেন বসুনিয়া (বাড়ী কুচবিহার শহরে) এই গানের প্রথম রেকর্ড করেন। তিনিই শিক্ষিত মহলে সর্বপ্রথম ভাওয়াইয়ার প্রচার করেন। তার কয়েকমাস পরে আব্বাসউদ্দিন আহাম্মদ [২] এই গানের রেকর্ড করেন এবং তার সঙ্গে যোগ দেন দোতারা- যাদুকর শ্রীটগর অধিকারী। [৩] পরে অন্যান্য গায়কও রেকর্ড করেন।

যদিও এই গান খুব প্রাচীন, তবু এই গানের কোনো সুনিশ্চিত পুস্তক পাওয়া যায় নি। কোনো গানেই রচয়িতার নামোল্লেখ নেই—স্ৰষ্টা অজ্ঞাত, সৃষ্টি বেঁচে রয়েছে।

ভাওয়াইয়ায় শিল্পকর্ম দেখা যায় না; ভাষা অমার্জিত, পারিপাট্যবিহীন, মিলপ্রয়োগে সৌষম্য নেই। উপমা-অলংকারের মাধুর্য এবং সুরের লক্ষণীয় স্বাতন্ত্র্যই এর প্রাণবস্তু। এই গানের বিশেষত্ব দরদ ও গলা-ভাঙ্গানি। এক সুরে গান গীত হওয়ার সময় সুর-প্রবাহকে হঠাৎ ভেঙ্গে পূর্ববর্তী প্রবাহে উঠে যাওয়ার কৌশলটি আয়ত্ত করা খুব সহজ নয়। এই ধরণের গলাভাঙ্গানি অন্য গানে দুর্লভ। এই সঙ্গীতের প্রধান যন্ত্র দোতারা; সানাইয়ের সাহায্যেও এই গানের ভাব-ব্যঞ্জনা পরিস্ফুট হয়। তালযন্ত্রের মধ্যে সাধারণতঃ জুরি (করতাল) ব্যবহৃত হয়। এতে ছয়, সাত, আট ও ষোল মাত্রার গান পাওয়া যায়, কিন্তু বারো মাত্রার একতলা গান নেই।

ভাওয়াইয়া গানের বিষয়বস্তুগত বৈচিত্র্য আলোচনার পূর্বে ভাওয়াইয়া শব্দের উৎপত্তি এবং অর্থগত তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। অনেকের মতে ভাওয়াইয়া শব্দটি বাউদিয়া বা বাওয়াইয়া থেকে এসেছে। বাউদিয়া—বাউলিয়া — বাওয়াইয়া—ভাওয়াইয়া। বাউদিয়া শব্দের অর্থ বাউণ্ডুলে ভবঘুরে, ছন্নছাড়া। উত্তরবঙ্গের কিছুসংখ্যক ভূমিহীন লোক সঙ্গীতকে উপজীব্য করে জীবিকা নির্বাহ প্রত্যেক হাটবারে এরা দোতারা নিয়ে হাটে গিয়ে গান গাইতে থাকে লোকেরা ভিড় করে গান শুনে আর যে যার খুশিমত কিছু কিছু পয়সা দিয়ে চলে যায়। বাওয়াইয়া সম্প্রদায়ের গীত গানগুলির নাম ভাওয়াইয়া। বাওয়াইয়াদের মধ্যে অনেকে এমন দরিদ্র আছে যে, তাদের একবেলা আহার জোটে, লেংটি পরে লজ্জা নিবারণ করে। একটি গানে এদের নিদারুণ দুঃস্থ অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে। দুর্গোৎসবে চারদিকে আলোকসজ্জা মানুষের আনন্দকোলাহল, কিন্তু ভাওয়ালিয়ার মনে নিরানন্দের অন্ধকার—

