কোরিয়ান মডেল কি ইউক্রেনের জন্য একমাত্র “গ্রহণযোগ্য” সমাধান?

ভূমিকা

যুদ্ধটা খুব ভয়াবহ ছিল। এমন এক সংঘাত যা বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল এবং ইতিহাসকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করেছিল। এই যুদ্ধে ১০ লক্ষেরও বেশি সৈন্য প্রাণ হারায়, ২০ লক্ষেরও বেশি সাধারণ নাগরিক নিহত হয় এবং মোট দেশটির ৭% জনগোষ্ঠী পৃথিবী থেকে মুছে যায়। তার চেয়েও ভয়ংকর বিষয় হল, এটি ছিল কেবল শুরু – এমন এক দুঃস্বপ্নের শুরু যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে চিরস্থায়ীভাবে থেকে গেছে, আজ অবধিও শেষ হয়নি। ওই ভূখণ্ডের (Territorial Unit) বিভাজন ঘটে দুটি ভাগে, আর লক্ষ লক্ষ পরিবার চিরতরে আলাদা হয়ে যায়।

মনে করিয়ে দিতে চাই কোরিয়ান উপদ্বীপের (Korean Peninsula) সেই বেদনাদায়ক ইতিহাসের কথা। ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই উপদ্বীপ বিভক্ত রয়েছে দুটি অংশে – পুঁজিবাদী দক্ষিণ (Capitalist South) ও সাম্যবাদী উত্তর (Communist North)। এই দুই রাষ্ট্রের মাঝে রয়েছে একটি সুরক্ষিত সীমান্ত (Fortified Border), যা কাঁটাতার ও ল্যান্ডমাইন (Mines)-এ পূর্ণ, কঠোর প্রহরায় সুরক্ষিত, এবং কার্যত অতিক্রমণযোগ্য নয়। এটি প্রায় অদম্য একটি অসামরিকায়িত অঞ্চল (Demilitarized Zone) – যেখানে উত্তর থেকে হাতে গোনা কয়েকজনই পেরোতে পেরেছেন ভাগ্যগুণে, কিন্তু স্বাধীনতার খোঁজে পাড়ি দিতে গিয়ে অসংখ্য মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে। এই অসামরিকায়িত অঞ্চলের চারপাশে বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ সামরিক শক্তির ঘনবসতি রয়েছে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে: আমরা কেন এই প্রসঙ্গ তুলছি? কেন কোরিয়ার কথা বলছি যখন এই লেখাটি মূলত ইউক্রেনের যুদ্ধ (War in Ukraine) শেষ হওয়ার সম্ভবনাময় উপায় নিয়ে আলোচনা করার কথা? আসলে ইতিহাস হয়তো আবারও নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে ইসরায়েল (Israel) ও হেজবোল্লাহর (Hezbollah) মধ্যে লেবাননে (Lebanon) এক ধরনের “কোরীয় মডেল” চুক্তির চেষ্টা করা হয়েছিল, যদিও তা সফল হয়নি। কিন্তু এখন যে পথটি প্রস্তাবিত, তা হল ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রে একটি “কোরীয় পদ্ধতি” অবলম্বন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা: “কোরিয়ান” মডেল?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) ঘনিষ্ঠ মহলে শোনা যাচ্ছে যে, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি পরিকল্পনা করছেন, যা আংশিকভাবে কোরিয়ান পদ্ধতির অনুরূপ। অর্থাৎ, যুদ্ধ-বরাবর বর্তমানে যে অবস্থানে এলাকা দখল রয়েছে, সেই সীমারেখায় একটি অসামরিকায়িত অঞ্চল (Demilitarized Zone) স্থাপন, যুদ্ধ ‘ফ্রিজ’ করে দেয়া, এবং স্পষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।

সম্পর্কিত দুটো শিরোনাম সংবাদ:

এই প্রথম জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, একটি যুদ্ধবিরতির (Ceasefire) চুক্তিতে তিনি আপাতত হারানো ভূখণ্ড ফিরে না পেলেও রাজি হতে পারেন – যদি ন্যাটো অন্তর্ভুক্তির পথ সুগম হয়।

ট্রাম্প এই যুদ্ধ শেষ করা নিয়ে বেশ আগ্রহী। তবে ঠিক কী পরিকল্পনা তার হাতে রয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তিনি হয়তো ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সহায়তা কমাবেন, রাশিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবেন, কিন্তু এর বেশি কিছু এখনও জানা যায়না। এদিকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা ইউক্রেনে যুদ্ধ ‘ফ্রিজ’ করে, বর্তমান দখলকৃত সীমান্ত বরাবর একটি অসামরিকায়িত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা (deterrence) গড়ে তুলতে চান বলে গুঞ্জন রয়েছে।

কিন্তু কিভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে? এটি কি কোরিয়ার মতো সফল হতে পারবে? ইউক্রেনীয়রা এ বিষয়ে কী ভাবছে? চলুন বিশদে দেখা যাক।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা: কোরিয়াকে নকল করা?

