Table of Contents
ভূমিকা
গত তিন সপ্তাহ ধরে জর্জিয়ায় (Georgia) ব্যাপক গণবিক্ষোভ চলছে। প্রায় ৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই ককেশীয় (Caucasus) দেশটি রাশিয়া (Russia), আজারবাইজান (Azerbaijan), আর্মেনিয়া (Armenia) এবং তুরস্কের (Turkey) মাঝখানে অবস্থিত। বহু মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার পর, ২০২৪ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত একটি কারচুপিপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনে (parliamentary election) প্রো-রাশিয়ান (pro Russian) দল জর্জিয়ান ড্রিম (Georgian Dream, GD) ক্ষমতা আরো মজবুত করে, যেখানে তারা আনুমানিক ৫৪% ভোট পেয়েছে বলে দাবি করা হয়।
এরপর, শনিবার জর্জিয়ান ড্রিম ঘোষণা করে যে সাবেক ফুটবলার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া মিখেইল কাভেলাশভিলি (Mikheil Kavelashvili) ২২৫ সদস্যের ইলেক্টোরাল কলেজ থেকে ২২৪ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট (President) নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এখানে একটা বড় প্রশ্ন হল—তিনি একমাত্র প্রার্থী ছিলেন। কারণ জর্জিয়ার প্রধান চারটি বিরোধী দল পার্লামেন্ট (Parliament) বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়, দাবি করে যে নির্বাচনের ফলাফল ভুয়া।
এদিকে, পশ্চিমপন্থী (western aligned) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিশভিলি (Salome Zurabishvili, Salome Zourabichvili) (যিনি প্যারিসে (Paris) জন্মগ্রহণ করেছিলেন) দপ্তর ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। তিনি অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফলকে “প্রহসন” বলে অভিহিত করে বলেছেন, “আমি কোথাও যাচ্ছি না, কাউকেই ছাড়ব না। আমি এখানে আছি কারণ এই মুহূর্তে এই দেশটিকে বৈধ প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন।”
এই নিবন্ধে ব্যাখ্যা করা হবে কিভাবে জর্জিয়ায় বর্তমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার উৎপত্তি হয়েছে, কীভাবে আজকের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলো, এবং সম্ভাব্য কোন পথে এই বিক্ষোভের পরিসমাপ্তি হতে পারে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমি
জেনে রাখার প্রধান বিষয় হল, জর্জিয়ান ড্রিম (Georgian Dream, GD) দল গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১২ সালের নির্বাচনে ছয়টি দলের একটি জোট হিসেবে জয়ী হয়ে তারা ক্ষমতায় আসে। তারা রাশিয়ার সাথে একটি বাস্তববাদী সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, একইসঙ্গে একটি প্রো-পশ্চিমা (pro Western) পররাষ্ট্রনীতি অব্যাহত রাখার কথা বলেছিল।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দলটি ক্রমশ আরো কর্তৃত্ববাদী (authoritarian) ও রুশপন্থী হয়ে উঠেছে। ২০১৯ সালের জুন মাসে জনগণের অসন্তোষ চরমে ওঠে, যখন জিডি (GD) একজন রুশ এমপি সের্গেই গাভ্রিলভকে (Sergei Gavrilov) খ্রিস্টীয় অর্থোডক্সি (Christian Orthodoxy) নিয়ে পার্লামেন্টে একটি অধিবেশন খোলার আমন্ত্রণ জানায়। ওই সময় গাভ্রিলভ জর্জিয়ার উত্তরের দুটি অঞ্চল—আবখাজিয়া (Abkhazia) এবং সাউথ ওসেটিয়ার (South Ossetia) স্বাধীনতাকে সমর্থনসূচক মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য আবখাজিয়া (Abkhazia) এবং সাউথ ওসেটিয়া ২০০৮ সালে রাশিয়ান আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়ার দখলে রয়েছে এবং এগুলো নিয়ে রাশিয়া জর্জিয়ার প্রায় ২০% ভূখণ্ড দখল করে আছে।
যাই হোক, গাভ্রিলভকে এই আমন্ত্রণ জানাবার ফলে পার্লামেন্ট কক্ষে ও বাইরে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে, শত শত মানুষ আহত বা গ্রেফতার হয়। ইউরোপীয় ধাঁচের উদারপন্থী দল ইউরোপীয় জর্জিয়া (European Georgia Party)-এর এমপি এলেনে খোশতারিয়া (Elene Khoshtaria) জর্জিয়ান ড্রিমকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা “রাশিয়ান দখলদারদের” (Russian occupiers) এনে স্পিকারের আসনে বসিয়ে সাম্প্রতিক জর্জিয়ান ইতিহাসকে অপমান করেছে।
মাসের পর মাস ধরে চলা এই বিক্ষোভে জনগণ জিডি (Georgian Dream) সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনী সংস্কার দাবি করে। কিছু কিছু ছাড় দেওয়া হলেও (যেমন প্রধানমন্ত্রী মামুকা বাকতাদজে (Mamuka Bakhtadze)-র পদত্যাগ এবং সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (proportional representation) ভিত্তিক আসন বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি) ২০২০ সালের সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল আবারও সহিংস বিক্ষোভের জন্ম দেয়। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই অস্থিরতা বিরোধী দলগুলো ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল।
শেষপর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) হস্তক্ষেপ করে সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগী হয়। ইউরোপীয় কাউন্সিলের (European Council) প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল (Charles Michel) মার্চ মাসে জর্জিয়া সফর করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইরাকলি গারিবাশভিলি (Irakli Garibashvili) এবং বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেন।
বর্তমানে কী ঘটছে?