ও মোর ভাওয়াইয়া রে
চতুর্দিকে জ্বলে সুরজ বাতি
তোমরা কেন বল আধার রাতি হে,
হায়, হায়, পরান বোঝা কতদিন বইবেন ভাই—
ও ভাই মোর ভাওয়াইয়ারে
ওরে একবেলা তোমার অণু জোটে হে
পিন্ধনো তোমার কাপড় কোণ্ঠেরে।
হায় হায়, খালি পরিতেন লেংটি সব সার
ভাই মোর ভাওয়ালিয়ারে ॥

কেউ বলেন ভাবাইয়া থেকে ভাওয়াইয়া এসেছে। ভাব—ভাও; ভাবাইয়া—ভাওয়াইয়া উত্তরবঙ্গের আধিক্য ও নৈপুণ্য বোঝাতে শব্দের শেষে ‘আইয়া’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যে ভাল কাজ করে তাকে বলা হয় ‘করাইয়া লোক’। যে ভালো খায় সে ‘খাওয়াইয়া লোক’। তেমনি যে খুব ভাবের কারবার করে সে ভাওয়াইয়া লোক বা ভাওয়ালিয়া। যাতে ভাবের প্রাচুর্য রয়েছে—তা ভাওয়াইয়া। ভাওয়াইয়া গানে গ্রাম্য কবির ভাবানুভূতির স্বতঃস্ফূর্ত অঙ্কুত্রিম অভিব্যক্তি ঘটেছে। সামগ্রিক অর্থের দিক থেকে এই ব্যাখ্যাই সমধিক যুক্তিনিষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য।

লোক সঙ্গীতের সামগ্রিক সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে হলে পূর্বাহ্নে তার পরিবেশ ও মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পূর্ণ পরিচয় থাকা অত্যাবশ্যক। রবীন্দ্রনাথের মতে—

‘বাংলা জনপদের মধ্যে ছড়া-গান-কথা আকারে যে সাহিত্য গ্রামবাসীর মনকে সকল সময়েই দোল দিতেছে তাহাকে কাব্য হিসেবে গ্রহণ করিতে গেলে তাহার সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে সমস্ত গ্রাম, সমস্ত লোকালয়কে জড়াইয়া লইয়া পাঠ করিতে হয়; তাহারাই ইহার ভাবোচ্ছন্দ এবং অপূর্ণ মিলকে অর্থে ও প্রাণে ভরাট করিয়া তোলে। গ্রাম্য-সাহিত্য বাংলার গ্রামের ছবির, গ্রামের স্মৃতির অপেক্ষা রাখে; সেই জন্যই বাঙালীর কাছে ইহার একটি বিশেষ রস আছে।’

ভাওয়াইয়া গানের সাথে কুচবিহারের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জনজীবনের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য রয়েছে। নদীমাতৃক দেশ কুচবিহার; তোর্ষা, মানসাই, সুতনুকা, ধরলা প্রভৃতি নদী এঁকে বেঁকে এ দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। উত্তরে হিমালয়ের শাখা-প্রশাখা প্রহরীর ন্যায় দণ্ডায়মান। ঋজু দীর্ঘ বৃক্ষের ছায়ায় স্নিগ্ধ এই দেশ, মাটি সর্বদা প্রায় রসে সিক্ত। গানেও এই মুত্তিকার শামল গন্ধটুকু ছড়ানো—কোথাও রুদ্রতা নেই। জনসাধারণ খুব সরল প্রকৃতির, অতি সাধারণ এদের বেশভূষা। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই ঘরে বাইরে কাজ করে। জীবনধারণের জন্য এরা বিভিন্ন প্রকার জীবিক গ্রহণ করেছে। সাধারণতঃ কৃষিজীবিরা ধান, পাট, তামাক, সরিষা প্রভৃতির চাষ করে। কেউ কেউ মহিষ পালন করে এদের বলে মহিষাল; সকাল বিকাল এরা নদীর চরে মহিষ চরায়। এ ছাড়াও আছে গাড়ীয়াল—এরা পাটকাঠি, শুকনা কাঠ, ধান প্রভৃতি গাড়ীতে করে শহরে (সাধারণ লোকেরা শহরকে বন্দর বলে) নিয়ে যায় বিক্রি করতে। অনেকে ফাঁদ পেতে কপোত, বক প্রভৃতি পার্থী ধরে—নিজেরা মাংস খায় এবং বাজারে এই সমস্ত পার্থী বিক্রি করে।