কোরিয়া ভ্রমণে গেলে একটি সাধারণ পর্যটনস্থল হল যৌথ নিরাপত্তা এলাকা (Joint Security Area) – যেখানে নীল রঙের হাটগুলোর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার বিভাজন স্পষ্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখানে কিম জং-উনের (Kim Jong Un) সঙ্গে প্রথমবার দেখা করেন এবং তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি টেকনিকালি উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রাখেন। এটি কেবলমাত্র ২৪০ কিমি দীর্ঘ সীমান্তের একটি বিন্দু, যা সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত। এখানে লক্ষ লক্ষ মাইন (Mines) পুঁতে রাখা এবং হাজার হাজার সৈন্য এখানে টহল দেয়।

ট্রাম্পের দল ইউক্রেন-রাশিয়া (Ukraine-Russia) ভবিষ্যতে একই ধরনের চিত্র কল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা অনুসারে, অসামরিকায়িত অঞ্চল (Demilitarized Zone) তৈরি হবে ইউক্রেনের বর্তমান দখলকৃত ভূখণ্ডের সীমারেখা বরাবর। সেখানে স্থাপন করা হবে দুর্ভেদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা, টহল, দুর্গ (Fortifications) এবং নজরদারি ব্যবস্থা। এই সীমান্ত হতে পারে ১,২০০ কিমি বা তারও বেশি দীর্ঘ – যা ইউক্রেনকে কার্যত দুটি অংশে ভাগ করে দেবে। সেইসঙ্গে হয়তো পুরো সীমান্তজুড়ে পাতা হবে মাইন (Mines) এবং দুই পক্ষের বিপুল সেনা মোতায়েন করা হবে।

তবে এখানে এক বড় সমস্যা হল: কোরিয়ার ক্ষেত্রে সীমান্ত অপেক্ষাকৃত ছোট, কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সীমান্ত বিশাল। কেবলমাত্র সীমান্ত সুরক্ষা যথেষ্ট নয়; ইউক্রেনকে একটি দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করতে হবে, যাতে রাশিয়া ভবিষ্যতে আবার আক্রমণ করতে না পারে। এমনকি হয়তো আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী (International Troops) পাঠানোর কথাও ভাবতে হতে পারে। তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, “আমেরিকানদের পাঠাব না। বরং পোল, জার্মান, ব্রিটিশ আর ফরাসিদের পাঠাও।” ইউরোপীয়ান (European) সেনা পাঠানো নিয়ে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের মধ্যে কথাবার্তা চলছে বলে জানা গেছে।

তবে এটি এত সহজ নয়। এটি বাস্তবায়নে ইউরোপীয় দেশগুলোর সম্মতি ও সামর্থ্য প্রয়োজন। হতে পারে পোল্যান্ড (Poland) এ ব্যাপারে আগ্রহী, কারণ তারা বিশাল সামরিক শক্তি গড়ে তুলছে। তবুও, ইউক্রেন ন্যাটোতে না গেলে (অর্থাৎ ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫ এর সুরক্ষা না পেলে), এই বিদেশি সেনা উপস্থিতি যুদ্ধ ঘটলে সরাসরি ন্যাটোর ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য হবে না। কাজেই আরও বড় পদক্ষেপ দরকার।

মনে রাখবেন, ইউক্রেনকে প্রকৃতপক্ষে অস্ত্রে সুসজ্জিত (Militarize) করতে হবে – প্রচুর অস্ত্র, সরঞ্জাম ও অর্থ প্রয়োজন হবে, যা হয়তো ইউরোপকেই বহন করতে হবে। ট্রাম্পের ভাবনা হতে পারে – “আমরা যুদ্ধ থামালাম। রাশিয়া দখলকৃত ভূমি রাখল। আমরা ইউক্রেনকে অস্ত্র বিক্রি করব, ইউরোপিয়ানরা বিল দেবে। আমরা ব্যবসাও করব।” এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন দীর্ঘমেয়াদে শৃঙ্খলাপূর্ণ, ভালোভাবে সুরক্ষিত হয়ে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। তবে শর্ত হল, যুদ্ধবিরতির পরে আন্তর্জাতিক সাহায্য আসবেই এমন নিশ্চয়তা কে দেবে?