বর্তমানে, জর্জিয়া ব্যাপী টানা তিন সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে। পুলিশের দ্বারা টিয়ার গ্যাস (tear gas) ও জলকামান (water cannons) ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। এই বিক্ষোভ মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে—
- ১. অক্টোবরের সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল।
- ২. কমপক্ষে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ইইউ-তে (EU) অন্তর্ভুক্তির আলোচনা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত।
- ৩. ফুটবলার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া মিখেইল কাভেলাশভিলিকে (Mikheil Kavelashvili) প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ।
নির্বাচনী কারচুপি ও এর প্রতিক্রিয়া
প্রথমত, ২০২৪ সালের অক্টোবরের নির্বাচনকে ব্যাপকভাবে জালিয়াতিপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়, যার ফলে জিডি আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৩.৯% ভোট পায়। প্রো-পশ্চিমা কোয়ালিশন ফর চেঞ্জ (Coalition for Change) দ্বিতীয় স্থানে মাত্র ১১% ও পশ্চিমাপন্থী ইউনাইটেড ন্যাশনাল মুভমেন্ট (United National Movement) তৃতীয় স্থানে ১০.২% ভোট পায়। কিন্তু রাজধানী তিবিলিসি (Tbilisi) এবং অন্যান্য বড় শহরে জিডি বিশাল ব্যবধানে হারে।
গ্রামীণ এলাকায় নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ মানুষের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ভোটারদের আগেভাগে জিডি মার্কা করা ব্যালট দেওয়া হচ্ছে, জিডি সমর্থকদের একাধিক ব্যালট দেওয়া হচ্ছে, এমনকি ব্যালট বাক্সে জাল ব্যালট ঢুকানো হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জুরাবিশভিলি (Zourabichvili) নির্বাচনের ফলাফলকে “জাল” বলে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন দেশটি রাশিয়ান বিশেষ অপারেশনের (Russian special operation) শিকার হয়েছে।
ইইউ-সংযুক্তির আলোচনা স্থগিতের সিদ্ধান্ত
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন জিডি সরকার অন্তত ২০২৮ সাল পর্যন্ত ইইউ-তে অন্তর্ভুক্তির (EU accession) আলোচনা স্থগিত করে। জর্জিয়া দীর্ঘদিন ধরে রঙিন বিপ্লবের (colour revolutions) মধ্য দিয়ে গিয়েছে, যা পোস্ট-সোভিয়েত (post Soviet) দেশগুলোতে সরকার ও সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। ২০০৩ সাল থেকে এই প্রবণতা দেখা গেছে, এবং এর পর থেকে ইইউ-তে যোগদানের পক্ষে জনসমর্থন ৮০% পর্যন্ত বেড়েছে বলে সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বরে জর্জিয়ার ইইউ-তে অন্তর্ভুক্তির একটি মর্যাদা (candidate status) পাওয়ার চেষ্টা ছিল, কিন্তু এক বিতর্কিত “ফরেন এজেন্টস ল” (foreign agents law) (যা কোনো এনজিও (NGO) বা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ২০% এর বেশি বিদেশি তহবিল পেলে তাদের “বিদেশি এজেন্ট” হিসেবে নিবন্ধন করতে বাধ্য করে) ইইউ ও জর্জিয়ার সম্পর্কে চির ধরায়। এই আইন রাশিয়ার ২০১২ সালের আইনকে অনুকরণ করে করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। ইইউ মনে করে এই আইন তাদের উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ফলে প্রতিবাদ আরও তীব্র হয়েছে। গত সপ্তাহে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ছয়জন এমইপি (MEP, Member of European Parliament) জর্জিয়ায় গিয়ে এই বিক্ষোভে যোগ দেন। ইইউ জর্জিয়ান ড্রিমকে “পরিস্থিতির নিরসন” করে জনগণের জীবনকে নিরাপদ করার আহ্বান জানায়। এদিকে এই মাসের শুরুতে ইউক্রেন (Ukraine), এস্তোনিয়া (Estonia), লাটভিয়া (Latvia) এবং লিথুয়ানিয়া (Lithuania) সহ তিনটি ইইউ সদস্য দেশ জর্জিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (sanctions) আরোপ করেছে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিবাদে।
ফুটবলার থেকে প্রেসিডেন্ট: কাভেলাশভিলি
তৃতীয়ত, মিখেইল কাভেলাশভিলির (Mikheil Kavelashvili) প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়াও বিক্ষোভের আরেকটি প্রধান কারণ। তিনি ম্যানচেস্টার সিটির (Manchester City) সাবেক খেলোয়াড় ছিলেন এবং একমাত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হন, কারণ বিরোধী দলগুলো এই “প্রহসনমূলক” নির্বাচন বর্জন করেছিল। বিক্ষোভকারীরা তিবিলিসির সরকারি স্কয়ারে ফুটবল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে, কেউ কেউ ডিগ্রি (university degree) নিয়ে ব্যঙ্গ করে বোঝাতে চায় যে কাভেলাশভিলির শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই।