এরা ধর্ম প্রাণ জাতি। রামায়ণ, মহাভারত, মনসামঙ্গল, বৈষ্ণব পদাবলীর কাহিনী ও কাৰ্যরসে পরিপুষ্ঠ এদের জীবনচেতনা। এ দেশে হিন্দুশাস্ত্রের প্রায় সব দেবদেবীর পূজা-অর্চা, উৎসবাদি, প্রচলিত থাকলেও এরা মুরলীধারী মদনমোহনের পরম ভক্ত। সংসারের নূতন কৰ্মে ও অনুষ্ঠানাদিতে সর্বাগ্রে এরা মদনমোহনকে নির্মাল্য অর্পণ করে। জেলার প্রধান প্রধান স্থানে মদনমোহনের মন্দির আছে।

ভাওয়াইয়া গানের আলোচনার পূর্বে মানুষ ও তার পরিবেশকে বিস্মৃত হলে চলবে না। জীবনরসে সমুচ্ছল ভাওয়াইয়ায় একটি জেলার সমস্ত জনপদের অনুপম প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।

ভাওয়াইয়া মূলতঃ দেহকেন্দ্রিক লৌকিক প্রেমসঙ্গীত এবং এর পরাকাষ্ঠা বিরহমূলক রসে। অধিকাংশ প্রেম সঙ্গীতে নদীর উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ বিরহ বিলাপের করুণ ধ্বনি নদীর পাড়েই বেশী পরিস্ফুট হয়। প্রেম-বিরহ ছাড়াও বাৎসল্য, হাস্য, শাস্ত, সখ্য প্রভৃতি রসের বিশিষ্ট ধর্মে ভাওয়াইয়া বৈচিত্র্য ও ব্যাপ্তি লাভ করেছে।

ভাওয়াইয়ার সুরের বৈশিষ্ট্য তার প্রবল আকর্ষণীয় শক্তি। গোধূলি-সন্ধ্যার শাস্ত পরিবেশে কিংবা পূর্ণিমার জ্যোৎস্না রাত্রে তামাক ও সরিষা খেতে দোতারা বাজিয়ে যখন পল্লী-গায়করা গান করে তখন যুবক-যুবতী চঞ্চল ও উতলা হয়ে ওঠে; জানা-অজানা, পাওয়া-না-পাওয়ার এক বিমিশ্র ভাব অনবরত চিত্তে দোলা দিতে থাকে।

ভাওয়াইয়ার প্রেমবিরহমূলক গানগুলির বক্তা প্রায় নারী। কোন এক কুমারী কোন এক যুবকের চোখে পড়েছে। যুবক বারে বারে প্রেম নিবেদন করছে, কিন্তু কুমারী সাড়া দেয় না, কারণ, সে প্রেম করতে চায় না। কুমারী তার সখীদের বলছে—

মুই পীরিতি করিস না
টোরির চ্যাংড়া ছাড়েন না,
দিয়ে যায় পীরিতির বায়না ॥

এদিকে কুমারীর রূপযৌবন যুবকের মনে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। না পাওয়ার বেদনায় যুবক অস্থির পাগল-প্ৰায়। আর যুবতী সব শুনে সব জেনে, না শোনা, না-জানার ভান করে, এটা আরো মর্মান্তিক। যুবক বলছে –

ও কি জানিয়াও জানেন না
ও কি শুনিয়াও শুনেন না,
জালাইয়া গেইলেন মনের আগুন
নিভাইয়া গেইলেন না।
ও তোর নয়নের কাজল-
তিলেক দণ্ড না দেখিলে
মন মোর হয় পাগল।