এদিকে মার্কিন রিপাবলিকানরা আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছে যে আপাতত তারা আর বাড়তি সহায়তা দেবে না। কাজেই জেলেনস্কির কাছে হয়তো এই কোরীয় মডেলের সমাধানটাই সব থেকে ভালো বিকল্প।

রাশিয়ার গ্রহণযোগ্যতা

কিন্তু রাশিয়া কেন এই চুক্তি মানবে? বিশেষ করে যদি ট্রাম্প ইতোমধ্যে ইউক্রেনের সহায়তা কমাতে তৈরি থাকেন, তবে তারা কেন পশ্চিমের অধীনে ইউক্রেনকে ছেড়ে দেবে?

আসলে রাশিয়ারও কিছু সুবিধা আছে। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনীতিতে ধস নামছে – রাষ্ট্রের বিশাল যুদ্ধ ব্যয়, প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি (Inflation) ১০% ছাড়িয়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ২৫% পর্যন্ত বেড়েছে, রুবলের (Ruble) দরপতন অব্যাহত। এক বছর আগে ৯০ রুবলে ১ ডলার মিলতো, এখন ১০৫ রুবলেরও বেশি লাগছে।

ফলে সরকারকে সুদের হার (Interest Rate) ২১%-এ তুলতে হয়েছে – এটি কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুতিনের (Putin) জন্য এই পরিস্থিতি টেকসই নয়। যুদ্ধ বন্ধ করে যে ভূখণ্ড দখল হয়েছে তা ধরে রাখলে, পুতিন এটিকে প্রোপাগান্ডা হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে: “ইউক্রেন শেষ পর্যন্ত হার মানল, পশ্চিম ক্লান্ত হয়ে অস্ত্র সমর্পণ করল, আমাদের মাতৃভূমি (Motherland) বড় হল।” হয়তো পুরো ইউক্রেন দখল হয়নি, কিন্তু নেওভোরোসিয়া (Novorossiya) পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়া পেয়েছে, যা ১৮শ শতকে ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের (Catherine the Great) আমলে রুশ সাম্রাজ্যে যুক্ত হয়েছিল।

এছাড়া, ট্রাম্প যদি হুমকি দেন – “তুমি বসে আলোচনায় আসো, নইলে আমি ইউক্রেনকে আগের চেয়েও বেশি সহায়তা দেব” – তাহলে রাশিয়া হয়তো বাধ্য হবে কিছুটা নমনীয় হতে।

“কোরীয় মডেল” নিয়ে সংশয়

তবে মনে রাখা দরকার, এই কোরিয়ান পদ্ধতি এখনো কেবল একটি অনুমান মাত্র। অনেক সময় এমন পরিকল্পনা ঘোষণা হয়, কিন্তু ফলাফল শূন্যে গিয়ে দাঁড়ায়। ইউক্রেনের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা যুদ্ধ শেষে যদি আন্তর্জাতিক সাহায্য না আসে, তবে ইউক্রেন আরও দুর্বল অবস্থানে পড়বে – বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের পর, আগের চেয়ে কম ভূখণ্ড নিয়ে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।

এর চেয়েও বড় বিষয় হল, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ (NATO Membership) ২০ বছর পিছিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে রাশিয়া এর আগেও ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট স্মারকলিপি (Budapest Memorandum) লঙ্ঘন করেছে, সুতরাং নতুন চুক্তিও তারা লঙ্ঘন করতে পারে। কোরিয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা যেকোনো উত্তেজনা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের ক্ষেত্রে যদি এমন নিশ্চয়তা না থাকে, তবে রাশিয়া আবার চুক্তি ভঙ্গ করতে পারে।

এছাড়াও নিরাপত্তার অভাব ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (European Union) যোগদানের পথকে আরও কঠিন করবে। ইউক্রেনের দুর্বল আইনশৃঙ্খলা (Weak Rule of Law), ব্যাপক দুর্নীতি (Corruption), দারিদ্র্য – এর মধ্যে আবার অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি যুক্ত হলে, ইইউ তাকে নিতে চাইবে না। ইইউতে যোগ দিতে প্রচুর অর্থ, কাঠামোগত সমর্থন প্রয়োজন, যা সবাই দিতে রাজি হবে না।