তবে হাসি-ঠাট্টার বাইরে, সমালোচকরা বলেন কাভেলাশভিলির নিয়োগ আসলে জর্জিয়ান ড্রিমের প্রতিষ্ঠাতা প্রো-রাশিয়ান ওলিগার্ক (oligarch) বিদজিনা ইভানিশভিলি (Bidzina Ivanishvili)-র রাষ্ট্রযন্ত্র দখলের চূড়ান্ত পর্যায়।
বিক্ষোভের তীব্রতা ও সম্ভাব্য পরিণতি
বিক্ষোভ দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ জন বিক্ষোভকারী গ্রেফতার হয়েছেন, যাদের মধ্যে বিরোধী নেতা ও কর্মীও আছেন। ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন এবং ৫০ জনের বেশি সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এখন প্রশ্ন হল, এই সংকটের পরিসমাপ্তি কীভাবে হবে? কোনো নিশ্চয়তা নেই, কিন্তু কিছু সম্ভাব্য পথ আছে। প্রথমত, ইইউ পার্লামেন্ট (EU Parliament) অক্টোবরের নির্বাচনের পরে যে প্রস্তাবনা করেছিল তার আলোকে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে বা পুরনো কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের (Central Election Commission) অধীনে নতুন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যেতে পারে। কিন্তু জর্জিয়ার সাংবিধানিক আদালত (Constitutional Court) ইতোমধ্যে সব পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে ৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের ফলাফলকে বৈধতা দিয়েছে।
ফলে শীঘ্রই সুষ্ঠু ও স্বাধীন নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন। যদি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জুরাবিশভিলি কোনো উপায় বার করতে না পারেন (সম্ভবত ইউরোপীয় কিছু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তায়) তবে ২৯ ডিসেম্বর তার ক্ষমতাচ্যুতির পূর্বে কাভেলাশভিলি (Kavelashvili) দায়িত্ব বুঝে নেবেন। এর ফলে বিক্ষোভ আরও চরম রূপ নিতে পারে, হয় তারা ভূগর্ভস্থ প্রতিরোধে যেতে পারে, নয়তো রাষ্ট্রের সহিংস দমন-পীড়নের মাধ্যমে বিক্ষোভ দমিয়ে ফেলা হতে পারে।
উপসংহার
জর্জিয়ায় চলমান গণবিক্ষোভকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে, তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। রাশিয়ান প্রভাব, ইইউ-তে অন্তর্ভুক্তির আলোচনা স্থগিত হওয়া, বিতর্কিত আইন এবং একটি প্রশ্নবিদ্ধ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন—সব মিলিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ এক সংঘাতময় মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে কী ঘটবে, সেটা নির্ভর করছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ, বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের ধরন এবং জর্জিয়ান ড্রিম সরকারের পদক্ষেপের ওপর।
তথ্যসূত্র
Georgian Elections
https://www.bbc.co.uk/news/articles/c5ygejxej28o
https://www.iri.org/news/georgias-electoral-transformation-landmark-elections-under-new-rules/
https://www.zois-berlin.de/en/publications/georgia-on-the-way-to-proportional-representation
Ongoing Protests
https://www.euronews.com/2024/12/11/georgian-anti-government-protests-enter-twelfth-night-amidst-intensifying-policing
https://www.politico.eu/article/georgia-protest-georgian-dream-russia-president-mikheil-kavelashvili/
https://www.economist.com/europe/2024/12/15/protests-threaten-georgias-kremlin-friendly-government
https://www.ft.com/content/2f47848f-be5f-4bc0-a63d-7edc6bf98cfa
Past Protests
https://www.ft.com/content/0cb1cb9a-55c7-45af-88a2-bf5dd5d183d9
https://civil.ge/archives/309180
https://apnews.com/article/0fc953dda67c4535ad18b5c54b3537ac
EU Response
https://www.politico.eu/article/georgia-election-was-not-fair-must-be-re-run-european-parliament-statement-membership-candidacy-eu/
https://www.euronews.com/my-europe/2024/12/13/eu-parliament-delegation-visits-georgia-and-marches-with-pro-eu-protesters
https://www.politico.eu/article/estonia-latvia-lithuania-baltic-countries-sanctions-georgian-officials-protests-violence-georgia-eu-accession-enlargement/
https://www.consilium.europa.eu/en/policies/enlargement/georgia/
How does it end?
https://ecfr.eu/article/time-is-running-out-for-the-eu-to-help-safeguard-georgias-future/
Leave a Reply