যেখানে মনের মিল, সেখানে বাবরী চুলওয়ালা প্রেমিক-প্রেমিকার খোঁপা খুলে চুল এলিয়ে দিচ্ছে। প্রেমিকা অভিমানের সুরে বলছে—

কুন বাবরী আওলা
আউলাইল মোর ঘারুয়া খোঁপা
আউলাইল আউলাইল রে।

এই কথা প্রেমিকের অসন্তোষের কারণ হয়েছে। কিন্তু প্রেমিকা ভুল করেনি। প্রেমের পরে যার সঙ্গে একসূত্রে সমস্ত জীবনের ভালোমন্দ, সুখদুঃখ জড়িত হবে—তার মনে সে কিরূপ স্থান পেয়েছে এটা তো দেখা দরকার। প্রেমিক যখন অভিমানের স্বরূপ বুঝতে না পেরে চলে যেতে উন্মুখ, তখন কুমারী নিজেকে ধরা দিল –

বন্ধু রাগ করিছেন কেনে,
গোঁসা করিছেন কেনে
গলার মালা বদল হবে
আছে শনিবারে।

মিলনমূলক প্রেমসঙ্গীতগুলিতে স্বামী-স্ত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকার গভীর আন্তরিকতা ফুটে উঠেছে। দুপুরবেলায় স্বামী নদীতে স্নান করতে যাবে। স্ত্রী তাকে নিষেধ করছে। নদীর জল অত্যন্ত ঘোলা, আর স্নানের সময় গলার মালা হারিয়ে গেলে স্বামীর ভাই নেই যে, খুঁজে সেটা তুলবে। স্বামীর মা-বাপও নেই যে, সেটার জন্য ভাববে, কাদবে! স্ত্রী তাই বলছে—

নদী না যাইও রে বইদর
নদীর না ঘোলারে ঘোলা পানী।
নদীর বদলে বইদর বাড়ীতে গাও ধনরে
বইদর, মুই নারী তুলিয়া দব পানী।
এক লোটা ঢালিতে বইদর দুই লোটা তুলিতে রে।
বইদর খসিয়া পড়িলে গলার মালা
বাপ নাইরে ভাবিবে মাও নাই রে কাঁদিবে রে
ভাই নাই রে তুলিয়া দেবে মালা।
মানসাইর ওপারে বইদর
রাজহংস পঙ্খী পড়ে রে…
বইদর পঙ্খীর গলায় গজমতিহি মালা;
পঙ্খীর কান্দনে বইদর বাড়ীঘর মোর না রয় মনেরে।
বইপর পরাণটা মোর উরাও বাইরাও করে রে।

ঝড় জলের অন্ধকারে প্রেমিক এসেছে প্রেমিকার দুয়ারে। দুর্যোগের মধ্য দিয়ে আমার জন্য প্রেমিকার মন শঙ্কাকুল। কারণ বিপদ ঘটার অনেক সম্ভাবনা ছিল। তাই বলেছে—

দেওয়া পড়ে হিরিম-ঝিরিম
ফোটাত ভিজে গাও।
সাইঞা বায়া আইসেন বন্ধু রে
বন্ধু খোপাত মোসেন পাও।
বেত বাড়ী খান দোলাও দোলাও
তাতে বাঘের ভয়,
তুমি কেনে আইলেন বন্ধু রে,
মুই না গেলেন হায়।
দোতারা ভাঙ্গাইয়া বন্ধু
বনে বনে যাও।
আড়ালত থাকিয়া বন্ধু রে,
বন্ধু মোর না মনটা খাও ৷

ভাওয়াইয়ায় চমৎকারিত্ব সৃষ্টি হয়েছে বিরহমূলক সঙ্গীতে। স্বামী বিহনে নারীর যৌবন ও রূপের কোন মূল্য নেই। তাই সঙ্গীহীন একক জীবনে নারী বিলাপ করছে। এই নারীর বিয়ে হয়নি বা স্বামী বিদেশে। নারী জীবনের নৈরাশ্য ও হৃদয়-বেদনা এর মধ্যে ধ্বনিত হয়েছে।—