সুতরাং জেলেনস্কির সর্বোচ্চ চেষ্টা হবে এমন একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া যা দেশকে ভবিষ্যতে ঠাণ্ডায় ফেলে দেবে না। কোরিয়ান মডেল হয়তো এই মুহূর্তে তার হাতে থাকা সেরা বিকল্প।

ইউক্রেনীয়দের মনোভাব

কিন্তু ইউক্রেনীয়রা কী ভাবছে? সামরিক বাহিনীর (Military) অনেক সদস্যের কাছে এই ধরনের সমঝোতা অর্থ হলো বিশ্বাসঘাতকতা। অনেকে মনে করে, স্পষ্ট বিজয় ছাড়া যুদ্ধ থামানো মানে হলো রাশিয়ার সামনে নতজানু হওয়া। ফ্রন্টলাইনে যেসব সৈন্যরা জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি, তাদের ১৫%-এর মতো একটি অংশ সশস্ত্র প্রতিবাদেও যেতে পারে যদি তারা চুক্তিকে সরাসরি পরাজয় মনে করে।

অন্যদিকে কিছু সৈন্য, বিশেষ করে নবীনরা, দীর্ঘদিনের ক্লান্ত যুদ্ধে অতিষ্ঠ। তাদের কিছুটা শান্তি ও স্বস্তি দরকার। কিন্তু সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীর বড় অংশ কোনো “পরাজয়মূলক” চুক্তি চায় না।

তবে বেসামরিক (Civilian) জনসাধারণের মধ্যে ছবিটা ভিন্ন। একসময় ৭৩% ইউক্রেনীয় বলেছিল যে তারা শেষ পর্যন্ত লড়বে। ২০২৩ সালেও এটি ছিল ৬০%-এর ওপরে। কিন্তু এখন গ্যালাপের (Gallup) সাম্প্রতিক, অর্থাৎ ২০২৪ সালের অক্টোবরের জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ৩৮% এখন চায় শেষ পর্যন্ত লড়তে। অপরদিকে ৫০%-এর বেশি মানুষ এখন আলোচনা ও শান্তি চায়, এমনকি তার জন্য কিছু ভূখণ্ড ছাড়তেও প্রস্তুত।

এটি খুব অস্বাভাবিক নয়। ২০২৪ সাল খুব কঠিন গেছে ইউক্রেনের জন্য – জীবনযাত্রার ব্যয়, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের স্থাপনায় রুশ হামলা, দিনের পর দিন দুঃসহ পরিস্থিতি মানুষকে ক্লান্ত করে তুলেছে। অনেকেই কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে পেতে চায়।

এটি সারা দেশজুড়েই লক্ষণীয়। আগে সমগ্র দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা ছিল প্রবল, এখন তা হ্রাস পেয়েছে। ফলে সামরিক-বেসামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ফাঁরাক বাড়ছে।

ভবিষ্যৎ: পশ্চিমের সমর্থন কী আসবে?

এই পরিস্থিতি বলছে, ইউক্রেনীয়রা এখন আলোচনা সমর্থন করে। তবে সেই আলোচনা কেমন হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সেটি “কোরীয় মডেল” অনুসরণ করে, যেখানে ইউক্রেনকে ভালভাবে সুরক্ষিত করা হয়, আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত হয়, তবে এর একটি ভবিষ্যৎ আছে। কিন্তু যদি আলোচনার ফলাফল হয় ইউক্রেনকে ‘বিক্রি’ করে দেওয়া, তবে দেশ চির অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।

জেলেনস্কির এখনকার প্রধান লক্ষ্য সম্ভবত যুদ্ধের পরের দিনগুলি। কীভাবে দেশকে সুরক্ষিত রাখা যাবে? কীভাবে পশ্চিমা সহায়তা নিশ্চিত করা যাবে? সেই অস্ত্র, অর্থ, এবং রাজনৈতিক সমর্থনই কোরিয়াকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, ইসরায়েলকেও (Israel) চরম প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে।

প্রশ্ন হল, ব্রাসেলস (Brussels) বা ইউরোপ এই দায়িত্ব নিতে পারবে তো? ইউক্রেনকে মজবুত করতে প্রচুর অর্থ, অস্ত্র ও রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি লাগবে। ইউক্রেনের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ঠিক কী দরকার – এ নিয়ে আপনাদের মতামত কী? মন্তব্যে জানান, চলুন আলোচনা শুরু করি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.