ওকি পতিধন পান বাঁচে না যৈবন জালায় মরি
আকাশে নাইরে চন্দ্র কি করিবে তারা রে –
যে নারীর সোয়ামী নাই রে দিনত আন্ধিয়ার রে।
খোপেতে নাইরে কইতর কি করিবে থোপে
যে নারীর সোয়ামী নাইরে কি করিবে রূপে।
বিলেতে নাইরে মংস্য বগা কেনে পড়ে,
ওই মতো নারীর যৈবন উরাও বাঁইরাও করে রে।

কোন দুঃস্থ পিতা টাকার লোভে পাগল ব্যক্তির সাথে কন্যার বিয়ে দিয়েছেন; দুর্ভাগিনী নারীর আত্মবিলাপ সেখানে খুব করুণ ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে।

ওকি এবার আসিয়া সোনার চান মোর যান দেখিয়ারে –
আইলত ফোটে আইল কাসিয়া
দোলাত কান্দে ওলা,
ওহোরে বাপে মায়ে বেচায়া খাইচে –
সোয়ামী পাগেলা রে !
কোরা কান্দে কুরি কান্দে, কান্দে বালি হাঁস
ওহোরে বনের হরিণী কান্দে ছারি মুখের ঘাস রে।

কালার গান নামে প্রেমমূলক আর এক প্রকার ভাওয়াইয়া গান আছে। এই প্রকার গানে বৈষ্ণব পদাবলীর ছায়াপাত ঘটেছে। শ্রীকৃষ্ণ কাজল-ভোমরা বন্ধু, কালো নেয়ে, গরুর রাখাল প্রভৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বৈষ্ণবভাব পরিপুরিত দেশের গ্রাম্য কবিরা মানুষের দেবতাকে নিজেদের মত এই সংসারের একান্ত কাজকর্মের মানুষ করে নিয়েছে। তাই কালার গানে অপ্রাকৃত বৃন্দাবনলীলার কামগন্ধহীন ‘নিকষিত হেম’ প্রেম নেই – তাতে মানুষের চিরায়ত জীবনতৃষ্ণার কামনা-বাসনাই প্রতিধ্বনিত। কয়েকটি দৃষ্টান্ত দেই ৷

১। মেঘে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে, নদী হুলুস্থুলু, ঝড় আসতে বেশী দেরী নেই, নদী- পার হতে হবে শীঘ্র, রাধা কৃষ্ণকে বলছে—

ও কি ওরে কাজেলা নাইয়া
নিদানে করেন পার ৷
দেওয়ায় কইর‍্যাছে আন্ধিয়ার;
এলুয়া কাশিয়ার ফুল।
নদী হইচে কানাই হুলুস্থুলু রে।
যে মোকে করিবেন পার
পার বদল দেঁও মোর গালার হার রে।
ওকি ওরে কাজেলা নাইয়া,
পার করিলে যৈবন করিম দান

২। রাধা কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সর্বদা আকুল, অথচ কালাচাঁদ নিষ্ক্রিয়; রাধার মতে কালা চাঁদ ঠিক প্রেম জানে না। রাধার মনোবেদনা এই –

প্রেম জানে না অসিক কালাচাদ
ঝরিয়া থামে মহন।
কতদিনে হবে মোর বন্দুর দরিসন।
বন্ধু রে নদীর ওপারে তোমার বাড়ী
যাওয়া আইসায় অনেক দেরী।
যাব কি—রব কি সদাই করে মনা।
হাটিয়া যাইতে নদীর জল
খাটলাউ কি খুটলাউ কি খালাউ খালাউ করে রে-
হায় হায় পানের বন্ধু রে।
বন্ধুরে একেলা ঘরত পড়িয়া থাকং পালংক ওপরে,
পাশ ফিরিতে মরাই পালং –
কেরৎ কি কুরুৎ কি কেঁরাউ কেঁরাউ করে রে।
বন্ধুরে তোমার আশাত বসিয়া থাকং বটবিরিক্ষের তলে,
মন মোর উঁরাও বাঁইরাও করে –
ভাদর মাসি দেওয়ার ঝরি টাপ্পাস কি টুপ্পাস কি
সমসমাইয়া পড়ে রে।
হার হায় পানের বন্ধু রে ॥

৩। রাধা নদীর ঘাটে স্নান করতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের কালো রূপে আর বাঁশীর সুরে একেবারে আহত। শ্রীকৃষ্ণের বাঁশীর সুর সামান্য জিনিস নয় – তা – হাসি কান্নার এক মিশ্র আনন্দানুভূতিতে হৃদয় পরিপুর্ণ করে তোলে।—

ও মোর কালা বন্ধুরে, ও মোর কালিয়া বন্ধু রে
তোক নদীর ঘাটত দেখি আইসং আবার দেখা দেন রে।
তোর কালা দেহের রূপ যৈবন
জ্বালাইছে মোকে মনের মধ্যে আসি,
তোর হাতের বাঁশী চক্ষুত ঝরায় নদীর পানি, –
মুখত ফোটায় হাসি ॥

এই রকম বহু কালার গান আছে, দৃষ্টান্ত বাড়িয়ে লাভ নেই ৷ সমস্ত কালার গানের বিষয়বস্তু এক – নদী নেয়ে, পারঘাটের যাত্রী, খেয়া পারাপার প্রভৃতি। গানগুলির মধ্যে চিত্রকল্প সৃষ্টি হয়েছে – তার বৈশিষ্ট্য এই যে, হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মানবমনের বিরহ বেদনায় পটভূমি কৃষ্ণাভ।

দ্রুতলয়ের একপ্রকার লঘু ভাওয়াইয়া আছে, তার নাম চটকা। একটির পরিচয় দিচ্ছি। নব বিবাহিত স্ত্রী স্বামীর ঘরে এসে জানতে পারলো – স্বামী আগে বিয়ে করে ছিল। মৃতপত্নীর খাড়ু দেখিয়ে এবং আরো অনেক ধাপ্পা দিয়ে তাকে ভুলিয়েছে। ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারী রেগে-মেগে বকতে থাকে –

নাক-ডাঙ্গড়ার বেটাটা, চোখ-ডাঙ্গরার নাতিটা
মোক ভুলাল মোকভুলাল সতের খাড়ু দিয়া। ……ইত্যাদি।

এ ছাড়া, হাস্যরসাত্মক বহু ভাওয়াইয়া আছে। সেগুলিও বেশ উপভোগ্য। মশার কামড়ে কোন এক নারী বিরক্ত না হয়ে বেশ এক চোট হেসে নিয়েছে। মশার ভয়ে সে বাপেরবাড়ী গেছে, আর পিছু পিছু মশাও গেছে প্রেম করতে।

মশা পেটকোনা তোর ডিম ডিমডিম করে,
মশার ভয়েতে মুই গেনু বাপার বাড়ী,
আহা রে বাউদিয়া মশা বেড়ায় টারি টারি।
মশার ভয়েতে মুই গায়ে দিমু ক্যাথা
কানের কাঠাত আসি মশা কয় পিরীতের কথা রে।
মশার ভয়েতে মূই ঘরে দিমু ঘুমা,
গালত পড়িয়া মশা খায় পিরিতের চুমা রে।
মশা পেট-কোনা তোর ডিম ডিমডিম করে ॥

বাৎসল্য রসের গানও দু’একটি পাওয়া যায়, তবে তা রামায়ণের কাহিনী আশ্রিত। শক্তিশেলে পড়েছে, রামবিলাপ করছে ভাইয়ের জন্য—

পান সখীরে কোনদিন ভাঙ্গিবে চাঁদের বাজার,—
অযোধ্যায় ছাড়িনু পিতা বনত হারামু সীতারে।
পান সখীরে লঙ্কাত আসিয়া হারামু লক্ষণ ভাই।
বাপ গেইলে বাপ পাব, মা গেইলে মাও মেলব
ভাই গেলে না পাব পানের ভাই।

গাড়ীয়াল ও মহীষাল বিষয়ক গানের মধ্যে নারীর বিচ্ছেদ বেদনাজাত সুগভীর আন্তরিকতা ফুটে উঠেছে। গাড়ী নিয়ে স্বামী শহরে গেছে কর্মব্যপদেশে, স্বামীর ফেরবার পথ চেয়ে চেয়ে একাকিনী নারী দুঃখের জ্বালায় বনফুলের মালা গাঁথে, আর বলে—

ওকি গাড়ীয়াল ভাই কতই রই আমি পন্থের দিগে চাইয়ারে।
যেদিন গারিয়াল উজান যায়, নারীর মন মোর
উড়িয়া যায় রে গাড়ীয়াল ভাই।
ও কি গাড়ীয়াল ভাই হাকানরে গাড়ী তুই শিলমারীর বন্দরে।
ও কি কবরে দুখ সের জ্বালা আহা গাড়ীয়াল ভাই
গাথিয়া বহন মালা রে।
ওকি গাড়ীয়াল ভাই, কতই কান্দি মুই নিধুয়া পাথারে।

মহিষাল মহিষের পাল নিয়ে নদীর চরে গেছে, বাড়ীতে স্ত্রী একা। বিরহিনী নারী বলছে—

ও কি ভইষ চরাণ মইষাল বন্ধু রে, –
মইষাল ছাড়েন গাবুয়ালী।
তোমরা কেনে যাইবেন মইষাল
মোকে এলায় ছাড়ি মইষাল রে। ……ইত্যাদি।

ভাওয়াইয়া কবিরা জীবনের উপরিতলেই শুধু বিচরণ করেন নি; জীবনের গভীরতম প্রদেশেও তাঁরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন। শান্ত রসাশ্রিত দেহতত্ত্বমূলক আধ্যাত্মিক গান প্রচুর রয়েছে। মানুষের জীবন ভঙ্গুর, কোন মুহূর্তে ভেঙ্গে পড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। পদ্মপাতার জলের মতোই মানুষের জীবন টলটলায়মান। ভাওয়াইয়া কবি গাইছে—

ওকি ভরে মানুষের দেহা
এ জীবনের নাইরে আশা
কখন চ্যাতন কখন হয়েরে মরা।
ভাই বল ভাতিজা বল সম্পত্তির ভাগী
তুই জীবন ছাড়িয়া গেলে, দিবে গাঙ্গের ভাটি।
পদ্মপাতায় জলরে যেমন টলমল করে
ওই মতো মানুষের দেহা কভু ভাঙ্গি পরে রে।
ও কি হায় হায় মানুষের দেহারে।

পরপারের ডাক আসা মাত্রই সকলকে চলে যেতে হবে এ পৃথিবী ছেড়ে, একমুহূর্তও কারুর দেরী সইবে না ৷ সুতরাং সংসারের মুল্যবান ধাতুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ মায়া-মমতা সবই অর্থহীন-

সোনার খাট পালঙ্ক রে রবে পড়িয়া
ভাই বল, বন্ধু বলরে কারবা গুরু কে।
ছাড়রে মন ভবের খেলা, পশ্চিমে ডুবিল বেলা রে
বেলা ডুবিলে হইবে আন্ধিয়ার রে। ……

অস্তিমকালে একমাত্র আশ্রয় জগদীশ্বর শ্রীহরির নামকীর্তন। তাই ভাওয়াইয়া কবির আত্মনিরীক্ষা-  ‘হরি হরি বল মন বদনে।’

আরেকটি গানের আলোচনা করে আমরা প্রবন্ধ শেষ করছি। বক-শিকারের মত একটা তুচ্ছ ঘটনাকে অবলম্বন করে ভাওয়াইয়া কবি অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছেন। বক শিকারীর ফাঁদে ধরা পড়েছে, বকী খবর পেয়ে উপস্থিত হয়েছে। পরস্পর পরস্পরকে দেখে কাঁদছে। একজনের তো মৃত্যুর আর বেশি দেরী নাই, শেষবারের মতো দয়িতাকে দেখে নিচ্ছে। আর একজন শুধু স্মৃতি নিয়ে বাকী জীবনটা একাকী কাটাবে,—সেও দয়িতকে এই শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছে –

ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে
ফান্দ পাতিছে ফান্দুয়া ভাইয়া পুঁটি মাছ দিয়া,
ওরে মাছের লোভে বোকা বগা পড়ে উড়াল দিয়া রে-
ফান্দে পড়িয়ারে বগা করে হায় হায়,
‘ওরে আহা আহারে দারুণ বিধি সাথী ছাইড়্যা যায়।
ফান্দে পড়িয়ারে বগা কান্দেরে।
উড়িয়া যায়রে চকোয়ার পঙ্খী বগীক বলে ছাড়ে,
ওরে তোমার বগা বন্দী হইছে ধরলী নদীর পাড়ে।
এই কথা শুনিয়ারে বগী দুই পাখা মেলিল,
ওরে ধরলা নদীর পাড়ে যাইয়া দরশন দিল রে।
হায়রে বগিক দেথিয়া বগা কান্দে,
বগাকে দেখিয়া বগী কান্দে। [৫]

এখানে জীবনরস ও আধ্যাত্মিকতা মিশে একাকার হয়ে গেছে ৷ পক্ষীজীবনের অব্যক্ত মর্মযন্ত্রণার অভিব্যক্তির মধ্যে মুক্তি-পিপাসু মায়াবদ্ধ মানবাত্মার ক্রন্দন ধ্বনিত হয়েছে, একথা বললে বোধকল্পি অন্যায় হবে না।

তথ্যসূত্র 

১। লোকসাহিত্য (দ্বিতীয় সং), গ্রাম্য সাহিত্য পৃ–৫৬

২। কুচবিহারের তুফানগঞ্জ শহরে এঁর বাড়ী ছিল। ইনি বহু ভাওয়াইয়া গানের রেকর্ড করেন। কিছুকাল ইনি ঢাকা রেডিও কেন্দ্রের স্টেশন ডিরেক্টর ছিলেন। বছরদুই হ’ল ইনি মারা গেছেন। এঁর কন্যা ফারদৌসী বেগম মাঝে মাঝে ঢাকা রেডিও-কেন্দ্রে ভাওয়াইয়া গেয়ে থাকেন।

৩। ইনি জন্মান্ধ ছিলেন, বাড়ী দিনহাটায়। দোতারাতে ইনি ঢোলের বাজনা বা ষে কোনো ধ্বনি তুলতে পারতেন। সেইজন্য ইনি দোতারা-যাদুকর নামে অভিহিত হন।

৪। লোকসাহিত্য (দ্বিতীয় সং) গ্রাম্য সাহিত্য, পৃঃ ৫৭

৫। তুলনীয়—

কাহেরে ঘিনি মিলি অচ্ছহু কীস
বেঢ়িল হাক পড় অ চৌদীস ॥
অপনা মাংসে হরিণা বৈরী
খনহ ৯ ছারঅ ভুসুকু অহেরি ॥
তিন ণ চ্ছুপই হরিণা পিবই না পাণী
হরিণা হরিণীর নিলঅ ন জানী ॥
হরিণী বোলঅ হরিণা সুন হরিআ
এ বন চ্ছাড়ী হোহু ভাস্তো ॥

দ্রঃ সুকুমার সেন – চর্যাগীতি পদাবলী (১৯৫৬), পৃ-৫৪

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.